Category: জীবন

  • ইলেকট্রিক ব্যাট দ্বারা মশা-মাছি মারার বিধান কি?

    ইলেকট্রিক ব্যাট দ্বারা মশা-মাছি মারার বিধান কি?

    প্রশ্নঃ বর্তমানে বাজারে মশা-মাছি মারার যে ইলেকট্রিক ব্যাট পাওয়া যায় তা দিয়ে মশা-মাছি মারা কি বৈধ হবে? এছাড়া আগুন দ্বারা প্রাণী হত্যার বিধান কি?

    উত্তরঃ ইলেকট্রিক ব্যাট ইত্যাদির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক শক দিয়ে মশা-মাছি মারা জায়েজ আছে ইনশাআল্লাহ।

    হাদিসে এসেছে, আগুনের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে প্রাণী হত্যা করা হারাম। কিন্তু এ বৈদ্যুতিক মেশিন দ্বারা মশা মারা আর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে মারা এক নয়। কারণ, বৈদ্যুতিক শককে আগুন বলা ঠিক নয়।

    প্রমাণ হল, এতে যদি একটুকরো কাপড় বা কাগজ রাখা হয় তাতে আগুন লাগবে না। বরং এই যন্ত্রটি মশা-মাছির জীবনীশক্তিকে শুষে নয়। সুতরাং এটা আগুন দিয়ে পোড়ানোর হুকুমের আওতায় আসবে না।

    আগুনে পুড়িয়ে মারার বিধান

    তবে যদি কখনও পরিস্থিতি এমন হয় যে, কোন কষ্টদায়ক প্রাণীকে আগুন ছাড়া মারার উপায় নাই তাহলে তাকে আগুন দিয়ে মারাও জায়েজ আছে। যেমন, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।

    আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ

    ‏ أَنَّ نَمْلَةً قَرَصَتْ نَبِيًّا مِنَ الأَنْبِيَاءِ فَأَمَرَ بِقَرْيَةِ النَّمْلِ فَأُحْرِقَتْ فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ أَفِي أَنْ قَرَصَتْكَ نَمْلَةٌ أَهْلَكْتَ أُمَّةً مِنَ الأُمَمِ تُسَبِّحُ ‏‏”

    কোন এক নবীকে একটি পিঁপড়া কামড়ায়। তখন তার নির্দেশে আগুন দ্বারা পুরো পিঁপড়ার বস্তিকে জ্বালিয়ে দেয়া হয়। তখন আল্লাহ তার প্রতি প্রত্যাদেশ করলেন: ”তোমাকে তো মাত্র একটা পিঁপড়া কামড়েছিল, অথচ তুমি এমন একটা জাতীকে ধ্বংস করে দিলে- যারা (আমার) তাসবীহ পাঠ করতো!”

    সহীহ বুখারি, কিতাবুল জিহাদ ওয়াস সায়র, হা/৩০১৯

    আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    “‏ نَزَلَ نَبِيٌّ مِنَ الأَنْبِيَاءِ تَحْتَ شَجَرَةٍ فَلَدَغَتْهُ نَمْلَةٌ، فَأَمَرَ بِجَهَازِهِ فَأُخْرِجَ مِنْ تَحْتِهَا، ثُمَّ أَمَرَ بِبَيْتِهَا فَأُحْرِقَ بِالنَّارِ، فَأَوْحَى اللَّهُ إِلَيْهِ فَهَلاَّ نَمْلَةً وَاحِدَةً ‏”‏‏

    “কোন এক নাবী গাছের নীচে অবতরণ করেন। এরপর তাঁকে একটি পিঁপড়ায় কামড় দেয়। অত:পর তার নির্দেশক্রমে প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র গাছের নীচ থেকে সরিয়ে নিয়ে পিপড়ার বাসা আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হল। তখন আল্লাহ তাঁর প্রতি ওহী নাযিল করলেন, ‘তুমি একটি মাত্র পিপড়াকে (অপরাধী কে) কেন জ্বালালে না?’ (অর্থাৎ কেন তুমি অন্যান্য নিরপরাধ পিপীলিকাকে আগুন দ্বারা জ্বালালে?)

    সহীহ বুখারি, হা/৩৩১৯, অধ্যায় সৃষ্টির সূচনা ]

    এখান থেকে বুঝা যায়, যে প্রাণী মানুষকে কষ্ট দেয় তাকে শাস্তি দেয়া জায়েজ রয়েছে এবং বিশেষ প্রয়োজনে আগুন দিয়ে মারাও জায়েজ আছে-যদি তাকে অন্যভাবে হত্যা করা কঠিন হয়।

    অন্যথায় আগুন দিয়ে প্রাণী হত্যা করা হারাম

    আল্লাহু আলাম।

    ইলেকট্রিক ব্যাট ও কয়েলের ধোঁয়া দ্বারা মশা-মাছি মারার বিধান

    সম্পূরক প্রশ্নঃ বাজারে মশা মারার জন্য র‍্যাকেটের মত এক ধরনের ইলেকট্রিক নেট পাওয়া যায়। এতে মশাটি পুড়ে যায়। তাছাড়া গ্লোব বা কোয়েলের ধোঁয়ার মাধ্যমেও মশা মারা হয়। এভাবে ইলেকট্রিক শট ও ধোঁয়া দিয়ে মশা মারা যাবে কি?

    উত্তরঃ কোন প্রাণী যদি কষ্টদায়ক এবং ক্ষতিকর হয় তাহ’লে সেগুলোকে হত্যা করা যাবে। কিন্তু আগুনে পুড়িয়ে মারা যাবে না (বুখারি হা/৩০১৬, আবুদাঊদ হা/২৬৭৫)।

    আর ইলেকট্রিক নেট এবং কোয়েলের দ্বারা মশা মারলে তাকে আগুনে পুড়ানো বুঝায় না। অতএব এভাবে মারতে কোন বাধা নেই। (ফাতাওয়া লাজনা দায়েমা, ফতওয়া নং-৫১৭৬, উসায়মীন, লিকাউল বাবিল মাফতূহ ৫৯/১২)।

    আরও পড়ুনঃ ইঁদুর নিধনের ইসলামী বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • উপহার চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ?

    উপহার চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ?

    প্রশ্ন: কার কাছে বই বা কোনও কিছু হাদিয়া (উপহার) চাওয়া কি ভিক্ষা চাওয়ার অনুরূপ? হাদিসে বিনা প্রয়োজনে ভিক্ষাবৃত্তির শাস্তির কথা বলা হয়েছে। এটাও কি সে হাদিসের অন্তর্ভুক্ত?

    কারণ অনেকেই বন্ধু-বান্ধব বা পরিচিত জনের কাছে বই অথবা বিভিন্ন কিছু হাদিয়া চায়। দয়া করে এ বিষয়টি কুরআন-হাদিসের আলোকে জানিয়ে বাধিত করবেন।

    উত্তর: কেউ যদি তার সামর্থ্যবান বন্ধু-বান্ধব ও নিকটাত্মীয়-যেমন: ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী ইত্যাদি ব্যক্তির কাছে বই অথবা অন্য কিছু হাদিয়া (উপহার) চায় তাহলে তাতে দোষের কিছু নাই ইনশাআল্লাহ। এটা খুব সাধারণ বিষয়। কারণ মানুষ সাধারণত ভালবাসা বা স্নেহ-মমতার দাবী থেকে অথবা মজার ছলে এমনটি করে থাকে।

    তবে কারও কাছে তা না চাওয়াই উত্তম। কারণ ইসলাম জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কারও কাছে কোনও কিছু চাওয়াকে অনুৎসাহিত করেছে। (শেষে এ বিষয়ে হাদিস পেশ করা হয়েছে)।

    তবে সামর্থ্যবান বন্ধু-বান্ধব, প্রিয়জন বা নিকটাত্মীয়দের নিকট সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার দিক থেকে কখনোও উপহার চাওয়া হলে তা হাদিসে নিষিদ্ধ ‘ভিক্ষা বৃত্তি’র অন্তর্ভুক্ত বলে গণ্য হবে না। কেননা ইসলামে ভিক্ষা বৃত্তি তথা জীবন-জীবিকার পেশা হিসেবে এবং অর্থ-সম্পদ বৃদ্ধির মাধ্যম হিসেবে মানুষের কাছে হাত পাতা নিষিদ্ধ।

    হাদিসে কিয়ামতের দিন এর শাস্তির কথা বলা হয়েছে। তবে অপরিচিত কারও নিকট কোনও কিছু উপহার চাওয়া আত্মমর্যাদার পরিপন্থী। ব্যক্তিত্ববান মানুষের এমনটি করা উচিৎ নয়।

    জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ভিক্ষা করা নিষিদ্ধ:

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ سَأَلَ النَّاسَ أَمْوَالَهُمْ تَكَثُّرًا فَإِنَّمَا يَسْأَلُ جَمْرًا فَلْيَسْتَقِلَّ أَوْ لِيَسْتَكْثِرْ

    “যে ব্যক্তি সম্পদ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে মানুষের নিকট অর্থ চায় সে মূলত: (জাহান্নামের) জ্বলন্ত অঙ্গার চায়। অতএব সে কম-বেশি যা ইচ্ছা চাক।”

    মুসলিম, অধ্যায়: যাকাত, অনুচ্ছেদ: মানুষের কাছে ভিক্ষা চাওয়া নাজায়েজ

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    ‏ لأَنْ يَأْخُذَ أَحَدُكُمْ حَبْلَهُ فَيَأْتِيَ بِحُزْمَةِ الْحَطَبِ عَلَى ظَهْرِهِ فَيَبِيعَهَا فَيَكُفَّ اللَّهُ بِهَا وَجْهَهُ، خَيْرٌ لَهُ مِنْ أَنْ يَسْأَلَ النَّاسَ أَعْطَوْهُ أَوْ مَنَعُوهُ

    “তোমাদের মধ্যে কেউ যদি রশি নিয়ে (বন-জঙ্গলে গিয়ে কাঠ কেটে) পিঠে কাঠের বোঝা বয়ে এনে বিক্রি করার ফলে আল্লাহ তাকে (ভিক্ষাবৃত্তির অপমান থেকে) রক্ষা করেন তাহলে তা মানুষের নিকট তার হাতপাতার চেয়ে উত্তম। তারা দিতেও পারে নাও পারে।”

    সহিহ বুখারী, যাকাত অধ্যায়: হাদিস ৫৫০

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَا يَزَالُ الرَّجُلُ يَسْأَلُ النَّاسَ حَتّى يَأْتِيَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَيْسَ فِي وَجْهِه مُزْعَةُ لَحْمٍ

    “যে ব্যক্তি সর্বদা মানুষের কাছে ভিক্ষা করতে থাকে কিয়ামতের দিন সে এমনভাবে উঠবে যে, তখন তার মুখমণ্ডলে গোশত থাকবে না।”

    সহীহ বুখারী ১৪৭৪ ও মুসলিম ১০৪০

    উপহারের প্রতিদান দেওয়া সুন্নত:

    মনে রাখতে হবে, ইসলামে উপহার লেনদেন করা সুন্নত। এতে পারস্পারিক ভালবাসা ও সুসম্পর্ক বৃদ্ধি পায়। অনুরূপভাবে কেউ উপহার দিলে উপহার দাতাকে প্রতিদান দেওয়াও সুন্নত।

    হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    عنْ عَائِشَةَ ـ رضى الله عنها ـ قَالَتْ كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقْبَلُ الْهَدِيَّةَ وَيُثِيبُ عَلَيْهَا‏.‏ لَمْ يَذْكُرْ وَكِيعٌ وَمُحَاضِرٌ عَنْ هِشَامٍ عَنْ أَبِيهِ عَنْ عَائِشَةَ‏.‏

    আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাদিয়া কবুল করতেন এবং তার প্রতিদানও দিতেন।”

    সহীহ বুখারি, অধ্যায়: ৪৩/ হিবা (উপহার) প্রদান, পরিচ্ছেদ: ১৬১৫. হিবার প্রতিদান দেওয়া

    ইবনে উমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    وَمَنْ أَتَى إِلَيْكُمْ مَعْرُوفًا فَكَافِئُوهُ، فَإِنْ لَمْ تَجِدُوا فَادْعُوا لَهُ، حَتَّى يَعْلَمَ أَنْ قَدْ كَافَأْتُمُوهُ‏

    “যে ব্যক্তি তোমাদের জন্য ভালো কিছু করে তাহলে তোমরা তার প্রতিদান দাও। প্রতিদান দেয়ার মত কিছু না থাকলে তার জন্য দোয়া করো, যাতে সে অনুভব করতে পারে যে, তোমরা তার ভালো কাজের প্রতিদান দিয়েছ।”

    আবু দাউদ, নাসাঈ, আহমাদ আল-আদাবুল মুফরাদ, অধ্যায়: ভদ্র আচার ব্যবহার, পরিচ্ছেদ: ১১০- যার সাথে ভালো ব্যবহার করা হয় সে যেন তার উত্তম বিনিময় দেয়।-সহিহ

    ইসলাম মানুষের কাছে কোনও কিছু চাওয়ার ব্যাপারে অনুৎসাহিত করে:

    আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, ইসলাম মানুষকে উন্নত চরিত্র ও সম্মানজনক আত্মমর্যাদা শিক্ষা দেয়, অন্যের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে তাকাতে নিষেধ করে এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষের কাছে সাহায্য চাইতে নিরুৎসাহিত করে। যেমন: হাদিসে এসেছে,

    عَنْ أَبِي ذَرٍّ قَالَ: دَعَانِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ يَشْتَرِطُ عَلَيَّ: «أَنْ لَا تَسْأَلَ النَّاسَ شَيْئًا» قُلْتُ: نَعَمْ. قَالَ: «وَلَا سَوْطَكَ إِنْ سَقَطَ مِنْكَ حَتَّى تنزل إِلَيْهِ فتأخذه» . رَوَاهُ أَحْمَدُ

    আবু যার রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম (একদিন) ডেকে এনে আমার ওপর শর্তারোপ করে বললেন, “তুমি কারো কাছে কোন কিছুর জন্য হাত পাতবে না। আমি বললাম, আচ্ছা। তারপর তিনি বললেন, “এমনকি তোমার হাতের লাঠিটাও যদি পড়ে যায় কাউকে উঠিয়ে দিতে বলবে না। বরং তুমি নিজে নেমে তা উঠিয়ে নেবে।”

    মুসনাদে আহমদ, হা/২১৫০৯, সহীহ আত তারগীব, হা/ ৮১০, সহীহুল জামে, হা/ ৭৩০৭

    সাওবান রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন,

    من يتقبَّلُ لي بواحدةٍ وأتقبَّلُ لَهُ بالجنَّةِ قلتُ أنا قالَ لا تسألِ النَّاسَ شيئًا قالَ فَكانَ ثَوبانُ يقعُ سوطُهُ وَهوَ راكبٌ فلا يقولُ لأحدٍ ناوِلنيهِ حتَّى ينزلَ فيأخذَهُ

    “কে আছে যে, আমার একটি কথা কবুল করবে? আমি তার জান্নাতের জিম্মাদার হবো। আমি বললাম, আমি। তিনি বললেন, “তুমি মানুষের কাছে কোনও কিছু চাইবে না।”বর্ণনা কারী বলেন, সাওবান রা. সওয়ারিতে আরোহী থাকা অবস্থায় যদি তার হাতের ছড়িটা নিচে পড়ে যেতো তাহলে তিনি কাউকে বলতেন না যে, এটি আমাকে তুলে দাও। বরং তিনি বাহন থেকে নেমে তা তুলে নিতেন।”

    নাসায়ী, হা/২৫৯০, আবু দাউদ, হা/ ১৬৪৩,-সহিহ ইবনে মাজা, হা/১৪৯৯

    সুবহানাল্লাহ! ইসলাম মানুষকে কতটা আত্ম মর্যাদাবান হতে শেখায়। প্রকৃতপক্ষে কারও কাছে কোনও কিছু চাওয়া হলে সে তার কাছে ছোট হয়ে যায়। যে ব্যক্তি দরকারে হোক বিনা দরকারে হোক মানুষের কাছে টাকা-পয়সা বা অর্থ-সম্পদ চায় মানুষ তাদেরকে অপছন্দ করতে শুরু করে।

    তাই তো হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,আবুল আব্বাস সাহল ইবনে সা‘দ রা. বলেন,

    এক ব্যক্তি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে একটা বিষয় বলে দিন যা করলে আমাকে আল্লাহও ভালবাসেন এবং মানুষও ভালবাসবে। তিনি বললেন, «ازْهَدْ في الدُّنْيَا يُحِبّك اللهُ، وَازْهَدْ فِيمَا عِنْدَ النَّاسِ يُحِبّك النَّاسُ‘‘দুনিয়া থেকে লালসামুক্ত হও তাহলে আল্লাহ তোমাকে ভালবাসবেন। আর মানুষের ধন-সম্পদ থেকে লালসামুক্ত হও তাহলে তারাও তোমাকে ভালবাসবে।’’

    ইবনে মাজাহ, হাসান-সিলসিলাহ সহীহাহ, হা/ ৯৪৪

    সুতরাং আমাদের কর্তব্য, মানুষের সম্পদের দিকে লোভাতুর দৃষ্টিতে না তাকানো এবং একান্ত জরুরি প্রয়োজন ছাড়া একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কারও নিকট সাহায্যের আবেদন না করা বা কারও কাছে হাত না পাতা। এটি উন্নত ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদার বহিঃপ্রকাশ।

    আরও পড়ুনঃ জন্মদিন পালন এবং উইশ করার বিধান

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া ও নিষিদ্ধ হিল্লা প্রথা

    তালাক দেওয়া স্ত্রীকে ফিরিয়ে নেয়া ও নিষিদ্ধ হিল্লা প্রথা

    প্রশ্নঃ তালাক দেওয়া স্ত্রীকে কি ফিরিয়ে নেওয়া যাবে? সমাজে হিল্লা প্রথা বলতে একটি প্রথা আছে, যেখানে স্ত্রীকে একরাতের জন্য বা সল্প সময়ের জন্য অন্য কারও সাথে বিবাহ দিয়ে আবার তালাক করিয়ে ফিরিয়ে নেওয়া হয়। এটি কি ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ্য? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো, ইন শা আল্লাহ।

    উত্তরঃ একই সঙ্গে তিন বা ততোধিক বার অথবা একবার তালাক দিলে তা এক তালাক রিজয়ী হয়। তাকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। ইদ্দত পার হয়ে গেলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়।

    তারপরে পূণরায় তাকে ফিরে পেতে চাইলে নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু নিয়মতান্ত্রিকভাবে তিন তুহুরে তিন তালাক দেওয়ার পর সে সুযোগ আর থাকে না। অবশ্য সে মহিলার অন্যত্র বিবাহ হলে, অতঃপর স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে ইদ্দতের পর আগের স্বামী তাকে পূর্ণবিবাহ করতে পারে।

    মহান আল্লাহ বলেছেন,

    فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّـهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّـهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

    “ অতঃপর উক্ত স্ত্রীকে যদি সে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তবে সে পর্যন্ত না ঐ স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিবাহ করবে, তার পক্ষে সে বৈধ হবে না। অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় এবং যদি উভয় মনে করে যে, তারা আল্লাহর সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে, তাহলে তাদের (পুনর্বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে) ফিরে আসায় কোন দোষ নেই। এ সব আল্লহর নির্ধারিত সীমারেখা, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ঐগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।”

    বাকারাহঃ ২৩০

    জ্ঞাতব্য যে, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে ‘হালালা-বিবাহ’ বা ‘হিল্লা বিয়ে’ দিয়ে স্ত্রী হালাল করা বৈধ নয়। যেহেতু তাতে স্ত্রী হালাল হয় না। (আদর্শ নারী পেজ থেকে)

    ইসলামে হিল্লা প্রথা কি বৈধ?

    ইসলামের দৃষ্টিতে এটি একটি জঘণ্য কাজ ও নিষিদ্ধ প্রথা। যে হিল্লা করে এবং যার জন্য করা হয় উভয় অভিশপ্ত।

    এ মর্মে নিম্নোক্ত হাদীসগুলো দেখুন:

    ◼ ইমাম আহমদ ও ইমাম তিরমিজি রহ. আবু হুরায়রা রাদিআল্লাহু থেকে বর্ণনা করেন :

    أن النبي صلى الله عليه وسلم لعن المحلل والمحلل له.

    হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন।

    (আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমদ : (৩২৩২), ইব্‌ন আবি শায়বাহ : (৪/২৯৬), বাযযার : (কাশফুল আসতার) (২/১৬৭), হাদিস নং : (১৪৪২) প্রমূখ। ইমাম তিরমিজি রহ. বলেন, আমি মুহাম্মদ ইব্‌ন ইসামাঈলকে এ হাদিস সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছি, তিনি বলেন এ হাদিসটি হাসান।)

    ◼ আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

    لعن رسول الله صلى الله عليه وسلم المحلل والمحلل له

    “হিল্লাকারী ও যার জন্য হিল্লা করা হয় উভয়ের উপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লানত করেছেন”।

    (সুনানে তিরমিযি : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১১১৯), সুনানে আবু দাউদ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (২০৭৬), সুনানে ইব্‌ন মাজাহ : অধ্যায় আন-নিকাহ, হাদিস নং : (১৯৩৫), মুসনাদে ইমাম আহমদ ইব্‌ন হাম্বল : (১/৮৭)। ইমাম তিরমিজি হাদিসটি হাসান ও সহিহ বলেছেন)

    ◼ ওমর রাদিআল্লাহু আনহুর বাণী ইব্নুল মুনজির নিম্নের শব্দে বর্ণনা করেন :

    عن عمر بن الخطاب أنه قال : لا أوتى بمحلل ولا محللة إلا رجمتهما

    “আমার নিকট হিল্লাকারী পুরুষ অথবা নারী পেশ করা হলে, আমি তাদেরকে প্রস্তরাঘাত করব”।

    ইগাসাতুল লাহফান লি ইব্নুল কাইয়্যূম : (১/৪১১)

    এক হাদীসে যে ব্যক্তি কোন মহিলাকে তার তার প্রথম স্বামীর জন্য হালাল করার নিয়তে বিয়ে করবে এবং সহবাস করবে তাকে ভাড়া করা পাঠা হিসেবে সাব্যস্ত করা হয়েছে।

    মোটকথা, ইসলামে হিল্লা প্রথার কোন স্থান নেই। এটি একটি ইসলামবিরোধী মতবাদ। এ ব্যাপারে মুসলিমদের সাবধান হওয়া জরুরি।

    আরও পড়ুনঃ বিদআতীর সাথে বিবাহ বন্ধনের বিধান

    আল্লাহ আামদের সমাজকে সকল শরীয়া বিরোধী কার্যক্রম থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • বিয়েতে মালা বদল করা যাবে কি?

    বিয়েতে মালা বদল করা যাবে কি?

    প্রশ্নঃ বর্তমানে বিয়ের অনুষ্ঠানের একটি চোখে পড়ার মত বিষয় হচ্ছে বর-কনের মাঝে মালা বদল। আমি জানতে চাচ্ছি, বর-কনের মাঝে এই মালা বদল অংশটি ইসলামের দৃষ্টিতে জায়েজ কি না।

    উত্তরঃ মুসলিম সমাজে বিয়েতে এই প্রথাটি ব্যাপাকভাব প্রচলিত না থাকলেও কোনও স্থানে তা প্রচলিত আছে।

    মালা বদল – অন্য ধর্মীয় সংস্কৃতিঃ

    এ প্রথাটা মূলতঃ হিন্দু বিয়ের রীতি। হিন্দুদের ধর্মীয় প্রথা অনুযায়ী মতে মালা বদল এর মাধ্যমে বর ও কনে একে অন্যকে জীবনসঙ্গী হিসাবে মেনে নেয়।

    হিন্দু বিয়ের নিয়মে বলা হয়েছে: “শুভ সময় এগিয়ে আসার সাথে সাথে নববধূ পরিবারের ৪-৫জন পুরুষ তার নিখুঁত পিড়ি (পীডি) নিয়ে বসে থাকে। বরকে কেন্দ্র করে সাত বার কনেকে পিরিতে বসিয়ে ঘোরান হয়-যাতে নববধূ এবং বর সারাজীবন “নিরাপদে বেঁধে রাখা হয় পরস্পরের সাথে”।

    অবশেষে, নববধূ এবং বরকে মুখোমুখি হতে হয় এবং কন্যার মুখের সামনে থেকে পান পাতা সরিয়ে ফেলার সময় দুইজনে দুজনের মুখমুখি হয়। একে শুভ দৃষ্টি বলা হয়। শঙ্খ ধ্বনি এবং “উলুধ্বনি”দিয়ে “মালা বদল”নামে অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ হয়।” (সূত্র: উইকিপিডিয়া)

    আরো বলা হয়েছে, “সাজ বিয়ের মূল পর্ব। এই পর্বেই কনে আর বরকে ৭ বার প্রদক্ষিণ করে বরণ করে নেয়। বরণ শেষে বর-কনে দু জনের দিকে শুভ দৃষ্টি দেয়। একই সময় মালা বদল করা হয়। পরে পুরোহিত মন্ত্র উচ্চারণ করে বর-কনের ডান হাত একত্রে করে কুশ দিয়ে বেধে দেন।” (সূত্র: bdmorning)

    ইসলামে মালা বদল এর স্থানঃ

    ইসলামের সাথে এই প্রথার দ্রুততম কোন সম্পর্ক নেই। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে মেয়ের অভিভাবকের সম্মতি সাপেক্ষে মোহরানা নির্ধারণপূর্বক দু জন সাক্ষীর উপস্থিতিতে ঈজাব-কবুল (প্রস্তাব এবং গ্রহন) এর মাধ্যমে একে অপরকে স্বামী-স্ত্রী হিসেবে মেনে নেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়।

    সুতরাং তথাকথিত এই ‘মালা বদল’ প্রথা মুসলিমদের জন্য পালন করা বৈধ নয়। অন্যথায় তা অন্য ধর্মের সাদৃশ্য অবলম্বন হিসেবে পরিগণিত হবে যা ইসলামে কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ

    “যে ব্যক্তি কোন সম্প্রদায়ের সাদৃশ্য গ্রহণ করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”

    আবু দাউদ, সহীহুল জামি‘ ৬১৪৯, ইরওয়া ২৬৯১

    আরও পড়ুনঃ স্বামী-স্ত্রী কত দিন আলাদা থাকলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বিয়ে বিচ্ছেদ ঘটে?

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অন্য ধর্মের অন্ধ অনুকরণ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • যা কিছু হয়, ভালোর জন্য হয় – কথাটি কি সঠিক?

    যা কিছু হয়, ভালোর জন্য হয় – কথাটি কি সঠিক?

    প্রশ্নঃ আমাদের জীবনে কোন কিছু ঘটলেই আমরা প্রায় সবাই বলে থাকি “জীবনে যা কিছু হয় ভালোর জন্য হয়।” এ কথাটি কতটুকু সঠিক? এটা বলা কি ঠিক?

    উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্ত কথাটি সঠিক। এটি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ ও ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

    মুমিনের জীবনে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটুক না কেন-বিশ্বাস করতে হবে-অবশ্যই তাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। বিপদাপদে যদি আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারি তাহলে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মোচন করেন, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং এই কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতের উত্তম বিনিময় দান করেন।

    সব কিছু যেভাবে ভালোর জন্য হয়

    💠 আল্লাহ তাআলা বলেন: বলেন,

    وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ

    “নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু জান-মাল এবং ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।”

    সূরা বাকারাহ ১৫৫ আয়াত

    💠 আবু ইয়াহিয়া সুহাইব ইবনে সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

    عَجَباً لأََمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ للمُؤْمِن : إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيراً لَهُ، وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ

    “মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার আনন্দ দায়ক কিছু ঘটলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকার হয় আর কষ্টদায়ক কোন কিছু ঘটলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’’

    মুসলিম ২৯৯৯, আহমদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমি ২৭৭৭

    💠 আবু সাঈদ রা. ও আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ

    ‘মুসলিমকে যে কোনও ক্লান্তি, অসুখ, দু:চিন্তা, শোক এমন কি (তার শরীরে) একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করে দেন।

    সহীহুল বুখারী ৫৬৪২, মুসলিম ২৫৭৩

    সুতরাং আমাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং খারাপ কিছু ঘটলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং হাসিমুখে আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না বা আল্লাহর প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ বা কু ধারণা পোষণ করা যাবে না। এটাই তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়।

    আরও পড়ুনঃ

    মোটকথা, জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন তাতে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে যদি আমরা ধৈর্যের পরিচয় দেই, আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখি এবং তার প্রতি সুধারণা পোষণ করি। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বময় কল্যাণের অধিকারী।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • সুন্নাতি পোশাক সম্পর্কে বিস্তারিত

    সুন্নাতি পোশাক সম্পর্কে বিস্তারিত

    ইসলামী শরিয়তের দৃষ্টিতে সুন্নাতি পোশাক কি? এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করলে উপকৃত হবো।

    পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের কতিপয় মূলনীতি আছে সেগুলো ঠিক রেখে একজন মুসলিম যে কোন পোশাক পরতে পারে। ইসলাম তার অনুমোদন দিয়েছে।

    ইসলাম প্রদত্ত পোশাকের মূলনীতিঃ

    • পুরুষদের টাখনুর নিচে পরা যাবে না।
    • বিপরীত লিঙ্গের পোশাক পরিধান করা যাবে না।
    • খুব পাতলা বা আঁটোসাঁটো হওয়া যাবে না যাতে লজ্জা স্থানগুলো ফুটে উঠে বা দেখা যায়।
    • বিধর্মীদের ধর্মীয় পোশাকের মত হবে না (যেমন: বৌদ্ধদের বিশেষ কালারের পোশাক)
    • সমাজে প্রচলিত নয় এমন অদ্ভুত ডিজাইন ও কালারে পোশাক পরিধান যাবে না যাকে হাদিসে ‘লিবাসুস শুহরাহ’ বলা হয়েছে ইত্যাদি।

    এই শর্তগুলো ঠিক রেখে মুসলিমগণ নিজ নিজে দেশে প্রচলিত পোশাক পরিধান করতে পারে। শরিয়ত তাতে বাধা দেয় না।

    নারীগণ পূর্ণ হিজাব পরবে। এমন কাপড় ব্যবহার করবে যেন পর পুরুষের সামনে মুখমণ্ডল সহ শরীরের কোন অংশ খোলা না থাকে। এ ক্ষেত্রে কালো বোরকা উত্তম হিজাব। বোরকা কালার ফুল এবং নকশাদার হওয়া উচিৎ নয়। কেননা, সে ক্ষেত্রে বোরকা পরার উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। কেননা, এমন বোরকা নিজেই একটা সৌন্দর্য যা মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করবে।

    নিন্মবর্ণিত পোশাক গুলি কি সুন্নাতি পোশাক?

    জুব্বা, পাঞ্জাবী, গোল জামা, আলখাল্লা, পাগড়ি এগুলো কি সুন্নতি পোশাক?

    না, এগুলো সব আঞ্চলিক পোশাক। এগুলোকে সুন্নতি পোশাক বলা ঠিক নয়। আরব বিশ্বে মুসলিম-খৃষ্টান নির্বিশেষে জুব্বা বা আলখাল্লা পরিধান করত; এখনও পরে। ভারতের পাঞ্জাব এলাকার লোকেরা হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে পাঞ্জাবী পরিধান করে। সেটা পরবর্তীতে আমাদের দেশ সহ বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।

    পাগড়ি আরব সহ আরও কিছু এলাকার আঞ্চলিক কালচার। আবু জাহেলও পাগড়ি পরত, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও পরতেন। এটা ছিলে সমাজে প্রচলিত পোশাকের অন্তর্ভুক্ত। তবে ইচ্ছে করলে মুসলিমগণও পাগড়ি পরতে পারে। এতে আলাদা ফযিলত সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। এ মর্মে কিছু হাদিস বর্ণিত হলেও সেগুলো বানোয়াট, মুনকার ও অগ্রহণযোগ্য পর্যায়ের।

    অনুরূপভাবে টাইও খৃষ্টানদের ‘ক্রসের চিহ্ন’ এমন কোন কথা ঐতিহাসিকভাবে বা কোন প্রমাণ দ্বারা প্রমাণিত নয়। তাই একজন মুসলিম টাইও পরতে পারে দেশে প্রচলিত পোশাক হিসেবে।

    কুরআনে বর্ণিত ‘তাকওয়ার পোশাক’

    কুরআনে বর্ণিত, ‘লিবাসুত তাকওয়া’ বা তাকওয়ার পোশাক দ্বারা বাহ্যিক কোন পোশাক উদ্দেশ্য নয় বরং উদ্দেশ্য হল, তাকওয়া অবলম্বন করা, ঈমান ও আমলে সালেহ।

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّـهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

    “হে বনী আদম, আমি তোমাদের জন্যে পেfশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জা স্থান আবৃত করে এবং অবতীর্ণ করেছি সাজ সজ্জার বস্ত্র। তাকওয়ার পোশাক; এটি সর্বোত্তম।”

    সূরা আরাফ: ২৬

    এর ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণের বক্তব্য নিম্নরূপঃ

    • ◉ কাতাদাহ ও ইবনে জুরাইজ, সুদ্দী বলেন, লিবাসুত তাকওয়া অর্থ: ঈমান
    • ◉ ইবনে আব্বাস রা. বলেন: নেক আমল।
    • ◉ উরওয়াহ ইবনুয যুবাইর বলেন: আল্লাহর ভয়।
      (দেখুন: তাফসীরে ইবনে কাসীর )

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর সুন্নাতি পোশাক

    সহীহ হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পাগড়ি, পাগড়ির নিচের টুপি, জুব্বা, লুঙ্গি, চাদর, পায়জামা, জামা ইত্যাদি পরিধান করেছেন।

    এ ব্যাপারে অধিকাংশ মুহাক্কিক আলেমগণ বলেছেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব কাজ স্বভাবজাত বা মানুষের প্রকৃতিগত কাজ, সেগুলো সবই মূলত: আদতের (অভ্যাস, প্রথা বা প্রচলন) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।

    তাই তাঁর এই কাজগুলো অভ্যাসের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে; এগুলো ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে না। কেননা এ সব পোশাক তখনকার সমাজে প্রচলিত পোশাক ছিল।

    এমন নয় যে, নবুওয়তের পূর্বে তিনি এক ধরণের পোশাক পরতেন আর নবুওয়ত পাওয়ার পর আগের সব পোশাক খুলে নতুন ধরণের পোশাক পরা শুরু করে দিয়েছেন বা সাহাবিগণ ইসলাম গ্রহণের পরই আগের প্রচলিত পোশাক পরিবর্তন করে নতুন ডিজাইনের পোশাক পরা শুরু করেছন।

    না, তারা এমনটি করেন নি বরং তারা তৎকালীন সমাজের প্রচলিত পোশাকই পরিধান করেছেন। কিন্তু পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত উপরোক্ত নীতিমালাগুলো অনুসরণ করেছেন।

    এখন কেউ যদি রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে এবং তার প্রতি ভালবাসা বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উপরোক্ত পোশাকগুলো পরিধান করেন তাহলে তিনি সওয়াবের অধিকারী হবেন ইনশাআল্লাহ। আর তা শুধু ওই পোশাকের কারণে নয় বা পোশাকটাকে সুন্নত আখ্যায়িত করার জন্য নয় বরং রাসূল সা. এর অনুসরণ ও তার প্রতি ভালবাসার কারণে।

    আরও পড়ুনঃ উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

    উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

    প্রশ্নঃ আমি শুনেছি যে, বেশি হাসলে নাকি আন্তর কঠিন হয়ে যায়। এটা কি সহীহ?

    উত্তরঃ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে যে, উচ্চশব্দে বেশি পরিমাণে হাসলে মন মরে যায় এবং চেহারার উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।

    উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল সম্পর্কে হাদিসঃ

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    إيَّاك وكثرةَ الضَّحك؛ فإنَّه يميت القلبَ، ويذهب بنورِ الوجه

    “উচ্চ আওয়াজে বেশি হাসা থেকে সাবধান থাকো। কেননা এতে অন্তর মরে যায় এবং মুখ মণ্ডলের উজ্জ্বলতা নষ্ট হয়ে যায়।”

    মুসনাদ আহমদ প্রমূখ। শাইখ আলবানী এটিকে সহীহ বলেছেন

    এখানে উদ্দেশ্য হল, বেশি পরিমাণে অট্টহাসি দেয়া। এটি বিভিন্ন দিক দিয়ে ক্ষতিকর। তবে মাঝে-মধ্যে উঁচু আওয়াজে হাসা দোষণীয় নয়। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনও কখনও উঁচু আওয়াজে হেসেছেন। কিন্তু তিনি অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন।

    এমন হাসার কুফল সম্পর্কে আরও কিছু উক্তিঃ

    🌀 উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলেনঃ “যে ব্যক্তি বেশি পরিমাণে আওয়াজ করে হাসে তার ব্যক্তিত্ব বোধ কমে যায়।

    🌀 ইমাম মাওয়ারদী তার বিখ্যাত আদাবুদ দ্বীন ওয়াদ দুনিয়া গ্রন্থ বলেনঃ “উঁচু আওয়াজে হাসার অভ্যাস মানুষকে গুরুত্বপূর্ণ কাজে অমনোযোগী করে দেয়, বিভিন্ন সমস্যা ও সংকটের মুহুর্তে মনকে বিক্ষিপ্ত ও ভীত-ত্রস্ত করে আর যে অধিক পরিমাণে উঁচু আওয়াজে হাসে তার আত্মমর্যাদা ও ব্যক্তিত্ব বোধ থাকে না…।

    🌀 বৈজ্ঞানিকভাবেও প্রমাণিত হয়েছে, অট্টহাসি মানুষের হার্ট এ্যাটাকের অন্যতম কারণ। কারণ মানুষ যখন হো হো করে অট্টহাসি হাসে তখন তার শীরা-উপশিরায় উত্তেজনা বৃদ্ধি পায় এবং দেহের রক্তচাপ বেড়ে যায়। এটি বেশি মাত্রায় হলে হঠাৎ হার্ট এ্যাটাক করে মৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে।

    মুচকি হাসি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্বের চিহ্নঃ

    তাই হাসির ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা করা জরুরি। বিশেষ করে মৃদ হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। মনিষীগণ আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব গঠনের জন্য মুচকি হাসিকে অন্যতম উপায় হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। এটি দেহ ও মন উভয়ের জন্যই ভালো। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মুচকি হাসিকে সদকা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।

    আবু যর রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    تبسمك في وجه أخيك لك صدقة

    “তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।”

    সহীহ তিরমিযী, হা/১৯৫৬

    এবং তিনি নিজেও অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন এবং হাসি-খুশি জীবন যাপন করতেন।

    আরও পড়ুনঃ মন জয় করার ১১টি সহজ উপায়

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি যদি বুঝে না বুঝে জীবনে বহু কবিরা গুনাহ করে থাকে। এমতাবস্থায় সবগুলো গুনাহের কথা তাঁর স্মরণেও না থাকে তবে তওবা করার ক্ষেত্রে কি প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করতে হবে নাকি সকল গুনাহ থেকে তওবা করছি বললেই যথেষ্ট হবে?

    উত্তরঃ কোন ব্যক্তি যদি শয়তানের প্ররোচনা বা কু প্রবৃত্তির তাড়নায় অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, কবিরা গুনাহ করে এবং পরে ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করে, ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে না মর্মে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে-সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করে তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।

    পাপের তওবা এর বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا

    “তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের গুনাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

    সূরা আল ফুরকান: ৭০

    তিনি আরও বলেন,

    قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ

    “(হে নবী) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

    সূরা যুমার: ৫২ ও ৫৩

    তিনি আরও বলেন,

    قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُم مَّا قَدْ سَلَفَ

    “(হে নবী) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে অতীতে যা কিছু ঘটে গেছে সেগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।”

    সূরা আরাফ: ৩৮

    পাপের তওবার বিষয়ে বিভিন্ন আলেমের মন্তব্যঃ

    এ ছাড়াও বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দয়াময় আল্লাহ তাআলা তওবার মাধ্যমে বান্দার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেন। যেমন: ৯৯ জন মানুষ খুনকারীকে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা করার হাদিস।

    উল্লেখ্য যে, নিম্নাক্ত হাদিসটি খুবই প্রসিদ্ধ এবং অনেক বড় বড় আলেম তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তা হলঃ

    «ألم تعلم أن التوبة تجبُّ ما قبلها»

    “তুমি কি জানো না যে, তওবা অতীতের সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়?।

    “কিন্তু শাইখ আলবানী এটিকে “ভিত্তিহীন বা আমি এর কোন ভিত্তি সম্পর্কে জানি না” বলেছেন।

    সিলসিলা যঈফা/১০৩৯

    তবে যাই হোক, এর মমার্থে কোন ভুল নাই-যা উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়। (আল্লাহ ভালো জানেন)

    আহলে ইলমগণ বলেন,

    أن التوبة من جميع الذنوب على سبيل الإجمال كافية

    “সকল গুনাহ থেকে একসাথে তওবা করাই যথেষ্ট।”

    ইবনে কাসির রহ. কুরআনের তওবা সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত (সূরা তওবা এর ৩৮, সূরা শুরা এর ২৫ এবং সূরা যুমার এর ৫৩ নং আয়াত) উল্লেখ করার পর বলেন,

    هذه الآية الكريمة دعوة لجميع العصاة من الكفرة وغيرهم إلى التوبة والإنابة، وإخبار بأن الله يغفر الذنوب جميعا لمن تاب منها، ورجع عنها، وإن كانت مهما كانت، وإن كثرت وكانت مثل زبد البحر. اهـ.”

    এই আয়াতগুলো সকল কাফের ও অন্য পাপিষ্ঠদেরকে তওবা ও প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছে আর এ তথ্য দিচ্ছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সকল প্রকার পাপাচার থেকে তওবা করবে এবং সেগুলো থেকে ফিরে আসবে তিনি তার সকল পাপরাশী ক্ষমা করা দিবেন-যদিও তা প্রচুর পরিমাণ হয়- যদিও তা সাগরের ফেনার মত হয়।”

    কুরআনের আয়াত, হাদিস ও আলেমদের বক্তব্যের আলোকে প্রমাণিত হল যে, মানুষ যদি তার অতীতের সকল গুনাহের জন্য অনুপ্ত হয়ে খাঁটি হৃদয়ে, সত্যিকার ভাবে এবং তওবার শর্তাবলী ঠিক রেখে আল্লাহর কাছে তওবা করে এবং তাঁর পথে ফিরে আসে তাহলে তিনি তার সকল পাপাচার মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন। পাপের পরিমাণ, সংখ্যা ও ভয়াবহতা যাই হোক না কেন।

    প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করা আবশ্যক নয়। নিশ্চয় আল্লাহ পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং তিনি তওবা কারীদেরকে ভালবাসেন।

    অবশ্য মানুষের হক নষ্ট করা হলে মালিকের নিকট তা প্রত্যর্পণ করা বা তার নিকট ক্ষমা না নেয়া পর্যন্ত সাধারণ তওবা-ইস্তিগফার দ্বারা তা মোচন করা হবে না। আল্লাহু আলাম।

    মানুষের হক পরিশোধ

    প্রশ্ন: তওবা দ্বারা সকল গুনাহ মাফ হবে মানুষের হক ব্যতীত নাকি আগে মানুষের হক পরিশোধ না করলে কোন ব্যাপারে তওবা কবুল হবে না?

    উত্তর: কেউ যদি অন্যের হক নষ্ট করে তাহলে এর গুনাহ মোচন হবে না যতক্ষণ না মালিকের নিকট তার হক ফিরিয়ে দেয় বা তার নিকট ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সমাধান না করে।

    এ কারণে অন্যান্য গুনাহ মাফ হবে না-এমনটি নয়। অর্থাৎ যে সকল গুনাহ আল্লাহর হক সংক্রান্ত সেগুলো আল্লাহর নিকট তওবার মাধ্যমে তিনি ক্ষমা করবেন যদি তওবার শর্তানুযায়ী তওবা করে। কিন্তু মানুষের হক সংক্রান্ত গুনাহগুলো মোচনের জন্য অবশ্যই যার হক নষ্ট করেছে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে বা তার সাথে সমঝোতায় আসতে হবে।

    আরও পড়ুনঃ নিজের দোষত্রুটি ধরার উপায়

    আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

    ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

    প্রশ্নঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি তথা ফ্রি মিক্সিং বিয়েতে ছবি তুলে টাকা নেওয়া হলে সেই টাকা কি হালাল হবে? এসব অনুষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের এভাবে ছবি তোলা কি জায়েজ?

    উত্তরঃ আমাদের অজানা নয় যে, বর্তমানে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি একটা পেশায় পরিণত হয়েছ। তরুণ-তরুণীরা বিয়ের উৎসবকে রীতিমত শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। নিত্যনতুন থিম, পোশাকের আইডিয়া, লোকেশন দিয়ে আনছে নতুনত্ব বিয়ের উৎসবে।

    ওয়েডিং ফটোগ্রাফীর অবস্থাঃ

    ওয়েডিং ফটোগ্রাফি মানে শুধু বর-কণের ছবি নয় বরং বিয়েতে অংশ গ্রহণকারী তরুণ-তরুণী, দম্পতি, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি নানা জনের নানান পোজে ছবি তোলা। আমাদের সমাজে কথিত গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, বিয়ের মূল পর্ব আর সবার শেষ দিনে বৌ ভাত (ওলিমা অনুষ্ঠান) ইত্যাদি প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা যেন এক অপরিহার্য অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে!

    এই কাজ হারাম নাকি হালালঃ

    যাহোক, ইসলামের বিধান হল, যে কাজটা হারাম সে কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা, তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা, তাতে অংশ গ্রহন করা, তাতে কোনও ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা, প্রচার-প্রসার করা এবং এ সংশ্লিষ্ট সব কিছুই হারাম।

    সুতরাং যে সব বিয়ে অনুষ্ঠানে ফ্রি মিক্সিং তথা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হয়, বেপর্দা নারীর উপস্থিতি থাকে, নাচ-গান, অশ্লীলতা ও নানা ধরণের শরিয়া বিরোধী কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় সে সব অনুষ্ঠানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা তো দূরের কথা দাওয়াত খাওয়ার জন্যও অংশ গ্রহণ করাও হারাম।

    আরও আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ, যা হারামঃ

    শুধু তাই নয়, এ সব কাজের জন্য ক্যামেরা, মাইক, ডেক সেট, স্টেজ, প্যান্ডেল ইত্যাদি ভাড়া দেয়াও হারাম। কারণ এর মাধ্যমে হারাম কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি শয়তানকে খুশি করা হয়।

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

    “আর তোমা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।”

    সূরা মায়িদা: ২

    ইসলামে ছবি তোলার বিধানঃ

    আরেকটি বিষয় হল, ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি দরকার ছাড়া মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু ইত্যাদির ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ

    “(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।”

    [মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)

    ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    مَنْ صَوَّرَ صُورةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ أنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَيْسَ بِنَافخٍ (متفقٌ عليه)

    “যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করে, তাকে কিয়ামতের দিন তাতে জীবন দানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে কিন্তু সে সক্ষম হবে না।”

    সহিহ বুখারি ও মুসলিম

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ

    “যারা এ জাতীয় (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে: “তোমরা যা বানিয়েছিলে তাতে জীবন দাও।”

    [৭৫৫৮; মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৪)

    সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকেও এ সব অনুষ্ঠানের ছবি-ভিডিও করা, ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কোনটাই জায়েজ নয়।

    আল্লাহ আমাদেরকে হালালভাবে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সব ধরণের হারাম কর্মকাণ্ড থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

    আরও পড়ুনঃ ঘরে প্রাণীর ছবি, প্রতিকৃতি বা মূর্তি থাকলে সালাত আদায় করার বিধান

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • সন্তানের বিছানা আলাদা করার বিধান

    সন্তানের বিছানা আলাদা করার বিধান

    প্রশ্নঃ সন্তানের বিছানা আলাদা করবার বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। সন্তানকে কত বছর বয়স পর্যন্ত বাবা মায়ের সাথে একই বিছানায় রাখা যাবে? আমার মেয়ের বয়স আট বছর। সে অনেক ভয় পায়। এক রুম থেকে আরেক রুমেই যেতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কী করণীয় দয়া করে জানাবেন।

    উত্তরঃ অনেক আলেমের মতে, সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত ছেলে-মেয়েরা একই বিছানায় পিতা-মাতার সাথে বা নিজেরা ঘুমাতে পারে। ১০ বছর হয়ে গেলে তাদের বিছানা পৃথক করতে হবে।

    কেননা হাদীসে এসেছে, আমর ইবনু শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আমরের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনু আম্‌র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».

    তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’

    আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে

    এই হাদিস থেকেই তারা বলেন, ১০ বছরে যেমন তাদের নিজেদের বিছানা আলাদা করা আবশ্যক তেমনি বাবা-মা বা অন্য পুরুষ-নারীদের থেকেও তাদের বিছানা আলাদা করা আবশ্যক।

    বিছানা আলাদা করার সঠিক নিয়মঃ

    • যদি সাত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তাদেরকে আলাদা বিছানায় শোয়ার অভ্যাস করানো হয় তাহলে তা আরো ভালো।
    • বিশেষ করে মেয়েরা সাধারণতঃ ছেলেদের তুলনায় আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। মেয়েরা ৯-১০ বছরেও প্রাপ্ত বয়স্ক হতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মেয়েদের বিষয়ে আরও বেশি সর্তক হওয়া প্রয়োজন।
    • সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পিতা-মাতার সাথে একই বিছানায় বা একই রুমে ঘুমানো মোটেও ঠিক নয়।
    • পিতা-মাতার সাথে থাকার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের শুধু বিছানা আলাদা নয় বরং আলাদা রুমে থাকার অভ্যাস করানো প্রয়োজন।

    মূলত এটি অভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। প্রথম প্রথম বাচ্চারা বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা রুমে মোটেও থাকতে চাইবে না। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে আলাদা রুমে রাখা হলে এতে ধীরে ধীরে তাদের মন থেকে ভয় দূর হয়ে যাবে। এবং নিজেদের মনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে যা তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।

    আলাদা না করার ক্ষতিঃ

    অজ্ঞতাবশত অনেকেই বাচ্চার প্রতি অতি যত্ন ও মায়া দেখাতে গিয়ে তাদেরকে বুঝমান ও বড় হওয়ার পরেও নিজেদের কাছে রেখে ঘুমায়। এতে প্রকারান্তরে তাদেরই ক্ষতি করা হয়।

    কেননা কখনো অসতর্কতাবশত দাম্পত্য জীবনের কোন বিষয় তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের মনে কুপ্রভাব পড়ে। আর যেহেতু বাচ্চারা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয় তাই কখনো বা এটা তাদের আচরণ দ্বারা প্রকাশ হতে শুরু করে।

    আরও পড়ুনঃ শিশুদের ইসলাম ও তাওহিদ শিক্ষার ১১ উপায়

    তাই স্বামী-স্ত্রীকে ছোট বাচ্চাদের প্রতি আরো বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরি।

    আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • মৃত ব্যক্তিদের প্রতি জীবিতদের দায়িত্ব-কতর্ব্য

    মৃত ব্যক্তিদের প্রতি জীবিতদের দায়িত্ব-কতর্ব্য

    প্রশ্নঃ মৃত ব্যক্তিদের প্রতি জীবিতদের দায়িত্ব ও কতর্ব্য কি কি?

    উত্তরঃ মৃত ব্যক্তিদের প্রতি জীবিতদের কিছু দায়িত্ব ও কতর্ব্য রয়েছে। নিম্নে সেগুলো কুরআন-সুন্নাহর আলোকে সংক্ষেপে তুলে ধরা হলঃ

    ১) মৃত্যুর সংবাদ শুনে “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিঊন” পাঠ করা এবং ধৈর্য ধারণ করা।

    ২) মৃত ব্যক্তিকে গোসল দেয়া, কাফন, জানাযা এবং দাফন সম্পন্ন করা।

    ৩) তার জন্য দুয়া করা।

    ৪) তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা।

    ৫) তার পক্ষ থেকে বদলী হজ্জ বা উমরা আদায় করা।

    ৬) তার মানতের রোযা বাকি থাকা অবস্থায় কোন ব্যক্তি মারা গেলে তার পক্ষ থেকে তা পালন করা। আর রামাযানের রোযা বাকি থাকলে প্রত্যেক রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে খাদ্য প্রদান করা।

    ৭) সে যদি ঋণ রেখে মারা যায় অথবা কোন সম্পত্তি ওয়াকফ বা ওসিয়ত করে যায় তবে তা প্রাপকের কাছে বুঝিয়ে দেয়া।

    ৮) মহিলার জন্য স্বামী বা নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে শোক পালন করা।


    উপরোক্ত বিষয়গুলো দলিল সহকারে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:

    ১) মৃত্যুর সংবাদ শুনে দোয়া পাঠ ও ধৈর্য ধারণঃ

    কেননা আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُم مُّصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّـهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ أُولَـئِكَ عَلَيْهِمْ صَلَوَاتٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَرَحْمَةٌ – وَأُولَـئِكَ هُمُ الْمُهْتَدُونَ

    যখন তারা বিপদে পতিত হয়,তখন বলে, “ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন” (নিশ্চয় আমরা সবাই আল্লাহর জন্য এবং আমরা সবাই তাঁরই সান্নিধ্যে ফিরে যাবো) তারা সে সমস্ত লোক,যাদের প্রতি আল্লাহর অফুরন্ত অনুগ্রহ ও রহমত রয়েছে এবং এসব লোকই হেদায়েত প্রাপ্ত।

    সূরা বাকারা: ১৫৬ ও ১৫৭

    ২) মৃত ব্যক্তির গোসল-কাফন-জানাযা ও দাফনঃ

    কোন মুসলিম মৃত্যু বরণ করলে জীবিত মানুষদের উপর আবশ্যক হল, তার গোসল, কাফন, জানাযা এবং দাফন কার্য সম্পন্ন করা:এটি ফরযে কেফায়া। কিছু সংখ্যক মুসলিম এটি সম্পন্ন করলে সকলের পক্ষ থেকে যথেষ্ট হবে। 

    এ বিষয়টি মুসলিমদের পারস্পারিক অধিকারের মধ্যে একটি এবং তা অনেক সওয়াবের কাজ। যেমন আবু হুরায়রা রা. বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    « مَنْ شَهِدَ الْجَنَازَةَ حَتَّى يُصَلِّىَ عَلَيْهَا فَلَهُ قِيرَاطٌ ، وَمَنْ شَهِدَ حَتَّى تُدْفَنَ كَانَ لَهُ قِيرَاطَانِ » . قِيلَ وَمَا الْقِيرَاطَانِ قَالَ « مِثْلُ الْجَبَلَيْنِ الْعَظِيمَيْنِ

    »“যে ব্যক্তি জানাযার নামাযে উপস্থিত হবে তার জন্য রয়েছে এক কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব আর যে দাফনেও উপস্থিত হবে তার জন্য দু কিরাত সমপরিমাণ সওয়াব। জিজ্ঞাসা করা হল, কিরাত কী? তিনি বললেন: দুটি বড় বড় পাহাড় সমপরিমাণ। “

    বুখারী ও মুসলিম

    ৩) মৃত ব্যক্তির জন্য দুয়া করা:

    আল্লাহ বলেন:

    وَالَّذِينَ جَاءُوا مِنْ بَعْدِهِمْ يَقُولُونَ رَبَّنَا اغْفِرْ لَنَا وَلِإِخْوَانِنَا الَّذِينَ سَبَقُونَا بِالْإِيمَانِ وَلَا تَجْعَلْ فِي قُلُوبِنَا غِلًّا لِلَّذِينَ آَمَنُوا رَبَّنَا إِنَّكَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ

    “যারা তাদের পরে এসেছে তারা বলে,হে আমাদের প্রতিপালক,আমাদেরকে এবং আমাদের পূর্বে যারা ঈমানের সাথে (দুনিয়া থেকে) চলে গেছে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং মুমিনদের ব্যাপারে আমাদের অন্তরে হিংসা-বিদ্বেষ রাখিও না। হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি তো অতি মেহেরবান এবং দয়ালু।”

    সূরা হাশর: ১০

    আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

    إِذَا مَاتَ الْإِنْسَانُ انْقَطَعَ عَنْهُ عَمَلُهُ إِلَّا مِنْ ثَلَاثَةٍ إِلَّا مِنْ صَدَقَةٍ جَارِيَةٍ أَوْ عِلْمٍ يُنْتَفَعُ بِهِ أَوْ وَلَدٍ صَالِحٍ يَدْعُو لَهُ

    “মানুষ মৃত্যু বরণ করলে তার আমলের সমস্ত পথ বন্ধ হয়ে যায় তিনটি ব্যতীত: যদি সে সাদকায়ে জারিয়া রেখে যায়,এমন শিক্ষার ব্যবস্থা করে যায় যার দ্বারা মানুষ উপকৃত হবে এবং এমন নেককার সন্তান রেখে যায় যে তার জন্য দুয়া করবে।”

    সহীহ বুখারী,অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ এবং মানত পালন করা এবং পুরুষ মহিলার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারে।

    তবে এ দুয়া করতে হবে একাকী, নীরবে-নিভৃতে। উচ্চ আওয়াজে বা সম্মিলিতভাবে অথবা হাফেজ-কারী সাহেবদেরকে ডেকে দুয়া করিয়ে নেয়া এবং তাদেরকে পয়সা দেয়া ভিত্তিহীন এবং বিদয়াত যা অবশ্যই পরিত্যাজ্য।

    ৪) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে দান-সদকা করা:

    হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

    عَنْ عَائِشَةَ – رضى الله عنها – أَنَّ رَجُلاً قَالَ لِلنَّبِىِّ – صلى الله عليه وسلم إِنَّ أُمِّى افْتُلِتَتْ نَفْسُهَا ، وَأَظُنُّهَا لَوْ تَكَلَّمَتْ تَصَدَّقَتْ ، فَهَلْ لَهَا أَجْرٌ إِنْ تَصَدَّقْتُ عَنْهَا قَالَ نَعَمْ

    আয়েশা রা. হতে বর্ণিত। এক ব্যক্তি নবী-সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম -কে জিজ্ঞাসা করল যে,আমার মা হঠাৎ মৃত্যু বরণ করেছে। আমার ধারণা মৃত্যুর আগে কথা বলতে পারলে তিনি দান করতেন। এখন আমি যদি তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করি তবে কি তিনি সওয়াব পাবেন? তিনি বলেন: হ্যাঁ।সহীহ বুখারী,অনুচ্ছেদ: হঠাৎ মৃত্যু। হাদীস নং ১৩৮৮,মাকতাবা শামেলা

    এমন জিনিস দান করা উত্তম যা দীর্ঘ দিন এবং স্থায়ীভাবে মানুষের উপকারে আসে।
    উপকারী এবং স্থায়ী দান কয়েক প্রকার:

    ◼১) পানির ব্যবস্থা করা 
    ◼২) এতিমের প্রতিপালনের দায়িত্ব গ্রহণ করা 
    ◼৩) অসহায় মানুষের বাসস্থান তৈরি করা 
    ◼৪) গরীব তালিবে ইলমকে সাহায্য-সহযোগিতা করা 
    ◼৫) দাতব্য চিকিৎসালয় বা হাসপাতাল নির্মান 
    ◼৬) মসজিদ নির্মান ইত্যাদি।

    ৫) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে হজ্জ ও উমরা সম্পাদনঃ

    প্রখ্যাত সাহাবী আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত,বনী জুহাইনা সম্প্রদায়ের এক মহিলা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এসে বললেন, আমার মা হজ্জের মানত করেছিলেন,কিন্তু হজ্জ করার আগেই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি কি তার পক্ষ থেকে হজ্জ পালন করব? তিনি বললেন,

    “তোমার মায়ের উপর যদি ঋণ থাকত তবে কি তুমি তা আদায় করতে না? আল্লাহর পাওনা আদায় কর। কারণ,আল্লাহ তো তাঁর পাওনা পাওয়ার বেশী হকদার।”

    বুখারী,অধ্যায়: মৃতের পক্ষ থেকে হজ্জ এবং মানত পালন করা এবং পুরুষ মহিলার পক্ষ থেকে হজ্জ করতে পারে।

    তবে যে ব্যক্তি বদলী হজ্জ করবে তার জন্য আগে নিজের হজ্জ সম্পাদন করা আবশ্যক:
    এ ব্যাপারে হাদীসে বণির্ত হয়েছে:

    عن ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ النَّبِىَّ -صلى الله عليه وسلم- سَمِعَ رَجُلاً يَقُولُ لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ. قَالَ « مَنْ شُبْرُمَةَ ». قَالَ أَخٌ لِى أَوْ قَرِيبٌ لِى. قَالَ «

    حَجَجْتَ عَنْ نَفْسِكَ ». قَالَ لاَ. قَالَ « حُجَّ عَنْ نَفْسِكَ ثُمَّ حُجَّ عَنْ شُبْرُمَةَ »ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম (বিদায় হজ্জে যাওয়া প্রাক্কালে এহরাম বাঁধার সময়) এক ব্যক্তিকে বলতে শুনলেন, সে বলছে: لَبَّيْكَ عَنْ شُبْرُمَةَ লাব্বাইকা আন শুবরুমা অর্থাৎ: “শুবরুমার পক্ষ থেকে উপস্থিত। “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জিজ্ঞেস করলেন: শুবরুমা কে? উত্তরে লোকটি বলল, সে আমার ভাই অথবা বলল, আমার নিকটাত্মীয়। তিনি জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি নিজের হজ্জ সম্পাদন করেছ? লোকটি বলল, না। তিনি বললেন, নিজের হজ্জ আগে সম্পাদন কর পরে শুবরুমার পক্ষ থেকে করবে। ”

    সুনান আবু দাউদ। অনুচ্ছেদ: বদলী হজ্জ সম্পাদন করা। হাদীসটি সহীহ

    ৬) মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে রোযা রাখা: 

    মানতের রোযার ক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসগণ তার পক্ষ থেকে রোযা রাখবে আর ফরয রোযার ক্ষেত্রে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন গরিব মানুষকে একবেলা খানা খাওয়াবে। (শাইখ আলবানী সহ একদল আলিমের মতে এটি অধিক বিশুদ্ধ অভিমত)
    ■ হাদিসে এসেছে:

    أَنَّ سَعْدَ بْنَ عُبَادَةَ – رضى الله عنه – اسْتَفْتَى رَسُولَ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – فَقَالَ إِنَّ أُمِّى مَاتَتْ وَعَلَيْهَا نَذْرٌ . فَقَالَ « اقْضِهِ عَنْهَا

    »সাদ ইবনে উবাদা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলেন: আমার মা মৃত্যু বরণ করেছেন কিন্তু তার উপর মানত ছিল। তিনি তাকে বললেনে: তুমি তার পক্ষ থেকে তা পূর্ণ কর। ”

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ, কোন ব্যক্তি হঠাৎ মৃত্যু বরণ করলে তার পক্ষ থেকে দান-সদকা করা এবং মানত পুরা করা মুস্তাহাব।

    ■ আয়েশা রা. এর সিদ্ধান্ত: উমরা রা. বর্ণনা করেন, তার মা মারা যান এবং তার উপর রামাযানের রোযা বকি ছিল। আয়েশা রা. কে জিজ্ঞেস করলেন: আমি কি আমার মায়ের পক্ষ থেকে উক্ত রোযাগুলো পুরা করব? তিনি বললেন: না। বরং প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে অর্ধ সা (প্রায় সোয়া কেজি চাল, গম ইত্যাদি) খাদ্য দ্রব্য প্রদান কর। [তাহাবী এবং ইবন হাযাম, ইবনুত তুরকুমানী বলেন, এ সনদটি সহীহ।] 

    ■ ইবনে আব্বাস রা. থেকেও অনুরূপ ফতোয়া রয়েছে।

    ৭) মৃত ব্যক্তির ঋণ পরিশোধ এবং ওসীয়ত পালনঃ

    কোন ব্যক্তি যদি ঋণ রেখে মারা যায় অথবা কোন কিছু দান করার ওসিয়ত করে যায় তবে তার উত্তরাধীকারীদের জন্য আবশ্যক হল, তার পরিত্যাক্ত সম্পদ থেকে সবার আগে ঋণ পরিশোধ করা। আল্লাহ বলেন:

    مِن بَعْدِ وَصِيَّةٍ يُوصِي بِهَا أَوْ دَيْنٍ“

    (মৃতের পরিত্যাক্ত সম্পদ বণ্টন করা হবে) ওসিয়তের পর, যা করে সে মৃত্যু বরণ করেছে কিংবা ঋণ পরিশোধের পর। ”

    সূরা নিসা: ১১

    ৮ ) স্বামী বা নিকটাত্মীয়ের মৃত্যুতে মহিলাদের শোকঃ

    কোন মহিলার স্বামী মারা গেলে তার জন্য শোকপালন‌ করা আবশ্যক। এর ইদ্দত (মেয়াদ) হল, চার মাস দশ দিন যদি সে গর্ভবতী না হয়। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    وَالَّذِينَ يُتَوَفَّوْنَ مِنكُمْ وَيَذَرُونَ أَزْوَاجًا يَتَرَبَّصْنَ بِأَنفُسِهِنَّ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرً

    “আর তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করবে এবং নিজেদের স্ত্রীদেরকে ছেড়ে যাবে,তখন স্ত্রীদের কর্তব্য হলো নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে রাখা। “

    সূরা বাকারা: ১৩৪

    আর গর্ভবতী হলে সন্তান ভূমিষ্ট হওয়া পর্যন্ত ইদ্দত পালন করবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    وَأُولَاتُ الْأَحْمَالِ أَجَلُهُنَّ أَنْ يَضَعْنَ حَمْلَهُنَّ

    “গর্ভবর্তী নারীদের ইদ্দতকাল সন্তান প্রসব পর্যন্ত। ”

    সূরা তালাক: ৪

    অনুরূপভাবে পিতা, মাতা, ভাই, বোন, সন্তান ইত্যাদি নিকটাত্মীয় মারা গেলে তার জন্য সবোর্চ্চ তিন দিন শোক পালন জায়েজ আছে কিন্তু ওয়াজিব বা আবশ্যক নয়।

    আবু সালামার মেয়ে যয়নব বলেন, শাম থেকে আবু সুফিয়ান রা. এর মৃত্যু সংবাদ আসার পর তৃতীয় দিন (তাঁর মেয়ে উম্মুল মুমিনীন) উম্মে হাবীবা রা. কিছু হলুদ বা যাফরান (অন্য বর্ণনায় সুগন্ধি) আনতে বললেন। অত:পর তা আনা হলে তিনি তা তার চেহারার দুপাশে ও দুগালে এবং দুবাহুতে মাখলেন। অত:পর বলেন: এটা করার আমার কোন দরকার ছিল না। কিন্তু আমি এমনটি এজন্যই করলাম যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    « لاَ يَحِلُّ لاِمْرَأَةٍ تُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ أَنْ تُحِدَّ عَلَى مَيِّتٍ فَوْقَ ثَلاَثٍ ، إِلاَّ عَلَى زَوْجٍ ، فَإِنَّهَا تُحِدُّ عَلَيْهِ أَرْبَعَةَ أَشْهُرٍ وَعَشْرًا »

    “যে মহিলা আল্লাহ ও পরকালের উপর বিশ্বাস রাখে তার জন্য স্বামী ছাড়া কারও মৃত্যুতে তিন দিনের বেশি শোক পালন করা বৈধ নয়। স্বামীর মৃত্যুতে সে চার মাস দশ দিন শোক পালন করবে। “

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: স্বামী ছাড়া অন্যের মৃত্যুতে মহিলার শোক পালন করা।

    তবে স্বামীকে খুশি রাখতে যদি অন্য কোন মানুষের মৃত্যুতে স্ত্রী শোক পালন না করে তবে সেটাই উত্তম।

    শোক পালনের সময় আকর্ষণীয় পোশাক, আতর-সুগন্ধি, অলঙ্কার ইত্যাদি পরিধান থেকে দূরে থাকবে এবং একান্ত প্রয়োজন ছাড়া দূরে কোথাও বেড়াতে যাবে না।

    মোটকথা, স্বামী মারা যাওয়ার পর স্ত্রী এমন সব আচরণ করবে না বা এমন সৌন্দর্য অলম্বন করবে না যা তাকে বিয়ের দিকে আকৃষ্ট করতে পারে। 

    আরও পড়ুনঃ যে ব্যক্তি দাড়ি না রাখা অবস্থায় মৃত্যু বরণ করলো, তার বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • আত্মহত্যা কি ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ?

    আত্মহত্যা কি ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ?

    আত্মহত্যা সম্পর্কে একটি কথা প্রচলিত আছে যে এটি ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ। এমনকি এটি শির্ক পর্যায়ের একটি গুনাহ হিসাবেও কেউ কেউ মনে করেন। আসলেই কি আত্মহত্যা কি শিরকের পর্যায়ের গুনাহ?এটি কি ক্ষমার অযোগ্য মহাপাপ? বিস্তারিত জানতে চাই।

    উত্তরঃ আত্মহত্যা নি:সন্দেহে মহাপাপ (কবিরা গুনাহ) এবং মহান আল্লাহর কর্মে হস্তক্ষেপের শামিল।
    তবে তা শিরক নয়।

    জীবন-মরণের মালিক একমাত্র আল্লাহর তাআলা। সুতরাং কেউ যদি নিজের প্রতি অবিচার ও সীমালঙ্ঘন বশত: নিজেকে মৃত্যুর দিকে ঢেলে দেয় তাহলে সে আল্লাহর কর্মে হস্তক্ষেপ করল।

    আর যে আল্লাহর কর্মে হস্তক্ষেপ করে আল্লাহ তাআলা তাকে শাস্তি প্রদান করবেন।

    আত্মহত্যার শাস্তিঃ

    আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,

    وَلَا تَقۡتُلُوٓاْ أَنفُسَكُمۡۚ إِنَّ ٱللَّهَ كَانَ بِكُمۡ رَحِيمٗا – وَمَن يَفۡعَلۡ ذَٰلِكَ عُدۡوَٰنٗا وَظُلۡمٗا فَسَوۡفَ نُصۡلِيهِ نَارٗاۚ وَكَانَ ذَٰلِكَ عَلَى ٱللَّهِ يَسِيرًا

    ‘আর তোমরা নিজেদের হত্যা করো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের প্রতি দয়ালু। যে কেউ অবিচার ও সীমালঙ্ঘন বশত: আত্মহত্যা করে অবশ্যই আমি তাকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করাবো। আল্লাহর পক্ষে তা সহজসাধ্য।’

    সূরা আন-নিসা, আয়াত : ২৯-৩০

    আত্মহত্যার গুনাহ কি ক্ষমার অযোগ্য?

    তবে যেহেতু শিরক ছাড়া অন্যান্য সকল গুনাহ ক্ষমা করা বা না করা আল্লাহর তাআলার ইচ্ছার ওপর নির্ভরশীল সেহেতু আত্মহত্যাকারী যদি তাওহীদ পন্থী হয়ে থাকে তাহলে আল্লাহ তাআলা ইচ্ছা করলে তাকে ক্ষমা করতেও পারেন।

    অন্যথায় জাহান্নামে তার উপযুক্ত শাস্তি দেয়ার পর তার ঈমান ও তাওহীদের কারণে অবশেষে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।

    আরও পড়ুনঃ আত্মহত্যা: ইসলাম কি বলে?

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।