May 17, 2024
#বিবিধ

দানের টাকা পাওয়ার অধিক হকদার কে?

প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে গরীব অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা এবং এতিমের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ কিন্তু প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে দানের টাকা পাওয়ার বেশি হকদার কে? একজন খুবই অসুস্থ ব্যাক্তি নাকি দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের এতিম বাচ্চারা?

উত্তরঃ নিঃসন্দেহে অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদের অভাব পূরণ করা, তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা‌, বিশেষ করে এতিম শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি দয়া করা মানবিক দৃষ্টি থেকে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত মর্যাদা পূর্ণ কাজ।‌

এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা, ক্ষমা এবং অবারিত সওয়াব অর্জিত হয় যা আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম হবে ইনশাআল্লাহ।

সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে বিত্ত-বৈভব দান করেছেন তাদের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ জাতীয় মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ খরচ করা। তাদের সম্পদের যাকাত দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ দান সদকা করা।

দান সম্পর্কে কুরআন থেকে কিছু আয়াতঃ

মহান আল্লাহ কুরআনের বহু জায়গায় অর্থ সম্পদ ব্যয় করার মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:

 আল্লাহ বলেন,

ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
“যারা আল্লাহ্‌র পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তারপর যা ব্যয় করে তা বলে বেড়ায় না এবং কোনো প্রকার কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে রাদের রব-এর নিকট। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না।”

Surah Al-Baqarah, Ayah 262

 আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

وَٱلَّذِينَ صَبَرُواْ ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِمۡ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ وَيَدۡرَءُونَ بِٱلۡحَسَنَةِ ٱلسَّيِّئَةَ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عُقۡبَى ٱلدَّارِ
“আর যারা তাদের রবের সস্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।”

Surah Ar-Ra’d, Ayah 22

 এক হাদিসে রয়েছে,

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ :قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ مَالِكٌ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى. رواه مسلمআবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি ও এতিম প্রতিপালনকারীর অবস্থান জান্নাতে এই দুই অংগুলির ন্যায় পাশাপাশী হবে। চাই সেই এতিম তার নিজের হোক অথবা অন্যের। (বর্ণনাকারী) মালেক বিন আনাস রা. তর্জনী ও মধ্যমা আংগুলি দ্বারা ইশারা করলেন।”

সহিহ মুসলিম

এভাবে আল্লাহর পথে খরচ, অভাবীদের অভাব মোচন এবং এতিম-অনাথ শিশুদের প্রতিপালনে দান করার ফজিলতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কুরআনের আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

দান পাওয়ার হকদার

সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে অর্থ-সম্পদ খরচের তৌফিক দিয়েছেন তারা এতিম শিশু, গরীব অসহায় মানুষের অভাব পূরণ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, বিভিন্ন সময় ইসলামের প্রয়োজনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ এ যথাসাধ্য দান করার চেষ্টা করবেন।

তবে যদি কারো সীমিত আর্থিক সঙ্গতি থাকে কিন্তু অভাবীদের সংখ্যা বেশি হয় তাহলে পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দান করবে।

যদি এমন হয় যে এই মুহূর্তে কোন অসহায় দরিদ্র মুমূর্ষ রোগীর চিকিৎসার জন্য জরুরি অর্থের প্রয়োজন। অন্যথায় তার জীবননাশের সম্ভাবনা আছে। পক্ষান্তরে এতিম শিশুদের আপাতত জীবনধারণের ব্যবস্থা আছে তাহলে এক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য দান করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

আর যদি এমন হয় যে কোন রোগীর চিকিৎসা চলছে কিন্তু অবস্থা তেমন বেগতিক নয় অথচ এতিম শিশুরা অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। আর্থিক সহায়তার অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে এতিমদেরকে দানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে-ই হবে তখন হকদার;

মোটকথা, প্রয়োজন এবং অবস্থার আলোকে যাকে দান করলে বেশি উপকার হবে এবং যার অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

আরও পড়ুনঃ মৃতের উদ্দেশ্যে দান-সদাকা বনাম খাওয়ানো!

আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

Exit mobile version