Category: মাসআলা

  • সেনাবাহিনী-মার্শাল আর্ট ইত্যাদিতে মাথা নত করে সম্মানের বিধান

    সেনাবাহিনী-মার্শাল আর্ট ইত্যাদিতে মাথা নত করে সম্মানের বিধান

    প্রশ্নঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্মানার্থে মাথা নত করার বিধান কি? সেনাবাহিনীতে (কবর বা মৃতের কফিনে) বা বিভিন্ন আত্মরক্ষা মূলক ক্রীড়া প্রশিক্ষণ-যেমন: জুডো, কারাতে, কুংফু ইত্যাদিতে প্রশিক্ষককে সম্মান প্রদর্শনার্থে মাথা/শরীর ঝুঁকিয়ে বাউ (Bow) করতে হয়। এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?

    উত্তরঃ ইসলামে অভিবাদনের নিয়ম হল, সালাম দেয়া এবং হাতে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করা আর দূর-দূরান্ত থেকে কেউ সফর করে আসলে বা দীর্ঘ দিন পর সাক্ষাৎ হলে গলায় গলা মিলিয়ে/বুকে বুক মিলিয়ে মুয়ানাকা করা।

    মাথা নত করে সম্মান দেখানো হারামঃ

    কিন্তু মাথা ঝুঁকিয়ে বা শরীর নুইয়ে সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের রীতি নয়। কোন রাজা-বাদশাহ, মন্ত্রী, নেতা-নেত্রী বা সম্মানিত ব্যক্তি, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, কোন সম্মানিত ব্যক্তির কবর বা কফিন ইত্যাদি যে কারো উদ্দেশ্যে এমনটি করা হারাম

    এটি মূলত: অমুসলিমদের কাজ। দুর্ভাগ্য বশত: অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে তা মুসলিমদের মধ্যেও প্রবেশ করেছে। সুতরাং তা নি:সন্দেহে হারাম।

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ”

    যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”

    সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ

    কারও সম্মানে মাথা নত করা বা শরীর ঝুঁকানোর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    عَن أنس قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: «نَعَمْ»

    আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রসূল, আমাদের মধ্য হতে কেউ যদি তাঁর কোন মুসলিম ভাইয়ের কিংবা কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে, তবে কি সে (তার সম্মানার্থে) মাথা নত করবে?তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না।লোকটি বলল: তবে কি সে আলিঙ্গন করবে এবং তাকে চুম্বন করবে?তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: না।লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি তার হাত ধরবে এবং পরস্পর করমর্দন করবে?তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: হ্যাঁ।

    [তিরমিযী ২৭২৮, ইবনে মাজাহ ৩৭০২, আহমদ ১৩০৪৪-সনদ হাসান]

    অনুরূপভাবে সামরিক বাহিনীতে কোন সম্মানিত ব্যক্তির কফিন বা কবরে অথবা বিভিন্ন ক্রীড়া ও আত্মরক্ষা মূলক প্রশিক্ষণ-যেমন: জুডো, কারাতে, কুংফু ইত্যাদিতে প্রশিক্ষক বা পরস্পরকে বাউ করা (জাপানী স্টাইলে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানানো) করাও হারাম।

    এটি কি শিরকও হতে পারেঃ

    যত বেশি মাথা ঝুঁকানো হবে ততই বেশি হারাম হবে। মাথা ঝুঁকাতে ঝুঁকাতে যদি রুকু পর্যায়ে যায় বা সেজদা করে তাহলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি। তখন তা শিরকে পরিণত হবে। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

    সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ডের অভিমতঃ

    সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করা হয়ঃ

    “আমরা আমেরিকার একটি কারাতে ক্লাবের সাথে জড়িত হয়েছি। প্রশিক্ষক বলেছেন, তিনি যখন আপনার দিকে শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন দিবে তখন আপনাকেও অবশ্যই শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন দিতে হবে। কিন্তু আমরা তা করতে অস্বীকৃতি জানালাম এবং আমাদের ধর্মীয় বিষয়টি তাকে বুঝলাম। এতে তিনি রাজি হলেন বটে কিন্তু বললেন, আমাকে কেবল মাথাটা ঝুঁকাতে হবে। কারণ তিনি প্রথমে আপনার উদ্দেশ্যে শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই একইভাবে তার অভিবাদনের জবাব দিতে হবে।

    এ সম্পর্কে জনাবের মতামত কি?তারা জবাবে বলেছেন,

    لا يجوز الانحناء تحيةً للمسلم ولا للكافر ، لا بالجزء الأعلى من البدن ولا بالرأس؛ لأن الانحناء تحية عبادة، والعبادة لا تكون إلا لله وحده.وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم” انتهى .الشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان ، الشيخ عبد الله بن قعود .”فتاوى اللجنة الدائمة” (1/171)

    “কোনও মুসলিম বা কাফের কাউকেই ঝুঁকে অভিবাদন দেয়া জায়েজ নয়। শরীরের উপরিভাগও নয়, মাথাও নয়। কারণ ঝুঁকা একটি ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া আর কারও জন্য হবে না।”

    ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ: ১/১৭১)

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অমুসলিমদের সংস্কৃতি অনুসরণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

    আরও পড়ুনঃ সুযোগ থাকা সত্বেও দ্বীন না মানা ব্যক্তির বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • মেরাজ উদযাপনের বিধান

    মেরাজ উদযাপনের বিধান

    প্রশ্নঃ ইসরা ও মেরাজ এর রাত্রি উদযাপন করার বিধান কি? উল্লেখ্য সেটি রজব মাসের ২৭তম রাত।

    উত্তরঃ আলহামদুলিল্লাহ।

    নিঃসন্দেহে ইসরা ও মেরাজ মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রিসালাতের সত্যতার পক্ষে ও আল্লাহ্‌র কাছে তাঁর মহান মর্যাদার সপক্ষে আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে মহান নিদর্শনাবলির অন্যতম।

    মেরাজ এর দলিলঃ

    একইভাবে এটি আল্লাহ্‌র মহা ক্ষমতা ও তিনি তাঁর সকল সৃষ্টির ঊর্ধ্বে থাকার একটি বড় প্রমাণ। আল্লাহ্‌ তাআলা বলেনঃ

    পবিত্র মহিমাময় তিনি, যিনি তাঁর বান্দাকে রাত্রিকালে মসজিদে হারাম থেকে মসজিদে আকসাতে ভ্রমণ করিয়েছেন; যে মসজিদের চারপাশে আমরা বরকত দিয়েছি; যাতে করে আমরা তাকে আমাদের নিদর্শনাবলি দেখাতে পারি। নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বদ্রষ্টা।

    [সূরা বনী ইসরাইল, আয়াত: ১]

    রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে বর্ণিত হয়েছে যে, তাঁকে আসমানের দিকে ঊর্ধ্বে মিরাজ করানো হয়েছে। তাঁর জন্য আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়েছে; এমনকি তিনি সপ্ত আকাশ পাড়ি দিয়েছেন। এরপর তাঁর রব্ব তাঁর সাথে যা ইচ্ছা কথা বলেছেন এবং তাঁর উপর নামায ফরয করেছেন।

    প্রথমে আল্লাহ্‌ তাঁর উপর পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয করেন। কিন্তু, তিনি আল্লাহ্‌র কাছে নামায কমানোর জন্য বারবার ধর্ণা দেন; এক পর্যায়ে নামায পাঁচ ওয়াক্তে স্থির করা হয়।

    ফরয দায়িত্ব বা আবশ্যকীয় দায়িত্ব হিসেবে নামায পাঁচ ওয়াক্ত। কিন্তু, প্রতিদানের ক্ষেত্রে এটি পঞ্চাশ ওয়াক্ত। কেননা, এক নেকীতে দশ নেকীর সওয়াব রাখা হয়েছে। সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র জন্য। যাবতীয় নিয়ামতের জন্য তাঁরই শুকরিয়া।

    মেরাজ কোন মাসে কত তারিখে?

    যে রাত্রিতে মেরাজ সংগঠিত হয়েছে সে রাত্রিকে সুনির্দিষ্ট করে কোন হাদিস বর্ণিত হয়নি; না রজব মাসের ব্যাপারে; আর না অন্য কোন মাসের ব্যাপারে। সে রাত্রিকে নির্দিষ্ট করে যে সব বর্ণনা উদ্ধৃত হয়েছে সে বর্ণনাগুলোর কোনটি হাদিস বিশারদদের নিকট নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে সাব্যস্ত নয়।

    সে রাত্রিটিকে সুনির্দিষ্ট করণ থেকে মানুষকে ভুলিয়ে দেয়ার মধ্যে আল্লাহ্‌ তাআলার মহান কোন হেকমত নিহিত রয়েছে। যদি সে রাত্রিটি সুনির্দিষ্টভাবে সাব্যস্ত হত তদুপরি সে রাত্রিতে বিশেষ কোন ইবাদত পালন করা মুসলমানদের জন্য জায়েয হত না, সে রাত্রিটি উদযাপন করাও সঙ্গত হত না।

    রাসুল (সাঃ) কি মেরাজ উদযাপন করেছেন?

    কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবীবর্গ এ দিবসটি উদযাপন করেননি এবং এ দিবসে বিশেষ কোন ইবাদত পালন করেননি। যদি সে দিবসটি পালন করা শরিয়তের বিধান হত তাহলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উম্মতের জন্য সেটা বর্ণনা করতেন; হয়তো কথার মাধ্যমে কিংবা তাঁর আমলের মাধ্যমে। আর সে রকম কিছু ঘটলে সে কথা সবাই জানতে পারত এবং সাহাবায়ে কেরাম আমাদের কাছে সেটা বর্ণনা করতেন।

    কেননা, উম্মতের যা কিছু প্রয়োজন এর সবকিছু তারা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেছেন। দ্বীনি কোন বিষয় বর্ণনা করার ক্ষেত্রে তাঁরা অবহেলা করেননি। বরং তাঁরা যে কোন ভাল কাজে অগ্রণী ছিলেন।

    যদি এ দিবসটি উদযাপন করা শরিয়তসম্মত হত তাহলে তাঁরা সবার আগে সেটা উদযাপনে এগিয়ে যেতেন। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম হচ্ছেন মানুষের জন্য সর্বাধিক কল্যাণকামী। তিনি রাসূলের দায়িত্ব পরিপূর্ণভাবে পালন করেছেন, আমানত যথাযথভাবে পৌঁছে দিয়েছেন। সুতরাং এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ও পালন করা যদি দ্বীনি বিষয় হত তাহলে এক্ষেত্রে তিনি গাফেল থাকতেন না এবং এটি গোপন করতেন না।

    যেহেতু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এমন কিছু আসেনি অতএব বুঝতে হবে এ রাতকে বিশেষ মর্যাদা দেয়া ও এ রাতটি উদযাপন করা ইসলামী কাজ নয়। আল্লাহ্‌ তাআলা এ উম্মতের জন্য দ্বীনকে পূর্ণাঙ্গ করে দিয়েছেন এবং তাদের জন্য নেয়ামতকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌র অনুমোদন ছাড়া এ দ্বীনের মধ্যে নব কিছু চালু করবে তার নিন্দা করেছেন।

    আল্লাহ্‌ তাআলা সূরা মায়িদাতে বলেনঃ

    আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামত সম্পূর্ণ করলাম, আর তোমাদের জন্য ইসলামকে দ্বীন (ধর্ম) হিসেবে পছন্দ করলাম।”

    সূরা মায়িদা, আয়াত: ৩

    তিনি আরও বলেনঃ

    তাদের কি এমন কিছু শরীক রয়েছে যারা এমন বিধান জারী করেছে আল্লাহ্‌ যা করার অনুমোদন দেননি?

    সূরা সূরা, আয়াত: ২১

    সহিহ হাদিসে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি্ ওয়া সাল্লাম কর্তৃক বিদাত (নবপ্রবর্তিত বিষয়) থেকে হুশিয়ার করা সাব্যস্ত হয়েছে। তিনি স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন: বিদাত হচ্ছে- ভ্রষ্টতা। যাতে করে উম্মত সাবধান হতে পারে এবং বিদাতে লিপ্ত হওয়া থেকে দূরে থাকতে পারে।

    বিদাতের ভয়াবহতাঃ

    এ সংক্রান্ত হাদিসের মধ্যে রয়েছে যে হাদিসটি সহিহ বুখারী ও সহিহ মুসলিমে আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,

