Tag: জন্ম নিবন্ধন

  • সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে চাকরীর সময় বৃদ্ধি

    সার্টিফিকেটে বয়স কমিয়ে চাকরীর সময় বৃদ্ধি

    প্রশ্নঃ আমাদের দেশে দেখা যায় স্কুলে ভর্তির সময় ১/২ বছর বয়স কমিয়ে দেওয়া হয়। অনেক সময় স্কুলের শিক্ষকরা এটি করেন। তবে বেশীরভাগ সময়ই পিতামাতা এই কাজটি করেন এই হিসাব করে যে এতে করে সরকারী চাকরীতে আবেদন করবার সময়সীমা বেশী পাবে। জানতে চাচ্ছি এটি করা কি ঠিক হবে?

    আর যদি কেউ আসল বয়স বেশী হওয়া সত্যেও এই মিথ্যা জন্ম তারিখের কারণে বাড়তি সময়ে আবেদন করে চাকরী পায়, সেক্ষেত্রে বিধান কি হবে?

    উত্তরঃ স্কুলে ফরম ফিলাপ, জন্ম নিবন্ধন সনদ বা পাসপোর্ট তৈরির সময় প্রকৃত জন্ম তারিখের পরিবর্তে অন্য তারিখ ব্যবহার করা নি:সন্দে মিথ্যা ও প্রতারণার শামিল। ইসলামের দৃষ্টিতে তা কবিরা গুনাহ এবং দেশের প্রচলিত আইনেও অপরাধ।

     রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:

    « مَنْ غَشَّنَا فَلَيْسَ مِنَّا »

    “যে আমাদেরকে ধোঁকা দেয় সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।”

    সহিহ মুসলিম: ১০১

    অর্থাৎ সে ইসলামের আদর্শ থেকে দূরে।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেন:

    وإياكم والكذب، فإن الكذب يهدي إلى الفجور، وإن الفجور يهدي إلى النار، وإن الرجل يكذب ويتحرى الكذب حتى يكتب عند الله كذابا.

    “আর মিথ্যা থেকে দূরে থাক। কারণ মিথ্যা পথ দেখায় পাপাচারের। আর পাপাচার উপনীত করে জাহান্নামে। যে ব্যক্তি মিথ্যা বলে ও মিথ্যার অন্বেষায় থাকে, এভাবে একসময় আল্লাহর কাছে সে চরম মিথ্যুক হিসেবে লিখিত হয়ে যায়।”

    সহিহ মুসলিম, হাদিস ২৬০৭

    সুতরাং জন্ম তারিখ পরিবর্তন করা করা জায়েজ নাই। চাকুরীতে অ্যাপ্লায়ের মেয়াদ বৃদ্ধি বা চাকুরীর বয়স বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে এমনটি করলে আল্লাহর নিকট অপরাধী সাব্যস্ত হওয়ার পাশাপাশি সে নিজের বিবেকের কাছেও অপরাধী হয়ে থাকে।

    বয়স কমিয়ে চাকরী পেলেঃ

    যাহোক, কেউ যদি এ ধরণের কাগজ সাবমিট করার মাধ্যমে হালাল কাজের চাকুরীতে প্রবেশ করে এবং উক্ত কাজের জন্য তার মধ্যে প্রয়োজনীয় যোগ্যতা ও দক্ষতা থাকে, যথাযথভাবে কাজ সম্পাদন করে এবং কাজের ক্ষেত্রে কোন ধরণের অবহেলা প্রদর্শন না করে তাহলে এর মাধ্যমে তার উপার্জিত সম্পদ হালাল।

    তবে জন্ম সনদে বয়স কমিয়ে লিখার মাধ্যমে মিথ্যা ও প্রতারণার আশ্রয় নেয়ার কারণে আল্লাহর নিকট খাঁটি অন্তরে তওবা করা আবশ্যক।

    উল্লেখ্য যে, জাল সার্টিফিকেট ও ডকুমেন্টস দ্বারা চাকুরী করার বিধানও একই।

    আরও পড়ুনঃ পণ্য বিক্রয়-এ লাভের সর্বোচ্চ সীমা

    আল্লাহ আমাদেরকে হারাম থেকে রক্ষা করুন এবং হালাল পথে জীবিকা অর্জনের তাওফিক দান করুন। আমীন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করা কি ফরজ?

    রাষ্ট্রীয় আইন মান্য করা কি ফরজ?

    উত্তরঃ জনপ্রশাসন সংক্রান্ত রাষ্ট্রীয় আইন-কানুন প্রতিটি নাগরিকের জন্য মান্য করা আবশ্যক-যতক্ষণ না তা শরিয়া বিরোধী হয়।

    যেমন: ট্রাফিক আইন, রাস্তাঘাট ও বাজার ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত আইন, শিল্প ও নির্মাণ সংক্রান্ত আইন, বিয়ে ও জন্ম নিবন্ধন, জাতীয় পরিচয়পত্র, জায়গা-জমি, দোকানপাট রেজিস্ট্রেশন ইত্যাদি মানুষের কল্যাণে এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধে প্রণীত প্রতিটি আইন।

    শাইখ বিন বায রাহ. বলেন,

    أن القوانين إذا كانت لا تخالف الشرع فلا بأس بها، النظم تسمى بالقوانين وتسمى بالنظم، فكل قانون ونظام ينفع المسلمين ولا يخالف شريعة الله لا بأس به، من المرور أو في القضاء أو في أي الدوائر الحكومية أو في أي مكان.

    আইন-কানুন যদি শরিয়ত বিরোধী না হয় তাহলে তাতে কোনও সমস্যা নাই। শৃঙ্খলাকে আইন বলা হয়। সুতরাং যে সকল আইন-শৃঙ্খলা মুসলিমদের উপকার করে ও আল্লাহর আইন লঙ্ঘন করে না তাতে কোনও সমস্যা নাই। যেমন: ট্রাফিক, বিচার বিভাগ, সরকারি অফিস বা অন্য যে কোন স্থানে হোক না কেন।

    Binbaz-org

    সুতরাং যে সকল আইন-কানুন জনমানুষের কল্যাণ এবং বিশৃঙ্খলা রোধের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। কোনও নাগরিকের জন্য এ সকল আইন লঙ্ঘন করা বৈধ নয়। অন্যথায় গুনাহগার হতে হবে। কেননা, এ সব আইন অনুসরণ না করলে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, জান-মালের ক্ষতি এবং নানা দুর্ভোগে পতিত হয়ে জনজীবন বিপর্যস্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আর মানুষের নিরাপত্তা, কল্যাণ সাধন এবং বিশৃঙ্খলা প্রতিরোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব-যা শরিয়তের দৃষ্টিতে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

    তাছাড়া কেউ যদি এসব আইন লঙ্ঘন করে তাহলে সে নিজেকে নানা বিপদাপদ, শাস্তি ও লাঞ্ছনার মধ্যে নিক্ষেপ করবে-যা ইসলামে নিষেধ।
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    لا ينبغِي للمؤمنِ أن يُذلّ نفسهُ قالوا : وكيف يُذلّ نفسهُ ؟ قال : يتعرّضُ من البلاءِ لمَا لا يطيقُ- رواه الترمذي، وصححه الألباني.

    কোনও ইমানদারের জন্য নিজেকে লাঞ্ছিত করা উচিৎ নয়। তারা (সাহাবিগণ) প্রশ্ন করলেন, মানুষ কিভাবে নিজেকে লাঞ্ছিত করে?
    তিনি বললেন, সে নিজেকে এমন বিপদের মুখোমুখি করে যা তার সহ্য ক্ষমতার বাইরে।

    তিরমিযী, শাইখ আলবানি হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন-সাহাবি হুযায়ফা ইবনুল ইয়ামান থেকে বর্ণিত।

    আরও পড়ুনঃ ইহুদিদের ২০ স্বভাব-চরিত্র

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।