April 19, 2024
#মাসআলা

সেনাবাহিনী-মার্শাল আর্ট ইত্যাদিতে মাথা নত করে সম্মানের বিধান

প্রশ্নঃ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সম্মানার্থে মাথা নত করার বিধান কি? সেনাবাহিনীতে (কবর বা মৃতের কফিনে) বা বিভিন্ন আত্মরক্ষা মূলক ক্রীড়া প্রশিক্ষণ-যেমন: জুডো, কারাতে, কুংফু ইত্যাদিতে প্রশিক্ষককে সম্মান প্রদর্শনার্থে মাথা/শরীর ঝুঁকিয়ে বাউ (Bow) করতে হয়। এ ব্যাপারে ইসলামের বিধান কি?

উত্তরঃ ইসলামে অভিবাদনের নিয়ম হল, সালাম দেয়া এবং হাতে হাত মিলিয়ে মুসাফাহা করা আর দূর-দূরান্ত থেকে কেউ সফর করে আসলে বা দীর্ঘ দিন পর সাক্ষাৎ হলে গলায় গলা মিলিয়ে/বুকে বুক মিলিয়ে মুয়ানাকা করা।

মাথা নত করে সম্মান দেখানো হারামঃ

কিন্তু মাথা ঝুঁকিয়ে বা শরীর নুইয়ে সম্মান প্রদর্শন করা ইসলামের রীতি নয়। কোন রাজা-বাদশাহ, মন্ত্রী, নেতা-নেত্রী বা সম্মানিত ব্যক্তি, শিক্ষক, প্রশিক্ষক, কোন সম্মানিত ব্যক্তির কবর বা কফিন ইত্যাদি যে কারো উদ্দেশ্যে এমনটি করা হারাম

এটি মূলত: অমুসলিমদের কাজ। দুর্ভাগ্য বশত: অমুসলিমদের অন্ধ অনুকরণে তা মুসলিমদের মধ্যেও প্রবেশ করেছে। সুতরাং তা নি:সন্দেহে হারাম।

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَنْ تَشَبَّهَ بِقَوْمٍ فَهُوَ مِنْهُمْ”

যে ব্যক্তি বিজাতির সাদৃশ্য অবলম্বন করে, সে তাদের দলভুক্ত হিসেবে গণ্য হবে।”

সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: পোশাক-পরিচ্ছেদ হা/৪০৩১-হাসান সহিহ

কারও সম্মানে মাথা নত করা বা শরীর ঝুঁকানোর নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

عَن أنس قَالَ: قَالَ رَجُلٌ: يَا رَسُولَ اللَّهِ الرَّجُلُ مِنَّا يَلْقَى أَخَاهُ أَوْ صَدِيقَهُ أَيَنْحَنِي لَهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَلْتَزِمُهُ وَيُقَبِّلُهُ؟ قَالَ: «لَا» . قَالَ: أَفَيَأْخُذُ بِيَدِهِ وَيُصَافِحُهُ؟ قَالَ: «نَعَمْ»

আনাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, জনৈক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল: হে আল্লাহর রসূল, আমাদের মধ্য হতে কেউ যদি তাঁর কোন মুসলিম ভাইয়ের কিংবা কোন বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে, তবে কি সে (তার সম্মানার্থে) মাথা নত করবে?তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: না।লোকটি বলল: তবে কি সে আলিঙ্গন করবে এবং তাকে চুম্বন করবে?তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: না।লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল, তাহলে কি তার হাত ধরবে এবং পরস্পর করমর্দন করবে?তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন: হ্যাঁ।

[তিরমিযী ২৭২৮, ইবনে মাজাহ ৩৭০২, আহমদ ১৩০৪৪-সনদ হাসান]

অনুরূপভাবে সামরিক বাহিনীতে কোন সম্মানিত ব্যক্তির কফিন বা কবরে অথবা বিভিন্ন ক্রীড়া ও আত্মরক্ষা মূলক প্রশিক্ষণ-যেমন: জুডো, কারাতে, কুংফু ইত্যাদিতে প্রশিক্ষক বা পরস্পরকে বাউ করা (জাপানী স্টাইলে মাথা নিচু করে অভিবাদন জানানো) করাও হারাম।

এটি কি শিরকও হতে পারেঃ

যত বেশি মাথা ঝুঁকানো হবে ততই বেশি হারাম হবে। মাথা ঝুঁকাতে ঝুঁকাতে যদি রুকু পর্যায়ে যায় বা সেজদা করে তাহলে তার ভয়াবহতা আরও বেশি। তখন তা শিরকে পরিণত হবে। আল্লাহ ক্ষমা করুন।

সৌদি আরবের ফতোয়া বোর্ডের অভিমতঃ

সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয়া বোর্ডকে জিজ্ঞাসা করা হয়ঃ

“আমরা আমেরিকার একটি কারাতে ক্লাবের সাথে জড়িত হয়েছি। প্রশিক্ষক বলেছেন, তিনি যখন আপনার দিকে শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন দিবে তখন আপনাকেও অবশ্যই শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন দিতে হবে। কিন্তু আমরা তা করতে অস্বীকৃতি জানালাম এবং আমাদের ধর্মীয় বিষয়টি তাকে বুঝলাম। এতে তিনি রাজি হলেন বটে কিন্তু বললেন, আমাকে কেবল মাথাটা ঝুঁকাতে হবে। কারণ তিনি প্রথমে আপনার উদ্দেশ্যে শরীর ঝুঁকিয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। সুতরাং আপনাকে অবশ্যই একইভাবে তার অভিবাদনের জবাব দিতে হবে।

এ সম্পর্কে জনাবের মতামত কি?তারা জবাবে বলেছেন,

لا يجوز الانحناء تحيةً للمسلم ولا للكافر ، لا بالجزء الأعلى من البدن ولا بالرأس؛ لأن الانحناء تحية عبادة، والعبادة لا تكون إلا لله وحده.وبالله التوفيق. وصلى الله على نبينا محمد، وآله وصحبه وسلم” انتهى .الشيخ عبد العزيز بن عبد الله بن باز ، الشيخ عبد الرزاق عفيفي ، الشيخ عبد الله بن غديان ، الشيخ عبد الله بن قعود .”فتاوى اللجنة الدائمة” (1/171)

“কোনও মুসলিম বা কাফের কাউকেই ঝুঁকে অভিবাদন দেয়া জায়েজ নয়। শরীরের উপরিভাগও নয়, মাথাও নয়। কারণ ঝুঁকা একটি ইবাদত। আর ইবাদত আল্লাহ ছাড়া আর কারও জন্য হবে না।”

ফাতাওয়া লাজনাহ দায়েমাহ: ১/১৭১)

আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে অমুসলিমদের সংস্কৃতি অনুসরণ থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

আরও পড়ুনঃ সুযোগ থাকা সত্বেও দ্বীন না মানা ব্যক্তির বিধান

উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।