Tag: দুয়া কবুল

  • দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    প্রশ্নঃ দুআ ইউনুস কি, এটি পাঠের উপকারিতা কি, এটি পাঠের নিয়ম কি? খতমে ইউনুস নামে যে ইবাদত প্রচলিত আছে; এ বিষয়ে জানতে চাচ্ছি।

    নিম্নে দুআ ইউনুস এর পরিচয়, উপকারিতা এবং কখন কিভাবে কতবার তা পাঠ করতে হয় এবং সেই সাথে খতমে ইউনুস নামক বিদআত সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত হল।

    ক. দুআ ইউনুস কোনটি এবং এর উপকারিতা কি?

    সম্মানিত নবী ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দী অবস্থায় বিপদে পড়ে যে দুআ পাঠ করার কারণে মহান আল্লাহ তাকে মহাবিপদ থেকে উদ্ধার করেছিলেন তাকে দুআ ইউনুস বলা হয়। দুআটি হল, লা-ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের দলভুক্ত)।”

    এ ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা বলেন,

    وَذَا النُّونِ إِذ ذَّهَبَ مُغَاضِبًا فَظَنَّ أَن لَّن نَّقْدِرَ عَلَيْهِ فَنَادَىٰ فِي الظُّلُمَاتِ أَن لَّا إِلَـٰهَ إِلَّا أَنتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنتُ مِنَ الظَّالِمِينَ فَاسْتَجَبْنَا لَهُ وَنَجَّيْنَاهُ مِنَ الْغَمِّ ۚ وَكَذَٰلِكَ نُنجِي الْمُؤْمِنِينَ

    “এবং মাছ ওয়ালার (ইউনুস আ.) কথা স্মরণ করুন। তিনি ক্রুদ্ধ হয়ে চলে গিয়েছিলেন। অতঃপর মনে করেছিলেন যে, আমি তাঁকে ধৃত করতে পারব না। অতঃপর তিনি অন্ধকারের মধ্যে (মাছের পেটে থাকা অবস্থায়) এ কথা বলে আহবান করলেন: “লা ইলাহা ইল্লা আনতা, সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালেমীন” (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের [অবিচারী ও গুনাহগারদের] দলভুক্ত।” অতঃপর আমি তাঁর আহবানে সাড়া দিলাম এবং তাঁকে দুশ্চিন্তা থেকে মুক্তি দিলাম। আমি এমনি ভাবে বিশ্ববাসীদেরকে মুক্তি দিয়ে থাকি।”

    সূরা আম্বিয়া: ৮৭

    তাফসিরে ত্ববারীতে এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, আল্লাহ তাআলা এই আয়াতে বলেন,

    وكما أنجينا يونس من كرب الحبس فى بطن الحوت فى البحر إذ دعانا كذلك نجى المؤمنين من كربهم إذا إستغاثوا بنا و دعونا . و بنحو الذى قلنا فى ذلك جاء الأثر

    “আর ইউনুস (আ.) মাছের পেটে বন্দি দশা অবস্থায় আমাকে ডাকার ফলে যেভাবে তাকে মুক্তি দিয়েছিলাম সেভাবে আমি মুমিনদেরকেও বিপদ থেকে উদ্ধার করব যখন তারা আমার কাছে সাহায্য চায় এবং আমাকে ডাকে।”


    এ মর্মে হাদিস হল, সা’দ বিন আবী ওয়াক্কাস রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    دَعْوَةُ ذِي النُّونِ إِذْ دَعَا وَهُوَ فِي بَطْنِ الحُوتِ: لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ، فَإِنَّهُ لَمْ يَدْعُ بِهَا رَجُلٌ مُسْلِمٌ فِي شَيْءٍ قَطُّ إِلَّا اسْتَجَابَ اللَّهُ لَهُ

    “যুননুন (মাছ ওয়ালা) ইউনুস আ. মাছের পেটে দু’আ করেছিলেন: ‘লা ইলা-হা ইল্লা আনতা সুবহা-নাকা ইন্নী কুনতু মিনায যালিমীন’ (অর্থ: তুমি ব্যতীত সত্য কোন উপাস্য নেই; তুমি পূত পবিত্র-নিশ্চয় আমি জালিমদের (গুনাহগারদের) এর দলভুক্ত) কোন মুসলিম যখনই এর মাধ্যমে দুআ করে, আল্লাহ তাআলা অবশ্যই তার দু’আ কবুল করে থাকেন।”

    তিরমিজী, হা/ ৩৫০৫ [আল মাদানি প্রকাশনী], আল কালি-মুত তাইয়্যিব ১২২/৭৯, তা’লীকুর রাগীব ২/২৭৫, ৩/৪৩, মিশকাত, তাহকিক ছানী ২২৯২-সনদ: সহিহ

    খ. কখন কিভাবে কতবার দুআ ইউনুস পাঠ করতে হয়?

    যে কোন বালা-মসিবত, বিপদাপদ, দু:শ্চিন্তা, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ইত্যাদি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে দুআ ইউনুস পাঠ করা অত্যন্ত কার্যকর আমল। এর জন্য নির্দিষ্ট কোন সংখ্যা নাই। এটি পড়ার পর একান্ত বিনয়-নম্রতা, পূর্ণ আন্তরিকতা ও ভয়ভীতি সহকারে আল্লাহর নিকট দুআ করতে হয়।

    আমির সানআনী বলেন,

    فإن قيل: هذا ذكر لا دعاء! قلنا: هو ذكر يفتح به الدعاء ثم يدعو بما شاء ” انتهى من “التنوير

    “যদি বলা হয়, এটা তো একটা জিকির; দুআ নয়। আমরা বলব, এটি এমন একটি জিকির যা দ্বারা দুআ শুরু করা হয়। এটা পড়ার পর যা ইচ্ছা দুআ করবে।”

    আত তানবীর, ৬/৯৮
    • এভাবে প্রথমে দুআ ইউনুস পাঠ করার পর দুআ করলে আশা করা যায়, মহান দয়ালু দাতা আল্লাহ দুআ কবুল করবেন। তবে শর্ত হল, দুআ কবুলের শর্তাবলী ও আদব ঠিক থাকতে হবে। যেমন:
    • হালাল উপার্জন থেকে খাদ্য-পানীয় গ্রহণ করা এবং হালাল অর্থের উপর জীবন যাপন করা।
    • দুআর শুরুতে আল্লাহর প্রশংসা ও নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরুদ পাঠ করা। দুআ শেষে আবারও দরুদ পাঠ করা ভালো।
    • দুআ কবুল হওয়ার দৃঢ় আস্থা ও মনোভাব সহকারে দুআ করা।
    • একান্ত বিনয়-নম্রতার সাথে কান্না বিজড়িত কণ্ঠে এক দুআ বারবার করা।
    • দুআ করতে করতে বিরক্ত না হওয়া।
    • দুআ কবুলের জন্য তাড়াহুড়া না করা।
    • দুআর মধ্যে গুনাহের কিছু না থাকা ইত্যাদি।

    আরও মনে রাখতে হবে, যে কোন দুআ আল্লাহ তাআলা তিনভাবে কবুল করেন-যা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত। যথা:

    • মহান আল্লাহ বান্দাকে কখনো তার প্রত্যাশিত চাওয়াটি দুনিয়াতেই পূরণ করেন।
    • কখনো তিনি এর প্রতিদান আখিরাতের জন্য জমা রাখেন। তিনি বান্দার দুনিয়াবি প্রত্যাশা পূরণ না করে এই দুআর বিনিময়ে আখিরাতে তাকে মহা পুরষ্কারে ভূষিত করবেন-যা তার জন্য দুনিয়া থেকে আরও বেশি কল্যাণকর।
    • কখনো এই দুআর কারণে তাকে বড় ধরণের বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন-যার তার জন্য অবশ্যম্ভাবী ছিল।

    গ. খতমে ইউনুস করা বিদআত:

    বিপদাপদ ও বালামুসিবত থেকে পরিত্রাণ লাভ, রোগ-ব্যাধি থেকে আরোগ্য লাভ, মৃতপ্রায় ব্যক্তির সহজে জান কবজ, মৃত ব্যক্তির গোর আজাব মাফ ইত্যাদি উদ্দেশ্যে হাফেজ, ইমাম ও মৌলভীদেরকে টাকার মাধ্যমে ভাড়া করে অথবা সাধারণ লোকজন জমায়েত করে তসবি দানা, ডিজিটাল কাউন্টার মেশিন, তেঁতুলের বিচি, পাথরের টুকরা, কঙ্কর ইত্যাদি দ্বারা সত্তর হাজার বার অথবা সোয়া লক্ষ বার বা ৩১৩ বা এ জাতীয় নিদিষ্ট সংখ্যায় পাঠ করার মাধ্যমে ‘খতমে ইউনুস’ বা ‘দোআ ইউনুসের খতম’ করার প্রচলিত রীতি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও শরিয়ত বর্হিভূত বিদআত।

    এ ব্যাপারে কুরআন, হাদিস ও ফিকাহের নির্ভরযোগ্য কিতাবাদিতে এর কোন অস্তিত্ব নেই বরং এগুলো তথাকথিত বুর্জগদের পক্ষ থেকে দীনের মধ্যে নতুন সংযোজন (বিদআত) যা ক্রমান্বয়ে মুসলিম সমাজে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি করা (বিদআত তৈরি করা)-শরিয়তের দৃষ্টিতে যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ।

    যেমন: হাদিসে এসেছে:

    عَنْ جَابِرٍ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللّٰهُ عَلَيْهِ وَسَلَّم أَمَّا بَعْدُ فَإِنَّ خَيْرَ الْحَدِيْثِ كِتَابُ اللهِ وَخَيْرَ الْهَدْىِ هَدْىُ مُحَمَّدٍ وَشَرَّ الأُمُوْرِ مُحْدَثَاتُهَا وَكُلُّ بِدْعَةٍ ضَلاَلَةٌ. وَفِيْ نَسَائِي (وَكُلُّ ضَلاَلَةٍ فِى النَّارِ).

    জাবের রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হামদ ও সালাতের পর বলেন, ‘নিশ্চয়ই সর্বশ্রেষ্ঠ বাণী হল, আল্লাহর কিতাব এবং সর্ব শ্রেষ্ঠ হেদায়েত (পথনির্দেশ) হল, মুহাম্মদের হেদায়েত (পথনির্দেশ)। আর নিকৃষ্টতম কাজ হল, দ্বীনের মধ্যে নতুন সৃষ্টি এবং প্রত্যেক নতুন সৃষ্টিই হল ভ্রষ্টতা।”’

    (মুসলিম, মিশকাত হা/১৪১)।
    আর নাসাঈতে রয়েছে, ‘প্রত্যেক ভ্রষ্টতার পরিণতি জাহান্নাম’ (নাসাঈ হা/১৫৭৮)

    আল্লাহ আমাদেরকে সব ধরণের বিদআত ও গোমরাহি থেকে হেফাজত করুন। আমীন

    ➧ ডক্টর আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) লিখেছেন:

    বিভিন্ন প্রকরের খতম এর বিদাআত সমূহ:

    আমাদের সমাজে বিভিন্ন প্রকারের ‘খতম’ প্রচলিত আছে। এধরনের খতমের নিয়ম, ফজিলত ইত্যাদির বিবরণ ‘মকসুদুল মোমিনীন’, ‘নাফেউল খালায়েক’ ইত্যাদি বিভিন্ন বইয়ে পাওয়া যায়।

    সাধারণত: দুটি কারণে ‘খতম’ পাঠ করা হয়:

    • বিভিন্ন বিপদাপদ কাটানো বা জাগতিক ফল লাভ।
    • মৃতের জন্য সাওয়াব পাঠানো।

    উভয় প্রকারের খতমই ‘বানোয়াট’ ও ভিত্তিহীন। এ সকল খতমের জন্য পঠিত বাক্যগুলি অধিকাংশই খুবই ভাল বাক্য। এগুলি কুরআনের আয়াত বা সুন্নাহ সম্মত দোয়া ও যিকর। কিন্তু এগুলি এক লক্ষ বা সোয়া লক্ষ বার পাঠের কোনো নির্ধারিত ফযীলত, গুরুত্ব বা নির্দেশনা কিছুই কোনো সহীহ বা যয়ীফ হাদীসে বলা হয় নি। এ সকল ‘খতম’ সবই বানোয়াট।

    উপরন্তু এগুলিকে কেন্দ্র করে কিছু হাদীসও বানানো হয়েছে। ‘বিসমিল্লাহ’ খতম, দোয়া ইউনুস খতম, কালেমা খতম ইত্যাদি সবই এ পর্যায়ের। বলা হয় ‘সোয়া লাখ বার ‘বিসমিল্লাহ’ পড়লে অমুক ফল লাভ করা যায়’ বা ‘সোয়া লাখ বার দোয়া ইউনুস পাঠ করলে অমুক ফল পাওয়া যায়’ ইত্যাদি। এগুলি সবই ‘বুজুর্গ’দের অভিজ্ঞতার আলোকে বানানো এবং কোনোটিই হাদীস নয়।


    তাসমিয়া বা (বিসমিলাহ), তাহলীল বা (লা ইলাহা ইলালাহ) ও দোয়া ইউনুস এর ফযিলত ও সাওয়াবের বিষয়ে সহীহ হাদীস রয়েছে। তবে এগুলো ১ লক্ষ, সোয়া লক্ষ ইত্যাদি নির্ধারিত সংখ্যায় পাঠ করার বিষয়ে কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি। “খতমে খাজেগানের” মধ্যে পঠিত কিছু দোয়া সুন্নাহ সম্মত ও কিছু দোয়া বানানো। তবে পদ্ধিতিটি পুরোটাই বানানো।” [সুত্রঃ বই- হাদীসের নামে জালিয়াতি]

    সুতরাং বুজুর্গদের আমল বা পরীক্ষিত আমল ইত্যাদির নামে সমাজে ব্যাপকভাবে প্রচলিত তথাকথিত ‘খতমে ইউনুস’ নামক বিদআত অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এ থেকে মুসলিম সমাজকে অবশ্যই বের হয়ে আসতে হবে।

    আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সকল বিপদাপদ থেকে রক্ষা করুন। সেই সাথে দীনের সঠিক জ্ঞান, বুঝ ও তদনুযায়ী আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ সালাতে মাতৃভাষায় দোয়া করার বিধান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান মাস সিয়াম সাধনার মাস। হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে এ মাসে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।

    স্বাভাবতই আমাদের মনে রমাযান মাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে থাকে। তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার ব্যাখ্যা মূল উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

    ১) সিয়াম শব্দের আভিধানিক ও শরঈ অর্থ কি?

    উত্তরঃ সিয়াম শব্দটি বহুবচন। একবচন হল, সওম। [ফারসি ভাষায় রোজা।] সওম শব্দের শাব্দিক অর্থ: বিরত হওয়া বা রাখা। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে সওম বলা হয়, বিশেষ ধরণের বিরত থাকাকে।

    অর্থাৎ সওয়াব অর্জনের নিয়তে ফজর উদিত হওয়ার একটু পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অনেক আলেম বর্জনীয় বিষয় সমূহের মধ্যে অশ্লীল যে কোন কথা ও কাজকেও উল্লেখ করেছেন।

    ২) সিয়াম/রোজা ইসলামের কততম স্তম্ভ?

    উত্তরঃ সিয়াম ইসলামের ৪র্থ স্তম্ভ।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

    عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ

    “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর। আর তা হলঃ
    (১) “একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও মাবূদ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল,
    (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
    (৩) যাকাত প্রদান করা,
    (৪) রামজানের সিয়াম (রোজা) পালন করা এবং
    (৫) কাবা ঘরের হজ্জ সম্পাদন করা।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ৩) সিয়াম কখন ফরজ হয়?

    উত্তর: সিয়াম ফরজ হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের ২য় বর্ষে, শাবান মাসের ২৮ তারিখে, সোমবার দিন। [ফিকহুস সুন্নাহ ২/৫০১]

    ৪) কুরআনে কোথায় সিয়াম ফরজ বলা হয়েছে?

    উত্তর: সূরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত দ্বারা মুমিনদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”

    (সূরা বাকারা: ১৮৩)

    ৫) কারও উপর সিয়াম ফরজ হওয়ার শর্ত কয় টি?

    উত্তর: রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত ৬টি। যথা:

    • (ক) মুসলিম হওয়া। (কাফেরের উপর সিয়াম ফরজ নয়, করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হবে।)
    • (খ) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (গ) সুস্থ মস্তিষ্ক বা আকল সম্পন্ন ব্যক্তির উপর। (বেহুঁশ বা পাগলের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (ঘ) মুকিম বা অবস্থান কারী (মুসাফিরের উপর সিয়াম ফরজ নয়। তবে তারা রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে)
    • (ঙ) দৈহিক ভাবে সক্ষম (রোজা রাখতে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তির উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (চ) শরিয়তের বাধা মুক্ত হওয়া। যেমন: নারীর ক্ষেত্রে সে যদি হায়েজ বা নেফাস যুক্ত (প্রসূতি হয়) হয় তবে তার উপর রোজা রাখা ফরজ নয়। (তারা পরবর্তীতে ঐ রোজাগুলোর কাযা আদায় করবে)

    ৬) ফরজ রোজা কয় প্রকার?

    উত্তর: ফরজ রোজা ৩ প্রকার। যথা:

    • (ক) রমজানের রোজা
    • (খ) কাফফারার রোজা (কসম ভঙ্গ, মানত ভঙ্গ, রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি)
    • (গ) মানতের রোজা

    ৭) বছরের কয় দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

    উত্তর: ৬ দিন। যথাঃ ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ), ঈদুল আযহা (কুরবানির ঈদ) এর দিন এবং এর পরের আরও তিন দিন (আইয়ামে তাশরিক) এবং ইয়ামুশ শাক্ক (يوم الشك) বা ‘সন্দেহের দিন’। (শাবান মাসের ৩০তম দিনে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রমজানের চাঁদ উঠেছে কি না তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে ইয়ামুশ শাক্ক বা ‘সন্দেহের দিন’ বলা হয়। এ দিন রোজা থাকার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।)

    ৮) সিয়ামের নিয়ত যদি সওয়াবের সাথে অন্য কিছু হয়, কি হবে?

    রোজা রাখার ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়তের পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ত থাকলে কি রোজা বাতিল হয়ে যাবে? না কি এতে সওয়াব কমে যাবে? না কি রোজার কোনও ক্ষতি হবে না?

    উত্তর: রোজা বাতিল হবে না কিন্তু সওয়াব কমে যাবে।

    ৯) রমাযানকে কিভাবে স্বাগত জানাবো বা বরণ করবো?

    উত্তর: নিচে এ বিষয়ে দশটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমজানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    ১০) রজব ও শাবান মাসে রমাযানের জন্য করা দোয়া বিষয়ক হাদিস সম্পর্কে…

    “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাহরাই রাজাবা ওয়া শাবানা।” এ হাদিসটির মান কি?

    উত্তর: জঈফ বা দুর্বল।নিচে উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অভিমত উল্লেখ করা হল:

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

    উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।” অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।”

    [মুসনাদে আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া]

    মান: হাদিসটি জঈফ বা দুর্বল। কারণ:- এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মুনকারুল হাদিস।

    • ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।” কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”
    • ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।” [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)-

    ১১) কোন তিন শ্রেণীর মানুষের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر

    “তিন জন ব্যক্তির দুআ কবুল করা হয়। যথা:১. রোজাদারের দুআ, ২. মজলুম বা নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ।৩. এবং মুসাফিরের দুআ।”

    [সহিহুল জামে-আলবানি]

    অন্য বর্ণনায়: রোজাদারের পরিবর্তে সন্তানের জন্য পিতার দুআ উল্লেখিত হয়েছে।

    ১২) রমাযান শুরু হলে সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তাআলা যেসব পরিবর্তন ঘটান সেগুলো ৩টি উল্লেখ করুন।

    উত্তর: ১. জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় (কোনও কোনও বর্ণনায় আসমানের দরজা সমূহ খোলা হয়)

    ২. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়,

    ৩. এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

    যেমন: হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

    “যখন রমজান মাস শুরু হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো পরিপূর্ণভাবে খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ মজবুত ভাবে বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দ্বারা বেধে দেয়া হয়।”

    (সহিহ বুখারি)

    ১৩) বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন এবং শ্রেষ্ঠ দশ রাত কোনগুলো?

    উত্তর: বছরের শ্রেষ্ঠ ১০টি দিন হল, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন আর শ্রেষ্ঠ রাত হল, রমজান মাসের শেষ দশ রাত।

    ১৪) রমাযান এ কয় ধাপে বান্দার গুনাহ মোচন করা হয়?

    উত্তর: তিন ধাপে। যথাঃ

    ১. সিয়াম পালন।

    ২. কিয়ামুল লায়ল আদায় (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ এর সালাত আদায়)

    ৩. লাইলাতুল কদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সালাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    তিনি আরও বলেছেন,

    مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ১৫) রোজাদারগণ রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, এই শব্দের অর্থ কি?

    উত্তর: রাইয়ান অর্থ: রাইয়ান শব্দটি আরবি ري থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ হল চূড়ান্ত তৃপ্তি সহকারে পান করা, পিপাষা নিবারিত হওয়া, পানি সিঞ্চন করা ইত্যাদি। রোজাদারগণ রইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

    “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম বলা হয় ‘রইয়ান’, কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল সিয়াম পালনকারীগণ। সেখান দিয়ে তারা ব্যতীত আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তখন তারা উঠে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

    (বুখারি ও মুসলিম)

    রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশের পর সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যার ফলে কোনোদিন তারা তৃষ্ণার্ত হবে না। ইবনে খুযাইমা উপরোক্ত হাদিসের আরও একটু বর্ধিত বর্ণনা দিয়েছেন। তা হল: مَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا “যারা প্রবেশ করবে, তারা পান করবে এবং যে পান করবে সে আর কোনোদিন তৃষ্ণার্ত হবে না।” রোজাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান নামকরণের তাৎপর্যও তাই।

    ১৬) সিয়াম ও কুরআন কি বান্দার জন্য সুপারিশ করবে?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

    “কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে: হে আমার পালনকর্তা! আমি তাকে দিবসে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।”

    [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও ত্বাবরানী (কাবীর গ্রন্থে), ইবনে আবীদ দুনিয়া [আল জু’ও গ্রন্থে] উত্তম সনদে এবং হাকেম। হাকেম বলেনঃ মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহিহ]

    ১৭) কেউ রোজাদারের সাথে ঝগড়া করতে আসলে উত্তরে কি বলতে হবে?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

    “যখন তোমাদের কারো রোজার দিন উপস্থিত হয়, তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উঁচু কণ্ঠে কথা না বলে অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সহিত লড়াই-ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি সিয়াম ব্রতে রত আছি।”

    [বুখারি ও মুসলিম]

    ১৮) যার পেটে কুরআনের কোনও অংশ নেই তার উদাহরণ কিসের মত?

    উত্তরঃ পরিত্যক্ত ঘরের মত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنْ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

    “যার পেটে মোটেও কুরআন নেই সে তো একটা পরিত্যক্ত ঘরের মত।

    তিরমিযী, হাসান-সহীহ

    ১৯) “তারাবিহ এর সালাত ১১ রাকআতের বেশি পড়া বিদআত।” এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ না, এ কথা সঠিক নয়। মূলতঃ তারাবীহ কত রাকআত তা নিয়ে উলামাদের মধ্যে বিস্তর ইখতেলাফ (মতবিরোধ) আছে। কিন্তু বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাকাত আদায় করাই উত্তম। কেননা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে,

    مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান বা অন্য কোন সময়ে ১১ রাকাআতের বেশী পড়তেন না।”

    বুখারি ও মুসলিম

    ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان صلاةُ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم ثلاثَ عَشرةَ ركعةً. يعني: باللَّيل

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামায ছিল ১৩ রাকাত।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    কিন্তু যদি এর চেয়ে বেশী ২০ বা ৩০ বা ততোধিক রাকাত আদায় করা হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    أنَّ رجلًا سألَ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ اللَّيل، فقال رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: صلاةُ الليلِ مَثْنَى مثنَى، فإذا خشِيَ أحدُكم الصبحَ صلَّى ركعةً واحدةً، تُوتِر له ما قدْ صلَّى

    “জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাতের নামায দু দু রাকাত করে পড়বে। তোমাদের কেউ যদি এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে সে এক রাকাত পড়বে। তখন এর মাধ্যমে তার নামায বেজোড় বা বিতর হয়ে যাবে”।

    বুখারি ও মুসলিম

    অতএব ১১ রাকাতই পড়তে হবে, এর বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথা যেমন বাড়াবাড়ি। অনুরূপ ২৩ রাকাতই পড়তে হবে, এরচেয়ে কম বা বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথাও বাড়াবাড়ি।

    ২০) রমাযান মাসে উমরা করার ফজিলত কী?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي

    “রমাযান এ একটি উমরাতে একটি হজ্জের সওয়াব রয়েছে। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্জ পালনের সওয়াব রয়েছে।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    আরও পড়ুনঃ রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন