Tag: রমাযান

  • রমাযানে কবর আজাব বন্ধ থাকে কি?

    রমাযানে কবর আজাব বন্ধ থাকে কি?

    প্রশ্নঃ একটি কথা প্রচলিত আছে যে রমাযানে সকলের কবর আজাব বন্ধ থাকে। তাছাড়া এটিও প্রচলিত আছে যে কেউ রমাযানের মধ্যে মারা গেলে তার আর কবর আজাব হয় না। এগুলি কি সঠিক কথা? বিস্তারিত জানতে চাই।

    উত্তরঃ ‘রমাযানে কবর আজাব মাফ থাকে অথবা রমাযানে মারা গেলে কবরের আজাব হয় না’ ইত্যাদি কথা হাদিস সম্মত নয়। বরং হাদিস সম্মত কথা হল, যদি কেউ দ্বীনদার ও সৎকর্ম শীল অবস্থায় মারা যায় তাহলে সে কবরে ফেরেশতাদের তিনটি প্রশ্নের উত্তর দিতে সক্ষম হবে এবং কিয়ামত পর্যন্ত সেখানে শান্তি ও নিরাপদে অবস্থান করবে আর কেউ যদি দুষ্কৃতিকারী ও পাপিষ্ঠ হয় তাহলে তার পরিণতি হবে ভয়াবহ- চাই সে রমাযানে মারা যাক অথবা অন্য কোন সময়।

    আর যে ব্যক্তির কবরে শাস্তি হচ্ছে রমাযান মাস শুরু হলে তার শাস্তি স্থগিত হয়- এমন কোন কথাও হাদিস দ্বারা প্রমাণিত নয়। (আল্লাহ আমাদেরকে ক্ষমা করুন। আমীন)

    তবে হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে যে, আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে রোজা রাখার পর সে অবস্থায় মৃত্যু বরণ করা জান্নাতে প্রবেশের অন্যতম একটি কারণ।

    নিম্নে এ সংক্রান্ত দুটি হাদিস ও শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহ. এর দুটি ফতোয়া তুলে ধরা হল:

    কবর আজাব সংক্রান্ত হাদিস:

    আনাস রা. হতে বর্ণিত যে, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

    الْعَبْدُ إِذَا وُضِعَ فِي قَبْرِهِ وَتُوُلِّيَ وَذَهَبَ أَصْحَابُهُ حَتَّى إِنَّهُ لَيَسْمَعُ قَرْعَ نِعَالِهِمْ أَتَاهُ مَلَكَانِ فَأَقْعَدَاهُ فَيَقُولاَنِ لَهُ مَا كُنْتَ تَقُولُ فِي هَذَا الرَّجُلِ مُحَمَّدٍ فَيَقُولُ أَشْهَدُ أَنَّهُ عَبْدُ اللهِ وَرَسُولُهُ فَيُقَالُ انْظُرْ إِلَى مَقْعَدِكَ مِنْ النَّارِ أَبْدَلَكَ اللهُ بِهِ مَقْعَدًا مِنْ الْجَنَّةِ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم فَيَرَاهُمَا جَمِيعًا وَأَمَّا الْكَافِرُ أَوْ الْمُنَافِقُ فَيَقُولُ لاَ أَدْرِي كُنْتُ أَقُولُ مَا يَقُولُ النَّاسُ فَيُقَالُ لاَ دَرَيْتَ وَلاَ تَلَيْتَ ثُمَّ يُضْرَبُ بِمِطْرَقَةٍ مِنْ حَدِيدٍ ضَرْبَةً بَيْنَ أُذُنَيْهِ فَيَصِيحُ صَيْحَةً يَسْمَعُهَا مَنْ يَلِيهِ إِلاَّ الثَّقَلَيْنِ

    “বান্দাকে যখন তার কবরে রাখা হয় এবং তাকে পেছনে রেখে তার সাথীরা চলে যায় (এতটুকু দূরে যে,) তখনও সে তাদের জুতার শব্দ শুনতে পায়। এমন সময় তার নিকট দু’জন ফেরেশতা এসে তাকে বসিয়ে দেন।অতঃপর তাঁরা প্রশ্ন করেন: এই ব্যক্তি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)! তাঁর সম্পর্কে তুমি কী বলতে?
    তখন সে বলবে: আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তিনি আল্লাহ্‌র বান্দা এবং তাঁর রাসূল।তখন তাঁকে বলা হবে, জাহান্নামে তোমার অবস্থানের জায়গাটি দেখে নাও, যার পরিবর্তে আল্লাহ তা‘আলা তোমার জন্য জান্নাতে একটি স্থান নির্ধারিত করেছেন।নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: তখন সে দু’টি স্থান একই সময় দেখতে পাবে।আর কাফির বা মুনাফিক বলবে: আমি জানি না। অন্য লোকেরা যা বলত আমিও তাই বলতাম।
    তখন তাকে বলা হবে: না তুমি নিজে জেনেছ, না কুরআন পড়ে শিখেছ।অতঃপর তার দু’ কানের মাঝখানে লোহার মুগুর দিয়ে এমন জোরে আঘাত করা হবে, যাতে সে চিৎকার করে উঠবে। তার আশেপাশের সবাই তা শুনতে পাবে মানুষ ও জিন ছাড়া।

    সহিহ বুখারী (তাওহীদ) ২৩/ জানাজা (كتاب الجنائز), হা/১৩৩৮-সহিহ মুসলিম ৫১/১৭, হা/২৮৭০, আধুনিক প্রকাশনী: ১২৫০, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ১২৫৭

    উল্লেখ্য যে, এটি সংক্ষিপ্ত হাদিস। অন্যান্য বর্ণনায়, আরও দুটি প্রশ্ন করার কথা এসেছে। সে দুটি হলঃ

    • তোমার রব (প্রতিপালক ও সৃষ্টিকর্তা) কে?
    • তোমার দীন (ধর্ম/জীবন ব্যবস্থা) কী?

    যাহোক, উক্ত হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয় যে, কবরের আজাব সত্য এবং তা রমাযান কিংবা রমাযান ছাড়া অন্য যে কোন সময়ের জন্য প্রযোজ্য। অর্থাৎ কবরের আজাব রমাযানে বন্ধ থাকবে তা উক্ত হাদিসে বলা হয় নি আর এ বিষয়ে অন্য কোন হাদিসও আসে নি।

    রোজা অবস্থায় মৃত্যু হওয়া জান্নাতে প্রবেশের একটি কারণ:

    ‘কোন ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য রোজা রাখার পর তার অবস্থায় জীবনাবসান হলে সে জান্নাতে যাবে’ এ কথা সহিহ হাদিস দ্বারা সাব্যস্ত হয়েছে। যেমন: হুযাইফা রা. থেকে বর্ণিত- তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার বুকে হেলান দিয়ে ছিলেন। তখন তিনি বললেন,

    مَنْ قَالَ لا إِلَهَ إِلا اللَّهُ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ، وَمَنْ صَامَ يَوْمًا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ ، وَمَنْ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ خُتِمَ لَهُ بِهَا دَخَلَ الْجَنَّةَ

    – “লা ইলা হা ইল্লাল্লা হ’ বলার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
    – আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে একদিন সিয়াম রাখার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।
    – আর আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় কিছু দান-সদকা করার পর যে ব্যক্তির জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটবে সেও জান্নাত প্রবেশ করবে।”

    মুসনাদে আহমদ/22813, সহীহ তারগীব/৯৮৫, আলাবানী রহ. তার আহকামুল জানাইয গ্রন্থে বলেন, “এর সনদ সহিহ”

    হে আল্লাহ কবরের আযাব থেকে আমাদের মাফ করুন।মাফ করুন।নিশ্চয় আপনার দয়া দ্বারা সব পরিবর্তন

    ● রমাযানে মারা গেলে কবরের আজাব মাফ প্রসঙ্গে শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বায রহ. বলেন:

    وأما أنه إذا مات في رمضان أو مات في الجمعة، ينجو من العذاب، لا، بل هذا إلى الله ، إن مات على استقامة فله الجنة والكرامة، وإن مات على معاصي فهو على خطر، ويدعى له بالمغفرة و الرحمة

    “‘আর যদি রমাযান অথবা জুমার দিন মৃত্যুবরণ করে তাহলে কবরে আজাব থেকে মুক্তি পাবে’ এ ব্যাপারে কথা হল, না (এ কথা সঠিক নয়) বরং এটি আল্লাহর উপর সমর্পিত। যদি সে দীনদারীর উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে তার জন্য রয়েছে জান্নাত এবং সম্মান আর যদি আল্লাহর অবাধ্যতার উপরে মৃত্যুবরণ করে তাহলে সে বিপদের মুখে রয়েছে। তার জন্য আল্লাহর কাছে মাগফেরাত ও রহমতের দোয়া করতে হবে।”

    শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট

    ● তিনি ‘নূরুন আলাদ দারব’ শীর্ষক সৌদি আরবের এক রেডিও অনুষ্ঠানে আরও বলেন:

    عذاب القبر ثابت لكل من يستحقه سواء مات في يوم الجمعة أو في رمضان أو في أي وقت أخر

    “ঐ ব্যক্তির জন্য কবরের আজাব সাব্যস্ত যে তার উপযুক্ত-চাই সে শুক্রবারে মারা যাক অথবা রমাযান মাসে অথবা অন্য যেকোনো সময়।”

    আরও পড়ুনঃ যা কিছু হয়, ভালোর জন্য হয় – কথাটি কি সঠিক?

    পরিশেষে অসীম দয়াময় ও করুণার আধার আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলার নিকট দুআ করি, তিনি যেন আমাদেরকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করেন। বিশেষ করে যেন রমাযান মাসে আমাদেরকে সিয়াম, কিয়াম, তিলাওয়াতুল কুরআন, তওবা-ইস্তিগফার সহ আল্লাহর সন্তুষ্টি মূলক সৎকর্ম বেশি করে সম্পাদন করার তাওফিক দান করেন এবং এগুলোর মাধ্যমে আমাদের গুনাহগুলো মোচন করেন। নিশ্চয় তিনি পরম ক্ষমাশীল ও অসীম দয়ালু।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান মাসের মর্যাদা ও সিয়ামের গুরুত্ব

    রমাযান মাসের মর্যাদা ও সিয়ামের গুরুত্ব

    রমাযান হল, বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস। অসংখ্য নিয়ামত ও অবারিত সুযোগ সমৃদ্ধ মহিমান্বিত মাস এটি। এ মাসে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, উমরা, দান-সদকা, চরিত্র সংশোধন এবং মহান রবের দরবারে দুআ-আরোধনার মাধ্যমে গুনাহ মোচন করত: জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির এক অতুলনীয় সযোগ।

    নিম্নে হাদিসে বর্ণিত এ মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট মণ্ডিত দিক ও করণীয় তুলে ধরা হল:

    🌀 ১) রমাযানের রোযা রাখা ফরয:

    রমাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।”

    সূরা বাকারা: ১৮৩

    🌀 ২) রমাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:

    ➤ ক) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان

    “ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা-‘ই-লা-হা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমাযান মাসে রোযা রাখা।”

    বুখারী ও মুসলিম

    ➤ খ) আবু হুরায়রা রাহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ

    الإيمان أن تؤمن بالله ، وملائكته ، وبلقائه ، ورسله، وتؤمن بالبعث

    “ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্‌তাগণ, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কি? তিনি বললেন:

    الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان

    ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শিরক করবে না, নামায পড়বে, ফরয যাকাত দিবে এবং রমাযান মাসে রোযা রাখবে।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কি? তিনি বললেনঃ

    أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك

    “ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।”

    বুখারী ও মুসলিম

    ➤ গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:

    ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমন করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুসকো। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ নামায ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামায পড়তে পার।”

    লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “রমাযান মাসের রোযা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোযা রাখতে পার।”

    লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন?

    বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।” [বুখারী, সওম অধ্যায় ও মুসলিম, ঈমান অধ্যায়।]

    🌀 ৩) রমাযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়:

    আবু হুরায়রা (রাহ:)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন রমাযান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যখন রমাযান আগমন করে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম। সহীহ মুসলিম কিতাবুস সিয়াম]

    🌀 ৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস রোযা রাখতেন না:

    আয়েশা (রাহ:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ

    كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ، ويفطر حتى نقول لا يصوم ، وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان ، وما رايته أكثر صياماً منه في شعبان)) متفق عليه

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল রোযা রাখা শুরু করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোযা বাদ দিবে না। আবার রোযা বন্ধ করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত তিনি আর রোযাই রাখবেন না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমাযান ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস ধরে রোযা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার চেয়ে বেশি আর কাউকে রোযা রাখতে দেখিনি।”

    বুখারী ও মুসলিম

    🌀 ৫) এক রমাযান অন্য রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ:

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:

    الصلوات الخمس ، والجمعة إلى الجمعة ، ورمضان إلى رمضان ، مكفرات ما بينهن ، إذا اجتنب الكبائر

    “পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযানের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন হয়ে যাবে যদি কবিরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।”

    সহীহ মুসলিম। পবিত্রতা অধ্যায়

    🌀 ৬) রমাযান মাসে শয়তানকে শিকর বন্দী করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়:

    إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن ، وغلقت أبواب النيران فلم يفتح منها باب ، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب ، وينادي مناد يا باغي الخير أقبل ، ويا باغي الشر أقصر ، والله عتقاء من النار وذلك كل ليلة

    “রমাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান এবং উশৃংখল জিনদেরকে শিকল বন্দী করে ফেলা হয়, জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়-যার একটিও খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়- যার একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক আহ্বানকারী আহবান করতে থাকে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অন্যায়কারী, বিরত হও। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তা রমাযানের প্রতি রাতেই।”

    [তিরমিযী, রোযা অধ্যায়। মুসতাদরাক হাকেম। আল্লামা আলবানী (রা.) হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন। দেখুন: সহীহ তারগীব ওয়াত্‌ তারহীব। হাদিস নং ৯৯৮]

    🌀 ৭) একই বছরে রমাযান এবং যিল হজ্জ মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:

    আবু বাকরা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    شهران لا ينقصان ، شهر عيد : رمضان وذو الحجة- متفق عليه

    “দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না। সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রমাযান এবং যিলহজ।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: রোযা। সহীহ মুসলিম অধ্যায়: রোযা] অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক সাথে অসম্পূর্ণ হবেনা। একটি ২৯ দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদিসটির অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম হবে না।

    সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাত্‌হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আমাদের মাঝে আসছে রমাযান। এই মাহে রমাযান মূলত: গুনাহ মোচন, তাকওয়া অর্জন, চরিত্র সংশোধন, নিজেকে পরিবর্তন এবং বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করে আমলনামা ভরে নেয়ার অফুরন্ত সম্ভাবনাময় মাস। ইমানদার ব্যক্তিগণ এ মাসের প্রতিটি মূহুর্তেকে সৎকর্মে ব্যয় করার জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।

    রমাযান এ অধিক নেকিঃ

    ♻ নিম্নে রমাযানুল মোবারকে অধিক পরিমাণে নেকি উপার্জনের দশটি টিপস প্রদান করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমাযানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    আল্লাহ তাওফিক দান করুন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • রামাযান মাসকে কুর’আন নাজিলের মাস বলা হয় কেন?

    রামাযান মাসকে কুর’আন নাজিলের মাস বলা হয় কেন?

    প্রশ্নঃ রামাযান মাসকে কুর’আন নাজিলের মাস বলা হয় কেন? এই মাসের বাইরে কি কুর’আন নাজিল হয় নি?

    উত্তরঃ রমাযান মাসকে কুর’আন নাজিলের মাস বলা হয়। এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। তবে এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের মনে প্রশ্ন জাগে যে কেন রমাযান মাসকে কুর’আন নাজিলের মাস বলা হয়, যেখানে অন্যান্য মাসেও কুর’আনের আয়াত প্রকাশ করা হয়েছে।

    প্রথমে দেখি কুর’আন নাজিলের মাস বিষয়ে কুর’আনে কি আছে

    আল্লাহ তাআলা বলেনঃ

    شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ
    “রমযান মাস হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”

    সূরা বাকারা: ১৮৫

    এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা মাহে রামাযানকে কুরআন নাজিলের মাস হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

    এর ব্যাখ্যা কি?

    এর ব্যাখ্যায় মুফসসিরগণ বলেন, দুটি কারণে রামাযান মাসকে কুরআন নাযিলের মাস বলা হয়। যথা:

    ❖ ক. আল্লাহ তাআলা রামাযান মাসের কদরের রাতে ৭ম আসমানে অবস্থিত লাওহে মাহফুয থেকে শেষ আসমানে অবস্থিত বাইতুল ইযযতে পূরো কুরআন অবতীর্ণ করেন। তারপর সেখান থেকে বিভিন্ন ঘটনা ও প্রেক্ষাপট অনুযায়ী দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট আল কুরআন অবর্তীণ হয়।

    ❖ খ. রামাযান মাসের কদরের রাতে মক্কার হেরা পর্বতে অবস্থানকালীন সময়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর কুরআন নাযিলের সূচনা হয়। এ সময় নাযিল হয় সূরা আলাক এর ১ম ৫টি আয়াত। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছর ধরে বিভিন্ন সময়ে ক্রমান্বয়ে পূরো কুরআন নাজিল হয়। (তাফসীরে ইবনে কাসীর)

    আরও পড়ুনঃ কুরআনের তিলাওয়াত শোনার ৮টি অনবদ্য উপকারিতা

    আল্লাহু আলাম

    ▬▬▬▬▬▬▬▬
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    জুবাইল দাওয়াহ সেন্টার, সৌদি আরব।