Category: সিয়াম

  • রমাযান মাসের মর্যাদা ও সিয়ামের গুরুত্ব

    রমাযান মাসের মর্যাদা ও সিয়ামের গুরুত্ব

    রমাযান হল, বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস। অসংখ্য নিয়ামত ও অবারিত সুযোগ সমৃদ্ধ মহিমান্বিত মাস এটি। এ মাসে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, উমরা, দান-সদকা, চরিত্র সংশোধন এবং মহান রবের দরবারে দুআ-আরোধনার মাধ্যমে গুনাহ মোচন করত: জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির এক অতুলনীয় সযোগ।

    নিম্নে হাদিসে বর্ণিত এ মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট মণ্ডিত দিক ও করণীয় তুলে ধরা হল:

    🌀 ১) রমাযানের রোযা রাখা ফরয:

    রমাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।”

    সূরা বাকারা: ১৮৩

    🌀 ২) রমাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:

    ➤ ক) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان

    “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা-‘ই-লা-হা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমাযান মাসে রোযা রাখা।”

    বুখারী ও মুসলিম

    ➤ খ) আবু হুরায়রা রাহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ

    الإيمان أن تؤمن بالله ، وملائكته ، وبلقائه ، ورسله، وتؤمن بالبعث

    “ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্‌তাগণ, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কি? তিনি বললেন:

    الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان

    ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শিরক করবে না, নামায পড়বে, ফরয যাকাত দিবে এবং রমাযান মাসে রোযা রাখবে।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কি? তিনি বললেনঃ

    أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك

    “ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।”

    বুখারী ও মুসলিম

    ➤ গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:

    ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমন করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুসকো। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ নামায ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামায পড়তে পার।”

    লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “রমাযান মাসের রোযা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোযা রাখতে পার।”

    লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন?

    বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।” [বুখারী, সওম অধ্যায় ও মুসলিম, ঈমান অধ্যায়।]

    🌀 ৩) রমাযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়:

    আবু হুরায়রা (রাহ:)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন রমাযান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যখন রমাযান আগমন করে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম। সহীহ মুসলিম কিতাবুস সিয়াম]

    🌀 ৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস রোযা রাখতেন না:

    আয়েশা (রাহ:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

    كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ، ويفطر حتى نقول لا يصوم ، وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان ، وما رايته أكثر صياماً منه في شعبان)) متفق عليه

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল রোযা রাখা শুরু করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোযা বাদ দিবে না। আবার রোযা বন্ধ করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত তিনি আর রোযাই রাখবেন না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমাযান ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস ধরে রোযা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার চেয়ে বেশি আর কাউকে রোযা রাখতে দেখিনি।”

    বুখারী ও মুসলিম

    🌀 ৫) এক রমাযান অন্য রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ:

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:

    الصلوات الخمس ، والجمعة إلى الجمعة ، ورمضان إلى رمضان ، مكفرات ما بينهن ، إذا اجتنب الكبائر

    “পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযানের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন হয়ে যাবে যদি কবিরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।”

    সহীহ মুসলিম। পবিত্রতা অধ্যায়

    🌀 ৬) রমাযান মাসে শয়তানকে শিকর বন্দী করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়:

    إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن ، وغلقت أبواب النيران فلم يفتح منها باب ، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب ، وينادي مناد يا باغي الخير أقبل ، ويا باغي الشر أقصر ، والله عتقاء من النار وذلك كل ليلة

    “রমাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান এবং উশৃংখল জিনদেরকে শিকল বন্দী করে ফেলা হয়, জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়-যার একটিও খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়- যার একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক আহ্বানকারী আহবান করতে থাকে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অন্যায়কারী, বিরত হও। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তা রমাযানের প্রতি রাতেই।”

    [তিরমিযী, রোযা অধ্যায়। মুসতাদরাক হাকেম। আল্লামা আলবানী (রা.) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তারগীব ওয়াত্‌ তারহীব। হাদিস নং ৯৯৮]

    🌀 ৭) একই বছরে রমাযান এবং যিল হজ্জ মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:

    আবু বাকরা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    شهران لا ينقصان ، شهر عيد : رمضان وذو الحجة- متفق عليه

    “দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না। সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রমাযান এবং যিলহজ।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: রোযা। সহীহ মুসলিম অধ্যায়: রোযা] অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক সাথে অসম্পূর্ণ হবেনা। একটি ২৯ দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদিসটির অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম হবে না।

    সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাত্‌হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • ইতিকাফ এর গুরুত্ব, উপকারিতা ও ফযিলত কি?

    ইতিকাফ এর গুরুত্ব, উপকারিতা ও ফযিলত কি?

    ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ (গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমাযানে ১০ দিন ইতি-কাফ করতেন। কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর একটানা ২০ দিন ইতিকাফ করেছেন। (সহীহ বুখারী, অধ্যায়: ইতি-কাফ, আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত)

    ইতিকাফ এর কতিপয় উপকারিতা:

    ঈমানদারের জন্য ইতিকাফ এ অসংখ্য উপকারিতা রয়েছে। নিম্নে সেগুলো কয়েকটি উল্লেখ করা হলঃ

    • ১. এর মাধ্যমে কিছু দিনের জন্য দুনিয়া থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করে কেবল আল্লাহর ইবাদত-বন্দেগীতে লিপ্ত থেকে মহান আল্লাহ নৈকট্য হাসিলের বিশাল সুযোগ পাওয়া যায়।
    • ২. এ সময় অধিক পরিমাণে নফল সালাত, জিকির-আজকার, দুআ, তাসবীহ, তাকবীরে উলা তথা ইমামের প্রথম তাকবীরে সাথে জামাআতে সালাত, মৃত্যুর পরবর্তী জীবন তথা কবর আখিরাত, হাশর-নশর, আল্লাহর দরবারে হিসাব-নিকাশ, পুলসিরাত, জান্নাত-জাহান্নাম ইত্যাদি বিষয়ে নিয়ে চিন্তা-ভাবনা, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন মুখস্থ, ইসলামী জ্ঞানার্জন ইত্যাদি ইবাদতের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করার বিশাল সুযোগ সৃষ্টি হয়।
    • ৩. এ ছাড়াও ইতিকাফের ফলে দৃষ্টি হেফাজত, অশ্লীল, অনর্থক ও মিথ্যা কথা থেকে মুখ হেফাজত, গীবত-পরনিন্দা, চুগলখোরি ইত্যাদি অসংখ্য গুনাহ থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব হয়। 
    • ৪. রমাযান মাসে ইতিকাফ করার সবচেয়ে বড় ফায়দা হল, শেষ দশকের রাত জেগে ইবাদত করার মাধ্যমে আল্লাহ তাওফিক দান করলে ‘লাইলাতুল কদর’ বা শবে কদর লাভ করা সম্ভব হয়-যা এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। নি:সন্দেহে এটি জীবনের অন্যতম সেরা অর্জন।
    • ৫. ইতিকাফ এর মাধ্যমে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর একটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত আদায় করা হয়- যা বর্তমানে মুসলিম সমাজে প্রায় পরিত্যক্ত।

    আরও পড়ুন: Antares Autotune Pro Crack

    ইতিকাফ এর ফযিলতের বর্ণিত হাদিসগুলো সহীহ নয়:

    ইতিকাফের ফযিলতে কয়েকটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। কিন্তু সেগুলো কোনটি জঈফ আর কোনটি জাল। হাদিসগুলোর আরবি টেক্সট (সেগুলোর সনদ সম্পর্কে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য সহকারে) নিম্নে প্রদান করা হল:

    1- روى ابن ماجه (1781) عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فِي الْمُعْتَكِفِ : ( هُوَ يَعْكِفُ الذُّنُوبَ ، وَيُجْرَى لَهُ مِنْ الْحَسَنَاتِ كَعَامِلِ الْحَسَنَاتِ كُلِّهَا ) . ضعفه الألباني في ضعيف ابن ماجه .

    ( يَعْكِفُ الذُّنُوب ) أي : يَمْنَع الذُّنُوب. قاله السندي .

    2- روى الطبراني والحاكم والبيهقي وضعفه عن ابن عباس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف يوما ابتغاء وجه الله جعل الله بينه وبين النار ثلاث خنادق أبعد مما بين الخافقين ) . ضعفه الألباني في السلسلة الضعيفة (5345). والخافقان المشرق والمغرب .

    3- روى الديلمي عن عائشة أن النبي صلى الله عليه وسلم قال : ( من اعتكف إيمانا واحتسابا غفر له ما تقدم من ذنبه ) ضعفه الألباني في ضعيف الجامع (5442) .

    4- روى البيهقي وضعفه عن الحسين بن علي رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم : ( من اعتكف عشرا في رمضان كان كحجتين وعمرتين ) . ذكره الألباني في “السلسلة الضعيفة” “. (518) وقال : موضوع .

    আরও পড়ুনঃ সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশাল মিডিয়াতে সাথে থাকুন


  • রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান মাস সিয়াম সাধনার মাস। হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে এ মাসে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।

    স্বাভাবতই আমাদের মনে রমাযান মাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে থাকে। তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার ব্যাখ্যা মূল উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

    ১) সিয়াম শব্দের আভিধানিক ও শরঈ অর্থ কি?

    উত্তরঃ সিয়াম শব্দটি বহুবচন। একবচন হল, সওম। [ফারসি ভাষায় রোজা।] সওম শব্দের শাব্দিক অর্থ: বিরত হওয়া বা রাখা। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে সওম বলা হয়, বিশেষ ধরণের বিরত থাকাকে।

    অর্থাৎ সওয়াব অর্জনের নিয়তে ফজর উদিত হওয়ার একটু পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অনেক আলেম বর্জনীয় বিষয় সমূহের মধ্যে অশ্লীল যে কোন কথা ও কাজকেও উল্লেখ করেছেন।

    ২) সিয়াম/রোজা ইসলামের কততম স্তম্ভ?

    উত্তরঃ সিয়াম ইসলামের ৪র্থ স্তম্ভ।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

    عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ

    “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর। আর তা হলঃ
    (১) “একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও মাবূদ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল,
    (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
    (৩) যাকাত প্রদান করা,
    (৪) রামজানের সিয়াম (রোজা) পালন করা এবং
    (৫) কাবা ঘরের হজ্জ সম্পাদন করা।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ৩) সিয়াম কখন ফরজ হয়?

    উত্তর: সিয়াম ফরজ হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের ২য় বর্ষে, শাবান মাসের ২৮ তারিখে, সোমবার দিন। [ফিকহুস সুন্নাহ ২/৫০১]

    ৪) কুরআনে কোথায় সিয়াম ফরজ বলা হয়েছে?

    উত্তর: সূরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত দ্বারা মুমিনদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”

    (সূরা বাকারা: ১৮৩)

    ৫) কারও উপর সিয়াম ফরজ হওয়ার শর্ত কয় টি?

    উত্তর: রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত ৬টি। যথা:

    • (ক) মুসলিম হওয়া। (কাফেরের উপর সিয়াম ফরজ নয়, করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হবে।)
    • (খ) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (গ) সুস্থ মস্তিষ্ক বা আকল সম্পন্ন ব্যক্তির উপর। (বেহুঁশ বা পাগলের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (ঘ) মুকিম বা অবস্থান কারী (মুসাফিরের উপর সিয়াম ফরজ নয়। তবে তারা রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে)
    • (ঙ) দৈহিক ভাবে সক্ষম (রোজা রাখতে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তির উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (চ) শরিয়তের বাধা মুক্ত হওয়া। যেমন: নারীর ক্ষেত্রে সে যদি হায়েজ বা নেফাস যুক্ত (প্রসূতি হয়) হয় তবে তার উপর রোজা রাখা ফরজ নয়। (তারা পরবর্তীতে ঐ রোজাগুলোর কাযা আদায় করবে)

    ৬) ফরজ রোজা কয় প্রকার?

    উত্তর: ফরজ রোজা ৩ প্রকার। যথা:

    • (ক) রমজানের রোজা
    • (খ) কাফফারার রোজা (কসম ভঙ্গ, মানত ভঙ্গ, রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি)
    • (গ) মানতের রোজা

    ৭) বছরের কয় দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

    উত্তর: ৬ দিন। যথাঃ ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ), ঈদুল আযহা (কুরবানির ঈদ) এর দিন এবং এর পরের আরও তিন দিন (আইয়ামে তাশরিক) এবং ইয়ামুশ শাক্ক (يوم الشك) বা ‘সন্দেহের দিন’। (শাবান মাসের ৩০তম দিনে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রমজানের চাঁদ উঠেছে কি না তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে ইয়ামুশ শাক্ক বা ‘সন্দেহের দিন’ বলা হয়। এ দিন রোজা থাকার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।)

    ৮) সিয়ামের নিয়ত যদি সওয়াবের সাথে অন্য কিছু হয়, কি হবে?

    রোজা রাখার ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়তের পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ত থাকলে কি রোজা বাতিল হয়ে যাবে? না কি এতে সওয়াব কমে যাবে? না কি রোজার কোনও ক্ষতি হবে না?

    উত্তর: রোজা বাতিল হবে না কিন্তু সওয়াব কমে যাবে।

    ৯) রমাযানকে কিভাবে স্বাগত জানাবো বা বরণ করবো?

    উত্তর: নিচে এ বিষয়ে দশটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমজানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    ১০) রজব ও শাবান মাসে রমাযানের জন্য করা দোয়া বিষয়ক হাদিস সম্পর্কে…

    “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাহরাই রাজাবা ওয়া শাবানা।” এ হাদিসটির মান কি?

    উত্তর: জঈফ বা দুর্বল।নিচে উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অভিমত উল্লেখ করা হল:

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

    উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।” অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।”

    [মুসনাদে আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া]

    মান: হাদিসটি জঈফ বা দুর্বল। কারণ:- এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মুনকারুল হাদিস।

    • ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।” কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”
    • ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।” [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)-

    ১১) কোন তিন শ্রেণীর মানুষের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر

    “তিন জন ব্যক্তির দুআ কবুল করা হয়। যথা:১. রোজাদারের দুআ, ২. মজলুম বা নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ।৩. এবং মুসাফিরের দুআ।”

    [সহিহুল জামে-আলবানি]

    অন্য বর্ণনায়: রোজাদারের পরিবর্তে সন্তানের জন্য পিতার দুআ উল্লেখিত হয়েছে।

    ১২) রমাযান শুরু হলে সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তাআলা যেসব পরিবর্তন ঘটান সেগুলো ৩টি উল্লেখ করুন।

    উত্তর: ১. জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় (কোনও কোনও বর্ণনায় আসমানের দরজা সমূহ খোলা হয়)

    ২. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়,

    ৩. এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

    যেমন: হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

    “যখন রমজান মাস শুরু হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো পরিপূর্ণভাবে খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ মজবুত ভাবে বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দ্বারা বেধে দেয়া হয়।”

    (সহিহ বুখারি)

    ১৩) বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন এবং শ্রেষ্ঠ দশ রাত কোনগুলো?

    উত্তর: বছরের শ্রেষ্ঠ ১০টি দিন হল, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন আর শ্রেষ্ঠ রাত হল, রমজান মাসের শেষ দশ রাত।

    ১৪) রমাযান এ কয় ধাপে বান্দার গুনাহ মোচন করা হয়?

    উত্তর: তিন ধাপে। যথাঃ

    ১. সিয়াম পালন।

    ২. কিয়ামুল লায়ল আদায় (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ এর সালাত আদায়)

    ৩. লাইলাতুল কদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সালাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    তিনি আরও বলেছেন,

    مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ১৫) রোজাদারগণ রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, এই শব্দের অর্থ কি?

    উত্তর: রাইয়ান অর্থ: রাইয়ান শব্দটি আরবি ري থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ হল চূড়ান্ত তৃপ্তি সহকারে পান করা, পিপাষা নিবারিত হওয়া, পানি সিঞ্চন করা ইত্যাদি। রোজাদারগণ রইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

    “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম বলা হয় ‘রইয়ান’, কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল সিয়াম পালনকারীগণ। সেখান দিয়ে তারা ব্যতীত আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তখন তারা উঠে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

    (বুখারি ও মুসলিম)

    রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশের পর সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যার ফলে কোনোদিন তারা তৃষ্ণার্ত হবে না। ইবনে খুযাইমা উপরোক্ত হাদিসের আরও একটু বর্ধিত বর্ণনা দিয়েছেন। তা হল: مَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا “যারা প্রবেশ করবে, তারা পান করবে এবং যে পান করবে সে আর কোনোদিন তৃষ্ণার্ত হবে না।” রোজাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান নামকরণের তাৎপর্যও তাই।

    ১৬) সিয়াম ও কুরআন কি বান্দার জন্য সুপারিশ করবে?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

    “কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে: হে আমার পালনকর্তা! আমি তাকে দিবসে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।”

    [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও ত্বাবরানী (কাবীর গ্রন্থে), ইবনে আবীদ দুনিয়া [আল জু’ও গ্রন্থে] উত্তম সনদে এবং হাকেম। হাকেম বলেনঃ মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহিহ]

    ১৭) কেউ রোজাদারের সাথে ঝগড়া করতে আসলে উত্তরে কি বলতে হবে?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

    “যখন তোমাদের কারো রোজার দিন উপস্থিত হয়, তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উঁচু কণ্ঠে কথা না বলে অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সহিত লড়াই-ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি সিয়াম ব্রতে রত আছি।”

    [বুখারি ও মুসলিম]

    ১৮) যার পেটে কুরআনের কোনও অংশ নেই তার উদাহরণ কিসের মত?

    উত্তরঃ পরিত্যক্ত ঘরের মত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنْ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

    “যার পেটে মোটেও কুরআন নেই সে তো একটা পরিত্যক্ত ঘরের মত।

    তিরমিযী, হাসান-সহীহ

    ১৯) “তারাবিহ এর সালাত ১১ রাকআতের বেশি পড়া বিদআত।” এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ না, এ কথা সঠিক নয়। মূলতঃ তারাবীহ কত রাকআত তা নিয়ে উলামাদের মধ্যে বিস্তর ইখতেলাফ (মতবিরোধ) আছে। কিন্তু বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাকাত আদায় করাই উত্তম। কেননা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে,

    مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান বা অন্য কোন সময়ে ১১ রাকাআতের বেশী পড়তেন না।”

    বুখারি ও মুসলিম

    ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان صلاةُ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم ثلاثَ عَشرةَ ركعةً. يعني: باللَّيل

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামায ছিল ১৩ রাকাত।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    কিন্তু যদি এর চেয়ে বেশী ২০ বা ৩০ বা ততোধিক রাকাত আদায় করা হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    أنَّ رجلًا سألَ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ اللَّيل، فقال رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: صلاةُ الليلِ مَثْنَى مثنَى، فإذا خشِيَ أحدُكم الصبحَ صلَّى ركعةً واحدةً، تُوتِر له ما قدْ صلَّى

    “জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাতের নামায দু দু রাকাত করে পড়বে। তোমাদের কেউ যদি এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে সে এক রাকাত পড়বে। তখন এর মাধ্যমে তার নামায বেজোড় বা বিতর হয়ে যাবে”।

    বুখারি ও মুসলিম

    অতএব ১১ রাকাতই পড়তে হবে, এর বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথা যেমন বাড়াবাড়ি। অনুরূপ ২৩ রাকাতই পড়তে হবে, এরচেয়ে কম বা বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথাও বাড়াবাড়ি।

    ২০) রমাযান মাসে উমরা করার ফজিলত কী?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي

    “রমাযান এ একটি উমরাতে একটি হজ্জের সওয়াব রয়েছে। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্জ পালনের সওয়াব রয়েছে।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    আরও পড়ুনঃ রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন


  • রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আমাদের মাঝে আসছে রমাযান। এই মাহে রমাযান মূলত: গুনাহ মোচন, তাকওয়া অর্জন, চরিত্র সংশোধন, নিজেকে পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করে আমলনামা ভরে নেয়ার অফুরন্ত সম্ভাবনাময় মাস। ইমানদার ব্যক্তিগণ এ মাসের প্রতিটি মূহুর্তেকে সৎকর্মে ব্যয় করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।

    রমাযান এ অধিক নেকিঃ

    ♻ নিম্নে রমাযানুল মোবারকে অধিক পরিমাণে নেকি উপার্জনের দশটি টিপস প্রদান করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমাযানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • অতীত জীবনে ছুটে যাওয়া রোযার ক্ষেত্রে করণীয়

    অতীত জীবনে ছুটে যাওয়া রোযার ক্ষেত্রে করণীয়

    প্রশ্ন: অতীত জীবনে অনেক রোযা ছুটে গেছে। এখন যদি সেগুলো পূরণ করা হয় তবে তা হবে কি এবং রোযার ক্ষেত্রে উমরি কাযা আছে কি?

    উত্তরঃ অতীত জীবনে অজ্ঞতা বা অবহেলা বশতঃ যে সমস্ত রোযা রাখা হয় নি সে সমস্ত রোযা তাকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তার আগে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে সেই ভুলের জন্যেতওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং তার পাশাপাশি যে রোযাগুলো ছুটে গেছে সেগুলো কাযা করতে হবে।

    যদি মনে না থাকে যে কতগুলো রোযা ছুটেছে তাহলে আনুমানিক ধারণা করে সে রোযাগুলো পূরণ করবে।

    এ ক্ষেত্রে আরেকটি করণীয় ওলামায়ে কিরাম উল্লেখ করেছেন। সেটি হল যে, এক বছরের কাযা রোযা সে বছরে পূরণ না করে তার পরবর্তী বছরে বিলম্বিত করার কারণে কাফফারাও দিতে হবে-যদি সামর্থ্য থাকে। সামর্থ্য না থাকলে কেবল রোযাগুলো কাজা করাই যথেষ্ট।

    (এই মর্মে আল্লামা বিন বাজ রহ. এবং সউদি আরবের বড় ওলামাগণ ফতোয়া প্রদান করেছেন)।

    কাফফারা হল, একটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে এক বেলার খাদ্য প্রদান করা। এর পরিমাণ (নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী) প্রত্যেক দেশে প্রচলিত প্রায় সোয়া কিলোগ্রাম পরিমাণ প্রধান খাদ্যদ্রব্য।

    আমাদের দেশে যেহেতু প্রধান খাদ্যদ্রব্য চাল। তাই প্রতিটি রোযার বিনিময়ে সোয়া কিলোগ্রাম পরিমান চাল দিলেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

    সুতরাং আমরা জানতে পারলাম যে অতীত জীবনে ছুটে যাওয়া রোযার জন্যে করণীয় হচ্ছে তিনটি। যথাঃ

    • রোযা পরিত্যাগ করার কারণে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা।
    • ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাযা করা।
    • যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে এক বেলার খাদ্য প্রদান করা। আর সামর্থ্য না থাকলে শুধু রোযা কাজা করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।

    আরও পড়ুনঃ অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    আল্লাহু ‘আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?

    সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?

    প্রশ্ন: সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি এবং আমরা কিভাবে নিয়ত করব?

    উত্তরঃ সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা বিদআত। কেননা, হাদিসে নিয়ত করার কথা এসেছে কিন্তু মুখে উচ্চারণ করার কথা আসে নি। সালাত, সওম, যাকাত, হজ্জ, ওযু, গোসল ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই নয়।

    সুতরাং নিয়তের নামে গদ বাধা কতগুলো আরবী বা বাংলা বাক্য উচ্চারণ করা দ্বীনের মধ্যে নতুন সংযোজন ছাড়া অন্য কিছু নয়। যার কারণে এ সকল গদ বাধা বাক্য মুখে উচ্চারণ করা জঘণ্য বিদআত হিসেবে অবশ্যই পরিত্যাজ্য। কেননা প্রতিটি বিদআতই ভ্রষ্টতা আর প্রতিটি ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম। (আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নামের শাস্তি থেকে রক্ষা করুন। আমীন।)

    আমাদেরকে জানতে হবে যে, সেহরি খাওয়া একটি ইবাদত। আর যে কোনো ইবাদত কবুল হওয়ার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য শর্ত। কারণ, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:


    « إِنَّمَا الأَعْمَالُ بِالنِّيَّاتِ »
    “সকল আমল নিয়তের উপর নির্ভরশীল।”

    সহীহ বুখারীর প্রথম হাদিস

    তাই রোযা রাখার জন্য নিয়ত থাকা অপরিহার্য। তাই নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    مَنْ لَمْ يُبَيِّتْ الصِّيَامَ قَبْلَ الْفَجْرِ فَلَا صِيَامَ لَهُ

    “যে রাতে (ফজরের আগে) রোযা রাখার নিয়ত করে নি তার রোযা হবে না।”

    সুনান নাসাঈ, আল্লামা আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন।

    কিন্তু জানা দরকার, নিয়ত কি বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?

    🌀 নিয়ত কি বা কিভাবে নিয়ত করতে হয়?

    ইমাম নববী রাহ. বলেন: “মনের মধ্যে কোন কাজের ইচ্ছা করা বা সিদ্ধান্ত নেয়াকেই নিয়ত বলা হয়।” সুতরাং রোযা রাখার কথা মনে মধ্যে সক্রিয় থাকাই নিয়তের জন্য যথেষ্ট। মুখে উচ্চারণ করার প্রয়োজন নেই। কেননা, ইসলামী শরীয়তে কোন ইবাদতের নিয়ত মুখে উচ্চারণের কথা আদৌ প্রমাণিত নয়।

    অথচ আশ্চর্য জনক হলেও সত্য যে, আমাদের দেশে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে ওযুর নিয়ত, নামাযের নিয়ত, সেহরি খাওয়ার নিয়ত ইত্যাদি চর্চা করা হয়। নামায শিক্ষা, রোযার মাসায়েল শিক্ষা ইত্যাদি বইয়ে এ সব নিয়ত আরবিতে অথবা বাংলা অনুবাদ করে পড়ার জন্য জনগণকে শিক্ষা দেয়া হয়! কিন্তু আমাদের একথা ভুলে গেলে চলবে না যে, দ্বীনের মধ্যে এভাবে নতুন নতুন সংযোজনের পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ ব্যাপারে সতর্ক করে গেছেন। তিনি বলেন:

    « مَنْ أَحْدَثَ فِى أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ مِنْهُ فَهُوَ رَدٌّ » “যে আমাদের এই দ্বীনে এমন নতুন কিছু তৈরি করল যা তার অন্তর্ভুক্ত নয় তা পরিত্যাজ্য।”

    বুখারী ও মুসলিম


    তাই মুসলমানদের কর্তব্য হল, দলীল-প্রমাণ ছাড়া গদ বাধা নিয়ত (নাওয়াই আন…..) সহ সব ধরণের বিদআতি কার্যক্রম পরিত্যাগ করা এবং সুন্নতকে শক্তভাবে ধারণ করা।
    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুন্নাহ অনুযায়ী আমল করার এবং বিদআত বর্জন করার তওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ নিয়াত কি, কিভাবে করে, বিধান কি?

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • আইয়ামে বীজে এর রোজা কবে রাখতে হয়?

    আইয়ামে বীজে এর রোজা কবে রাখতে হয়?

    প্রশ্ন : আইয়ামে বীজের রোজা চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে না রাখতে পারলে কি মাসের যে কোনো দিন রাখা যাবে? আর একটানা তিন দিন লাগাতার রাখতে হবে নাকি বিচ্ছিন্ন ভাবে রাখলেও হবে?

    উত্তরঃ চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখকে আইয়ামে বীজ বলা হয়। বিয শব্দের অর্থ উজ্জল। এ তিন রাতে চাঁদ বেশি উজ্জল থাকে তাই সেগুলোকে বীয বলা হয়েছে।

    এ তিন দিন রোযা থাকা উত্তম। আবু যর রাদিয়াল্লাহু আ’নহু থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    إِذَا صُمْتَ شَيْئًا مِنَ الشَّهْرِ ، فَصُمْ ثَلَاثَ عَشْرَةَ ، وَأَرْبَعَ عَشْرَةَ ، وَخَمْسَ عَشْرَةَ
    “প্রত্যেক মাসে কিছু (নফল) রোযা পালন করলে (চন্দ্র মাসের) ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে পালন করো।”

    তিরমিযীঃ ৭৬১, নাসায়ীঃ ২৪২৪, শায়খ আলবানীর মতে হাসান সহীহ, তাহকীক রিয়াদুস সালেহীন

    তবে কেউ যদি সে সময় না রাখতে পারে বরং অন্য সময় তিনটি রোযা রাখে তবে একই সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

    ☑ প্রত্যেক মাসে তিনটি করে রোযা রাখার ফযীলতঃ

    প্রতি মাসে তিনটি করে নফল রোযা রাখা অত্যন্ত ফযীলতপূর্ণ কাজ। চাই তা মাসের শুরুতে হোক, মাঝখানে হোক বা শেষে হোক। চাই লাগাতার রাখা হোক বা বিছিন্নভাবে রাখা হোক।

    আবু দরদা রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

    أوصاني خليلي بثلاث لا أدعهن حتى أموت صوم ثلاثة أيام من كل شهر وصلاة الضحى ونوم على وتر .
    رواه البخاري ( 1124 ) ومسلم ( 721 )
    “আমার প্রিয় বন্ধু (রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে এমন তিনটি কাজের অসিয়ত করেছেন, যা আমি যতদিন বেঁচে থাকব, কখনোই ত্যাগ করব না। সেগুলো হচ্ছে: প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা পালন করা, চাশতের নামায পড়া এবং বিতির না পড়ে ঘুমাতে না যাওয়া।”

    সহীহ মুসলিমঃ ৭২২

    প্রত্যেক মাসে ৩টি করে রোযা রাখলে সারা বছর নফল রোযা রাখার সমান পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ। কারণ, আল্লাহ তাআলা যেকোনো ভালো কাজের প্রতিদান ১০ থেকে ৭০০ গুণ বা তার চেয়ে বেশী দান করেন। সে হিসেবে ৩×১০=৩০ অর্থাৎ মাসে তিনটি রোযার বিনিময়ে অন্তত: পুরো মাস নফল রোযার সওয়াব পাওয়া যাবে ইনশাআল্লাহ।

    এভাবে প্রতি মাসে ৩টি রোযা রাখলে সারা বছরই নফল রোযা রাখার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে ইন শা’ আল্লাহ।

    আ’ব্দুল্লাহ ইবনে আ’মর ইবনে আ’স রাদিয়াল্লাহু আ’নহু হতে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    صيام ثلاثة أيام من كل شهر صيام الدهر
    “প্রতি মাসে তিনটি করে রোযা রাখা, সারা বছর ধরে রোযা রাখার সমান।”

    সহীহুল বুখারীঃ ১১৫৯, ১৯৭৫

    আল্লাহু আলাম।

    ✒✒✒✒✒✒
    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব

  • রমাদানের শেষ দশক, কদরের রাত ও ইতিকাফ

    রমাদানের শেষ দশক, কদরের রাত ও ইতিকাফ

    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

    সুপ্রিয় ভাই ও বোন,

    দেখতে দেখতে মাহে রামাযান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকে। সৌভাগ্যবান লোকেরা এ মাসে আঁচল ভরে পাথেয় সংগ্রহ করছে আর হতভাগারা এখনো অন্ধকারের অলি-গলিতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কল্যাণের বারি বর্ষণ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। বন্ধ হয়ে যায় নি তাওবার দরজা বরং আরও বশি সুযোগ নিয়ে মাহে রামাযানের শেষ দশক আমাদের মাঝে সমাগত। আজকের এই পোস্টে দেখব আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এতে কী উপহার সাজিয়ে রেখেছেন এবং আমরা কীভাবে তা সংগ্রহ করতে পারব।

    প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা আল্লাহ দেয়া উপহারগুলো দুহাত ভরে কুড়িয়ে রামাযানকে আরও অর্থ বহ করে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।

    রমাদানের শেষ দশক

    ১) রামাযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী-পরিবার সহ সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন:

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

    إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ

    “রামাযানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”
    কোমর বাঁধার অর্থ হল: পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হওয়া। কোন কোন আলেম এর ব্যাখ্যায় বলেন: স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকা।

    সহীহ বুখরী, অধ্যায়: শবে কদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।

    ২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না:

    আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

    كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।”

    সহীহ মুসলিম: রামাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) বেশি বেশি পরিশ্রম করা।

    শবে কদর

    ১) শবে কদরে কুরআন অবর্তীণ হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
    “আমি একে (কুরআন) অবর্তীণ করেছি শবে কদরে।”

    সূরা কাদর: ১

    ২) শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: আল্লাহ বলেন:

    لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
    “শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

    সূরা কাদর: ৩

    ৩)আল্লাহ তায়ালা শবে কদরকে বরকতময় রাত বলে উল্ল্যেখ করেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
    “নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবর্তীণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।”

    সূরা দুখান: ৩ | আর এ রাত হল শবে কদর।

    ৪) শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করলে পূর্বের সকল ছোটগুনাহ মোচন হয়ে যায়:

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।”

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় রোযা রাখে।

    শবে কদর কখন হবে?

    শবে কদর হবে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে:

    ক) আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    « تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ »
    “তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।

    খ) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ
    স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্‌র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন।

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।

    গ) শবে কদর কি শুধু রামাযানের সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?

    আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু রামাযানের সাতাইশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ধারণা, সুন্নতের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ নয়। কারণ, আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
    “তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: রোযা।

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ »
    স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্‌র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।

    ঘ) তবে শেষ সাত দিনের বেজড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:

    যেমন, নিম্নোক্ত হাদীসটি:

    ابْنِ عُمَرَ – رضى الله عنهما – أَنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ – صلى الله عليه وسلم – أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْمَنَامِ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – « أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ »
    ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, কয়েকজন সাহাবী রামা যানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর হতে দেখেছেন।  সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অত:এব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।”

    (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এ মর্মে আরও হাদীস রয়েছে।

    কোন কোন সালাফে-সালেহীন সাতাইশ রাত শবে কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা:), মুআবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা:) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।

    কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এভাবে নির্দিষ্টকরে লাইলাতুল কদর হওয়ার কোন হাদীস নাই। তাই উপরোক্ত সাহবীদের কথার উপর ভিত্তি করে বড় জোর সাতাইশে রাতে শবে কদর হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক কথা হল, শবে কদর কখনো ২১, কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭ আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।

    সুতরাং শুধু সাতাইশ তারিখ নয় বরং কোন ব্যক্তি যদি রামাযানের শেষ দশকের উপরোক্ত পাঁচটি  রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাইশ রাত জাগলে শবে কদর পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। বরং অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে শুধু সাতাইশ রাত উদযাপন করা বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেভাবে শুধু সাতাইশ তারিখ নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়েছে সেটা বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই বিদআত বর্জন করে সুন্নতী পন্থায় আমল করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

    ঙ)শবে কদরের বিশেষদুয়া:

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বল:

    اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى
    “হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অত:এব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”

    (তিরমিযী, অনুচ্ছেদ, কোন দুয়াটি শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান, সহীহ)।

    ইতিকাফ

    ক) রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:

    আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।”(সহীহ বুখারী)

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রামাযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি। তাই যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন । (মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: রোযা, তিরমিযী, অধ্যায়: রোযা অনুচ্ছেদ। আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    খ) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:

    আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবদাত। যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।

    আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

    অনুবাদ ও গ্রন্থনা:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • সেহেরির পূর্বে হস্তমৈথুন অত:পর…​

    সেহেরির পূর্বে হস্তমৈথুন অত:পর…​

    প্রশ্নঃ যদি কেউ সেহেরির পূর্বে হস্তমৈথুন করে ও নাপাক অবস্থায় সেহেরি খায় এবং সকালে গোসল করে ফজর সালাত কাজা করে তাহলে তার রোজা হবে কি?

    উত্তরঃ নিম্নোক্ত অতি সংক্ষেপে কয়েকটি পয়েন্টে উক্ত প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

    ● ক. হস্তমৈথুন করা আল্লাহর সীমারেখা লঙ্ঘনের শামিল ও কবিরা গুনাহ। (সূরা মুমিনূন এর ৫, ৬ ও ৭ নং আয়াতের আলোকে)।

    আর এটি বাস্তব সত্য ও বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত বিষয় যে, এই বদ অভ্যাস মানুষের শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক দিয়ে মারাত্মক ক্ষতিকর। সুতরাং তা থেকে বিরত থাকার স্বার্থে বিয়ে করা এবং বিয়ের পর স্বামী-স্ত্রী একসাথে থাকা জরুরি। অনিবার্য কারণ বশত: বিয়ে করতে কিছুটা বিলম্ব হলে রোজা রাখতে হবে এবং আল্লাহর ভয় অন্তরে জাগ্রত রেখে এই গোপন গুনাহ ও বদভ্যাস থেকে আত্মসংবরণ করার চেষ্টা করতে হবে।

    কিন্তু অজ্ঞতা, কু প্রবৃত্তির তাড়না বা শয়তানের প্ররোচনায় এমনটি করে থাকলে অনতিবিলম্বে আল্লাহর কাছে লজ্জিত অন্তরে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো এমনটি না করার জন্য অঙ্গীকার করা জরুরি।

    ● খ. হস্তমৈথুনের মাধ্যমে বীর্যপাত ঘটালে শরীর নাপাক হয়। গোসল ছাড়া পাক হওয়া যায় না।

    ● গ. শরীর নাপাক (গোসল ফরজ) অবস্থায় সেহেরি খেয়ে রোজা রাখা জায়েজ। তবে তার আগে ওজু করে নেয়া ভালো। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো জুনুবি (নাপাক) অবস্থায় সেহেরি খেয়ে রোজা রেখেছেন বলে সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে।

    যাহোক, গোসল ফরজ অবস্থায় সেহরি খাওয়ার পর রোজা রাখলে ইনশাআল্লাহ তা সহিহ হবে।

    ● ঘ. শরীর নাপাক অবস্থায় সেহরি খাওয়া জায়েজ হলেও ফজর সালাতের পূর্বে গোসল করা অত:পর যথাসময়ে ফজর সালাত আদায় করা আবশ্যক।

    ● ঙ. ফজরের পূর্বে গোসল না করা অত:পর যথাসময়ে ফজর সালাত আদায় না করা আল্লাহর বিধানকে অবহেলা করার শামিল ও কবিরা গুনাহ। শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া সালাতকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আদায় না করা কুফরি পর্যায়ের গুনাহ। এর জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করতে হবে।

    ● চ. এভাবে অলসতা ও অবহেলা বশত: ফজরের পূর্বে ফরজ গোসল ও ফজর সালাত থেকে বিরত থাকা অত:পর দিনের বেলায় গোসল করার পর ফজর সালাত কাজা করলে সম্ভাবনা আছে, মহান আল্লাহ তা কবুল করবেন না। তবে দায়িত্ব পালনার্থে কাজা করা আবশ্যক। অর্থাৎ সওয়াব না হলেও কাজা করা আবশ্যক। কেননা তা তার কাঁধে অর্পিত ফরজ (অবশ্যপালনীয়) কর্তব্য।

    আল্লাহ আমাদেরকে তার নাফরমানি ও ক্রোধ থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল সৌদি আরব