Tag: মানসিক যন্ত্রনা

  • পেরেশানী দূর করার দুআ ও আমল

    পেরেশানী দূর করার দুআ ও আমল

    মানব জীবনে পেরেশানী বা দুশ্চিন্তা/অস্থিরতা/টেনশন একটি অবশ্যম্ভাবী বিষয়। ধনী-গরীব, সুস্থ-অসুস্থ, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকলেই কখনও না কখনও পেরেশানীতে ভুগেন।

    নিম্নে দুশ্চিন্তা, অস্থিরতা, টেনশন ইত্যাদি দূর করার কতিপয় দুআ (আরবীর পাশাপাশি বাংলা উচ্চারণ ও অর্থ সহ) পেশ করা হলঃ

    ১ম দুআ:

    ইবনে মাসউদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লাম থেকে বলেন, যে কোন বান্দার দুশ্চিন্তা বা পেরেশানী হলে, সে যদি নিম্নোক্ত দুআ পাঠ করে তাহলে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা ও পেরেশানী দূর করে দেবেন এবং তার পরিবর্তে দেবেন আনন্দ। দুআটি হল:

    اللهم إني عبدُك ، وابنُ عبدِك وابنُ أمتِك ، ناصيتي بيدِك ، ماضٍ فيّ حكمُك ، عدلٌ فيّ قضاؤُك ، أسألُك بكلِّ اسمٍ هو لك ، سميتَ به نفسَك ، أو علمته أحدًا من خلقِك ، أو استأثرت به في علمِ الغيبِ عندك أن تجعلَ القرآنَ ربيعَ قلبي ، ونورَ صدري ، وجلاءَ حزني ، وذهابَ همي وغمي

    উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।

    “হে আল্লাহ! নি:সন্দেহে আমি তোমার দাস, তোমার দাসের পুত্র ও তোমার দাসীর পুত্র
    আমার ললাটের কেশগুচ্ছ তোমার হাতে।
    তোমার বিচার আমার জীবনে বহাল।
    আমার ব্যাপারে তোমার ফয়সালা ন্যায়সঙ্গত।
    আমি তোমার নিকট তোমার সেই সকল নামের অসীলায় প্রার্থনা করছি-যে নাম তুমি নিজেই নিজের জন্য নির্ধারণ করেছো, অথবা তুমি তোমার কিতাবে অবতীর্ণ করেছ অথবা তোমার সৃষ্টির মধ্যে কাউকে তা শিখিয়েছ অথবা তুমি তোমার অদৃশ্য জ্ঞানে নিজের নিকট গোপন রেখেছ,
    তুমি কুর’আনকে আমার হৃদয়ে প্রশান্তি দায়াক করে দাও, আমার বক্ষের জ্যোতি করে দাও এবং আমার দুশ্চিন্তা মুক্তির ও আমার উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বিদূরিত হওয়ার কারণ বানিয়ে দাও”।

    (মুসনাদে আহমদ ১/৩৯১, সহীহ তারগীব: ১৮২২ )

    🌀 ২য় দুআ:

    اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ، وَالْبُخْلِ وَالْجُبْنِ، وَضَلَعِ الدَّيْنِ وَغَلَبَةِ الرِّجَالِ

    উচ্চারণ: আল্লা-হুম্মা ইন্নি আ‘ঊযু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হাযানি, ওয়াল ‘আজযি ওয়াল কাসালি, ওয়াল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া দালা‘ইদ দ্বাইনে ওয়া গালাবাতির রিজা-লি।

    অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে।

    [বুখারী, ৭/১৫৮, নং ২৮৯৩; আরও দেখুন, বুখারী, (ফাতহুল বারীসহ) ১১/১৭৩]

    🌀 ৩য় দুআ: দুআ ইউনুস:

    لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ سُبْحَانَكَ، إِنِّي كُنْتُ مِنَ الظَّالِمِينَ
    উচ্চারণ: লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নী কুনতু মিনাজ যলিমীন।
    অর্থ: “হে আল্লাহ ! তুমি ছাড়া প্রকৃত কোন মাবুদ নাই, তুমি পবিত্র, মহান। আর আমি তো জালিমদের অন্তর্ভুক্ত।”

    সুরা আম্বিয়া: ৮৭

    🌀 ৪র্থ দুআ:

    বেশি বেশি ইস্তিগফার পাঠ করা তথা আল্লাহর নিকট নিজের পাপরাশীর জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করা।

    ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার কিছু দুআ:

    ▪ আস্তাগফিরুল্লাহ অর্থ: হে আল্লাহ তোমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। এটি যতবেশি পাঠ করা যায় ততই উত্তম।
    ▪ أَسْتَغْفِرُ اللَّهَ الَّذِي لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَىَّ الْقَيُّومَ وَأَتُوبُ إِلَيْهِ
    উচ্চারণ: আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাযী লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাউয়ুম, ওয়া আতুবু ইলাইহি।
    আস্তাগফিরুল্লাহ আল্লাদি লা ইলাহা ইল্লা হুয়াল হাইয়ুল কাউয়ুম ওয়া আতুবু ইলাইহি।

    অর্থ: আমি ক্ষমা চাই আল্লাহর কাছে যিনি চিরঞ্জীব ও সব কিছুর ধারক-বাহক আর আমি তার দিকেই প্রত্যার্বন করি।”

    ▪সাইয়েদুল ইস্তিগফার তথা আল্লাহুম্মা আন্তা রাব্বী লা ইলাহ ইল্লাহ আনতা খালাকতানী …..। এ দুআটি পাঠ করা।

    যদিও ইস্তিগফার দুশ্চিন্তা বা পেরেশানী থেকে মুক্তির জন্য খাস নয় তবুও এর মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নিকট অবারিত কল্যাণ আশা করতে পারি। কেননা মহান আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করলে তিনি আমাদের প্রতি খুশি হন এবং আমাদের গুনাহ মোচন করে দেন।
    সুতরাং তিনি যদি আমাদের প্রতি খুশি হন এবং আমাদের গুনাহ মোচন করে দেন তাহলে আশা করা যায়, তিনি আমাদের সকল সমস্যার সমাধান করে দিবেন এবং সকল অশান্তি ও অস্থিরতা দূর করে মনের অফুরন্ত আনন্দ ও উচ্ছলতা দান করবেন।

    🌀 ৫ম দুআ:

    বেশি বেশি দুরুদ পাঠ করা। সবচেয়ে উত্তম হল দুরুদে ইবরাহীম তথা আল্লাহুম্মা সাল্লি আলা মুহাম্মাদিউঁ ওয়া আ’লা আলে মুহাম্মাদ…পাঠ করার চেষ্টা করা।

    দরুদ আল্লাহর রহমত লাভের একটি অন্যতম কারণ। আর জীবনে আল্লাহর রহমতের ফুল্গুধারা নেমে আসলে আমাদের সকল সমস্যা, সংকট, দুশ্চিন্তা, পেরেশানী, হতাশা ইত্যাদি দূর হওয়ার প্রবল আশা করা যায়। আল্লাহ তাওফিক দান করুন। আমীন।

    আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ দুআ ইউনুস পাঠের নিয়ম, উপকারিতা এবং ‘খতমে ইউনুস’

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি উপায়

    মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের কয়েকটি উপায়

    মানসিক চাপ জীবনের একটি স্বাভাবিক অংশ। কিন্তু নিঃসন্দেহে অতিরিক্ত চাপ অনুভব করা দেহ, মন-মানসিকতা, জীবনযাত্রা সব দিক থেকে অত্যন্ত ক্ষতিকারক। তাই তা মানসিক চাপ কন্ট্রোল করা খুবই জরুরি। নিম্নে মানসিক চাপ কন্ট্রোল করার কতিপয় নির্দেশিকা প্রদান করা হলঃ

    মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণঃ

    ১) মানুষের ব্যাপারে খরবদারী করবেন না। কে কী করছে সে বিষয়ে মাথা ঘামানো নিজের মানসিক চাপ বৃদ্ধির একটি কারণ। আরেকটি সমস্যা হবে, অন্যের বিষয় নিয়ে মাথা ঘামালে নিজেকে অন্যদের সাথে তুলনা করার মনোভাব সৃষ্টি হবে। টাকা-পয়সা, সামাজিক অবস্থান, পদমর্যাদা, গাড়ি, বাড়ি, অলংকার, পোশাক, সৌন্দর্য ইত্যাদি দিক থেকে তখন মানসিক চাপ অনুভব করবেন। তাই আল্লাহ আপনাকে যা দিয়েছেন তা নিয়ে খুশি থাকুন আর আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন। তাহলে হৃদয়ে পরম প্রশান্তি অনুভব করবেন ইনশাআল্লাহ।

    ২) আপনার যতটুকু দায়িত্ব ও কর্তব্য ততটুকু পরম আন্তরিকতার সাথে পালন করুন। আপনার সাধ্যের অতিরিক্ত দায়িত্ব কাঁধে তুলতে যাবেন না। অনুরোধে ঢেঁকি গিলবেন না। অন্যথায় আপনাকে অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকতে হবে।

    ৩) মানুষের সাথে অতিরিক্ত সম্পর্ক মানসিক চাপের অন্যতম কারণ। তাই আত্মীয়, বন্ধু, প্রতিবেশী, কলিগ, ক্লাসমেট ইত্যাদির সাথে সীমিত সম্পর্ক রাখুন। সম্পর্ক যত ব্যাপক হবে ততই আপনি নানা বাধ্যবাধকতার জালে আটকে যাবেন।

    ৪) অতিলোভ করবেন না। অতিলোভী ব্যক্তি অর্থ-কড়ি, ধন-দৌলত, পদমর্যাদা ইত্যাদি বৃদ্ধির চিন্তায় বিভোর থাকে। যদি সামান্য টাকা-পয়সা হাতছাড়া হয় বা চাকুরীর প্রমোশন থেকে বঞ্চিত হয় তবে তার হাহুতাশ দেখে কে? সুতরাং অল্পে তুষ্টি মানসিক শান্তির জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি তাকওয়ারও পরিচায়ক।

    ৫) সাধ্যের বাইরে নিজের অর্থ-সম্পদ, আরাম-আয়েশ উজাড় করে দিবেন না। যারা কৃত্রিমভাবে নিজের সব কিছুকে উৎসর্গ করে দেয় তারা তাদের কথা-বার্তা ও আচরণে মানুষের ধন্যবাদ ও প্রশংসা পাওয়ার অপেক্ষায় থাকে। কিন্তু যদি তা না পায় তখন তার মানসিক অস্থিরতা ও টেনশন বেড়ে যায়।

    ৬) আজকের দিনটিকে ভালভাবে উপভোগ করুন। আগামী কাল কী হবে সেটা আল্লাহর উপর ছেড়ে দিন। ইবাদত-বন্দেগীর পাশাপাশি আল্লাহর দেয়া নেয়ামত স্বাচ্ছন্দ্যে উপভোগ করুন। দুনিয়াবী বিষয়ে আগামীর চিন্তায় অস্থির হয়ে মানসিক চাপ বৃদ্ধি করবেন না।

    ৭) প্রতিদিন একান্ত নির্জনে কিছু সময় কাটান। এ সময় দুনিয়ার কারও সাথে সম্পর্ক রাখবেন না। বিশেষ করে ইন্টারনেট তথা হোয়াটসএ্যাপ, ফেসবুক ইত্যাদি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম থেকে সম্পূর্ণ দূরে থাকুন। এ সময় আত্মসমালোচনা করুন আর আল্লাহর নিকট দুয়া করুন। তাহলে দেখবেন, মহান আল্লাহ আপনার মানসিক চাপ থেকে মুক্তি দান করবেন ইনশাআল্লাহ।

    ৮) জ্ঞানীদের জীবনী পড়ুন, তাদের উপদেশ ও মূল্যবান বাণীগুলো পড়ুন তাহলে তাদের জীবনের অভিজ্ঞতা ও উপদেশ দুনিয়ার জীবনে আপনার চলার পথকে সহজ করে দিবে ইনশাআল্লাহ।

    ৯) জীবনে যত বিপদ ও সমস্যাই আসুক না কেন-যেমন, আর্থিক ক্ষতি, পরীক্ষায় খারাপ রেজাল্ট, অসুখ-বিসুখ ইত্যাদি এগুলো নিয়ে খুব বেশী দু:শ্চিন্তা করবেন না। বরং সহজভাবে মেনে নিন। মনে রাখুন, মহান আল্লাহর লিখিত তাকদিরের বাইরে কিছুই ঘটে না। বিপদাপদেই হয়ত কল্যাণ রয়েছে যা বাহ্যিক দৃষ্টিতে মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। কিন্তু নিশ্চয় আল্লাহ হেকমত ছাড়া কিছুই করেন না।

    ১০) সব কিছুই গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করবেন না। মানুষের প্রতিটি কথা বা কাজ গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করা ঠিক নয়। সব কিছু গভীরভাবে বিশ্লেষণ করা ঠিক নয়। বরং মনে আনন্দ বজায় রাখুন, মানুষের সাথে দেখা-সাক্ষাতে হাসতে শিখুন। আপনার কথা ও আচরণে যেন ফুলের সুঘ্রাণ বের হয়। তাহলে ইনশাআল্লাহ মন ফ্রেশ থাকবে আর মানসিক চাপ কমে যাবে ইনশাআল্লাহ।

    ১১) শরীরকে তার হক দিন। প্রয়োজনীয় খাবার, ঘুম, বিশ্রাম গ্রহণ করা জরুরি।

    ১২) দৈনন্দিন গুরুত্বপূর্ণ কাজের লিস্ট তৈরি করে আগেরটা আগে পরেরটা পরে করুন। তবে তা করতে গিয়ে নিজেকে কষ্টের মধ্যে ফেলে দিবেন না। মনে রাখবেন, অগোছালো কার্যক্রম মানসিক অস্থিরতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ তৈরি করে।

    ১৩) ‘প্রতিটি কাজ ১০০ পার্সেন্ট নির্ভুল করতে হবে’ এই চিন্তা মাথা থেকে সরাতে হবে। কেননা, পূর্ণাঙ্গতার গুণ কেবল মাত্র আল্লাহর। যারা সব কাজ নির্ভুল করার চিন্তায় থাকে তাদেরকে চতুর্দিক থেকে দু:শ্চিন্তা, টেনশন,অস্থিরতা ঘিরে ধরে। ফলে তাদের মানসিক চাপ চরম আকার ধারণ করে।

    ১৪) নিশ্চিত থাকুন, আল্লাহর সাথে সম্পর্ক যত গভীর হবে দুনিয়া ও আখিরাতের সব কাজ তত সহজ হবে। আল্লাহ ভীতি, নামায, সকাল-সন্ধ্যার দুয়া ও যিকির, নেকীর কাজ, মানুষের কল্যাণে কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহ বান্দার মনে অফুরন্ত প্রশান্তি বর্ষণ করেন, সমস্যা দূরভিত করেন আর তখন জীবন হয়ে উঠে আরও প্রাণবন্ত, স্বচ্ছন্দয় ও আল্লাহর ভালবাসায় সুরভিত।

    আল্লাহ সকলকে তাওফিক দান করুন।

    গ্রন্থনাঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।