ঘুষ বা অর্থের বিনিময়ে চাকুরী নেয়া এবং সেখান থেকে প্রাপ্ত বেতন কখন হারাম এবং কখন হালাল?
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
প্রশ্ন: ঘুষ দিয়ে চাকরি নিলে তার বেতন হালাল হবে কি?
উত্তরঃ এ উত্তরটি ভালোভাবে বুঝার স্বার্থে প্রথমে আমরা জানবো, ঘুষ কাকে বলে?
ঘুষ কাকে বলে?
এ ব্যাপারে ‘আল মাউসূআহ আল ফিকহিয়া বা ফিকহ অভিধানে বলা হয়েছে,
الرشوة هي ما يدفعه الإنسان ليأخذ ما ليس من حقه ، أو ليتهرب بها من حق عليه
“মানুষ তার প্রাপ্য নয় এমন জিনিস গ্রহণ করা অথবা তার উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন থেকে দূরে সরে থাকার উদ্দেশ্যে যা কিছু প্রদান করে তাই ঘুষ।”
আল মাউসূআহ আল ফিকহিয়া বা ফিকহ অভিধান (5/362)
এখান থেকে বুঝা যাচ্ছে ঘুষ কেবল অর্থকড়ি লেনদেনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় বরং তা হতে পারে বিশেষ কোন উপকার বা সেবা ও সুবিধা প্রদানও। অর্থাৎ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অর্থকড়ি দানের মাধ্যমে অথবা তার বিশেষ কোন উপকার, সুবিধা বা সেবা প্রদানের মাধ্যমে যদি অন্যায্য কোন কিছু অর্জন করা হয় বা দায়িত্ব থেকে দূরে থাকা হয় তাহলে সেটাই ঘুষ।
কোন কোন আলেম বলেন, অন্যের ‘হক; নষ্ট করে অন্যায়ভাবে কোন কিছু অর্জনের উদ্দেশ্যে অর্থকড়ি বা কোন ধরণের সেবা প্রদান করাকে ঘুষ বলা হয়। ১ম সংজ্ঞাটি বেশি ব্যাপকার্থ বোধক।
ইসলামের দৃষ্টিতে ‘ঘুষ’ এর ভয়াবহতাঃ
ইসলামের দৃষ্টিতে ঘুষ দেয়া ও নেয়া উভয়টি কবিরা গুনাহ এবং অভিসম্পাদ যোগ্য বিষয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
«لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الرَّاشِي وَالْمُرْتَشِي»
ইবন মাজাহ, হাদিস নং ২৩১৩
“ঘুষ প্রদানকারী ও গ্রহণকারী উভয়ের উপরই আল্লাহর লা‘নত।”
অবৈধ্য নেওয়া চাকুরী ও এর থেকে প্রাপ্ত বেতন কখন হারাম এবং কখন হালাল?
চাকুরী বা কাজটা যদি হালাল হয় আর এর জন্য যে ধরণের যোগ্যতা প্রয়োজন তা আপনার মধ্যে যথার্থ থাকে এবং অন্যের হক নষ্ট না করা হয় কিন্তু তারপরও কর্তৃপক্ষ যদি টাকা ছাড়া চাকুরী না দেয় তাহলে সে ক্ষেত্রে টাকা দিয়ে চাকুরী নিলে তা আপনার জন্য ‘ঘুষ’ বলে বিবেচিত হবে না। কারণ আপনি এর দ্বারা অন্যের হক নষ্ট করেন নি এবং আপনি নিজে উক্ত কাজের যোগ্য।
এ ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে টাকা দাবি করার কারণে কর্তৃপক্ষ গুনাহগার হবে কিন্তু টাকা দেয়ার কারণে আপনি গুনাহগার হবে না।
অনুরূপভাবে নিজের পাওনা আদায় অথবা অর্থ-সম্পদ উদ্ধার করার জন্য অথবা নিয়োগ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ সহ যাবতীয় শর্তাবলী যথার্থভাবে পূরণ করার পরও যদি অর্থ প্রদান ছাড়া চাকুরী পাওয়া যায় বা নিজের হক উদ্ধার করা সম্ভব না হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে কর্তৃপক্ষকে টাকা-পয়সা দিলে তা ‘হারাম ঘুষ’ হিসেবে গণ্য হবে না এবং এ ক্ষেত্রে দাতা জুলুমের শিকার হল এবং আখিরাতে এর বিনিময় পাবে গ্রহণকারীকে এই অন্যায়ের জন্য আল্লাহর নিকট জবাবদাহী করতে হবে ইনশাআল্লাহ।
বাধ্য হয়ে ঘুষ দেওয়ার বিধানঃ
ইবনে মাসঊদ রা. হতে বর্ণিত আছে যে, তিনি হাবশা (ইথিওপিয়া) গিয়েছিলেন কিন্তু তাকে সেখানে আটকে দেয়া হয়। পরে তিনি দু দিনার প্রদান করলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এ বিষয়ে তিনি বলেন,
«إِنَّمَا الإِثْمُ عَلَى القَابِضِ دُونَ الدَّافِعِ»
সুনান কুবরা-বায়হাকী, ২০৪৮২, শরহুস সুন্নাহ-ইমাম বাগাভী ১০/৮৮, তাফসীর কুরতুবী ৬/১৮৪
“গ্রহণকারীর উপর গুনাহ বর্তাবে; প্রদানকারীর উপর নয়।”
যাহোক, উপরোক্ত ব্যাখ্যা অনুযায়ী অর্থের বিনিময়ে উক্ত চাকুরী গ্রহণ করা যেমন আপনার জন্য হালাল তেমনি এর বিনিময়ে প্রাপ্ত বেতনও আপনার জন্য হালাল। যেহেতু আপনি হালাল কাজের বিনিময়ে উক্ত বেতন গ্রহণ করেছেন এবং কারো হক নষ্ট করেন নি।
পক্ষান্তরে আপনি যদি উক্ত কাজের যোগ্য না হন এবং সঠিকভাবে কাজ সম্পাদন করতে সক্ষম না হওয়ার পরও ঘুষের বিনিময়ে চাকুরী বা কাজটা নিয়ে থাকেন তাহলে এ ক্ষেত্রে আপনি যেমন অন্যায়ভাবে ঘুষ প্রদানের কারণে গুনাহগার হবেন তেমনি সঠিকভাবে কাজ সম্পাদন না করার কারণে প্রাপ্ত বেতনও আপনার জন্য হারাম হবে।
আল্লাহু আলাম।
▬▬▬▬●◈●▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব