প্রশ্ন: ইঁদুর নিধনের বিষয়ে ইসলামী দৃষ্টিকোন কি?
উত্তরঃ ইঁদুর একটি মারাত্মক ক্ষতিকর প্রাণী-ভুক্তভোগী মাত্রই তা জানে। আর সে কারণে ইসলামে ইঁদুর নিধনে উৎসাহিত করা হয়েছে। নিম্নে ইঁদুরের ক্ষয়-ক্ষতির সংক্ষিপ্ত পরিসংখ্যান দেখলে ইসলামি শরিয়তে কেন তা নিধনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তা পরিষ্কার হবে আশা করি।
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিচালিত কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) লিখেছে:
“ইঁদুর বছরে ধান ও গমের প্রায় ৫০০ মেট্রিক টন পর্যন্ত ক্ষতি করে থাকে যার মূল্য আনুমানিক ৫০০ কোটি টাকার ও বেশি। তাছাড়া ইঁদুর মুরগির খামারে গর্ত করে, খাবার খেয়ে ডিম ও ছোট মুরগি খেয়ে প্রতি বছর খামারপ্রতি প্রায় ১৮ হাজার টাকা ক্ষতি করে থাকে।
প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার মেট্রিক টন গুদামজাত শস্য ইঁদুর দ্বারা ক্ষতি হয়ে থাকে। ইঁদুর মাঠের দানাজাতীয়, শাকসবজি, মূল জাতীয়, ফল জাতীয় ফসলের ক্ষতি করে থাকে। আবার গুদামঘরে সংরক্ষিত ফসলেরও মারাত্মক ক্ষতি করে থাকে (প্রায় শতকরা ২০ ভাগ)।
এরা যে শুধু ফসলেরই ক্ষতি করে তা নয়। বই খাতা, কাপড়, আসবাবপত্র, বিছানাপত্র ইত্যাদি কেটে নষ্ট করে। ইঁদুর প্রায় ৩০ প্রকার রোগ ছড়ায়। এছাড়া এরা বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ও সেচ নালায় গর্ত করে নষ্ট করে, অনেক সময় বৈদ্যুতিক সরঞ্জামাদি কেটে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত ঘটায়। এজন্য ইঁদুর দমন অত্যন্ত জরুরি।”
আরও লিখেছে:
“ইরির ২০১৩ সালের এক গবেষণা মতে, এশিয়ায় ইঁদুর বছরে যা ধান-চাল খেয়ে নষ্ট করে, তা ১৮ কোটি মানুষের এক বছরের খাবারের সমান। আর শুধু বাংলাদেশে ইঁদুর ৫০-৫৪ লাখ লোকের এক বছরের খাবার নষ্ট করে।” [সূত্র: কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) ওয়েব সাইট]
❑ ইঁদুরের প্রকারভেদঃ
কৃষি বিজ্ঞানীদের মতে ইঁদুর চার প্রকার। যথা:
◆ ১) মাঠের কালো ইঁদুর বা ছোট ব্যান্ডিকুট ইঁদুর (Bandicota bengalensis) মাঠ ফসলের সবচেয়ে বেশি ক্ষতি করে থাকে।
◆ ২) মাঠের বড় কালো ইঁদুর বা বড় ব্যান্ডিকুট ইঁদুর (Lesser bandicoot rat, bandicota indica)
◆ ৩) গেছো ইঁদুর/ ঘরের ইঁদুর (House/roof rat) Rattus rattus)
◆ ৪) ঘরের নেংটি ইঁদুর (House Mouse, Mus musculus) (বাত্ত্বি ইঁদুর বা শইল্লা ইঁদুর নামেও পরিচিত) [সূত্র:পূর্বোক্ত]
সুতরাং এ সব ইঁদুর নিধনের জন্য ফাঁদ পাতা, রাসায়নিক প্রক্রিয়া বা বিষ প্রয়োগ করা, গ্যাস ট্যাবলেট (বিষ গ্যাস ট্যাবলেট ইঁদুরের গর্তে মরণ গ্যাস সৃষ্টি করে। যেমন, ফস টক্সিন ট্যাবলেট, অ্যালুমিনিয়াম ফসফেট) অথবা অন্য যে কোন উপায় অবলম্বন করা জায়েজ আছে। তবে বিকল্প ব্যবস্থা থাকা স্বত্বে আগুনে দ্বারা হত্যা করা ঠিক নয়। কারণে হাদিসে আগুন দ্বারা শাস্তি দেয়া নিষেধ করা হয়েছে।
❑ ইঁদুর নিধনের নির্দেশ সংক্রান্ত হাদিস:
● ইবনে জুরায়জ রহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাফি রহ. এর নিকট জিজ্ঞেস করলাম, আপনি ইবনে উমর রা. কে মুহরিম ব্যক্তির জন্য কোন্ কোন্ প্রাণী হত্যার বৈধতা ঘোষণা করতে শুনেছেন?
নাফি’ রাহ. আমাকে বললেন,
قَالَ عَبْدُ اللَّهِ سَمِعْتُ النَّبِيَّ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ “ خَمْسٌ مِنَ الدَّوَابِّ لاَ جُنَاحَ عَلَى مَنْ قَتَلَهُنَّ فِي قَتْلِهِنَّ الْغُرَابُ وَالْحِدَأَةُ وَالْعَقْرَبُ وَالْفَارَةُ وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ ” .
‘আবদুল্লাহরা. বলেছেন, আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি,
সহিহ মুসলিম, অধ্যায়: হজ্জ, অনুচ্ছেদ: হারাম এবং হারামের বাইরে ইহরাম কিংবা ইহরামমুক্ত অবস্থায় কোন্ কোন্ জন্তু হত্যা করা জায়িয, হা/২৭৬৩
“এমন পাঁচ প্রকারের প্রাণী আছে, কোন ব্যক্তি তা হত্যা করলে তার কোন গুনাহ হবে না: কাক, চিল, বিচ্ছু, ইঁদুর ও হিংস্র কুকুর।”
● নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ৫টি প্রাণীকে অন্যায়-অনিষ্টকারী হিসেবে হত্যা করতে নির্দেশ দিয়েছেন- যদি সেগুলো হারাম সীমানার মধ্যেও থাকে।
যেমন: আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: “পাঁচ প্রকার প্রাণী বেশি অনিষ্টকারী। এদেরকে হারাম সীমানার মধ্যেও মেরে ফেলতে হবে। এগুলো হল:
الْفَأْرَةُ، وَالْعَقْرَبُ، وَالْحُدَيَّا، وَالْغُرَابُ، وَالْكَلْبُ الْعَقُورُ
“ইঁদুর, বিচ্ছু, চিল, কাক এবং পাগলা কুকুর।”
সহিহ বুখারী, অধ্যায়: ৪৯/ সৃষ্টির সূচনা (كتاب بدء الخلق),অনুচ্ছেদ: পাঁচ শ্রেণির অনিষ্টকারী প্রাণীকে হারাম শরীফেও হত্যা করা যাবে।
● ইঁদুর সৃষ্টিগতভাবে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক প্রাণী। যেমন: নিম্নোক্ত হাদিসটি,
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ جَاءَتْ فَأْرَةٌ فَأَخَذَتْ تَجُرُّ الْفَتِيلَةَ فَجَاءَتْ بِهَا فَأَلْقَتْهَا بَيْنَ يَدَىْ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم عَلَى الْخُمْرَةِ الَّتِي كَانَ قَاعِدًا عَلَيْهَا فَأَحْرَقَتْ مِنْهَا مِثْلَ مَوْضِعِ الدِّرْهَمِ فَقَالَ “ إِذَا نِمْتُمْ فَأَطْفِئُوا سُرُجَكُمْ فَإِنَّ الشَّيْطَانَ يَدُلُّ مِثْلَ هَذِهِ عَلَى هَذَا فَتَحْرِقَكُمْ ” .
ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, একটি ইঁদুর এসে চেরাগের সলতে টেনে নিয়ে যেতে যেতে তা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যে মাদুরের উপর বসে ছিলেন তাঁর উপর ঠিক তাঁর সামনে নিয়ে এসে ফেলে দেয়। এতে মাদুরের এক দিরহাম পরিমাণ জায়গা পুড়ে যায়।
তখন রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ) বললেন:
“যখন তোমরা ঘুমাবে তখন বাতি নিভিয়ে দিবে। কারণ শয়তান ইঁদুর ইত্যাদির অনুরূপ প্রাণীকে এমন কাজে প্ররোচিত করে এবং তোমাদের (ঘরবাড়িতে) আগুন লাগায়।
সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: আদব-শিষ্টাচার, অনুচ্ছেদ-১৭৪, সহিহ
আল্লাহু আলাম।
আরও পড়ুনঃ আদিম যুগের মানুষ সম্পর্কে ইসলামী মত কি?
মহান আল্লাহ আমাদেরকে তার সকল সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে হেফাজত করুন। আমীন।
▬▬▬▬◆◯◆ ▬▬▬▬
উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।