ওয়েডিং ফটোগ্রাফি

প্রশ্নঃ ইসলামের দৃষ্টিতে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি তথা ফ্রি মিক্সিং বিয়েতে ছবি তুলে টাকা নেওয়া হলে সেই টাকা কি হালাল হবে? এসব অনুষ্ঠানে ছেলে-মেয়েদের এভাবে ছবি তোলা কি জায়েজ?

উত্তরঃ আমাদের অজানা নয় যে, বর্তমানে ওয়েডিং ফটোগ্রাফি একটা পেশায় পরিণত হয়েছ। তরুণ-তরুণীরা বিয়ের উৎসবকে রীতিমত শৈল্পিক পর্যায়ে নিয়ে গেছে। নিত্যনতুন থিম, পোশাকের আইডিয়া, লোকেশন দিয়ে আনছে নতুনত্ব বিয়ের উৎসবে।

ওয়েডিং ফটোগ্রাফীর অবস্থাঃ

ওয়েডিং ফটোগ্রাফি মানে শুধু বর-কণের ছবি নয় বরং বিয়েতে অংশ গ্রহণকারী তরুণ-তরুণী, দম্পতি, বন্ধু-বান্ধব ইত্যাদি নানা জনের নানান পোজে ছবি তোলা। আমাদের সমাজে কথিত গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান, বিয়ের মূল পর্ব আর সবার শেষ দিনে বৌ ভাত (ওলিমা অনুষ্ঠান) ইত্যাদি প্রতিটি অনুষ্ঠানেই ছবি তোলা বা ভিডিও করা যেন এক অপরিহার্য অনুসঙ্গে পরিণত হয়েছে!

এই কাজ হারাম নাকি হালালঃ

যাহোক, ইসলামের বিধান হল, যে কাজটা হারাম সে কাজকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা, তার মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা, তাতে অংশ গ্রহন করা, তাতে কোনও ভাবে সাহায্য-সহযোগিতা, প্রচার-প্রসার করা এবং এ সংশ্লিষ্ট সব কিছুই হারাম।

সুতরাং যে সব বিয়ে অনুষ্ঠানে ফ্রি মিক্সিং তথা নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা হয়, বেপর্দা নারীর উপস্থিতি থাকে, নাচ-গান, অশ্লীলতা ও নানা ধরণের শরিয়া বিরোধী কার্যক্রম অনুষ্ঠিত হয় সে সব অনুষ্ঠানে ছবি তোলা ও ভিডিও করা তো দূরের কথা দাওয়াত খাওয়ার জন্যও অংশ গ্রহণ করাও হারাম।

আরও আনুসাঙ্গিক কিছু কাজ, যা হারামঃ

শুধু তাই নয়, এ সব কাজের জন্য ক্যামেরা, মাইক, ডেক সেট, স্টেজ, প্যান্ডেল ইত্যাদি ভাড়া দেয়াও হারাম। কারণ এর মাধ্যমে হারাম কাজে সহায়তা করার পাশাপাশি শয়তানকে খুশি করা হয়।

আল্লাহ তাআলা বলেন,

وَتَعَاوَنُوا عَلَى الْبِرِّ وَالتَّقْوَىٰ ۖ وَلَا تَعَاوَنُوا عَلَى الْإِثْمِ وَالْعُدْوَانِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّـهَ ۖ إِنَّ اللَّـهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ

“আর তোমা সৎকর্ম ও আল্লাহ ভীতিতে একে অন্যের সহায়তা কর। পাপ ও সীমালঙ্ঘনের ব্যাপারে একে অন্যের সহায়তা করো না। আর আল্লাহকে ভয় কর। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা কঠোর শাস্তি দাতা।”

সূরা মায়িদা: ২

ইসলামে ছবি তোলার বিধানঃ

আরেকটি বিষয় হল, ইসলামের দৃষ্টিতে একান্ত জরুরি দরকার ছাড়া মানুষ, পশু-পাখি, জীবজন্তু ইত্যাদির ছবি তোলা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ।

নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ أَشَدَّ النَّاسِ عَذَابًا عِنْدَ اللَّهِ يَوْمَ القِيَامَةِ المُصَوِّرُونَ

“(কিয়ামতের দিন) মানুষের মধ্যে সব থেকে কঠিন শাস্তি হবে তাদের, যারা ছবি তৈরি করে।”

[মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৯, আহমাদ ৩৫৫৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৮, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৩)

ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

مَنْ صَوَّرَ صُورةً فِي الدُّنْيَا كُلِّفَ أنْ يَنْفُخَ فِيهَا الرُّوحَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، وَلَيْسَ بِنَافخٍ (متفقٌ عليه)

“যে ব্যক্তি ছবি তৈরি করে, তাকে কিয়ামতের দিন তাতে জীবন দানের জন্য নির্দেশ দেওয়া হবে কিন্তু সে সক্ষম হবে না।”

সহিহ বুখারি ও মুসলিম

আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা.থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

إِنَّ الَّذِينَ يَصْنَعُونَ هَذِهِ الصُّوَرَ يُعَذَّبُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يُقَالُ لَهُمْ أَحْيُوا مَا خَلَقْتُمْ

“যারা এ জাতীয় (প্রাণীর) ছবি তৈরি করে, কিয়ামতের দিন তাদের শাস্তি দেয়া হবে। তাদের বলা হবে: “তোমরা যা বানিয়েছিলে তাতে জীবন দাও।”

[৭৫৫৮; মুসলিম ৩৭/২৬, হাঃ ২১০৮] আধুনিক প্রকাশনী- ৫৫১৯, ইসলামিক ফাউন্ডেশন- ৫৪১৪)

সুতরাং এ দৃষ্টিকোণ থেকেও এ সব অনুষ্ঠানের ছবি-ভিডিও করা, ওয়েডিং ফটোগ্রাফিকে পেশা হিসেবে গ্রহণ করা এবং এর মাধ্যমে অর্থ উপার্জন করা কোনটাই জায়েজ নয়।

আল্লাহ আমাদেরকে হালালভাবে অর্থ উপার্জনের পাশাপাশি সব ধরণের হারাম কর্মকাণ্ড থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

আরও পড়ুনঃ ঘরে প্রাণীর ছবি, প্রতিকৃতি বা মূর্তি থাকলে সালাত আদায় করার বিধান

আল্লাহু আলাম।

উত্তর প্রদানেঃ
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
(লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।