Category: প্রশ্ন-উত্তর

  • রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

    রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

    রজব মাস সম্পর্কে আমাদের সমাজে লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই -পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহীহ নয় আর কিছু হাদীস রয়েছে সম্পূর্ণ ভিত্তিঋহীন ও বানোয়াট। এধণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলোঃ

    🚫 ক. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস:

    ● ১) “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

    ইবনে হাজার রহ. বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনু শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

    এ হাদীসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তাই এ হাদীসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

    ● ২) “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।”

    “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯)

    হাদীসটি দুর্বল।

    এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন: মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন: মুনকারুল হাদীস। কুনা গ্রন্থে বলেন: “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

    ● ৩) “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)

    হাফেয ইবনে হাজার বলেন: উক্ত হাদীসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে খুব দূর্বল। (তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা)

    🚫 খ. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস:

    ● ১) রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।”

    এটি জাল হাদীস।

    হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদীস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন: এই হাদীসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

    ● ২) কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

    হাদীসটি বানোয়াট।

    ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদীসটি সনদের রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদীস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

    ● ৩) রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একমাস রোযা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”

    হাদীসটি জাল।

    এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

    ● ৪) “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামায আদায় করত: বিশ রাকায়াত নামায পড়বে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকায়াত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকায়াত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”

    এটি একটি বানোয়াট হাদীস।

    (দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৪)।)

    ● ৫) “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোযা রাখবে এবং চার রাকায়াত নামায পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

    হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।
    ▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
    مأخوذ من كتاب البدع الحولية
    ‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত
    অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স,মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,সউদী আরব।

  • বাড়িতে বিড়াল পালনের বিধান

    বাড়িতে বিড়াল পালনের বিধান

    প্রশ্ন: আমি কি আমার বাড়িতে বিড়াল পালন করতে পারবো? এ বিষয়ে ইসলামের দৃষ্টিতে কোন বাধা বা বাধ্যবাধকতা আছে কি না। দয়াকরে বিস্তারিত জানাবেন।

    উত্তরঃ বাড়িতে বিড়াল প্রতিপালনে কোন আপত্তি নাই। তবে বিড়ালকে পর্যাপ্ত খাদ্য-পানীয় সরবরাহ করতে হবে, তাকে মার-পিট বা অত্যাচার করা যাবে না। অন্যথায় গুনাহ হবে।

    বিড়াল বিষয়ক হাদিসঃ

    এক মহিলা বিনা কারণে বন্দী অবস্থায় না খাইয়ে কষ্ট দিয়ে একটি বিড়ালকে মেরে ফেলার কারণে জাহান্নামী হয়েছে। যেমন আবদুল্লাহ রা. হতে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

    عُذِّبَتِ امْرَأَةٌ فِي هِرَّةٍ سَجَنَتْهَا حَتَّى مَاتَتْ فَدَخَلَتْ فِيهَا النَّارَ لاَ هِيَ أَطْعَمَتْهَا وَسَقَتْهَا إِذْ حَبَسَتْهَا وَلاَ هِيَ تَرَكَتْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الأَرْضِ

    একজন মহিলাকে একটি বিড়ালের জন্য আযাব (শাস্তি) দেয়া হয় এজন্য যে, সে বিড়ালটিকে আটকে রেখেছিল, পরিশেষে সেটি মারা গেল। যার জন্য সে জাহান্নামে গেল। যে মেয়ে লোকটি বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছে, নিজেও পানাহার করায়নি আর সেটিকে সে ছেড়েও দেয়নি, যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বাঁচতে পারে।

    সহীহ মুসলিম, হা/5745,অধ্যায়ঃ সালাম (كتاب السلام)-পরিচ্ছদঃ বিড়াল হত্যা করা হারাম-হাদীস একাডেমী

