Tag: তওবা

  • তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতা, পদ্ধতি, শর্তাবলী ও দুআ

    তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতা, পদ্ধতি, শর্তাবলী ও দুআ

    কোন পাপ করে ফেললে বা নিজের জীবনের অতিতের পাপের জন‍্য তওবা-ইস্তিগফার করার পদ্ধতি কি? কোন দুয়া করতে হবে? এবং তওবা-ইস্তিগফার এর শর্তাবলী কি কি?

    তওবা-ইস্তিগফার এর অপরিহার্যতাঃ

    গুনাহ থেকে তওবা করা ফরয। কোন মানুষই ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। তবে সে ব্যক্তিই উত্তম যে ভুল করার পর তওবা করে। তাই দয়াময় আল্লাহ তায়ালা বান্দাদের উপর তওবা করা ফরয করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন,

    وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعاً أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

    “হে মুমিনগণ,তোমরা সকলে আল্লাহর নিকট তওবা কর। যাতে তোমরা সফলতা লাভ করতে পার।”

    সূরা নূরঃ ৩১

    তিনি আরও বলেছেন,

    تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا

    “তোমরা আল্লাহর নিকট আন্তরিকভাবে তওবা কর।”

    সূরা তাহরীমঃ ৮

    সুতরাং প্রতিটি পাপের জন্য বান্দার তওবা করা অপরিহার্য।

    তওবাকারীর উপর আল্লাহ আনন্দিত হনঃ

    তওবা কারীদের প্রতি আল্লাহ অত্যন্ত আনন্দিত হন। প্রিয় নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর খাদেম আবু হামযা আনাস বিন মালিক রা. বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    اللَّهُ أَفْرَحُ بِتَوْبَةِ عَبْدِهِ مِنْ أَحَدِكُمْ سَقَطَ عَلَى بَعِيرِهِ ، وَقَدْ أَضَلَّهُ فِى أَرْضِ فَلاَةٍ“

    কোনও লোক বিজন মরু প্রান্তরে উট হারিয়ে যাবার পর পুনরায় তা ফেরত পেলে যে পরিমাণ আনন্দে উদ্বেলিত হয় মহান আল্লাহ বান্দার তওবাতে তার চেয়েও বেশি আনন্দিত হন।

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদঃ তওবা, হা/৫৮৩৪, শামেলা

    মহান আল্লাহ ক্ষমাশীল; তিনি আমাদেরকে ক্ষমা করতে চান:আল্লাহ তায়ালা দিনের অপরাধীকে ক্ষমা করার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন।

    যেমন, ইমাম মুসলিম রহ. আবু মূসা আশয়ারী থেকে বর্ণনা করেছেন,নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ يَبْسُطُ يَدَهُ بِاللَّيْلِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ النَّهَارِ وَيَبْسُطُ يَدَهُ بِالنَّهَارِ لِيَتُوبَ مُسِىءُ اللَّيْلِ حَتَّى تَطْلُعَ الشَّمْسُ مِنْ مَغْرِبِهَا

    “আল্লাহ দিনের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য রাতে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। আর রাতের অপরাধীকে ক্ষমার জন্য দিনে তাঁর হাত প্রসারিত করেন। (তিনি এরূপ করতেই থাকেন) যে পর্যন্ত না সূর্য পশ্চিম দিক থেকে উদিত হয় (তথা কিয়ামত পর্যন্ত)।

    সহীহ মুসলিম। অনুচ্ছেদ: গুনাহ থেকে তওবা করলে তা কবুল হওয়া যদিও বারবর গুনাহ সংঘটিত হয়, হা/৪৯৫৪, শামেলা

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের অনুসরণীয়: প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম খুব বেশী তওবা-ইস্তেগফার করতেন। যেমন আবু হুরাইরা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি,

    وَاللَّهِ إِنِّى لأَسْتَغْفِرُ اللَّهَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ فِى الْيَوْمِ أَكْثَرَ مِنْ سَبْعِينَ مَرَّةً

    “আল্লাহর শপথ, আমি দিনে সত্তর বারের অধিক আল্লাহর নিকট তওবা-ইস্তেগফার করি।”

    সহীহ বুখারী। অনুচ্ছেদ: দিনে-রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর তওবা, হা/৫৮৩২, শামেলা

    সহীহ মুসলিমে আরেকটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    يَا أَيُّهَا النَّاسُ تُوبُوا إِلَى اللَّهِ فَإِنِّي أَتُوبُ فِي الْيَوْمِ إِلَيْهِ مِائَةَ مَرَّةٍ

    “হে মানব মণ্ডলী, তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা কর। কেননা, আমি দিনে একশ বার তওবা করি।”

    [সহীহ মুসলিম, অনুচ্ছেদ: অধিক পরিমাণে ইস্তিগফার করা মুস্তাহাব, হা/৪৮৭১]

    তওবার শর্তাবলীঃ

    জেনে রাখা দরকার যে, তওবার জন্য কতিপয় শর্ত রয়েছে। এ সকল শর্ত সাপেক্ষে কেবল তওবা কবুল হতে পারে; অন্যথায় নয়। গুনাহ যদি বান্দা ও আল্লাহর সাথে সংশ্লিষ্ট হয়; অপর কোন মানুষের সাথে সংশ্লিষ্ট না হয় তবে তার জন্য তিনটি শর্ত। অর্থাৎ কেবল মুখে ‘আস্তাগফিরুল্লাহ’ (আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি) পাঠ করলেই ক্ষমা পাওয়া যাবে না যতক্ষণ না চারটি শর্ত পূরণ করা হবে।

    • ১ম শর্তঃ পাপ কর্মের জন্য লজ্জিত হওয়া।
    • ২য় শর্তঃ তৎক্ষণাৎ পাপাচার হতে বিরত থাকা।
    • ৩য় শর্তঃ পুনরায় উক্ত পাপ না করার জন্য আল্লাহর নিকট অঙ্গীকার করা।
    • ৪র্থ শর্তঃ কারও অধিকার হরণ করে থাকলে তা পূর্ণ করা।

    ৪র্থ শর্তের ব‍্যাখ‍্যাঃ

    যদি অন্যের জায়গা-জমি, অর্থ-কড়ি বা অধিকার হরণ করা হয়ে থাকে তাহলে উল্লেখিত তিনটি শর্তের সাথে চতুর্থ শর্ত হল, যার সম্পদ বা অধিকার হরণ করা হয়েছে তাকে তার সম্পদ/অধিকার ফেরত দেয়া। তবে তাকে না পাওয়া গেলে তা আল্লাহ পথে খরচ করে এ দুআ করবে যে, আল্লাহ যেন এর মালিককে এ দানের সওয়াব দান করেন। তবে পরবর্তীতে তার অথবা তার কোনও উত্তরসূরির সন্ধান পাওয়া গেলে তাদেরকে উক্ত পাওনা বুঝিয়ে দিতে হবে।

    আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

    তাওবা-ইস্তেগফার এর জন্য দুআঃ

    হাদিসে বর্ণিত তাওবার কতিপয় দোয়াঃ

    দোয়া ১ঃ

    أَستَغْفِرُ اللهَ

    উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।

    প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানোর পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [মিশকাত-৯৬১]

    দোয়া ২ঃ

    أَسْتَغْفِرُ اللهَ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ

    উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি।

    রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। [বুখারী-৬৩০৭]

    দোয়া ৩ঃ

    رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ الغَفُوْرُ

    উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব ‘আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফূর’।
    অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়।
    দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।

    রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। [আবূ দাঊদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]

    দোয়া ৪ঃ

    أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّومُ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ

    উচ্চারণঃ আস্‌তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্যুল কইয়্যূম ওয়া আতূবু ইলায়হি।
    অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা‘বূদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি।

    এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]

    দোয়া ৫ঃ

    اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ لَكَ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَ

    উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আহ্দিকা ওয়া ও’য়াদিকা মাসতাত’তু আ’উযুবিকা মিন শার্রি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফির্লী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুয্যুনূবা ইল্লা আনতা
    অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমারই গোলাম। আমি যথাসাধ্য তোমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব কৃতকর্মের কুফল থেকে তোমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তোমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না।

    এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে। [বুখারী-৬৩০৬]

    আরও পড়ুনঃ অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    আল্লাহ আমাদেরকে সকল পাপ থেকে দূরে থাকার ও আমাদের জীবনে কৃত সকল পাপের জন‍্য তওবা-ইস্তিগফার করত গুনাহ থেকে মাফ পাওয়ার তৌফিয়ক দান করুন। আমিন

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আমাদের মাঝে আসছে রমাযান। এই মাহে রমাযান মূলত: গুনাহ মোচন, তাকওয়া অর্জন, চরিত্র সংশোধন, নিজেকে পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করে আমলনামা ভরে নেয়ার অফুরন্ত সম্ভাবনাময় মাস। ইমানদার ব্যক্তিগণ এ মাসের প্রতিটি মূহুর্তেকে সৎকর্মে ব্যয় করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।

    রমাযান এ অধিক নেকিঃ

    ♻ নিম্নে রমাযানুল মোবারকে অধিক পরিমাণে নেকি উপার্জনের দশটি টিপস প্রদান করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমাযানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    অতীত জীবনের সকল পাপের তওবা

    প্রশ্ন: কোনও ব্যক্তি যদি বুঝে না বুঝে জীবনে বহু কবিরা গুনাহ করে থাকে। এমতাবস্থায় সবগুলো গুনাহের কথা তাঁর স্মরণেও না থাকে তবে তওবা করার ক্ষেত্রে কি প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করতে হবে নাকি সকল গুনাহ থেকে তওবা করছি বললেই যথেষ্ট হবে?

    উত্তরঃ কোন ব্যক্তি যদি শয়তানের প্ররোচনা বা কু প্রবৃত্তির তাড়নায় অন্যায়-অপকর্ম ও আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হয়, কবিরা গুনাহ করে এবং পরে ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হৃদয়ে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করে, ভবিষ্যতে জেনে-বুঝে আর কখনো আল্লাহর নাফরমানিতে লিপ্ত হবে না মর্মে আল্লাহর কাছে ওয়াদা করে-সেই সাথে বেশি বেশি নেকির কাজ করে তাহলে আশা করা যায়, দয়াময় আল্লাহ তার অতীত জীবনের সকল গুনাহ মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন।

    পাপের তওবা এর বিষয়ে আল্লাহ বলেনঃ

    আল্লাহ তাআলা বলেন,

    إِلَّا مَن تَابَ وَءَامَنَ وَعَمِلَ عَمَلٗا صَٰلِحٗا فَأُوْلَٰٓئِكَ يُبَدِّلُ ٱللَّهُ سَيِّـَٔاتِهِمۡ حَسَنَٰتٖۗ وَكَانَ ٱللَّهُ غَفُورٗا رَّحِيمٗا

    “তবে যে তওবা করে, ঈমান আনে ও সৎকাজ করে, ফলে আল্লাহ্‌ তাদের গুনাহসমূহ নেক দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আর আল্লাহ্‌ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”

    সূরা আল ফুরকান: ৭০

    তিনি আরও বলেন,

    قُلۡ يَٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسۡرَفُواْ عَلَىٰٓ أَنفُسِهِمۡ لَا تَقۡنَطُواْ مِن رَّحۡمَةِ ٱللَّهِۚ إِنَّ ٱللَّهَ يَغۡفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعًاۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلۡغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ

    “(হে নবী) আপনি বলে দিন, হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর অত্যাচার করেছো, তোমরা আল্লাহ তা’আলার রহমত হতে নিরাশ হয়ো না। নিঃসন্দেহে আল্লাহ [অতীতের] সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করবেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও দয়ালু।”

    সূরা যুমার: ৫২ ও ৫৩

    তিনি আরও বলেন,

    قُل لِّلَّذِينَ كَفَرُوا إِن يَنتَهُوا يُغْفَرْ لَهُم مَّا قَدْ سَلَفَ

    “(হে নবী) আপনি কাফেরদেরকে বলে দিন যে, তারা যদি বিরত হয়ে যায়, তবে অতীতে যা কিছু ঘটে গেছে সেগুলো ক্ষমা করে দেয়া হবে।”

    সূরা আরাফ: ৩৮

    পাপের তওবার বিষয়ে বিভিন্ন আলেমের মন্তব্যঃ

    এ ছাড়াও বহু হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, দয়াময় আল্লাহ তাআলা তওবার মাধ্যমে বান্দার অতীতের সকল গুনাহ মোচন করে দেন। যেমন: ৯৯ জন মানুষ খুনকারীকে তওবার মাধ্যমে ক্ষমা করার হাদিস।

    উল্লেখ্য যে, নিম্নাক্ত হাদিসটি খুবই প্রসিদ্ধ এবং অনেক বড় বড় আলেম তাদের বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। তা হলঃ

    «ألم تعلم أن التوبة تجبُّ ما قبلها»

    “তুমি কি জানো না যে, তওবা অতীতের সকল গুনাহকে ধ্বংস করে দেয়?।

    “কিন্তু শাইখ আলবানী এটিকে “ভিত্তিহীন বা আমি এর কোন ভিত্তি সম্পর্কে জানি না” বলেছেন।

    সিলসিলা যঈফা/১০৩৯

    তবে যাই হোক, এর মমার্থে কোন ভুল নাই-যা উপরোক্ত আয়াত সমূহ ও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়। (আল্লাহ ভালো জানেন)

    আহলে ইলমগণ বলেন,

    أن التوبة من جميع الذنوب على سبيل الإجمال كافية

    “সকল গুনাহ থেকে একসাথে তওবা করাই যথেষ্ট।”

    ইবনে কাসির রহ. কুরআনের তওবা সংক্রান্ত কয়েকটি আয়াত (সূরা তওবা এর ৩৮, সূরা শুরা এর ২৫ এবং সূরা যুমার এর ৫৩ নং আয়াত) উল্লেখ করার পর বলেন,

    هذه الآية الكريمة دعوة لجميع العصاة من الكفرة وغيرهم إلى التوبة والإنابة، وإخبار بأن الله يغفر الذنوب جميعا لمن تاب منها، ورجع عنها، وإن كانت مهما كانت، وإن كثرت وكانت مثل زبد البحر. اهـ.”

    এই আয়াতগুলো সকল কাফের ও অন্য পাপিষ্ঠদেরকে তওবা ও প্রত্যাবর্তনের আহ্বান জানাচ্ছে আর এ তথ্য দিচ্ছে যে, যে ব্যক্তি আল্লাহর নিকট সকল প্রকার পাপাচার থেকে তওবা করবে এবং সেগুলো থেকে ফিরে আসবে তিনি তার সকল পাপরাশী ক্ষমা করা দিবেন-যদিও তা প্রচুর পরিমাণ হয়- যদিও তা সাগরের ফেনার মত হয়।”

    কুরআনের আয়াত, হাদিস ও আলেমদের বক্তব্যের আলোকে প্রমাণিত হল যে, মানুষ যদি তার অতীতের সকল গুনাহের জন্য অনুপ্ত হয়ে খাঁটি হৃদয়ে, সত্যিকার ভাবে এবং তওবার শর্তাবলী ঠিক রেখে আল্লাহর কাছে তওবা করে এবং তাঁর পথে ফিরে আসে তাহলে তিনি তার সকল পাপাচার মোচন করে তাকে পরিশুদ্ধ ও পবিত্র করে দিবেন। পাপের পরিমাণ, সংখ্যা ও ভয়াবহতা যাই হোক না কেন।

    প্রতিটি গুনাহের জন্য আলাদা আলাদা তওবা করা আবশ্যক নয়। নিশ্চয় আল্লাহ পরম করুণাময়, অতিশয় দয়ালু, ক্ষমাশীল এবং তিনি তওবা কারীদেরকে ভালবাসেন।

    অবশ্য মানুষের হক নষ্ট করা হলে মালিকের নিকট তা প্রত্যর্পণ করা বা তার নিকট ক্ষমা না নেয়া পর্যন্ত সাধারণ তওবা-ইস্তিগফার দ্বারা তা মোচন করা হবে না। আল্লাহু আলাম।

    মানুষের হক পরিশোধ

    প্রশ্ন: তওবা দ্বারা সকল গুনাহ মাফ হবে মানুষের হক ব্যতীত নাকি আগে মানুষের হক পরিশোধ না করলে কোন ব্যাপারে তওবা কবুল হবে না?

    উত্তর: কেউ যদি অন্যের হক নষ্ট করে তাহলে এর গুনাহ মোচন হবে না যতক্ষণ না মালিকের নিকট তার হক ফিরিয়ে দেয় বা তার নিকট ক্ষমা চেয়ে বিষয়টি সমাধান না করে।

    এ কারণে অন্যান্য গুনাহ মাফ হবে না-এমনটি নয়। অর্থাৎ যে সকল গুনাহ আল্লাহর হক সংক্রান্ত সেগুলো আল্লাহর নিকট তওবার মাধ্যমে তিনি ক্ষমা করবেন যদি তওবার শর্তানুযায়ী তওবা করে। কিন্তু মানুষের হক সংক্রান্ত গুনাহগুলো মোচনের জন্য অবশ্যই যার হক নষ্ট করেছে তাকে ফিরিয়ে দিতে হবে বা তার সাথে সমঝোতায় আসতে হবে।

    আরও পড়ুনঃ নিজের দোষত্রুটি ধরার উপায়

    আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।