আমরা জানি যে তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত বা মসজিদে প্রবেশ করে দু’রাকাত আদায় করার বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গুরুত্ব দিয়েছেন। আবার আমরা এটাও জানি যে জুমার দিনে খুতবা শোনা ওয়াজিব। তাহলে খুতবা চলাকালীন যদি মসজিদে প্রবেশ করি, তাখন কি তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত আদায় করবো, নাকি খুতবা শোনার জন্য বসে যাবো?
তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও খুতবা
জুমার খুতবা চলাকালীন সময় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদ ছাড়া বাকি খুতবা শুনা ওয়াজিব। খুতবা চলার সময় বেচা-কেনা, দুনিয়াবি কাজে ব্যস্ত থাকা, গল্প-গুজব করা এমনকি কুরআন তিলাওয়াত ইত্যাদি নিষেধ। বরং মুসল্লির কর্তব্য হবে, খুব মনোযোগ সহকারে জুমার খুতবা শোনা।
তবে এ অবস্থায় দু রাকআত দুখুলুল মসজিদের সালাত আদায় করা এই বিধানের বাইরে। কেননা, খুতবা চলাকালীন সময় কেউ মসজিদ প্রবেশ করলেও রাসুল সা. হালকা ভাবে দু রাকআত সালাত আদায় করতে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সুলাইক আল গাতাফানী রা. নামক সাহাবীকে খুতবা চলাকালীন সময় বসা থেকে উঠিয়ে তারপর দু রাকআত সালাত পড়ার পর বসতে নির্দেশ দিয়েছেন।
এ মর্মে সহীহ মুসলিমের জুআর সালাত অধ্যায়ে ‘ইমামের খুতবা চলাকালীন সময়ে দু রাকাআত তাহিয়াতুল মসজিদ/দুখুলুল মাসজিদের সালাত আদায়’ শীর্ষক অনুচ্ছেদে একাধিক হাদিস উল্লেখ করা হয়েছে।
নিন্মে এ প্রসঙ্গে সহীহ মুসলিমে উদ্ধৃত কয়েকটি হাদিসগুলো পেশ করা হল:
عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ بَيْنَا النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ إِذْ جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَصَلَّيْتَ يَا فُلاَنُ “ . قَالَ لاَ . قَالَ ” قُمْ فَارْكَعْ ” .
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর খুতবা দিচ্ছিলেন। তখন এক ব্যাক্তি এল। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, হে অমুক! তুমি সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল, না। তিনি বললেন, দাঁড়াও সালাত আদায় করে নাও।
সহীহ মুসলিম – ১৮৯১
তাহিয়্যাতুল মসজিদ ও খুতবা নিয়ে আর কয়েকটি হাদিসঃ
سَمِعَ جَابِرَ بْنَ عَبْدِ اللَّهِ، يَقُولُ دَخَلَ رَجُلٌ الْمَسْجِدَ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ يَوْمَ الْجُمُعَةِ فَقَالَ ” أَصَلَّيْتَ ” . قَالَ لاَ . قَالَ ” قُمْ فَصَلِّ الرَّكْعَتَيْنِ ” . وَفِي رِوَايَةِ قُتَيْبَةَ قَالَ ” صَلِّ رَكْعَتَيْنِ ” .
কুতায়বা ইবনু সাঈদ ও ইসহাক ইবনু ইবরাহীম (রহঃ) … জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, জনৈক ব্যাক্তি মসজিদে প্রবেশ করল, তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুমু’আর দিন খুতবা দিচ্ছিলেন। তিনি বললেন, তুমি সালাত আদায় করেছ কি? সে বলল না। তিনি বললেন, দাঁড়াও দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। আর কুতায়বার বর্ণনা হল, তিনি বললেন, দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও।
সহীহ মুসলিম – ১৮৯৩
وَحَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا لَيْثٌ، ح وَحَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رُمْحٍ، أَخْبَرَنَا اللَّيْثُ، عَنْ أَبِي الزُّبَيْرِ، عَنْ جَابِرٍ، أَنَّهُ قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَاعِدٌ عَلَى الْمِنْبَرِ فَقَعَدَ سُلَيْكٌ قَبْلَ أَنْ يُصَلِّيَ فَقَالَ لَهُ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم ” أَرَكَعْتَ رَكْعَتَيْنِ ” . قَالَ لاَ . قَالَ ” قُمْ فَارْكَعْهُمَا ” .
জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, সুলায়ক গাতফানী (রাঃ) শুক্রবার দিনে (মসজিদে) এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিম্বরের উপরে বসা ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) সালাত আদায় না করে বসে পড়লেন। তখন নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি কি দু’রাক’আত সালাত আদায় করেছ? তিনি বললেন, না। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি দাঁড়াও দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও।
সহীহ মুসলিম – ১৮৯৬
وَحَدَّثَنَا إِسْحَاقُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ، وَعَلِيُّ بْنُ خَشْرَمٍ، كِلاَهُمَا عَنْ عِيسَى بْنِ يُونُسَ، – قَالَ ابْنُ خَشْرَمٍ أَخْبَرَنَا عِيسَى، – عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي سُفْيَانَ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ جَاءَ سُلَيْكٌ الْغَطَفَانِيُّ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَخْطُبُ فَجَلَسَ فَقَالَ لَهُ “ يَا سُلَيْكُ قُمْ فَارْكَعْ رَكْعَتَيْنِ وَتَجَوَّزْ فِيهِمَا – ثُمَّ قَالَ – إِذَا جَاءَ أَحَدُكُمْ يَوْمَ الْجُمُعَةِ وَالإِمَامُ يَخْطُبُ فَلْيَرْكَعْ رَكْعَتَيْنِ وَلْيَتَجَوَّزْ فِيهِمَا ” .
জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন সূলায়ক গাতফানী (রাঃ) জুমআর দিনে এলেন। তখন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুতবা দিচ্ছিলেন। সুলায়ক (রাঃ) বসে পড়লেন। নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে সূলায়ক! তুমি দাঁড়িয়ে সংক্ষেপে দু’রাকআত সালাত আদায় করে নাও। তারপর বললেন: “তোমাদের কেউ জুমু’আর দিন মসজিদে এলে, ইমাম তখন খুৎবারত থাকলে সংক্ষিপ্ত আকারে দু’ রাকআত সালাত আদায় করে নেবে।”
সহীহ মুসলিম – ১৮৯৭
এ ছাড়াও সাধারণভাবে যে কোন সময় মসজিদে প্রবেশ করলে কমপক্ষ দু রাকাআত সালাত পড়ার পূর্বে বসা নিষেধ করা হয়েছে। যেমনঃ
আবূ কাতাদাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ المَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يُصَلِّي رَكْعَتَيْنِ
“যখন তোমাদের কেউ মসজিদ প্রবেশ করবে, তখন সে যেন দু’ রাকআত নামায না পড়া পর্যন্ত না বসে।”
বুখারী ৪৪৪, ১১৬৩, মুসলিম ১৬৮৭-১৬৮৮
সম্মানিত পাঠক, আমরা দেখলাম, এ মর্মে বর্ণিত হাদিসগুলো খুবই ষ্পষ্ট। সুতরাং হাদিস জানার পরে কোন ব্যক্তির জন্য তা অমান্য করা বৈধ হতে পারে না। কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّـهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنكُمْ ۖ فَإِن تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّـهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّـهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ
“হে ঈমানদারগণ! আল্লাহর নির্দেশ মান্য কর, নির্দেশ মান্য কর রসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা কর্তৃত্বশীল তাদের। তারপর যদি তোমরা কোন বিষয়ে বিবাদে প্রবৃত্ত হয়ে পড়, তাহলে তা আল্লাহ ও তাঁর রসূলের প্রতি প্রত্যর্পণ কর-যদি তোমরা আল্লাহ ও কেয়ামত দিবসের উপর বিশ্বাসী হয়ে থাক।”
সূরা নিসা: ৫৯
কোন মাযহাবের ইমাম যদি খুতবা চলাকালীন সময় দু রাকআত সালাত পড়ার ব্যাপারে নিষেধ করে থাকেন তাহলে আমরা বলব, হয়ত তাঁর কাছে এ বিষয়ে হাদিস পৌঁছেনি। সুতরাং তিনি এ ক্ষেত্রে মাযুর বা নির্দোষ। কিন্তু তার অনুসারীদের কারো নিকট হাদিস পৌঁছার পর বিভিন্ন যুক্তি, অপব্যাখ্যা বা নানা ওজুহাতে হাদিস অমান্য করা বড় গুনাহের কাজ।
আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে সুন্নাহ অনুসারে আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।
উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।