    বিড়াল অপবিত্র নয়ঃ

    বিড়ালের অপবিত্র না হবার বিষয়ে একটি হাদিসঃ

    কাবশা বিনত কা’ব ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। আবূ কাতাদা (রাঃ) একদিন তাঁর নিকট আগমন করেন। তারপর কাবশা কিছু কথা বলেনঃ যার অর্থ হচ্ছে, আমি আবূ কাতাদা (রাঃ) এর জন্য উযূর পানি রাখি। ইত্যবসরে একটি বিড়াল এসে পাত্র থেকে পানি পান করে। আবূ কাতাদা (রাঃ) পাত্রটি কাত করে দিলে বিড়ালটি পানি পান করে। কাবশা বলেনঃ আবূ কাতাদা (রাঃ) আমাকে তার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে জিজ্ঞাসা করলেন, হে ভাতিজী! (আমি বিড়ালকে পাত্র থেকে পানি পান করিয়েছে দেখে) তুমি আশ্চর্যান্বিত হয়েছ কি? আমি বললাম, হ্যাঁ। তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন যে, বিড়াল অপবিত্র নয়। কারণ যে সব প্রাণী প্রতিনিয়ত তোমাদের আশে পাশে থাকে, তাদের মধ্যে বিড়ালও একটি।

    সূনান নাসাঈ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন) | অধ্যায়ঃ ১/ পবিত্রতা (كتاب الطهارة) | হাদিস নাম্বার: ৬৮

    আরও পড়ুনঃ ঘরে প্রাণীর ছবি, প্রতিকৃতি বা মূর্তি থাকলে সালাত আদায় করার বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    ** মূল উত্তরের শেষে একটি হাদিস যোগ করা হয়েছে

    আমাদের সাথে থাকুনঃ


  • কাউকে কাফের বলার নীতিমালা (ভিডিও)

    কাউকে কাফের বলার নীতিমালা (ভিডিও)

    কাদের কাফের বলা যাবে? কাদের কাফের বলা যাবে না? চাইলেই কি যে কাউকে কাফের বলে দেওয়া যায়? এ ধরণের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে শায়খ প্রফেসর ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।

    শায়খের অফিসিয়াল ফেসবুক চ্যানেলে সাবস্ক্রাইব করুনঃ Dr. Abu Bakar Muhammad Zakaria

    আমাদের সাথে থাকুনঃ


  • হঠাৎ মৃত্যু : ভালো না কি খারাপ?

    হঠাৎ মৃত্যু : ভালো না কি খারাপ?

    প্রশ্নঃ একজন মুসলিমের জন্য হঠাৎ মৃত্যু ভালো না কি খারাপ?

    উত্তরঃ হঠাৎ মৃত্যু ভালো ও মন্দ উভয়টাই হতে পারে। তা নির্ভর করছে ব্যক্তির অবস্থার উপরে।

    ➤ দ্বীনদারের হঠাৎ মৃত্যু

    সে যদি দ্বীনদার, সৎকর্মশীল ও তাকওয়াবান হয় তাহলে যে অবস্থায়ই মৃত্যু হোক না এটি তার জন্য কল্যাণকর। বরং হঠাৎ মৃত্যু (যেমন: দুর্ঘটনা বশত: মৃত্যু) তার জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। কারণ এতে তাকে মৃত্যুর যন্ত্রণা ও কষ্ট পোহাতে হল না, রোগ-ব্যাধিতে পড়ে বিছানায় কাতরাতে হল না, অবস্থা নাজেহাল হল না, কারো প্রতি মুখাপেক্ষী হওয়ার প্রয়োজন হল না।

    এতে আল্লাহর কাছে তার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়, গুনাহ মোচন হয় এবং দুনিয়ার সকল কষ্ট-ক্লেশকে বিদায় জানিয়ে সে রবের সন্তুষ্টি ও জান্নাতের দিকে এগিয়ে যায়। হাদিসে বর্ণিত হয়েছেঃ

    الْعَبْدُ الْمُؤْمِنُ يَسْتَرِيحُ مِنْ نَصَبِ الدُّنْيَا وَأَذَاهَا،
    “মুমিন ব্যক্তি যখন মৃত্যুবরণ করে এখন সে দুনিয়ার দুঃখ-কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পায়।”

    সুনানে নাসাঈ, অধ্যায়: জানাযা, অনুচ্ছেদ: মৃত্যুতে মুমিনের নিষ্কৃতি প্রাপ্তি. হা/১৯৩০-সহিহ

    ➤ নাফরমানের হঠাৎ মৃ্ত্যু

    পক্ষান্তরে সে যদি আল্লাহর নাফরমান ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে যে অবস্থায় মৃত্যু হোক কেন তা তার জন্য মহা বিপদের কারণ।

    বিশেষ করে হঠাৎ মৃত্যুর কারণে সে পাপাচার থেকে তওবা করার সুযোগ পেলো না, নিজের অবস্থা সংশোধন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হল, মানুষের কাছে ক্ষমা চাইতে পারলো না এবং এর মাধ্যমে আল্লাহর ক্রোধ ও আযাবের দিকে ধাবিত হল।

    আয়েশা রা. ও আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে তারা বলেনঃ

    أسف على الفاجر وراحة للمؤمن
    “(হঠাৎ মৃত্যু) পাপীর জন্য আফসোস আর মুমিনের জন্য নিষ্কৃতির কারণ।”

    মুসাননাফে ইবনে আবি শায়বা ৩/৩৭০ ও বায়হাকী ৩/৩৭৯

    উল্লেখ্য যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হঠাৎ মৃত্যু থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতেন মর্মে বর্ণিত হাদিসের সনদ সহিহ নয়।

    ফিরোযাবাদি রহ. বলেনঃ “এ বিষয়ে কোন সহিহ হাদিস নেই।” (সাফারুস সাআদাহ, পৃষ্ঠা নং ৩৫৩)

    উল্লেখ্য যে, হঠাৎ মৃত্যু কিয়ামতের একটি আলামত। যেমন: হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

    حديث أنس بن مالك رضي الله عنه أن النبي -صلى الله عليه وسلم- قال : (إن من أمارات الساعة أن يظهر موت الفجأة)، رواه الطبراني وحسّنه الألباني.
    আনাস বিন মালিক রা. হতে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
    “কিয়ামতের একটি আলামত হল, ‘হঠাৎ মৃত্যু’ প্রকাশ পাওয়া।”

    ত্বাবারানী, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন

    আল্লাহু আলম।

    পরিশেষে আল্লাহর নিকট দুআ করি, তিনি যেন, আমাদেরকে এমন ঈমান ও আমলের উপর মৃত্যু দান করেন যা দ্বারা আমরা আল্লাহর সন্তুষ্টি ও ক্ষমা অর্জন করতে পারি। নিশ্চয় তিনি পরম করুণাময় ও অতিশয় ক্ষমাশীল।

    ▬▬▬◄◉►▬▬▬
    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    জুবাইল, সৌদি আরব

  • বেশী লোকের সম্মিলিত দুয়া কি দ্রুত কবুল হয়?

    বেশী লোকের সম্মিলিত দুয়া কি দ্রুত কবুল হয়?

    সালাত শেষে সম্মিলিত মুনাজাত করার হুকুম এবং একসাথে অনেক লোক দুআয় হাত উঠালে তা আল্লাহর দরবারে তাড়াতাড়ি কবুল হয়- এ কথার যথার্থতাঃ

    প্রশ্নঃ আমরা শুনেছি, সম্মিলিত মুনাজাত নাকি বিদআত। কিন্তু আমাদের বাসার কাছে মসজিদে জুম্মার নামাজের পরে সবসময়ই অনেক সময় নিয়ে সম্মিলিত মুনাজাত হয়। আমি ইমাম সাহেবকে এই ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে উনি বললেন, “অনেক মানুষ একসাথে হাত উঠালে সেই দুয়া তাড়াতাড়ি আল্লাহর দরবারে কবুল হয়।” আমি কি এই মুনাজাতে অংশ নিব?

    কোন দুয়া সম্মিলিত ভাবে করা যাবে?

    উত্তরঃ সম্মিলিত দুয়া অর্থাৎ ‘একজন ব্যক্তি দুআ বলবে আর বাকি লোকজন আমীন আমীন বলবে’ এভাবে দুয়া করা বৃষ্টি প্রার্থনা, বৃষ্টিবন্ধ করা এবং দুআয়ে কুনুত ছাড়া নবী সা. থেকে অন্য কোথাও প্রমাণিত নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার সারা জিন্দেগীতে কোন এক দিনের জন্যও সালাত শেষে সাহাবীদেরকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে দুআ করেছেন বলে প্রমাণ নেই। সুতরাং তা বিদআত।

    বরং তিনি সালাত শেষে অনেক যিকির, তাসবীহ ও দুআ পাঠ করেছেন। সেগুলো বহু বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা সুপ্রমাণিত।

    কিন্তু দুর্ভাগ্য বশত: আমাদের সমাজের বেশিরভাগ মসজিদে জামআতে সালাত শেষ করে মাসুনূন দুয়া ও যিকিরগুলো খুব কমই আমল করা হয় বরং বিভিন্ন অগ্রহযোগ্য দলীল ও যুক্তি দিয়ে সম্মিলিত দুয়াকে আজ পর্যন্ত ধরে রাখা হয়েছে!! তাদের এ সব যুক্তির মধ্যে একটি হল, “একসাথে দুআতে অনেক মানুষ হাত উঠালে দুয়া কবুল হয়!!”

    কোন হাদীসের ভিত্তিতে তারা এ কথা বলেন?

    প্রকৃতপক্ষে এটি একটি দলীল বর্হিভূত ও ভিত্তিহীন বক্তব্য। যদি এ কথা সঠিক হত, তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অবশ্যই নিজে তা আমল করতেন এবং তার উম্মতকে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এমন কোন হাদীস পাওয়া যায় না।

    সুতরাং আমাদের মসজিদের ইমাম সাহেবদের কতর্ব্য, সুন্নাহ বর্হিভূত তথাকথিত ‘সম্মিলিত মুনাজাত’ বর্জন করা এবং এ ব্যাপারে মুসল্লীদেরকে জ্ঞান দান করা। বিশেষ করে, সালাত পরবর্তী দুয়াগুলো নিজেরা পাঠ করা এবং মুসল্লীদেরকে পাঠ করতে বলার প্রতি উৎসাহিত করা।

    অবশ্য মাসনূন দুয়াগুলো পাঠ করার পর, যে যার মত ইচ্ছা মাফিক হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট কান্নাকাটি করে নিজের প্রয়োজন তুলে ধরে দুআ করতে পারে। এতে কোন আপত্তি নেই। প্রত্যেকেই নিজে নিজের সমস্যা ও চাওয়া-পাওয়া তুলে ধরে আল্লাহর কাছে চুপিস্বরে দুআ-মুনাজাত করবে-এটাই প্রকৃত দুআর আদব।

    আল্লাহ আমাদের সমাজ থেকে সকল বিদআত বিদূরিত করে সুন্নাহর আলোকিত পথে ফিরে আসার তওফিক দান করুন। আমীন।

    উত্তর প্রদানঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • লিপস্টিক ব্যবহার করা যাবে কি?

    লিপস্টিক ব্যবহার করা যাবে কি?

    শুধু আমার স্বামীর সামনে লিপস্টিক ব্যবহার করা কি জায়েয হবে? কেউ কেউ বলেন যে, লিপস্টিকে শূকরের চর্বি রয়েছে। এ কথা কি ঠিক? যদি ঠিক হয় তাহলে আমাদের জন্যে লিপস্টিক ব্যবহার করা কি জায়েয হবে? আশি করি বিষয়টি স্পষ্ট করবেন।

    আলহামদু লিল্লাহ।

    যা কিছু সাজসজ্জা ও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য সেটার মূল বিধান হচ্ছে— বৈধ ও জায়েয হওয়া। আল্লাহ্‌তাআলা বলেনঃ

    “তিনিই সেই মহান সত্তা যিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীর সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।”[সূরা বাক্বারা, আয়াত: ২৯]

    কখনও মুস্তাহাব হতে পারে; যদি সেই সাজ স্বামীর উদ্দেশ্যে হয়। তখন এটি শরিয়ত নির্দেশিত বিষয়। তবে এটি বৈধ হওয়া শর্তযুক্ত: যাতে করে সেটা হারাম ক্ষেত্রে ব্যবহৃত না হয়; যেমন যাদের সামনে সৌন্দর্য প্রদর্শন করা নাজায়েয এমন গাইরে মাহরাম পুরুষদের জন্য সাজগোজ করা। অনুরূপভাবে প্রসাদনী সামগ্রীর মাঝে দেহের জন্য ক্ষতিকর কোন উপাদান বা নাপাক উপাদান (উদাহরণতঃ শূকরের চর্বি) না থাকা। যদি থাকে তাহলে এমন সাজগোজ হারাম হবে। কেননা যা কিছু মানুষের জন্য ক্ষতিকর তা করা নিষিদ্ধ। যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

    “নিজে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া নয় এবং অন্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করা নয়।”

    শাইখ উছাইমীন (রহঃ) বলেন: “ঠোটে লিপস্টিক দিতে কোন আপত্তি নেই। কেননা মূল বিধান হল: বৈধতা; যতক্ষণ না হারাম হওয়া সাব্যস্ত হয়…। কিন্তু যদি সাব্যস্ত হয় যে, এটি ঠোঁটের জন্য ক্ষতিকর; এটি ঠোঁটকে শুকিয়ে ফেলে, ঠোঁটের আর্দ্রতা ও তৈলাক্ততা দূর করে দেয়— এ ধরণের অবস্থার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার থেকে নিষেধ করা হবে। আমার কাছে সংবাদ পৌঁছেছে যে, এটি ঠোঁট ফাঁটার কারণ। যদি তা সাব্যস্ত হয় তাহলে মানুষের জন্য যা কিছু ক্ষতিকর সেটি করা তার জন্য নিষিদ্ধ।[ফাতাওয়া মানারুল ইসলাম (৩/৮৩১)]

    লিপস্টিক সহ অন্যান্য কসমেটিক্স এর অপকারীতাঃ

    ড. ওয়াজিহ যাইনুল আবেদীন ‘আল-ওয়া’য়ুল ইসলামী’ নামক ম্যাগাজিনে বর্তমানে যে কসমেটিকসগুলো জনপ্রিয় এবং নারীরা যেগুলো ব্যবহার করে থাকেন এগুলোর অপকারিতা সম্পর্কে তিনি একটি আর্টিকেল লিখেছেন। সে আর্টিকেলে এসেছে: “…লিপস্টিক ব্যবহারে ঠোঁটের ক্যান্সার হতে পারে কিংবা ঠোঁটের কোমল চামড়া শুকিয়ে যেতে পারে, ফেটে যেতে পারে। কারণ লিপস্টিক ঠোঁটকে সুরক্ষাকারী স্তরটি ধ্বংস করে ফেলে।”[শাইখ আব্দুল্লাহ্‌ফাওযান রচিত “যিনাতুল মারআতিল মুসলিমা (পৃষ্ঠা-৫১) থেকে সংকলিত]

    তাই মুসলিম নারীর উচিত বর্তমানে জনপ্রিয় কসমেটিকস সামগ্রীগুলো ব্যবহার করার পূর্বে এটি দেহের জন্য ক্ষতিকর নয় মর্মে নিশ্চিত হয়ে নেওয়া।

    আল্লাহই সর্বজ্ঞ।

    একজন রমণীর কেমন হওয়া উচিৎ? আদর্শ রমণী – বইটি ডাউনলোড করুন

    তথ্যসূত্রঃ ইসলাম প্রশ্ন উত্তর