Category: বিবিধ

  • পেরেশানী দূর করার দুআ ও আমল

    পেরেশানী দূর করার দুআ ও আমল

    মানব জীবনে পেরেশানী বা দুশ্চিন্তা/অস্থিরতা/টেনশন একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। ধনী-গরীব, সুস্থ-অসুস্থ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলেই কখনও না কখনও পেরেশানীতে ভুগেন।

    নিম্নে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, টেনশন ইত্যাদি দূর করার কতিপয় দুআ (আরবীর পাশাপাশি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ) পেশ করা হলঃ

    ১ম দুআ:

    ইবনে মাসউদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বলেন, যে কোন বান্দার দুশ্চিন্তা বা পেরেশানী হলে, সে যদি নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর করে দেবেন এবং তার পরিবর্তে দেবেন আনন্দ। দুআটি হল:

    اللهم إني عبدُك ، وابنُ عبدِك وابنُ أمتِك ، ناصيتي بيدِك ، ماضٍ فيّ حكمُك ، عدلٌ فيّ قضاؤُك ، أسألُك بكلِّ اسمٍ هو لك ، سميتَ به نفسَك ، أو علمته أحدًا من خلقِك ، أو استأثرت به في علمِ الغيبِ عندك أن تجعلَ القرآنَ ربيعَ قلبي ، ونورَ صدري ، وجلاءَ حزني ، وذهابَ همي وغمي

    উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।

    “হে আল্লাহ! নি:সন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র
    আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে।
    তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল।
    আমার ব্যাপারে তোমার ফয়সালা ন্যায়সঙ্গত।
    আমি তোমার নিকট তোমার সেই সকল নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি-যে নাম তুমি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছো, অথবা তুমি তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ অথবা তুমি তোমার অদৃশ্য জ্ঞানে নিজের নিকট গোপন রেখেছ,
    তুমি কুর’আনকে আমার হৃদয়ে প্রশান্তি দায়াক করে দাও, আমার বক্ষের জ্যোতি করে দাও এবং আমার দুশ্চিন্তা মুক্তির ও আমার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিদূরিত হওয়ার কারণ বানিয়ে দাও”।

    (মুসনাদে আহমদ ১/৩৯১, সহীহ তারগীব: ১৮২২ )

    🌀 ২য় দুআ:

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

    উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি।

    অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।

    [বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩]

    🌀 ৩য় দুআ: দুআ ইউনুস:

    لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
    উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ যলিমীন।
    অর্থ: “হে আল্লাহ ! তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নাই, তুমি পবিত্র, মহান। আর আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”

    সুরা আম্বিয়া: ৮৭

    🌀 ৪র্থ দুআ:

    বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা তথা আল্লাহর নিকট নিজের পাপরাশীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

    ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার কিছু দুআ:

    ▪ আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ: হে আল্লাহ তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এটি যতবেশি পাঠ করা যায় ততই উত্তম।
    ▪ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
    উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাউয়ুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
    আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাদি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাউয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।

    অর্থ: আমি ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে যিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক-বাহক আর আমি তার দিকেই প্রত্যার্বন করি।”

    ▪সাইয়েদুল ইস্তিগফার তথা আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহ ইল্লাহ আনতা খালাকতানী …..। এ দুআটি পাঠ করা।

    যদিও ইস্তিগফার দুশ্চিন্তা বা পেরেশানী থেকে মুক্তির জন্য খাস নয় তবুও এর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নিকট অবারিত কল্যাণ আশা করতে পারি। কেননা মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি আমাদের প্রতি খুশি হন এবং আমাদের গুনাহ মোচন করে দেন।
    সুতরাং তিনি যদি আমাদের প্রতি খুশি হন এবং আমাদের গুনাহ মোচন করে দেন তাহলে আশা করা যায়, তিনি আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবেন এবং সকল অশান্তি ও অস্থিরতা দূর করে মনের অফুরন্ত আনন্দ ও উচ্ছলতা দান করবেন।

    🌀 ৫ম দুআ:

    বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা। সবচেয়ে উত্তম হল দুরুদে ইবরাহীম তথা আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আ’লা আলে মুহাম্মাদ…পাঠ করার চেষ্টা করা।

    দরুদ আল্লাহর রহমত লাভের একটি অন্যতম কারণ। আর জীবনে আল্লাহর রহমতের ফুল্গুধারা নেমে আসলে আমাদের সকল সমস্যা, সংকট, দুশ্চিন্তা, পেরেশানী, হতাশা ইত্যাদি দূর হওয়ার প্রবল আশা করা যায়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    প্রশ্নঃ দুআ ইউনুস কি, এটি পাঠের উপকারিতা কি, এটি পাঠের নিয়ম কি? খতমে ইউনুস নামে যে ইবাদত প্রচলিত আছে; এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছি।

    নিম্নে দুআ ইউনুস এর পরিচয়, উপকারিতা এবং কখন কিভাবে কতবার তা পাঠ করতে হয় এবং সেই সাথে খতমে ইউনুস নামক বিদআত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত হল।

    ক. দুআ ইউনুস কোনটি এবং এর উপকারিতা কি?

    সম্মানিত নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দী অবস্থায় বিপদে পড়ে যে দুআ পাঠ করার কারণে মহান আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন তাকে দুআ ইউনুস বলা হয়। দুআটি হল, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত)।”

    এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ

    “এবং মাছ ওয়ালার (ইউনুস আ.) কথা স্মরণ করুন। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহবান করলেন: “লা ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালেমীন” (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের [অবিচারী ও গুনাহগারদের] দলভুক্ত।” অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।”

    সূরা আম্বিয়া: ৮৭

    তাফসিরে ত্ববারীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বলেন,

    وكما أنجينا يونس من كرب الحبس فى بطن الحوت فى البحر إذ دعانا كذلك نجى المؤمنين من كربهم إذا إستغاثوا بنا و دعونا . و بنحو الذى قلنا فى ذلك جاء الأثر

    “আর ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দি দশা অবস্থায় আমাকে ডাকার ফলে যেভাবে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম সেভাবে আমি মুমিনদেরকেও বিপদ থেকে উদ্ধার করব যখন তারা আমার কাছে সাহায্য চায় এবং আমাকে ডাকে।”


    এ মর্মে হাদিস হল, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الحُوتِ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ

    “যুননুন (মাছ ওয়ালা) ইউনুস আ. মাছের পেটে দু’আ করেছিলেন: ‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন’ (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের (গুনাহগারদের) এর দলভুক্ত) কোন মুসলিম যখনই এর মাধ্যমে দুআ করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দু’আ কবুল করে থাকেন।”

    তিরমিজী, হা/ ৩৫০৫ [আল মাদানি প্রকাশনী], আল কালি-মুত তাইয়্যিব ১২২/৭৯, তা’লীকুর রাগীব ২/২৭৫, ৩/৪৩, মিশকাত, তাহকিক ছানী ২২৯২-সনদ: সহিহ

    খ. কখন কিভাবে কতবার দুআ ইউনুস পাঠ করতে হয়?

    যে কোন বালা-মসিবত, বিপদাপদ, দু:শ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দুআ ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। এটি পড়ার পর একান্ত বিনয়-নম্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভয়ভীতি সহকারে আল্লাহর নিকট দুআ করতে হয়।

    আমির সানআনী বলেন,

    فإن قيل: هذا ذكر لا دعاء! قلنا: هو ذكر يفتح به الدعاء ثم يدعو بما شاء ” انتهى من “التنوير

    “যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির; দুআ নয়। আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দুআ শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করবে।”

    আত তানবীর, ৬/৯৮
    • এভাবে প্রথমে দুআ ইউনুস পাঠ করার পর দুআ করলে আশা করা যায়, মহান দয়ালু দাতা আল্লাহ দুআ কবুল করবেন। তবে শর্ত হল, দুআ কবুলের শর্তাবলী ও আদব ঠিক থাকতে হবে। যেমন:
    • হালাল উপার্জন থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা এবং হালাল অর্থের উপর জীবন যাপন করা।
    • দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা। দুআ শেষে আবারও দরুদ পাঠ করা ভালো।
    • দুআ কবুল হওয়ার দৃঢ় আস্থা ও মনোভাব সহকারে দুআ করা।
    • একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে এক দুআ বারবার করা।
    • দুআ করতে করতে বিরক্ত না হওয়া।
    • দুআ কবুলের জন্য তাড়াহুড়া না করা।
    • দুআর মধ্যে গুনাহের কিছু না থাকা ইত্যাদি।

    আরও মনে রাখতে হবে, যে কোন দুআ আল্লাহ তাআলা তিনভাবে কবুল করেন-যা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত। যথা:

    • মহান আল্লাহ বান্দাকে কখনো তার প্রত্যাশিত চাওয়াটি দুনিয়াতেই পূরণ করেন।
    • কখনো তিনি এর প্রতিদান আখিরাতের জন্য জমা রাখেন। তিনি বান্দার দুনিয়াবি প্রত্যাশা পূরণ না করে এই দুআর বিনিময়ে আখিরাতে তাকে মহা পুরষ্কারে ভূষিত করবেন-যা তার জন্য দুনিয়া থেকে আরও বেশি কল্যাণকর।
    • কখনো এই দুআর কারণে তাকে বড় ধরণের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন-যার তার জন্য অবশ্যম্ভাবী ছিল।

    গ. খতমে ইউনুস করা বিদআত:

    বিপদাপদ ও বালামুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভ, রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ, মৃতপ্রায় ব্যক্তির সহজে জান কবজ, মৃত ব্যক্তির গোর আজাব মাফ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে হাফেজ, ইমাম ও মৌলভীদেরকে টাকার মাধ্যমে ভাড়া করে অথবা সাধারণ লোকজন জমায়েত করে তসবি দানা, ডিজিটাল কাউন্টার মেশিন, তেঁতুলের বিচি, পাথরের টুকরা, কঙ্কর ইত্যাদি দ্বারা সত্তর হাজার বার অথবা সোয়া লক্ষ বার বা ৩১৩ বা এ জাতীয় নিদিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করার মাধ্যমে ‘খতমে ইউনুস’ বা ‘দোআ ইউনুসের খতম’ করার প্রচলিত রীতি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও শরিয়ত বর্হিভূত বিদআত।

    এ ব্যাপারে কুরআন, হাদিস ও ফিকাহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে এর কোন অস্তিত্ব নেই বরং এগুলো তথাকথিত বুর্জগদের পক্ষ থেকে দীনের মধ্যে নতুন সংযোজন (বিদআত) যা ক্রমান্বয়ে মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা (বিদআত তৈরি করা)-শরিয়তের দৃষ্টিতে যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

    যেমন: হাদিসে এসেছে:

    عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي (وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ).

    জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও সালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল ভ্রষ্টতা।”’

    (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)।
    আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)

    আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিদআত ও গোমরাহি থেকে হেফাজত করুন। আমীন

    ➧ ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) লিখেছেন:

    বিভিন্ন প্রকরের খতম এর বিদাআত সমূহ:

    আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকারের ‘খতম’ প্রচলিত আছে। এধরনের খতমের নিয়ম, ফজিলত ইত্যাদির বিবরণ ‘মকসুদুল মোমিনীন’, ‘নাফেউল খালায়েক’ ইত্যাদি বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়।

    সাধারণত: দুটি কারণে ‘খতম’ পাঠ করা হয়:

    • বিভিন্ন বিপদাপদ কাটানো বা জাগতিক ফল লাভ।
    • মৃতের জন্য সাওয়াব পাঠানো।

    উভয় প্রকারের খতমই ‘বানোয়াট’ ও ভিত্তিহীন। এ সকল খতমের জন্য পঠিত বাক্যগুলি অধিকাংশই খুবই ভাল বাক্য। এগুলি কুরআনের আয়াত বা সুন্নাহ সম্মত দোয়া ও যিকর। কিন্তু এগুলি এক লক্ষ বা সোয়া লক্ষ বার পাঠের কোনো নির্ধারিত ফযীলত, গুরুত্ব বা নির্দেশনা কিছুই কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে বলা হয় নি। এ সকল ‘খতম’ সবই বানোয়াট।

    উপরন্তু এগুলিকে কেন্দ্র করে কিছু হাদীসও বানানো হয়েছে। ‘বিসমিল্লাহ’ খতম, দোয়া ইউনুস খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি সবই এ পর্যায়ের। বলা হয় ‘সোয়া লাখ বার ‘বিসমিল্লাহ’ পড়লে অমুক ফল লাভ করা যায়’ বা ‘সোয়া লাখ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করলে অমুক ফল পাওয়া যায়’ ইত্যাদি। এগুলি সবই ‘বুজুর্গ’দের অভিজ্ঞতার আলোকে বানানো এবং কোনোটিই হাদীস নয়।


    তাসমিয়া বা (বিসমিলাহ), তাহলীল বা (লা ইলাহা ইলালাহ) ও দোয়া ইউনুস এর ফযিলত ও সাওয়াবের বিষয়ে সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে এগুলো ১ লক্ষ, সোয়া লক্ষ ইত্যাদি নির্ধারিত সংখ্যায় পাঠ করার বিষয়ে কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি। “খতমে খাজেগানের” মধ্যে পঠিত কিছু দোয়া সুন্নাহ সম্মত ও কিছু দোয়া বানানো। তবে পদ্ধিতিটি পুরোটাই বানানো।” [সুত্রঃ বই- হাদীসের নামে জালিয়াতি]

    সুতরাং বুজুর্গদের আমল বা পরীক্ষিত আমল ইত্যাদির নামে সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত তথাকথিত ‘খতমে ইউনুস’ নামক বিদআত অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ থেকে মুসলিম সমাজকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। সেই সাথে দীনের সঠিক জ্ঞান, বুঝ ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ সালাতে মাতৃভাষায় দোয়া করার বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতা, পদ্ধতি, শর্তাবলী ও দুআ

    তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতা, পদ্ধতি, শর্তাবলী ও দুআ

    কোন পাপ করে ফেললে বা নিজের জীবনের অতিতের পাপের জন‍্য তওবা-ইস্তিগফার করার পদ্ধতি কি? কোন দুয়া করতে হবে? এবং তওবা-ইস্তিগফার এর শর্তাবলী কি কি?

    তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতাঃ

    গুনাহ থেকে তওবা করা ফরয। কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে সে ব্যক্তিই উত্তম যে ভুল করার পর তওবা করে। তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর তওবা করা ফরয করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

    وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

    “হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।”

    সূরা নূরঃ ৩১

    তিনি আরও বলেছেন,

    تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا

    “তোমরা আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে তওবা কর।”

    সূরা তাহরীমঃ ৮

    সুতরাং প্রতিটি পাপের জন্য বান্দার তওবা করা অপরিহার্য।

    তওবাকারীর উপর আল্লাহ আনন্দিত হনঃ

    তওবা কারীদের প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত আনন্দিত হন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামযা আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ ، وَقَدْ أَضَلَّهُ فِى أَرْضِ فَلاَةٍ“

    কোনও লোক বিজন মরু প্রান্তরে উট হারিয়ে যাবার পর পুনরায় তা ফেরত পেলে যে পরিমাণ আনন্দে উদ্বেলিত হয় মহান আল্লাহ বান্দার তওবাতে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদঃ তওবা, হা/৫৮৩৪, শামেলা

    মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল; তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করতে চান:আল্লাহ তায়ালা দিনের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন।

    যেমন, ইমাম মুসলিম রহ. আবু মূসা আশয়ারী থেকে বর্ণনা করেছেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا

    “আল্লাহ দিনের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। (তিনি এরূপ করতেই থাকেন) যে পর্যন্ত না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (তথা কিয়ামত পর্যন্ত)।

    সহীহ মুসলিম। অনুচ্ছেদ: গুনাহ থেকে তওবা করলে তা কবুল হওয়া যদিও বারবর গুনাহ সংঘটিত হয়, হা/৪৯৫৪, শামেলা

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অনুসরণীয়: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশী তওবা-ইস্তেগফার করতেন। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

    وَاللَّهِ إِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً

    “আল্লাহর শপথ, আমি দিনে সত্তর বারের অধিক আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তেগফার করি।”

    সহীহ বুখারী। অনুচ্ছেদ: দিনে-রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তওবা, হা/৫৮৩২, শামেলা

    সহীহ মুসলিমে আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ

    “হে মানব মণ্ডলী, তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা, আমি দিনে একশ বার তওবা করি।”

    [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব, হা/৪৮৭১]

    তওবার শর্তাবলীঃ

    জেনে রাখা দরকার যে, তওবার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। এ সকল শর্ত সাপেক্ষে কেবল তওবা কবুল হতে পারে; অন্যথায় নয়। গুনাহ যদি বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়; অপর কোন মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে তার জন্য তিনটি শর্ত। অর্থাৎ কেবল মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) পাঠ করলেই ক্ষমা পাওয়া যাবে না যতক্ষণ না চারটি শর্ত পূরণ করা হবে।

    • ১ম শর্তঃ পাপ কর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া।
    • ২য় শর্তঃ তৎক্ষণাৎ পাপাচার হতে বিরত থাকা।
    • ৩য় শর্তঃ পুনরায় উক্ত পাপ না করার জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করা।
    • ৪র্থ শর্তঃ কারও অধিকার হরণ করে থাকলে তা পূর্ণ করা।

    ৪র্থ শর্তের ব‍্যাখ‍্যাঃ

    যদি অন্যের জায়গা-জমি, অর্থ-কড়ি বা অধিকার হরণ করা হয়ে থাকে তাহলে উল্লেখিত তিনটি শর্তের সাথে চতুর্থ শর্ত হল, যার সম্পদ বা অধিকার হরণ করা হয়েছে তাকে তার সম্পদ/অধিকার ফেরত দেয়া। তবে তাকে না পাওয়া গেলে তা আল্লাহ পথে খরচ করে এ দুআ করবে যে, আল্লাহ যেন এর মালিককে এ দানের সওয়াব দান করেন। তবে পরবর্তীতে তার অথবা তার কোনও উত্তরসূরির সন্ধান পাওয়া গেলে তাদেরকে উক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

    আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

    তাওবা-ইস্তেগফার এর জন্য দুআঃ

    হাদিসে বর্ণিত তাওবার কতিপয় দোয়াঃ

    দোয়া ১ঃ

    أَستَغْفِرُ اللهَ

    উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]

    দোয়া ২ঃ

    أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

    উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]

    দোয়া ৩ঃ

    رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ الغَفُوْرُ

    উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
    অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
    দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।

    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। [আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]

    দোয়া ৪ঃ

    أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

    উচ্চারণঃ আস্‌তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।

    এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]

    দোয়া ৫ঃ

    اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

    উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা
    অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

    এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]

    আরও পড়ুনঃ অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    আল্লাহ আমাদেরকে সকল পাপ থেকে দূরে থাকার ও আমাদের জীবনে কৃত সকল পাপের জন‍্য তওবা-ইস্তিগফার করত গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার তৌফিয়ক দান করুন। আমিন

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • ইসলামের দৃষ্টিতে যেসকল পরিস্থিতিতে হাসতে মানা

    ইসলামের দৃষ্টিতে যেসকল পরিস্থিতিতে হাসতে মানা

    হাসতে মানা, এমনটা কি হয় কখনও? মানুষের সাথে চলাফেরা, উঠবস, কথাবার্তা ইত্যাদি ক্ষেত্রে হাসিখুশি থাকা এবং মুচকি হেসে কথা বলা নি:সন্দেহে আকর্ষণীয় ও সুন্দরতম চরিত্রগুলোর অন্যতম। মৃদ হাসি মানুষের ব্যক্তিত্বের সৌন্দর্য বৃদ্ধি করে। এটি দেহ ও মন উভয়ের জন্যই ভালো। তাই তো নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদিসে মুচকি হাসিকে ‘সদকা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।


    আবু যর রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    تبسمك في وجه أخيك لك صدقة

    “তোমার অপর ভাইয়ের সম্মুখে তুমি মুচকি হাসি দিলে, তা সদকা হিসেবে পরিগণিত হবে।”

    (সহীহ তিরমিযী, হা/১৯৫৬)

    এবং তিনি নিজেও অধিকাংশ সময় মুচকি হাসতেন এবং হাসি-খুশি জীবন যাপন করতেন।

    এ ছাড়া অবস্থা অনুযায়ী ও প্রসঙ্গক্রমে মাঝেমধ্যে হাসা দূষণীয় নয়। মাঝেমধ্যে উচ্চ আওয়াজেও হাসা যায়। তবে অপ্রয়োজনীয় হাসাহাসি করা, যত্রতত্র হো হো করে অট্ট হাসিতে ফেটে পড়া এবং গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অপ্রাসঙ্গিক ভাবে হাসাহাসি করা অবশ্যই ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ব্যক্তির জন্য অশোভনীয় আর কিছু কিছু ক্ষেত্রে শরিয়তের দৃষ্টিতে গর্হিত কাজ হিসেবে বিবেচিত।

    ◯ যে সকল ক্ষেত্রে হাসতে মানা

    ✓ ক. সালাত রত অবস্থায়
    ✓ খ. কবর যিয়ারত করতে গিয়ে
    ✓ গ. আল্লাহর নিকট দুআ করার সময়
    ✓ ঘ. যে কোন ইবাদত করার সময়
    ✓ ঙ. রোগাক্রান্ত ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে দেখে,
    ✓ চ. কাউকে উপহাস, টিটকারি বা হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে হাসা ইত্যাদি।

    ◯ যখন হাসাহাসি শিষ্টাচার পরিপন্থী ও ব্যক্তিত্বহীনতার বহিঃপ্রকাশ:

    ✓ ক. সভা, মাহফিল, বৈঠক বা ক্লাসে থাকা অবস্থায় পার্শ্ববর্তী ব্যক্তির সাথে বা ফোনের মাধ্যমে অন্যের সাথে গল্পগুজব, হাসি-মজাক ও দুষ্টোমিতে লিপ্ত থাকা সামাজিক দৃষ্টিতে দূষণীয় ও শিষ্টাচার পরিপন্থী।
    ✓ খ. গুরুত্বপূর্ণ ও সম্মানিত ব্যক্তির সাক্ষাতে এসে বা তাদের উপস্থিতিতে হাসাহাসি করা বেয়াদবি।
    ✓ গ. স্বাভাবিক অবস্থায় যখন-তখন উচ্চস্বরে অট্টস্বরে হাসা ব্যক্তিত্বহীনতার প্রমাণ।

    আরও পড়ুনঃ উঁচু আওয়াজে অতিরিক্ত হাসার কুফল

    সুতরাং পরিবেশ ও পরিস্থিতি অনুযায়ী হাসুন, হাস্যোজ্জল থাকুন, মুচকি হাসায় অভ্যস্ত হোন এবং সুন্দর হাসিতে জয় করুন মানুষ মন, জয় করুন বিশ্ব-ভূবন। আর অপ্রয়োজনীয় ও অতিরিক্ত হাসাহাসি, উপহাস মূলক হাসি বা যত্রতত্র অট্টহাসি থেকে দূরে থাকুন আর রক্ষা করুন ব্যক্তিত্ব ও আত্মমর্যাদা।

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা



  • মা-বাবার কবর যিয়ারত এ যেভাবে দোয়া করবো

    মা-বাবার কবর যিয়ারত এ যেভাবে দোয়া করবো

    প্রশ্নঃ বা-মা’র কবরের পাশে অথবা কবরস্থানে গিয়ে কিভাবে দুআ করব যদি আমার আরবি দোয়া গুলো মুখস্থ না থাকে? আর আমরা অন্য সময় হাত তুলে যেভাবে দুআ করি ঠিক সেভাবেই কি করতে হবে?

    উত্তরঃ কুরআন-হাদিসের দুআগুলো না জানলে নিজ ভাষায় তাদের জন্য আল্লাহর কাছে তাদের গুনাহ মোচন ও ক্ষমা প্রার্থনা, তাদের উপর শান্তি ও রহমত বর্ষণ, তাদের কবরকে আলোকিত ও প্রশস্ত করা, কবরের নিসঙ্গতায় ভয়-ভীতির পরিবর্তে নিরাপত্তা দান করা, কবরের ফিতনা ও আজাব থেকে রক্ষা করা, তাদেরকে সম্মান দান করা, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা, আখিরাতে তাদের হিসাব-নিকাশ সহজ করা, হাশরের ময়দানের কষ্ট থেকে রক্ষা করা, পুলসিরাত পার করা, জাহান্নামের আগুন থেকে হেফাজত করা, জান্নাতে প্রবেশ করানো, জান্নাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করা, জান্নাতুল ফিরদউসের অধিবাসী করা ইত্যাদি কথাগুলো বলে আল্লাহর কাছে কাকুতি-মিনতি ও কান্না-কাটি করে দুআ করবেন।

    যে সময় গুলিতে দোয়া কবুল হয়ঃ

    কবর জিয়ারত করা ছাড়াও যে সময়গুলোতে দুআ কবুলের বেশি সম্ভাবনা আছে সেগুলো সময়ের প্রতি লক্ষ রেখে তাদের জন্য দুআ করবেন। যেমন: ভোর রাতে তাহাজ্জুদ সালাতের পর, রোজা অবস্থায়, সফর অবস্থায়, জুমার দিন আসর সালাতের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা বা যে কোনও নেকির কাজ করে তার ওসিলায় আল্লাহর কাছে দুআ করবেন।

    হাত তুলে দোয়া করা যাবে?

    হাত তুলে বা না তুলে উভয় ভাবে দুআ করা যায়। তবে হাত তুলে দুআ করা দুআর অন্যতম আদব। সুতরাং হাত তুলে দুআ করা উত্তম।
    গোরস্থানে গিয়ে কিবলার দিকে মুখ করে একাকী দু হাত তুলে দুআ করবেন। যথাসম্ভব চেষ্টা করবেন, দুআর সময় যেন কবর সামনে না থাকে। তবে স্থান সঙ্কট বা বিশেষ পরিস্থিতিতে কবর সামনে থাকলেও সমস্যা নাই।

    বিশেষ সতর্কতাঃ

    বিশষে সতর্কণীয় বিষয় হল, কবর বাসীর নিকট কোন কিছু চাওয়া বা কবর বাসীর ওসিলা দিয়ে দুআ করা বড় শিরক। সুতরাং কবর বাসীর নিকট নিজের সমস্যা তুলে ধরে কোন কিছু চাওয়া থেকে বা তার ওসিলা দিয়ে দুআ করা থেকে বিরত থাকা অপরিহার্য। বরং আল্লাহর গুণবাচক নাম, নিজের সৎকর্ম (সালাত, কুরআন তিলাওয়াত, দান-সদকা, হজ্জ-উমরা ইত্যাদি) এর ওসিলা দিয়ে মৃত ব্যক্তির জন্য সরাসরি আল্লাহর দরবারে দুআ করবেন।

    বিদআত যেন না হয়ঃ

    মনে রাখতে হবে, সম্মিলিত দুআ করা বিদআত। তাই মসজিদের ইমাম বা কোনও হাফেজ বা আলেমকে ভাড়া করে তার মাধ্যমে গোরস্থানে লোকজন সহ সম্মিলিত দুআ-মুনাজাত করা থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। কারণ সম্মিলিত মুনাজাত করা বিদআত।

    তার পরিবর্তে নিজের মত করে নিজ ভাষায় পরম আন্তরিকতা সহকারে কান্না বিগলিত হৃদয়ে তাদের জন্য আল্লাহর নিকট দুআ করবেন। এটাই অধিক কার্যকর হবে ইনশাআল্লাহ। কারণ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, সৎ সন্তানের দুআ দ্বারা পিতামাতা কবরে উপকৃত হয় এবং এর সওয়াব তাদের নিকট পৌঁছে।

    আরও পড়ুনঃ মৃত ব্যক্তিদের প্রতি জীবিতদের দায়িত্ব-কতর্ব্য

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • দানের টাকা পাওয়ার অধিক হকদার কে?

    দানের টাকা পাওয়ার অধিক হকদার কে?

    প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে গরীব অসহায় মানুষকে দান-সদকা করা এবং এতিমের দায়-দায়িত্ব গ্রহণ করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ কাজ কিন্তু প্রশ্ন হল, এ ক্ষেত্রে দানের টাকা পাওয়ার বেশি হকদার কে? একজন খুবই অসুস্থ ব্যাক্তি নাকি দ্বীনী প্রতিষ্ঠানের এতিম বাচ্চারা?

    উত্তরঃ নিঃসন্দেহে অসহায় দরিদ্র মানুষকে সাহায্য-সহযোগিতা করা, তাদের অভাব পূরণ করা, তাদের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ইত্যাদির ব্যবস্থা করা‌, বিশেষ করে এতিম শিশুর দায়িত্ব গ্রহণ ও প্রতিপালন করা এবং তাদের প্রতি দয়া করা মানবিক দৃষ্টি থেকে যেমন খুবই গুরুত্বপূর্ণ তেমনি ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত মর্যাদা পূর্ণ কাজ।‌

    এর মাধ্যমে আল্লাহর ভালোবাসা, ক্ষমা এবং অবারিত সওয়াব অর্জিত হয় যা আখিরাতে জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং জান্নাতে প্রবেশের মাধ্যম হবে ইনশাআল্লাহ।

    সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে বিত্ত-বৈভব দান করেছেন তাদের উচিত, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে এ জাতীয় মানবিক ও জনকল্যাণমূলক কাজে অর্থ খরচ করা। তাদের সম্পদের যাকাত দেওয়ার পাশাপাশি সাধারণ দান সদকা করা।

    দান সম্পর্কে কুরআন থেকে কিছু আয়াতঃ

    মহান আল্লাহ কুরআনের বহু জায়গায় অর্থ সম্পদ ব্যয় করার মর্যাদার কথা উল্লেখ করেছেন এবং তার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন:

    🔷 আল্লাহ বলেন,

    ٱلَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمۡوَٰلَهُمۡ فِي سَبِيلِ ٱللَّهِ ثُمَّ لَا يُتۡبِعُونَ مَآ أَنفَقُواْ مَنّٗا وَلَآ أَذٗى لَّهُمۡ أَجۡرُهُمۡ عِندَ رَبِّهِمۡ وَلَا خَوۡفٌ عَلَيۡهِمۡ وَلَا هُمۡ يَحۡزَنُونَ
    “যারা আল্লাহ্‌র পথে ধন-সম্পদ ব্যয় করে তারপর যা ব্যয় করে তা বলে বেড়ায় না এবং কোনো প্রকার কষ্টও দেয় না, তাদের প্রতিদান রয়েছে রাদের রব-এর নিকট। আর তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত ও হবে না।”

    Surah Al-Baqarah, Ayah 262

    🔷 আল্লাহ তাআলা আরও বলেন,

    وَٱلَّذِينَ صَبَرُواْ ٱبۡتِغَآءَ وَجۡهِ رَبِّهِمۡ وَأَقَامُواْ ٱلصَّلَوٰةَ وَأَنفَقُواْ مِمَّا رَزَقۡنَٰهُمۡ سِرّٗا وَعَلَانِيَةٗ وَيَدۡرَءُونَ بِٱلۡحَسَنَةِ ٱلسَّيِّئَةَ أُوْلَٰٓئِكَ لَهُمۡ عُقۡبَى ٱلدَّارِ
    “আর যারা তাদের রবের সস্তুষ্টি লাভের জন্য ধৈর্য্য ধারণ করে এবং সালাত কায়েম করে, আর আমরা তাদেরকে যে জীবনোপকরণ দিয়েছি তা থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে এবং ভাল কাজের দ্বারা মন্দ কাজকে প্রতিহত করে, তাদের জন্যই রয়েছে আখেরাতের শুভ পরিণাম।”

    Surah Ar-Ra’d, Ayah 22

    🔷 এক হাদিসে রয়েছে,

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رضي الله عنه قَالَ :قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَافِلُ الْيَتِيمِ لَهُ أَوْ لِغَيْرِهِ أَنَا وَهُوَ كَهَاتَيْنِ فِي الْجَنَّةِ وَأَشَارَ مَالِكٌ بِالسَّبَّابَةِ وَالْوُسْطَى. رواه مسلمআবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি ও এতিম প্রতিপালনকারীর অবস্থান জান্নাতে এই দুই অংগুলির ন্যায় পাশাপাশী হবে। চাই সেই এতিম তার নিজের হোক অথবা অন্যের। (বর্ণনাকারী) মালেক বিন আনাস রা. তর্জনী ও মধ্যমা আংগুলি দ্বারা ইশারা করলেন।”

    সহিহ মুসলিম

    এভাবে আল্লাহর পথে খরচ, অভাবীদের অভাব মোচন এবং এতিম-অনাথ শিশুদের প্রতিপালনে দান করার ফজিলতে পর্যাপ্ত পরিমাণ কুরআনের আয়াত ও হাদিস বর্ণিত হয়েছে, আলহামদুলিল্লাহ।

    দান পাওয়ার হকদার

    সুতরাং আল্লাহ যাদেরকে অর্থ-সম্পদ খরচের তৌফিক দিয়েছেন তারা এতিম শিশু, গরীব অসহায় মানুষের অভাব পূরণ, মসজিদ-মাদ্রাসা নির্মাণ, বিভিন্ন সময় ইসলামের প্রয়োজনে এবং আল্লাহর পথে জিহাদ এ যথাসাধ্য দান করার চেষ্টা করবেন।

    তবে যদি কারো সীমিত আর্থিক সঙ্গতি থাকে কিন্তু অভাবীদের সংখ্যা বেশি হয় তাহলে পরিস্থিতি এবং প্রয়োজন অনুযায়ী অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে দান করবে।

    যদি এমন হয় যে এই মুহূর্তে কোন অসহায় দরিদ্র মুমূর্ষ রোগীর চিকিৎসার জন্য জরুরি অর্থের প্রয়োজন। অন্যথায় তার জীবননাশের সম্ভাবনা আছে। পক্ষান্তরে এতিম শিশুদের আপাতত জীবনধারণের ব্যবস্থা আছে তাহলে এক্ষেত্রে মুমূর্ষু রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য দান করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

    আর যদি এমন হয় যে কোন রোগীর চিকিৎসা চলছে কিন্তু অবস্থা তেমন বেগতিক নয় অথচ এতিম শিশুরা অনাহারে-অর্ধাহারে জীবনযাপন করছে। আর্থিক সহায়তার অভাবে তাদের জীবন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। এক্ষেত্রে এতিমদেরকে দানের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে। সে-ই হবে তখন হকদার;

    মোটকথা, প্রয়োজন এবং অবস্থার আলোকে যাকে দান করলে বেশি উপকার হবে এবং যার অবস্থা বেশি সংকটাপন্ন তাকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে।

    আরও পড়ুনঃ মৃতের উদ্দেশ্যে দান-সদাকা বনাম খাওয়ানো!

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • শরিয়তের দৃষ্টিতে ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করার বিধান

    শরিয়তের দৃষ্টিতে ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করার বিধান

    প্রশ্ন: “ভাঙ্গা পাত্রে খাওয়া-দাওয়া করা কি জায়েজ? আর একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে যে, ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খেলে আয়ু কমে যায়” ইসলামের দৃষ্টিতে এ কথার সত্যতা কতটুকু?

    উত্তরঃ ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খাওয়া জায়েজ তবে ভাঙ্গা পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

    ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খাওয়া জায়েজ সংক্রান্ত হাদিস:

    عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ، فَأَرْسَلَتْ إِحْدَى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ مَعَ خَادِمِهَا قَصْعَةً فِيهَا طَعَامٌ، قَالَ: فَضَرَبَتْ بِيَدِهَا فَكَسَرَتِ الْقَصْعَةَ، قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى: فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْكِسْرَتَيْنِ فَضَمَّ إِحْدَاهُمَا إِلَى الْأُخْرَى، فَجَعَلَ يَجْمَعُ فِيهَا الطَّعَامَ، وَيَقُولُ: غَارَتْ أُمُّكُمْ زَادَ ابْنُ الْمُثَنَّى كُلُوا فَأَكَلُوا حَتَّى جَاءَتْ قَصْعَتُهَا الَّتِي فِي بَيْتِهَا، ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى لَفْظِ حَدِيثِ مُسَدَّدٍ قَالَ كُلُوا وَحَبَسَ الرَّسُولَ وَالْقَصْعَةَ حَتَّى فَرَغُوا فَدَفَعَ الْقَصْعَةَ الصَّحِيحَةَ إِلَى الرَّسُولِ وَحَبَسَ الْمَكْسُورَةَ فِي بَيْتِه

    আনাস রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনও এক স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় উম্মাহাতুল মু‘মিনীন রাসূলের জনৈক স্ত্রী তার খাদেমকে দিয়ে এক পেয়ালা খাবার পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ঘরে ছিলেন] সেই স্ত্রী (রাগান্বিত হয়ে) পেয়ালাটি হাতের দ্বারা আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন।
    ইবনুল মুসান্না বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাঙ্গা টুকরা দু’টো উঠিয়ে নিয়ে একটিকে অপরটির সাথে জোড়া দিলেন এবং পড়ে যাওয়া খাবারগুলো উঠাতে লাগলেন এবং বললেন, “তোমাদের মায়ের আত্ম মর্যাদাবোধ জেগেছে (রাগ হয়েছে)।”ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছে: “তোমরা এগুলো খাও। তাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি খাদেমসহ পেয়ালাটি আটকিয়ে রাখলেন। অতঃপর অক্ষত পেয়ালাটি তিনি খাদেমের হাতে তুলে দিলেন আর ভাঙ্গা পেয়ালাটি তাঁর ঘরে রেখে দিলেন।

    সহীহ ইবনু মাজাহ/২৩৩৪

    এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ ভাঙ্গা প্লেটে খাবার খেয়েছেন।

    পানপাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ দিয়ে পান করা নিষেধ সংক্রান্ত হাদিস:

    পানপাত্রের ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে মুখ দিয়ে পান করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

    >عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الشُّرْبِ مِنْ ثُلْمَةِ الْقَدَحِ وَأَنْ يُنْفَخَ فِي الشَّرَابِ ‏‏

    আবু সাঈদ আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি পান করতে এবং পানীয়ের মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।”

    সুনানে আবু দাউদ/৩৭২২-সহিহ

    ইমাম আবু জাফর ত্বহাবি রাহ, শারহু মাআনিল আসার গ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

    وقد قال قوم: إنما نهى عن ذلك لأنه الموضع الذي يقصده الهوام فنهى عن ذلك خوف أذاها

    একদল মুহাদ্দিস বলেছেন, এই নিষেধের কারণ হল, পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে পোকামাকড় স্থান নেয়। এগুলো যেন কোন ক্ষতি না করে সে জন্য তিনি তা নিষেধ করেছেন।” আর এটা বিজ্ঞান সম্মত কথা যে, গ্লাস, মগ ইত্যাদির ভাঙ্গা স্থানে জীবাণু সৃষ্টি হয়। সুতরাং সেখানে মুখ লাগলে মুখের মধ্যে জীবাণু প্রবেশ করে অসুখ-বিসুখ সৃষ্টি হতে পারে।


    সাধারণ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ভালো, উপযুক্ত ও রুচিসম্মত পাত্র ব্যবহার করা উচিৎ। কেননা ভাঙ্গা, ফাটা, ছিদ্র ইত্যাদি পাত্রে খাবার খাওয়া হলে তা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা খাওয়ার সময় হাত বা মুখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে এ জাতীয় পাত্রে মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করাকে সমাজে সম্মানহানিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অত:এব, পানাহারের ক্ষেত্রে ভাঙ্গাফুটা ও অনিরাপদ পাত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

    তবে দারিদ্র্যতার কারণে অথবা বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে যদি জোড়া-তালি দেয়া বা টুকটাক ভাঙ্গাফাটা পাত্রে পানাহারের প্রয়োজন হয় তাহলে তাতে শরিয়তে কোন বাধা নেই।

    ‘ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করলে আয়ু কমে যায় বা ঘরে অকল্যাণ নেমে আসে’ এটি বাতিল ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা:

    ‘ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করলে আয়ু কমে যায় বা ঘরে অকল্যাণ নেমে আসে’ এ জাতীয় কথাবার্তা শরিয়ত সমর্থন করে না। অনুরূপভাবে “ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা অশুভ। এতে চেহারা নষ্ট হয়ে যায়।” “ভাঙ্গা কুলায় লাথি মারলে জমির ফসল কমে যায়।” এ সকল কথাবার্তা ১০০% কুসংস্কার, বাতিল ও শরিয়ত পরিপন্থী বিশ্বাস। ইসলামের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নাই। সুতরাং এ জাতীয় মূর্খতা পূর্ণ কথা-বার্তায় বিশ্বাস রাখা হারাম।

    আরও পড়ুনঃ কুরআনের মধ্যে নবিজীর চুল: একটি মিথ্যা ও শয়তানি গুজব

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • হাফ প্যান্ট এবং টি শার্ট পরে সালাতের বিধান

    হাফ প্যান্ট এবং টি শার্ট পরে সালাতের বিধান

    প্রশ্নঃ সালাতে সতর তথা শরীরের কতটুকু ঢাকা আবশ্যক? হাফ প্যান্ট পরিহিত (হাঁটু ঢাকা অবস্থায়) বা হাফ শার্ট/টি শার্ট পরিধান করে সালাত আদায় করলে তা কি শুদ্ধ হবে?

    উত্তরঃ সালাতে পুরুষদের ন্যূনতম সতর হল, দু কাঁধ এবং নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা। অর্থাৎ সর্ব নিম্ন এতটুকু ঢাকা থাকা সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।

    অবশ্য কাঁধ ঢাকা শর্ত কি না এ ব্যাপারে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে সালাতে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ يُصَلِّ أَحَدُكُمْ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ لَيْسَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ مِنْهُ شَىْءٌ ‏”‏ ‏

    আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে সালাত আদায় না করে।”

    সহীহ বুখারী ও মুসলিম

    হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে:


    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي ثَوْبٍ فَلْيُخَالِفْ بِطَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقَيْه ‏”

    আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় করলে সে যেন কাপড়ের ডান পাশকে বাম কাঁধের উপর এবং বাম পাশকে ডান কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখে।”

    সহীহ মুসলিম

    এ হাদিসদ্বয় থেকে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। অবশ্য যে সকল ফকিহগণ কাঁধ ঢাকার বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে না তাদের মতে, কাঁধ ঢাকা সালাতের একটি সৌন্দর্য বা আদব মাত্র; এর বেশি নয়। যা হোক, একান্ত জরুরি পরিস্থিতির শিকার না হলে ইচ্ছাকৃতভাবে দু কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়।

    উল্লেখ্য যে, মহিলাদের জন্য পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি ব্যতিরেকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর ঢাকা আবশ্যক। আর পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা থাকলে মুখ ও হাতের কব্জি দ্বয়ও ঢাকতে হবে।

    সুতরাং কোন পুরুষ যদি একটি গামছা/তোয়ালে দ্বারা তার দু কাঁধ ঢাকে বা হাফ শার্ট বা টি শার্ট পরিধান করে এবং এতটুকু লম্বা হাফ প্যান্ট পরিধান করে যে, তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে যায় তাহলে তাতে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

    তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে এত ছোট পোশাক পরা উচিৎ নয় বরং সারা শরীর সুন্দরভাবে আবৃত করত: শালীন ও রুচি সম্মত জামা-কাপড় পরিধান করাই সালাতের সৌন্দর্য ও আদব।

    আরও পড়ুনঃ টুপি-পাগড়ি ছাড়া সালাত আদায় করা কি মাকরূহ?

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • আমল কবুল এর কিছু উপায় ও রমযানের পরে করণীয়

    আমল কবুল এর কিছু উপায় ও রমযানের পরে করণীয়

    যে কোন সৎ আমল করার পর আমাদের নিকট যে বিষয়টি মুখ্য হয়ে দাঁড়ায় তা হল: আমল কবুল এর বিষয়; আমল কবূল হল কি হল না।

    নিশ্চয়ই সৎ আমল করতে পারা বড় একটি নেয়ামত; কিন্তু অন্য একটি নেয়ামত ব্যতীত তা পূর্ণ হয় না, যা তার চেয়ে বড়, তা হল কবুলের নিয়ামত। এটি নিশ্চিত যে রমযানের পর এত কষ্ট ও ত্যাগ স্বীকার করে তা যদি কবূল না হয়, তবে অবশ্যই এক মহা বিপদ। এর চেয়ে আর বড় ক্ষতি কি রয়েছে যদি আমলটি প্রত্যাখ্যাত হয়, আর দুনিয়া আখিরাতের স্পষ্ট ক্ষতিতে প্রত্যাবর্তন করে?

    বান্দা যেহেতু জানে, অনেক আমলই রয়েছে যা বিভিন্ন কারণে গ্রহণযোগ্য হয় না। অতএব গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, আমল কবুল হওয়ার কারণ ও উপায় সম্পর্কে জানা। যদি কারণগুলি তার মধ্যে বিদ্যমান থাকে, তবে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে এবং ক্রমাগত তার উপর অটল থাকে ও আমল করে যায়। আর যদি তা বিদ্যমান না পায় তবে এ মুহূর্তেই যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হবে তা হল: ইখলাসের সাথে সেগুলোর মাধ্যমে আমল করায় সচেষ্ট হওয়া।

    ১। আমল কবুল হওয়ার কিছু উপায়:

    স্বীয় আমলকে বড় মনে না করা ও তার উপর গর্ব না করা: মানুষ যত আমলই করুক না কেন, আল্লাহ তার দেহ থেকে শুরু করে সার্বিকভাবে যত নেয়ামত তাকে প্রদান করেছেন, সে তুলনায় আল্লাহর সে মূলত: কিছুই হক আদায় করতে পারে নি।

    সুতরাং একনিষ্ঠ ও খাঁটি মু’মিনের চরিত্র হল, তারা তাদের আমলসমূহকে তুচ্ছ জ্ঞান করবে, বড় মনে করে গর্ব-অহংকার করবে না; যার ফলে তাদের সওয়াব নষ্ট হয়ে যায় ও অলসতা এসে যায় সৎ আমল করার ক্ষেত্রে।

    স্বীয় আমলকে তুচ্ছ জ্ঞান করার সহায়ক বিষয়:(১) আল্লাহ তায়ালাকে যথাযথভাবে জানা ও চেনা (২) তাঁর নিয়ামতসমূহ উপলব্ধি করা ও (৩) নিজের গুনাহ-খাতা ও অসম্পূর্ণতাকে স্মরণ করা। যেমন: আল্লাহ তায়ালা তাঁর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে গুরু দায়িত্ব অর্পণের পরে অসীয়ত করেন:

    “(নবুয়তের বোঝা বহন করত:) তুমি (তোমার রবের প্রতি) অনুগ্রহ প্রকাশ কর না যার ফলে বেশি কিছু আশা করবে।”

    সূরা মুদ্দাসসির: ৬

    ২। আমল কবুল হবে কিনা, এ মর্মে আশঙ্কিত থাকা:

    সালাফে সালেহীন- সাহাবায়ে কিরাম আমল কবূল হওয়ার ব্যাপারটিকে খুব বেশি গুরুত্ব দিতেন, এমনকি তাঁরা ভয় ও আশঙ্কায় থাকতেন। যেমন: আল্লাহ তাঁদের অবস্থা বর্ণনা করে বলেন:

    “যারা ভীত-কম্পিত হয়ে দান করে যা দান করার, কেননা তারা তাদের রবের নিকট প্রত্যাবর্তন করবে।

    মুমিনুন: ৬০

    নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আয়াতের ব্যাখ্যা করেন যে, তারা রোযা রাখে, নামায আদায় করে, দান-খয়রাত করে আর ভয় করে যে, মনে হয় তা কবূল হয় না।
    আলী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেন: তোমাদের পক্ষ হতে তোমাদের আমল সমূহ কবূল হওয়ার ব্যাপারে তোমরা খুব বেশি গুরুত্ব প্রদান কর। তোমরা কি আল্লাহর বাণী শ্রবণ কর না।

    “নিশ্চয়ই আল্লাহ মুত্তাকীদের পক্ষ হতেই কবূল করে থাকেন।”

    সূরা: মায়েদাঃ ২৭


    ৩। আমল কবুল হওয়ার আশা পোষণ ও দু‘আ করা:

    আল্লাহর প্রতি ভয়ই যথেষ্ট নয় ; বরং অনুরূপ তাঁর নিকট আশা পোষণ করতে হবে। কেননা আশা বিহীন ভয় নিরাশ হওয়ার কারণ এবং ভয় বিহীন আশা আল্লাহর শাস্তি হতে নিজেকে মুক্ত মনে করার কারণ; অথচ উভয়টিই দোষনীয়, যা মানুষের আকীদা ও আমলে মন্দ প্রভাব বিস্তার করে। জেনে রাখুন! আমল প্রত্যাখ্যান হয়ে যাওয়ার ভয়-আশঙ্কার সাথে সাথে আমল কবুলের আশা পোষণ মানুষের জন্যে বিনয়-নম্রতা ও আল্লাহ ভীতি এনে দেয়। যার ফলে তার ঈমান বৃদ্ধি পায়। যখন বান্দার মধ্যে আশা পোষণের গুণ সাব্যস্ত হয় তখন সে অবশ্যই তার আমল কবূল হওয়ার জন্য তার প্রভুর নিকট দু’হাত তুলে প্রার্থনা করে। যেমন- করেছিলেন আমাদের পিতা ইবরাহীম খলীল ও তাঁর পুত্র ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম)। যা আল্লাহ তায়ালা তাদের কা’বা গৃহ নির্মাণের ব্যাপারটি উল্লেখ করে বর্ণনা করেন।

    “যখন ইবরাহীম ও ইসমাঈল (আলাইহিমাস সালাম) বায়তুল্লাহর ভিত্তি বুলন্দ করেন (দু‘আ করেন) হে আল্লাহ আমাদের প্রতিপালক তুমি আমাদের দু‘আ কবূল করে নিও। নিশ্চয়ই তুমি সর্বশ্রোতা সর্বজ্ঞ।

    সূরা বাকারা: ১২৭


    ৪। বেশি বেশি ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনা:

    মানুষ তার আমলকে যতই পরিপূর্ণ করার জন্য সচেষ্ট হোক না কেন, তাতে অবশ্যই ত্রুটি ও অসম্পূর্ণতা থেকেই যাবে। এজন্যেই আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে শিক্ষা দান করেছেন, কিভাবে আমরা সে অসম্পূর্ণতাকে দূর করব। সুতরাং তিনি আমাদেরকে ইবাদত-আমলের পর ইস্তেগফার-ক্ষমা প্রার্থনার শিক্ষা দান করেন। যেমন: আল্লাহ তায়ালা হজ্জের হুকুম বর্ণনার পর বলেন:

    “অত:পর তোমরা (আরাফাত) হতে প্রত্যাবর্তন করে, এসো যেখান থেকে লোকেরা প্রত্যাবর্তন করে আসে। আর আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করতে থাক, নিশ্চয়ই আল্লাহ মহা ক্ষমাশীল ও দয়াবান।”

    সূরা বাকারা: ১৯৯

    আর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রত্যেক নামাযের পর তিনবার করে “আস্তাগফিরুল্লাহ” (আমি তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) বলতেন।


    ৫। বেশি বেশি সৎ আমল করা:

    নিশ্চয়ই সৎ আমল একটি উত্তম বৃক্ষ। বৃক্ষ চায় তার পরিচর্যা, যেন সে বৃদ্ধি লাভ করে সুদৃঢ় হয়ে যথাযথ ফল দিতে পারে। সৎ আমলের পর সৎ আমল করে যাওয়া অবশ্যই আমল কবুল এর একটি অন্যতম আলামত। আর এটি আল্লাহর বড় অনুগ্রহ ও নেয়ামত, যা তিনি তার বান্দাকে প্রদান করে থাকেন। যদি বান্দা উত্তম আমল করে ও তাতে ইখলাস বজায় রাখে তখন আল্লাহ তার জন্য অন্যান্য উত্তম আমলের দরজা খুলে দেন। যার ফলে তার নৈকট্যের ও বৃদ্ধি পায়।

    ৬। সৎ আমলের স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা বজায় রাখা:

    যে ব্যক্তি নেকী অর্জনের মৌসুম অতিবাহিত করার পর সৎআমলের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে চায়, তার জন্য জরুরী হল সে যেন সৎ আমলে স্থায়ী ও অটল থাকার গুরুত্ব, ফযীলত, উপকারিতা, তার প্রভাব, তা অর্জনের সহায়ক বিষয় ও এক্ষেত্রে সালাফে সালেহীনের অবস্থা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করে।
    সৎ আমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার গুরুত্ব

    ইসলামী শরীয়তে সৎ আমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার গুরুত্ব নিন্মের বিষয়গুলি হতে ফুটে ওঠে:
    ১। আল্লাহ তায়ালার ফরযসমূহ, যা অবশ্যই ধারাবাহিতকতার ভিত্তিতেই ফরয করা হয়েছে এবং তা আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল।

    ২। সৎআমলের স্থায়িত্ব ও ধারাবাহিকতা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর অন্যতম তরীকা ও নীতি।

    ৩। ক্রমাগত আমল ও তার ধারাবাহিকতা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিকট উত্তম আমলের অন্তর্ভুক্ত। রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “আল্লাহর নিকট সর্বাধিক প্রিয় আমল হল, যা নিয়মিতভাবে করে যাওয়া হয়, যদিও তা অল্প হয়।” (বুখারী-মুসলিম)

    সৎ আমলের উপর স্থায়ী ও অটল থাকার প্রভাব ও উপকারিতা:

    * আল্লাহ তায়ালা তাঁর সৎআমলের হেফাযতকারী বান্দাদেরকে বহুভাবে সম্মানিত ও উপকৃত করে থাকেন। যেমন:
    ১। স্রষ্টার সাথে তার সার্বক্ষণিক যোগাযোগ; যা তাকে অগাধ শক্তি, দৃঢ়তা, আল্লাহর সাথে নিবিড় সম্পর্ক ও তার উপর মহা আস্থা তৈরি করে দেয়। এমনকি তার দুঃখ-কষ্ট ও চিন্তা-ভাবনায় আল্লাহই যথেষ্ট হয়ে যান। যেমন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করবে আল্লাহই তার জন্য যথেষ্ট।”

    সূরা তালাক: ৩

    ২। অলসতা-উদাসীনতা হতে অন্তরকে ফিরিয়ে রেখে সৎ আমলকে আঁকড়ে ধরার প্রতি অভ্যস্ত করা যেন ক্রমান্বয়ে তা সহজ হয়ে যায়। যেমন কথিত রয়েছে: “তুমি তোমার অন্তরকে যদি সৎআমলে পরিচালিত না কর, তবে সে আমাকে গুনাহর দিকে পরিচালিত করবে।”

    ৩। এ নীতি অবলম্বন হল আল্লাহর মুহাব্বাত ও অভিভাবকত্ব লাভের উপায়। যেমন হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ বলেন:

    “আমার বান্দা নফল ইবাদতসমূহ দ্বারা আমার নৈকট্য অর্জন করতেই থাকে, এমনকি তাকে আমি মুহাব্বাত করতে শুরু করি—।”

    বুখারী

    ৪। সৎআমলে অবিচল থাকা বিপদ-আপদে মুক্তির একটি কারণ। যেমন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইবনে আব্বাস (রাযিয়াল্লাহু আনহুমা) কে উপদেশ দেন: “আল্লাহকে হেফাযত কর (অর্থাৎ তার হুকুম-আহকামগুলো পালন কর) তবে তিনিও তোমাকে হেফাযত করবেন, আল্লাহকে হেফাযত কর তবে তুমি তাঁকে তোমার সামনে পাবে; সুখে-শান্তিতে তাঁকে চেন। তিনি তোমাকে বিপদে চিনবেন।” (মুসনাদে আহমদ)

    ৫। সৎ আমলে অবিচলতা অশ্লীলতা ও মন্দ আমল হতে বিরত রাখে। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    “নিশ্চয়ই নামায অশ্লীলতা ও অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখে।”

    সূরা আনকাবূত: ৪৫

    ৬। সৎআমলে অবিচল থাকা গুনাহ-খাতা মিটে যাওয়ার একটি মাধ্যম। যেমন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন: “ তোমাদের কারো দরজায় যদি একটি নদী থাকে, আর সে তাতে প্রতিদিন পাঁচবার করে গোসল করে, তবে তার দেহে কি কোন ময়লা অবশিষ্ট থাকবে? সাহাবাগণ বলেন: না, তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: এমনই পাঁচ ওয়াক্ত নামায, আল্লাহ যার দ্বারা গুনাহ সমূহকে মিটিয়ে দেন।” (বুখারী-মুসলিম)

    ৭। সৎ আমলে অবিচল থাকা, শেষ পরিণাম ভাল হওয়ার মাধ্যম। যেমন: আল্লাহ বলেন:

    “যারা আমার পথে চেষ্টা-সাধনা করবে অবশ্যই আমি তাদেরকে আমার পথ দেখিয়ে দিব, নিশ্চয়ই আল্লাহ সৎআমল কারীগণের সাথে আছেন।”

    সূরা আনকাবূত: ৬৯

    ৮। এটি কিয়ামতের দিন হিসাব সহজ হওয়া ও আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায়।

    ৯। এ নীতি মুনাফেকী হতে অন্তরের পরিশুদ্ধতা ও জাহান্নামের আগুন হতে পরিত্রাণের একটি উপায়। যেমন: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি চল্লিশ দিন (ক্রমাগত) জামায়াতের সাথে প্রথম তাকবীর পেয়ে নামায আদায় করবে তার জন্য দু’প্রকার মুক্তির ঘোষণা: (১) জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি ও (২) মুনাফেকী হতে মুক্তি। (তিরমিযী-হাসান)

    ১০। এটি জান্নাতে প্রবেশের উপায়: নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “ যে ব্যক্তি কোন জিনিসের দু’প্রকার আল্লাহর রাস্তায় খরচ করল, তাকে জান্নাতের দরজাসমূহ হতে আহ্বান করা হবে। জান্নাতের রয়েছে আটটি দরজা: সুতরাং যে ব্যক্তি নামাযী তাকে নামাযের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি জিহাদী তাকে জিহাদের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে, যে ব্যক্তি দান-খয়রাত ওয়ালা তাকে দান-খয়রাতের দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে এবং যে ব্যক্তি রোযাদার তাকে রইয়ান নামক দরজা দিয়ে আহ্বান করা হবে।” (বুখারী-মুসলিম)

    ১১। যে ব্যক্তি নিয়মিত সৎ আমল করে অতঃপর অসুস্থতা, সফর বা অনিচ্ছাকৃত ঘুমের কারণে যদি সে আমল বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, তবে তার জন্য সে আমলের সওয়াব লিখা হবে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “বান্দা যখন অসুস্থ হয় বা সফর করে, তবে তার জন্য অনুরূপ সওয়াব লিখা হয় যা সে গৃহে অবস্থানরত অবস্থায় ও সুস্থ অবস্থায় করত।” (বুখারী) এবং নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তির রাতে নামায ছিল কিন্তু তা হতে নিদ্রা তার উপর প্রভাব বিস্তার করে, তবে আল্লাহ তার জন্য সে নামাযের সওয়াব লিখে দিবেন এবং তার সে নিদ্রা হবে তার জন্য সদকা স্বরূপ। (নাসায়ী ও মুয়াত্তা মালিক-সহীহ)

    রমযানের পর করণীয়:

    মাহে রমযান হতে আমরা কি উপকারিতা গ্রহণ করলাম? আমরা তো কোরআনের মাস কে বিদায় জানালাম। অমরা অতিবাহিত করলাম তাকওয়ার মাস। আমরা বিদায় জানালাম ধৈর্যের মাস। যাতে আমরা আল্লাহর আনুগত্য প্রকাশ ও পাপাচার হতে বিরত থাকর মাধ্যমে ধৈর্যের অনুশীলন করেছি। আমরা অতিবাহিত করলাম জিহাদের মাস।

    ২য় হিজরীর এ মাসেই অনুষ্ঠিত হয়েছিল ঐতিহাসিক ফুরকান তথা হক ও বাতিলের পার্থক্য নিরূপণ কারী বদর যুদ্ধ। আমরা অতিবাহিত করলাম রহমতের মাস, বরকতের মাস, মাগফিরাতের মাস ও জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তির মাস (উল্লেখ্য উক্ত বিষয়গুলি একমাত্র রমজানের জন্যই নির্ধারিত নয় বরং সব সময়ের জন্য তবে এ মাসে এ গুলির গুরুত্ব ও ফজীলত বেশী)।

    যেহেতু আমরা রমযানের প্রতিষ্ঠান হতে মুত্তাকীর সনদ নিয়ে বের হলাম, তবে কি আমরা যথাযথ তাকওয়া অর্জন করতে পেরেছি?
    আমরা কি আত্মা ও প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদে বিজয় লাভ করতে পেরেছি, না অপসংস্কৃতি, কুসংস্কার, বদভ্যাস, যত অনৈসলামী কৃষ্ঠি-কালচার আমাদের মাঝে ছেয়ে বসেছ? আমরা কি রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও মুক্তি পাওয়ার মাধ্যম গুলির অনুশীলন করেছি? বহু জিজ্ঞাসা…এর উত্তর নিজেই তালাশ করি।

    রমযান হল ঈমান বৃদ্ধির এক মহাবিদ্যালয়। এটি অবশিষ্ট বছরের আত্মিক পাথেয় সংগ্রহের এক মহা কেন্দ্র। সুতরাং যে এই রমাযান হতে উপদেশ ও উপকার গ্রহণ করতে পারল না এবং স্বীয় জীবনকে পরিবর্তন করতে পারল না তবে কখন?
    আসুন আমরা এই মহাবিদ্যালয় হতে আমাদের আমল, আখলাক চরিত্র, অভ্যাস ও ব্যবহারকে ইসলামী শরীয়ত সম্মত করি। আল্লাহ তায়ালা বলেন :

    إِنَّ اللّهَ لاَ يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّى يُغَيِّرُواْ مَا بِأَنْفُسِهِمْ
    “আল্লাহ কোন জাতির অবস্থান পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা তাদের নিজেদের অবস্থান নিজে পরিবর্তন না করে।”

    আর রাদ: ১১

    রমাযান কেন্দ্রিক মানুষের প্রকারভেদ:

    ১) রমাযানের পূর্বেও তারা আল্লাহর অনুগত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করত। রমাযান মাসের আগমনে এর ফজীলত ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে তারা আরও তৎপর হয়। তাঁদের প্রতি আমাদের আহ্বান তাঁরা যেন রমাযানের পরেও আল্লাহর আনুগত্য ও অনুসরণে এবং ইবাদত- বন্দেগীতে সদা অটল থাকেন।

    ২) রমাযানের পূর্বে তারা ছিল গাফেল-উদাসীন। রমাযান মাসের আগমনে এর ফজীলত ও গুরুত্ব উপলব্ধি করে তারা তৎপর হয়। এদেরকে আমরা আহ্বান জনাই , তারা যেন রমাযানের পর ইবাদত-বন্দেগী হতে পুনরায় গাফেল না হয়ে আজীবন ইবাদতের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে।

    ৩) রমাযান আগমন করল ও বিদায় হয়ে গেল তাদের কোন উপলব্ধি ও পরিবর্তন ঘটল না। তাদেরকে আমরা উদাত্ত আহ্বান জানাই, আল্লাহর নিকট তওবা করতে ও তাঁর আনুগত্যের পথে ফিরে আসতে।

    প্রিয় পাঠক । আপনি যদি রমযান হতে যারা উপকৃত তাদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে মুত্তাকী পরেহেযগারদের গুণে গুণান্বিত হন এবং যথাযথ রোযা পালন করে থাকেন। প্রকৃত ভাবেই ইবাদত বন্দেগী করে থাকেন এবং কু প্রবৃত্তিকে যথাযথ দমন করে থাকেন তবে আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করুন এবং তার উপর মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত থাকার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করুন।

    পক্ষান্তরে আপনাকে সতর্ক থাকার আহবান জানাই, আপনি ঐ ব্যক্তির অন্তর্ভুক্ত হবেন না যেমন এক বুড়ি উত্তমরূপে চরকায় সূতা, কেটে সুন্দর একটি পোশাক তৈরি করল যার ফলে সবাই তার প্রশংসা করল ও মুগ্ধ হল এবং সে নিজেও আনন্দিত হল। হঠাৎ করে একদিন অকারণেই উক্ত পোশাকটি একটি একটি করে সুতা খুলে নষ্ট করে ফেলল। অতএব মানুষ তাকে কি বলতে পারে?

    ঠিক অনুরূপ ঐ ব্যক্তির অবস্থা যে রমাযানোত্তর পুনরায় পাপাচার ও অন্যায়ে ফিরে আসে এবং সৎ আমল পরিত্যাগ করে এরা কতইনা নিকৃষ্ট যারা আল্লাহকে শুধুমাত্র রমাযানেই স্মরণ করে।

    এ মর্মে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    وَلاَ تَكُونُواْ كَالَّتِي نَقَضَتْ غَزْلَهَا مِن بَعْدِ قُوَّةٍ أَنكَاثًا
    ” তোমরা সেই নারীর মত হয়ো না , যে তার সূতা মজবুত করে পাকাবার পর তার পাক খুলে নষ্ট করে দেয়।”

    সূরা নাহাল: ৯২

    রমযানের পর অঙ্গিকার ভঙ্গ করে পাপাচারে ফিরে যাওয়ার লক্ষণ:

    রমযান মাসে সৎ আমলের যথাযথ অনুশীলন করা সত্ত্বেও কৃত অঙ্গিকার ভঙ্গ করার বহু লক্ষণ রয়েছে দৃষ্টান্ত স্বরূপ:

    (১) ঈদের দিনই জামাতের সাথে নামায আদায় না করা বা পূর্ণ পাঁচ ওয়াক্ত আদায় না করা।


    (২) ঈদের খুশীর নামে গান বাজনা, ছায়াছবি, ডিশ ও ভিডিও তে অবৈধ অনুষ্ঠানমালা দর্শনে মেতে ওঠা এবং ইন্টারনেটের মাধ্যমে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতার চর্চা।


    (৩) ঈদ উপলক্ষে বেপর্দা ও অবাধে নারীদের বিচরণ করা এবং পার্ক, বিভিন্ন অনুষ্ঠান কেন্দ্র ও খেল-তামাশার স্থানে নারী পুরুষের অবাধ সংমিশ্রণ।

    তবে এ গুলিই কি রমাযানের আমলগুলি কবুলের আলামত? না বরং এ সব হচ্ছে তার আমল কবুল না হওয়ার আলামত। কেননা প্রকৃত রোযাদার ঈদের দিন আল্লাহর প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা আদায় করে। খুশি হবে যে সে দীর্ঘ একমাস আল্লাহর হুকুম পালন করে আজ অনেক কিছু হতে মুক্ত। এবং সাথে সাথে সে ভয়ে ভিত থাকবে যে আল্লাহ আমার আমল নাও কবুল করতে পারেন। এ জন্য সে তাঁর নিকট প্রার্থনা করবে যাতে উক্ত আমল কবুল হয়। যেমন আমাদের মহান উত্তর সূরীগণ ছয়মাস পর্যন্ত রমযানের আমলগুলি কবুল হওয়ার জন্য আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করতেন।

    সুতরাং রমযানের আমল কবুল হওয়ার আলামত হল, বান্দা নিজেকে তার পূর্বের অবস্থার চেয়ে উত্তমাবস্থায় পৌঁছাবে এবং সৎ কর্মে পূর্বের চেয়ে অগ্রগামী হবে। অতএব আমরা শুধু মৌসুম ভিত্তিক এবাদত করেই বিরত থাকব না বরং আমরা সব সময়ের জন্য এবাদত জারি রাখব।

    কেননা আল্লাহ বলেন:

    وَاعْبُدْ رَبَّكَ حَتَّى يَأْتِيَكَ الْيَقِينُ
    ” তুমি মৃত্যু অবধি তোমার রবের এবাদত করতে থাক।”

    সুরা হিজর: ৯৯

    রমযানের পর আমলের ধারাবাহিকতা রক্ষা:

    রমযান অতিবাহিত হয়ে গেলেও মুমিনদের জন্য মৃত্যু পর্যন্ত আমলের ধারাবাহিকতা ছিন্ন হবে না:

    প্রথমত:

    রমযানের রোযা শেষ হলেও অবশিষ্ট মাসগুলিতে বহু নফল রোযা রয়েছে। যেমন,
    (১) শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা: নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    “যে ব্যক্তি রমযান মাসের রোযা রাখার পর শাওয়াল মাসের ছয়টি রোযা মিলিয়ে নিলো তার পুরা বছরের রোযা রাখার সমতুল্য হল।”

    মুসলিম

    কেননা সাওবান (রা.) হতে মারফু হিসেবে বর্ণিত হয়েছে, রমযান মাসের রোযা দশ মাসের তুল্য আর শাওয়ালের ছয় দিনের রোযা দুই মাসের সমান, এভাবেই পূর্ণ বছরের রোযা। (ইবনে খুজাইমা ও ইবনে হিব্বান আর ইবনে জারুল্লাহর রিসালাহ রমাযান হতে গৃহীত)
    আর প্রত্যেক আমলের নেকি দশগুণ বৃদ্ধি পায়, অতএব রমাযান মাসের রোযা তিন শত দিনের সমান এবং শাওয়ালের ছয়টি রোযা ৬০দিনের সমান অতএব সর্বমোট ৩৬০দিন আর হিজরী বছর হয় ৩৬০ দিনে।

    (২) প্রতি চন্দ্রমাসের তিন দিন রোযা রাখাঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “প্রতি মাসের তিন দিন এবং এক রমযান হতে অন্য রমযানের রোযা পূর্ণ বছর রোযা রাখার সমতুল্য। (মুসলিম) আর এ রোযা প্রতিমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ রাখা উত্তম যা অন্য হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত।

    (৩) প্রতি সপ্তাহে বৃহস্পতিবার ও সোমবার রোযা রাখা:

    নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: সোম ও বৃহস্পতিবার আমলনামা আল্লাহর নিকট পেশ হয়, সুতরাং আমি পছন্দ করি আমার আমল পেশ হচ্ছে এমতাবস্থায় আমি রোযা আছি”।

    তিরমিযী:৭৪৭, তিনি হাদিসটি হাসান বলেছেন

    (৪) আরাফা দিনের রোযা:

    নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম))কে আরাফা দিনের রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “এই রোযা বিগত বছর ও আগামী বছরের (ছোট গুনাহের) কাফফারা হয়।”

    মুসলিম

    (৫) আশুরার রোযা:

    নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে আশুরার রোযা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: “বিগত বছরের (ছোট) গুনাহের কাফফারা।”

    মুসলিম

    (৬) শাবান মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা: শবে বরাত ধারণা করে ১৫ই শাবানকে নির্ধারণ না করে এ মাসে বেশি বেশি রোযা রাখা যায়। কেননা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) রমযানের পর এ মাসেই বেশি রোযা রাখতেন। ১৫ই শাবান খাস করেন নি।

    দ্বিতীয়ত:

    রমাযানের তারাবীর নামায শেষ, তবে এই নামায তথা কিয়ামুল লাইল তাহাজ্জুদ হিসেবে সারা বছর পড়া যায়। নবী (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন: ফরজ ব্যতীত সর্বোত্তম নামায হল রাত্রির নামায- তাহাজ্জুদ। (মুসলিম)

    তৃতীয়ত:

    ফরজ নামায সংশ্লিষ্ট ১২ রাকাত সুন্নাতে মুয়াকাদাহ আদায়: জহরের পূর্বে চার রাকাত পরে দুই রাকাত, মাগরিবের পর দুই রাকাত, এশার পর দুই রাকাত এবং ফজরের পূর্বের দুই রাকাত। নবী (সাল্লাল্লাহু আলই হি ওয়া সাল্লাম) বলেন: “যে ব্যক্তি ফরয ছাড়াও ১২ রাকাত দিবা রাত্রিতে সুন্নত আদায় করল আল্লাহ তার জন্য জান্নাতে একটি প্রাসাদ নির্মাণ করবেন।” (মুসলিম)

    চতুর্থত:

    নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ইরশাদ কৃত নামাযের পরে ও সকাল সন্ধ্যার দোয়া জিকির।

    পঞ্চমত:

    সাদাকাতুল ফিতর শেষ হলেও সারা বছর সাধারণ দান-সদাকা করা যায়।

    ষষ্ঠত:

    কুরআন তেলাওয়াতের ফযিলত সব সময়ের জন্য; শুধু রমযানের জন্য নয়। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “যারা কোরআন হতে একটি অক্ষর পড়ল তার জন্য একটি নেকি, আর একটি নেকি দশগুণে বর্ধিত হয়। আমি বলি না যে “আলিফ লাম মিম” মাত্র একটি অক্ষর বরং আলিফ একটি অক্ষর, লাম একটি অক্ষর, ও মিম একটি অক্ষর।” (তিরমিযী:২৯১০, তিনি হাদিসটি সহীহ হাসান বলেছেন)

    তিনি আরও বলেছেন:

    “তোমরা কোরআন পাঠকর, কেননা তা কিয়ামতের দিন পাঠকারীদের জন্য শাফায়াতকারী হিসেবে আসবে।”

    মুসলিম

    সম্মানিত পাঠক, এ ভাবে সব সময়ের জন্য সৎ আমলের দ্বার উন্মুক্ত রয়েছে। অতএব আপনি যথাযথ প্রচেষ্টা জারি রাখুন, অলসতা বর্জন করুন। যদিও নফল সুন্নাতে আপনার দুর্বলতা থাকে কিন্তু কোন ক্রমেই যেন ফরজ আদায়ে ত্রুটি না হয়। যেমন পাঁচ ওয়াক্ত নামায জামাতের সাথে আদায় করা ইত্যাদি।

    আরও পড়ুনঃ শাওয়ালের ছয়টি সাওম – ফজিলত ও নিয়মাবলী

    পরিশেষে, আল্লাহর নিকট প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে সহীহ আকীদাও সৎ আমলের উপর সুদৃঢ় রাখেন, আমাদের আমল কবুল করেন এবং এমতাবস্থায় মৃত্যু দান করেন। আমীন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • তাসবীহ দানা বা কাউন্টার মেশিনে তাসবিহ পাঠ

    তাসবীহ দানা বা কাউন্টার মেশিনে তাসবিহ পাঠ

    প্রশ্ন: তাসবীহ দানা এবং কাউন্টার মেশিন দিয়ে তাসবিহ পাঠ করা সুন্নাত না বিদায়াত? আশা করি, দলিল ভিত্তিক উত্তর প্রদান করে সাহায্য করবেন৷

    উত্তরঃ হাতের আঙ্গুল দিয়ে তাসবীহ গণনা করা উত্তম। কেননা, এই আঙ্গুলগুলো কিয়ামতের দিন সাক্ষ্য দিবে। তবে কারও আঙ্গুলে সমস্যা থাকলে কিংবা অসুস্থ ও বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে সংখ্যা মনে রাখতে না পারলে তখন তাসবীহ দানা বা ডিজিটাল কাউন্টার মেশিন ব্যবহার করতে দোষ নেই ইনশাআল্লাহ।

    শাইখ ইবনে উছাইমীন রহ.

    তাসবীহ দানা সম্পর্কে

    প্রশ্ন: আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ গণনা করা উত্তম না তাসবীহ দানা দ্বারা?

    উত্তরঃ তাসবীহ দানা ব্যবহার করা জায়েয। তবে উত্তম হল, হাতের আঙ্গুল ও আঙ্গুলের কর ব্যবহার করা। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    اعْقِدْنَ بِالْأَنَامِلِ فَإِنَّهُنَّ مَسْئُولَاتٌ مُسْتَنْطَقَاتٌ

    “*আঙ্গুল দ্বারা তাসবীহ গণনা কর। কেননা (কিয়ামত দিবসে) এগুলো জিজ্ঞাসিত হবে এবং এগুলোকে কথা বলানো হবে।”

    (আহমাদ। আবু দাউদ, অধ্যায়ঃ ছালাত, অনুচ্ছেদঃ কংকর দ্বারা তাসবীহ গণনা করা। তিরমিযী, অধ্যায়ঃ দু’আ, অনুচ্ছেদঃ তাসবীহ্ পাঠ করার ফযীলত।)

    তাছাড়া তাসবীহ্ ছড়া হাতে নিয়ে থাকলে রিয়া বা লোক দেখানো ভাবের উদ্রেক হতে পারে। আর যারা তসবীহ্ ছড়া ব্যবহার করে সাধারণতঃ তাদের অন্তর উপস্থিত থাকে না। এদিক ওদিকে তাকায়। সুতরাং আঙ্গুল ব্যবহার করাই উত্তম ও সুন্নাত সম্মত। [দ্র: ফতোয়া আরকানুল ইসলাম ২৬০ নং প্রশ্নের উত্তর]

    আরও পড়ুনঃ পানাহারের সময় সালাম

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • পানাহারের সময় সালাম

    পানাহারের সময় সালাম

    প্রশ্নঃ ইসলামে পানাহারের সময় সালাম দেয়া বা সালামের উত্তর দেয়া কি নিষেধ?

    উত্তরঃ ইসলামে পানাহারের সময় সালাম আদান-প্রদানের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং হাদিসে সালাম দেয়ার ব্যাপারে যত বক্তব্য এসেছে সেগুলো খাদ্য গ্রহণের সময়কেও শামিল করে।

    পানাহারের সময় সালাম দেয়া বা উত্তর দেয়া যাবে না মর্মে আমাদের সমাজে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে এবং কোন কোন ফিকহের কিতাবে লেখাও হয়েছে তার কোন দলিল বা ভিত্তি নাই। আর দলিল বিহীন ভাবে কোন কিছুকে হারাম বা মাকরুহ বলার সুযোগ নেই।

    তাছাড়া একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য গ্রহণের সময় দুনিয়াবি কথা বলেছেন। সুতরাং পানাহার রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বা এই অবস্থায় সালামের উত্তর প্রদান বৈধ হওয়র বিষয়টি আরও অধিকতর যুক্তিযোগ্য।

    পানাহারের সময় সালাম বিষয়ে ফকিহদের মত

    সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি এবং বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, কেউ যদি এমন লোকদের পাশ দিয়ে গমন করে যারা খাদ্য গ্রহণ করছে তাদেরকে কি সালাম দিবে? কারণ আমরা শুনেছি, এটা জায়েজ নাই।

    তিনি উত্তরে বলেন,

    نعم يسلم عليهم، والذي قال: لا يسلم غلط، يسلم عليهم، إذا جاء لقوم وهم يأكلون أو يقرءون أو يتحدثون يسلم عليهم، يقول: السلام عليكم، أو السلام عليكم ورحمة الله، أو ورحمة الله وبركاته، ولا يكره ذلك بل يشرع، وهم يردون عليه

    “হ্যাঁ, তাদেরকে সালাম দিবে। যে বলেছে সালাম দিবেন না সে ভুল বলেছে। যখন কেউ এমন লোকদের নিকট আগমন করবে যারা খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা ও কথাবার্তায় লিপ্ত আছে তখন তাদেরকে সালাম দেবে। বলবে, আসালামু আলাইকুম অথবা আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ অথবা আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।

    এটা মাকরুহ নয় বরং শরিয়ত সম্মত। আর যাদেরকে সালাম দেওয়া হবে তারাও উত্তর দিবে।
    তবে মুখের মধ্যে খাবারের লোকমা থাকলে তৎক্ষণাৎ উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং তা গিলে খাওয়ার পর উত্তর দিলেই যথেষ্ট হবে।”

    Binbaz.Org.sa

    ইমাম নববী বলেন,

    إذا كان يأكلُ واللقمة في فمه، فإن سلَّم عليه في هذه الأحوال لم يستحقّ جواباً

    “খাদ্য গ্রহণের সময় মুখে লোকমা থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেয়ার হক রাখে না।”

    (কিতাবুল আযকার)। ইমাম শাওকানি এ কথাকে সমর্থন করেছেন।

    তবে মুখের খাদ্যদ্রব্য গিলার পর সালামের জবাব দিতে হবে। মুখে লোকমা না থাকলে সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

    আরও পড়ুনঃ নন মাহরাম পুরুষ-নারী সালাম বিনময় করার বিধান

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • মহিলাদের সিজদা এর সঠিক পদ্ধতি

    মহিলাদের সিজদা এর সঠিক পদ্ধতি

    প্রশ্নঃ আমাদের সমাজে নারী এবং পুরুষ দুই ভাবে সিজদা করে। মেয়েরা দুই হাত ও শরীর জমিনের সাথে লেপ্টিয়ে সিজদা করেন, আর পুরুষরা লেপ্টে দেন না। জানতে চাচ্ছি নামাজ/সালাত এর মধ্যে মহিলারা কিভাবে সিজদা দিবে?

    উত্তরঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে মহিলারা শরীর লেপ্টিয়ে বিছিয়ে দেন জমিনে, দুই হাত মিলিয়ে দেন জমিনে যা স্পষ্ট হাদিস বিরোধী এবং তা পরিতাজ্য

    🌀 রাসুল (সাঃ) দুই হাত মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না। বরং তা জমিন থেকে উপরে (বুখারী, আবু দাউদ) এবং পেটের দুই পাশ থেকে দুরে রাখতেন। (বুখারী, মুসলিম)

    🌀 হাটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর মাঝখানে এমন ফাঁকা থাকতে হয় যেন এই ফাকা দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা চলে যেতে পারে| (সহিহ মুসলিম)

    🌀 আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    اعتدلوا في السجود، ولا يبسط أحدكم ذراعيه انبساط الكلب.

    “তোমরা সেজদার মধ্যে স্থির হও, তোমাদের কেউ তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে রাখবে না”।

    বুখারি: (৮২২), মুসলিম: (৪৯৩)

    এ বিধানগুলো নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

    আরও পড়ুনঃ হায়েজ-নেফাস (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।