Tag: প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন

  • ভ্যাক্সিন/টিকা গ্রহণ করার বিধান কি?

    ভ্যাক্সিন/টিকা গ্রহণ করার বিধান কি?

    প্রশ্ন: অনেক মানুষ রোগ প্রতিরোধক ভ্যাক্সিন নেয়াকে পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র মনে করে থাকে! এটা কতটুকু সঠিক? ঔষধ কিংবা ভ্যাক্সিনে ক্ষতিকর উপাদান আছে বলে প্রমাণ না থাকা সত্ত্বেও এমন অভিযোগ করা কতটুকু সঠিক?

    উত্তরঃ রোগ-ব্যাধির আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য অগ্রিম ভ্যাক্সিন/টিকা গ্রহণ করা জায়েয। ব্যাপারে ইসলামে কোন বাধা নেই।

    বরং রোগ হওয়ার পর চিকিৎসা করার চেয়ে অগ্রিম প্রতিরোধ করা অধিক উত্তম, বিপর্যয় সৃষ্টি হওয়ার ক্ষয়-ক্ষতির চেয়ে বিপর্যয় থেকে বাঁচার অগ্রীম পন্থা অবলম্বন করা অধিক উত্তম-এ ব্যাপারে কোন জ্ঞানী ব্যক্তির দ্বিমত থাকার কথা নয়।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে শিক্ষাঃ

    আমরা এই শিক্ষা পাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জীবন থেকে। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে,

    عَامِرِ بْنِ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ ‏ “‏ مَنْ تَصَبَّحَ سَبْعَ تَمَرَاتِ عَجْوَةٍ لَمْ يَضُرُّهُ ذَلِكَ الْيَوْمَ سَمٌّ وَلاَ سِحْرٌ ‏

    “সাআদ ইবন আবূ ওয়াক্কাস রা: থেকে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “যে ব্যক্তি সকালে সাতটি আজওয়া খেজুর খাবে সেদিন বিষ এবং যাদু তার কোন ক্ষতি করবে না।”

    বুখারী ও মুসলিম

    এ হাদীসে তিনি অগ্রিম প্রতিরোধক মূলক ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছেন।

    ইসলামের দৃষ্টিতে আগে থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার শিক্ষাঃ

    🔸 তিনি সকল সকাল-সন্ধ্যা, পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের পর এবং ঘুমানের পূর্বে বিভিন্ন দুআ ও যিকির শিক্ষা দিয়েছেন যেন মানুষ জিন শয়তান, যাদু, বদনজর ইত্যাদি থেকে রক্ষা পায়। এগুলোও অগ্রিম প্রতিরোধ মূলক উপায়।

    🔸 নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যুদ্ধে যাওয়ার পূর্ব শিরস্ত্রাণ ও বর্ম দ্বারা পুরো শরীর আবৃত করেছেন যেন, শত্রুর আক্রমণ থেকে আত্মরক্ষা করা সম্ভব হয়। এটি তার পূর্ব প্রস্তুতি ও অগ্রিম আত্মরক্ষা মূলক ব্যবস্থা।
    এভাবে আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জীবনী অধ্যয়ন করলে শত শত উদাহরণ খুঁজে পাবো অসুখ-বিসুখ, দুর্ঘটনা ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য তার অগ্রিম নির্দেশনা ও বাস্তবমুখী পদক্ষেপ।

    তাহলে কি ভ্যাক্সিন নেওয়া যাবে?

    সুতরাং যারা টিকা নেয়াকে তাকওয়া (আল্লাহ ভীতি) ও তাওয়াককুল (আল্লাহর উপর ভরসা), সবর (ধৈর্য) পরিপন্থী বা পশ্চিমাদের ষড়যন্ত্র বলার চেষ্টা করে তারা ভুলের মধ্যে আছে। তারা ইসলামের প্রকৃত মর্মবাণী বুঝতে পারে নি।

    📕 রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    مَا أَنْزَلَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ دَاءً، إِلَّا أَنْزَلَ لَهُ دَوَاءً، عَلِمَهُ مَنْ عَلِمَهُ، وَجَهِلَهُ مَنْ جَهِلَهُ

    “আল্লাহ তাআলা এমন কোন রোগ অবতীর্ণ করেন নি যার ওষুধ অবতীর্ণ করেন নি। (অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা প্রতিটি রোগ-ব্যাধির সাথে সাথে সেগুলোর প্রতিষেধকও অবতীর্ণ করেছেন। সেগুলো কেউ জানে আর কেউ জানে না।”

    মুসনাদ আহমাদ, ইমাম আলাবানী হাদিসটিকে হাসান বলেছেন

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন সর্বশ্রেষ্ঠ আল্লাহ ভীরু, সবরকারী ও তাওয়াককুল কারী কিন্তু তিনি নিজেই চিকিৎসা করেছেন, এর প্রতি উৎসাহিত করেছেন। শুধু তাই নয় তিনি নিজে অগ্রিম প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছেন ও উম্মতকে এর শিক্ষা দিয়েছেন।

    তবে কোন ক্ষেত্রে ভ্যাক্সিন নেওয়া ঠিক হবে না?

    👉🏼 তবে হ্যাঁ, যদি বিশেষ কোন ওষুধ বা ভ্যাক্সিন সম্পর্কে সঠিক তথ্য-উপাত্ত, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিজ্ঞ স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সেটা ক্ষতিকারক তাহলে তা গ্রহণ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক। কেননা, জেনে-বুঝে ক্ষয়-ক্ষতি ও ধ্বংস ডেকে আনা ইসলামে নিষিদ্ধ।

    আরও পড়ুনঃ কালোজিরার উপকারীতা পেতে করণীয়

    আল্লাহ আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।