Category: যাকাআত

  • ফসলের যাকাতের পদ্ধতি ও পরিমাণ

    ফসলের যাকাতের পদ্ধতি ও পরিমাণ

    প্রশ্ন: ধানের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ ওশর দিতে হয়? বৃষ্টির পানি আর সেচের পানি দ্বারা ধান উৎপন্ন হলে কি যাকাতের পরিমাণে কোন তফাৎ হয়?

    উত্তরঃ কৃষিজাত ফসল যেমন ধান, গম, যব ইত্যাদির যাকাত দিতে হয়।

    ❖ ফসলের নিসাবঃ

    রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    لَيْسَ فِي حَبٍّ وَلا تَمْرٍ صَدَقَةٌ حَتَّى يَبْلُغَ خَمْسَةَ أَوْسُقٍ
    ” পাঁচ ওয়াসাক এর কম শস্যদানা ও খেজুরে যাকাত নেই।”

    বুখারী ১৪৮৪

    বর্তমান কেজির হিসেবে ৫ ওয়াসাক এর পরিমাণ প্রায় ১৮ মন ৩০ কেজি। এই পরিমাণ ধান, গম, যব, খেজুর ইত্যাদি ফসলে যাকাত দেয়া ফরজ। এর চেয়ে কম হলে তাতে যাকাত নেই।

    ❖ ফসলের যাকাতের পরিমাণঃ

    এ ক্ষেত্রে পানি দিতে অর্থ খরচ হওয়া না হওয়ার উপর ভিত্তি করে যাকাত কমবেশি হয়। যেমন,
    ফসলে যদি পানি দেয়ার জন্য যদি অতিরিক্ত অর্থ খরচ না ও পরিশ্রম না হয় বরং শুধু বৃষ্টি, খাল-বিল, নদী-নালা, ঝর্ণা ইত্যাদির পানি দ্বারা চাষাবাদ করা হয়ে থাকে তাহলে উৎপন্ন ফসলের ১০ ভাগের ১ ভাগ বা ১০% যাকাত দিতে হবে।

    আর যদি ফসলে পানি দেয়ার জন্য অতিরিক্ত খরচ ও পরিশ্রমের প্রয়োজন পড়ে তাহলে ২০ ভাগের ১ বা ৫% ভাগ যাকাতের খাতে দিয়ে দিতে হবে।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

    فِيمَا سَقَتْ السَّمَاءُ وَالْعُيُونُ أَوْ كَانَ عَثَرِيًّا الْعُشْرُ ، وَمَا سُقِيَ بِالنَّضْحِ نِصْفُ الْعُشْرِ ) .
    “বৃষ্টি ও ঝর্ণার পানি দ্বারা বা কেবল নিজের কাণ্ড দ্বারা পানি শোষণ করে (বিনা সেচে) যে ফসল উৎপন্ন হয় তাতে দশ ভাগের ১ ভাগ যাকাত ফরজ আর যে ফসল সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন হয় তাতে ২০ ভাগের ১ ভাগ যাকাত আবশ্যক হবে।”

    সহীহুল বুখারী, ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত

    আল্লাহু আলাম

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, ksa

  • যাকাত বিষয়ক খুঁটিনাটি কিছু বিষয়-যেগুলো জানা খুবই জরুরি

    যাকাত বিষয়ক খুঁটিনাটি কিছু বিষয়-যেগুলো জানা খুবই জরুরি

    প্রশ্নাবলী:
    ক. কারো কাছে যদি ৪৫ লাখ টাকা থাকে তাহলে এর যাকাত কী পরিমাণ হবে?

    খ. বর্তমানে বাজার মূল্য অনুযায়ী স্বর্ণ বিক্রয় করতে গেলে ২০% মূল্য কমে বিক্রি করতে হয়। তাহলে এই ২০% বাদ দিয়ে তারপর যে টাকা থাকবে সে টাকা থেকে কি যাকাত দিতে হবে?

    গ. কাপড় দিয়ে যাকাত আদায় শুদ্ধ হবে কি? ইতোপূর্বে কাপড় দিয়ে যাকাত দেয়া হয়েছ। এতে কি যাকাত আদায় হয়েছে? এখন টাকা দিলে গ্রামের মানুষ উল্টাপাল্টা কথা বলবে। তাই যদি মানুষের কথার ভয়ে কাপড় দিয়ে যাকাত দেয়া হয় তাহলে কি যাকাত আদায় হবে?

    ঘ. কোন কোন অত্মীয়কে যাকাতের টাকা দেওয়া জায়েয ও কেমন আর্থিক পরিস্থিতি হলে আত্মীয়কে যাকাত দেওয়া যাবে?

    উত্তর:

    ক. কারো নিকট সর্ব নিম্ন ৮৫ গ্রাম স্বর্ণ, তার মূল্য সমপরিমাণ নগদ অর্থ বা ব্যবসায়িক পণ্য এক বছর জমা থাকলে তাতে ২.৫০% হারে যাকাত ফরয হয়। অর্থাৎ এক লাখ টাকায় ২,৫০০ টাকা।
    সুতরাং ৪৫ লাখ টাকায় যাকাত আসবে (৪৫,০০০০০×২.৫%)= ১,১২৫০০ টাকা।

    খ. বাড়িতে গচ্ছিত স্বর্ণের যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে টাকা দ্বারা যাকাত আদায়ের পদ্ধতি হল, উক্ত পুরাতন স্বর্ণ বাজারে বিক্রয় করলে যে দাম পাওয়া যাবে তার হিসাব ধরতে হবে; নতুন স্বর্ণের দাম নয়।
    সুতরাং পুরাতন স্বর্ণের দাম নতুন স্বর্ণের চেয়ে ২০% কম হলে তাই ধর্তব্য হবে এবং সে আলোকে স্বর্ণের মূল্য দ্বারা যাকাত বের করতে হবে।

    অবশ্য সরাসরি নগদ টাকার যাকাত আদায়ের ক্ষেত্রে বর্তমানে নতুন স্বর্ণের বাজার মূল্য হিসেব করতে হবে।

    গ. একান্ত জরুরি না হলে টাকা ছাড়া অন্য কিছু দিয়ে যাকাত দেয়া ঠিক নয়। কেননা টাকা দ্বারা গরিব মানুষ অধিক লাভবান হবে এবং সে ইচ্ছেমত তার প্রয়োজন পূরণ করতে পারবে।

    কিন্তু যদি এ আশংকা থাকে যে, টাকা দিলে যাকাত গ্রহীতা অপ্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে তা খরচ করে ফেলবে বা টাকা নষ্ট করবে তাহলে সে ক্ষেত্রে তার প্রয়োজন অনুসারে যাকাতের টাকা দ্বারা কাপড়-চোপড়, টিউবওয়েল, ঘর-বাড়ি তৈরি সহ তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী দেয়া যেতে পারে।
    তবে বর্তমান যুগে কিছু অর্থশালী মানুষ ট্রাকের উপর থেকে যেভাবে গরিবদের মাঝে ‘যাকাতের কাপড়’ ছিটায় আর তা সংগ্রহ করতে গিয়ে তারা হুড়োহুড়ির মধ্যে পদপিষ্ট হয়ে মরা যায় এটি শুধু শরিয়া বিরোধী নয় বরং অত্যন্ত গর্হিত ও অমানবিক কাজ। এটি দরিদ্র মানুষের প্রতি ধনীদের এক নির্মম উপহাস ছাড়া কিছু নয়। তাই এভাবে যাকাত বণ্টন পদ্ধতি বন্ধ হওয়া জরুরি।

    – ইতোপূর্বে না জানার কারণে কাপড় দ্বারা যাকাত দিয়ে থাকলে দুআ করি, আল্লাহ কবুল করুন। কিন্তু জানার পর থেকে আর এমনটি করা ঠিক হবে না।

    ঘ. এমন গরিব-অসহায় আত্মীয়-স্বজনকে যাকাত দেয়া জায়েয যাদের ভরণ -পোষণ দেয়া আপনার জন্য ফরয নয়। যেমন: পিতা, মাতা, স্ত্রী প্রমুখকে যাকাত দেয়া যাবে না। কেননা তাদের ভরণ-পোষণ দেয়া আপনার উপর ফরয।
    কিন্তু ভাই, বোন, চাচা, চাচী, ফুফা, খালু, মামা ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে যাকাত দেয়া যাবে যদি তারা যাকাত পাওয়ার হকদার হয়। এমন কি স্ত্রী যদি ধনী হয় আর স্বামী যদি গরিব হয় তাহলে স্ত্রী তার স্বামীকে যাকাত দিতে পারে। কেননা, স্বামীর ভরণ-পোষণ দেয়া স্ত্রীর জন্য ফরয নয়।
    আল্লাহু আলাম।
    ▬▬▬▬❖🔹❖▬▬▬
    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব