Tag: ছয় সিয়াম

  • শাওয়ালের ছয়টি সাওম – ফজিলত ও নিয়মাবলী

    শাওয়ালের ছয়টি সাওম – ফজিলত ও নিয়মাবলী

    শাওয়ালের ছয়টি সাওম (রোজা) মুসলিমের জীবনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রমাদান মাসের পরের মাসের নাম শাওয়াল। এর প্রথম দিনটি আমরা ঈদ হিসাবে উদযাপন করি। আর এরপর মাসের বাকি দিন গুলির মধ্যে মাত্র ছয়টি সাওম (রোজা) পালনকে অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ হিসাবে ধরা হয়।

    শাওয়ালের ছয়টি সাওম বিষয়ক হাদিস

    আবূ আউয়ূব আল-আনসারী রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, 

    «مَنْ صَامَ رَمَضَانَ ثُمَّ أَتْبَعَهُ سِتًّا مِنْ شَوَّالٍ، كَانَ كَصِيَامِ الدَّهْرِ».

    “যে ব্যক্তি রমযান মাসের সাওম পালন করার পরে শাওয়াল মাসে ছয় দিন সাওম পালন করল সে যেন সারা বছর সাওম পালন করল।”

    সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১১৬৪

    ব্যাখ্যাঃ যেভাবে এক বছরের সওয়াব হয়

    ইসলামে কোন সৎকাজের সওয়াবকে দশগুন করে দেওয়া হয়। আর সে হিসাবেই রমাদানের এক মাস সাওম পালনকে দশ মাসের সাওমের সমান সওয়াব হয়ে যায়। আর শাওয়াল মাসে ছয়টি সাওমের ফলে এটিকে দশগুন করে ৬০ দিন সমান (অর্থাৎ দুই মাস) সওয়াব হয়ে যায়।

    ফলশ্রুতিতে বান্দা রমাদানের এক মাস সাওম পালন ও শাওয়ালের ছয়দিন সাওম পালনের ফলে মোট ১২ মাস বা এক বছর সাওম পালনের সওয়াব অর্জন করে। এটি নিতান্তই আল্লাহর দয়া ও মেহেরবানী। (তাওদীহুল আহকাম, ৩/৫৩৪)

    আলেমগন মুস্তাহাব একে বলেছেন

    ইমাম আবু হানিফা, শাফে’ঈ ও আহমাদ রহ. শাওয়ালের এই ছয়টি সাওম পালন করাকে মুস্তাহাব বলেছেন। (তাওদীহুল আহকাম,, ৩/৫৩৩)

    কিছু নিয়মাবলী

    ১. সম্ভব হলে ঈদের পরদিন থেকেই এই ছয়টি সাওম রাখা। কেননা, সূরা আল বাকারাহ এর ১৪৮ নং আয়াতে ‘সৎ কাজে প্রতিযোগীতা’ অর্থাৎ ভালো কাজ সমূহ যত দ্রুত সম্ভব করার কথা বলা হয়েছে।

    ২. বিলম্বের ফলে কোন বাধা (যেমন অসুস্থতা বা অন্য কোন সমস্যা) আসতে পারে, তাই মাসের প্রথম দিকেই (ঈদের দিন ব্যতিত) এই সাওম গুলি পালন করা উচিৎ।

    ৩. একাধারে ছয়দিন সাওম পালন করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। এ মাসের প্রথম দিন ব্যতিত বাকি দিন গুলিতে আলাদা আলাদা করেও পালন করা যাবে।

    ৪. সোম ও বৃহস্পতিবারে যেহেতু রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাওম পালন করতেন, তাই এই দিন গুলিতেও করা যায়।

    ৫. শুধুমাত্র শুক্রবার এই সাওম পালন করা উচিৎ হবে না। কেননা আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি যে,

    ‘অবশ্যই কেউ যেন স্রেফ জুমার দিনে রোযা না রাখে; তবে যদি তার একদিন আগে কিম্বা পরে রাখে [তাহলে তাতে ক্ষতি নেই।] (সহীহুল বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, তিরমিযী ৭৪৩, আবূ দাউদ ২৪২০)

    তাই, শুধুমাত্র শুক্রবার সাওম পালন না করে বৃহস্পতি বা শনিবারও এর সাথে যোগ করে নেওয়া উচিৎ।

    ৬. রমাদানের কাজা সাওম ও শাওয়ালের সাওমের নিয়ত এক সাথে করা বৈধ নয়। তাই রমাদানের কাজা রোজার নিয়ত করা হলে বা শাওয়ালের সাওমের নিয়ত করা হলে সেটির সাথে অন্য কোন কিছুর নিয়ত করা উচিৎ হবে না।

    ৭. রমযানের কাজা সাওম সম্ভব হলে আগে পালন করে নেওয়া ভালো। তবে যদি কোন কারণে সম্ভব না হয়, তবে রমাদানের কাজা সাওম পরবর্তি রমাদান মাস আসার আগেই পালন করা যাবে।

    ৮. এই সাওম গুলির নিয়ত রাত্রি থেকেই করা উচিৎ। এর জন্য নিয়ত পড়তে হবে না; মনে মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হতে হবে যে আজ আমি এই সাওম পালন করবো। আলেমদের মতে সকাল হয়ে গেলে এই নিয়ত করলে কাঙ্খিত সওয়াব পাওয়া যাবে না (শরহুল মুমতি‘, ৬/৩৬০)

    ৯. এই সাওম গুলি শুরু করবার পর কোন ওজর থাকলে তা ভেঙ্গে ফেলা যাবে। তবে শর’ঈ কোন ওজর ব্যতিত বিনা করাণে সাওম ভেঙ্গে ফেলা শাফে‘ঈ ও হাম্বলী মাযহাবের দৃষ্টিতে মাকরূহ।

    আল্লাহ আমাদের সকলকে শাওয়ালের এই ছয়টি সাওম পালনের মাধ্যমে সম্পূর্ণ বছরের সাওম পালনের সাওয়াব পাওয়ার তৌফিয়ক দান করুন। আমিন।

    এ বিষয়ের উপর ছোট্ট একটি ভিডিও দেখতে পারেন

    ভিডিওর লিংকঃ https://www.youtube.com/watch?v=wz-Pf8x242E