প্রশ্নঃ সেহরি না খেলে কি রোজা হবে? সেহরি কি রোজা রাখার শর্ত?
উত্তরঃ সেহরি না খেলেও রোযা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ নয়। কেননা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত (সুন্নতে মুআক্কাদা বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তা বাদ দিলে সুন্নত পালনের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর দেওয়া বিশেষ বরকত থেকেও বঞ্চিত হবে।
তাছাড়া সাধারণত: পেটে অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকলে দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ইবাদত-বন্দেগিতে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয় এবং মনে উদোম ও স্প্রীহা কমে যায়। পক্ষান্তরে সেহরি খেলে শরীরে শক্তি ও উদোম বজায় থাকে এবং ইবাদত-বন্দেগি সহ সব কিছুতে পর্যাপ্ত শক্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়।
তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি খাওয়ার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এবং তা বাদ দিতে নিষেধ করেছেন। যেমন:
“সেহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে। তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশতাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন।”
মুসনাদে আহমদ, ইমাম মুনযেরী বলেন: এর সনদ শক্তিশালী-হাসান লি গাইরিহ
আমর ইবনুল আস রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমাদের এবং আহলে কিতাব (ইহুদি-খৃষ্টানদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল, সেহরি খাওয়া।” (অর্থাৎ তারা সেহরি খায় না আর আমরা খাই।)
এ সব হাদিস থেকে ভোররাতে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। তবে কেউ যদি ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে সেহরি খেতে না পারে তাহলে না খেয়েই রোজা থাকতে হবে। এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আলাম। ————————-
সম্পূরক প্রশ্নঃ নফল অথবা ফরজ রোজা রাখার উদ্দেশ্যে যদি রাত ১২/১টার দিকে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়ি আর ভোর রাতে খেতে না উঠি তাহলে কি রোজা হবে?
উত্তরঃ যদি রোজা রাখার নিয়তে রাত ১২টা/১টার দিকে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন আর ভোর রাতে কিছু না খান তাহলেও রোজা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি না করাই ভালো।
সবচেয়ে উত্তম হল, ভোর রাতে উঠে এক ঢোক পানি হলেও পান করা। (মূলত: ভোর রাতের খাবারকে সেহরি বা সাহুর বলা হয়। রাতের প্রথমাংশ বা মধ্যরাতের খাবারকে নয়)
হাদিসে সেহরি খেতে যথেষ্টে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ তাতে বরকত আছে। যেমন:
“তিনটি বস্তুতে বরকত রয়েছে: জামাআতে (সংঘবদ্ধ জীবন) সারীদ (গোস্তের ঝোল বা গোস্তের সাথে রুটির সংমিশ্রণে বিশেষ এক প্রকার আরবিয় খাদ্য) এবং সেহরিতে’।
সহীহুল জামে হা/২৮৮২
অন্য বর্ণনায় এসেছে:
ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺒَﺮَﻛَﺔَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮْﺭِ
“‘নিশ্চয় আল্লাহ সেহরিতে রবকত দিয়েছেন।”
সিলসিলা সহিহাহ হা/১২৯১
এ বিষয়ে আরও হাদিস রয়েছে।
তাই সুন্নত পালনার্থে পেটে ক্ষুধা না থাকলেও ভোররাতে সেহরির নিয়তে এক গ্লাস পানি, কয়েকটি খেজুর, ফল, বিস্কুট ইত্যাদি যা কিছু সম্ভব হয় ভক্ষণ করা উচিত। আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমীন।
(দয়া করে, কেউ সেহরি আর সাহরি নিয়ে বিতর্ক করতে আসবেন না। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে প্রচলিত ও সর্বসাধারণের নিকট সুপরিচিত শব্দ ‘সেহরি’ ব্যবহার করাকেই অধিক সঠিক মনে করি)
শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলঃ
১) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان” (متفق عليه)
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রমাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
২) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
« لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
৩) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন:
ذاكَ شهرٌ يغفلُ الناسُ عنهُ بينَ رجبَ ورمضانَ وهو شهرٌ يُرفعُ فيهِ الأعمالُ إلى ربِّ العالمينَ فأُحِبُّ أن يُرفعَ عملي وأنا صائمٌ
“রজব এবং রমাযানে মধ্যবর্তী এ মাস (শাবান মাস) সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ (এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে,) এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই, রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”
আমার রমাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[4] অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন।
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।(আল বিদা’ আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
শাওয়ালের ছয়টি সাওম (রোজা) মুসলিমের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমাদান মাসের পরের মাসের নাম শাওয়াল। এর প্রথম দিনটি আমরা ঈদ হিসাবে উদযাপন করি। আর এরপর মাসের বাকি দিন গুলির মধ্যে মাত্র ছয়টি সাওম (রোজা) পালনকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়।
“যে ব্যক্তি রমযান মাসের সাওম পালন করার পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সাওম পালন করল সে যেন সারা বছর সাওম পালন করল।”
সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪
ব্যাখ্যাঃ যেভাবে এক বছরের সওয়াব হয়
ইসলামে কোন সৎকাজের সওয়াবকে দশগুন করে দেওয়া হয়। আর সে হিসাবেই রমাদানের এক মাস সাওম পালনকে দশ মাসের সাওমের সমান সওয়াব হয়ে যায়। আর শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওমের ফলে এটিকে দশগুন করে ৬০ দিন সমান (অর্থাৎ দুই মাস) সওয়াব হয়ে যায়।
ফলশ্রুতিতে বান্দা রমাদানের এক মাস সাওম পালন ও শাওয়ালের ছয়দিন সাওম পালনের ফলে মোট ১২ মাস বা এক বছর সাওম পালনের সওয়াব অর্জন করে। এটি নিতান্তই আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী। (তাওদীহুল আহকাম, ৩/৫৩৪)
আলেমগন মুস্তাহাব একে বলেছেন
ইমাম আবু হানিফা, শাফে’ঈ ও আহমাদ রহ. শাওয়ালের এই ছয়টি সাওম পালন করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। (তাওদীহুল আহকাম,, ৩/৫৩৩)
কিছু নিয়মাবলী
১. সম্ভব হলে ঈদের পরদিন থেকেই এই ছয়টি সাওম রাখা। কেননা, সূরা আল বাকারাহ এর ১৪৮ নং আয়াতে ‘সৎ কাজে প্রতিযোগীতা’ অর্থাৎ ভালো কাজ সমূহ যত দ্রুত সম্ভব করার কথা বলা হয়েছে।
২. বিলম্বের ফলে কোন বাধা (যেমন অসুস্থতা বা অন্য কোন সমস্যা) আসতে পারে, তাই মাসের প্রথম দিকেই (ঈদের দিন ব্যতিত) এই সাওম গুলি পালন করা উচিৎ।
৩. একাধারে ছয়দিন সাওম পালন করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। এ মাসের প্রথম দিন ব্যতিত বাকি দিন গুলিতে আলাদা আলাদা করেও পালন করা যাবে।
৪. সোম ও বৃহস্পতিবারে যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন, তাই এই দিন গুলিতেও করা যায়।
৫. শুধুমাত্র শুক্রবার এই সাওম পালন করা উচিৎ হবে না। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,
‘অবশ্যই কেউ যেন স্রেফ জুমার দিনে রোযা না রাখে; তবে যদি তার একদিন আগে কিম্বা পরে রাখে [তাহলে তাতে ক্ষতি নেই।] (সহীহুল বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, তিরমিযী ৭৪৩, আবূ দাউদ ২৪২০)
তাই, শুধুমাত্র শুক্রবার সাওম পালন না করে বৃহস্পতি বা শনিবারও এর সাথে যোগ করে নেওয়া উচিৎ।
৬. রমাদানের কাজা সাওম ও শাওয়ালের সাওমের নিয়ত এক সাথে করা বৈধ নয়। তাই রমাদানের কাজা রোজার নিয়ত করা হলে বা শাওয়ালের সাওমের নিয়ত করা হলে সেটির সাথে অন্য কোন কিছুর নিয়ত করা উচিৎ হবে না।
৭. রমযানের কাজা সাওম সম্ভব হলে আগে পালন করে নেওয়া ভালো। তবে যদি কোন কারণে সম্ভব না হয়, তবে রমাদানের কাজা সাওম পরবর্তি রমাদান মাস আসার আগেই পালন করা যাবে।
৮. এই সাওম গুলির নিয়ত রাত্রি থেকেই করা উচিৎ। এর জন্য নিয়ত পড়তে হবে না; মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে আজ আমি এই সাওম পালন করবো। আলেমদের মতে সকাল হয়ে গেলে এই নিয়ত করলে কাঙ্খিত সওয়াব পাওয়া যাবে না (শরহুল মুমতি‘, ৬/৩৬০)
৯. এই সাওম গুলি শুরু করবার পর কোন ওজর থাকলে তা ভেঙ্গে ফেলা যাবে। তবে শর’ঈ কোন ওজর ব্যতিত বিনা করাণে সাওম ভেঙ্গে ফেলা শাফে‘ঈ ও হাম্বলী মাযহাবের দৃষ্টিতে মাকরূহ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে শাওয়ালের এই ছয়টি সাওম পালনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বছরের সাওম পালনের সাওয়াব পাওয়ার তৌফিয়ক দান করুন। আমিন।
প্রশ্নঃ একটি কথা প্রচলিত আছে যে রমাযানে সকলের কবর আজাব বন্ধ থাকে। তাছাড়া এটিও প্রচলিত আছে যে কেউ রমাযানের মধ্যে মারা গেলে তার আর কবর আজাব হয় না। এগুলি কি সঠিক কথা? বিস্তারিত জানতে চাই।
উত্তরঃ ‘রমাযানে কবর আজাব মাফ থাকে অথবা রমাযানে মারা গেলে কবরের আজাব হয় না’ ইত্যাদি কথা হাদিস সম্মত নয়। বরং হাদিস সম্মত কথা হল, যদি কেউ দ্বীনদার ও সৎকর্ম শীল অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কবরে ফেরেশতাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সেখানে শান্তি ও নিরাপদে অবস্থান করবে আর কেউ যদি দুষ্কৃতিকারী ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ- চাই সে রমাযানে মারা যাক অথবা অন্য কোন সময়।
আর যে ব্যক্তির কবরে শাস্তি হচ্ছে রমাযান মাস শুরু হলে তার শাস্তি স্থগিত হয়- এমন কোন কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন)
তবে হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম একটি কারণ।
নিম্নে এ সংক্রান্ত দুটি হাদিস ও শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. এর দুটি ফতোয়া তুলে ধরা হল:
কবর আজাব সংক্রান্ত হাদিস:
আনাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
“বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পেছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন।অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন: এই ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে? তখন সে বলবে: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্র বান্দা এবং তাঁর রাসূল।তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে।আর কাফির বা মুনাফিক বলবে: আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম। তখন তাকে বলা হবে: না তুমি নিজে জেনেছ, না কুরআন পড়ে শিখেছ।অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে আঘাত করা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে। তার আশেপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জিন ছাড়া।
সহিহ বুখারী (তাওহীদ) ২৩/ জানাজা (كتاب الجنائز), হা/১৩৩৮-সহিহ মুসলিম ৫১/১৭, হা/২৮৭০, আধুনিক প্রকাশনী: ১২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১২৫৭
উল্লেখ্য যে, এটি সংক্ষিপ্ত হাদিস। অন্যান্য বর্ণনায়, আরও দুটি প্রশ্ন করার কথা এসেছে। সে দুটি হলঃ
তোমার রব (প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তা) কে?
তোমার দীন (ধর্ম/জীবন ব্যবস্থা) কী?
যাহোক, উক্ত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, কবরের আজাব সত্য এবং তা রমাযান কিংবা রমাযান ছাড়া অন্য যে কোন সময়ের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ কবরের আজাব রমাযানে বন্ধ থাকবে তা উক্ত হাদিসে বলা হয় নি আর এ বিষয়ে অন্য কোন হাদিসও আসে নি।
রোজা অবস্থায় মৃত্যু হওয়া জান্নাতে প্রবেশের একটি কারণ:
‘কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর তার অবস্থায় জীবনাবসান হলে সে জান্নাতে যাবে’ এ কথা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন: হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন,
– “লা ইলা হা ইল্লাল্লা হ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। – আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন সিয়াম রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। – আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু দান-সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সেও জান্নাত প্রবেশ করবে।”
মুসনাদে আহমদ/22813, সহীহ তারগীব/৯৮৫, আলাবানী রহ. তার আহকামুল জানাইয গ্রন্থে বলেন, “এর সনদ সহিহ”
হে আল্লাহ কবরের আযাব থেকে আমাদের মাফ করুন।মাফ করুন।নিশ্চয় আপনার দয়া দ্বারা সব পরিবর্তন
● রমাযানে মারা গেলে কবরের আজাব মাফ প্রসঙ্গে শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন:
وأما أنه إذا مات في رمضان أو مات في الجمعة، ينجو من العذاب، لا، بل هذا إلى الله ، إن مات على استقامة فله الجنة والكرامة، وإن مات على معاصي فهو على خطر، ويدعى له بالمغفرة و الرحمة
“‘আর যদি রমাযান অথবা জুমার দিন মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরে আজাব থেকে মুক্তি পাবে’ এ ব্যাপারে কথা হল, না (এ কথা সঠিক নয়) বরং এটি আল্লাহর উপর সমর্পিত। যদি সে দীনদারীর উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত এবং সম্মান আর যদি আল্লাহর অবাধ্যতার উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে বিপদের মুখে রয়েছে। তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাত ও রহমতের দোয়া করতে হবে।”
শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট
● তিনি ‘নূরুন আলাদ দারব’ শীর্ষক সৌদি আরবের এক রেডিও অনুষ্ঠানে আরও বলেন:
عذاب القبر ثابت لكل من يستحقه سواء مات في يوم الجمعة أو في رمضان أو في أي وقت أخر
“ঐ ব্যক্তির জন্য কবরের আজাব সাব্যস্ত যে তার উপযুক্ত-চাই সে শুক্রবারে মারা যাক অথবা রমাযান মাসে অথবা অন্য যেকোনো সময়।”
পরিশেষে অসীম দয়াময় ও করুণার আধার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করেন। বিশেষ করে যেন রমাযান মাসে আমাদেরকে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন, তওবা-ইস্তিগফার সহ আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক সৎকর্ম বেশি করে সম্পাদন করার তাওফিক দান করেন এবং এগুলোর মাধ্যমে আমাদের গুনাহগুলো মোচন করেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।
প্রশ্নঃ রমাযান মাসে যদি হায়েয হয়ে যায়, তাহলে কি কি করণীয়? এছাড়া কি কি থেকে দূরে থাকতে হবে?
উত্তরঃ হায়েজ অবস্থায় একজন মহিলার জন্য বেশ কিছু কাজ বৈধ্য নয়। আবার বেশ কিছু কাজ বৈধ্য। সেগুলি রমাযান এবং রমাযানের বাহিরে একই।
হায়েয অবস্থায় বৈধ নয় সেগুলো হলঃ
🔹 একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কুরআত তিলাওয়াত করা বা আবরণ ছাড়া কুরআন স্পর্ষ করা 🔹 কাবা ঘর তাওয়াফ 🔹 মসজিদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা 🔹 স্বামীর সাথে সহবাস করা 🔹 সালাত ও সিয়াম আদায় না করা 🔹 পরর্বতীতে সালাত কাজা করার প্রয়োজন নাই তবে সিয়ামগুলো কাজা করা আবশ্যক।
হায়েজ অবস্থায় বৈধ কাজ গুলিঃ
এ ছাড়া যত প্রকার ইবাদত আছে সবই করা জায়েয আছে। যেমন: কুরআনের তাফসীর পড়া (তবে কুরআনে মূল টেক্সগুলো পড়া যাবে না), হাদীসের বই পড়া, ইসলামী বই-পুস্তক পড়া, ইসলামী জ্ঞানার্জন করা, কুরআন তিলাওয়াত শুনা, ইসলামী আলোচনা শুনা, দুআ ও যিকির সমূহ পাঠ করা।
ব্যতিক্রমঃ
এমন কি দুআ ও যিকির হিসেবে বা রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) এর প্রয়োজনে কুরআনের আয়াত ও সূরা (যেমন সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি) পড়াও জায়েয আছে।
“আর যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে (সে রোযা ভঙ্গ করে) অন্য দিনে তা কাযা আদায় করে নিবে।”
সূরা বাক্বারাঃ ১৮৫
৩) গর্ভবতী নারীর নিজের বা শিশুর জীবনের আশংকা করলে রোযা ভঙ্গ করবে।
৪) সন্তানকে দুগ্ধদানকারীনী নারী যদি রোযা রাখলে নিজের বা সন্তানের জীবনের আশংকা করে তবে রোযা ভঙ্গ করবে।
৫) কোন বিপদগ্রস্ত মানুষকে বাঁচাতে গিয়ে রোযা ভঙ্গ করা: যেমন পানিতে ডুবন্ত ব্যক্তিকে উদ্ধার, আগুন থেকে বাঁচাতে গিয়ে দরকার হলে রোযা ভঙ্গ করা।
৬) আল্লাহ্র পথে জিহাদে থাকার সময় শরীরে শক্তি বজায় রাখার জন্য রোযা ভঙ্গ করা। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মক্কা বিজয়ের সময় ছাহাবীদেরকে বলেছিলেন,إِنَّكُمْ مُصَبِّحُو عَدُوِّكُمْ وَالْفِطْرُ أَقْوَى لَكُمْ فَأَفْطِرُوا “আগামীকাল তোমরা শত্রুর মোকাবেলা করবে, রোযা ভঙ্গ করলে তোমরা অধিক শক্তিশালী থাকবে, তাই তোমরা রোযা ভঙ্গ কর।”
রোযা ভঙ্গ করে ফেললে
বৈধ কোন কারণে রোযা ভঙ্গ করলে দিনের বাকি অংশ রোযা অবস্থায় থাকা আবশ্যক নয়। কেননা সে তো গ্রহণযোগ্য ওযরের কারণেই রোযা ভঙ্গ করেছে।
এজন্য এ মাসআলায় বিশুদ্ধ কথা হচ্ছেঃ কোন রোগী যদি অসুস্থতার কারণে দিনে রোযা ভঙ্গ করে আর দিন শেষ হওয়ার আগেই সুস্থ হয়ে যায়, তবে দিনের বাকি অংশ রোযা অবস্থায় থাকার কোন আবশ্যকতা নেই।
কোন মুসাফির যদি রোযা ভঙ্গ অবস্থায় দিন থাকতেই সফর থেকে ফিরে আসে তারও দিনের বাকি অংশ রোযা অবস্থায় থাকার আবশ্যকতা নেই। অনুরূপ বিধান ঋতুবতী নারীর। কেননা এরা সবাই বৈধ কারণে রোযা ভঙ্গ করেছে। তাই ঐ দিবস তাদের জন্যই।
তাতে তাদের প্রতি ছিয়ামের আবশ্যকতা নেই। কেননা শরীয়ত তাদেরকে রোযা ভঙ্গের অনুমতি প্রদান করে আবার তা আবশ্যক করবে না।
বিপরীত মাসআলা
এর বিপরীত মাসআলা হচ্ছে, রামাযান মাসের চাঁদ দেখা গেছে একথা যদি দিনের বেলায় প্রমাণিত হয়, তবে খবর পাওয়ার সাথে সাথে রোযার নিয়ত করে নিতে হবে এবং দিনের বাকী সময় রোযা অবস্থায় কাটাতে হবে। উভয় মাসআলায় পার্থক্য সুস্পষ্ট।
কেননা যখন কিনা দিনের বেলায় রামাযান মাস শুরু হওয়ার কথা প্রমাণিত হয়েছে, তখন তাদের উপর সে দিনের ছিয়াম পালন করা ওয়াজিব হয়ে গেছে। কিন্তু না জানার কারণে তাদের ওযর গ্রহণযোগ্য এবং তাদের ছিয়াম বিশুদ্ধ।
এই কারণে তারা যদি জানতে পারত যে আজ রামাযান শুরু হয়েছে, তবে রোযা রাখা তাদের জন্য আবশ্যক হত।
প্রশ্ন: ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও বিধান কি? কেউ যদি কোন কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করে তাহলে তার করণীয় কি?
উত্তরঃ নিম্নে রোজা ভাঙ্গার ভয়াবহ শাস্তি এবং এর কাজা ও কাফফারার পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:
ক. শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা না রাখার বা রোজা ভাঙ্গার ভয়াবহ শাস্তি:
রমাযান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ, মুকিম (আবাসে অবস্থানকারী/সফরকারী নয়) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরজ। এটি ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৪র্থ। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া (যেমন: অসুস্থতা, সফর, ক্ষুধা-পিপাসায় প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির আশংকা ইত্যাদি) রোজা ভাঙ্গা কবিরা গুনাহ ও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হাদিসে বিনা কারণে রোজা ভঙ্গের ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)
হাদিসে এসেছে: আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
بينَا أنَا نَائِمٌ إذْ أَتَاني رَجُلانِ فأخَذَا بضَبْعِي -أي: عَضُدِي- فَأَتَيَا بي جَبَلاً وَعْراً فَقَالَا لي: اصْعَدْ، فقلت: إني لا أُطِيقُه، فقَالَ: إنا سَنُسَهِّلُه لك،فَصَعَدتُ حتى إذا كُنتُ في سَواءِ الجَبَل إذا أنا بِأصْواتٍ شدِيدَةٍ،فَقُلْتُ: مَا هَذهِ الأَصْواتُ؟ قَالَوا: هَذا عِوى أَهْلِ النَّارِ، ثمَّ انْطُلِقَ بي فَإِذا أَنا بِقَومٍ مُعَلَّقِين بِعَرَاقِيبهِم، مُشَقَّقَةٍ أَشْدَاقُهُم تَسِيلُ أشْداقُهُم دَماً، قَالَ: قُلتُ: مَن هَؤُلاءِ؟ قَالَ: هؤُلاءِ الَّذين يُفطِرُون قَبلَ تَحِلَّة صَوْمِهِم
“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সহসা দু জন লোক এসে আমার বাহু ধরে আমাকেসহ তারা এক দুর্গম পাহাড়ে গমন করল। তারা আমাকে বলল: পাহাড়ে উঠো। আমি বললাম: এ পাহাড়ে উঠা আমার দ্বারা সম্ভব নয়। তারা বলল: আমরা তোমাকে সাহায্য করব। যাহোক আমি ওপরে উঠতে শুরু করলাম। যখন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছলাম তখন বিকট আওয়াজের সম্মুখীন হলাম। জিজ্ঞাসা করলাম: এগুলো কিসের আওয়াজ? তারা বলল: এগুলো জাহান্নামীদের আর্তনাদ। অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে রওনা করার পর আমি এমন লোকদের সম্মুখীন হলাম, যাদেরকে হাঁটুতে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ক্ষতবিক্ষত। সেখান থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এরা কারা? তারা বলল: এরা হল সেসব লোক যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ভেঙ্গে ফেলত।”[নাসাঈ ফিল কুবরা: ৩২৮৬, তাবরানি ফিল কাবির: ৭৬৬৭-শাইখ আলাবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা সহিহা, হা/৩৯৫১]
আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন উক্ত হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন: “এই হল যারা রোজা ভঙ্গ করত তাদের শাস্তি। তাহলে যারা আদতেই রোজা রাখে না তাদের কী পরিণতি হতে পারে?! আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।” (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েল ১৯/৮৯)
সুতরাং কেউ শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা ভঙ্গ করে বা আদতেই রোজা না রাখে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, অনতিবিলম্বে লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আর কখনো জেনে-বুঝে এমনটি না করার অঙ্গীকার করা। অত:পর নিম্নে বর্ণিত শরিয়তের বিধান অনুযায়ী কাজা বা কাফফারা আদায় করা।
খ. রোজা ভাঙ্গার কাজা ও কাফফারা আদায়ের পদ্ধতিঃ
রোজা ভঙ্গের কারণের উপর কাজা বা কাফফারার বিষয়টি নির্ভর করছে। যেমন:
(১) স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি উক্ত রোজাটি কাজা করাই যথেষ্ট (কাফফারা নেই):
কেউ যদি স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে (যেমন: ইচ্ছাকৃত পানাহার, হস্তমৈথুন, ইচ্ছাকৃত বমি ইত্যাদি) রোজা ভঙ্গ করে তাহলে খাঁটি অন্তরে তওবা করার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে সেটা কাজা করাই যথেষ্ট। এভাবে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ করবে সে কয়টা কাজা করতে হবে।
তবে এতে কাফফারা দিতে হবে কি না এ বিষয়ে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ মতে এর জন্য কাফফারা নেই। কেননা হাদিসে কেবল স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য কোন ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই। যে হাদিস দ্বারা কাফফারার দলিল পেশ করা হয় সেটার কোন ভিত্তি নাই।
সুতরাং এটিই অধিক বিশুদ্ধ অভিমত যে, এতে অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবার পাশাপাশি কাজা করাই যথেষ্ট।
এ পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, সাঈদ বিন জুবাইর, নাখঈ, ইবনে শিরীন রহ. প্রমুখ। শাইখ বিন বায এ প্রসঙ্গে বলেন:
والصواب أن عليه التوبة ولا يلزمه إلا قضاء اليوم الذي أفطره فقط، هذا هو الصواب، وعليه التوبة “সঠিক কথা হল, তার জন্য তওবা করা এবং যে দিনের রোজা ভেঙ্গেছে কেবল সে দিন রোজাটা কাজা করা আবশ্যক।”
শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট
(২) সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করার পাশাপাশি কাফফারা আদায় করা আবশ্যক:
স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তাতে অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি অন্তরে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করা তারপর তার কাফফারা দেয়াও আবশ্যক। ।
হাদিসে একমাত্র এই কারণে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য ক্ষেত্রে আসে নি। লক্ষণীয় হল, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে-বীর্যপাত হোক না হোক-তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।
➧ কাফফারাঃ
কাফফারার বিষয়গুলোর ধারাক্রম নিম্নরূপ। (অর্থাৎ একটি আদায় করতে সক্ষম না হলে অপরটি করতে হবে।) ● ১. একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা। (বর্তমান যুগে যেহেতু দাস-দাসীর প্রথা নেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।)
● ২. একটানা (বিরতি হীনভাবে) ৬০টি রোজা রাখা।
● ৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিন তথা গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা তথা সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া। টাকা দেয়া ঠিক সুন্নাহ পরিপন্থী।
একজন মিসকিনকে ৬০ বেলা খাবার খাওয়ানো যেমন জায়েজ তেমনি ৬০জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়ানোও জায়েজ। [কাফফারা প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ লম্বা হাদিস সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। পোস্টের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় তা উল্লেখ করা হল না]
শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা বা রোজা না রাখা কবিরা গুনাহ এবং ভয়ানক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
কেউ শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা নষ্ট করে তাহলে তার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করা আবশ্যক।
স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্যভাবে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে তা কাজা করাই যথেষ্ট। কিন্তু স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙেছে সেটি কাযা করতে হবে। সেই সাথে কাফফারা দেয়াও ওয়াজিব। আল্লাহু আলাম।
প্রশ্নঃ একটি কথা প্রচলিত আছে যে ইফতারের পূর্বে দুআ করলে সেই দুআ নাকি কবুল হয়। এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। তাছাড়া কখন দুয়া করলে তা কবুল হবার সম্ভাবনা থাকে তাও জানতে চাচ্ছি।
উত্তরঃ রোযা অবস্থায় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না এ ব্যাপারে সহীহ হাদিস রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
সুতরাং রোজাদারের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোন সময় দুআ কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিশেষ করে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে মানুষ ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ও ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে। তাই সে সময় দুয়া কবুলের সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ এ ধরণের দুর্বল ও কষ্টকর অবস্থায় দুআ করা হলে তা কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সেই সাথে এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা হলঃ
إنَّ للصائمِ عندَ فِطرِه لَدعوةً ما تُرَدُّ
“ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য এমন একটি দুআ রয়েছে যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না।”
ইবনে মাজাহ, হাকিম
এ হাদিসটি সহীহ না কি জঈফ এ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। আল্লামা আলবানী রহ. এটিকে সনদগতভাবে জঈফ সাব্যস্ত করলেও ইমাম বূসীরী, ইবনে হাজার আসকালানী, আহমদ শাকের সহ কতিপয় মুহাদ্দিস সহীহ/হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
মোটকথা, এ হাদিসটিকে জঈফ ধরে নিলেও রোযা অবস্থায় দুআ কবুলের সহীহ হাদিস অনুযায়ী এবং ইফতারের আগে রোজাদারদের দুর্বল অবস্থায় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতারের পূর্বে দুআ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
তাই রোজাদারের উচিৎ, সারা দিন রোযা অবস্থায় দুয়া করার সুযোগকে হাত ছাড়া না করা। বিশেষ করে ইফতারে আগের সময়টিকে দুআর জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া। আল্লাহু আলাম।
প্রশ্নঃ ইফতার তৈরি, ইফতারের নানা আইটেম আর ইফতার পার্টির বিভিন্ন ছবি ফেসবুকে শেয়ার দেয়া কি ঠিক?
উত্তরঃ ফেসবুকে এ সব ছবি প্রচার-প্রসার করার কী উদ্দেশ্য?
আমাদের জানা দরকার যে, মানুষকে ইফতার খাওয়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কারণ হাদীসে এসেছে, যে ব্যক্তি কোন রোযাদারকে ইফতার করায় সে ব্যক্তি সমপরিমান সওয়াবের অধিকারী হয়।
অনুরূপভাবে ইফতারী তৈরি করাও নেকির কাজ। এর মাধ্যমে একটি ইবাদত পালনে সহায়তা করা হয়। এ কারণে এতেও সওয়াব রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
কিন্তু দ্বীনী উদ্দেশ্য ছাড়া লোক দেখানোর জন্য এ সব বিষয় ফেসবুকে প্রচার করলে তা ‘রিয়া’ বা লোকদেখানো আমল হিসেবে গুনাহগার হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
ইফতারের ছবি আপলোড করে যারাঃ
মূলত: যারা ফেসবুকে এ সব আপলোড দেয়া তারা কিছু লাইক, শেয়ার আর কমেন্ট পাওয়ার আশায় থাকে। যার কারণে তারা কিছুক্ষণ পরপর টাইমলাইন চেক করতে থাকে। আর পর্যাপ্ত লাইক না বা কমেন্ট না পেলে তাদের মন খারাপ থাকে!! তাহলে এগুলো ‘রিয়া’ হতে বাকি থাকল কোথায়?
সুতরাং এ সব অসুস্থ মানসিকতা থেকে বের হয়ে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য মহিমান্বিত মাহে রামাযানে যথাসম্ভব নিভৃতে এ সব ইবাদত করা দরকার। তাহলে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার পাশাপাশি আখিরাতে লাভ করা যাবে অবারিত সওয়াব।
কিন্তু এগুলোর পেছনে দুনিয়াবী কোন উদ্দেশ্য থাকলে এ সকল কর্মকাণ্ড শুধু নিষ্ফল হবে না বরং তা রিয়া (ছোট শিরক) এর রূপান্তরিত হয়ে তাদের জন্য আখিরাতে ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।
প্রশ্ন: রমজান মাসে কোনটির দিকে বেশী গুরুত্ব দিব? কুরআনের অক্ষরের তিলাওয়াতের দিকে? নাকি অনুবাদসসহ তিলাওয়াতের দিকে?
উত্তরঃ এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। অনেক আলেম বলেছেন, এ মাসে অধিকমাত্রায় তিলাওয়াত করা উত্তম। আর অনেক আলেম বলেছেন কুরআনে অর্থ, ব্যাখ্যা জেনে কুরআন গবেষণার মনোভাব নিয়ে তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম।
তবে দলীলের আলোকে ‘কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি এর মমার্থ জানার চেষ্টা করা অধিক উত্তম’ এটি অধিক অগ্রগণ্য মত বলে বিবেচিত হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন:
“এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।”
“রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”
সূরা বাকরা: ১৮৫
কুরআনের মমার্থ জানার চেষ্টা ছাড়া তিলাওয়াত করলে সওয়াব অর্জন হলেও কুরআন থেকে হেদায়াত পেতে হলে এবং হক ও বাতিলের মাধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া কুরআনের ব্যাখ্যা জানা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা ছাড়া কী করে সম্ভব?
সহীহ বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত হয়েছে,
وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم كل ليلة في رمضان فيدارسه القرآن . رواه البخاري (5) ومسلم
“জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রমাযানের প্রতিরাতে রাসূল সা. এর নিকট এসে তার সাথে কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন।”(4268)
জিবরাঈ আ. প্রতি রামাযানে রাসূল সা. এর নিকট একবার করে পূরো কুরআন পেশ করতেন কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর দুবার কুরআন পেশ করেছেন।”
বুখারী, হা/৪৬১৬
এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, রামযান মাসে অধিক পরিমানে কুরআন পাঠ করা, কুরআন খতম করা এবং কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালচনা করা মুস্তাহাব।
তবে আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, যারা কুরআনের ভাষা জানেন এবং কুরআন পড়ে তার মৌলিক মর্মবাণী উপলদ্ধি করতে সক্ষম তাদের জন্য বেশী বেশী তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম। যেমন, অনেক সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা রামযানে অধিকমাত্রায় কুরআন তিলওয়াতের দিকে ঝুঁকতেন। আর যারা কুরআনের ভাষা বুঝেন না এবং তিলাওয়াত করেই এর মমার্থ বুঝতে পারেন না তাদের জন্য তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা সর্বাধিক উত্তম এতে কোন সন্দেহ নাই।
সুতরাং আমাদের করণীয় হল, রামাযানে সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমানে কুরআন তিলাওয়াত করা সেই সথে কুরআনের তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা।
মোটকথা,রামাযান হল কুরআনের মাস। আমরা যেন বিশেষ করে এ মাসে কুরআন পাঠ, পঠন, শিক্ষাদান, মুখস্থ করণ, কুরআনের শিক্ষা পর্যালোচনার পাশাপাশি বাস্তব জীবন তা বাস্তবায়নের প্রেরণা গ্রহণ করি সে জন্য আামাদের সর্বাত্তক তৎপরতা থাকা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।
রমাযান মাসকে ঘিরে সমাজে একধিক বিদআত প্রচলিত রয়েছে। যেগুলো এক জায়গায় এক রকম, অন্য জায়গায় আর এক রকম। এক দেশের লোকাচার অন্য দেশ থেকে ভিন্ন। নিম্নে আমরা আমাদের দেশে প্রচলিত এ সংক্রান্ত কিছু বিদআতী কাজের চিত্র তুলে ধরব।
১) নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে বিদ্আত:
রামাযানের নতুন চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু লোক চাঁদের দিকে হাত উঁচু করে শাহাদাত আঙ্গুলী দ্বারা ইশারা করে থাকে। এটা বিদআত। কেননা, কুরআন-সুন্নাহতে এর কোন ভিত্তি নাই।
তবে নতুন চাঁদ দেখলে নিম্নোক্ত দুআটি পাঠ করা সুন্নাত:
দেখা যায়, রামাযান মাসে শেষ রাতে মুআযযিনগণ মাইকে উচ্চ আওয়াযে কুরআন তেলাওয়াত, গযল, ইসলামী সঙ্গীত ইত্যাদি গাওয়া শুরু করে। অথবা টেপ রেকর্ডার চালিয়ে বক্তাদের ওয়াজ, গজল বাজাতে থাকে। সেই সাথে চলতে থাকে ভায়েরা আমার, বনেরা আমার, উঠুন, সাহরীর সময় হয়েছে, রান্না-বান্না করুন, খাওয়া-দাওয়া করুন” ইত্যাদি বলে অনবরত ডাকাডাকি। অথবা কোথাওবা কিছুক্ষণ পরপর উঁচু আওয়াজে হুইশেল বাজানো হয়।
এর থেকে আরো আজব কিছু আচরণ দেখা যায়। যেমন, এলাকার কিছু যুবক রামাযানের শেষ রাতে মাইক নিয়ে এসে সম্মিলিত কন্ঠে গযল বা কাওয়ালী গেয়ে মানুষের বাড়ির দুআরে দুআরে গিয়ে চাঁদা আদায় করে। অথবা মাইক বাজিয়ে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে। এ ছাড়াও এলাকা ভেদে বিভিন্ন বেদআতী কার্যক্রম দেখা যায়।
আমাদের জানা উচিত, শেষ রাতে মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা নিচের আসমানে নেমে আসেন। এটা দুআ কবুলের সময়। আল্লাহ তাআলার নিকট এ সময় কেউ দুআ করলে তিনি তা কবুল করেন। মুমিন বান্দাগণ এ সময় তাহাজ্জুদের নামায পড়েন, কুরআন তেলাওয়াত করেন, মহান আল্লাহ তাআলা তায়ালা দরবারে রোনাযারী করে থাকেন। সুতরাং এ সময় মাইক বাজিয়ে, গযল গেয়ে বা চাঁদা তুলে এ মূল্যবান সময়ে ইবাদতে বিঘ্নিত করা নিঃসন্দেহে গুনাহর কাজ। এতে মানুষের ঘুমে ব্যাঘাত ঘটানো হয়।
যার ফলে অনেকের সেহরী এমনকি ফজরের নামায পর্যন্ত ছুটে যায়। এই কারণে অনেক রোযাদারগণ সেহরীর শেষ সময় পর্যন্ত বিলম্ব না করে আগে ভাগে সেহরী শেষ করে দেয়। এ সবগুলোই গুনাহের কাজ।
তাহলে আমাদেরকে জানতে হবে ক্ষেত্রে সুন্নত কী?
এ ক্ষেত্রে সুন্নাত হচ্ছে, ফজরের আগে সেহরীর জন্য আলাদা একটি আযান দেয়া। এই আযান হল সেহরী খাওয়ার জন্য এবং তারপর ফজর সালাতের জন্য আরেকটি আযান দেয়া। এজন্য রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর পক্ষ থেকে দুজন মুআযযিনও নিয়োগ করা ছিল। যেমন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
“বেলাল আযান দেয় এজন্য যে, যেন ঘুমন্ত লোক জাগ্রত হয় আর তাহাজ্জুদ আদায়কারী ফিরে আসে অর্থাৎ নামায বাদ দেয় এবং সেহরী খায়।”
সুতরাং এ দুটির বেশি কিছু করতে যাওয়া বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। এজন্যই ওলামাগণ বলেছেন: “যেখানে একটি সুন্নত উঠে যায় সেখানে একটি বিদআত স্থান করে নেয়।” আমাদের অবস্থাও হয়েছে তাই। সুন্নত উঠে গিয়ে সেখানে নিজেদের মনগড়া পদ্ধতি স্থান দখল করে নিয়েছে। আল্লাহ আমাদেরকে পুনরায় সুন্নতের দিকে ফিরে আসার তাওফীক দান করুন। আমীন।
তবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যে এলাকায় দুটি আযান দেয়ার প্রচলন নেই সেখানে রামাযান মাসে হঠাৎ করে দুটি আযান দেয়া ঠিক নয়। কেননা, এতে মানুষের মাঝে সেহরী খাওয়া ও ফজর সালাতের সময় নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হতে পারে।
৩) সেহরী নিয়ত মুখে উচ্চারণ
সেহরী খাওয়া একটি ইবাদত। আর যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত অপরিহার্য শর্ত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
« إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ »
সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।”
সহীহ বুখারী
তাই রোযা রাখার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
কিন্তু জানা দরকার, নিয়ত কী বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়? নিয়ত কী বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?
ইমাম নববী (রাহ:) বলেন: মনের মধ্যে কোন কাজের ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেয়াকেই নিয়ত বলা হয়। সুতরাং রোযা রাখার কথা মনে মধ্যে সক্রিয় থাকাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। মুখে উচচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। কেননা, ইসলামী শরীয়তে কোন ইবাদতের নিয়ত মুখ দিয়ে উচ্চারণের কথা আদৌ প্রমণিত নয়।
অথচ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ওযুর নিয়ত, নামাযের নিয়ত, সেহরী খাওয়ার নিয়ত ইত্যাদি চর্চা করা হয়। নামায শিক্ষা, রোযার মাসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বইতে এ সব নিয়ত আরবীতে অথবা বাংলা অনুবাদ করে পড়ার জন্য জনগণকে শিক্ষা দেয়া হয়। কিন্ত আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দ্বীনের মধ্যে এভাবে নতুন নতুন সংযোজনের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন:
“যে আমাদের এই দ্বীনে এমন নতুন কিছু তৈরি করল যা তার অন্তর্ভূক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য।”
বুখারী ও মুসলিম
তাই মুসলমানদের কর্তব্য হল, দলীল-প্রমাণ ছাড়া গদবাধা নিয়ত সহ সব ধরণের বিদআতী কার্যক্রম পরিত্যাগ করা এবং সুন্নতকে শক্তভাবে ধারণ করা। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।
কিছু রোযাদারকে দেখা যায়, স্পষ্টভাবে সূর্য ডুবে যাওয়ার পরও অতি সর্তকতার কারণে আরও কিছুক্ষণ পরে ইফতার করে। এটি স্পষ্ট সুন্নত বিরোধীতা। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :
মানুষ ততদিন কল্যাণে উপর থাকবে যতদিন তাড়াতাড়ি ইফতার করবে।”
বুখারী ও মুসলিম
৫) তারাবীহ নামায সংক্রান্ত বিদআত:
অনেক মসজিদে দেখা যায়, তারাবীহর নামাযের প্রতি চার রাকাত শেষে মুসল্লীগণ উঁচু আওয়াজে ‘সুবাহানা যিল মুলকে ওয়াল মালাকূতে…” দুআটি পাঠ করে থাকে। এভাবে নিয়ম করে এই দুয়া পাঠ করা বিদআত। অনুরূপভাবে এ সময় অন্য কোন দুআ এক সাথে উঁচু আওয়াজে পাঠ করাও বিদআত।
কারণ, এ ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহীহ হাদীস নেই। বরং নামায শেষে যে সকল দুআ সহীহ হাদীসে বর্ণিত হয়েছে সেগুলো পাঠ করা সুন্নত। যেমন, তিনবার আস্তাগফিরুল্লাহ”, একবার আল্লাহুম্মা আন্তাস সালাম ওয়ামিন্কাস সালাম, তাবারাক্তা ইয়া যাল জালালি ওয়াল ইকারাম” ইত্যাদি। এ দুয়াগুলো প্রত্যেকেই চুপিস্বরে নিজে নিজে পাঠ করার চেষ্টা করবে।
৬) তারাবীর নামাযে দ্রুত কুরআন তেলাওয়াত
অনেক মসজিদে রামাযানে তারাবীর নামাযে খুব তাড়াতাড়ি কুরআন তেলাওয়াত করা বা তাড়াহুড়া করে নামায শেষ করা। যার কারণে তেলাওয়াত ঠিক মত বুঝাও যায় না। নামাযে ঠিকমত দুআ-যিকিরও পাঠ করা যায় না। এটা নি:সন্দেহে সুন্নত পরিপন্থী। কেননা, আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের কিয়ামুল লাইল হত অনেক দীর্ঘ এবং ধীরস্থির।
৭) বদর দিবস পালন করা বিদআত:
২য় হিজরীর রামাযনের সতের তারিখে বদরের প্রান্তরে মক্কার মুশরিক সমম্প্রদায় এবং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং তার জানবাজ সাহসী সাহাবয়ে কেরামের মাঝে এক যুগান্তকারী যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। এ যুদ্ধ ছিল অস্ত্র-সম্ভার এবং জনবলে এক অসম যুদ্ধ। মুসলমানগণ অতি নগণ্য সংখ্যক জনবল আর খুব সামান্য অস্ত্র-শস্ত্র সহকারে কাফেরদের বিশাল অস্ত্র সজ্জিত বাহিনীর প্রতিরোধ করেছিলেন এবং আল্লাহ তায়ালা সে দিন অলৌকিকভাবে মুসলমানদেরকে বিজয় দান করেছিলেন। এ যুদ্ধের মাধ্যমে সত্য মিথ্যার মাঝে চুড়ান্ত পার্থক্য সূচিত হয়েছিল।
এতো ঐতিহাসিক সত্য। কিন্তু প্রতি বছর রামাযানের সতের তারিখে এ ঐতিহাসিক ঘটনাকে স্বরণ করার জন্য লোকজন একত্রিত হয়ে কুরআন তেলাওয়াত দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়। তারপর বদরের বিভিন্ন ঘটনা, সাহবীদের সাহসীকতা ইত্যাদি আলাচনা কর হয়। এভাবে প্রতি বছর এই দিনে ‘বদর দিবস’ পালন করা হয়। এটি যদিও আমাদের দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে এটির প্রচলন তেমন নেই। কিন্তু দু:খ জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশের কিছু ইসলামী সংগঠন প্রতি বছর বেশ জোরে শোরে সাংগঠনিক কার্যক্রম হিসেবে এই বিদআত পালন করে থাকে। অথচ উম্মতে মুহাম্মাদিয়ার সর্বোত্তম আদর্শ সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন এবং সালাফে সালেহীন থেকে এ জাতীয় অনুষ্ঠান পালনের কোন ভিত্তি নাই। বদরের এ ঘটনা নি:সন্দেহে মুসলমানদের প্রেরণার উৎস। এ সম্পর্কে জ্ঞান অজর্ন করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু এভাবে দিবস পালন করা শরীয়ত সম্মত নয়।
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রাহ:) বলেন: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নবুওয়াত জীবনে রয়েছে অনেক বক্তৃতা, সন্ধি-চুক্তি এবং বিভিন্ন বড় বড় ঘটনা, যেমন, বদর, হুনাইন, খন্দক, মক্কা বিজয়, হিজরত মূহুর্ত, মদীনায় প্রবেশ, বিভিন্ন বক্তৃতা যেখানে তিনি দ্বীনের মূল ভিত্তিগুলোর বর্ণনা দিয়েছেন। কিন্তু তারপরও তিনি তো এ দিনগুলোকে আনন্দ-উৎসব হিসেবে পালন করা আবশ্যক করেন নি। বরং এ জাতীয় কাজ করে খৃষ্টানরা। তারা ঈসা আলাইহিস সালাতু ওয়াস সালামের জীবনের বিভিন্ন ঘটনাকে উৎসব হিসেবে পালন করে থাকে। অনুরূপভাবে ইহুদীরাও এমনটি করে। ঈদ-উৎসব হল শরীয়তের একটি বিধান। আল্লাহ তায়ালা শরীয়ত হিসেবে যা দিয়েছেন তা অনুসরণ করতে হবে। অন্যথায় এমন নতুন কিছু আবিস্কার করা যাবে না যা দ্বীনের অন্তর্ভূক্ত নয়।”[28]
মূলত: এ জাতীয় কার্যক্রম নিয়ে ব্যস্ত থাকা মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের শরীয়ত থেকে দূরে রাখার একটি অন্যতম মাধ্যম। সুতরাং শরীয়ত যে কাজ করতে আদেশ করে নি তা হতে দূরে অবস্থান করে রামাযান মাসে অধিকহারে কুরআন তিলাওয়াত, নফল নামায আদায় করা, জিকির-আযকার এবং অন্যান্য এবাদত-বন্দেগী বেশি বেশি করা দরকার। কিন্তু মুসলমানদের অন্যতম সমস্যা হল শরীয়ত অনুমোদিত ইবাদত বাদ দিয়ে নব আবিস্কৃত বিদআতী আমল নিয়ে ব্যস্ত থাকা। আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করুন। আমীন।