    “যে ব্যক্তি আমাদের দ্বীনে নতুন কিছু চালু করে সেটা প্রত্যাখ্যাত।”

    সহিহ মুসলিমের অপর বর্ণনায় এসেছে

    “যে ব্যক্তি এমন কোন আমল করে আমাদের দ্বীনে যার অনুমোদন নেই সেটা প্রত্যাখ্যাত।”

    সহিহ মুসলিমে জাবির (রাঃ) থেকে আরও বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জুমার দিনে খুতবাকালে বলতেনঃ

    আম্মাবাদ। সর্বোত্তম বাণী হচ্ছে- আল্লাহ্‌র কিতাব। সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে- মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ। সর্বনিকৃষ্ট বিষয় হচ্ছে- নবপ্রচলিত বিষয়াবলী। প্রত্যেক বিদাতই হচ্ছে- ভ্রষ্টতা।

    জায়্যিদ সনদে ইমাম নাসাঈ আরেকটু বৃদ্ধি করে বর্ণনা করেন যে,

    “আর প্রত্যেকটি ভ্রষ্টতা জাহান্নামে যাবে।”

    সুনান গ্রন্থসমূহে ইরবায বিন সারিয়া (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তিনি বলেন:রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একবার আমাদেরকে ওয়ায করলেন; খুবই হৃদয়াগ্রহী ওয়ায। সে ওয়াযে হৃদয়গুলো ক্রন্দন করল, চক্ষু অশ্রু বিসর্জন করল। আমরা বললাম: ইয়া রাসূলুল্লাহ্‌! এটি যেন বিদায়ী ভাষণ। আমাদেরকে কিছু ওসিয়ত করুন। তিনি বলেনঃ

    “আমি তোমাদেরকে আল্লাহ্‌-ভীতির ওসিয়ত করছি। শ্রবণ ও মান্য করার ওসিয়ত করছি; এমনকি তোমাদের উপর কোন ক্রীতদাস নেতা হলে তবুও। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা হায়াত পাবে তারা অনেক মতানৈক্য দেখতে পাবে। আমার পরে তোমাদের কর্তব্য হবে আমার সুন্নত ও খোলাফায়ে রাশেদীন এর সুন্নত পালন করা। এই সুন্নতকে আঁকড়ে ধর, মাড়ির দাঁত দিয়ে কামড়ে ধর। আর সকল নব প্রচলিত বিষয় থেকে দূরে থাকবে। কেননা প্রত্যেকটা নবপ্রচলিত বিষয় বিদাত। প্রত্যেকটি বিদাত ভ্রষ্টতা।”

    এ অর্থবোধক অনেক হাদিস রয়েছে।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাহাবীবর্গ থেকে এবং তাদের পরবর্তীতে সলফে সালেহীন থেকে বিদাত থেকে সাবধানকরণ ও সতর্কীকরণ সাব্যস্ত হয়েছে। এর কারণ হল, বিদাত হচ্ছে- দ্বীনের মধ্যে বৃদ্ধিকরণ এবং আল্লাহ্‌র অনুমোদন ছাড়া বিধান প্রণয়ন করণ এবং আল্লাহ্‌র শত্রু ইহুদী ও খ্রিস্টানদের সাথে সাদৃশ্য গ্রহণ করণ; যেহেতু তারা তাদের ধর্মের মধ্যে এমন কিছু সংযোজন, পরিবর্ধন করেছে আল্লাহ্‌ যা অনুমোদন করেননি।

    এটি করা হলে এর অর্থ হচ্ছে ইসলাম ধর্মকে ছোট করা ও অপরিপূর্ণতার দোষারোপ করা। এ ধরণের বিষয় যে কত জঘন্য, ন্যাক্কারজনক এবং আল্লাহ্‌র বাণী “আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্মকে পরিপূর্ণ করে দিলাম” এর সাথে সাংঘর্ষিক তা সবারই জানা। অনুরূপভাবে তা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হাদিসগুলোর সাথেও সাংঘর্ষিক যেগুলোতে তিনি বিদাত থেকে সতর্ক করেছেন।

    আমরা আশা করছি, এতক্ষণ পর্যন্ত যা কিছু উল্লেখ করা হয়েছে একজন সত্যান্বেষী ব্যক্তির জন্য এ বিদাতকে অর্থাৎ মিরাজের রাত উদযাপনের বিদাতকে অস্বীকার করার ক্ষেত্রে, এ বিদাত থেকে হুশিয়ার করার প্রসঙ্গে এবং এটি যে, ইসলামী কোন কাজ নয় সে ব্যাপারে এগুলো যথেষ্ট ও সন্তোষজনক।

    মুসলিম উম্মহর কল্যাণ কামনা করা, আল্লাহ্‌র দ্বীন বর্ণনা করা ও ইলম গোপন না করা আল্লাহ্‌ ফরয করেছেন বিধায় আমরা মুসলিম ভাইদেরকে এ বিদাত সম্পর্কে সাবধান করতে চেয়েছি; যে বিদাতটি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এমনকি লোকেরা ধারণা করছে এটি ধর্মীয় কাজ।

    আমরা আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করছি তিনি যেন মুসলিম উম্মাহর অবস্থা পরিবর্তন করে দেন এবং তাদেরকে দ্বীনি বিষয়ে প্রজ্ঞা দান করেন। আমাদেরকে ও তাদেরকে সত্যকে আঁকড়ে ধরার ও সত্যের উপর অবিচল থাকার এবং সত্যের বিরোধিতা বর্জন করার তাওফিক দেন। নিশ্চয় তিনি সে ক্ষমতা রাখেন। আল্লাহ্‌ তাঁর বান্দা ও রাসূল, আমাদের নবী মুহাম্মদের উপর তাঁর রহমত ও শান্তি বর্ষন করুন।

    উৎস: islamqa ডট info

    আরও পড়ুনঃ বিদআত এর সাতটি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • নিয়াত কি, কিভাবে করে, বিধান কি?

    নিয়াত কি, কিভাবে করে, বিধান কি?

    প্রশ্ন: নিয়ত কাকে বলে, নিয়ত কিভাবে করতে হয়? নামায-রোযা ইত্যাদি ক্ষেত্রে মুখে নিয়ত পড়ার বিধান কি?

    💠 নিয়তের অপরিহার্যতা:

    নিয়ত ছাড়া কোন ইবাদত আল্লাহর দরবারে গৃহীত হয় না। কারণ, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    إنَّمَا الأعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ وَ إنَّمَا لِكُلِّ امْرِىءٍ مَا نَوَى
    “নিশ্চয় প্রতিটি আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল। মানুষ তার নিয়ত অনুযায়ী প্রতিদান পায়।”

    (সহীহ বুখারী, ১ম হাদীস)

    💠 নিয়ত কাকে বলে এবং তা কিভাবে করব?

    নিয়ত শব্দের অর্থ হল, ইচ্ছা করা বা মনস্থির করা।
    আর পারিভাষিকভাবে নিয়তের ব্যাপারে ইমাম নওবী রহ. বলেন, কোন কাজের দৃঢ় ইচ্ছা পোষণ করাকে নিয়ত বলা হয়। (ফাইযুল কাদীর, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা নং- ৩০)
    নিয়ত করতে হবে মনে মনে। অর্থাৎ কোন ইবাদতটি করব তা মনে মনে স্থীর করতে হবে। মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নাই।

    💠 নিয়ত মুখে উচ্চারণের বিধানঃ

    গদবাধা কিছু শব্দ উচ্চারণের মাধ্যমে মুখে নিয়ত পাঠ করা বিদআত। কেননা এর প্রমাণ না আছে আল্লাহ্‌র কিতাবে, না আছে তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর সুন্নাতে।

    আর শরীয়তের মূলনীতি হল, কোন ইবাদত করা অবৈধ যতক্ষণ না তার পক্ষে কুরআন বা সুন্নাহ্‌ থেকে কোন দলীল পাওয়া যায়।

    কিন্তু এভাবে মুখে নিয়ত বলার পক্ষে কোন কুরআন-সুন্নাহর থেকে দলীল না থাকার কারণে তা পরিত্যাজ্য। এমনকি সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন, তাবে-তাবেঈন এবং মুহাদ্দেসীনে কেরামদের কাও নিকট থেকে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার কোন প্রমাণ পাওয়া যায় না।

    মোটকথা, নিয়ত অন্তরে থাকতে হবে। মুখে উচ্চারণ করা ঠিক নয়। কারণ মুখে উচ্চাণ করার পক্ষে কুরআন-সুন্নাহ থেকে কোন দলীল নাই। সুতরাং তা বিদআত।

    তাই নামায, রোযা, হজ, যাকাত সহ সব ধরণের ইবাদতের ক্ষেত্রে মুখে নিয়ত উচ্চারণ থেকে বিরত থাকতে হবে। অন্যথায় বিদআত করার কারণে গুনাহগার হবে। কেননা প্রতিটি বিদআতই গোমরাহী। আর গোমরাহীর পরিণতি জাহান্নাম।

    আল্লাহ আামদেরকে দ্বীনের সঠিক বুঝ দান করে সেভাবে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    ✒✒✒✒
    উত্তর প্রদানে:
    শাইখ আবদুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, ksa

  • গোসল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল

    গোসল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল

    গোসল, একজন মানুষের পরিস্কার হবার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের অনেক তাৎপর্য আছে। বিশেষ করে ফরজ-গোসল এর বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের স্পষ্ট ধারণা রাখাটা জরুরী।

    🚿 গোসল ফরয (আবশ্যক) হওয়ার কারণ সমূহ

    নিম্ন লিখিত কারণগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে গোসল ফরয (আবশ্যক) হয়ঃ

    ১) স্বপ্নদোষ বা অন্য কোন কারণে (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়-পুরুষ বা মহিলার) বীর্যপাত হওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)

    ২) পুরুষ ও মহিলার লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলেই উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়- বীর্যপাত হোক বা না হোক। (আহমাদ, মুসলিম)

    ৩) মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস তথা মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। ।  (সূরা বাকারা: ২২২)

    ৪) যুদ্ধ ময়দানের শহীদ ব্যতীত মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরয।

    ৫) ইহুদী বা খৃষ্টান বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল ফরয না কি মুস্তাহাব- এ বিষয়ে মহামতি ইমামদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।  ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের অভিমত হল, কোন কাফের ইসলামে প্রবেশ করলে তার জন্য গোসল করা ফরয। পক্ষান্তরে জুমহুর (অধিকাংশ) ইমাম তথা  ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও শাফেঈ প্রমূখের অভিমত হল, ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয় এবং এটি অধিক নির্ভরযোগ্য মত।

    🚿 গোসলের পদ্ধতি

    প্রথমে নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। লজ্জা স্থানে পানি ঢেলে উহা পরিষ্কার করবে। অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে। মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল খিলাল করবে। যখন বুঝবে যে, চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি ঢালবে এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। এ ক্ষেত্রে ডান পার্শ্ব থেকে কাজ আরম্ভ করবে।
    মা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোসলের পদ্ধতি এভাবেই এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

    🚿 গোসলের ফরয দু’টিঃ

    ১) নিয়ত করা।
    ২) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা (মুখ ও নাখের ভেতর পানি পৌঁছানোও এর অন্তর্ভূক্ত)

    🚿 যেসব ক্ষেত্রে গোসল মুস্তাহাব

    ১) জুম’আর দিন গোসল করা। (সহীহ মুসলিম)
    ২) ঈদের দিন গোসল করা।
    ৩) হজ্জ বা উমরাহ্‌র জন্য ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (জামে তিরমিযী, সুনানে দারাকুত্বনী)
    ৪) হজ্জ বা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
    ৫) সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে গোসল করা।
    ৬) ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল মুস্তাহাব (অধিক নির্ভরযোগ্য মতানুসারে)

    🚿 গোসল ফরয অবস্থায় যা যা করা হারাম

    ১) সালাত আদায় করা।
    ২) কা’বা ঘরের তওয়াফ করা।
    ৩) কুরআন স্পর্শ করা (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে)।
    ৪) কুরআন তিলাওয়াত করা (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
    ৫) মসজিদে অবস্থান করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্‌)
    গোসল ফরয অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই হারাম নয়। যেমন, ঘুমানো, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, গৃরস্থালীর কাজ..ইত্যাদি।

    উৎস: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইড্ন্সে সেন্টারের পাঠ্যপুস্তক ফিকহ (লেভের-১) থেকে
    অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
    সম্পদনা ও পরিমার্জনা: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব