Tag: বিদাতী

  • বিদআতীর সাথে বিবাহ বন্ধনের বিধান

    বিদআতীর সাথে বিবাহ বন্ধনের বিধান

    প্রশ্নঃ কোন বিদআতীর সাথে কি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ?

    উত্তরঃ জানা আবশ্যক যে, সকল বিদআত এক পর্যায়ের নয়। কিছু আছে শিরক ও কুফরি পর্যায়ের জঘন্য বিদআত আর কিছু আছে তুলনা মূলকভাবে হালকা বিদআত-যা কুফুরি পর্যায়ের নয়।

    সুতরাং সকল বিদআতির হুকুম এক নয়। নিম্নে ব্যাখ্যা প্রদান করা হলঃ

    যে সকল বিদআতীর সাথে বিবাহ জায়েজ নাইঃ

    কোন ব্যক্তি যদি কুফুরি ও শিরকি পর্যায়ের বিদআতে লিপ্ত থাকে তাহলে তার সাথে কোন মুমিন নারী/পুরুষের বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া জায়েয নাই।

    যেমনঃ কেউ যদি বিশ্বাস করে নবী বা অলিরা অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সম্পর্কে সব কিছু জানেন, হুলুল তথা আল্লাহ সৃষ্টি জগতের সাথে একাকার হওয়ার বিশ্বাস পোষণ করে, আবু বকর রা. উমর রা. উসমান রা. কে গালাগালি করে (যেমন শিয়া সম্প্রদায়), কুরআন আল্লাহর সৃষ্টি বলে বিশ্বাস করে ইত্যাদি।

    এগুলো কুফুরী পর্যায়ের বিদআত। কোন ব্যক্তি যদি এ ধরণের আকীদায় বিশ্বাসী হয় তাহলে তার সাথে কোন ঈমানদার পুরুষ অথবা নারীর বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া বৈধ নয়।

    যে সকল বিদআতীর সাথে বিবাহ জায়েজঃ

    পক্ষান্তরে যদি সে ব্যক্তি কুফরি পর্যায়ের বিদআতে লিপ্ত না থাকে তাহলে তার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া যাবে এবং যথাসম্ভব পরবর্তীতে তাকে সংশোধনেরে চেষ্টা করতে হবে।

    যেমনঃ নামাযের পরে সম্মিলিত মুনাজাত, উচ্চ আওয়াজে জিকির করা, মুখে উচ্চারণ করে নিয়ত বলা, মৃত ব্যক্তির উদ্দেশ্যে শবিনাখানি করা, ঈদে মীলাদুন্নবি উদযাপন করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে নূরের সৃষ্টি মনে করা, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নাম শুনে আঙ্গুলে চুমু খাওয়া ইত্যাদি। এগুলো কুফুরী পর্যায়ের বিদআত নয়।

    দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞতা, কুরআন-হাদিসের ভুল ব্যাখ্যার শিকার ইত্যাদি কারণে অনেক মানুষ ধরণের বিদআতি কর্মকাণ্ড লিপ্ত থাকে।

    তবে যে বিষয়টি লক্ষ্যণীয়ঃ

    সুতরাং যদি সহিহ আকিদাধারি কোন বিবাহযোগ্য পাত্র/পাত্রী না পাওয়া যায় তাহলে উপরোক্ত বিদআতি আকীদায় বিশ্বাসী ব্যক্তিকে বিবাহ করা জায়েয রয়েছে ইনশাআল্লাহ। তবে বিবাহের পর যথাসাধ্য তাকে দ্বীনের সঠিক জ্ঞান দান করার চেষ্টা করতে হবে। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ বিদআত এর সাতটি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা

    আরও পড়ুনঃ বিদআত, শিরক ও পাপাচারে লিপ্ত ইমামের পেছনে সালাত

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • বিদআত এর সাতটি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা

    বিদআত এর সাতটি ভয়ঙ্কর ভয়াবহতা

    দ্বীনের মধ্যে বিদআতের পরিণতি অতিভয়ঙ্কর। বিদআত দ্বীনকে ধ্বংস করার সবচেয়ে বড় মাধ্যম। নেক সুরতে শয়তানের ধোঁকা। তাই এ বিষয়ে সচেতন থাকা প্রত্যেক ইমানাদারের জন্য আবশ্যক। নিচে বিদআতের ভয়াবহতা বিষয়ে ১৪টি পয়েন্ট উল্লেখ করা হলঃ

    ◉ ১. বিদআতীকে সহযোগিতাকারীর উপর আল্লাহর অভিশাপঃ

    আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “আল্লাহ অভিশাপ করেছেন সেই ব্যক্তিকে যে আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে জন্তু জবেহ করে। আর যে জমির সীমা চুরি করে। আর যে মাতা পিতাকে অভিশাপ দেয়। আর যে বেদআতীকে আশ্রয় দেয়। (মুসলিম)

    ◉ ২. বিদআতীর আমল আল্লাহর কাছে অগ্রাহ্যঃ

    আয়েশা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, “যে ব্যক্তি এমন কোন কাজ করল যা দ্বীনে নেই সে কাজটি আল্লাহ কাছে পরিত্যজ্য।” (বুখারী ও মুসলিম)

    ফুযাইল ইবনু আয়ায (রহ.) বলেন, যখন তোমরা বিদআতপন্থী কোন লোক আসতে দেখবে সে রাস্তা ছেড়ে অন্য রাস্তা গ্রহণ করবে। বিদআতীর কোন আমল আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। যে ব্যক্তি বিদআতপন্থীকে সহযোগিতা করল সে যেন দ্বীন ধ্বংস করতে সহযোগিতা করল। (খাছায়িছূ আহলিস সুন্নাহ)
    এ মর্মে হাদিসে আর অনেক ভয়াবহতার কথা উল্লেখিত হয়েছেে।

    ◉ ৩. বিদআতীর তওবা গ্রহনযোগ্য হবে না যতক্ষণ না সে বিদআত সম্পূর্ণ ছেড়ে দেয়ঃ

    আনাস ইবনু মালেক (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, “আল্লাহ তাআলা বিদআতীর তোওবা গ্রহণ করেন না যতক্ষণ না সে বিদআত থেকে সম্পূর্ণরূপে তওবা করে।” (তবরানী, সনদ হাসান)

    ◉ ৪. বিদআত থেকে যে কোন উপায়ে বাঁচার আদেশ রয়েছেঃ

    ইরবায ইবনু সারিয়া বলেন, রাসূলুরাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন. লোক সকল! তোমরা বিদআত থেকে বাঁচ”। (কিতাবুস সুন্নাহ ইবনু আবী আসিম)

    ◉ ৫. কিয়ামতের দিন বিদআতী হাওযে কাউছারের পানি থেকে বঞ্চিত হবেঃ

    রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কিয়ামতের দিন বিদআতী লোকদের থেকে বেশী অসন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন। সাহাল ইবনু সাআদ (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমি হাওযে কাওছারে তোমাদের অপেক্ষায় থাকব। যে ব্যক্তি সেখানে আসবে সে পানি পান করবে। আর যে ব্যক্তি একবার পানি পান করবে তার কখনো তৃষ্ণা থাকবে না। কিছু লোক এমন আসবে যাদেরকে আমি চিনব। তারাও আমাকে চিনবে। আমি মনে করব তারা আমার উম্মত তার পরও তাদেরকে আমার নিকট পর্যন্ত পৌঁছতে হবে না। আমি বলব এরা তো আমার উম্মত। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! আপনি জানেন না আপনি দুনিয়া থেকে চলে আসার পর এসব লোকেরা কেমন কেমন বিদআত সৃষ্টি করেছে। তার পর আমি বলব, “দূর হোক, দূর হোক সে সকল লোকেরা যারা আমার পর দ্বীন পরিবর্তন করেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

    ◉ ৬. বিদআত সৃষ্টিকারীর প্রতি আল্লাহর ফেরেশ্তা সমূহ এবং সব লোকের অভিশাপ হয়ে থাকেঃ

    আসেম (রাহঃ) বলেন, আনাস (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হল, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কি মদীনাকে হারাম আখ্যা দিয়েছেন? তিনি বললেন হাঁ। উমুক স্থান থেকে উমুক স্থান পর্যন্ত । এ স্থানের কোন গাছ কাটা যাবে না। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, যে ব্যক্তি এখানে কোন বিদআত সৃষ্টি করবে তার উপর আল্লাহ ফেরেশ্তা এবং লোক সকলের অভিশাপ হবে। (বুখারী ও মুসলিম)

    ◉ ৭. বিদআত ফিতনায় পতিত হওয়া বা কষ্ট দায়ক শাস্তিযোগ্য হওয়ার বড় কারণঃ

    ইমাম মালেক রাহঃ কে জিজ্ঞাসা করা হল হে আবু আব্দল্লাহ! ইহরাম কোথা থেকে বাঁধব? আমি মসজিদে নববী তথা কবর শরীফের কাছ থেকে ইহরাম বাঁধতে চাই। উত্তরে ইমাম মালেক বললেন, এরূপ কর না। আমার ভয় হয়, হয়ত তুমি ফিতনায় পতিত হবে। লোকটি বলল, এখানে ফিতনার কী আছে? আমি তো শুধু কয়েক মাইল পূর্বে ইহরাম বাঁধতে চাইছি।ইমাম মালেক বললেন, এর চেয়ে বড় ফিতনা আর কি হবে যে, তুমি মনে করছ যে ইহরাম বাঁধার সোওয়াব রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে আগে বেড়ে যাচ্ছ। আল্লাহ তাআলা বলেন, “যারা আল্লাহ তায়ালার আদেশ অমান্য করে তাদের ভয় থাকা উচিৎ যেন তারা কোন ফিত্না বা কষ্ট দায়ক শস্তিতে পতিত না হয়। (আল ইতিসাম)

    আল্লাহ আমাদেরকে হেফাজত করুন। আমীন।