Tag: গিফট

  • উপহার চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ?

    উপহার চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ?

    প্রশ্ন: কার কাছে বই বা কোনও কিছু হাদিয়া (উপহার) চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ? হাদিসে বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তির শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এটাও কি সে হাদিসের অন্তর্ভুক্ত?

    কারণ অনেকেই বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত জনের কাছে বই অথবা বিভিন্ন কিছু হাদিয়া চায়। দয়া করে এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

    উত্তর: কেউ যদি তার সামর্থ্যবান বন্ধু-বান্ধব ও নিকটাত্মীয়-যেমন: ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি ব্যক্তির কাছে বই অথবা অন্য কিছু হাদিয়া (উপহার) চায় তাহলে তাতে দোষের কিছু নাই ইনশাআল্লাহ। এটা খুব সাধারণ বিষয়। কারণ মানুষ সাধারণত ভালবাসা বা স্নেহ-মমতার দাবী থেকে অথবা মজার ছলে এমনটি করে থাকে।

    তবে কারও কাছে তা না চাওয়াই উত্তম। কারণ ইসলাম জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও কাছে কোনও কিছু চাওয়াকে অনুৎসাহিত করেছে। (শেষে এ বিষয়ে হাদিস পেশ করা হয়েছে)।

    তবে সামর্থ্যবান বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন বা নিকটাত্মীয়দের নিকট সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে কখনোও উপহার চাওয়া হলে তা হাদিসে নিষিদ্ধ ‘ভিক্ষা বৃত্তি’র অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে না। কেননা ইসলামে ভিক্ষা বৃত্তি তথা জীবন-জীবিকার পেশা হিসেবে এবং অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে মানুষের কাছে হাত পাতা নিষিদ্ধ।

    হাদিসে কিয়ামতের দিন এর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবে অপরিচিত কারও নিকট কোনও কিছু উপহার চাওয়া আত্মমর্যাদার পরিপন্থী। ব্যক্তিত্ববান মানুষের এমনটি করা উচিৎ নয়।

    জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভিক্ষা করা নিষিদ্ধ:

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ

    “যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট অর্থ চায় সে মূলত: (জাহান্নামের) জ্বলন্ত অঙ্গার চায়। অতএব সে কম-বেশি যা ইচ্ছা চাক।”

    মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েজ

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    ‏ لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ

    “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রশি নিয়ে (বন-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে) পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করার ফলে আল্লাহ তাকে (ভিক্ষাবৃত্তির অপমান থেকে) রক্ষা করেন তাহলে তা মানুষের নিকট তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম। তারা দিতেও পারে নাও পারে।”

    সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়: হাদিস ৫৫০

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ

    “যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।”

    সহীহ বুখারী ১৪৭৪ ও মুসলিম ১০৪০

    উপহারের প্রতিদান দেওয়া সুন্নত:

    মনে রাখতে হবে, ইসলামে উপহার লেনদেন করা সুন্নত। এতে পারস্পারিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে কেউ উপহার দিলে উপহার দাতাকে প্রতিদান দেওয়াও সুন্নত।

    হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    عنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا‏.‏ لَمْ يَذْكُرْ وَكِيعٌ وَمُحَاضِرٌ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ‏.‏

    আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া কবুল করতেন এবং তার প্রতিদানও দিতেন।”

    সহীহ বুখারি, অধ্যায়: ৪৩/ হিবা (উপহার) প্রদান, পরিচ্ছেদ: ১৬১৫. হিবার প্রতিদান দেওয়া

    ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    وَمَنْ أَتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ‏

    “যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভালো কিছু করে তাহলে তোমরা তার প্রতিদান দাও। প্রতিদান দেয়ার মত কিছু না থাকলে তার জন্য দোয়া করো, যাতে সে অনুভব করতে পারে যে, তোমরা তার ভালো কাজের প্রতিদান দিয়েছ।”

    আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ আল-আদাবুল মুফরাদ, অধ্যায়: ভদ্র আচার ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ১১০- যার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় সে যেন তার উত্তম বিনিময় দেয়।-সহিহ

    ইসলাম মানুষের কাছে কোনও কিছু চাওয়ার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করে:

    আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ইসলাম মানুষকে উন্নত চরিত্র ও সম্মানজনক আত্মমর্যাদা শিক্ষা দেয়, অন্যের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাতে নিষেধ করে এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে নিরুৎসাহিত করে। যেমন: হাদিসে এসেছে,

    عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: دَعَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَشْتَرِطُ عَلَيَّ: «أَنْ لَا تَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا» قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: «وَلَا سَوْطَكَ إِنْ سَقَطَ مِنْكَ حَتَّى تنزل إِلَيْهِ فتأخذه» . رَوَاهُ أَحْمَدُ

    আবু যার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ডেকে এনে আমার ওপর শর্তারোপ করে বললেন, “তুমি কারো কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। আমি বললাম, আচ্ছা। তারপর তিনি বললেন, “এমনকি তোমার হাতের লাঠিটাও যদি পড়ে যায় কাউকে উঠিয়ে দিতে বলবে না। বরং তুমি নিজে নেমে তা উঠিয়ে নেবে।”

    মুসনাদে আহমদ, হা/২১৫০৯, সহীহ আত তারগীব, হা/ ৮১০, সহীহুল জামে, হা/ ৭৩০৭

    সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

    من يتقبَّلُ لي بواحدةٍ وأتقبَّلُ لَهُ بالجنَّةِ قلتُ أنا قالَ لا تسألِ النَّاسَ شيئًا قالَ فَكانَ ثَوبانُ يقعُ سوطُهُ وَهوَ راكبٌ فلا يقولُ لأحدٍ ناوِلنيهِ حتَّى ينزلَ فيأخذَهُ

    “কে আছে যে, আমার একটি কথা কবুল করবে? আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো। আমি বললাম, আমি। তিনি বললেন, “তুমি মানুষের কাছে কোনও কিছু চাইবে না।”বর্ণনা কারী বলেন, সাওবান রা. সওয়ারিতে আরোহী থাকা অবস্থায় যদি তার হাতের ছড়িটা নিচে পড়ে যেতো তাহলে তিনি কাউকে বলতেন না যে, এটি আমাকে তুলে দাও। বরং তিনি বাহন থেকে নেমে তা তুলে নিতেন।”

    নাসায়ী, হা/২৫৯০, আবু দাউদ, হা/ ১৬৪৩,-সহিহ ইবনে মাজা, হা/১৪৯৯

    সুবহানাল্লাহ! ইসলাম মানুষকে কতটা আত্ম মর্যাদাবান হতে শেখায়। প্রকৃতপক্ষে কারও কাছে কোনও কিছু চাওয়া হলে সে তার কাছে ছোট হয়ে যায়। যে ব্যক্তি দরকারে হোক বিনা দরকারে হোক মানুষের কাছে টাকা-পয়সা বা অর্থ-সম্পদ চায় মানুষ তাদেরকে অপছন্দ করতে শুরু করে।

    তাই তো হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন,

    এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে একটা বিষয় বলে দিন যা করলে আমাকে আল্লাহও ভালবাসেন এবং মানুষও ভালবাসবে। তিনি বললেন, «ازْهَدْ في الدُّنْيَا يُحِبّك اللهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ‘‘দুনিয়া থেকে লালসামুক্ত হও তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর মানুষের ধন-সম্পদ থেকে লালসামুক্ত হও তাহলে তারাও তোমাকে ভালবাসবে।’’

    ইবনে মাজাহ, হাসান-সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/ ৯৪৪

    সুতরাং আমাদের কর্তব্য, মানুষের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে না তাকানো এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও নিকট সাহায্যের আবেদন না করা বা কারও কাছে হাত না পাতা। এটি উন্নত ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার বহিঃপ্রকাশ।

    আরও পড়ুনঃ জন্মদিন পালন এবং উইশ করার বিধান

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা