কুরআন হাতে নিয়ে কসম করা কি জায়েয?

প্রশ্নঃ কুরআন হাতে নিয়ে কসম করা কি জায়েজ হবে? অনেক সময় দেখা যায় অনেকে নিজেকে সত্য প্রমান করতে কুরআন হাতে নিয়ে কসম করে। কিভাবে কসম করা সেটা জায়েজ হবে।

উত্তরঃ কসম করা বা কসম খাওয়ার সঠিক নিয়ম হল, কেবল আল্লাহর নাম বা তার গুণের কসম খাওয়া। যেমন এভাবে বলা, আল্লাহর নামে কসম করছি.., বা আল্লাহর ইজ্জতের কসম করছি…।
আল্লাহর নামে কসম খাওয়ার চেয়ে বড় জিনিস আর কী হতে পারে?!

কুরআন হাতে নিয়ে কসম করা বিদআতঃ

কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়া সাহাবীদের আমলে বা কুরআন সংকলিত হওয়ার পরও সাহাবী-তাবেঈদের মধ্যে প্রচলিত ছিল না। কুরতুবি রাহিমাহুল্লাহ বলেন:

“ইবনুল আরাবি বলেছেন, কুরআনুল কারিমের উপর হাত রেখে কসম করা বিদআত। কোনো সাহাবী এরূপ করেননি”।

সুতরাং এ বিদআতী পন্থায় কাউকে কসম করতে বলা বর্জনীয়।

কুরআন হাতে নিয়ে কসম করতে বাধ্য হলেঃ

কোন ব্যক্তি যদি মাসআলাটি জানার পরও কাউকে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খাওয়ার নির্দেশে দেয় তাহলে সে গুনাহগার হবে। কিন্তু যাকে কসম খেতে বলা হবে সে নিরাপরাধ হলে কসম খেতে পারে বাধ্য হয়ে। কেননা অন্যথায় সে অন্যায় সন্দেহের শিকার হবে।

সুতরাং এ পরিস্থিতিতে সে নিজেকে দোষমুক্ত করার উদ্দেশ্যে কুরআন হাতে নিয়ে কসম খেতে পারে। এতে তার গুনাহ হবে না। কিন্তু যে আদেশ করল সেগুনাহগার হবে।

পদ্ধতি: এ ক্ষেত্রে সে পবিত্র অবস্থায় কুরআন হাতে নিয়ে আল্লাহর নামে কসম খাবে।

অনুরূপভাবে স্বয়ং কুরআনের কসম খাওয়াও জায়েয আছে এই নিয়তে যে, এটি আল্লাহর কালাম বা বাণী। আর আল্লাহর বাণী আল্লাহর সিফাত (গুণ) এর অন্তর্ভূক্ত। ইসলামী শরিয়াতে আল্লাহর সিফাত বা গুণের কসম খাওয়া জায়েয। কারণ, আল্লাহর গুণ আল্লাহর সত্বারই অবিচ্ছেদ্য অংশ।

কিন্তু কেউ যদি কুরআন দ্বারা উদ্দেশ্য করে কাগজ, কালি ও আরবি বর্ণমালা, তাহলে এটা জায়েয নয়, বরং শিরকের অন্তর্ভুক্ত; কারণ, কাগজ-কালি ও আরবি বর্ণমালা মাখলুক তথা সৃষ্টিজীব। তাই কুরআনুল কারিমের কসম না করাই ভালো, কারণ তাতে যেরূপ আল্লাহর কালাম রয়েছে, অনুরূপ কাগজ-কালি এবং আরবি বর্ণমালাও রয়েছে।

আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে কসম খাওয়া শিরকঃ

মনে রাখা জরুরি, আল্লাহ ছাড়া অন্য কিছুর কসম খাওয়া শিরক।

ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

مَنْ حَلَفَ بِغَيْرِ اللَّهِ فَقَدْ كَفَرَ أَوْ أَشْرَكَ

“যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত কারো নামে শপথ করল সে কুফরি করল, অথবা শিরক করল”।

ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন:

لأَنْ أَحْلِفَ بِاللَّهِ كَاذِبًا أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ أَنْ أَحْلِفَ بِغَيْرِهِ صَادِقًا

“গায়রুল্লাহর নামে সত্য কসম অপেক্ষা আল্লাহর নামে মিথ্যা কসম করব, এটা আমার নিকট অধিক প্রিয়”।

ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

لَا تَحْلِفُوا بِآبَائِكُمْ مَنْ حَلَفَ بِاللَّهِ فَلْيَصْدُقْ، وَمَنْ حُلِفَ لَهُ بِاللَّهِ فَلْيَرْضَ، وَمَنْ لَمْ يَرْضَ بِاللَّهِ فَلَيْسَ مِنَ اللَّهِ

“তোমরা তোমাদের পিতাদের নামে কসম কর না। যে আল্লাহর নামে কসম করে তার উচিত সত্য বলা, আর যার জন্য আল্লাহর নামে কসম করা হল তার উচিত সন্তুষ্টি প্রকাশ করা, আর যে আল্লাহর নামে সন্তুষ্টি প্রকাশ করল না, তার সাথে আল্লাহর সম্পর্ক নেই”।

নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরও বলেছেন:

((مَنْ كَانَ حَالِفًا فَلْيَحْلِفْ بِاللَّهِ أَوْ لِيَصْمُتْ)).

“যার কসম করতে হয়, সে যেন আল্লাহর নামে কসম করে, অথবা চুপ থাকে”।

আরও পড়ুনঃ নিয়াত কি, কিভাবে করে, বিধান কি?

উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা