Tag: পানাহার

  • শরিয়তের দৃষ্টিতে ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করার বিধান

    শরিয়তের দৃষ্টিতে ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করার বিধান

    প্রশ্ন: “ভাঙ্গা পাত্রে খাওয়া-দাওয়া করা কি জায়েজ? আর একটি কথা সমাজে প্রচলিত আছে যে, ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খেলে আয়ু কমে যায়” ইসলামের দৃষ্টিতে এ কথার সত্যতা কতটুকু?

    উত্তরঃ ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খাওয়া জায়েজ তবে ভাঙ্গা পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ লাগিয়ে পান করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।

    ভাঙ্গা পাত্রে খাবার খাওয়া জায়েজ সংক্রান্ত হাদিস:

    عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ عِنْدَ بَعْضِ نِسَائِهِ، فَأَرْسَلَتْ إِحْدَى أُمَّهَاتِ الْمُؤْمِنِينَ مَعَ خَادِمِهَا قَصْعَةً فِيهَا طَعَامٌ، قَالَ: فَضَرَبَتْ بِيَدِهَا فَكَسَرَتِ الْقَصْعَةَ، قَالَ ابْنُ الْمُثَنَّى: فَأَخَذَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْكِسْرَتَيْنِ فَضَمَّ إِحْدَاهُمَا إِلَى الْأُخْرَى، فَجَعَلَ يَجْمَعُ فِيهَا الطَّعَامَ، وَيَقُولُ: غَارَتْ أُمُّكُمْ زَادَ ابْنُ الْمُثَنَّى كُلُوا فَأَكَلُوا حَتَّى جَاءَتْ قَصْعَتُهَا الَّتِي فِي بَيْتِهَا، ثُمَّ رَجَعْنَا إِلَى لَفْظِ حَدِيثِ مُسَدَّدٍ قَالَ كُلُوا وَحَبَسَ الرَّسُولَ وَالْقَصْعَةَ حَتَّى فَرَغُوا فَدَفَعَ الْقَصْعَةَ الصَّحِيحَةَ إِلَى الرَّسُولِ وَحَبَسَ الْمَكْسُورَةَ فِي بَيْتِه

    আনাস রা. সূত্রে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর কোনও এক স্ত্রীর ঘরে অবস্থান করছিলেন। এ সময় উম্মাহাতুল মু‘মিনীন রাসূলের জনৈক স্ত্রী তার খাদেমকে দিয়ে এক পেয়ালা খাবার পাঠালেন। বর্ণনাকারী বলেন, [রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যার ঘরে ছিলেন] সেই স্ত্রী (রাগান্বিত হয়ে) পেয়ালাটি হাতের দ্বারা আঘাত করে ভেঙ্গে ফেলেন।
    ইবনুল মুসান্না বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ভাঙ্গা টুকরা দু’টো উঠিয়ে নিয়ে একটিকে অপরটির সাথে জোড়া দিলেন এবং পড়ে যাওয়া খাবারগুলো উঠাতে লাগলেন এবং বললেন, “তোমাদের মায়ের আত্ম মর্যাদাবোধ জেগেছে (রাগ হয়েছে)।”ইবনুল মুসান্নার বর্ণনায় রয়েছে: “তোমরা এগুলো খাও। তাদের খাওয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত তিনি খাদেমসহ পেয়ালাটি আটকিয়ে রাখলেন। অতঃপর অক্ষত পেয়ালাটি তিনি খাদেমের হাতে তুলে দিলেন আর ভাঙ্গা পেয়ালাটি তাঁর ঘরে রেখে দিলেন।

    সহীহ ইবনু মাজাহ/২৩৩৪

    এ হাদিস থেকে প্রমাণিত হল যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এবং সাহাবিগণ ভাঙ্গা প্লেটে খাবার খেয়েছেন।

    পানপাত্রের ভাঙ্গা স্থানে মুখ দিয়ে পান করা নিষেধ সংক্রান্ত হাদিস:

    পানপাত্রের ভেঙ্গে যাওয়া স্থানে মুখ দিয়ে পান করার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা বর্ণিত হয়েছে। যেমন:

    >عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الْخُدْرِيِّ، أَنَّهُ قَالَ نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَنِ الشُّرْبِ مِنْ ثُلْمَةِ الْقَدَحِ وَأَنْ يُنْفَخَ فِي الشَّرَابِ ‏‏

    আবু সাঈদ আল-খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, “রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাত্রের ভাঙ্গা স্থান দিয়ে পানি পান করতে এবং পানীয়ের মধ্যে ফুঁ দিতে নিষেধ করেছেন।”

    সুনানে আবু দাউদ/৩৭২২-সহিহ

    ইমাম আবু জাফর ত্বহাবি রাহ, শারহু মাআনিল আসার গ্রন্থে এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,

    وقد قال قوم: إنما نهى عن ذلك لأنه الموضع الذي يقصده الهوام فنهى عن ذلك خوف أذاها

    একদল মুহাদ্দিস বলেছেন, এই নিষেধের কারণ হল, পাত্রের ভাঙ্গা স্থানে পোকামাকড় স্থান নেয়। এগুলো যেন কোন ক্ষতি না করে সে জন্য তিনি তা নিষেধ করেছেন।” আর এটা বিজ্ঞান সম্মত কথা যে, গ্লাস, মগ ইত্যাদির ভাঙ্গা স্থানে জীবাণু সৃষ্টি হয়। সুতরাং সেখানে মুখ লাগলে মুখের মধ্যে জীবাণু প্রবেশ করে অসুখ-বিসুখ সৃষ্টি হতে পারে।


    সাধারণ অবস্থায় খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে যথাসম্ভব ভালো, উপযুক্ত ও রুচিসম্মত পাত্র ব্যবহার করা উচিৎ। কেননা ভাঙ্গা, ফাটা, ছিদ্র ইত্যাদি পাত্রে খাবার খাওয়া হলে তা পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে বা খাওয়ার সময় হাত বা মুখ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। বিশেষ করে এ জাতীয় পাত্রে মেহমানদেরকে আপ্যায়ন করাকে সমাজে সম্মানহানিকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। অত:এব, পানাহারের ক্ষেত্রে ভাঙ্গাফুটা ও অনিরাপদ পাত্র ব্যবহার থেকে বিরত থাকা উচিৎ।

    তবে দারিদ্র্যতার কারণে অথবা বিশেষ পরিস্থিতির শিকার হয়ে যদি জোড়া-তালি দেয়া বা টুকটাক ভাঙ্গাফাটা পাত্রে পানাহারের প্রয়োজন হয় তাহলে তাতে শরিয়তে কোন বাধা নেই।

    ‘ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করলে আয়ু কমে যায় বা ঘরে অকল্যাণ নেমে আসে’ এটি বাতিল ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা:

    ‘ভাঙ্গা পাত্রে পানাহার করলে আয়ু কমে যায় বা ঘরে অকল্যাণ নেমে আসে’ এ জাতীয় কথাবার্তা শরিয়ত সমর্থন করে না। অনুরূপভাবে “ভাঙ্গা আয়নায় মুখ দেখা অশুভ। এতে চেহারা নষ্ট হয়ে যায়।” “ভাঙ্গা কুলায় লাথি মারলে জমির ফসল কমে যায়।” এ সকল কথাবার্তা ১০০% কুসংস্কার, বাতিল ও শরিয়ত পরিপন্থী বিশ্বাস। ইসলামের সাথে এগুলোর কোন সম্পর্ক নাই। সুতরাং এ জাতীয় মূর্খতা পূর্ণ কথা-বার্তায় বিশ্বাস রাখা হারাম।

    আরও পড়ুনঃ কুরআনের মধ্যে নবিজীর চুল: একটি মিথ্যা ও শয়তানি গুজব

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • পানাহারের সময় সালাম

    পানাহারের সময় সালাম

    প্রশ্নঃ ইসলামে পানাহারের সময় সালাম দেয়া বা সালামের উত্তর দেয়া কি নিষেধ?

    উত্তরঃ ইসলামে পানাহারের সময় সালাম আদান-প্রদানের ব্যাপারে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। বরং হাদিসে সালাম দেয়ার ব্যাপারে যত বক্তব্য এসেছে সেগুলো খাদ্য গ্রহণের সময়কেও শামিল করে।

    পানাহারের সময় সালাম দেয়া বা উত্তর দেয়া যাবে না মর্মে আমাদের সমাজে যে ধারণা প্রচলিত রয়েছে এবং কোন কোন ফিকহের কিতাবে লেখাও হয়েছে তার কোন দলিল বা ভিত্তি নাই। আর দলিল বিহীন ভাবে কোন কিছুকে হারাম বা মাকরুহ বলার সুযোগ নেই।

    তাছাড়া একাধিক হাদিস দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খাদ্য গ্রহণের সময় দুনিয়াবি কথা বলেছেন। সুতরাং পানাহার রত ব্যক্তিকে সালাম দেয়া বা এই অবস্থায় সালামের উত্তর প্রদান বৈধ হওয়র বিষয়টি আরও অধিকতর যুক্তিযোগ্য।

    পানাহারের সময় সালাম বিষয়ে ফকিহদের মত

    সৌদি আরবের সাবেক গ্রান্ড মুফতি এবং বিশিষ্ট ফকিহ আল্লামা শায়খ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, কেউ যদি এমন লোকদের পাশ দিয়ে গমন করে যারা খাদ্য গ্রহণ করছে তাদেরকে কি সালাম দিবে? কারণ আমরা শুনেছি, এটা জায়েজ নাই।

    তিনি উত্তরে বলেন,

    نعم يسلم عليهم، والذي قال: لا يسلم غلط، يسلم عليهم، إذا جاء لقوم وهم يأكلون أو يقرءون أو يتحدثون يسلم عليهم، يقول: السلام عليكم، أو السلام عليكم ورحمة الله، أو ورحمة الله وبركاته، ولا يكره ذلك بل يشرع، وهم يردون عليه

    “হ্যাঁ, তাদেরকে সালাম দিবে। যে বলেছে সালাম দিবেন না সে ভুল বলেছে। যখন কেউ এমন লোকদের নিকট আগমন করবে যারা খাওয়া-দাওয়া, পড়াশোনা ও কথাবার্তায় লিপ্ত আছে তখন তাদেরকে সালাম দেবে। বলবে, আসালামু আলাইকুম অথবা আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ অথবা আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতু।

    এটা মাকরুহ নয় বরং শরিয়ত সম্মত। আর যাদেরকে সালাম দেওয়া হবে তারাও উত্তর দিবে।
    তবে মুখের মধ্যে খাবারের লোকমা থাকলে তৎক্ষণাৎ উত্তর দেওয়া আবশ্যক নয়। বরং তা গিলে খাওয়ার পর উত্তর দিলেই যথেষ্ট হবে।”

    Binbaz.Org.sa

    ইমাম নববী বলেন,

    إذا كان يأكلُ واللقمة في فمه، فإن سلَّم عليه في هذه الأحوال لم يستحقّ جواباً

    “খাদ্য গ্রহণের সময় মুখে লোকমা থাকা অবস্থায় সালাম দিলে জবাব দেয়ার হক রাখে না।”

    (কিতাবুল আযকার)। ইমাম শাওকানি এ কথাকে সমর্থন করেছেন।

    তবে মুখের খাদ্যদ্রব্য গিলার পর সালামের জবাব দিতে হবে। মুখে লোকমা না থাকলে সালামের জবাব দেয়া ওয়াজিব।

    আরও পড়ুনঃ নন মাহরাম পুরুষ-নারী সালাম বিনময় করার বিধান

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।