প্রশ্নঃ স্বামী যদি স্ত্রীর কাছে সুন্দর দেখানোর জন্যে দাড়ি শেভ করে তাহলে কি করা উচিৎ? দাড়ি রাখার বিধান কি?
উত্তরঃ দাড়ি রাখা ফরজ। দাড়ি কাটা, ছাটা, মুণ্ডন ও ফ্যাশন করা হারাম ও কবিরা গুনাহ। সুতরাং স্ত্রীকে খুশি করার জন্য দাড়ি কাটা বৈধ নয়।
দাড়ি রাখার বিষয়ে নিম্নে কয়েকটি হাদিস পেশ করা হলঃ
● আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা. বলেন,
ﺇﻧﻪ ﺃﻣﺮ ﺑﺈﺣﻔﺎﺀ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺇﻋﻔﺎﺀ ﺍﻟﻠﺤﻴﺔ
সহীহ মুসলিম ১/১২৯
“আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মোচ কাটার ও দাড়ি লম্বা করার আদেশ করেছেন।’
● বিভিন্ন হাদিসে আদেশের শব্দগুলোও বর্ণিত হয়েছে। যেমনঃ
ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ، ﻭﻓﺮﻭﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ ﻭﺍﺣﻔﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫
“মুশরিকদের বিরোধিতা কর। দাড়ি বাড়াও ও মোচ কাট।”
● রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ
ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺸﺮﻛﻴﻦ، ﻭﺍﺣﻔﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺃﻭﻓﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ
ইবনে ওমর রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯
“মুশরিকদের বিরোধিতা কর এবং মোচ কাট ও দাড়ি পূর্ণ কর।”
● তিনি আরও বলেনঃ
ﺍﻧﻬﻜﻮﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺍﻋﻔﻮﺍ ﺍﻟﻠﺤﻰ
ইবনে ওমর রা. এর সূত্রে বুখারী ২/৮৭৫
“মোচ উত্তমরূপে কাট এবং দাড়ি লম্বা কর।”
● হাদিসে আরও এসেছেঃ
ﺟﺰﻭﺍ ﺍﻟﺸﻮﺍﺭﺏ ﻭﺍﺭﺧﻮﺍ ﺍ ﻟﻠﺤﻰ، ﺧﺎﻟﻔﻮﺍ ﺍﻟﻤﺠﻮﺱ
আবু হুরায়রা রা.-এর সূত্রে মুসলিম ১/১২৯
“মোচ কাট ও দাড়ি ঝুলিয়ে দাও, অগ্নি পূজারীদের বিরোধিতা কর।”
উপরের হাদিসগুলোতে চারটি শব্দ পাওয়া গেলঃ
ﺍﺭﺧﻮﺍ ـ ﺍﻋﻔﻮﺍ ـ ﺃﻭﻓﻮﺍ ـ ﻭﻓﺮﻭﺍ
এই সবগুলো শব্দ থেকে বোঝা যায়, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লম্বা ও পূর্ণ দাড়ি রাখার আদেশ করেছেন। সুতরাং দাড়ি রাখা ফরজ।
তাছাড়া পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ও সুন্দর মানুষ আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে এবং মানব সভ্যতার ইতিহাসে নবীদের পরেই সর্বোৎকৃষ্ট মানুষ সাহাবায়ে কেরাম দাড়ি রাখতেন।
সুতরাং আমরা যদি আল্লাহর ভালোবাসা পেতে চাই তাহলে আমাদের জন্য আবশ্যক হল নিঃস্বার্থভাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ করা।
রাসুল (সাঃ) কে অনুসরণের বিষয়ে কুরআনঃ
◈ আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَّقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّـهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِّمَن كَانَ يَرْجُو اللَّـهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّـهَ كَثِيرًا
সূরা আহযাব ২১
“যারা আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক স্মরণ করে, তাদের জন্যে রসূলুল্লাহর মধ্যে উত্তম নমুনা রয়েছে।”
অর্থাৎ আমরা আখারিতে সফলতা ও মুক্তি পেতে চইলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে অনুসরণ করা ফরজ।
◈ তিনি আরও বলেনঃ
قُلْ إِن كُنتُمْ تُحِبُّونَ اللَّـهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّـهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ ۗ وَاللَّـهُ غَفُورٌ رَّحِيمٌ
সূরা আলে ইমরান: ৩১
“বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমাকে অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহও তোমাদেরকে ভালবাসবেন এবং তোমাদের গুনাহ মোচন করবেন। আর আল্লাহ হলেন ক্ষমাকারী দয়ালু।”
◈ তিনি আরও বলেনঃ
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانتَهُوا ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ
সূরা আল হাশর: ৭
“রসূল তোমাদেরকে যা দেন, তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন, তা থেকে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় কর।”
অনেকেই বলেন দাড়ি রাখা ফরজ নয় বরং সুন্নত!
এর উত্তর হলোঃ রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দাড়ি রেখেছেন সে অর্থে এটি সুন্নত বা অনুকরণীয় আদর্শ।
কিন্তু তা পালনের বাধ্য-বাধকতার ক্ষেত্রে বিধানগতভাবে এটি ফরজ (মতান্তরে ওয়াজিব) অর্থাৎ কেউ ইচ্ছাকৃতভাবে তা পরিত্যাগ করলে গুনাহগার হবে।
কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন কোন বিষয়ে আদেশ করেন তখন তা বাস্তবায়ন করা উম্মতের জন্য ফরজ হয়ে যায়। অনুরূপভাবে যখন তিনি কোন নিষেধ করেন তখন তা করা উম্মতের জন্য হারাম হয়ে যায় যতক্ষণ না সে বিষয়ে ভিন্ন কোনো নির্দেশ থাকে।
তাহলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একাধিক হাদীসে দাড়ি রাখার নির্দেশ দিয়েছেন, একাধিক হাদিসে দাড়ি কাটতে নিষেধ করেছেন এবং এর বিপরীতে অন্য কোনো নির্দেশনা তার পক্ষ থেকে পাওয়া যায় নি।
সুতরাং এটি অবশ্যই ফরয (মতান্তরে ওয়াজিব) এবং এই নিষেধ লংঘন করা কবীরা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত।
(অবশ্য এক মুষ্টির পরে দাড়ি কাটা যাবে কিনা সে বিষয়টি দিমত পূর্ণ, আমরা এখন সে বিষয়ে আলোচনা করছি না।)
এভাবে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম যত আমল করেছেন বা করতে নির্দেশ দিয়েছেন সবই উম্মতের জন্য সুন্নত বা অনুকরণীয় আদর্শ (তার জন্য খাস বিধানগুলো ছাড়া) ।
কিন্তু সেগুলোর মধ্যে বিধানগতভাবে কিছু আছে ফরজ বা ওয়াজিব আর কিছু মুস্তাহাব বা নফল। সবগুলোর বিধান এক নয়। এগুলোর মধ্যে গুরুত্বের দিক দিয়ে তারতম্য আছে।
সুতরাং স্ত্রীকে খুশি করার জন্য অথবা সমাজের বাঁকা দৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য দাড়ি কাটা, ছাটা বা মুণ্ডণ করা নাজায়েজ। বর্তমান সমাজে দীন নিয়ে বেঁচে থাকতে হলে সকল ভ্রুকুটি ও ঝড়ঝঞ্জা উপেক্ষা করে দৃঢ়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে হবে। অন্যথায় এই সমাজ আমাদেরকে দীন থেকে সরিয়ে দেবে।
স্ত্রীকে রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আদর্শ পালন করার আবশ্যকতার বিষয়টি আন্তরিকতার সাথে বোঝাবেন। স্ত্রী যদি বুঝে তবে তো ভালো অন্যথায় স্ত্রীকে বাদ দেয়া গেলেও রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদর্শ ও ইসলামের একটি ফরজ বিধান কে কখনোই জলাঞ্জলি দেয়া যাবে না। এটাই ঈমানের দাবী।
আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমীন।
আরও পড়ুনঃ বিদআত এর সাতটি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা
▬▬▬▬◢◯◣▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব