Tag: তর্ক-বিতর্ক

  • তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাটি করা পথভ্রষ্টতার কারণ!!

    তর্ক-বিতর্ক ও ঝগড়া-ঝাটি করা পথভ্রষ্টতার কারণ!!

    বর্তমানে মুসলমানদের মাঝে লক্ষ্য করা যাচ্ছে, মাসআলা-মাসায়েল নিয়ে তর্ক-বিতর্ক ও মতভেদ মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এক পক্ষ অপর পক্ষকে ভয়ানক আক্রমণাত্মক ভাষায় আঘাত করছে। চলছে গালাগালি আর হিংসার উদগীড়ন।

    একে অপরকে কুরুচিপূর্ণ শব্দ প্রয়োগে ধোলায় করছেন। সব চেয়ে ভাবনার বিষয় হচ্ছে, একেবারে সাধারণ মানুষও ইলম ছাড়াই আলেমদের সাথে বিতর্ক জড়িয়ে পড়ছে। এ ক্ষেত্রে তারা ভদ্রতার সীমা অতিক্রম করে বক্তব্য দিচ্ছেন।

    এ পরিস্থিতি কোনভাবেই মুসলিম উম্মাহর জন্য কল্যাণকর নয়। বরং তা গোমরাহীর আলামত ও ভ্রষ্টতার পূর্বাভাষ। তাই আমাদের সতর্কতা অবলম্বন করা প্রয়োজন। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া (তাও শর্ত সাপেক্ষ) নিজেদের মাঝে বিতর্ক পরিহার করা প্রয়োজন।

    তর্ক-বিতর্ক এর অপকারীতাঃ

    কারণ আবু উমারা রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    مَا ضَلَّ قَوْمٌ بَعْدَ هُدًى كَانُوا عَلَيْهِ إِلَّا أُوتُوا الْجَدَلَ ثُمَّ تَلَا رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هَذِهِ الْآيَةَ ((مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ

    “কোন জাতি হেদায়েতের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকার পরে গোমরাহ হয় না যতক্ষণ না তারা তর্ক-বিতর্কে লিপ্ত হয়। অত:পর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই আয়াতটি পাঠ করলেন:
    مَا ضَرَبُوهُ لَكَ إِلَّا جَدَلًا – بَلْ هُمْ قَوْمٌ خَصِمُونَ
    “তারা আপনার সামনে যে উদাহরণ উপস্থাপন করে তা কেবল বিতর্কের জন্যেই করে। বস্তুত: তারা হল এক বিতর্ককারী সম্প্রদায়।”

    তিরমিযী হা/৩১৭৬, ইবনে মাজাহ হা/৪৭, সহীহ তারগীব- হাসান, আলবানী

    সত্য জানার পরেও শুধু প্রতিপক্ষের উপর বিজয়ী হওয়ার উদ্দেশ্যে অথবা ব্যক্তি, দল, মত, বংশ ইত্যাদির স্বার্থে অন্যায় জেনেও তার সমর্থনে তর্ক-বিতর্ক গোমরাহীর একটি কারণ। ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন,

    “শরীয়তে ঐ তর্ককে তিরস্কার করা হয়েছে যা ইলম ছাড়া অন্যায়ভাবে করা হয়। অথবা সত্য স্পষ্ট হওয়ার পরও করা হয়।”

    সুতরাং এখান থেকে বুঝা যায়, ঝগড়া-ঝাটি ও অন্যায় বিতর্ক গোমরাহীর আলামত।

    সত্য প্রতিষ্ঠান জন্য তর্ক-বিতর্ক

    পক্ষান্তরে বিতর্কের উদ্দেশ্য যদি হয়, সত্যকে সমর্থন করা বা অন্যায় কে অন্যায় হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা তবে তা কখনো ফরজে আইন; কখনো ফরজে কেফায়াহ। আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    ادْعُ إِلَىٰ سَبِيلِ رَبِّكَ بِالْحِكْمَةِ وَالْمَوْعِظَةِ الْحَسَنَةِ – وَجَادِلْهُم بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ- إِنَّ رَبَّكَ هُوَ أَعْلَمُ بِمَن ضَلَّ عَن سَبِيلِهِ

    “ডাক তোমার রবের পথে প্রজ্ঞা এবং সুন্দর উপদেশ বাণীর মাধ্যমে আর তাদের সাথে বিতর্ক কর সুন্দরতম পন্থায়। নিশ্চয় তোমার রব সব চেয়ে বেশি জানেন, কে তার পথে থেকে বিচ্যুত হয়েছে।”

    সূরা নাহল: ১২৫

    উক্ত আয়াতে কারীমায় দাওয়াতের দুটি চমৎকার মূলনীতি বলা হয়েছে। যথা:

    🔹 এক. হেকমত তথা কুরআন-সুন্নাহর দলীল দ্বারা দাওয়াত দেয়া।

    🔹 দুই. সুন্দর উপদেশ বাণী অর্থাৎ কুরআন-সুন্নাহয় যে সকল উৎসাহ ব্যাঞ্চক, সতর্ক বাণী, জান্নাতের নেয়ামতরাজী ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে দাওয়াত দেয়া।

    অনুরূপভাবে এখানে বিতর্ক করার একটি চমৎকার মূলনীতিও বলা হয়েছে। তা হল: যদি বিতর্কের প্রয়োজন হয় তবে সুন্দরতম পন্থায় তথা নম্রতা, ভদ্রতা, শালীনতা, প্রমাণ উপস্থাপন, ইলম (শরীয়তের জ্ঞান) এবং যৌক্তিক বক্তব্য পেশের মাধ্যমে বিতর্ক করতে হবে।

    গালাগালি ও চিৎকার-চেঁচামেচি করা হলে বিতর্কের উদ্দেশ্যই ব্যাহত হবে। বিতর্কের উদ্দেশ্য মানুষকে হেদায়েত করা; প্রতিপক্ষের উপর বিজয় প্রমাণ করা নয়।

    তাফসীরে ইবনে কাসীর ও তাফসীরে ইবনে সাদী থেকে সংক্ষেপায়িত

    আরও পড়ুনঃ দ্বীনের দাঈ এর আচরণ ও ভাষার ব্যবহার

    আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করুন। আমীন।

    লেখক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।