প্রশ্নঃ আদিম যুগের মানুষরা কাপড় পড়তো না, আগুন জালাতে জানতো না, কথাও বলতে জানতো না, তারা ছিল অসভ্য ও বর্বর। কেন তারা এমন ছিল? আসলে এ কথাগুলো কি সঠিক?
উত্তরঃ “আদিম যুগের মানুষ আগুন জ্বালাতে জানতো না, কথা বলতে জানতো না, কাপড় পড়তো না, তারা ছিলো অসভ্য ও বর্বর…।” এগুলো ঐ সকল নাস্তিক ও ডারউইনবাদীদের কথা যারা মনে করে যে, মানুষ বানর থেকে এসেছে! যারা নবী-রাসূলকে বিশ্বাস করে না। আসমানি গ্রন্থকে বিশ্বাস করে না।
আদিম যুগের মানুষ সম্পর্কে ইসলামী মতঃ
প্রকৃতপক্ষে এ সবকথা তাদের কাল্পনিক মিথ্যাচার ছাড়া কিছু নয়। বরং সঠিক কথা হল, আল্লাহ তাআলা মানুষকে দুনিয়ার বুকে প্রেরণ করার পর তা যেদেরকে কোন পথ নির্দেশক ছাড়াই এমনি এমনি ছেড়ে দেন নি। বরং তিনি তাদের পরিচালনা, পথ নির্দেশ এবং শিক্ষা-দীক্ষার জন্য যুগে যুগে প্রায় এক লক্ষ চব্বিশ হাজার নবী-রাসূলদেরকে পাঠিয়েছে। আর নবী-রাসলূগণ আল্লাহর পক্ষ থেকে শিক্ষাপ্রাপ্ত। তারা ছিলেন সুসভ্য ও মানব জাতির শ্রেষ্ঠ শিক্ষক-এতে কোন সন্দেহ নাই।
সর্ব প্রথম মানব আদম (আঃ) যেমন ছিলেনঃ
আদম আলাইহি সালাম ছিলেন প্রথম মানুষ এবং প্রথম নবী। তিনি মানব জাতির পিতা। তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান-গরিমা ও সভ্যতা শিখেই দুনিয়ায় আগমন করেছেন।
✪ আদম আলাইহিস সালাম এর ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন:
“আর আল্লাহ তা’আলা শিখলেন আদমকে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীর নাম। তারপর সে সমস্ত বস্তু-সামগ্রীকে ফেরেশতাদের সামনে উপস্থাপন করলেন। অতঃপর বললেন, আমাকে তোমরা এগুলোর নাম বলে দাও, যদি তোমরা সত্য হয়ে থাক। তারা বলল, তুমি পবিত্র! আমরা কোন কিছুই জানি না, তবে তুমি যা আমাদিগকে শিখিয়েছ (সেগুলো ব্যতীত) নিশ্চয় তুমিই প্রকৃত জ্ঞানসম্পন্ন, প্রজ্ঞাবান। তিনি বললেন, হে আদম, ফেরেশতাদেরকে বলে দাও এসবের নাম। তারপর যখন তিনি বলে দিলেন সে সবের নাম..।”
সূরা বাক্বারা: ৩১, ৩২, ও ৩৩
✪ ইবনে আব্বাস রা., ইকরিমা প্রমূখ বর্ণনা করেন, আদম আলাইহিস সালাম দুনিয়ার বুকে আসার পর প্রায় সুদীর্ঘ এক হাজার বছর পর্যন্ত মানুষ একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করত। পৃথিবীতে শিরকের অস্তিত্ব ছিল না।
এক হাজার বছর পর সর্ব প্রথম নূহ আলাইহি সালাম এর উম্মতের মধ্যে পাঁচজন সৎ লোকদেরকে সম্মান করার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘণ করার কারণে তাদের মূর্তি তৈরি করা হয় এবং কাল পরিক্রমায় মানুষের মধ্যে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়া এবং শয়তানী প্ররোচনার ফলে অনেক মানুষ মূর্তি পূজা শুরু করে।
(সূরা নূহ এর ২৫ নং আয়াতের তাফসীর। দেখুন, তাফসীরে ত্ববারী, ইবনে কাসীর ইত্যাদি)
তাহলে আদম আলাইসিস সালাম এর দুনিয়াতে আগমণ করার পর যেখানে দীর্ঘ একহাজার বছর পর্যন্ত মানুষ কেবল আল্লাহর ইবাদত করতো সেখানে তাদের ব্যাপারে এ সব অসভ্যতা, বর্বরতা, কথা বলতে না পারা ইত্যাদি অভিযোগ কত বড় মিথ্যাচার ও কল্পনা প্রসূত তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
কুরআনে আগুনের ব্যবহারঃ
✪ কুরআনে আদম আঃ. এর দু ছেলে হাবিল-কাবিলের ঘটনার তাফসীরে আগুনের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে সূরা মায়েদাহ এর ২৮ নং আয়াতের তাফসীর পড়ুন।
✪ কুরআনের বিভিন্ন স্থানে আগুনের ব্যবহার আলোচিত হয়েছে। যেমন দেখুন, সূরা ত্বহা এর ১০, সূরা নামল এর ৭, সূরা ক্বাসাস এর ২৯ নং আয়াত।
✪ আরও দেখুন ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কর্তৃক মেহমানদেরকে গরুর বাছুর ভুনা করে আপ্যায়নের ঘটনা-সূরা হুদ এর ৬৯ নং আয়াত।
আদিম মানুষের কথা বলার জ্ঞানঃ
✪ ‘আদিম যুগের মানুষরা কথা বলতে জানতো না’-এর চেয়ে হাস্যকর ও উদ্ভট কথা আর কী হতে পারে?
আল্লাহ তাআলা সৃষ্টিগতভাবেই মানুষকে ভাষাজ্ঞান দান করেছেন। দেখুন, সুরা আর রহমান এর ২ ও ৩ নং আয়াত।
আদিম মানুষের লজ্জাস্থান ঢাকার জ্ঞানঃ
✪ জান্নাতে থাকা অবস্থায় লজ্জাস্থান ঢেকে রাখার বিষয়টি কুরআনে আদম ও হাওয়ার ঘটনায় উল্লেখিত আছে। দেখুন সূরা আরাফ এর ২৩ নং ও সূরা ত্বাহা এর ১২১ নং আয়াত।
তবে হয়ত আমাদের মত কাপড় ছিলো না; ছিলো অন্য কিছু যা দ্বারা তারা নিজেদের লজ্জা নিবারণ করতো।
এই সভ্যতা ও শালীনতা মানব সৃষ্টির সূচনা লগ্ন থেকেই বিদ্যমান। বরং উলঙ্গ চলাফেরা ও লজ্জাহীনতা আধুনিক যুগের অসভ্যতা।
মোটকথা, প্রত্যেক যুগেই মানুষ তৎকালীন সভ্যতা অনুযায়ী বিশ্বে রাজত্ব করেছে এবং বিশ্বকে পরিচালিত করেছে। তবে যুগের বিবর্তনে সভ্যতা, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চা এবং নব নব আবিষ্কার ও টেকনোলোজি দ্বারা বিশ্ব সমৃদ্ধ হয়েছে। বিকশিত হয়েছে মানব সভ্যতা। পৃথিবী ধ্বংসের পূর্ব পর্যন্ত এর ব্যাপ্তি বৃদ্ধি পেতেই থাকবে আশা করা যায়।
সুতরাং ডারউইন পন্থী ও আল্লাহর দুশমন নাস্তিকদের কাল্পনিক মিথ্যাচারে বিশ্বাস করা থেকে আমাদেরকে বাঁচতে হবে; বাঁচাতে হবে আমাদের সন্তানদেরকে। আল্লাহ হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানি
দাঈ, জুবাইল দওয়াহ সেন্টার, KSA