শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলঃ
১) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان” (متفق عليه)
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রমাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
২) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
« لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।
৩) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,
আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন:
ذاكَ شهرٌ يغفلُ الناسُ عنهُ بينَ رجبَ ورمضانَ وهو شهرٌ يُرفعُ فيهِ الأعمالُ إلى ربِّ العالمينَ فأُحِبُّ أن يُرفعَ عملي وأنا صائمٌ
“রজব এবং রমাযানে মধ্যবর্তী এ মাস (শাবান মাস) সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ (এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে,) এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই, রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”
আমার রমাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[4] অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন।
বুখারি, কিতাবুস্ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।(আল বিদা’ আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)
প্রশ্নঃ একটি কথা প্রচলিত আছে যে ইফতারের পূর্বে দুআ করলে সেই দুআ নাকি কবুল হয়। এই বিষয়ে জানতে চাচ্ছি। তাছাড়া কখন দুয়া করলে তা কবুল হবার সম্ভাবনা থাকে তাও জানতে চাচ্ছি।
উত্তরঃ রোযা অবস্থায় দুআ ফিরিয়ে দেয়া হয় না এ ব্যাপারে সহীহ হাদিস রয়েছে। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
সুতরাং রোজাদারের জন্য ইফতারের আগ মুহূর্ত পর্যন্ত যে কোন সময় দুআ কবুল হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ সময়। বিশেষ করে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে মানুষ ক্ষুধা-পিপাসায় কাতর ও ক্লান্ত-শ্রান্ত থাকে। তাই সে সময় দুয়া কবুলের সম্ভাবনা আরও বেশি। কারণ এ ধরণের দুর্বল ও কষ্টকর অবস্থায় দুআ করা হলে তা কবুলের সম্ভাবনা বেশি থাকে।
সেই সাথে এ মর্মে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে তা হলঃ
إنَّ للصائمِ عندَ فِطرِه لَدعوةً ما تُرَدُّ
“ইফতারের সময় রোজাদারের জন্য এমন একটি দুআ রয়েছে যা ফিরিয়ে দেয়া হয় না।”
ইবনে মাজাহ, হাকিম
এ হাদিসটি সহীহ না কি জঈফ এ বিষয়ে মুহাদ্দিসদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে। আল্লামা আলবানী রহ. এটিকে সনদগতভাবে জঈফ সাব্যস্ত করলেও ইমাম বূসীরী, ইবনে হাজার আসকালানী, আহমদ শাকের সহ কতিপয় মুহাদ্দিস সহীহ/হাসান হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।
মোটকথা, এ হাদিসটিকে জঈফ ধরে নিলেও রোযা অবস্থায় দুআ কবুলের সহীহ হাদিস অনুযায়ী এবং ইফতারের আগে রোজাদারদের দুর্বল অবস্থায় থাকার পরিপ্রেক্ষিতে ইফতারের পূর্বে দুআ করলে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে ইনশাআল্লাহ।
তাই রোজাদারের উচিৎ, সারা দিন রোযা অবস্থায় দুয়া করার সুযোগকে হাত ছাড়া না করা। বিশেষ করে ইফতারে আগের সময়টিকে দুআর জন্য বেশি গুরুত্ব দেয়া। আল্লাহু আলাম।
রমাযান হল, বছরের শ্রেষ্ঠতম মাস। অসংখ্য নিয়ামত ও অবারিত সুযোগ সমৃদ্ধ মহিমান্বিত মাস এটি। এ মাসে রয়েছে সিয়াম, কিয়াম, কুরআন তিলাওয়াত, ইতিকাফ, উমরা, দান-সদকা, চরিত্র সংশোধন এবং মহান রবের দরবারে দুআ-আরোধনার মাধ্যমে গুনাহ মোচন করত: জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তির এক অতুলনীয় সযোগ।
নিম্নে হাদিসে বর্ণিত এ মাসের কতিপয় বৈশিষ্ট মণ্ডিত দিক ও করণীয় তুলে ধরা হল:
🌀 ১) রমাযানের রোযা রাখা ফরয:
রমাযান মাসে রোযা রাখা ফরজ হওয়ার সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেনঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।”
সূরা বাকারা: ১৮৩
🌀 ২) রমাযান মাসে রোযা রাখা ইসলামের অন্যতম একটি স্তম্ভ:
➤ ক) আব্দুল্লাহ বিন উমর (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
بني الإسلام على خمس: شهادة أن لا إله إلا الله ، وأن محمداً رسول الله ،وإقامة الصلاة ، وإيتاء الزكاة ، والحج، وصوم رمضان
“ইসলাম পাঁচটি স্তম্ভের উপর প্রতিষ্ঠিত। লা-‘ই-লা-হা ইল্লাল্লাহ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ তথা এ কথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোন উপাস্য নেই এবং নামায প্রতিষ্ঠা করা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ আদায় করা এবং রমাযান মাসে রোযা রাখা।”
বুখারী ও মুসলিম
➤ খ) আবু হুরায়রা রাহ. হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একদিন মানুষের সামনে ছিলেন এমতাবস্থায় তাঁর নিকট এক লোক এসে জিজ্ঞেস করল: ঈমান কি? তিনি উত্তরে বললেনঃ
“ঈমান হল, আল্লাহ, তাঁর ফেরেশ্তাগণ, তাঁর সাথে সাক্ষাৎ হওয়াকে এবং তাঁর রাসূলগণকে বিশ্বাস করবে এবং সেই সাথে বিশ্বাস করবে মৃত্যুর পর পুনরুত্থানকে।” সে ব্যক্তি আবার জিজ্ঞেস করল, ইসলাম কি? তিনি বললেন:
الإسلام أن تعبد الله ولا تشرك به وتقيم الصلاة وتؤتي الزكاة المفروضة وتصوم رمضان
ইসলাম হল: এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। তাঁর সাথে শিরক করবে না, নামায পড়বে, ফরয যাকাত দিবে এবং রমাযান মাসে রোযা রাখবে।” লোকটি পুনরায় জিজ্ঞেস করল, ইহসান কি? তিনি বললেনঃ
أن تعبد الله كأنك تراه ، فإن لم تكن تراه فإنه يراك
“ইহসান হল, এমনভাবে আল্লাহ আল্লাহর এবাদত করবে যে, যেন তুমি তাঁকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি তাকে দেখতে না পাও তবে (এ মনোভাব রাখবে) যে তিনি তোমাকে দেখতে পাচ্ছেন…।”
বুখারী ও মুসলিম
➤ গ) আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে এক বেদুইনের কথোপকথন:
ত্বালহা বিন উবায়দুল্লাহ (রাহ:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এক বেদুঈন আগমন করল। তার মাথার চুল ছিল উসকো-খুসকো। লোকটি বলল: হে আল্লাহর রাসূল, আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ নামায ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “পাঁচ ওয়াক্ত নামায। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল নামায পড়তে পার।”
লোকটি বলল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার জন্য কি পরিমাণ রোযা ফরয করেছেন? তিনি বললেন: “রমাযান মাসের রোযা। তবে কিছু অতিরিক্ত নফল রোযা রাখতে পার।”
লোকটি আবার জিজ্ঞেস করল: আপনি আমাকে বলুন, আল্লাহ তাআলা আমার উপর কি পরিমাণ যাকাত ফরয করেছেন?
বর্ণনাকারী বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রশ্নকারীকে ইসলামের বিভিন্ন বিধি-বিধান সম্পর্কে জ্ঞান দান করলেন। অতঃপর লোকটি বলল: সে প্রভুর শপথ করে বলছি, যিনি আপনাকে সত্য দ্বারা সম্মানিত করেছেন, আমি অতিরিক্ত কোন কিছুই করব না এবং আল্লাহ তাআলা আমার উপর যা ফরয করেছেন তা থেকে কোন কিছুই কমও করব না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: “সে সত্য বলে থাকলে সফল হবে।” অথবা তিনি বলছেন: “সে সত্য বলে থাকলে জান্নাতবাসী হবে।” [বুখারী, সওম অধ্যায় ও মুসলিম, ঈমান অধ্যায়।]
🌀 ৩) রমাযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়:
আবু হুরায়রা (রাহ:)হতে বর্ণিত। তিনি বলেন: রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: যখন রমাযান আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়।” অন্য বর্ণনায় রয়েছে: যখন রমাযান আগমন করে তখন আসমানের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দিয়ে বেঁধে দেয়া হয়।” [সহীহ বুখারী, কিতাবুস সাওম। সহীহ মুসলিম কিতাবুস সিয়াম]
🌀 ৪) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমাযান ছাড়া অন্য কখনো পুরো মাস রোযা রাখতেন না:
আয়েশা (রাহ:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ
كان رسول الله صلى الله عليه وسلم يصوم حتى نقول لا يفطر ، ويفطر حتى نقول لا يصوم ، وما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم استكمل صيام شهر إلا رمضان ، وما رايته أكثر صياماً منه في شعبان)) متفق عليه
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নফল রোযা রাখা শুরু করলে আমরা বলতাম, তিনি হয়ত আর রোযা বাদ দিবে না। আবার রোযা বন্ধ করলে আমরা ধারণা করতাম হয়ত তিনি আর রোযাই রাখবেন না। আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে রমাযান ছাড়া অন্য কখনো সারা মাস ধরে রোযা পালন করতে দেখিনি এবং শাবান মাসে তার চেয়ে বেশি আর কাউকে রোযা রাখতে দেখিনি।”
বুখারী ও মুসলিম
🌀 ৫) এক রমাযান অন্য রমাযানের মধ্যবর্তী সময়ের মধ্যে সংঘটিত পাপরাশীর জন্য কাফফারা স্বরূপ:
আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন:
الصلوات الخمس ، والجمعة إلى الجمعة ، ورمضان إلى رمضان ، مكفرات ما بينهن ، إذا اجتنب الكبائر
“পাঁচ ওয়াক্ত নামায, এক জুমুআ থেকে আরেক জুমুআ এবং এক রমাযান থেকে আরেক রমাযানের মধ্যবর্তী গুনাহসমূহ মোচন হয়ে যাবে যদি কবিরাগুনাহ থেকে বেঁচে থাকা হয়।”
সহীহ মুসলিম। পবিত্রতা অধ্যায়
🌀 ৬) রমাযান মাসে শয়তানকে শিকর বন্দী করা হয়, জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় এবং জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয়:
إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين ومردة الجن ، وغلقت أبواب النيران فلم يفتح منها باب ، وفتحت أبواب الجنة فلم يغلق منها باب ، وينادي مناد يا باغي الخير أقبل ، ويا باغي الشر أقصر ، والله عتقاء من النار وذلك كل ليلة
“রমাযান মাসের প্রথম রাতেই শয়তান এবং উশৃংখল জিনদেরকে শিকল বন্দী করে ফেলা হয়, জাহান্নামের সবগুলো দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়-যার একটিও খোলা রাখা হয় না এবং জান্নাতের সবগুলো দরজা খুলে দেয়া হয়- যার একটিও বন্ধ রাখা হয় না। আর এক আহ্বানকারী আহবান করতে থাকে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী, অগ্রসর হও। হে অন্যায়কারী, বিরত হও। আর আল্লাহ তাআলা অনেক জাহান্নামীকে মুক্তি দিয়ে থাকেন। আর তা রমাযানের প্রতি রাতেই।”
🌀 ৭) একই বছরে রমাযান এবং যিল হজ্জ মাস একসাথে অপূর্ণ হবে না:
আবু বাকরা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
شهران لا ينقصان ، شهر عيد : رمضان وذو الحجة- متفق عليه
“দুটি মাস (একই বছরে) অপূর্ণ হবে না। সেগুলো হল: ঈদের দু মাস তথা রমাযান এবং যিলহজ।” [সহীহ বুখারী, অধ্যায়: রোযা। সহীহ মুসলিম অধ্যায়: রোযা] অর্থাৎ এ দুটি মাস একই বছরে এক সাথে অসম্পূর্ণ হবেনা। একটি ২৯ দিনে হলে অন্যটি অবশ্যই ৩০ দিনে হবে। আরেকটি মত হল, হাদিসটির অর্থ এ দুটি মাসে আমলের সাওয়াব কম হবে না।
সহীহ বুখারীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ ফাত্হুল বারী। অধ্যায়: দু মাস এক সাথে কম হবে না। ১৭৭৯ নং হাদিসের ব্যাখ্যা।
প্রশ্ন: অতীত জীবনে অনেক রোযা ছুটে গেছে। এখন যদি সেগুলো পূরণ করা হয় তবে তা হবে কি এবং রোযার ক্ষেত্রে উমরি কাযা আছে কি?
উত্তরঃ অতীত জীবনে অজ্ঞতা বা অবহেলা বশতঃ যে সমস্ত রোযা রাখা হয় নি সে সমস্ত রোযা তাকে অবশ্যই পূরণ করতে হবে। তার আগে মহান আল্লাহ তা’আলার কাছে সেই ভুলের জন্যেতওবা-ইস্তিগফার করতে হবে এবং তার পাশাপাশি যে রোযাগুলো ছুটে গেছে সেগুলো কাযা করতে হবে।
যদি মনে না থাকে যে কতগুলো রোযা ছুটেছে তাহলে আনুমানিক ধারণা করে সে রোযাগুলো পূরণ করবে।
এ ক্ষেত্রে আরেকটি করণীয় ওলামায়ে কিরাম উল্লেখ করেছেন। সেটি হল যে, এক বছরের কাযা রোযা সে বছরে পূরণ না করে তার পরবর্তী বছরে বিলম্বিত করার কারণে কাফফারাও দিতে হবে-যদি সামর্থ্য থাকে। সামর্থ্য না থাকলে কেবল রোযাগুলো কাজা করাই যথেষ্ট।
(এই মর্মে আল্লামা বিন বাজ রহ. এবং সউদি আরবের বড় ওলামাগণ ফতোয়া প্রদান করেছেন)।
কাফফারা হল, একটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে এক বেলার খাদ্য প্রদান করা। এর পরিমাণ (নির্ভরযোগ্য মতানুযায়ী) প্রত্যেক দেশে প্রচলিত প্রায় সোয়া কিলোগ্রাম পরিমাণ প্রধান খাদ্যদ্রব্য।
আমাদের দেশে যেহেতু প্রধান খাদ্যদ্রব্য চাল। তাই প্রতিটি রোযার বিনিময়ে সোয়া কিলোগ্রাম পরিমান চাল দিলেই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
সুতরাং আমরা জানতে পারলাম যে অতীত জীবনে ছুটে যাওয়া রোযার জন্যে করণীয় হচ্ছে তিনটি। যথাঃ
রোযা পরিত্যাগ করার কারণে আল্লাহর কাছে তাওবা-ইস্তেগফার করা।
ছুটে যাওয়া রোযাগুলো কাযা করা।
যদি সামর্থ্য থাকে তাহলে প্রতিটি রোযার বিনিময়ে একজন মিসকিনকে এক বেলার খাদ্য প্রদান করা। আর সামর্থ্য না থাকলে শুধু রোযা কাজা করাই যথেষ্ট হবে ইনশাআল্লাহ।
রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোনও নামায, রোযা, উমরা, ইতিকাফ ইত্যাদি ইবাদত সুন্নাহ দ্বারা কি সাব্যস্ত হয়েছে?
উত্তরঃ রজব মাসে বিশেষভাবে নফল রোযা রাখা, নফল নামায পড়া, উমরা আদায় করা অথবা ইতিকাফ করা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়। বরং এ উপলক্ষে বিশেষ কিছু ইবাদত করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অন্তর্ভুক্ত।
যারা এ সব করে তারা এমন কিছু হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করে যেগুলো দুর্বল অথবা বানোয়াট।
রজব এর ইবাদত সম্পর্কেঃ
◑◑ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:
“রজব ও শাবানকে মিলিয়ে একসাথে পুরো দু মাস বিশেষভাবে রোযা রাখা অথবা ইতিকাফ করার সমর্থনে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, সাহাবিগণ, কিংবা মুসলিমদের ইমামগণের পক্ষ থেকে কোন প্রমাণ নেই। তবে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসে রোযা রাখতেন। তিনি রমাযান মাসের আগমনের প্রস্তুতি হিসেবে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা রাখতেন রমাযান ছাড়া বছরের অন্য কোন মাসে এত রোযা রাখতেন না।”
বুখারি, কিতাবুস সাওম, মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম
রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে কিছু হাদিস দুর্বল আর অধিকাংশই বানোয়াট। আহলে ইলমগণ এগুলোর প্রতি নির্ভর করেন না। এগুলো সে সকল দুর্বল হাদিসের অন্তর্ভুক্ত নয় যেগুলো ফজিলতের ক্ষেত্রে বর্ণনা করা হয়। বরং অধিকাংশই মিথ্যা ও বানোয়াট। রজব মাসের ফযিলতে সব চেয়ে বেশী যে হাদিসটি বর্ণনা করা হয় সেটা হল এই দুয়াটি:
“হে আল্লাহ, তুমি আমাদেরকে রজব ও শাবানে বরকত দাও এবং রমাযান পর্যন্ত পৌঁছাও।”
মুসনাদ আহমদ, (১/২৫৯)।
এ হাদিসটি দুর্বল।
এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন মুনকারুল হাদিস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন: “চিনি না এই ব্যক্তি কে?”
আর তিনি তার যু্আফা কিতাবে তার সম্পর্কে বলেন: মুনকারুল হাদিস। কুনা গ্রন্থে বলেন: তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।”
“রজব মাসকে বিশেষ সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত যা বর্জন করা উচিৎ। রজব মাসকে বিশেষভাবে রোযার মওসুম হিসেবে গ্রহণ করাকে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল সহ অন্যান্য ইমামদের নিকটে অপছন্দনীয়।”
ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম, ২য় খণ্ড, ৬২৪ ও ৬২৫ পৃষ্ঠা
◑◑ ইবনে রজব বলেন: রজব মাসকে কেন্দ্র করে বিশেষভাবে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কিংবা সাহাবীদের থেকে কোন কিছুই সহিহ ভাবে প্রমাণিত হয় নি। কিন্তু আবু কিলাবা থেকে একটি বর্ণনা পাওয়া যায় যে, “যারা রজবে বেশী বেশী রোযা রাখবে তাদের জন্য জান্নাতে প্রাসাদ রয়েছে।” এই কথাটির ব্যাপারে ইমাম বায়হাকী বলেন: আবু কিলাবা একজন বড় মাপের তাবেঈ। তার মত ব্যক্তি হাদিসের তথ্য না পেলে এমন কথা বলতে পারেন না।
কিন্তু এ কথার প্রতি উত্তরে বলা যায় যে, ইসমাইল আল হারাবী, শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া, ইবনে হাজার আসকালানী প্রমুখ আলেমগণ এ মর্মে একমত যে, রজব মাসকে কেন্দ্র করে রোযা রাখার ব্যাপারে নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে কোন সহিহ হাদিস প্রমাণিত হয় নি। এ মর্মে যা কিছু বর্ণিত হয়েছে সেগুলোর মধ্যে কিছু হল যঈফ আর অধিকাংশই বানোয়াট।
◑◑ আবু শামা রহ. বলেন:
কোন ইবাদতকে এমন কোন সময়ের সাথে নির্দিষ্ট করে দেয়া উচিৎ নয় শরীয়ত যেটা নির্দিষ্ট করে নি। বরং ইসলামি শরিয়ত যে সময় যে ইবাদত নির্ধারণ করেছে সেটা ছাড়া যে কোন ইবাদত যে কোন সময় করা যাবে। এক সময়কে অন্য সময়ের উপর প্রাধান্য দেয়া যাবে না।
ইসলামি শরিয়তে বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে ‘বিশেষ কিছু’ ইবাদতের জন্য। ঐ সময়গুলোতে ঐ ইবাদতগুলোই ফযিলত পূর্ণ; অন্য কোন ইবাদত নয়। যেমন, আরাফার দিনে রোযা রাখা, আশুরার দিনে রোযা রাখা, গভীর রাতে নফল নামায পড়া, রামাযান মাসে উমরা আদায় করা।
অনুরূপভাবে এমন বিশেষ কিছু সময়কে নির্ধারণ করা হয়েছে যেগুলোতে ‘যে কোন ধরণের’ নেকির কাজ করার ফযিলত রয়েছে। যেমন: জিলহজ্জ মাসের প্রথম দশ দিন, লাইলাতুল কদর-যার মর্যাদা হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এ রাতে যে কোন ইবাদতই করা হোক তা অন্য হাজার মাসের চেয়েও মর্যাদাপূর্ণ।
মোটকথা, বিশেষ কোন সময়কে বিশেষ কোন ইবাদতের জন্য নির্ধারণ করার অধিকার কেবল ইসলামি শরিয়তই সংরক্ষণ করে; অন্য কোন ব্যক্তি নয়। আল্লাহ সব চেয়ে ভাল জানেন। (আল বায়িস, পৃষ্ঠা নং ৪৮) [আল বিদা আল হাউলিয়া গ্রন্থ থেকে অনুদিত]
রজব মাসের নামে প্রচলিত ইবাদত বিদআত
সুতরাং রজব মাসে বিশেষ ইবাদত করা বা রজব মাসকে আলাদাভাবে সম্মান দেখানো বিদআতের অন্তর্ভুক্ত। তবে কেউ যদি সব অন্যান্য মাসে নফল নামায, নফল রোযা, দান সদকা ইত্যাদি ইবাদত করে থাকে তাহলে এ মাসেও তা অব্যাহত রাখতে পারে।
মোটকথা, এ মাসকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে আলাদা কোন ধরণের বিশেষ ইবাদত-বন্দেগি করা ঠিক হবে না। কেননা তা সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত নয়।কিন্তু যেহেতু এটি চারটি হারাম মাসের অন্তর্ভূক্ত সেহেতু যথাসাধ্য সাধারণ।
We use cookies on our website to give you the most relevant experience by remembering your preferences and repeat visits. By clicking “Accept All”, you consent to the use of ALL the cookies. However, you may visit "Cookie Settings" to provide a controlled consent.
This website uses cookies to improve your experience while you navigate through the website. Out of these, the cookies that are categorized as necessary are stored on your browser as they are essential for the working of basic functionalities of the website. We also use third-party cookies that help us analyze and understand how you use this website. These cookies will be stored in your browser only with your consent. You also have the option to opt-out of these cookies. But opting out of some of these cookies may affect your browsing experience.
Necessary cookies are absolutely essential for the website to function properly. These cookies ensure basic functionalities and security features of the website, anonymously.
Cookie
Duration
Description
cookielawinfo-checkbox-analytics
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Analytics".
cookielawinfo-checkbox-functional
11 months
The cookie is set by GDPR cookie consent to record the user consent for the cookies in the category "Functional".
cookielawinfo-checkbox-necessary
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookies is used to store the user consent for the cookies in the category "Necessary".
cookielawinfo-checkbox-others
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Other.
cookielawinfo-checkbox-performance
11 months
This cookie is set by GDPR Cookie Consent plugin. The cookie is used to store the user consent for the cookies in the category "Performance".
viewed_cookie_policy
11 months
The cookie is set by the GDPR Cookie Consent plugin and is used to store whether or not user has consented to the use of cookies. It does not store any personal data.
Functional cookies help to perform certain functionalities like sharing the content of the website on social media platforms, collect feedbacks, and other third-party features.
Performance cookies are used to understand and analyze the key performance indexes of the website which helps in delivering a better user experience for the visitors.
Analytical cookies are used to understand how visitors interact with the website. These cookies help provide information on metrics the number of visitors, bounce rate, traffic source, etc.
Advertisement cookies are used to provide visitors with relevant ads and marketing campaigns. These cookies track visitors across websites and collect information to provide customized ads.