৮) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:
আমাদের দেশে মনে করা হয় যে, সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবাদাত। যে কোন মুসলমানই তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।
৯) জুমুআতুল বিদা পালনের বিদআত:
আমাদের দেশে দেখা যায়, রামাযানের শেষ শুক্রবারে জুমুআতুল বিদা পালন করা হয়। এ উপলক্ষ্যে জুমুআর নামাযে প্রচুর ভিড় পরিলক্ষীত হয়। অথচ কুরআন সুন্নায় এ ব্যাপারে কোন ধারণা পাওয়া যায় না। আমাদের কর্তব্য প্রত্যেক জুমুআকে গুরুত্ব দেয়া। শেষ জুমুআর বিশেষ কোন ফযীলত আছে বলে কোন প্রমাণ নাই।
১০) ফিতরা প্রদানের ক্ষেত্রে সুন্নাতের বরখেলাপ:
খাদ্য দ্রব্য না দিয়ে টাকা দিয়ে অথবা কাপড় কিনে ফিতরা দেয়া সুন্নতের বরখেলাপ। কারণ, হাদীসে ফিতরা হিসেবে খাদ্য দ্রব্য প্রদান করার কথাই বর্ণিত হয়েছে । যেমন ইবনে উমর (রা) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:
فَرَضَ رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – زَكَاةَ الْفِطْرِ صَاعًا مِنْ تَمْرٍ ، أَوْ صَاعًا مِنْ شَعِيرٍ ، عَلَى كُلِّ حُرٍّ أَوْ عَبْدٍ ، ذَكَرٍ أَوْ أُنْثَى ، مِنَ الْمُسْلِمِينَ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মুসলমানদের প্রত্যেক স্বাধীন, দাস, পুরুষ অথবা নারী সকলের উপর এক সা (প্রায় আড়াই কেজি) পরিমান খেজুর অথবা জব যাকাতুল ফিতর হিসেবে আবশ্যক করেছেন।”
(বুখারী ও মুসলিম) এখানে খাদ্য দ্রব্যের কথা সুস্পষ্ট।
তাছাড়া নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগেও দিনার-দিরহামের প্রচলন ছিল কিন্তু তিনি অথবা তার কোন সাহাবী দিনার-দিরহাম দ্বারা ফিতরা আদায় করেছেন বলে কোন প্রমাণ নাই। তাই সুন্নত হল, আমাদের দেশের প্রধান খাদ্য দ্রব্য (যেমন চাউল) দ্বারা ফিতরা আদায় করা।
আরেকটি বিষয় হল: হাদীসে বর্ণিত এক সা’র পরিবর্তে আধা সা ফিতরা দেওয়াও সুন্নতের বরখেলাপ। যেমনটি উপরোক্ত হাদীসে স্পষ্টভাবেই প্রমাণিত হচ্ছে। যদিও আমাদের সমাজে আধা সা ফিতরা দেয়ার মাসআলাই দেয়া হয়।
আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবীর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
রমাযান, মুসলিমের জীবনে প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মাস। আসুন, আমরা রমাযান বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদীস জানি।
কখন সিয়াম (রোজা) শুরু করতে হবে?
عن ابن عمر رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا تصوموا حتى تروا الهلال ولا تفطروا حتى تروه فإن أغمي عليكم فاقدروا له» (رواه البخاري ومسلم)
আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবে না এবং চাঁদ না দেখে রোযা ভঙ্গ করবে না। তবে যদি (শাবান মাসের ২৯ তারিখে) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে (শাবান মাস) ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।”
বুখারী ও মুসলিম
রমাযানের এক-দুদিন আগে সিয়াম পালন না করাঃ
عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم «لا يتقدمن أحدكم رمضان بصوم يوم أو يومين، إلا أن يكون رجل كان يصوم صومه، فليصم ذلك اليوم» (رواه البخاري ومسلم)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন এক-দুদিন আগে থেকে রামাযান শুরু না করে। তবে তবে কেউ যদি আগে থেকে নফল রোযা রাখে তাহলে সে রামাযানের এক-দুদিন আগে তার সেই রোযা রাখতে পারে।”
বুখারী ও মুসলিম
রমাযান এ সুখবরঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة وغلقت أبواب النار وصفدت الشياطين» (رواه مسلم)
আবুহুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যখন রামাযান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়,জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল পরানো হয়।”
সহীহ মুসলিম
রমাযান এ শয়তানের অবস্থা ও সুখবর ঘোষণাঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين، ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة، فلم يغلق منها باب، وينادي مناد: يا باغي الخير أقبل، ويا باغي الشر أقصر، ولله عتقاء من النار، وذلك كل ليلة» (رواه الترمذي وصححه الألباني)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটলে শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়-এ মাসে আর তা খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়,এ মাসে সেগুলো আর বন্ধ করা হয় না। আর প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী,তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ অন্যায় প্রত্যাশী তুমি থেমে যাও! এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।”
عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «عمرة في رمضان تعدل حجة» (رواه البخاري)
ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমাযান মাসে একটি উমরা হজ্জের সমপরিমান।”
সহীহ বুখারী
সিয়াম পালনকারীর মর্যাদাঃ
عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: « قال الله عز وجل: كل عمل ابن آدم له إلا الصيام، فإنه لي وأنا أجزي به، والصيام جنة، فإذا كان يوم صوم أحدكم، فلا يرفث يومئذ ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله، فليقل: إني امرؤ صائم، والذي نفس محمد بيده، لخلوف فم الصائم أطيب عند الله، يوم القيامة، من ريح المسك» (رواه البخاري ومسلم)
আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আল্লাহ তাআলা বলেছেন,“রোযা ছাড়া বনী আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য। রোযা শুধু আমার জন্য।আমিই তার প্রতিদান দেব। রোযা হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে রোযা রাখে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে,আমি রোযাদার। ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ মিশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।”
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.