প্রশ্নঃ কী করলে নিজের দোষত্রুটি নিজের কাছেই ধরা পড়বে?
উত্তরঃ মানুষের দোষত্রুটি নিয়ে সমালোচনা করা এবং অন্যকে সংশোধন করার পূর্বে নিজের দোষত্রুটি সংশোধন করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। অথচ অধিকাংশ মানুষ নিজে ভ্রান্তির মধ্যে ডুবে থাকলেও অন্যকে সংশোধন করাতে বেশি উদগ্রীব! এটি কোনো ঈমানদারের নিকট কাম্য নয়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
أَتَأْمُرُونَ النَّاسَ بِالْبِرِّ وَتَنسَوْنَ أَنفُسَكُمْ وَأَنتُمْ تَتْلُونَ الْكِتَابَ ۚ أَفَلَا تَعْقِلُونَ
“তোমরা কি মানুষকে সৎকর্মের নির্দেশ দাও এবং নিজেরা নিজেদেরকে ভুলে যাও, অথচ তোমরা কিতাব পাঠ কর? তবুও কি তোমরা চিন্তা কর না?”
সূরা বাকারা: ৪৪
আল্লাহ তাআলা আরও বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا عَلَيْكُمْ أَنفُسَكُمْ ۖ لَا يَضُرُّكُم مَّن ضَلَّ إِذَا اهْتَدَيْتُمْ
হে মুমিনগণ, তোমরা নিজেদের চিন্তা কর। তোমরা যখন সৎপথে রয়েছ, তখন কেউ পথভ্রান্ত হলে তাতে তোমাদের কোন ক্ষতি নাই।”
সূরা মায়িদা: ১০৫
সুতরাং সংশোধনীটা শুরু করুন নিজেকে দিয়ে। আমি, আপনি সবাই যদি নিজেকে পরিবর্তন করি তাহলে পাল্টে যাবে সমাজ ব্যবস্থা।
যেভাবে নিজের দোষত্রুটি খুঁজে পাবো
সাধারণতঃ আমরা অন্যের দোষত্রুটি সহজে দেখতে পেলেও নিজের দোষগুলো দেখতে পাই না! অথচ সামান্য একটু চেষ্টায় তা সম্ভব। আর সে চেষ্টাটার নাম হল, আত্ম সমালোচনা।
কেউ যদি আত্ম সমালোচনা করে অর্থাৎ নির্জনে-একান্ত একাকীত্বে নিজের দায়িত্ব-কর্তব্য, করণীয়-বর্জনীয়, সফলতা-ব্যর্থতা এবং দোষত্রুটি নিয়ে চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব-নিকাশ করে তাহলে তার কাছে তার নিজের ত্রুটি-বিচ্যুতি ধরা পড়বে।
আল্লাহ তাআলা প্রতিটি মানুষকে বিবেক নামক এটি আয়না দিয়েছেন। মানুষ যদি সে আয়নার সামনে নিজেকে দাঁড় করায় তাহলে তার মধ্যে কোথায় কী সমস্যা আছে তা সে পরিষ্কার দেখতে পায়।
আল্লাহ তাআলা বলেন:
بَلِ الْإِنسَانُ عَلَىٰ نَفْسِهِ بَصِيرَةٌ
বরং মানুষ নিজেই নিজের ব্যাপারে খুব ভালো জানে।
সূরা কিয়ামা: ১৪
তাই তো উমর ইবনুল খাত্তাব রা. বলতেন:
حَاسِبُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُحَاسَبُوا وَزِنُوا أَنْفُسَكُمْ قَبْلَ أَنْ تُوزَنُوا فَإِنَّهُ أَهْوَنُ عَلَيْكُمْ فِي الْحِسَابِ غَدًا أَنْ تُحَاسِبُوا أَنْفُسَكُمُ الْيَوْمَ ، وَتَزَيَّنُوا لِلْعَرْضِ الأَكْبَرِ ، يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
”তোমরা নিজরা নিজেদের হিসাব নাও (পরকালে) হিসেবের সম্মুখীন হওয়ার পূর্বে এবং তোমরা নিজেরা নিজেদের মেপে নাও (পরকালে) তোমাদেরকে মাপার পূর্বে। কেননা, আজকের তোমার এই নিজে নিজে হিসাব-নিকাশ করাটা আগামী কালকে হিসাব দেয়ার চেয়ে অনেক সহজ। আর তোমরা বড় পরীক্ষা দেয়ার সম্মুখীন হওয়ার জন্য প্রস্তুত হও।
(আল্লাহ বলেন):
يَوْمَئِذٍ تُعْرَضُونَ لا تَخْفَى مِنْكُمْ خَافِيَةٌ
“সেদিন তোমাদেরকে (আল্লাহর সামনে হিসাব-নিকাশ ও প্রতিদান প্রদানের জন্য) পেশ করা হবে, তখন তোমাদের কোনকিছুই গোপন থাকবে না”
সূরা আল-হাক্কাহ, আয়াত নং ১৮ (দ্রষ্টব্য : মুহাসাবাতুন নাফস-ইবনু আবিদ দুনিয়া, ২৯ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ২/ আয-যুহুদ লিল ইমাম আহমাদ, ১২০ পৃষ্ঠা/ আবু নাঈম-হিলইয়া, ১ম খণ্ড, ৫২ পৃষ্ঠা/ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবাহ, ১৩ খণ্ড, ২৭০ পৃষ্ঠা/ মুআত্তা ইমাম মালিক, ২য় খণ্ড, ১১১ পৃষ্ঠা প্রভৃতি)
আরবিতে একটা প্রবাদ আছে:
أبصر الناس من نظر إلى عيوبه
সবচেয়ে দূরদৃষ্টি সম্পন্ন বা বিচক্ষণ মানুষ হল ঐ ব্যক্তি যে নিজের দোষ-ত্রুটি দেখে।
তাই আমাদের কর্তব্য, নিজেদের দোষগুলো অনুসন্ধান করা এবং মৃত্যু দূত আমাদের দরজায় করাঘাত করার পূর্বে তওবা করে নিজেদেরকে সংশোধন করা।
সত্যি যদি প্রত্যেকেই নিজেদের ভুল-ত্রুটি, অজ্ঞতা ও অন্যায়-অপকর্মগুলো অনুসন্ধান ও সংশোধনে ব্যস্ত থাকতাম তাহলে আমাদের জীবনটা আরও সুন্দর হত, দুনিয়ায় সাফল্য ও আখিরাতে মুক্তি লাভ করা সহজ হত এবং মানুষের দোষ ধরা, সমালোচনা করা এবং অন্যের পেছনে লেগে থাকার সময় পেতাম না।
কাউকে কাফের বলার নীতিমালা (ভিডিও)
আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।