Tag: বাচ্চা

  • সন্তানের বিছানা আলাদা করার বিধান

    সন্তানের বিছানা আলাদা করার বিধান

    প্রশ্নঃ সন্তানের বিছানা আলাদা করবার বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। সন্তানকে কত বছর বয়স পর্যন্ত বাবা মায়ের সাথে একই বিছানায় রাখা যাবে? আমার মেয়ের বয়স আট বছর। সে অনেক ভয় পায়। এক রুম থেকে আরেক রুমেই যেতে চায় না। এ ক্ষেত্রে কী করণীয় দয়া করে জানাবেন।

    উত্তরঃ অনেক আলেমের মতে, সর্বোচ্চ ১০ বছর পর্যন্ত ছেলে-মেয়েরা একই বিছানায় পিতা-মাতার সাথে বা নিজেরা ঘুমাতে পারে। ১০ বছর হয়ে গেলে তাদের বিছানা পৃথক করতে হবে।

    কেননা হাদীসে এসেছে, আমর ইবনু শুআইব রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু তাঁর পিতা থেকে এবং তিনি আমরের দাদা (আব্দুল্লাহ ইবনু আম্‌র) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    «مُرُوا أوْلاَدَكُمْ بِالصَّلاةِ وَهُمْ أبْنَاءُ سَبْعِ سِنينَ، وَاضْرِبُوهُمْ عَلَيْهَا، وَهُمْ أبْنَاءُ عَشْرٍ، وَفَرِّقُوا بَيْنَهُمْ في المضَاجِعِ».

    তোমরা নিজেদের সন্তান-সন্ততিদেরকে নামাযের আদেশ দাও; যখন তারা সাত বছরের হবে। আর তারা যখন দশ বছরের সন্তান হবে, তখন তাদেরকে নামাযের জন্য প্রহার কর এবং তাদের বিছানা পৃথক করে দাও।’’

    আবূ দাউদ, হাসান সূত্রে

    এই হাদিস থেকেই তারা বলেন, ১০ বছরে যেমন তাদের নিজেদের বিছানা আলাদা করা আবশ্যক তেমনি বাবা-মা বা অন্য পুরুষ-নারীদের থেকেও তাদের বিছানা আলাদা করা আবশ্যক।

    বিছানা আলাদা করার সঠিক নিয়মঃ

    • যদি সাত বছর অতিবাহিত হওয়ার পর থেকে তাদেরকে আলাদা বিছানায় শোয়ার অভ্যাস করানো হয় তাহলে তা আরো ভালো।
    • বিশেষ করে মেয়েরা সাধারণতঃ ছেলেদের তুলনায় আগে প্রাপ্ত বয়স্ক হয়। মেয়েরা ৯-১০ বছরেও প্রাপ্ত বয়স্ক হতে পারে। সুতরাং এ ক্ষেত্রে মেয়েদের বিষয়ে আরও বেশি সর্তক হওয়া প্রয়োজন।
    • সন্তানরা প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পর একান্ত প্রয়োজন ছাড়া পিতা-মাতার সাথে একই বিছানায় বা একই রুমে ঘুমানো মোটেও ঠিক নয়।
    • পিতা-মাতার সাথে থাকার ক্ষেত্রে বাচ্চাদের শুধু বিছানা আলাদা নয় বরং আলাদা রুমে থাকার অভ্যাস করানো প্রয়োজন।

    মূলত এটি অভ্যাসের ওপর নির্ভরশীল। প্রথম প্রথম বাচ্চারা বাবা-মাকে ছেড়ে আলাদা রুমে মোটেও থাকতে চাইবে না। কিন্তু বিভিন্ন কৌশলে তাদেরকে আলাদা রুমে রাখা হলে এতে ধীরে ধীরে তাদের মন থেকে ভয় দূর হয়ে যাবে। এবং নিজেদের মনে আত্মবিশ্বাস সৃষ্টি হবে যা তাদের ব্যক্তিত্ব গঠনে ভূমিকা পালন করবে ইনশাআল্লাহ।

    আলাদা না করার ক্ষতিঃ

    অজ্ঞতাবশত অনেকেই বাচ্চার প্রতি অতি যত্ন ও মায়া দেখাতে গিয়ে তাদেরকে বুঝমান ও বড় হওয়ার পরেও নিজেদের কাছে রেখে ঘুমায়। এতে প্রকারান্তরে তাদেরই ক্ষতি করা হয়।

    কেননা কখনো অসতর্কতাবশত দাম্পত্য জীবনের কোন বিষয় তাদের দৃষ্টিগোচর হলে তাদের মনে কুপ্রভাব পড়ে। আর যেহেতু বাচ্চারা সাধারণত অনুকরণপ্রিয় হয় তাই কখনো বা এটা তাদের আচরণ দ্বারা প্রকাশ হতে শুরু করে।

    আরও পড়ুনঃ শিশুদের ইসলাম ও তাওহিদ শিক্ষার ১১ উপায়

    তাই স্বামী-স্ত্রীকে ছোট বাচ্চাদের প্রতি আরো বেশি সর্তকতা অবলম্বন করা জরুরি।

    আল্লাহ তৌফিক দান করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যা করণীয়

    সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে যা করণীয়

    আল হামদু লিল্লাহ, ওয়াস সালাতু ওয়াস সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আম্মা বাদ।

    এতে কোন সন্দেহ নেই যে, সন্তান-সন্ততি আল্লাহর বিশেষ দান ও অনুগ্রহ। এটি যে কত বড় দান, তা কেবল সেই দম্পতিই জানে, যাদের আল্লাহ এই নেয়ামত থেকে মাহরূম রেখেছেন। আল্লাহ বলেনঃ (সূরা শূরা/৪৯-৫০)

    তিনি যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন এবং যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন। অথবা তাদেরকে দান করেন পুত্র ও কন্যা উভয়ই এবং যাকে ইচ্ছা তাকে করে দেন বন্ধ্যা, তিনি সর্বজ্ঞ, সর্বশক্তিমান।

    যার কোলে ও যার ঘরে এই নেয়ামতের আগমন ঘটবে, সেই সৌভাগ্যবান। আর তার জন্য ইসলাম দিয়েছে কিছু উপদেশ কিছু আদেশ যা প্রমাণ করে যে ইসলাম একটি সর্বজনীন সামাজিক ধর্ম এবং পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থার নাম। আমরা এখানে তারই কিছুটা বর্ণনা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

    ১. যে এই আশিসে ধন্য হবে, তাঁকে অভিনন্দন প্রদান করা:

    আল্লাহ বলেনঃ (যারিয়াত/২৮)

    وَ بَشَّرُوهُ بغلامٍ عليمٍ

    অতঃপর তারা তাকে এক জ্ঞানী পুত্র-সন্তানের সুসংবাদ দিলো।

    তাছাড়া ইসলামে প্রত্যেক আনন্দদায়ক বিষয়ে অভিনন্দন জানানো প্রমাণিত। যেমনটি কাআব ও তাঁর দুই সাথীর তওবা কবুলের ঘটনায় উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তায়ালা তাঁদের তওবা কবূল করলে এবং এ বিষয়ে আয়াত অবতীর্ণ হলে সাহাবাগণ তাদের অভিনন্দন জানান। [ বুখারী ও মুসলিম] অভিনন্দন জানানোর সময় এই দুয়া বলা ভালঃ (হিসনুল মুসলিম বাংলা/১৬২)

    ‘‘বারাকাল্লাহু লাকা ফিল্ মাওহূবি লাকা, ওয়া শাকারতাল ওয়াহিবা, ওয়া বালাগা আশুদ্দাহু, ওয়া রুযিকতা বিররাহু”। অর্থ: ‘‘আল্লাহ তোমার জন্য এই সন্তানে বরকত দান করুন, সন্তান দানকারী মহান আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করলেন, সন্তানটি পূর্ণ বয়সে পদার্পণ করুক এবং তার সদাচারণ লাভে তুমি ধন্য হও”।

    দেশ ও সমাজে যদি নবজাতককে হাদিয়া দেওয়ার প্রথা থাকে তাহলে ইবাদতের উদ্দেশ্যে নয় বরং সমাজের রীতি অনুযায়ী শিশুকে হাদিয়া দেওয়া অবৈধ নয়। (ইবনে উসাইমীন, ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ, ২/৩২৮)

