Category: সাম্প্রতিক

  • চলমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়

    চলমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়

    বর্তমানে বিশ্বময় করোনা সঙ্কটে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া। সৌদি আরবের কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস (Council of Senior Scholars) এবং ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক কমিটির প্রেসিডেন্ট শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আলুশ শায়খ বলেন,

    নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ যে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে প্রেক্ষিতে লোকজন ঈদ এবং তারাবির সালাত বাড়িতেই আদায় করবে।

    বাড়িতে ঈদের সালাতঃ

    বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা কি বৈধ?

    তিনি বলেন, যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে এবং ঈদগাহে অথবা সালাতের জন্য নির্ধারিত মসজিদগুলোতে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা হবে। তবে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেওয়া হয় সেটা হবে না।

    ইতোপূর্বে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয় কমিটির যে ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে তা হলঃ

    “কারো যদি ঈদের সালাত ছুটে গিয়ে থাকে এবং সে তা কাযা করতে চায় তাহলে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেয়া হয় সেটা ছাড়া ঈদের সালাতের নিয়ম ঠিক রেখে তা কাযা করে নেয়া মুস্তাহাব (উত্তম)।”

    সুতরাং মুসলিম সর্ব সাধারণকে নিয়ে জামাআতে ইমামের সাথে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হওয়ার কারণে যদি তা (একাকী) কাযা করা মুস্তাহাব হয়ে থাকে তাহলে যদি কোথাও ঈদের সালাত আদৌ কায়েম করা না হয় তাহলে আরও যৌক্তিক ভাবে তা (একাকী/আলাদাভাবে) কায়েম করা বৈধ হবে।

    কারণ এতে ‘সাধ্যানুযায়ী’ ইসলামের এই নিদর্শনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেনঃ

    “তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে ভয় করো।” আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, “আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে।”

    সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় সবাইকে এই বরকতময় দিনগুলোতে বেশি পরিমাণে দুআ, ইস্তেগফার, মহান আল্লাহর দরবারে আরাধনা করার আহ্বান জানিয়েছেন যেন, মহান আল্লাহ খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন (দু হারামের সেবক) ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সকে হেফাজত করেন, তাদেরকে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করেন এবং তাদেরকে সঠিকভাবে কথা ও কর্ম বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন।

    সেই সাথে আল্লাহ যেন তাদেরকে সৌদি আরব, তার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, এ দেশে অবস্থানকারী প্রতিটি বিদেশি নাগরিক, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তাদের বিশাল মানবিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য উত্তম বিনিময় দান করেন।

    তিনি যেন তাঁর মুসলিম বান্দাদের প্রতি এবং বিশ্বের জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষ সকলের উপর দয়া করেন এবং বিশেষ করে আমাদের এই দেশ এবং সমগ্র পৃথিবী থেকে দ্রুত এই মহামারীকে উঠিয়ে নেন।
    Sourse: https://www.spa.gov.sa/2075735

    ▰▰▰▰▰◉◈◉▰▰▰▰▰
    অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

  • রমাদানের শেষ দশকে দৈনিক ১টাকা দান!

    রমাদানের শেষ দশকে দৈনিক ১টাকা দান!

    সম্প্রতি সময়ে হঠাৎই দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সোশ্যাল মিডিয়াতে রমাদানের শেষ দশকে প্রতিদিন ১টাকা/রিয়াল দান করবার এবং দুই রাকাত নফল সালাত আদায় ও এর ব্যাপক ফজিলতের কথা বর্ণনা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসলাম কি বলে?

    সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত ‘রমাযানের শেষ দশকের প্রতি রাত্রে কমপক্ষে এক রিয়াল (টাকা) করে দান, দুই রাকাত করে নফল নামাজ পড়া…​’ সংক্রান্ত মেসেজের যথার্থতা​

    এ প্রসঙ্গে সৌদি আরবের বিশিষ্ট দাঈ ও আলেমে দ্বীন শাইখ যায়েদ বিন মুসফির আল বাহরি এর বক্তব্যের সার-সংক্ষেপঃ

    “সম্প্রতি সোশ্যাল মিডিয়ায় ‘রমাযানের শেষ দশকের প্রতি রাত্রে এক রিয়াল (টাকা) করে দান, দুই রাকাত করে নামাজ বা যেকোনো সৎকর্ম করার নির্দেশনা সম্বলিত একটি মেসেজ লেনদেন হচ্ছে। বলা হচ্ছে, যদি তা লাইলাতুল কদর এর মধ্যে পড়ে তাহলে ৮৪ বছর সদকা বা ইবাদত করার সমান সওয়াব পাওয়া যাবে।”

    এটা বিদআত-এ ব্যাপারে কোন দলিল আসে নি।

    আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ أَحْدَثَ فِي أَمْرِنَا هَذَا مَا لَيْسَ فِيهِ فَهُوَ رَدٌّ
    “যে ব্যক্তি দ্বীনের অন্তর্ভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল তা পরিত্যাজ্য।

    বুখারী, অধ্যায়: সন্ধি-চুক্তি

    তিনি আরও বলেন, হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের মধ্যে সবচেয়ে দানশীল ছিলেন আর রমাযান মাসে অধিক দানশীল হয়ে যেতেন।

    সহীহ বুখারী

    সুতরাং দানের জন্য কোন সময় বা পরিমাণ নির্দিষ্ট করবেন না। (বরং সারা রমাযান ব্যাপী যথাসাধ্য দান-সদকা ও নেকির কাজ করুন)।

    উৎস: https://bit.ly/3cD7m6M
    ——————-
    শাইখ যায়েদ বিন মুসফির আল বাহরি​
    অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল

  • কুরআনের মধ্যে নবিজীর চুল: একটি মিথ্যা ও শয়তানি গুজব

    কুরআনের মধ্যে নবিজীর চুল: একটি মিথ্যা ও শয়তানি গুজব

    কুরআনের ভিতরে নাকি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর চুল পাওয়া যাচ্ছে! এ বিষয়ে সবার কৌতুহল নিয়ে উত্তর দিচ্ছেন শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল।

    ইতোমধ্যে বহু মানুষ এ বিষয়ে প্রশ্ন করেছে যে, কুরআনের মধ্যে না কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চুল পাওয়া যাচ্ছে! এবং এ বিষয়টি বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমত ভাইরাল! জানা গেলো, এমন গুজব ও শয়তানি কথা এর আগেও নাকি আমাদের দেশে একাধিকার ছড়িয়েছিল! বিষয়টি কারো কারো ছবি চাঁদে দেখার মত জাহালাতপূর্ণ বিষয় এতে কোন সন্দেহ নাই।

    সুবহানাল্লাহ!! সত্যি মুসলিম হিসেবে এটি বড় পরিতাপ ও লজ্জাকর বিষয় যে, বর্তমানে অনেক বকধার্মিক ও হুজুগে বাঙ্গালী মুসলিম কুরআনের মধ্যে হেদায়েত ও জীবন চলার পথনির্দেশা না খুঁজে চুল খোঁজায় ব্যস্ত!

    রাসুল (সাঃ) এর যুগে যা করা হতো

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বেঁচে থাকা অবস্থায় তো রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য তার চুল ভিজিয়ে পানি খেতে বলেছেন বলে প্রমাণ নেই। তিনি রোগ-ব্যাধি হলে মধু, কালোজিরা, জমজম পানি, হিজামা (কাপিং), আগুনের ছ্যাঁক দেয়া, দুআ, রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) ইত্যাদি নানা উপায় বাতলে দিয়েছেন এবং বিভিন্ন ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু তার চুল ভিজিয়ে পানি পান করতে নির্দেশ দেন নি।

    কুরআনের ভিতরে চুল খোঁজার ভয়াবহতা

    আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর পূর্বে যে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুনিয়া থেকে চিরবিদায় গ্রহণ করেছেন তার চুলগুলো সব দেশ বাদ দিয়ে কেবল বাংলাদেশের কুরআনগুলোতে নতুন করে উদ্ভাবিত হওয়া কিভাবে সম্ভব হতে পারে!? এটি দ্বীন-ইসলামকে হাসি-তামাশার বস্তুতে পরিণত করা, মানুষকে কুরআন-হাদিসের নির্দেশনা থেকে দূরে সরানো এবং রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর মিথ্যাচার এর অন্তর্ভুক্ত। ইসলামের দৃষ্টিতে সবগুলোই মারাত্মক অপরাধ।

    এর পাওয়ার বাস্তবতা কি?

    বাস্তবতা হল, প্রত্যেক কুরআনের মধ্যে দু চারটা চুল পাওয়া অসম্ভব নয়। কারণ যারা কুরআন পড়ে তাদের মাথা থেকে অথবা চোখের পাপড়ি থেকে দু-চারটা চুল তার মধ্যে পড়তে পারে। অন্যান্য পাঠ্যবই বা বিছানায় অথবাা ঘর ঝাড়ু দিলেও অনেক চুল পাওয়া অস্বাভাবিক নয়। সুতরাং কুরআনের মধ্যে এমন দু-চারটা চুল পাওয়া গেলে তাকে নবীজির চুল বলে আখ্যায়িত করা শুধু গোমরাহি নয় বরং মূর্খতা। কেউ এমন কথায় বিশ্বাস করলে বা প্রচার করে থাকলে তার উচিৎ, আল্লাহর নিকট তওবা করা।

    যাহোক, এ বিশ্বাসটি একটি মারাত্মক বাতিল ও কুসংস্কারপূর্ণ বিশ্বাস তাতে কোন সন্দেহ নাই। হয়ত কোন ইসলাম বিদ্বেষী চক্র মুসলিমদের বিশ্বাস নিয়ে হাসাহাসি ও তামাশার উদ্দেশ্যে এমন একটি গুজব সর্বত্র ছড়িয়ে দিচ্ছে।

    চুল গুজবে আমাদের কর্তব্য

    সুতরাং আমাদের কর্তব্য হবে, বিশুদ্ধ উৎস থেকে দীন-ইসলাম সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা, অর্থহীন ও অজ্ঞতা সুলভ আবেগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং মুসলিম হিসেবে দ্বীনের বিষয়ে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করা।

    আল্লাহ আমাদেরকে অজ্ঞতা, কুসংস্কার, বিভ্রান্তি ও ভ্রষ্টতা থেকে হেফাজত করুন। আমীন। আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    শায়খ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    জুবাইল, সৌদি আরব
    ফেসবুক আইডি: fb.com/AbdullaahilHadi

    করোনা ভাইরাস: বিশ্বমানবতার সামনে করণীয় এবং আত্মরক্ষার ৬টি দুআ

  • করোনা ভাইরাস: বিশ্বমানবতার সামনে করণীয় এবং আত্মরক্ষার ৬টি দুআ

    করোনা ভাইরাস: বিশ্বমানবতার সামনে করণীয় এবং আত্মরক্ষার ৬টি দুআ

    করোনা ভাইরাস, বর্তমানে পুরো পৃথীবিতে এক আতঙ্কের নাম। এ পৃথিবীতে যত বিপদ ও বিপর্যয় সৃষ্টি হয় তার মূল কারণ মানুষের সীমালঙ্ঘন এবং অন্যায় কৃতকর্ম। তাই আল্লাহ তাআলা মাঝেমধ্যে সৃষ্টির মধ্যে তার শিক্তমত্তার প্রকাশ ঘটান যেন, আল্লাহর অবাধ্য ও সীমালঙ্ঘণকারী মানুষ সচেতন হয় এবং তাঁর পথে ফিরে আসে। আল্লাহ তাআলা বলেন:

    ظَهَرَ الْفَسَادُ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ بِمَا كَسَبَتْ أَيْدِي النَّاسِ لِيُذِيقَهُم بَعْضَ الَّذِي عَمِلُوا لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

    “স্থলে ও জলে মানুষের কৃতকর্মের দরুন বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়েছে। আল্লাহ তাদেরকে তাদের কর্মের শাস্তি আস্বাদন করাতে চান, যাতে তারা ফিরে আসে।” (সূরা রুম: ৪১)

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ

    لَمْ تَظْهَرِ الْفَاحِشَةُ فِي قَوْمٍ قَطُّ حَتَّى يُعْلِنُوا بِهَا إِلاَّ فَشَا فِيهِمُ الطَّاعُونُ وَالأَوْجَاعُ الَّتِي لَمْ تَكُنْ مَضَتْ فِي أَسْلاَفِهِمُ الَّذِينَ مَضَوْا

    “যখন কোন জাতির মধ্যে প্রকাশ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে পড়ে তখন সেখানে মহামারী এবং এমন সব রোগ-ব্যাধির ছড়িয়ে পড়ে যা পূর্বেকার লোকেদের মধ্যে কখনো দেখা যায়নি।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, অধ্যায়ঃ ৩০/ কলহ-বিপর্যয় (كتاب الفتن) হা/৪০১৯, সনদ হাসান)

    যাহোক, বর্তমানে কারো অজানা নেই যে, চীন থেকে উৎপত্তি আল্লাহর এক অদৃশ্য সেনাবাহিনী তথা ‘করোনা’ নামক ভাইরাস আক্রমণে সমগ্র বিশ্ব ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। এতে আবারও প্রমাণিত হল, সত্যি মানুষ আল্লাহর অতিশয় দুর্বল সৃষ্টি। যারা কারণে তারা আল্লাহর খুব সামান্য এক ভাইরাস (যা খালি চোখে দেখা যায় না) এর কাছে আজ পর্যদুস্ত ও অসহায়। অথচ তারা মনে করে, তারা বিজ্ঞান, টেকনলোজি, আবিষ্কার ও শক্তিমত্তায় বহুদূর পৌঁছে গেছে! যথার্থই আল্লাহর ভাষায় মানুষ “অতীব অবিচারী এবং মূর্খ।” (সূরা আহযাব: ৭২)
    আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন।

    এখন এ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য মানব জাতির সামনে কী করণীয় রয়েছে তা সংক্ষেপে জানার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।

    ‘করোনা ভাইরাস’ নামক ধেয়ে আসা এক মহা বিপর্যের কবল থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মানবজাতির করণীয় হলঃ

    ১. সব ধরণের কুফরি, শিরক, নাস্তিকতা, অশ্লীলতা, হারাম ও অন্যায়-অপকর্ম পরিত্যাগ করে মহান স্রষ্টার একমাত্র মনোনীত জীবনাদর্শ ইসলামের পথে ফিরে আসা।
    ২. নিজেদের পাপাচার ও সীমালঙ্ঘনের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করা।
    ৩. বিপদ-বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য মহাশক্তিধর আল্লাহ কাছে দুআ ও আরোধনা করা।
    ৪. মহামারি আক্রান্ত এলাকায় গমন না করা এবং সেখানকার অধিবাসীগণ সেখান থেকে বের না হওয়া।

    রাসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

    “যখন তোমরা কোনো অঞ্চলে মহামারী বিস্তারের সংবাদ শোন, তখন সে এলাকায় প্রবেশ করো না। আর তোমরা যেখানে অবস্থান কর, সেখানে মহামারী বিস্তার ঘটলে সেখান থেকে বেরিয়ে যেও না”।

    (সহীহ বুখারী, অধ্যায়ঃ ৭৬/ চিকিৎসা, হাদিস নম্বরঃ ৫৭২৮)

    ৫. এ বিশ্বাস রাখা যে, মহামারি মুমিনদের জন্য আল্লাহর বিশেষ রহমত। সে যদি এতে মারা যায় তাহলে সে শহিদের সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করবে। যেমন: হাাদিসে বর্ণিত হয়েছেঃ

    عَنْ عَائِشَةَ رَضِيَ اللّهُ عَنْهَا قَالَتْ: سَأَلَتْ رَسُولَ اللّهِ ﷺ عَنِ الطَّاعُونِ فَأَخْبَرَنِي: أَنَّه عَذَابٌ يَبْعَثُهُ اللّهُ عَلى مَنْ يَشَاءُ وَأَنَّ اللّهَ جَعَلَه رَحْمَةً لِلْمُؤْمِنِيْنَ لَيْسَ مِنْ أَحَدٍ يَقَعُ الطَّاعُونُ فَيَمْكُثُ فِي بَلَدِه صَابِرًا مُحْتَسِبًا يَعْلَمُ أَنَّه لَا يُصِيْبُه إِلَّا مَا كَتَبَ اللّهُ لَه إِلَّا كَانَ لَه مِثْلُ أَجْرِ شَهِيْدٍ . رَوَاهُ الْبُخَارِيُّ

    আয়িশা রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি একবার রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে মহামারীর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলাম। জবাবে তিনি আমাকে বললেন, এটা একটি আজাব (শাস্তি)। তিনি যার উপর চান পাঠান। কিন্তু মু’মিনদের জন্য তা তিনি রহমত গণ্য করেছেন। তোমাদের যে কোন লোক মহামারী কবলিত এলাকায় সাওয়াবের আশায় সবরের সাথে অবস্থান করে এবং আস্থা রাখে যে, আল্লাহ তার জন্য যা নির্ধারণ করে রেখেছেন তাই হবে, তাছাড়া আর কিছু হবে না, তার জন্য রয়েছে শাহীদের সাওয়াব। (সহিহ বুখারী)

    মুসনাদে আহমদে আবূ আসীব থেকে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ

    فَالطَّاعُوْنُ شَهَادَةٌ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَرَحْمَةٌ لَهُمْ وَرِجْسٌ عَلَى الْكَافِرِ.

    “মহামারি হল মু’মিনদের জন্য শাহাদাত এবং রহমত স্বরূপ আর কাফিরদের জন্য শাস্তি স্বরূপ।” (সহিহ তারগিব, হা/১৪০১)

    ৬. যত বালা-মুসিবত এবং বিপদ-বিপর্যয় যা কিছু আসুক না কেন ইমানদারের আতঙ্কিত ও হতাশ হওয়ার কোন কারণ নাই। বরং আত্মরক্ষার জন্য যথাসাধ্য দুনিয়াবি উপায়-উপকরণ গ্রহণের পাশাপাশি আল্লাহর উপর ভরসা রাখতে হবে এবং ধৈর্য ধারণ করতে হবে। তৎসঙ্গে আশা করতে হবে যে, এই বালা-মুসিবত এবং রোগ-ব্যাধীর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা বান্দার গুনাহ মোচন করেন এবং আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন।

    ৭. এ বিষয়ে বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংস্থা এবং বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নির্দেশনা মেনে চলা এবং যথাসম্ভব সতর্কতা অবলম্বন করা।

    বাঁচার জন্য ৬টি দুয়াঃ

    করোনা ভাইরাস সহ সব ধরণের জটিল ও দুরারোগ্য রোগ-ব্যাধি থেকে বাঁচার জন্য বিশেষ কয়েকটি দুআএই সংক্রামক ভাইরাস থেকে আত্মরক্ষার উদ্দেশ্যে হাদিসে বর্ণিত নিম্নোক্ত দুআগুলো পাঠ করুন:

    ১ নং দুআ

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ جَهْدِ الْبَلاَءِ وَدَرَكِ الشَّقَاءِ وَسُوءِ الْقَضَاءِ وَشَمَاتَةِ الأَعْدَاءِ

    “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাই, কঠিন বালা-মুসিবত, দুর্ভাগ্য ও শত্রুদের বিদ্বেষ থেকে।” [সহিহ বুখারি]

    ২ নং দুআ

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ الْبَرَصِ وَالْجُنُونِ وَالْجُذَامِ وَمِنْ سَيِّئْ الأَسْقَامِ

    “হে আল্লাহ, আমি তোমার নিকট শ্বেত রোগ, পাগলামি ও কুষ্ঠ রোগসহ সকল জটিল রোগ থেকে আশ্রয় চাই।” [সুনানে আবু দাউদ, হা/ ১৫৫৪]

    ৩ নং দুআ

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ الْعَافِيَةَ فِي الدُّنْيَا وَالآخِرَةِ

    “হে আল্লাহ, তোমার কাছে আমি দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করছি। [সুনানে তিরমিযী, হা/ ৩৫১৪]

    ৪ নং দুআ:

    بِسْمِ اللّٰهِ الَّذِىْ لَا يَضُرُّ مَعَ اِسْمِه شَىْءٌ فِى الْأَرْضِ وَلَا فِى السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ فَيَضُرَّه شَىْءٌ

    ‘‘বিসমিল্লা-হিল্লাযী লা- ইয়াযুররু মা‘আইস্‌মিহী শায়উন ফিল আরযি ওয়ালা- ফিস্‌সামা-য়ি, ওয়া হুওয়াস্ সামী‘উল ‘আলিম’’ (অর্থাৎ- আল্লাহর নামে শুরু করছি, যে নামের সাথে আসমান ও জমিনে কোন কিছুই কোন ক্ষতি করতে পারে না। তিনি সব শুনেন ও জানেন।” [তিরমিযী ৩৩৮৮, আবূ দাঊদ ৫০৮৮, ইবনু মাজাহ ৩৮৬৯, সহিহুল জামে, হা/ ৫৭৪৫]

    এ দুআটি সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে পাঠ করতে হবে।

    ৫ নং দুআ:

    أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللهِ التَّامَّاتِ مِنْ شَرِّ مَا خَلَقَ

    “আল্লাহর পরিপূর্ণ বাণীসমূহের ওসিলায় তাঁর নিকট আমি তিনি যা সৃষ্টি করেছেন সেগুলোর অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চাই।’ (সাহিহ মুসলিম: ৪/২০৮১)

    ৬ নং দুআঃ

    «أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ الَّتِي لَا يُجَاوِزُهُنَّ بَرٌّ وَلَا فَاجِرٌ، مِنْ شَرِّ مَا يَنْزِلُ مِنَ السَّمَاءِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَعْرُجُ فِيهَا، وَمِنْ شَرِّ مَا ذَرَأَ فِي الْأَرْضِ، وَمِنْ شَرِّ مَا يَخْرُجُ مِنْهَا، وَمِنْ شَرِّ فِتَنِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ، وَمِنْ شَرِّ كُلِّ طَارِقٍ إِلَّا طَارِقًا يَطْرُقُ بِخَيْرٍ يَا رَحْمَنُ»

    “আমি আল্লাহর ঐ সকল পরিপূর্ণ বাণীসমূহের সাহায্যে আশ্রয় চাই, যা কোনো সৎব্যক্তি বা অসৎ ব্যক্তি অতিক্রম করতে পারে না, — আল্লাহ যা সৃষ্টি করেছেন, অস্তিত্বে এনেছেন এবং তৈরী করেছেন তার অনিষ্ট থেকে। আসমান থেকে যা নেমে আসে তার অনিষ্ট থেকে এবং যা আকাশে উঠে তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবীতে তিনি সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট থেকে, আর যা পৃথিবী থেকে বেরিয়ে আসে, তার অনিষ্ট থেকে, দিনে রাতে সংঘটিত ফেতনার অনিষ্ট থেকে, আর রাতের বেলায় হঠাৎ করে আগত অনিষ্ট থেকে। তবে রাতে আগত কল্যাণকর আগমনকারী ব্যতীত, হে দয়াময়।” (হিসনুল মুসলিম : ২/১৪১)।

    আল্লাহ তাআলা মানবজাতিকে তার মনোনীত একমাত্র জীবনাদর্শ মহান ইসলামের পথে ফিরে আসার তৌফিক দান করুন এবং তাদেরকে সব ধরণের বিপদ-বিপর্যয় থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

    ➧ আরও পড়ুন:
    রোগ-ব্যাধিতে ঈমানদারের করণীয়:
    https://goo.gl/drLjrM
    ইসলামে ছোঁয়াচে রোগকে অস্বীকার করা হয় নি
    https://www.facebook.com/Guidance2TheRightPath/posts/452075911878626/
    ইসলামের দৃষ্টিতে ভ্যাক্সিন/টিকা গ্রহণ করার বিধান
    https://goo.gl/64GQMf

    উত্তর প্রদানে:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    জুবাইল, সৌদি আরব
    fb id: fb.com/AbdullaahilHadi

  • মায়ের দুধ সংরক্ষণে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক

    মায়ের দুধ সংরক্ষণে হিউম্যান মিল্ক ব্যাংক

    সম্প্রতি বাংলাদেশে মায়ের দুধ সংরক্ষণে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে মিল্ক ব্যাংক প্রতিষ্ঠার। কিন্তু ইসলাম কি বলে? মিল্ক ব্যাংকের সুফলের চাইতে কুফল কি বেশী?

    আলোচনা করছেনঃ শাইখ ড. সাইফুল্লাহ আল মাদানী হাফিঃ

    ভিডিওটি ট্রু টক চ্যানেলের সৌজন্যে। মূল ভিডিও এর লিংক