Category: আকীদাহ আলোচনা

  • শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কি? তা কি শিরক?

    শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কি? তা কি শিরক?

    প্রশ্নঃ ইসলামের দৃষ্টিতে শহীদ মিনারে ফুল দেওয়ার বিধান কি? এটিকি শিরক হয়ে যাবে?

    প্রথমতঃ আমাদের জানা জরুরি যে, ইসলামের দৃষ্টিতে কোন মুসলিম মৃত বরণ করলে (চাই স্বাভাবিক মৃত্যু হোক বা জিহাদের ময়দানে শাহাদত বরণ করুক অথবা অন্যায়ভাবে জুলুমের শিকার হয়ে মৃত্যু হোক) তার জন্য কী কী করণীয় তা নির্দিষ্ট করা আছে।

    যেমনঃ তাদের জন্য দোয়া করা, তাদের পক্ষ থেকে গরিব-অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা ও জন কল্যাণ মূলক কাজ করা, সকদায়ে জারিয়া মূলক কার্যক্রম করা, তাদের উদ্দেশ্যে হজ-উমরা আদায় করা ইত্যাদি। এগুলোর মাধ্যমে তারা কবরে উপকৃত হবে ইনশাআল্লাহ।

    এটি অমুসলিমদের সংস্কৃতি

    পক্ষান্তরে তাদের স্মৃতি রক্ষার উদ্দেশ্যে তথাকথিত স্মৃতি স্তম্ভ ও শহীদ মিনার নির্মাণ করা, তাতে পুষ্পার্ঘ নিবেদন করা ও সেনাবাহিনী কর্তৃক স্যালুট জানানো, তাদের উদ্দেশ্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা, মোমবাতি জ্বালান, মশাল জ্বালানো, শিখা অনির্বাণ বা শিখা চিরন্তন প্রজ্বলন ইত্যাদি হল, অমুসলিমদের সংস্কৃতি- যা অমুসলিম সংস্কৃতিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত ও ইসলাম সম্পর্কে অজ্ঞ মুসলিমরা অবলীলা ক্রমে তাদের অন্ধ অনুকরণ বশত: পালন করে থাকে। ইসলামের সাথে এগেুলোর দূরতম কোন সম্পর্ক নাই। ‌

    অথচ ইসলামে অমুসলিমদের অনুসরণ-অনুকরণ করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ-চাই তা ইবাদতের ক্ষেত্রে হোক অথবা আচার-আচরণ, পোশাক-পরিচ্ছদ, রীতি-নীতি বা কৃষ্টি-কালচারের ক্ষেত্রে হোক। কেননা হাদিসে এসেছেঃ

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

    “যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”

    সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ

    এছাড়াও হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কিয়ামতের পূর্বে অনেক মুসলিম ইহুদি-খৃষ্টানদের রীতি-নীতি অনুসরণ করবে বলে ভবিষ্যতবাণী করেছেন-বর্তমানে যার বাস্তব প্রতিফলন আমরা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি।

    সাহাবী আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত আছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    «لَتَتَّبِعُنَّ سَنَنَ مَنْ كَانَ قَبْلَكُمْ حذو القذة بالقذة حَتَّى لَوْ دخلوا جُحْرَ ضَبٍّ لَدخلتتُمُوهُ قالوا: يَا رسول الله الْيَهُودَ وَالنَّصَارَى. قَالَ: فَمَنْ؟»

    ‘‘তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী উম্মতদের অভ্যাস ও রীতি-নীতির ঠিক ঐ রকম অনুসরণ করবে, যেমন এক তীরের ফলা অন্য এক তীরের ফলার সমান হয়। অর্থাৎ তোমরা পদে পদে তাদের অনুসরণ করে চলবে। এমনকি তারা যদি ষণ্ডা (মরুভূমিতে বসবাসকারী গুই সাপের ন্যায় এক ধরণের জন্তু বিশেষ) এর গর্তে প্রবেশ করে থাকে, তাহলে তোমরাও সেখানে প্রবেশ করবে।”

    সাহাবীগণ বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! পূর্ববর্তী উম্মত দ্বারা আপনি কি ইহুদী ও খৃষ্টানদেরকে বোঝাচ্ছেন?

    তিনি বললেন: তবে আর কারা?

    [বুখারি, অধ্যায়: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বাণী: ”তোমরা অবশ্যই পূর্ববর্তী লোকদের রীতি-নীতির অনুসরণ করবে।” তবে বুখারির বর্ণনায় حذو القذة بالقذة – এই শব্দসমূহ নেই। তার স্থলে شبرا بشبر وذراعا بذراع শব্দগুলো রয়েছে। অর্থাৎ এক হাতের বিঘত যেমন অন্য হাতের বিঘতের সমান হয় এবং এক হাতের বাহু অন্য হাতের বাহুর সমান হয়।]

    এমন কি সরাসরি মৃতদের কবরেও এসব কার্যক্রম করা দীনের মধ্যে চরম গর্হিত ও নিন্দনীয় কাজ। আর শহিদ মিনার বা স্মৃতি সম্ভে ফুল দেয়া সরাসরি শিরক না হলেও তা শিরকের দিকে ধাবিত হওয়ার মাধ্যম। কাফেরদের অন্ধ অনুকরণ তো বটেই। সব দিক থেকেই তা পালন করা হারাম। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন)

    এধরণের আরও কিছু কাজ

    অনুরূপভাবে মৃত ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে শবিনা খানি, কুলখানি, ইসালে সওয়াব, মিলাদ মাহফিল, মৃত্যু বার্ষিকী পালন, স্মরণ সভা, ওরশ মাহফিল ইত্যাদি হল দীনের মধ্যে নব সংযোজিত বিদআত। আর বিদআত হল, ভ্রষ্টতা এবং জাহান্নামের পথ। ইসলামের লেবাস পরা ‘দেখিত সুন্দর’ প্রতিটি বেদআতই হল, শয়তানের দেখানো সুসজ্জিত পথ।

    কেউ যদি বিশ্বাস করে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীনের মধ্যে কোনও কমতি রেখে গেছেন তাহলে সে প্রকারান্তরে ইসলামকে অপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ‘রেসালাতের দায়িত্ব পালনে অবহেলা কারী’ হিসেবে অভিযুক্ত করল। (নাউযুবিল্লাহ)

    অথচ ইসলাম পরিপূর্ণ এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পূর্ণাঙ্গভাবে তা উম্মতের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং তাতে সামান্যতম সংযোজন ও বিয়োজনের কোনও সুযোগ নাই।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই হওয়া সাল্লাম দ্বীনের ভিতর নতুন নতুন বিদআত তৈরি করার ব্যাপারে কঠিন ভাবে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন,

    وَإِيَّاكُمْ وَمُحْدَثَاتِ الأُمُورِ، فَإِنَّ كُلَّ بِدْعَةٍ ضَلالَةٌ

    “দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্ট বিষয়াদি থেকে সাবধান! কারণ প্রতিটি নতুন আবিষ্কৃত বিষয়ই গোমরাহি।

    [মুসতাদরাক, কিতাবুল ইলম, আলবানী রা. হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সিলসিলা সাহীহা (সহীহ হাদিস সিরিজ) হাদিস নং ২৭৩৫]

    তিনি বিভিন্ন সময় বক্তৃতা দেয়ার শুরুতে বলতেন:

    أَمَّا بَعْدُ: فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيثِ كِتَابُ اللَّهِ وَخَيْرُ الْهُدَى هُدَى مُحَمَّدٍ وَشَرُّ الأُمُورِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ

    “অতঃপর,সর্বোত্তম বাণী হল আল্লাহর কিতাব। আর সর্বোত্তম নির্দেশনা হচ্ছে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নির্দেশনা। সব চেয়ে নিকৃষ্ট জিনিস হল দ্বীনের মধ্যে নতুন আবিষ্কৃত বিষয়াদি। আর প্রতিটি নতুন বিষয়ই ভ্রষ্টতা।

    [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: নামায এবং খুতবা সংক্ষিপ্ত করা।]

    প্রশ্নোত্তরের সার কথা হল, শহিদ মিনারে ফুল দেয়া সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে অমুসলিমদের সাদৃশ্য অবলম্বন ও তাদের অন্ধ অনুকরণে কারণে হারাম। কোনও মুসলিমের জন্য কথিত শহিদদের বেদীতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করা এবং এর সাথে সম্পৃক্ত কোনও কার্যক্রমে অংশ গ্রহণ করা জায়েজ নাই। কেউ অজ্ঞতা বশত: এমনটি করে থাকলে তার উচিৎ, অনতি বিলম্বে আল্লাহর নিকট তওবা করা। নিশ্চয় আল্লাহ তওবা কবুল কারী।

    আরও পড়ুনঃ গোপন শিরক ও এর ভয়াবহতা

    আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের কু সংস্কৃতি, অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণ এবং ইসলামের নামে সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন”। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • ওসিলা শব্দের সঠিক অর্থ – বাঁচুন অপব্যাখ্যা থেকে

    ওসিলা শব্দের সঠিক অর্থ – বাঁচুন অপব্যাখ্যা থেকে

    ওসিলা, এই শব্দটি কুরআনুল কারীম এর সূরা মায়িদা এর ৩৫ নং আয়াতে এসেছে। উপমহাদেশের (তথা ভারত-বাংলাদেশ-পাকিস্তান) কয়েকটি দেশ সহ কিছু মুসলিম দেশেও এই আয়াত ও এই ওসিলা শব্দটিকে বলা হয়ে থাকে পীর ধরার কথা বলা হয়েছে। ওসিলা শব্দটির সঠিক অর্থ জানতে চাই। এই আয়াতের সঠিক ব্যাখ্যা জানতে চাই।

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يٰٓأَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَابْتَغُوٓا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ وَجٰهِدُوا فِى سَبِيلِهِۦ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

    “হে ঈমানদাগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর, (আনুগত্য ও সন্তোষজনক আমলের মাধ্যমে) তাঁর নৈকট্য লাভের উপায় সন্ধান কর এবং তাঁর পথে জিহাদ কর, যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।”

    (সূরা মায়িদা: ৩৫)

    উক্ত আয়াতের সঠিক তাফসিরঃ

    আল্লাহ তাআলা মু’মিনদেরকে নির্দেশ দিচ্ছেন তাঁকে ভয় করার এবং তাঁর কাছে ওসিলা বা নৈকট্য অন্বেষণ করারওসিলা (الوسيلة) এর আভিধানিক অর্থ হল মাধ্যম ও নৈকট্য

    আন-নিহায়াহতু ফী গারীবিল হাদিস ওয়াল আসার ৫/১৮৫, লিসানুল আরব ১১/৭২৪

    উপরে উল্লেখিত উভয় অর্থেই ওসিলা শব্দটি ব্যবহার হয়। তবে সাহাবি, তাবেঈ ও বিশিষ্ট মুফাসসিরগণ এ আয়াতে ওসিলা শব্দটিকে মাধ্যম অর্থে ব্যবহার না করে “নৈকট্য” অর্থে ব্যবহার করেছেন। ইবনে আব্বাস রা. বলেন, الوسيلة অর্থ القربة বা নৈকট্য। কাতাদাহ রাহ. বলেন,

    تقربوا إليه بطاعته والعمل بما يرضيه

    “আল্লাহ তা‘আলার আনুগত্য ও যেসব কাজে তিনি খুশি হন, তার দ্বারা তাঁর নৈকট্য হাসিল কর।”

    ইবনে কাসির, ৩/১২৪

    তাই আয়াতের অর্থ হলঃ হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহ তা‘আলাকে ভয় কর এবং তাঁর আনুগত্য ও সৎ আমলের মাধ্যমে নৈকট্য অন্বেষণ কর।

    যেভাবে ওসিলা শব্দটির অপব্যাখ্যা করা হয়ঃ

    এক শ্রেণির নামধারী মুসলিম ইসলামকে ব্যবসার বস্তু বানিয়ে নিজের জীবনোপকরণ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। আর অপর শ্রেণি ধর্মীয় জ্ঞানের অভাবে তাদের ব্যবসাকে ভাল মনে করে নিজেদেরকে সম্পৃক্ত করে ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। সহজ কথায় ওসীলার দোহাই দিয়ে পীর-মুরিদীর ব্যবসা চালু করেছে।

    সেসব নামধারী ধর্মীয় ব্যবসায়ীগণ বলে: শুধু ঈমান ও আমলের দ্বারা সাধারণ মানুষের পক্ষে আল্লাহ তা‘আলার নৈকট্য হাসিল করা সম্ভব নয় বরং একজন পীরের হাতে বাইআত নিতে হবে।

    বান্দা যখন গুনাহ করতে করতে চরম পর্যায়ে চলে যায় তখন আল্লাহ তাআলা ও বান্দার মাঝে আড়াল সৃষ্টি হয়ে যায়। আল্লাহ তাআলা সে বান্দার গুনাহ ক্ষমা করতে চান না। পীর সাহেবের অনুনয়-বিনিয়ের কারণে আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করে দেন। জনৈক পীর সাহেব অত্র আয়াতের তাফসীরে তার বইতে লিখেছেন: “আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য একজন পীরের হাতে বাইআত কর।” (নাউযুবিল্লাহ)

    মূলত কোন পীর, গাউস-কুতুব, বাবা, খাজার হাতে বাইআত করা অথবা মাজারে গিয়ে ওসিলা তালাশ করা সম্পূর্ণ শিরকি ও বিদআতি কাজ-যা মক্কার তৎকালীন মুশরিকরা করত। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

    مَا نَعْبُدُهُمْ إِلَّا لِيُقَرِّبُونَآ إِلَي اللّٰهِ زُلْفٰي

    “আমরা তো এদের উপাসনা এজন্য করি, যেন তারা আমাদেরকে আল্লাহর নৈকট্যে পৌঁছে দেয়।”

    সূরা যুমার ৩৯:৩

    শরিয়তসম্মত ওসিলা তিন প্রকারঃ

    ১. আল্লাহ তাআলার সুন্দর নাম ও গুণাবলীর ওসিলায় দুআ করা। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَلِلہِ الْاَسْمَا۬ئُ الْحُسْنٰی فَادْعُوْھُ بِھَا

    “আল্লাহর জন্য রয়েছে সুন্দর সুন্দর নাম। অতএব তোমরা তাঁকে সে সকল নামেই ডাক।”

    সূরা আরাফ ৭:১৮০

    অনুরূপ সহীহ হাদিসে এসেছে:

    يا حَيُّ يا قَيُّومُ بِرَحْمَتِكَ أَسْتَغِيثُ

    “হে চিরঞ্জীব! হে সবকিছুর ধারক! আমি তোমার রহমতের ওসীলায় সাহায্য কামনা করছি।”

    নাসায়ী হা: ৩৫২৪, সহীহ

    ২. সৎ আমলের দ্বারা ওসীলা করা। যেমন ঈমান, সালাত, যাকাত, সিয়াম, হজ্জ ইত্যাদি।

    সহীহ হাদিসে এসেছে- একদা বানী ইসরাইলের তিন ব্যক্তি পথে চলছিল, ঝড় বৃষ্টির কারণে তারা একটি পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত গুহায় আশ্রয় নেয়। পাহাড়ের চূড়া থেকে একটি পাথর গড়িয়ে পড়ে তাদের গুহার মুখ বন্ধ হয়ে গেলে তারা পরস্পর বলতে লাগল,

    إِنَّهُ لَا يُنْجِيْكُمْ مِنْ هَذِهِ الصَّخْرَةِ إِلَّا أَنْ تَدْعُوا اللّٰهُ بِصَالِحِ أَعْمَالِكُمْ

    “তোমাদের সৎ আমলের ওসিলায় আল্লাহ তা‘আলাকে আহ্বান না করা ব্যতীত এ পাথর থেকে তোমাদের মুক্তির কোন উপায় নেই।”

    সহীহ বুখারি হা: ২২৭২, সহীহ মুসলিম হা: ২৭৪৩

    মানুষ তার কৃত শরিয়তসম্মত আমলের ওসিলায় আল্লাহ তা‘আলার কাছে মুক্তি ও সাহায্য চাইবে।

    ৩. কোন ব্যক্তির দুআর মাধ্যমে ওসিলা করা। তবে শর্ত হল:

    • ব্যক্তি জীবিত থাকতে হবে।
    • ব্যক্তি নেককার ও মুত্তাকি হতে হবে।
    • উপস্থিত থাকতে হবে।

    যেমন সাহাবিগণ রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর ইন্তেকালের পর তাঁর চাচা আব্বাস রা.-এর দু‘আর ওসীলায় আল্লাহ তাআলার কাছে বৃষ্টি প্রার্থনা করতেন। (সহীহ বুখারি হা: ১০১০)

    অতএব কোন মৃত ব্যক্তির ওসিলা গ্রহণ করা, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর সত্ত্বা দ্বারা ওসিলা তালাশ করা, তার সম্মান ও মর্যাদা দ্বারা ওসিলা তালাশ করা ও কোন বুজুর্গ ব্যক্তি, কবর বা মাজারের ওসিলা তালাশ করা বিদআত এবং পর্যায়ক্রমে তা শিরকে পৌঁছে দেয়া।

    আয়াত থেকে শিক্ষণীয় বিষয়ঃ

    • সর্বদা আল্লাহ তাআলাকে ভয় করা আবশ্যক।
    • ঈমান ও সৎ আমল দ্বারা ওসীলা গ্রহণ করা শরীয়তসম্মত।
    • শর্ত সাপেক্ষে জীবিত ব্যক্তির ওসিলা গ্রহণ বৈধ।
    • সমাজে প্রচলিত ওসিলার অপব্যাখ্যা ও পীর-মুরিদির অসারতা সম্পর্কে জানলাম।
    • কিয়ামতের দিন শাস্তি থেকে বাঁচার জন্য কোন প্রকার বিনিময় দেয়া যাবে না।

    [উৎস: ফাতহুল মাজিদ]

    আরও পড়ুনঃ মনে মনে জিকির করা কি শরিয়ত সম্মত?

    সংকলন ও গ্রন্থনায়ঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • গোপন শিরক ও এর ভয়াবহতা

    গোপন শিরক ও এর ভয়াবহতা

    প্রশ্নঃ গোপন শিরক কি? এর ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে চাই।

    গোপন শিরক এর পরিচয়ঃ

    যে শিরকটি অন্তর বা নিয়তের সাথে সম্পৃক্ত (যা বাহ্যিকভাবে দেখা যায় না) সেটিকে শিরকে খাফী বা গোপন শিরক বলে।

    গোপন শিরকের উদাহরণঃ

    লোক দেখানো, প্রসিদ্ধি অর্জন বা দুনিয়ার স্বার্থ হাসিলে উদ্দেশ্যে কোন আমল করা হচ্ছে গোপন শিরক এর অন্তর্ভুক্ত।

    লোক দেখানের জন্য সুন্দরভাবে নামায আদায় করা, দান-সদকা করা এ উদ্দেশ্যে যে, মানুষ তাকে দানশীল বলবে, মানুষের বাহবা ও প্রশংসা লাভের উদ্দেশ্যে সুকণ্ঠে কুরআন তেলাওয়াত করা, গনীমতের মাল লাভ বা বীর খেতাব পাওয়ার উদ্দেশ্যে জিহাদ করা অথবা শুধু অর্থ কামাইয়ের উদ্দেশ্যে মসজিদের ইমামতি করা ইত্যাদিও গোপন শিরক এর অন্তর্ভুক্ত।

    অনুরূপভাবে আশা, ভয়, তাওয়াক্কুল (ভরসা), ভালাবাসা ইত্যাদি ক্ষেত্রেও শিরক হয়। এ বিষয়গুলোও যেহেতু অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত সেহেতু এগুলো যেভাবে আল্লাহর প্রতি পোষণ করা কতর্ব্য সেভাবে যদি কোন পীর, কবরে শায়িত ওলি-আওলিয়া ইত্যাদির প্রতি পোষণ করা হয় তাহলে তা শিরকে খাফী বা গোপন শিরকে পরিণত হবে।

    গোপন শিরক এর ভয়াবহতাঃ

    এটি অন্তর ও উদ্দেশ্যের সাথে সম্পর্ক হওয়ার কারণে এর ভয়াবহত অনেক বেশি। কেননা খুব নীরবে-নিভৃতে এটি হৃদয়ে এসে বাসা বাধে যা অনেক সময় মানুষ টের পায় না।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ الشِّرْكَ الأَصْغَرَ ” ، قَالُوا : يَا رَسُولَ اللَّهِ ، وَمَا الشِّرْكُ الأَصْغَرُ ؟ قَالَ : ” الرِّيَاءُ ،

    “তোমাদের উপর আমি যে জিনিসের ভয় সবচেয়ে বেশী করছি তা হল শিরকে আসগর। সাহাবারা জিজ্ঞেস করলেন: ইয়া রসূলাল্লাহ! শিরকে আসগর কি? তিনি বললেন: রিয়া (লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে আমল করা) ”আহমদ ৩/৩০,ইবনে মাজাহ হা নং৫২০৪, তাবারানী, বাগাভী

    যদি কোন আমলে রিয়া তথা লোক দেখানোর উদ্দেশ্য সংমিশ্রিত থাকে, তাহলে আল্লাহ তা বাতিল করে দেন।

    আল্লাহ বলেন:

    فَمَنْ كَانَ يَرْجُوا لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا وَلَا يُشْرِكْ بِعِبَادَةِ رَبِّهِ أَحَدًا

    “অতএব যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সাক্ষাত কামনা করে, সে যেন সৎকর্ম সম্পাদন করে এবং তার পালনকর্তার ইবাদতে কাউকে শরীক না করে ”

    সূরা কাহাফ ১১০

    সুতরাং আমাদের সকলেরই উচিৎ গোপন শিরক এর মত ভয়াবহ বিষয় সম্পর্কে ভালো করে জানা ও এ বিষয়ে সদা সতর্ক থাকা যেন আমরা কোন ভাবেই গোপন শিরকের মত ভয়াবহ ফাঁদে পা না দেই।

    শিরকের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ – বই ডাউনলোড

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • কুরআন কি আল্লাহর সৃষ্টি?

    কুরআন কি আল্লাহর সৃষ্টি?

    আসলে কুরআন কি?

    কুরআন আল্লাহর কালাম বা বাণী। তা আল্লাহর সৃষ্টি জগতের অন্তর্ভুক্ত নয় বরং এটি তার যাত বা স্বত্বার এক অবিচ্ছেদ্য সিফত (বৈশিষ্ট্য)। সিফত বা গুণ-বৈশিষ্ট্য কখনো যাত বা স্বত্বা থেকে আলাদা হয় না। আল্লাহর কোনো গুণ কখনো তার সৃষ্টি হতে পারে না। বরং তার যাত বা স্বত্বা যেমন অনাদি ও অবিনশ্বর তাঁর প্রতিটি সিফাতও (যেমন কথা বলা, দেখা, শোনা, হাত, চোখ ইত্যাদি) অনুরূপ।

    কুরআন কি সৃষ্টি?

    সুতরাং আল্লাহর কালাম বা কথাকে আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টি জগতের মত একটি সৃষ্টি বস্তু বলার মানে হল, আল্লাহর কথা বলার সিফাতকে অস্বীকার করা।

    আবার আল্লাহর কালামকে সৃষ্টি বলা হলে তাতে তার অর্থ হল, আল্লাহর সকল সৃষ্টি যেমন একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে আল্লাহর কালামও একদিন ধ্বংস হয়ে যাবে! নাউযুবিল্লাহ। এটি একটি কুফরি বিশ্বাস-তাতে কোন সন্দেহ নাই।

    সালাফদের মত

    যাহোক, “কুরআন আল্লাহর কালাম এবং তা আল্লাহর সৃষ্টি নয়।” এ ব্যাপারে সালাফদের মাঝে কোন দ্বিমত ছিল না এবং এখনো হক পন্থীদের মাঝে কোন দ্বিমত নেই আল হামদুলিল্লাহ।

    কুরআন সৃষ্টি, এ কথা এলো যেভাবে

    ইতিহাস বলে, সর্বপ্রথম কতিপয় বাতিল ফিরকা ও বিদআতি গোষ্ঠী যেমন মুতাযিলা, জাহমিয়া এবং আহলুল কালাম বা যুক্তিবিদরা ‘কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ বলে বিতর্ক সৃষ্টি করে। এ মতবাদ দ্বারা তারা আল্লাহর সকল সিফাতকে অস্বীকার করতে চায়।

    এ মতবাদকে কেন্দ্র করে আব্বাসিয় ও উমাইয়া খেলাফত কালীন সময় মুসলিমদের মাঝে এক চরম ফিতনা-ফ্যাসাদের সৃষ্টি হয়। বিদআতিদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে আব্বাসী খলীফা মামুন (আব্বাসীয় খেলাফতের ৭ম খলীফা হারুনুর রশিদ এর ছেলে। তার প্রকৃত নাম আব্দুল্লাহ-মৃত্যু ২১৮ হিজরি) এই মতবাদে বিশ্বাসী হওয়ায় সমগ্র মুসলিম বিশ্বে তা ছড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করে এবং যারা এ মতবাদকে গ্রহণ করতে রাজি হয় নি তাদেরকে অনেক জুলুম-নির্যাতন করে।

    বিরোধী মতের সকল কাজী বা বিচারকদেরকে পদচ্যুত করে। আহলুস সুন্নাহর মহান ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রহ. সহ অনেক আলেমের প্রতি নিষ্ঠুর অত্যাচার করে। অবশেষে খলীফা মুতাওয়াক্কিল ক্ষমতায় এসে এই ফেতনার সমাপ্তি ঘটান এবং জেলবন্দিদেরকে বের করে আনেন।

    ‘কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি নয়’- এ ব্যাপারে অভিমত

    💠 ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রা. বলেন,

    والقرآن كلام الله، ليس بمخلوق، فمن زعم أن القرآن مخلوق فهو جهمي كافر ومن زعم أن القرآن كلام الله عز وجل ووقف ولم يقل مخلوق ولا غير مخلوق: فهو أخبث من الأول،

    “কুরআন আল্লাহ কালাম (বাণী); মাখলুক বা সৃষ্ট নয়। যে ব্যক্তি মনে করে যে, কুরআন আল্লাহর মাখলুক (সৃষ্ট) সে জাহমী-কাফির। আর যে ব্যক্তি কুরআন আল্লাহর কালাম বলে চুপ থাকে- মাখলুক না কি মাখলুক নয় সে ব্যাপারে কোন মন্তব্য করে না-সে ১ম ব্যক্তির থেকেও নিকৃষ্ট।

    💠 ইমাম ইবনে আব্দুল ইয আল হানাফি (তাহাবীয়া গ্রন্থের ভাষ্যকার), বলেন:

    فأهل السنة كلهم من أهل المذاهب الأربعة وغيرهم من السلف والخلف متفقون على أن كلام الله غير مخلوق

    “চার মাযহাব সহ পূর্বসূরি ও পরবর্তী মনিষীদের সকলেই একমত যে, আল্লাহর কালাম মাখলুক নয়।

    💠 ইমাম ইবনে তাইয়িমা রহঃ এর ব্যাপারে অত্যন্ত দৃঢ়তা সূলভ বক্তব্য আছে। তিনি ‘কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি’ মতবাদে বিশ্বাসীদেরকে অত্যন্ত শক্তিশালী ভাবে জবাব দিয়েছেন।

    💠শায়খ হাফেয আল হাকামী রহ. বলেন:

    কুরআন প্রকৃত অর্থেই আল্লাহর কালাম বা বাণী। অক্ষর-সমূহ এবং তার অর্থ উভয়ই আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। এ নয় যে, আল্লাহর কালাম বলতে শুধু কুরআনের শব্দগুলোকে বুজায়। এমনিভাবে শব্দ ছাড়া শুধু অর্থগুলোর নাম আল্লাহর কালাম নয়। আল্লাহ তা’আলা কুরআনের মাধ্যমে কথা বলেছেন এবং তাঁর নবীর উপর অহি আকারে তা নাযিল করেছেন। মুমিনগণ তা বিশ্বাস করেছে।

    সুতরাং আঙ্গুলের মাধ্যমে কুরআন লিখা, জবানের মাধ্যমে তা তেলাওয়াত করা, অন্তরের মাধ্যমে তা মুখস্থ করা, কান দিয়ে শুনা এবং চোখ দিয়ে দেখলেই তা আল্লাহর কালাম থেকে বের হয়ে যায় না। আঙ্গুল, কালি, কলম এবং কাগজ এগুলোর সবই আল্লাহর সৃষ্টি।

    কিন্তু এ সব দিয়ে যা লেখা হয়েছে তা সৃষ্টি নয়। ঠিক তেমনি জবান এবং আওয়াজ আল্লাহর সৃষ্টি। কিন্তু জবান দিয়ে তা তেলাওয়াত করা হচ্ছে তা মাখলুক তথা সৃষ্টি নয়। বক্ষসুমহ আল্লাহর সৃষ্টি, কিন্তু তাতে যে কুরআন সংরক্ষিত আছে, তা মাখলুক নয়। কান-সমূহ আল্লাহর সৃষ্টি কিন্তু কান দিয়ে কুরআন আমরা শুনছি, তা মাখলুক নয়।

    ▪ আল্লাহ তা’আলা বলেন,

    “ নিশ্চয় এটা সম্মানিত কুরআন, যা আছে সুরক্ষিত কিতাবে”।

    সুরা অওাকিয়াঃ৭৭-৭৮

    ▪আল্লাহ আরও বলেন,

    আপনার প্রতি আপনার পালনকর্তার যে, কিতাব প্রত্যাদিষ্ট করা হয়েছে, তা পাঠ করুন। তাঁর বাক্য পরিবর্তন করার কেউ নাই। তাঁকে ব্যতীত আপনি কখনই কোন আশ্রয় স্থল পাবেন না।

    সুরা কাহাফ-২৭

    তিনি আরও বলেন:

    “আর মূষিকদের কেউ যদি তোমার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করে, তবে তাকে আশ্রয় দেবে, যাতে সে আল্লাহর কালাম শুনতে পায়।”

    সুরা তাওবাঃ ০৬

    কুরআনকে সৃষ্টি মনে করলে কি হবে?

    সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে যে, কুরআন বা কুরআনের কোন অংশ মাখলুক, তাহলে সে কাফির। তার কুফরি এত বড় যে, তাকে সম্পূর্ণ ইসলাম থেকে বের করে দিবে ।

    কেননা কুরআন হচ্ছে আল্লাহর কালাম। তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে। আল্লাহর কাছে তা পুনরায় ফেরত যাবে। আল্লাহর কালাম তাঁর সিফাতের অন্তর্ভুক্ত।

    সুতরাং যে বলবে আল্লাহর কোন সিফত বা গুণ মাখলুক, সে কাফের ও মুরতাদ। তাকে পুনরায় ইসলামে ফেরত আসতে বলা হবে। ফিরে আসলে তো ভাল, অন্যথায় তাকে কাফের হিসেবে হত্যা করা হবে (অবশ্যই এটি মুসলিম শাসক দ্বারা বিচারের মাধ্যমে হতে হবে)

    মুসলিমদের যে সমস্ত হক ও আহকাম রয়েছে তাতে তার কোন অংশ নাই।
    (আ’লামুস সুন্নাহ আল-মানসুরা- ৮৩ নং প্রশ্ন)

    পড়ুনঃ কুরআনের মধ্যে নবিজীর চুল: একটি মিথ্যা ও শয়তানি গুজব

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • আকিদা কী ও গুরুত্ব

    আকিদা কী ও গুরুত্ব

    প্রশ্ন: আমরা ছোটবেলা থেকেই আলহামদুল্লিলাহ কোরআন পড়া শিখেছি, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি, সৎ পথে থাকার চেষ্টা করি..। এরপরও কি আমাদের জন্য আকিদা জানা খুবই জরুরি? বা আকিদা সম্পর্কে জানার ফজিলত কি তা জানতে চাই।

    উত্তরঃ নামায-রোযা, ইবাদত-বন্দেগী করার পরও আকিদা জানা জরুরি কি না এ বিষয়টি জানার জন্য আমাদেরকে প্রথমে জানতে হবে আকিদা বলতে কী বুঝায় বা আকিদা কাকে বলে? তারপর জানতে হবে এর গুরুত্ব কতটুকু?

    আকিদা বলতে কী বুঝায়?

    আকিদা শব্দের অর্থ হল,মানুষ যা বিশ্বাস করে বা মেনে চলে। আকিদা ও ঈমান একই অর্থবোধক। অর্থাৎ বিশ্বাসের অপর নাম আকিদা। সুতরাং আকিদার গুরুত্ব কতটুকু তা সহজে অনুমেয়।

    এ সম্পর্কে শাইখ সালিহ আল ফাউযান রহঃ বলেন,

    “ইসলামী আকিদা হল, সেই চেতনা ও বিশ্বাসের নাম যা দিয়ে আল্লাহ তাআলা নবী-রসূলদেরকে প্রেরণ করেছেন। নাজিল করেছেন অনেক আসমানি কিতাব। শুধু তাই নয় বরং তিনি সমগ্র মানুষ ও জিন জাতির উপর সেই বিশ্বাস পোষণ করা অপরিহার্য করেছেন।”

    যেমন: আল্লাহ বলেন,

    وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنْسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ- مَا أُرِيدُ مِنْهُمْ مِنْ رِزْقٍ وَمَا أُرِيدُ أَنْ يُطْعِمُونِ

    “এবং আমি জিন ও মানুষ জাতিকে শুধু আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি। আমি তাদের নিকট কোন জীবিকা চাইনা এবং চাইনা যে তারা আমাকে খাদ্য দান করুক।”

    সূরা যারিয়াতঃ ৫৬-৫৭

    তিনি আরও বলেন,

    وَقَضَى رَبُّكَ أَلَّا تَعْبُدُوا إِلَّا إِيَّاهُ

    “এবং তোমার প্রতিপালক চূড়ান্ত ফায়সালা দিয়েছেন যে, তোমরা তাঁর ছাড়া আর কারও ইবাদত করবে না।”

    সূরা ইসরাঃ ২৩

    তিনি আরও বলেন,

    وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ

    “এবং আমি প্রত্যেক জাতির নিকট এ মর্মে রাসূল পাঠিয়েছে যে,তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত (তথা আল্লাহ ছাড়া যে সকল জিনিসের ইবাদত করা হয়) সেগুলো থেকে দূরে থাক।”

    সূরা আন নাহল: ৩৬

    উল্লেখিত আয়াত সমূহ থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, সমস্ত নবী-রাসূল এ আকিদার আহবান নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেছিলেন। সমস্ত আসমানি কিতাব অবতীর্ণ হয়েছিল এ আকিদারই ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করার জন্য এবং এর বিপরীত সকল বাতিল বিশ্বাস ও ভ্রান্ত ধারণাকে অপনোদন করার জন্য।

    সৃষ্টি জগতের মধ্যে যাদের উপর শরীয়তের বিধান প্রযোজ্য হয় তাদের প্রত্যেককে এই আকিদা গ্রহণ করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।

    সুতরাং যে বিষয়টির এত বেশি গুরুত্ব ও মর্যাদা সেটি সব কিছুর আগে সর্বাধিক গুরুত্বের সাথে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। সবচেয়ে বেশি দরকার এ ব্যাপারে জ্ঞানার্জন করার। কারণ,এর উপরই মানব জাতির দুনিয়া ও আখিরাতের সৌভাগ্য ও সাফল্য নির্ভর করছে।

    আল্লাহ বলেন,

    فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِنْ بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَى لَا انْفِصَامَ لَهَا

    “সুতরাং যে তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করল সে যেন শক্ত হাতল মজবুত ভাবে ধারণ করল যা বিচ্ছিন্ন হওয়ার নয়।”

    সূরা বাকারাঃ ২৫৬

    একথার মানে হল, যে এ আকিদা হতে হাত গুটিয়ে নিবে সে অলীক-কল্পনা ও ভ্রান্ত বিশ্বাসকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করবে। কারণ, সঠিক পথ ছেড়ে দিলে সেখানে গোমরাহি ছাড়া অন্যকিছু থাকতে পারে না।

    ذَلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِنْ دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ

    “তা এ জন্যে যে, আল্লাহই তো প্রকৃত সত্য আর তাঁকে ছাড়া ওরা যা কিছু আহবান করে তা ভ্রান্ত।”

    সূরা হজ্জ: ৬৩

    [উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লামা সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]

    আকিদার গুরুত্ব

    ঈমান-আকিদা শুদ্ধ না হলে নামায-রোযা সহ কোন ইবাদই আল্লাহর নিকট গ্রহণীয় হবে না। যেমন কেউ যদি শিরকি আকিদা পোষণ করে তাহলে যত ইবাদতই করুক না কেন সব কিছুই বিফলে যাবে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন,

    لَئِنْ أَشْرَكْتَ لَيَحْبَطَنَّ عَمَلُكَ وَلَتَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

    “যদি শিরক করো তবে তোমার সকল আমল নিষ্ফল হবে এবং তুমি ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে গণ্য হবে।”

    সূরা যুমার: ৬৫

    ঈমান, ইখলাস ও রাসুল সা. এর অনুসরণ (যেগুলো আকিদার মূল ভিত্তি) এর ক্ষেত্রে ত্রুটি থাকবে আখিরাতে সকল নেক কাজ ধূলিকণার মত অর্থহীন হয়ে যাবে।

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَقَدِمْنَا إِلَىٰ مَا عَمِلُوا مِنْ عَمَلٍ فَجَعَلْنَاهُ هَبَاءً مَّنثُورًا

    “আমি তাদের কৃতকর্মের নিকট আগমন করে সেগুলোকে উৎক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত করব।”

    সূরা ফুরকান ২৫

    সঠিক আকিদা সম্পর্কে জ্ঞান অর্জনের আবশ্যকতা:

    জেনে রাখুন, (আল্লাহ আমাকে এবং আপনাদরকে তাওফিক দান করুন) ইসলামী আকিদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা প্রতিটি মুসলিমের জন্য আবশ্যক।

    আকিদা বলতে কী বুঝায়, আকিদার উপর আর কী কী জনিস নির্ভর করে, বিপরীত আকিদাগুলো কী কী, কী কারণে আকিদা নষ্ট হয় বা তাতে কমতি সৃষ্টি হয় যেমন: বড় শিরক, ছোট শিরক ইত্যাদি বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের জানা বা শিক্ষা অর্জন করা অপরিহার্য।

    আল্লাহ বলেন:

    فَاعْلَمْ أَنَّهُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاسْتَغْفِرْ لِذَنْبِكَ

    “অতএব, জেনে রাখ যে আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের উপযুক্ত আর কেউ নাই। এবং তোমার গুনাহর জন্য তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর।”

    ইমাম বুখারি রহঃ. সহীহ বুখারিতে একটি অধ্যায়ের শিরনাম রচনা করেছেন এভাবে:

    بَاب الْعِلْمُ قَبْلَ الْقَوْلِ وَالْعَمَلِ

    “অধ্যায়: কথা বলা এবং আমল করার আগে জ্ঞানার্জন করা।”

    এরপর তিনি এ শিরনামের স্বপক্ষে পূর্বোক্ত আয়াতটিকে প্রমাণ হিসেবে পেশ করেছেন।
    [উৎস: ইরশাদ ইলা সহীহিল ইতিকাদ, লেখক: শাইখ আল্লাম সালিহ আল ফাউযান, অনুবাদ: আব্দুল্লাহিল হাদী]

    উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা ইসলামী আকিদা সম্পর্কে জ্ঞানার্জনের গুরুত্ব সম্পর্কে বুঝতে পারলাম।

    উপরোক্ত আলোচনা থেকে প্রতিভাত হল যে, ঈমান ও আকিদা সঠিক না হওয়া পর্যন্ত অন্যান্য নেক আমলের কোনই মূল্য নাই। তাই আমল সংশোধনের পূর্বে আকিদা সংশোধ করা এবং সে বিষয়ে জ্ঞানার্জন করা আবশ্যক।

    আরও পড়ুনঃ শিশুদের ইসলাম ও তাওহিদ শিক্ষার ১১ উপায়

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • ইলমে গায়েব দাবীকারীর বিধান

    ইলমে গায়েব দাবীকারীর বিধান

    প্রশ্নঃ যে ব্যক্তি ইলমে গায়েব দাবী করবে, তার হুকুম কি?

    উত্তরঃ- যে ব্যক্তি ইলমে গায়েব দাবী করবে সে কাফের। কেননা সে আল্লাহ তাআ’লাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস- করল। আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

                            قُلْ لَا يَعْلَمُ مَنْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ الْغَيْبَ إِلَّا اللَّهُ وَمَا يَشْعُرُونَ أَيَّانَ يُبْعَثُونَ
    “হে নবী আপনি বলে দিন! আকাশ এবং জমিনে আল্লাহ ব্যতীত অন্য কেউ গায়েবের সংবাদ জানে না এবং তারা জানে না যে, কখন পুনরুত্থিত হবে।”

    সূরা নামলঃ ৬৫

    যেহেতু আল্লাহ তাঁর নবীকে এই মর্মে ঘোষণা করার আদেশ দিয়েছেন, আকাশ-জমিনে আল্লাহ ছাড়া গায়েবের খবর আর কেউ জানে না, এরপরও যে ব্যক্তি গায়েবের খবর জানার দাবী করবে, সে আল্লাহকে এই ব্যাপারে মিথ্যাবাদী প্রতিপন্ন করল।

    ইলমে গায়েব দাবীকারী কি রাসূল (সাঃ) এর থেকে বেশী মর্যাদাবান?

    যারা ইলমে গায়েবের দাবী করে, তাদেরকে আমরা বলব, তোমরা কিভাবে এটা দাবী কর অথচ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তা জানতেন না। তোমরা বেশী মর্যাদাবান না রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)?

    যদি তারা বলে আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) হতে বেশী মর্যাদাবান, তাহলে তারা এ কথার কারণে কাফের হয়ে যাবে। আর যদি বলে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বেশী মর্যাদাবান, তাহলে আমরা বলব কেন তিনি গায়েবের সংবাদ জানেন না? অথচ তোমরা তা জান বলে দাবী করছ? আল্লাহ তাআ’লা বলেন,

    عَالِمُ الْغَيْبِ فَلَا يُظْهِرُ عَلَى غَيْبِهِ أَحَدًا إِلَّا مَنْ ارْتَضَى مِنْ رَسُولٍ فَإِنَّهُ يَسْلُكُ مِنْ بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ رَصَدًا
    তিনি অদৃশ্য সম্পর্কে সম্যকভাবে পরিজ্ঞাত। তিনি অদৃশ্য বিষয় কারও কাছে প্রকাশ করেন না- তাঁর মনোনীত রাসূল ব্যতীত। তখন তিনি তার অগ্রে ও পশ্চাতে প্রহরী নিযুক্ত করেন।”

    সূরা জিনঃ ২৬-২৭

    ইলমে গায়েবের দাবীদারদের কাফের হওয়ার এটি দ্বিতীয় দলীল। আল্লাহ তাআ’লা তাঁর নবীকে মানুষের জন্য ঘোষণা করতে বলেন যে,

    قُلْ لَا أَقُولُ لَكُمْ عِندِي خَزَائِنُ اللَّهِ وَلَا أَعْلَمُ الْغَيْبَ وَلَا أَقُولُ لَكُمْ إِنِّي مَلَكٌ إِنْ أَتَّبِعُ إِلَّا مَا يُوحَى إِلَيَّ
    “আপনি বলুনঃ আমি তোমাদেরকে বলিনা যে, আমার কাছে আল্লাহর ভান্ডার আছে। তাছাড়া আমি অদৃশ্য জগতের বিষয় অবগতও নই। আমি এমনও বলিনা যে, আমি ফেরেশতা। আমি তো শুধু ঐ ওহীর অনুসরণ করি, যা আমার নিকট প্রেরণ করা হয়।”

    সূরা আনআ’মঃ ৫০

    (শাইখ মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ. রচিত ফাতওয়া আরকানুল ইসলাম থেকে)

  • শিশুদের ইসলাম ও তাওহিদ শিক্ষার ১১ উপায়

    শিশুদের ইসলাম ও তাওহিদ শিক্ষার ১১ উপায়

    প্রশ্ন: ছোট বাচ্চাদের কিভাবে সহজে তাওহিদ বুঝানো যায়?

    উত্তরঃ সন্তানের প্রতি পিতামাতার দায়িত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তাআলা কুরআনে প্রত্যেকে মানুষ নিজেকে এবং তার পরিবারের সদস্যদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে বাঁচার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক ব্যক্তিকে একেকজন দায়িত্বশীল হিসেবে বর্ণনা করে বলেছেন, তাকে তার অধীনস্থদের সম্পর্কে আল্লাহর দরবারে হিসেব দিতে হবে।

    তাছাড়া বর্তমান সময়ে সন্তানদেরকে ইসলামের সঠিক জ্ঞান দান করার প্রয়োজনীয়তা আরও প্রকট হয়ে উঠেছে। কারণ, বর্তমানে আধুনিক মিডিয়া, ফিল্ম, গেইম, কার্টুন ইত্যাদির মাধ্যমে তাদের ব্রেইন ওয়াশ ও চরিত্র বিধ্বংস করার সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সন্তানদেরকে বাল্যকাল থেকেই ইসলামের সঠিক মর্মবাণী, তাওহীদ ও সুন্নাহর প্রশিক্ষণ দেয়া অভিভাবকের জন্য আরও বেশি অপরিহার্য। তাই এ বিষয়ে নিন্মে কতিপয় পরামর্শ ও নির্দেশনা প্রদান করা হল

    ১) শিশুকে তাওহিদ ও সুন্নাহ ভিত্তিক পরিচালিত দীনী প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করা। শিরক ও বিদআত চর্চা কারী প্রতিষ্ঠান থেকে দুরে রাখা জরুরি।

    ২) সাত বছর বয়স থকে সালাতের আদেশ করা। মসজিদে যাতায়াত ও সালাতের প্রতি যত্নশীল হওয়া তাওহীদ শিক্ষা খুব গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম।

    ৩) প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে সহজ ভাষায় ইসলাম, তাওহিদ ও সুন্নাহর বিষয়গুলো তার মন ও মননে স্থাপন করা।

    ৪) তাদেরকে নবী-রাসূল ও সাহাবিদের জীবনের সুন্দর সুন্দর ঘটনা শুনানো।

    ৫) আসমান, চন্দ্র, সূর্য, মেঘমালা, ঝড়তুফান, ফল, ফুল, পাখী ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়গুলো দেখিয়ে তার হৃদয়ে আল্লাহর তাআলার মাহাত্ম্য, শক্তি, জ্ঞান, বিশালতা ইত্যাদি জাগিয়ে তোলা। এর মাধ্যমে তার মনে আল্লাহর ভয়, ভালবাসা, তাঁর প্রতি পরম নির্ভরতা ইত্যাদি তৈরি হবে ইনশাআল্লাহ।

    ৬) ছোট ছোট সূরা যেমন ফাতিহা, নাস, ফালাক, ইখলাস, কাওসার ইত্যাদিগুলোর সহজ ভাষায় তরজমা ও ব্যাখ্যা তুলে ধরা।

    ৭) বাচ্চারা আঁকিবুঁকি ও রং করতে ভালবাসে। সুতরাং আকিদা বিষয়ক বিভিন্ন জিনিস তাকে রং করতে দেয়া। যেমন: আল্লাহ, লাই-লাহা ইল্লাল্লাহ, কাবা, মসজিদ ইত্যাদি।

    ৮) তাদেরকে ছোট সাহাবিদের জীবনী ও বিভিন্ন ঘটনা শুনানো। যেমন: আনাস বিন মালিক, আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. প্রমুখ।

    ৯) তাওহিদ, সুন্নাহ ও ইসলাম বিষয়ক সুন্দর সুন্দর কবিতা/ছড়া পড়তে দেয়া।

    ১০) অবিভাবকের বিশেষ তত্ত্বাবধানে ভালোমনের শিশুতোষ ওয়েব সাইট ভিজিট করার সুযোগ দেয়া বা শিশুতোষ ম্যাগাজিন পড়তে দেয়া।

    ১১) জীবন চলার পথে ঘটে যাওয়া নানা ঘটনা ও দুর্ঘটনাগুলোকে তার সামনে ইসলাম ও তাওহিদের আলোকে বিশ্লেষণ করা ইত্যাদি।

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।

    ▬▬▬▬ ◐◑ ▬▬▬▬
    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদি আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।