    ২. কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট না হওয়া:

    কারণ তাও আল্লাহ প্রদত্ত নেয়ামত। তাছাড়া কন্যা সন্তানের জন্মে অসন্তুষ্ট হওয়া যেমন ভাগ্যের প্রতি অসন্তুষ্ট হওয়া তেমন জাহেলী যুগের লোকদের প্রথা সমর্থন করা। কারণ তারা মেয়ে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়াকে মন্দ মনে করতো। আল্লাহ বলেনঃ (নাহল/৫৮)

    তাদের কাউকেও যখন কন্যা সন্তানের সুসংবাদ দেয়া হয় তখন তার মুখমণ্ডল কালো হয়ে যায়।

    ৩. বাচ্চার কানে আযান দেওয়াঃ

    আবু রাফে তাঁর পিতা হতে বর্ণনা করেনঃ (তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, অনুচ্ছেদ নং ১৫, হাদীস নং ১৫৫৩)

    رأيتُ رسول الله صلى الله عليه و سلم أذّنَ في أُذُنِ الحسنِ ابن عليٍّ حين ولدتهُ فاطمة بالصلاة ” رواه أبو داود والترمذي و قال: هذا حديث صحيح.

    “আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আলীর পুত্র হাসানের কানে নামাযের আযানের মত আযান দিতে দেখেছি, যখন ফাতেমা (রাযি:) তাকে জন্ম দেয়।” হাদীসটিকে আবু দাউদ এবং তিরমিযী বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী সহীহ বলেছেন।

    অন্য কিছু হাদীসে বাম কানে ইকামতের বর্ণনা এসেছে কিন্তু সেই হাদীসগুলি নিতান্তই দুর্বল। (দেখুন, তুহ্ফাতুল আহওয়াযী, ৫/৯০) তাই সুন্নত হচ্ছে, নবজাতকের কানে আযান দেয়া। ডান কানে আযান আর বাম কানে একামত এমনটি নয়।

    প্রকাশ থাকে যে অনেক আলেমের মতে নবজাতকের কানে আযান দেওয়ার হাদীসগুলির মধ্যে দুর্বলতা রয়েছে। তাই তারা এই আযান দেয়াকেও অবৈধ বলেছেন। আর অনেকে হাদীসগুলি বিভিন্ন সূত্রে বর্ণনা হওয়ায় ও পৌনঃপুনিক ভাবে উম্মতের মাঝে আমলটি সচল থাকায় জায়েজ বলেছেন। আল্লাহ সবচেয়ে ভাল জানেন। (বিস্তারিত দেখুন, আউলাদ আউর ওয়ালেদাইন কি কিতাব/৭৭-৭৮)

    বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই আযান দিতে হবে। যেন তার কানে আল্লাহর মহত্ব বিষয়ক প্রথম আওয়াজ প্রবেশ করে এবং শয়তান দূরে চলে যায় ।

    ৪. তাহনীক করাঃ

    খেজুর চিবিয়ে পানির মত করে শিশুর মুখে দেয়া যেন এর কিছুটা তার পেটে প্রবেশ করে। এটাকেই তাহনীক বলা হয়। তবে খেজুর না পাওয়া গেলে অন্য যে কোন মিষ্টি দ্রব্য যেমন মধু বা অন্য কিছু দ্বারাও এভাবে তাহনীক করা যায়। (নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯, ফাত্হুল বারী, ৯/৭২৮)

    তাহনীক সৎ ব্যক্তি কর্তৃক হওয়া উত্তম। (নায়লুল আউতার, ৫-৬/১৭৯)

    তাহনীক করা সুন্নত। আবু মুসা (রাযি:) হতে বর্ণিত তিনি বলেনঃ (বুখারী, অধ্যায়, আক্বীক্বা, অনুচ্ছেদ নং ১, হাদীস নং৫৪৬৭, মুসলিম নং ২১৪৫)

    আমার ছেলে সন্তান হলে আমি তাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট নিয়ে আসি, তিনি তার নাম রাখেন ইব্রাহীম এবং খেজুর দ্বারা তাহনীক করেন এবং তার জন্য বরকতের দুয়া দেন, তার পর বাচ্চাকে আমাকে ফিরিয়ে দেন।

    তাহনীক সুন্নত এর কারণ যাই হোক বর্তমান মেডিকেল তথ্যানুযায়ী এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। কারণ সাধারণত: নবজাতকের বিশেষ করে তার ওজন যদি ২.৫ কে.জির কম হয় তাহলে এমন শিশুর মধ্যে গ্লুকোজ স্বল্পতা লক্ষ্য করা যায়। এই তাহনীক করার মাধ্যমে শিশুর এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। (ইসলামী প্রশ্ন-উত্তর, ফাতাওয়া নং ১০২৯০৬)

    ৫. বাচ্চাকে মাতৃদুগ্ধ পান করানোঃ

    মাতৃদুগ্ধ পান করা বাচ্চার অধিকার। তাছাড়া এই দুধ পান করার লাভ এবং এর গুরুত্ব বর্তমান মেডিকেল ও সমাজে দারুণ ভাবে স্বীকৃত। আল্লাহ বলেনঃ (বাক্বারা/২৩৩)

    আর সন্তানবতী নারীরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দু’বছর দুধ খাওয়াবে, যদি দুধ খাওয়ানোর পূর্ণ মেয়াদ সমাপ্ত করতে চায়।

    ৬. প্রথম দিনে বাচ্চার নামকরণঃ

    বাচ্চার নাম যেমন জন্মের সপ্তম দিন অর্থাৎ আক্বীক্বার দিন নির্ধারণ করা সুন্নত তেমন প্রথম দিনেও নাম রাখা বৈধ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (বুখারী , অধ্যায় জানাযাহ, হাদীস নং ১৩০৩, মুসলিম, অধ্যায়, ফাযাইল হাদীস নং ২৩১৫)

    وُلد لي الليلةَ غلامٌ فسمّيته باسمِ أبي إبراهيم

    রাতে আমার পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে, আমি আমার পিতার নামে তার নাম ইব্রাহীম রেখেছি।

    ৭. সপ্তম দিনে আক্বীকা ও নামকরণঃ

    সেই জন্তুকে আক্বীকা বলা হয়, যা বাচ্চার জন্মে সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হয়। (ফাতহুল বারী, ৯/৭২৬)

    বাচ্চার আক্বীকা এমন ‌এক প্রকার কুরবানী, যা সন্তান অর্জন কালে আল্লাহর এই নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ এবং তার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সম্পাদন করা হয়। (ফাতাওয়া ইসলামিয়্যাহ,২/৩২৬)

    ক. আক্বীকার বিধানঃ

    আক্বীকা করা সুন্নতে মুআক্কাদাহ। তাই যে ব্যক্তি আক্বীকা করার সামর্থ্য রাখে, সে যেন অবশ্যই আক্বীকা করে। আর যার সামর্থ্য নেই তার উপর আক্বীকা জরুরী নয়।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (বুখারী, আক্বীকা, নং৫৪৭১)

    مع الغلامِ عقيقةٌ فأهريقوا عنه دماً و أميطوا عنه الأذى

    বাচ্চার আক্বীকা আছে। তাই তোমরা তার পক্ষ হতে কুরবানী করো এবং তার মাথার চুল পরিষ্কার কর। 

    তিনি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেনঃ (সহীহ ইবনে মাজাহ,অধ্যায়, যাবাইহ, নং৩১৬৫, আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ)

    ‘‘প্রত্যেক বাচ্চা তার আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে, সপ্তম দিনে তার পক্ষ হতে জবাই করা হবে এবং তার মাথা মুণ্ডন করা হবে এবং নাম রাখা হবে”।

    খ. আক্বীকার সময়সীমাঃ

    বাচ্চার জন্মে সপ্তম দিনে আক্বীকার সুন্নত সময়। যেমন উপরের হাদীসে বর্ণিত হলো। কেউ সপ্তম দিনে আক্বীকা না করতে পারলে ১৪তম দিনে করবে, এ তারিখেও সম্ভব না হলে ২১তম দিনেও করতে পারে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (সহীহুল্ জামি আস্ সাগীর নং ৪০১১)

    ” تُذبح لسبع أو لأربع عشرةَ أو لإحدى و عشرين ” [ صحيح الجامع الصغير [

    “সপ্তম দিনে জবাই করা হবে, কিংবা ১৪তম দিনে কিংবা ২১তম দিনে”। 

    এর পরে জীবনের যে কোন সময়ে আক্বীকা করা বৈধ কি না? উলামাগণ মতভেদ করেছেন। অনেকের মতে, সপ্তম দিন পেরিয়ে গেলে করা সুন্নত নয়। কারণ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আক্বীকার সময়কে সপ্তম দিনের সাথে শর্তযুক্ত করেছেন। অনেকের মতে তার পরে যে কোন সময় করা যায়। কারণ হাদীসে উল্লেখ হয়েছে, বাচ্চা আক্বীকার বিনিময়ে বন্ধক থাকে। তাই বাচ্চাকে বন্ধক থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন।

    গ. পুত্র ও কন্যা সন্তান, কার পক্ষ হতে কয়টি পশু আক্বীকা দিতে হবে?

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (সহীহ আবু দাউদ, হাদীস নং ২৪৫৮)

    “عن الغلامِ شاتان مكافئتان و عن الجارية شاة” صحيح أبوداود

    “পুত্র সন্তানের পক্ষ হতে দুটি বরাবর ধরনের ছাগল এবং কন্যা সন্তানের পক্ষ হতে একটি ছাগল আক্বীকা দিতে হবে”। 

    ৮. বাচ্চার চুল মুণ্ডন এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য দান করা:

    বাচ্চার বয়সের সপ্তম দিনে যেমন আক্বীকা করা সুন্নত, তেমন সেই দিন বাচ্চার মা চুলগুলো মুণ্ডন করা ও চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করাও সুন্নত। আলী (রায়িঃ) বলেনঃ (তিরমিযী, অধ্যায়, আযাহী, হাদীস নং ১৫১৯)

    ” عقّ رسول الله – صلى الله عليه و سلم – عن الحسَن بشاةٍ و قال يا فاطمة احلقي رأسه و تصدقي بزنةِ شعره فضّةً ” رواه الترمذي في كتاب الأضاحي، باب العقيقة بشاة.

    “আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাসানের পক্ষ হতে ছাগল আক্বীকা করেন এবং ফাতেমা (রাযি:) কে বলেন: তার মাথা মুণ্ডন করে দাও এবং চুলের ওজন বরাবর রৌপ্য সদকা করে দাও”।

    ৯. খতনা করাঃ

    খতনা করা প্রকৃতিগত বিষয়, যা ইসলাম সমর্থন করেছে এবং তা গুরুত্বের সাথে পালন করেছে। তাই ফুকাহাদের মধ্যে ইমাম শাফেয়ী, মালিক ও আহমদ (রহঃ) এই আমলকে ওয়াজিব বলেছেন।

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেনঃ (বুখারী , অধ্যায়, লেবাস নং ৫৮৯১, মুসলিম, অধ্যায়, ত্বাহারাহ)

    ” الفطرة خمسٌ الخِتان، والاستحدادُ، و قص الشاربِ و تقليمُ الأظفارِ و نتف الآباطِ. ” رواه البخاري في كتاب اللباس و مسلم في كتاب الطهارة.

    “পাঁচটি বিষয় স্বভাবগত, খতনা করা, নাভির নিচের চুল পরিষ্কার করা, মোচ কর্তন করা, নখ কর্তন করা এবং বগলের লোম ছিঁড়ে ফেলা”।

    নবী ইবরাহীম (আঃ) আশি বছর বয়সে নিজের খতনা করেছিলেন। [বুখারী, মুসলিম] এ দ্বারা ষিয়টির গুরুত্ব অনুমান করা যেতে পারে।

    খতনা করার নির্দিষ্ট কোন সময় সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত নয়, তাই সুবিধা মত যে কোন সময় করা যায়। তবে উলামা কেরামের মতে সাবালক হওয়ার পূর্বে তা করা ভাল।

    নবজাতক সম্বন্ধে ইসলামের বিধানের এই কয়েকটি বিষয় সংক্ষিপ্তাকারে আপনাদের সম্মুখে তুলে ধরা হল। আল্লাহ যেন আমাদের সঠিক আমল করার তাওফীক দেন আমীন!

    و صلى الله على نبينا محمد و على آله و صحبه أجمعين