Tag: সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?

  • সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?

    সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?

    প্রশ্নঃ সেহরি না খেলে কি রোজা হবে? সেহরি কি রোজা রাখার শর্ত?

    উত্তরঃ সেহরি না খেলেও রোযা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ নয়। কেননা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত (সুন্নতে মুআক্কাদা বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তা বাদ দিলে সুন্নত পালনের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর দেওয়া বিশেষ বরকত থেকেও বঞ্চিত হবে।

    তাছাড়া সাধারণত: পেটে অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকলে দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ইবাদত-বন্দেগিতে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয় এবং মনে উদোম ও স্প্রীহা কমে যায়। পক্ষান্তরে সেহরি খেলে শরীরে শক্তি ও উদোম বজায় থাকে এবং ইবাদত-বন্দেগি সহ সব কিছুতে পর্যাপ্ত শক্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়।

    তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি খাওয়ার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এবং তা বাদ দিতে নিষেধ করেছেন। যেমন:

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً 

    “তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।”

    বুখারি ও মুসলিম

    তিনি আরও বলেন:

    السُّحَوُرُ كُلَّهُ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ, وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُم جَرْعَةً مِنْ مَاءٍ, فَإِنَّ اللَّهَ –عَزَّ وَجَلَّ- وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى المُتَسَحِّرِينَ

    “সেহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে। তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশতাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন।”

    মুসনাদে আহমদ, ইমাম মুনযেরী বলেন: এর সনদ শক্তিশালী-হাসান লি গাইরিহ

    তিনি আরও বলেন:

    ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭْﺍ ﻭُﻟَﻮْ ﺑِﺠُﺮْﻋَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ

    “সেহরি গ্রহণ করো যদিও এক ঢোক পানি দিয়েও হয়।”

    সহিহ ইবনে হিব্বান

    তিনি আরও বলেন,

    ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺑَﺮَﻛَﺔٌ ﺃَﻋْﻄَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻳَّﺎﻫَﺎ ﻓَﻼَ ﺗَﺪَﻋُﻮْﻩُ

    “‘নিশ্চয় সেহরি বরকত পূর্ণ যা আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বিশেষভাবে দান করেছেন। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো না।”

    সহিহ নাসাঈ হা/২১৬১

    অন্য হাদিসে এসেছে:

    عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ

    আমর ইবনুল আস রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমাদের এবং আহলে কিতাব (ইহুদি-খৃষ্টানদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল, সেহরি খাওয়া।” (অর্থাৎ তারা সেহরি খায় না আর আমরা খাই।)

    এ সব হাদিস থেকে ভোররাতে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। তবে কেউ যদি ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে সেহরি খেতে না পারে তাহলে না খেয়েই রোজা থাকতে হবে। এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আলাম।
    ————————-

    সম্পূরক প্রশ্নঃ নফল অথবা ফরজ রোজা রাখার উদ্দেশ্যে যদি রাত ১২/১টার দিকে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়ি আর ভোর রাতে খেতে না উঠি তাহলে কি রোজা হবে?

    উত্তরঃ যদি রোজা রাখার নিয়তে রাত ১২টা/১টার দিকে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন আর ভোর রাতে কিছু না খান তাহলেও রোজা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি না করাই ভালো।

    সবচেয়ে উত্তম হল, ভোর রাতে উঠে এক ঢোক পানি হলেও পান করা। (মূলত: ভোর রাতের খাবারকে সেহরি বা সাহুর বলা হয়। রাতের প্রথমাংশ বা মধ্যরাতের খাবারকে নয়)

    হাদিসে সেহরি খেতে যথেষ্টে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ তাতে বরকত আছে। যেমন: 

    রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ»

    “সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ। সুতরাং তা পরিত্যাগ করো না যদিও এক ঢোক পানি পান করে হয়। কারণ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সাহরি ভক্ষণকারীর ওপর রহমতের দুআ করেন।”

    আহমদ: ৩/১২। সহিহুত তারগিব, হাসান লি গাইরিহ, হা/১০৭০

    তিনি আরও বলেন:

    ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭْﺍ ﻭُﻟَﻮْ ﺑِﺠُﺮْﻋَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ

    “সেহরি গ্রহণ যদিও এক ঢোক পানি দিয়ে হয়।”

    সহিহ ইবনে হিব্বান

    তিনি আরও বলেন, 

    البَرَكَةُ فِي ثَلَاثَةٍ؛ فِي الجَمَاعَةِ وَالثَّرِيدِ وَالسُّحُورِ

    “তিনটি বস্তুতে বরকত রয়েছে: জামাআতে (সংঘবদ্ধ জীবন) সারীদ (গোস্তের ঝোল বা গোস্তের সাথে রুটির সংমিশ্রণে বিশেষ এক প্রকার আরবিয় খাদ্য) এবং সেহরিতে’।  

    সহীহুল জামে হা/২৮৮২

    অন্য বর্ণনায় এসেছে:

    ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺒَﺮَﻛَﺔَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮْﺭِ 

    “‘নিশ্চয় আল্লাহ সেহরিতে রবকত দিয়েছেন।”

    সিলসিলা সহিহাহ হা/১২৯১

    এ বিষয়ে আরও হাদিস রয়েছে।

    তাই সুন্নত পালনার্থে পেটে ক্ষুধা না থাকলেও ভোররাতে সেহরির নিয়তে এক গ্লাস পানি, কয়েকটি খেজুর, ফল, বিস্কুট ইত্যাদি যা কিছু সম্ভব হয় ভক্ষণ করা উচিত।
    আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?

    আল্লাহু আলাম

    (দয়া করে, কেউ সেহরি আর সাহরি নিয়ে বিতর্ক করতে আসবেন না। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে প্রচলিত ও সর্বসাধারণের নিকট সুপরিচিত শব্দ ‘সেহরি’ ব্যবহার করাকেই অধিক সঠিক মনে করি)

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।