প্রশ্নঃ কোন ব্যক্তি যদি বুঝতে পারে যে, কিছুদিনের মধ্য তার মৃত্যু হবে তাহলে তার করণীয় কী?
উত্তরঃ মৃত্যু এক অবধারিত ও সুনিশ্চিত বিষয়। এখান থেকে পালানোর কারও সুযোগ নাই। কিন্তু কেউ জানে না, কার কখন কোথায় মৃত্যু সংঘটিত হবে। তাই তো আল্লাহ তাআলা বলেনঃ
ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ مَّاذَا تَكْسِبُ غَدًا ۖ وَمَا تَدْرِي نَفْسٌ بِأَيِّ أَرْضٍ تَمُوتُ ۚ إِنَّ اللَّـهَ عَلِيمٌ خَبِيرٌ
সূরা লোকমান: ৩৪
“কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।”
তবে কেউ যদি মারাত্মক অসুখ, শারীরিক জটিল অবস্থা বা বিশেষ পরিস্থিতিতে অনুভব করতে পারে যে, হয়ত সে জীবন সায়াহ্নে এসে উপনীত হয়েছে, ক্ষণকাল পরেই তার জীবনের সূর্য নিঃসীম অন্ধকারে হারিয়ে যাবে; আর কখনোই তা ফিরে আসবে না তাহলে তার উচিত, মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা এবং জীবনের বাকি সময়টুকুকে অমূল্য সম্পদ মনে করে আল্লাহর নৈকট্য অর্জন ও গুনাহ মোচনের জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করা।
মৃত্যু নিকটে বুঝলে যা করণীয়ঃ
এমন পরিস্থিতিতে করণীয় সম্পর্কে অতি সংক্ষেপে ১০টি দিক নির্দেশনা তুলে ধরা হলঃ
১) পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের কাছে নিজের অতীত জীবনের সকল গুনাহের কথা তুলে ধরে অনুতপ্ত হৃদয়ে নিখাদ চিত্তে তওবা-ইস্তিগফার করা।
২) আল্লাহর সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে দুর্বলতা ও অতীত জীবনে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলোকে যথাসাধ্য অধিক পরিমাণে নফল ইবাদত-বন্দেগি ও নেকির কাজ দ্বারা ভরপুর করে দেয়া।
৩) সাধ্যমত কুরআন তিলাওয়াত, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, দুআ, তাসবিহ ও জিকির-আজকার দ্বারা জিহ্বাকে সজীব রাখা।
৪) কবরের অন্ধকার, হাশরের ভয়াবহতা, জাহান্নামের মর্মন্তুদ শাস্তি ইত্যাদির ভয়ে আল্লাহর নিকট ক্রন্দন করা এবং তার নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।
৫) সর্বদা ওজু অবস্থায় থাকার চেষ্টা করা।
৬) গল্প-গুজব, খেলা-ধুলা, বিনা দরকারে মোবাইল টিপা, টিভি দেখা এবং অনর্থক কথা ও কাজে সময় অপচয় না করা।
৭) কারো সাথে লেনদেন থাকলে তা দ্রুত সমাধান করা।
৮) কারো ’হক‘ নষ্ট করে থাকলে অনতিবিলম্বে তা মালিককে ফিরিয়ে দেয়া। কাউকে কষ্ট দিয়ে থাকলে বা কারো প্রতি জুলুম-অত্যাচার করে থাকলে তার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করা বা তাকে ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং তার প্রতি কারো দাবি-দাওয়া ও অভিযোগ-অনুযোগ থাকলে বিষয়টি মিটমাট করে নেয়া।
৯) দান-সদকা করা। (তবে তার সম্পদের সর্বোচ্চ তিনভাগের একভাগ দান করতে পারে। এর বেশি দান করা শরিয়ত সম্মত নয়)
১০) মৃত্যুর পরে কী করণীয় সে বিষয়ে তার পরিবার বা উত্তরাধিকারী লোকজনকে দিক নির্দেশনা দেয়া ও ওসিয়ত করা।
পরিশেষে দুআ করি, মৃত্যুর পূর্বে দয়াময় আল্লাহ যেন আমাদের সকল গুনাহ মোচন করে দেন। বেশি বেশি নেকির কাজ করে তাঁর আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করার তাওফিক দান করেন। এবং কবর, হাশর ও জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তি থেকে রক্ষা করেন।
আমীন।
▬▬▬▬◐◑▬▬▬▬
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব