Tag: ঘুম

  • দুঃস্বপ্ন দেখলে কী করণীয়?

    দুঃস্বপ্ন দেখলে কী করণীয়?

    খারাপ স্বপ্ন দেখলে কী কী করণীয় হাদীসের আলোকে সেগুলো নিম্নে তুলে ধরা হল:
    ■  ১. বামপাশে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করা
    ■  ২. আল্লাহর নিকট আশ্রয় পার্থনা করা এবং ‘আউযুবিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজীম’ পাঠ করা:

    আবু কাতাদাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    الرُّؤْيَا الصَّالِحَةُ مِنَ اللَّهِ، وَالحُلُمُ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَإِذَا حَلَمَ أَحَدُكُمْ حُلُمًا يَخَافُهُ فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ، وَلْيَتَعَوَّذْ بِاللَّهِ مِنْ شَر فَإِنَّهَا لاَ تَضُرُّهُ

    “ভালো স্বপ্ন আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে হয়ে থাকে আর খারাপ স্বপ্ন হয় শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং কেউ যদি ভীতিকর দু:স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন বাম পাশে থুথু নিক্ষেপ করে এবং আল্লাহর নিকট শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় চায়। তাহলে শয়তান এই দু:স্বপ্ন তার কোন ক্ষতি করবে না।” (বুখারী ও মুসলিম)

    ■  ৩) পার্শ্ব পরিবর্তন করা:
    জাবের রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يَكْرَهُهَا، فَلْيَبْصُقْ عَنْ يَسَارِهِ ثَلَاثًا وَلْيَسْتَعِذْ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ ثَلَاثًا، وَلْيَتَحَوَّلْ عَنْ جَنْبِهِ الَّذِي كَانَ عَلَيْهِ

    “যদি তোমাদের কেউ এমন স্বপ্ন দেখে যা সে পছন্দ করে না, তাহলে তিনবার বাম দিকে থুথু দেবে। আর তিন বার শয়তান থেকে আল্লাহ তাআলার কাছে আশ্রয় চাবে (অর্থাৎ আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পাঠ করবে।) আর যে পার্শ্বে শুয়েছিল, তা পরিবর্তন করবে। (অর্থাৎ পার্শ্ব পরিবর্তন করে শুবে)।”

     ৪) ঘুম থেকে উঠে সালাত আদায় করা:

    আবূ হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    فَإِنْ رَأَى أَحَدُكُمْ مَا يَكْرَهُ فَلْيَقُمْ فَلْيُصَلِّ وَلاَ يُحَدِّثْ بِهَا النَّاسَ

    “তোমাদের কেউ যদি অপছন্দনীয় কিছু স্বপ্ন দেখে তাহলে সে যেন উঠে সলাত আদায় করে আর মানুষের নিকট সে (স্বপ্নের) কথা গোপন রাখে।” (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বরঃ [5798] অধ্যায়ঃ (كتاب الرؤيا), হাদিস একাডেমি)

    ■ ৫. খারাপ স্বপ্নের কথা কাউকে না বলা:

    আবু সাঈদ খুদরী রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِذَا رَأَى أَحَدُكُمُ الرُّؤْيَا يُحِبُّهَا، فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ اللَّهِ فَلْيَحْمَدِ اللَّهَ عَلَيْهَا، وَلْيُحَدِّثْ بِهَا، فَإِذَا رَأَى غَيْرَ ذَلِكَ مِمَّا يَكْرَهُ فَإِنَّمَا هِيَ مِنَ الشَّيْطَانِ، فَلْيَسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنْ شَرِّهَا، وَلَا يَذْكُرُهَا لِأَحَدٍ فَإِنَّهَا لَا تَضُرُّهُ

    “যখন কেউ ভাল স্বপ্ন দেখে-যা সে পছন্দ করে-তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এ ব্যাপারে আল্লাহর প্রশংসা করে (অর্থাৎ আল হামদু লিল্লাহ পাঠ করে) এবং তা মানুষকে বলে। আর যদি অন্য কিছু দেখে-যা সে অপছন্দ করে-তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং সে যেন এর অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করে এবং এটি কারো নিকট আলোচনা না করে। তাহলে তা তার কোন ক্ষতি করবে না।” (সহীহ বুখারী (6985 ও 7045 নং হাদীসমুসনাদ আহমদ, তিরমিযী, নাসাঈ, হাকিম)

    উপরোক্ত হাদীস সমূহের আলোকে খারাপ স্বপ্ন দেখলে যা করতে হবে সেগুলো হল:

    • এক. শয়তানের অনিষ্ট ও কুমন্ত্রণা থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে এবং এর জন্য তিনবার আউজুবিল্লাহি মিনাশ শাইতানির রাজীম পড়তে হবে। কারণ, খারাপ স্বপ্ন শয়তানের কুপ্রভাবে হয়ে থাকে।
    • দুই. বাঁ দিকে তিনবার থুথু নিক্ষেপ করতে হবে। এটা করতে হবে শয়তানের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ ও তার চক্রান্তকে অপমান করার জন্য ।
    • তিন. যে পাশে ঘুমিয়ে খারাপ স্বপ্ন দেখেছে তা পরিবর্তন করে অন্য পাশে শুতে হবে। অবস্থা বদলে দেয়ার ইঙ্গিত স্বরূপ এটা করা হয়ে থাকে।
    • চার. ঘুম থেকে উঠে দু দু/চার রাকাআত সালাত আদায় করা।
    • পাঁচ. খারাপ স্বপ্ন দেখলে কারো কাছে বলবে না। আর নিজেও এর ব্যাখ্যা করতে চেষ্টা করবে না।

    উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব

  • ইসলামে ঘুমের সময় শোয়ার পদ্ধতি

    ইসলামে ঘুমের সময় শোয়ার পদ্ধতি

    উপুড় হয়ে শোয়ার ক্ষেত্রে ইসলামে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। এ মর্মে একাধিক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

    প্রখ্যাত সাহাবী ইয়ায়ীশ রা. বলেন, আমার পিতা তিখফা ইবনে কায়েস আল গিফারী রা. ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন:
    “আমি একদিন (ভোররাতে) মসজিদে উপুড় হয়ে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ করে দেখলাম যে, কে যেন আমাকে পা দিয়ে নাড়াচ্ছেন আর বলছেন, হে জুনাইদিব,

    إِنَّ هَذِهِ ضِجْعَةٌ يُبْغِضُهَا اللَّهُ
    “শোয়ার এ পদ্ধতি আল্লাহ ঘৃণা করেন।”

    আমি চোখ মেলে দেখি, সে ব্যক্তিটি হচ্ছে স্বয়ং রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
    (হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ প্রমুখ এবং আলবানী এটিকে হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।)

    আবু যার জুনদুব ইবনে জুদানাহ আল গিফারী রা. থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে উপুড় হইয়ে শুয়ে থাকতে দেখে বলেছিলেন:

    إِنَّمَا هَذِهِ ضِجْعَةُ أَهْلِ النَّارِ
    “এটি জাহান্নামীদের শয়ন পদ্ধতি।” (ইবনে মাজাহ হাদিস নং 3724)

    (এ হাদিসটিকে ইমাম বুখারী, দারেকুতনী, ইবনে আবী হাতিম প্রমুখ মুহাদ্দিস জঈফ বলেছেন। আর আহমদ, আলবানী ও আহমদ শাকের সহীহ বলেছেন)
    এই হাদিসগুলো থেকেই বুঝা যায় যে, পেটের ভরে উপুড় হয়ে শোয়া উচিত নয়।

    শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি কোনটি?

    শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পদ্ধতি হল, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিকাংশ ক্ষেত্রেই যে পদ্ধতি অবলম্বন করতেন সেটা। আর তা হল, ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে ডান দিকে কাত হয়ে শয়ন করা।

    বর্তমান যুগের বিজ্ঞানীরা ও এ ধরণের শোয়াকে স্বাস্থ্যসম্মত হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
    অনুরূপভাবে কখনও কখনও চিৎ হয়ে শোয়াও জায়েজ রয়েছে। কারণ এই মর্মেও হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কখনো কখনো এক পায়ের উপর আরেক পা রেখে চিৎ হয়ে শয়ন করেছেন। তিনি বিশ্রাম করার জন্য তিনি কখনো এভাবে চিৎ হয়ে শুয়েছেন।
    তবে এক পাকে আরেক পায়ের উপর রেখে সতরকে পরিপূর্ণ হিফাজতে রেখে শুতে হবে। চিৎ হয়ে শুতে গিয়ে সতর বা লজ্জা স্থান খুলে যাওয়ার আশংকা থাকলে তা অবশ্যই পরিত্যাজ্য। মোটকথা, লজ্জা স্থান যেন প্রকাশিত না হয়ে যায় সেদিকে খেয়াল রেখে কখনও কখনও চিৎ হয়ে শয়ন করা জায়েজ রয়েছে।

    ইমাম ইবনে কাইয়েম রহ.বলেছেন, “বাম দিকে অথবা পেটের উপর ভর করে শয়ন করা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।”

    সারাংশ:

    শোয়ার সবচেয়ে উত্তম পন্থা হল, ডান পাশে ফিরে ডান হাতকে ডান গালের নিচে রেখে কাত হয়ে শয়ন করা উত্তম।

    তবে কখনো কখনো চিৎ হয়ে শোয়াও জায়েজ রয়েছে। তবে সে ক্ষেত্রে লজ্জা স্থান যেন প্রকাশিত না হয়ে যায় সে দিকে সর্তকতা অবলম্বন করা অপরিহার্য।

    পেটের উপর ভর করে উপুড় হয়ে শয়ন করা ঠিক নয়। কেননা, হাদিসে এটিকে আল্লাহর নিকট অ পছন্দনীয় ও জাহান্নামিদের শয়ন পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

     আর বাম পাশে কাত হয়ে শোয়া উচিৎ নয়। কারণ তা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক।

    এ ক্ষেত্র নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য একই বিধান।

    প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণেই আমাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে অবারিত কল্যাণ নিহিত রয়েছে। তাঁর আদর্শের বাইরে রয়েছে কেবল ক্ষতি ও দুর্দশা। আল্লাহ আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর অনুসরণে জীবন পরিচালনা করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহু আলাম।

    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদি আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।