Tag: সিয়াম

  • শাবান মাসে নফল রোযা রাখা (সিয়াম)

    শাবান মাসে নফল রোযা রাখা (সিয়াম)

    শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলঃ

    ১) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان” (متفق عليه)

    রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রমাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।

    ২) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    « لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।

    ৩) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন:

    ذاكَ شهرٌ يغفلُ الناسُ عنهُ بينَ رجبَ ورمضانَ وهو شهرٌ يُرفعُ فيهِ الأعمالُ إلى ربِّ العالمينَ فأُحِبُّ أن يُرفعَ عملي وأنا صائمٌ

    “রজব এবং রমাযানে মধ্যবর্তী এ মাস (শাবান মাস) সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ (এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে,) এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই, রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”

    মুসনাদ আহমদ ৫ম খণ্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী রা. বলেন, এ সনদটি হাসান। দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্‌। হাদিস নং ১৮৯৮।

    ৪) কারো যদি রমাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে। যেমন: আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি,

    كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ ، فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ

    আমার রমাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[4] অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন।

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।(আল বিদা’ আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)

    আরও পড়ুনঃ শবে বারাত এর ইবাদত

    মহান আল্লাহ আমাদেরকে শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা রাখার তওফিক দান করুন। আমীন।

    অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযানে কুরআন বিষয়ে যেদিকে গুরুত্ব দিবো

    রমাযানে কুরআন বিষয়ে যেদিকে গুরুত্ব দিবো

    প্রশ্ন: রমজান মাসে কোনটির দিকে বেশী গুরুত্ব দিব? কুরআনের অক্ষরের তিলাওয়াতের দিকে? নাকি অনুবাদসসহ তিলাওয়াতের দিকে?

    উত্তরঃ এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। অনেক আলেম বলেছেন, এ মাসে অধিকমাত্রায় তিলাওয়াত করা উত্তম। আর অনেক আলেম বলেছেন কুরআনে অর্থ, ব্যাখ্যা জেনে কুরআন গবেষণার মনোভাব নিয়ে তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম।

    তবে দলীলের আলোকে ‘কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি এর মমার্থ জানার চেষ্টা করা অধিক উত্তম’ এটি অধিক অগ্রগণ্য মত বলে বিবেচিত হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন:

    كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ

    “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।”

    সূরা স্বদ-২৯

    আল্লাহ আরও বলেন:

    أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

    “তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”

    সূরা মুহাম্মদ: ২৪

    আল্লাহ আরও বলেন:

    شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدىً لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ

    “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”

    সূরা বাকরা: ১৮৫

    কুরআনের মমার্থ জানার চেষ্টা ছাড়া তিলাওয়াত করলে সওয়াব অর্জন হলেও কুরআন থেকে হেদায়াত পেতে হলে এবং হক ও বাতিলের মাধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া কুরআনের ব্যাখ্যা জানা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা ছাড়া কী করে সম্ভব?

    সহীহ বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত হয়েছে,

    وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم كل ليلة في رمضان فيدارسه القرآن . رواه البخاري (5) ومسلم

    “জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রমাযানের প্রতিরাতে রাসূল সা. এর নিকট এসে তার সাথে কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন।”(4268)

    সহীহ বুখারীতে এ ও বর্ণিত হয়েছে যে,

    أن جبريل كان يعْرضُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُرْآنَ كُلَّ عَامٍ مَرَّةً ، فَعرضَ عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ فِي الْعَامِ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ

    জিবরাঈ আ. প্রতি রামাযানে রাসূল সা. এর নিকট একবার করে পূরো কুরআন পেশ করতেন কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর দুবার কুরআন পেশ করেছেন।”

    বুখারী, হা/৪৬১৬

    এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, রামযান মাসে অধিক পরিমানে কুরআন পাঠ করা, কুরআন খতম করা এবং কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালচনা করা মুস্তাহাব।

    তবে আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, যারা কুরআনের ভাষা জানেন এবং কুরআন পড়ে তার মৌলিক মর্মবাণী উপলদ্ধি করতে সক্ষম তাদের জন্য বেশী বেশী তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম। যেমন, অনেক সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা রামযানে অধিকমাত্রায় কুরআন তিলওয়াতের দিকে ঝুঁকতেন। আর যারা কুরআনের ভাষা বুঝেন না এবং তিলাওয়াত করেই এর মমার্থ বুঝতে পারেন না তাদের জন্য তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা সর্বাধিক উত্তম এতে কোন সন্দেহ নাই।

    সুতরাং আমাদের করণীয় হল, রামাযানে সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমানে কুরআন তিলাওয়াত করা সেই সথে কুরআনের তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা।

    মোটকথা,রামাযান হল কুরআনের মাস। আমরা যেন বিশেষ করে এ মাসে কুরআন পাঠ, পঠন, শিক্ষাদান, মুখস্থ করণ, কুরআনের শিক্ষা পর্যালোচনার পাশাপাশি বাস্তব জীবন তা বাস্তবায়নের প্রেরণা গ্রহণ করি সে জন্য আামাদের সর্বাত্তক তৎপরতা থাকা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।

    আরও পড়ুনঃ কুরআনের তিলাওয়াত শোনার ৮টি অনবদ্য উপকারিতা

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান মাস সিয়াম সাধনার মাস। হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে এ মাসে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।

    স্বাভাবতই আমাদের মনে রমাযান মাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে থাকে। তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার ব্যাখ্যা মূল উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

    ১) সিয়াম শব্দের আভিধানিক ও শরঈ অর্থ কি?

    উত্তরঃ সিয়াম শব্দটি বহুবচন। একবচন হল, সওম। [ফারসি ভাষায় রোজা।] সওম শব্দের শাব্দিক অর্থ: বিরত হওয়া বা রাখা। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে সওম বলা হয়, বিশেষ ধরণের বিরত থাকাকে।

    অর্থাৎ সওয়াব অর্জনের নিয়তে ফজর উদিত হওয়ার একটু পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অনেক আলেম বর্জনীয় বিষয় সমূহের মধ্যে অশ্লীল যে কোন কথা ও কাজকেও উল্লেখ করেছেন।

    ২) সিয়াম/রোজা ইসলামের কততম স্তম্ভ?

    উত্তরঃ সিয়াম ইসলামের ৪র্থ স্তম্ভ।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

    عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ

    “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর। আর তা হলঃ
    (১) “একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও মাবূদ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল,
    (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
    (৩) যাকাত প্রদান করা,
    (৪) রামজানের সিয়াম (রোজা) পালন করা এবং
    (৫) কাবা ঘরের হজ্জ সম্পাদন করা।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ৩) সিয়াম কখন ফরজ হয়?

    উত্তর: সিয়াম ফরজ হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের ২য় বর্ষে, শাবান মাসের ২৮ তারিখে, সোমবার দিন। [ফিকহুস সুন্নাহ ২/৫০১]

    ৪) কুরআনে কোথায় সিয়াম ফরজ বলা হয়েছে?

    উত্তর: সূরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত দ্বারা মুমিনদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”

    (সূরা বাকারা: ১৮৩)

    ৫) কারও উপর সিয়াম ফরজ হওয়ার শর্ত কয় টি?

    উত্তর: রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত ৬টি। যথা:

    • (ক) মুসলিম হওয়া। (কাফেরের উপর সিয়াম ফরজ নয়, করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হবে।)
    • (খ) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (গ) সুস্থ মস্তিষ্ক বা আকল সম্পন্ন ব্যক্তির উপর। (বেহুঁশ বা পাগলের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (ঘ) মুকিম বা অবস্থান কারী (মুসাফিরের উপর সিয়াম ফরজ নয়। তবে তারা রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে)
    • (ঙ) দৈহিক ভাবে সক্ষম (রোজা রাখতে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তির উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (চ) শরিয়তের বাধা মুক্ত হওয়া। যেমন: নারীর ক্ষেত্রে সে যদি হায়েজ বা নেফাস যুক্ত (প্রসূতি হয়) হয় তবে তার উপর রোজা রাখা ফরজ নয়। (তারা পরবর্তীতে ঐ রোজাগুলোর কাযা আদায় করবে)

    ৬) ফরজ রোজা কয় প্রকার?

    উত্তর: ফরজ রোজা ৩ প্রকার। যথা:

    • (ক) রমজানের রোজা
    • (খ) কাফফারার রোজা (কসম ভঙ্গ, মানত ভঙ্গ, রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি)
    • (গ) মানতের রোজা

    ৭) বছরের কয় দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

    উত্তর: ৬ দিন। যথাঃ ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ), ঈদুল আযহা (কুরবানির ঈদ) এর দিন এবং এর পরের আরও তিন দিন (আইয়ামে তাশরিক) এবং ইয়ামুশ শাক্ক (يوم الشك) বা ‘সন্দেহের দিন’। (শাবান মাসের ৩০তম দিনে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রমজানের চাঁদ উঠেছে কি না তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে ইয়ামুশ শাক্ক বা ‘সন্দেহের দিন’ বলা হয়। এ দিন রোজা থাকার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।)

    ৮) সিয়ামের নিয়ত যদি সওয়াবের সাথে অন্য কিছু হয়, কি হবে?

    রোজা রাখার ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়তের পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ত থাকলে কি রোজা বাতিল হয়ে যাবে? না কি এতে সওয়াব কমে যাবে? না কি রোজার কোনও ক্ষতি হবে না?

    উত্তর: রোজা বাতিল হবে না কিন্তু সওয়াব কমে যাবে।

    ৯) রমাযানকে কিভাবে স্বাগত জানাবো বা বরণ করবো?

    উত্তর: নিচে এ বিষয়ে দশটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমজানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    ১০) রজব ও শাবান মাসে রমাযানের জন্য করা দোয়া বিষয়ক হাদিস সম্পর্কে…

    “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাহরাই রাজাবা ওয়া শাবানা।” এ হাদিসটির মান কি?

    উত্তর: জঈফ বা দুর্বল।নিচে উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অভিমত উল্লেখ করা হল:

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

    উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।” অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।”

    [মুসনাদে আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া]

    মান: হাদিসটি জঈফ বা দুর্বল। কারণ:- এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মুনকারুল হাদিস।

    • ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।” কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”
    • ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।” [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)-

    ১১) কোন তিন শ্রেণীর মানুষের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر

    “তিন জন ব্যক্তির দুআ কবুল করা হয়। যথা:১. রোজাদারের দুআ, ২. মজলুম বা নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ।৩. এবং মুসাফিরের দুআ।”

    [সহিহুল জামে-আলবানি]

    অন্য বর্ণনায়: রোজাদারের পরিবর্তে সন্তানের জন্য পিতার দুআ উল্লেখিত হয়েছে।

    ১২) রমাযান শুরু হলে সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তাআলা যেসব পরিবর্তন ঘটান সেগুলো ৩টি উল্লেখ করুন।

    উত্তর: ১. জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় (কোনও কোনও বর্ণনায় আসমানের দরজা সমূহ খোলা হয়)

    ২. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়,

    ৩. এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

    যেমন: হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

    “যখন রমজান মাস শুরু হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো পরিপূর্ণভাবে খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ মজবুত ভাবে বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দ্বারা বেধে দেয়া হয়।”

    (সহিহ বুখারি)

    ১৩) বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন এবং শ্রেষ্ঠ দশ রাত কোনগুলো?

    উত্তর: বছরের শ্রেষ্ঠ ১০টি দিন হল, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন আর শ্রেষ্ঠ রাত হল, রমজান মাসের শেষ দশ রাত।

    ১৪) রমাযান এ কয় ধাপে বান্দার গুনাহ মোচন করা হয়?

    উত্তর: তিন ধাপে। যথাঃ

    ১. সিয়াম পালন।

    ২. কিয়ামুল লায়ল আদায় (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ এর সালাত আদায়)

    ৩. লাইলাতুল কদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সালাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    তিনি আরও বলেছেন,

    مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ১৫) রোজাদারগণ রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, এই শব্দের অর্থ কি?

    উত্তর: রাইয়ান অর্থ: রাইয়ান শব্দটি আরবি ري থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ হল চূড়ান্ত তৃপ্তি সহকারে পান করা, পিপাষা নিবারিত হওয়া, পানি সিঞ্চন করা ইত্যাদি। রোজাদারগণ রইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

    “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম বলা হয় ‘রইয়ান’, কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল সিয়াম পালনকারীগণ। সেখান দিয়ে তারা ব্যতীত আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তখন তারা উঠে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

    (বুখারি ও মুসলিম)

    রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশের পর সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যার ফলে কোনোদিন তারা তৃষ্ণার্ত হবে না। ইবনে খুযাইমা উপরোক্ত হাদিসের আরও একটু বর্ধিত বর্ণনা দিয়েছেন। তা হল: مَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا “যারা প্রবেশ করবে, তারা পান করবে এবং যে পান করবে সে আর কোনোদিন তৃষ্ণার্ত হবে না।” রোজাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান নামকরণের তাৎপর্যও তাই।

    ১৬) সিয়াম ও কুরআন কি বান্দার জন্য সুপারিশ করবে?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

    “কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে: হে আমার পালনকর্তা! আমি তাকে দিবসে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।”

    [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও ত্বাবরানী (কাবীর গ্রন্থে), ইবনে আবীদ দুনিয়া [আল জু’ও গ্রন্থে] উত্তম সনদে এবং হাকেম। হাকেম বলেনঃ মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহিহ]

    ১৭) কেউ রোজাদারের সাথে ঝগড়া করতে আসলে উত্তরে কি বলতে হবে?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

    “যখন তোমাদের কারো রোজার দিন উপস্থিত হয়, তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উঁচু কণ্ঠে কথা না বলে অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সহিত লড়াই-ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি সিয়াম ব্রতে রত আছি।”

    [বুখারি ও মুসলিম]

    ১৮) যার পেটে কুরআনের কোনও অংশ নেই তার উদাহরণ কিসের মত?

    উত্তরঃ পরিত্যক্ত ঘরের মত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنْ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

    “যার পেটে মোটেও কুরআন নেই সে তো একটা পরিত্যক্ত ঘরের মত।

    তিরমিযী, হাসান-সহীহ

    ১৯) “তারাবিহ এর সালাত ১১ রাকআতের বেশি পড়া বিদআত।” এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ না, এ কথা সঠিক নয়। মূলতঃ তারাবীহ কত রাকআত তা নিয়ে উলামাদের মধ্যে বিস্তর ইখতেলাফ (মতবিরোধ) আছে। কিন্তু বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাকাত আদায় করাই উত্তম। কেননা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে,

    مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান বা অন্য কোন সময়ে ১১ রাকাআতের বেশী পড়তেন না।”

    বুখারি ও মুসলিম

    ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان صلاةُ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم ثلاثَ عَشرةَ ركعةً. يعني: باللَّيل

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামায ছিল ১৩ রাকাত।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    কিন্তু যদি এর চেয়ে বেশী ২০ বা ৩০ বা ততোধিক রাকাত আদায় করা হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    أنَّ رجلًا سألَ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ اللَّيل، فقال رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: صلاةُ الليلِ مَثْنَى مثنَى، فإذا خشِيَ أحدُكم الصبحَ صلَّى ركعةً واحدةً، تُوتِر له ما قدْ صلَّى

    “জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাতের নামায দু দু রাকাত করে পড়বে। তোমাদের কেউ যদি এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে সে এক রাকাত পড়বে। তখন এর মাধ্যমে তার নামায বেজোড় বা বিতর হয়ে যাবে”।

    বুখারি ও মুসলিম

    অতএব ১১ রাকাতই পড়তে হবে, এর বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথা যেমন বাড়াবাড়ি। অনুরূপ ২৩ রাকাতই পড়তে হবে, এরচেয়ে কম বা বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথাও বাড়াবাড়ি।

    ২০) রমাযান মাসে উমরা করার ফজিলত কী?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي

    “রমাযান এ একটি উমরাতে একটি হজ্জের সওয়াব রয়েছে। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্জ পালনের সওয়াব রয়েছে।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    আরও পড়ুনঃ রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন