Tag: মুখস্থ

  • পাঁচ কালিমা মুখস্থের বিষয়ে ভ্রান্তি

    পাঁচ কালিমা মুখস্থের বিষয়ে ভ্রান্তি

    প্রশ্ন: দেশের মানুষের কথা হল, পাঁচ কালিমা মুখস্থ রাখতেই হবে এবং প্রতিদিন পরতে হবে। অন্যথায় ঈমানের জোর কমে যাবে বা মুসলমান থাকা যাবে না! আমরা কমবেশি সবাই এই পাঁচ কালিমা মুখস্থ করেছি। কিন্তু আসলে কি কালিমা ৫টি? এ বিষয় টি জানালে উপকৃত হবো ইনশাল্লাহ।

    উত্তরঃ মানুষের মুক্তি ও সাফল্যের জন্য কালিমায়ে তাইয়েবা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই) এই একটি কালিমার স্বীকৃতি প্রদান এবং তদনুযায়ী আমল করাই যথেষ্ট।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    « أَسْعَدُ النَّاسِ بِشَفَاعَتِى يَوْمَ الْقِيَامَةِ مَنْ قَالَ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ ، خَالِصًا مِنْ قَلْبِهِ أَوْ نَفْسِهِ »

    কিয়ামতের দিন আমার শাফায়াত লাভে সেই ব্যক্তি সৌভাগ্য মণ্ডিত হবে, যে আন্তরিকভাবে বলবে: ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ তথা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই।

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ,হাদিসের প্রতি আগ্রহ,হাদীস নং ৯৯,শামেলা

    আবদুল্লাহ বিন ওমার রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    “ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত: এই সাক্ষ্য দেয়া যে,আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন মা’বূদ নেই এবং মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আল্লাহর রাসূল…।

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

    «مَنْ قَالَ: لَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَكَفَرَ بِمَا يُعْبَدُ مَنْ دُونِ اللهِ، حَرُمَ مَالُهُ، وَدَمُهُ، وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ»

    যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ তথা আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই’ এ কথার স্বীকৃতি দান করল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যকে অস্বীকার করল, তার ধন-সম্পদ ও জীবন নিরাপদ হল এবং তার কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহর উপর বর্তাল।

    সহীহ মুসলিম:২৩

    এছাড়াও অসংখ্য হাদীস রয়েছে যেগুলো থেকে প্রতীয়মান হয় যে, কালিমায় তাইয়েবার মধ্যেই মানবতার
    সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণ সন্নিহিত রয়েছে।

    প্রচলিত পাঁচ কালিমা

    আমাদের সমাজে প্রচলিত কালিমাগুলো হল,

    • ১. কালিমায়ে তাইয়েবা
    • ২. কালিমায়ে শাহাদাত
    • ৩. কালিমায়ে তাওহীদ
    • ৪. কালিমায়ে তামযীদ
    • ৫. কালিমায়ে রদ্দে কুফর

    উক্ত কালিমাগুলোর মর্মার্থ সামগ্রিকভাবে সঠিক। কিন্তু হুবহু শব্দে সবগুলো বাক্য হাদীসে পাওয়া যায় না। বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, এ সব কালিমার মধ্যে মূলত: তাইয়েবার ব্যাখ্যা প্রস্ফুটিত হয়েছে। সুতরাং সেগুলোও পাঠ করায় দোষ নেই। কিন্তু ওগুলো না পড়লে বা মুখস্থ না করলে মুসলিম থাকা যাবে না-এ কথা ঠিক নয়।

    আরও পড়ুনঃ কুরআন কি আল্লাহর সৃষ্টি?

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • শুক্রবারে সূরা কাহাফ পাঠ ও এর দশ আয়াত মুখস্থ করার ফযিলত

    শুক্রবারে সূরা কাহাফ পাঠ ও এর দশ আয়াত মুখস্থ করার ফযিলত

    শুক্রবারে সূরা কাহাফ পাঠ করা অত্যন্ত ফযিলতপূর্ণ আমল। অনুরূপভাবে এর দশ আয়াত মুখস্থ করাও খুবই ফযিলতপূর্ণ। নিম্নে এ সম্পর্কে হাদিস সমূহ পেশ করা হল:

    ♻ জুমার দিন সুরা কাহাফ পাঠ করার ফযিলত:

    🔰 আবু সাঈদ খুদরী রাযি. হতে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন :

    مَن قرأَ سورةَ الكَهْفِ ليلةَ الجمعةِ، أضاءَ لَهُ منَ النُّورِ فيما بينَهُ وبينَ البَيتِ العَتيقِ

     
    “যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পড়বে তার এবং বায়তুল আতীক তথা ক্বাবা পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল হবে।“

    দারেমী, হা/৩৪০৭, শাইখ আলবানী হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, দ্রষ্টব্য: সহীহুল জামে হা/৬৪৭১

    🔰 আবু সাঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    مَن قَرَأَ سورةَ الكَهفِ يومَ الجُمُعةِ أضاءَ له من النورِ ما بَينَ الجُمُعتينِ


    “যে ব্যক্তি জুমার দিন সূরা কাহাফ পড়বে তার জন্য এক জুমা থেকে আরেক জুমা পর্যন্ত আলোকোজ্জ্বল হবে।“

    মুসতাদারেক হাকিম: ২/৩৯৯, বায়হাকী: ৩/২৪৯, ফয়জুল ক্বাদীর: ৬/১৯৮, ইবনে হাজার আসকালানী তাখরীজুর আযকার গ্রন্থে বলেন, হাদিসটি হাসান এবং আরও বলেন, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত সকল হাদিসের মধ্যে এ হাদিসটি সবচেয়ে শক্তিশালী, শাইখ আলাবনীও এটিকে সহীহ বলেছেন। দ্র: সহীহুল জামে হা/৬৪৭০

    🔰 ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    من قرأ سورة الكهف في يوم الجمعة سطع له نور من تحت قدمه إلى عنان السماء يضيء له يوم القيامة ، وغفر له ما بين الجمعتين


    “যে ব্যক্তি শুক্রবার দিন সূরা কাহাফ পাঠ করবে তার পা থেকে আকাশের উচ্চতা পর্যন্ত নূর (আলো) হয়ে যাবে, যা কেয়ামতের দিন আলো দিবে এবং বিগত জুমা থেকে এ জুমা পর্যন্ত তার সব গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।”

    আত তারগীব ওয়া তারহীব: ১/২৯৮, ইমাম মুনযেরী বলেন, এর সনদে কোন সমস্যা নেই

    উপরোক্ত হাদিসগুলোতে শুক্রবারে সূরা কাহাফ পড়ার ফযিলত বর্ণিত হয়েছে।

    ♻ সূরা কাহাফ এর দশ আয়াত পড়ার বা মুখস্থ করার ফযিলত:

    আবু দারদা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছে:

    مَنْ حَفِظَ عَشْرَ آيَاتٍ مِنْ أَوَّلِ سُورَةِ الْكَهْف عُصِمَ مِنَ الدَّجَّالِ

     
    ‘‘যে ব্যক্তি সূরা কাহাফের প্রথম দিক থেকে দশটি আয়াত মুখস্থ করবে, সে দজ্জালের(ফিতনা) থেকে পরিত্রাণ পাবে।’’

    সহীহ মুসলিম

    অন্য বর্ণনায় ‘কাহফ সূরার শেষ দিক থেকে’ উল্লেখ হয়েছে। (সহীহ মুসলিম, হা/ ৮০৯)
    এই দশ আয়াত পড়া বা মুখস্থ করা শুক্রবারের জন্য নির্দিষ্ট নয়। বরং তা মুখস্থ করে যে কোনো সময় পাঠ করলে উক্ত মর্যাদা লাভ করা যাবে ইনশাআল্লাহ। আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ তাহিয়্যাতুল মসজিদ সালাত ও খুতবা

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।