গোসল, একজন মানুষের পরিস্কার হবার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের অনেক তাৎপর্য আছে। বিশেষ করে ফরজ-গোসল এর বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের স্পষ্ট ধারণা রাখাটা জরুরী।
🚿 গোসল ফরয (আবশ্যক) হওয়ার কারণ সমূহ
নিম্ন লিখিত কারণগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে গোসল ফরয (আবশ্যক) হয়ঃ
১) স্বপ্নদোষ বা অন্য কোন কারণে (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়-পুরুষ বা মহিলার) বীর্যপাত হওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)
২) পুরুষ ও মহিলার লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলেই উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়- বীর্যপাত হোক বা না হোক। (আহমাদ, মুসলিম)
৩) মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস তথা মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। । (সূরা বাকারা: ২২২)
৪) যুদ্ধ ময়দানের শহীদ ব্যতীত মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরয।
৫) ইহুদী বা খৃষ্টান বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল ফরয না কি মুস্তাহাব- এ বিষয়ে মহামতি ইমামদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের অভিমত হল, কোন কাফের ইসলামে প্রবেশ করলে তার জন্য গোসল করা ফরয। পক্ষান্তরে জুমহুর (অধিকাংশ) ইমাম তথা ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও শাফেঈ প্রমূখের অভিমত হল, ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয় এবং এটি অধিক নির্ভরযোগ্য মত।
🚿 গোসলের পদ্ধতি
প্রথমে নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। লজ্জা স্থানে পানি ঢেলে উহা পরিষ্কার করবে। অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে। মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল খিলাল করবে। যখন বুঝবে যে, চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি ঢালবে এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। এ ক্ষেত্রে ডান পার্শ্ব থেকে কাজ আরম্ভ করবে।
মা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোসলের পদ্ধতি এভাবেই এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)
🚿 গোসলের ফরয দু’টিঃ
১) নিয়ত করা।
২) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা (মুখ ও নাখের ভেতর পানি পৌঁছানোও এর অন্তর্ভূক্ত)
🚿 যেসব ক্ষেত্রে গোসল মুস্তাহাব
১) জুম’আর দিন গোসল করা। (সহীহ মুসলিম)
২) ঈদের দিন গোসল করা।
৩) হজ্জ বা উমরাহ্র জন্য ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (জামে তিরমিযী, সুনানে দারাকুত্বনী)
৪) হজ্জ বা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
৫) সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে গোসল করা।
৬) ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল মুস্তাহাব (অধিক নির্ভরযোগ্য মতানুসারে)
🚿 গোসল ফরয অবস্থায় যা যা করা হারাম
১) সালাত আদায় করা।
২) কা’বা ঘরের তওয়াফ করা।
৩) কুরআন স্পর্শ করা (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে)।
৪) কুরআন তিলাওয়াত করা (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
৫) মসজিদে অবস্থান করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্)
গোসল ফরয অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই হারাম নয়। যেমন, ঘুমানো, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, গৃরস্থালীর কাজ..ইত্যাদি।
উৎস: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইড্ন্সে সেন্টারের পাঠ্যপুস্তক ফিকহ (লেভের-১) থেকে
অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
সম্পদনা ও পরিমার্জনা: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব