প্রশ্নঃ আমাদের জীবনে কোন কিছু ঘটলেই আমরা প্রায় সবাই বলে থাকি “জীবনে যা কিছু হয় ভালোর জন্য হয়।” এ কথাটি কতটুকু সঠিক? এটা বলা কি ঠিক?

উত্তরঃ হ্যাঁ, উক্ত কথাটি সঠিক। এটি আল্লাহর প্রতি সুধারণা পোষণ ও ভাগ্যের প্রতি বিশ্বাসের বহিঃপ্রকাশ।

মুমিনের জীবনে ভালো-মন্দ যা কিছু ঘটুক না কেন-বিশ্বাস করতে হবে-অবশ্যই তাতে কল্যাণ নিহিত রয়েছে। বিপদাপদে যদি আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিতে পারি তাহলে আল্লাহ আমাদের গুনাহ মোচন করেন, আখিরাতে মর্যাদা বৃদ্ধি করেন এবং এই কষ্ট ও বিপদ-মুসিবতের উত্তম বিনিময় দান করেন।

সব কিছু যেভাবে ভালোর জন্য হয়

💠 আল্লাহ তাআলা বলেন: বলেন,

وَلَنَبۡلُوَنَّكُم بِشَيۡءٖ مِّنَ ٱلۡخَوۡفِ وَٱلۡجُوعِ وَنَقۡصٖ مِّنَ ٱلۡأَمۡوَٰلِ وَٱلۡأَنفُسِ وَٱلثَّمَرَٰتِۗ وَبَشِّرِ ٱلصَّٰبِرِينَ

“নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে কিছু ভয় ও ক্ষুধা দ্বারা এবং কিছু জান-মাল এবং ফল-ফসলের ক্ষয়-ক্ষতির দ্বারা পরীক্ষা করব। আর তুমি ধৈর্যশীলদেরকে সুসংবাদ দাও।”

সূরা বাকারাহ ১৫৫ আয়াত

💠 আবু ইয়াহিয়া সুহাইব ইবনে সিনান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন:

عَجَباً لأََمْرِ المُؤمنِ إنَّ أمْرَهُ كُلَّهُ لَهُ خيرٌ ولَيسَ ذلِكَ لأَحَدٍ إلاَّ للمُؤْمِن : إنْ أَصَابَتْهُ سَرَّاءُ شَكَرَ فَكانَ خَيراً لَهُ، وإنْ أصَابَتْهُ ضرَاءُ صَبَرَ فَكانَ خَيْراً لَهُ

“মুমিনের ব্যাপারটাই আশ্চর্যজনক। তার প্রতিটি কাজে তার জন্য মঙ্গল রয়েছে। এটা মুমিন ব্যতীত অন্য কারো জন্য নয়। সুতরাং তার আনন্দ দায়ক কিছু ঘটলে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে। ফলে এটা তার জন্য কল্যাণকার হয় আর কষ্টদায়ক কোন কিছু ঘটলে সে ধৈর্য ধারণ করে। ফলে এটাও তার জন্য কল্যাণকর হয়।’’

মুসলিম ২৯৯৯, আহমদ ১৮৪৫৫, ১৮৪৬০, ২৩৪০৬, ২৩৪১২, দারেমি ২৭৭৭

💠 আবু সাঈদ রা. ও আবু হুরাইরাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,

مَا يُصِيبُ المُسْلِمَ، مِنْ نَصَبٍ وَلاَ وَصَبٍ، وَلاَ هَمٍّ وَلاَ حُزْنٍ وَلاَ أَذًى وَلاَ غَمٍّ، حَتَّى الشَّوْكَةِ يُشَاكُهَا، إِلَّا كَفَّرَ اللَّهُ بِهَا مِنْ خَطَايَاهُ

‘মুসলিমকে যে কোনও ক্লান্তি, অসুখ, দু:চিন্তা, শোক এমন কি (তার শরীরে) একটি কাঁটা বিদ্ধ হলেও আল্লাহ তা‘আলা এর মাধ্যমে তার গুনাহ মোচন করে দেন।

সহীহুল বুখারী ৫৬৪২, মুসলিম ২৫৭৩

সুতরাং আমাদের জীবনে ভালো কিছু ঘটলে আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করতে হবে এবং খারাপ কিছু ঘটলে ধৈর্যের পরিচয় দিতে হবে এবং হাসিমুখে আল্লাহর ফয়সালার প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করতে হবে। হতাশ হওয়া যাবে না বা আল্লাহর প্রতি মনঃক্ষুণ্ণ বা কু ধারণা পোষণ করা যাবে না। এটাই তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসের চূড়ান্ত পর্যায়।

আরও পড়ুনঃ

মোটকথা, জীবনে যা কিছুই ঘটুক না কেন তাতে আমাদের জন্য কল্যাণ নিহিত রয়েছে যদি আমরা ধৈর্যের পরিচয় দেই, আল্লাহ তাআলার প্রতি আস্থা ও বিশ্বাস বজায় রাখি এবং তার প্রতি সুধারণা পোষণ করি। নিশ্চয় আল্লাহ সর্বময় কল্যাণের অধিকারী।

উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা