Tag: নাপাক

  • ওজু ছাড়া আজান দেওয়া ও একটি কুসংস্কার

    ওজু ছাড়া আজান দেওয়া ও একটি কুসংস্কার

    প্রশ্ন: ওজু ছাড়া কি মসজিদে আজান দেওয়া জায়েজ? আর ‘ওজু ছাড়া আজান দিলে সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে’ কথাটা কতটুকু সত্য?

    উত্তরঃ নিম্নে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

    ওজু ছাড়া আজান দেওয়া

    ইসলামে আজান দেয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত করা হয় নি। সুতরাং ওজু ছাড়া আজান দেওয়ায় কোন আপত্তি নাই। তবে পাক-পবিত্র অবস্থায় আজান দেয়া উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নাই।

    এ ব্যাপারে পূর্বসূরি ও আধুনিক যুগের কতিপয় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

    ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ (জন্ম: ৪৭, মৃত্যু: ৯৬ হিজরি) বলেন,

    لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ

    “অজু ছাড়া আজান দেওয়ায় কোন অসুবিধা নেই।”

    (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা/ ২২০২)

    কাতাদা, আব্দুর রহমান বিন আওয়াদ, হাম্মাদ প্রমুখ মনিষীগণ বলেন,

    لَا بَأْس أَن يُؤذن الرجل وَهُوَ على غير وضوء

    “কোন ব্যক্তি যদি অজু ছাড়া আজান দেয় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নাই।”

    (সহিহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ উমদাতুল কারী, অধ্যায়: আজান)

    হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহের কিতাব হেদায়ার গ্রন্থকার বলেন,

    وَيَنْبَغِي أَن يُؤذن وَيُقِيم على طهر، لِأَن الْأَذَان وَالْإِقَامَة ذكر شرِيف، فَيُسْتَحَب فِيهِ الطَّهَارَة، فَإِن أذن على غير وضوء جَازَ،

    “পবিত্র অবস্থায় আজান ও একামত দেয়া উচিৎ। কেননা আজান-একামত মর্যাদাপূর্ণ জিকির। তাই এ ক্ষেত্রে পবিত্রতা মোস্তাহাব। তবে ওজু ছাড়া আজান দেয়াও জায়েজ।”

    (সহিহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ উমদাতুল কারী, অধ্যায়: আজান)

    শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহঃ বলেন,

    <الأذان ليس من شرطه الوضوء، إذا أذن وهو على غير وضوء أجزأ حتى ولو كان على جنابة ليس قرآن هو، الأذان ليس بقرآن إنما هو ذكر، والنبي عليه السلام كان يذكر الله على كل أحيانه.
    فالمسلم يذكر الله دائمًا حتى ولو كان على جنابة يذكر الله، حتى الحائض تذكر الله، والنفساء تذكر الله. والأذان من ذكر الله، فإذا أذن وهو على جنابة أو أذن وهو على غير وضوء فأذانه صحيح، لكن الأفضل أن يكون على طهارة، هذا هو الأفضل

    “ওজু থাকা আজানের শর্ত নয়। কেউ যদি ওজু ছাড়াও আজান দেয় তাহলেও যথেষ্ট হবে-এমনকি গোসল ফরজ থাকা অবস্থায়ও। আজান কুরআন নয় বরং তা হল, আল্লাহর জিকির। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন। একজন মুসলিম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে পারে যদিও নাপাক অবস্থায় থাকে। এমনকি ঋতুমতী ও প্রসূতি মহিলাও আল্লাহর জিকির করতে পারে। আর আজান আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত।


    সুতরাং নাপাক অবস্থায় আজান দিলে অথবা ওজু ছাড়া আজান দিলে আজান সহিহ হবে। কিন্তু উত্তম হল, পবিত্র অবস্থায় আজান দেয়া। এটাই উত্তম।” (শাইখ বিন বাজ রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
    এ ছাড়াও পূর্ববর্তী এবং আধুনিক যুগের বহু আলেম এ ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করেছেন।

    ওজু ছাড়া আজান দিলে সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে’ এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ এ কথা সঠিক নয়। ওজু ছাড়া আজান দেওয়া হলে যদি সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসত তাহলে হাদিসে অবশ্যই তা নিষেধ করা হত অথচ কোন হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসে নি। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, এটা সম্পূর্ণ বাতিল ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা। আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ একামত এর সময় মুয়াজ্জিনের অবস্থান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • গোসল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল

    গোসল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল

    গোসল, একজন মানুষের পরিস্কার হবার জন্য অন্যতম একটি মাধ্যম। ইসলামের দৃষ্টিতে গোসলের অনেক তাৎপর্য আছে। বিশেষ করে ফরজ-গোসল এর বিষয়ে প্রতিটি মুসলিমের স্পষ্ট ধারণা রাখাটা জরুরী।

    🚿 গোসল ফরয (আবশ্যক) হওয়ার কারণ সমূহ

    নিম্ন লিখিত কারণগুলোর যে কোন একটির মাধ্যমে গোসল ফরয (আবশ্যক) হয়ঃ

    ১) স্বপ্নদোষ বা অন্য কোন কারণে (ঘুমন্ত বা জাগ্রত অবস্থায়-পুরুষ বা মহিলার) বীর্যপাত হওয়া। (বুখারী ও মুসলিম)

    ২) পুরুষ ও মহিলার লজ্জাস্থান পরস্পর মিলিত হলেই উভয়ের উপর গোসল ফরজ হয়- বীর্যপাত হোক বা না হোক। (আহমাদ, মুসলিম)

    ৩) মহিলাদের হায়েজ ও নেফাস তথা মাসিক ঋতুস্রাব বা সন্তান প্রসবোত্তর স্রাব বন্ধ হলে গোসলের মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা ফরয। ।  (সূরা বাকারা: ২২২)

    ৪) যুদ্ধ ময়দানের শহীদ ব্যতীত মৃত মুসলিম ব্যক্তিকে গোসল দেয়া জীবিতদের উপর ফরয।

    ৫) ইহুদী বা খৃষ্টান বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল ফরয না কি মুস্তাহাব- এ বিষয়ে মহামতি ইমামদের মাঝে দ্বিমত রয়েছে।  ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের অভিমত হল, কোন কাফের ইসলামে প্রবেশ করলে তার জন্য গোসল করা ফরয। পক্ষান্তরে জুমহুর (অধিকাংশ) ইমাম তথা  ইমাম আবু হানিফা, মালেক ও শাফেঈ প্রমূখের অভিমত হল, ইসলাম গ্রহণের পর গোসল করা মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয় এবং এটি অধিক নির্ভরযোগ্য মত।

    🚿 গোসলের পদ্ধতি

    প্রথমে নিয়ত করবে, অতঃপর বিসমিল্লাহ বলে দু’হাত কব্জি পর্যন্ত তিন বার ধৌত করবে। লজ্জা স্থানে পানি ঢেলে উহা পরিষ্কার করবে। অতঃপর পূর্ণরূপে ওযু করবে। মাথায় পানি ঢেলে আঙ্গুল চালিয়ে চুল খিলাল করবে। যখন বুঝবে যে, চুলের গোঁড়ায় পানি পৌঁছে গেছে তখন মাথায় তিন বার পানি ঢালবে এবং সমস্ত শরীরে পানি ঢালবে। এ ক্ষেত্রে ডান পার্শ্ব থেকে কাজ আরম্ভ করবে।
    মা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর গোসলের পদ্ধতি এভাবেই এসেছে। (বুখারী ও মুসলিম)

    🚿 গোসলের ফরয দু’টিঃ

    ১) নিয়ত করা।
    ২) সমস্ত শরীরে পানি প্রবাহিত করা (মুখ ও নাখের ভেতর পানি পৌঁছানোও এর অন্তর্ভূক্ত)

    🚿 যেসব ক্ষেত্রে গোসল মুস্তাহাব

    ১) জুম’আর দিন গোসল করা। (সহীহ মুসলিম)
    ২) ঈদের দিন গোসল করা।
    ৩) হজ্জ বা উমরাহ্‌র জন্য ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (জামে তিরমিযী, সুনানে দারাকুত্বনী)
    ৪) হজ্জ বা উমরা আদায়ের উদ্দেশ্যে ইহরামের পূর্বে গোসল করা। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)
    ৫) সাধারণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার উদ্দেশ্যে গোসল করা।
    ৬) ইহুদী, খৃষ্টান, হিন্দু বা যে কোন কাফের ইসলাম গ্রহণ করলে তার উপর গোসল মুস্তাহাব (অধিক নির্ভরযোগ্য মতানুসারে)

    🚿 গোসল ফরয অবস্থায় যা যা করা হারাম

    ১) সালাত আদায় করা।
    ২) কা’বা ঘরের তওয়াফ করা।
    ৩) কুরআন স্পর্শ করা (অধিক বিশুদ্ধ মতানুসারে)।
    ৪) কুরআন তিলাওয়াত করা (আবু দাউদ, তিরমিযী, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ)
    ৫) মসজিদে অবস্থান করা। (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ্‌)
    গোসল ফরয অবস্থায় উপরোক্ত কাজগুলো ছাড়া আর কোন কিছুই হারাম নয়। যেমন, ঘুমানো, রান্না-বান্না, খাওয়া-দাওয়া, গৃরস্থালীর কাজ..ইত্যাদি।

    উৎস: জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইড্ন্সে সেন্টারের পাঠ্যপুস্তক ফিকহ (লেভের-১) থেকে
    অনুবাদক: শাইখ আব্দুল্লাহ আল কাফী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
    সম্পদনা ও পরিমার্জনা: শাইখ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল মাদানী
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সৌদি আরব