Tag: নামায

  • ইশা সালাতের শুরু ও শেষ সময়

    ইশা সালাতের শুরু ও শেষ সময়

    ইশা সালাতের ওয়াক্ত (সময়) শুরু ও শেষ কখন? ইশা সালাত আদায়ে একটু দেরী হয়ে গেলে সমস্যা হবে কি? মধ্যরাত পর্যন্ত সময় থাকে নাকি ফজরের আগ পর্যন্ত সময় থাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানাবেন।

    উত্তরঃ মাগরিবের সময় শেষ হওয়ার সাথে সাথেই (অর্থাৎ পশ্চিম দিগন্তের লাল আভা অদৃশ্য হওয়ার সাথে সাথে) ইশার ওয়াক্ত শুরু হয় এবং মধ্যরাত পর্যন্ত তা বিদ্যমান থাকে।

    এ মর্মে হাদিস হল:

    عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرٍو عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ وَقْتُ الظُّهْرِ مَا لَمْ يَحْضُرِ الْعَصْرُ وَوَقْتُ الْعَصْرِ مَا لَمْ تَصْفَرَّ الشَّمْسُ وَوَقْتُ الْمَغْرِبِ مَا لَمْ يَسْقُطْ ثَوْرُ الشَّفَقِ وَوَقْتُ الْعِشَاءِ إِلَى نِصْفِ اللَّيْلِ وَوَقْتُ الْفَجْرِ مَا لَمْ تَطْلُعِ الشَّمْسُ

    ‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর রা. থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ‘আসরের সলাতের ওয়াক্ত না হওয়া পর্যন্ত যোহরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। আর সূর্য বিবর্ণ হয়ে সোনালি বা তাম্রবর্ণ ধারণ করা পর্যন্ত আসরের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। সন্ধ্যাকালীন গোধূলি বা পশ্চিম দিগন্তের রক্তিম আভা অন্তর্হিত না হওয়া পর্যন্ত মাগরিবের সলাতের ওয়াক্ত থাকে। ইশার সলাতের সময় থাকে অর্ধ-রাত্রি পর্যন্ত। আর ফজরের সলাতের সময় থাকে যতক্ষণ সূর্যোদয় না হয়।”

    সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: মসজিদ ও সালাতের স্থানসমূহ, অধ্যায়: পাঁচ ওয়াক্ত ফরয সলাতের সময়, হা/১২৭৩০

    ব্যতিক্রমঃ

    তবে কেউ যদি ভুলে যায় অথবা ঘুমের কারণে যথাসময়ে পড়তে না পারে তাহলে যখনই তার স্মরণ হবে হবে বা ঘুম ভাঙ্গবে তখনোই কাল বিলম্ব না করে তা আদায় করবে তাহলে গুনাহ হবে না। কিন্তু ইচ্ছাকৃত ভাবে অর্ধরাত্রি অতিক্রম করে ইশার নামায পড়া জায়েয নাই।

    অবশ্য কিছু আলেমের মতে, জরুরত বশত: ফরজের আগ পর্যন্ত পড়া জায়েয রয়েছে। অর্থাৎ বিশেষ প্রয়োজন বশত: ফরজ হওয়া আগ পর্যন্ত জায়েয। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি করা ঠিক নয়।

    কিন্তু শক্তিশালী দলীল থাকার কারণে প্রথম অভিমতটি অধিক অগ্রাধিকার যোগ্য। সতর্কতা বিবেচনায়ও এটি অধিক গ্রহণযোগ্য। কেননা সালাতের মত গুরুত্বপূর্ণ ইবাদতের ক্ষেত্রে সর্তকতা কাম্য।

    সুতরাং সর্বাধিক সঠিক কথা হল, ইশার সালাতের শেষ সময় হল, অর্ধরাত্রি। এর পরে আদায় করলে তা কাযা হিসেবে গণ্য হবে। [এ মত ব্যক্ত করেছেন আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালিহ আল উসাইমীন রহ (শারহুল মুমতি ২/৫৩)]

    মধ্যরাত নির্ধারণের পদ্ধতি কি?

    মধ্যরাত নির্ধারণের পদ্ধতি হল, সূর্যাস্ত থেকে ফজরের সময় হওয়ার সময় হিসাব করে এর ঠিক মধ্যবর্তী সময়টা মধ্যরাত্রি তথা ইশার নামাযের শেষ ওয়াক্ত। 

    উদাহরণ: সূর্য যদি সন্ধ্যা ৫টায় অস্ত যায় আর ফজরের সময় হয় ভোর ৫টায়। তাহলে তার মানে হল, মধ্যরাত রাত ১১টা। অনুরূপভাবে, সন্ধ্যা ৫ টায় সূর্য অস্ত গিয়ে ভোর ৬টায় ফজর হলে মধ্যরাত্রি হবে রাত ১১.৩০ মি:।

    আরও পড়ুনঃ মাগরিব এর শুরুর ও শেষ সময়

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • হাফ প্যান্ট এবং টি শার্ট পরে সালাতের বিধান

    হাফ প্যান্ট এবং টি শার্ট পরে সালাতের বিধান

    প্রশ্নঃ সালাতে সতর তথা শরীরের কতটুকু ঢাকা আবশ্যক? হাফ প্যান্ট পরিহিত (হাঁটু ঢাকা অবস্থায়) বা হাফ শার্ট/টি শার্ট পরিধান করে সালাত আদায় করলে তা কি শুদ্ধ হবে?

    উত্তরঃ সালাতে পুরুষদের ন্যূনতম সতর হল, দু কাঁধ এবং নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা। অর্থাৎ সর্ব নিম্ন এতটুকু ঢাকা থাকা সালাত শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।

    অবশ্য কাঁধ ঢাকা শর্ত কি না এ ব্যাপারে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। তবে একাধিক বিশুদ্ধ হাদিসের আলোকে সালাতে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। যেমন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে:

    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ لاَ يُصَلِّ أَحَدُكُمْ فِي الثَّوْبِ الْوَاحِدِ لَيْسَ عَلَى مَنْكِبَيْهِ مِنْهُ شَىْءٌ ‏”‏ ‏

    আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন কাঁধ খোলা রেখে এক কাপড়ে সালাত আদায় না করে।”

    সহীহ বুখারী ও মুসলিম

    হাদিসে আরও বর্ণিত হয়েছে:


    عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ فِي ثَوْبٍ فَلْيُخَالِفْ بِطَرَفَيْهِ عَلَى عَاتِقَيْه ‏”

    আবু হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ এক কাপড়ে সলাত আদায় করলে সে যেন কাপড়ের ডান পাশকে বাম কাঁধের উপর এবং বাম পাশকে ডান কাঁধের উপর ঝুলিয়ে রাখে।”

    সহীহ মুসলিম

    এ হাদিসদ্বয় থেকে দু কাঁধ ঢাকার মতটি অধিক শক্তিশালী বলে প্রতিয়মান হয়। অবশ্য যে সকল ফকিহগণ কাঁধ ঢাকার বিষয়টিকে আবশ্যক মনে করে না তাদের মতে, কাঁধ ঢাকা সালাতের একটি সৌন্দর্য বা আদব মাত্র; এর বেশি নয়। যা হোক, একান্ত জরুরি পরিস্থিতির শিকার না হলে ইচ্ছাকৃতভাবে দু কাঁধ খোলা রেখে সালাত আদায় করা ঠিক নয়।

    উল্লেখ্য যে, মহিলাদের জন্য পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা না থাকলে মুখ মণ্ডল ও দু হাতের কব্জি ব্যতিরেকে মাথা থেকে পা পর্যন্ত সারা শরীর ঢাকা আবশ্যক। আর পর পুরুষ দেখার সম্ভাবনা থাকলে মুখ ও হাতের কব্জি দ্বয়ও ঢাকতে হবে।

    সুতরাং কোন পুরুষ যদি একটি গামছা/তোয়ালে দ্বারা তার দু কাঁধ ঢাকে বা হাফ শার্ট বা টি শার্ট পরিধান করে এবং এতটুকু লম্বা হাফ প্যান্ট পরিধান করে যে, তার নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢেকে যায় তাহলে তাতে সালাত শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

    তবে একান্ত প্রয়োজন ছাড়া সালাতে এত ছোট পোশাক পরা উচিৎ নয় বরং সারা শরীর সুন্দরভাবে আবৃত করত: শালীন ও রুচি সম্মত জামা-কাপড় পরিধান করাই সালাতের সৌন্দর্য ও আদব।

    আরও পড়ুনঃ টুপি-পাগড়ি ছাড়া সালাত আদায় করা কি মাকরূহ?

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • মহিলাদের সিজদা এর সঠিক পদ্ধতি

    মহিলাদের সিজদা এর সঠিক পদ্ধতি

    প্রশ্নঃ আমাদের সমাজে নারী এবং পুরুষ দুই ভাবে সিজদা করে। মেয়েরা দুই হাত ও শরীর জমিনের সাথে লেপ্টিয়ে সিজদা করেন, আর পুরুষরা লেপ্টে দেন না। জানতে চাচ্ছি নামাজ/সালাত এর মধ্যে মহিলারা কিভাবে সিজদা দিবে?

    উত্তরঃ আমাদের সমাজে প্রচলিত পদ্ধতিতে মহিলারা শরীর লেপ্টিয়ে বিছিয়ে দেন জমিনে, দুই হাত মিলিয়ে দেন জমিনে যা স্পষ্ট হাদিস বিরোধী এবং তা পরিতাজ্য

    🌀 রাসুল (সাঃ) দুই হাত মাটিতে বিছিয়ে দিতেন না। বরং তা জমিন থেকে উপরে (বুখারী, আবু দাউদ) এবং পেটের দুই পাশ থেকে দুরে রাখতেন। (বুখারী, মুসলিম)

    🌀 হাটু, পেট, হাত, মাথা এই অঙ্গগুলোর মাঝখানে এমন ফাঁকা থাকতে হয় যেন এই ফাকা দিয়ে একটি বকরীর বাচ্চা চলে যেতে পারে| (সহিহ মুসলিম)

    🌀 আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    اعتدلوا في السجود، ولا يبسط أحدكم ذراعيه انبساط الكلب.

    “তোমরা সেজদার মধ্যে স্থির হও, তোমাদের কেউ তার বাহুদ্বয় কুকুরের ন্যায় বিছিয়ে রাখবে না”।

    বুখারি: (৮২২), মুসলিম: (৪৯৩)

    এ বিধানগুলো নারী-পুরুষের জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য।

    আরও পড়ুনঃ হায়েজ-নেফাস (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • রজব মাসের ইবাদত

    রজব মাসের ইবাদত

    রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামায, রোযা, উমরা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে?

    উত্তরঃ রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোযা রাখা, নফল নামায পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।

    যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।

    রজব এর ইবাদত সম্পর্কেঃ

    ◑◑ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:

    “রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোযা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোযা রাখতেন। তিনি রমাযান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা রাখতেন রমাযান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতেন না।”

    বুখারি, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম

    রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফযিলতে সব চেয়ে বেশী যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দুয়াটি:

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَب، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ 

    “হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমাযান পর্যন্ত পৌঁছাও।”

    মুসনাদ আহমদ, (১/২৫৯)।

    এ হাদিসটি দুর্বল।

    এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন: “চিনি না এই ব্যক্তি কে?”

    আর তিনি তার যু্আফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন: মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।”

    [ দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)]

    আরও অভিমতঃ

    ◑◑ ইবনে তাইমিয়া রহ. আরও বলেন:

    “রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোযার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।”

    ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা

    ◑◑ ইবনে রজব বলেন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবীদের থেকে কোন কিছুই সহিহ ভাবে প্রমাণিত হয় নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশী বেশী রোযা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন: আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।

    কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহিহ হাদিস প্রমাণিত হয় নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।

    ◑◑ আবু শামা রহ. বলেন:

    কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ নয় শরীয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।

    ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফযিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন, আরাফার দিনে রোযা রাখা, আশুরার দিনে রোযা রাখা, গভীর রাতে নফল নামায পড়া, রামাযান মাসে উমরা আদায় করা।

    অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফযিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর-যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ।

    মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। (আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮)
    [আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]

    রজব মাসের নামে প্রচলিত ইবাদত বিদআত

    সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামায, নফল রোযা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যাহত রাখতে পারে।

    মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে আলাদা কোন ধরণের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।কিন্তু যেহেতু এটি চারটি হারাম মাসের অন্তর্ভূক্ত সেহেতু যথাসাধ্য সাধারণ।

    রজব মাস সম্পর্কিত প্রচলিত বিদআত গুলি সহ অন্য যে কোন বিদআতের ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা সাতটি দিক জানতে এই লেখাটি পড়তে পারেন।

    নফল ইবাদত-বন্দেগি ও নেকির কাজ করার পাশাপাশি সব ধরণের অন্যায়-অশ্লীলতা ও গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমিন।
    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।