Tag: ঈদের সালাত

  • ঈদ এর বিধি-বিধান

    ঈদ এর বিধি-বিধান

    ঈদ, আল্লাহ কর্তৃক মুসলিমদের জন্য নির্ধারিত বাৎসরিক দুইটি খুশির দিন। মুসলিমদের জীবনের প্রতিটি কথা কাজ যেমন ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত; ঠিক তেমনি ঈদও ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর তাই ঈদ এর বিধি-বিধান যেমন রয়েছে, তেমনি তা মেনে চলাও সকলের জন্য জরুরী।

    ❑ ঈদের প্রকৃত অর্থ কি?

    দামী পোশাক, রঙ্গিন জামা, হরেক রকম সুস্বাদু খাবার আর নানা ধরণের আনন্দ-উৎসবের নাম ঈদ নয়। ঈদের উদ্দেশ্য কি তা আল্লাহ তা’আলা নিন্মোক্ত আয়াতের মাধ্যমে প্রকাশ করেছেনঃ

    وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَى مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ

    “আর যেন তোমরা নির্ধারিত সংখ্যা পূরণ করতে পার এবং তোমাদেরকে যে সুপথ দেখিয়েছেন, তার জন্যে তোমরা আল্লাহর মমত্ব প্রকাশ কর এবং তাঁর কৃতজ্ঞতা হও ।”

    সূরা বাকারাঃ ১৮৫

    এই আয়াত থেকে প্রমাণিত হচ্ছে, ঈদের উদ্দেশ্য হল দুটিঃ
    ১) আল্লাহর বড়ত্ব মমত্ব ও শ্রেষ্ঠত্ব ঘোষণা করা।
    ২) আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করা।

    ❑ ঈদ এর বিধি-বিধানঃ

    নিন্মে আমরা অতি সংক্ষেপে কুরআন ও সহীহ হাদিসের আলোকে ঈদ এর বিধি-বিধান আলোচনা করার চেষ্টা করব যাতে আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবায়ে কেরামের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুসারে আমরা আমাদের ঈদ উদযাপন করে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পারি।

    ◉ ১) ঈদের দিন রোযা রাখা নিষেধ

    প্রখ্যাত সাহাবী আবু সাঈদ (রা:) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহা এ দু দিন রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।”

    বুখারী হাদিস নং ১৮৫৫

    ◉ ২) ঈদের রাত থেকে তাকবীর পাঠ করা

    সূর্য ডোবার পর ঈদের রাত থেকে আরম্ভ করে ঈদের নামায শুরু করা পর্যন্ত তাকবীর পড়তে হয়। পুরুষগণ মসজিদ, হাট-বাজার, রাস্তা-ঘাট তথা সর্বত্র উচ্চস্বরে তাকবীর পাঠ করবে। এর মাধ্যমে একদিকে যেমন ঈদের আনন্দ প্রকাশ করা হয় অন্যদিকে আল্লাহর আনুগত্যের স্বীকৃতি প্রদান করা হয়। তাকবীর পড়ার নিয়ম হল,

    “আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা-ইলাহা ইল্লালাহু ওয়াল্লাহু আকবার। আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ্।”

    ◉ ৩) ঈদ উপলক্ষে পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করা

    মুসলিমদের উদ্দেশ্যে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা উত্তম। কারণ সাহাবীগণ তা করতেন।
    মুহাম্মদ বিন যিয়াদ আল আলহানী রহ. বলেন, আমি সাহাবি আবু উমামা আল বাহেলী রা. কে ঈদের দিন তার সাথীদের উদ্দেশ্যে বলতে দেখেছিঃ

    “তাক্বাব্বালাল্লাহু মিন্না ওয়া মিনকুম” [অর্থ: আল্লাহ আমাদের ও আপনাদের (নেক কাজগুলো) কবুল করুন]

    (বায়হাকী (২/৩১৯)-সনদ হাসান)

    তবে ঈদ মোবারক, ঈদ সাঈদ, ঈদের শুভেচ্ছা, কনগ্রাচুলেশন, কুল্লু আম ওয়া আনতমু বি খাইর ইত্যাদি যে সব শব্দ বা বাক্য দ্বারা মানুষ পরষ্পরকে শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করে আর মানুষও তাতে খুশি হয় সে শব্দ/বাক্য ব্যবহারে কোন আপত্তি নেই। কারণ ইসলামে দেশীয় সংস্কৃতি ও প্রচলিত রীতিনীতিকে নিন্দা করা হয় নি যদি তাতে শরিয়ত বিরোধী কিছু না থাকে।

    আরও পড়ুনঃ ঈদের শুভেচ্ছা কখন ও কিভাবে?

    ◉ ৪) ভালো পোশাক ও ভালো খাবারের আয়োজন করা

    ঈদ উপলক্ষে যথাসম্ভব পরিবারের সদস্যদেরকে ভালো খাবার ও সুন্দর পোশাক দেয়ার ব্যবস্থা করা উত্তম। তবে অপচয় যাতে না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা জরুরী। অনুরূপভাবে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা-সাক্ষাত করা কর্তব্য। সেই সাথে প্রতিবেশীর খোঁজ-খবর রাখতে হবে। দরিদ্রদের যথাসম্ভব সাহায্য-সহযোগিতা করতে হবে। যাতে ঈদের আনন্দ থেকে তারা বঞ্চিত না হয়।

    ◉ ৫) ঈদের নামাযের প্রতি যত্মশীল হওয়া

    ঈদুল ফিতরের নামায বিলম্বে পড়া সুন্নত। যাতে ঈদের দিন সকালবেলা ফিতরা বণ্টন করার সময় পাওয়া যায়। পক্ষান্তরে ঈদুল আযহার নামায তাড়াতাড়ি পড়া সুন্নত।

    আরও পড়ুনঃ ঘরে ঈদের সালাত আদায় করার নিয়ম

    ◉ ৬) গোসল ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা

    নামাযে যাওয়ার পূর্বে গোসল করে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হবে। তারপর সুগন্ধি ব্যাবহার করে ও সাধ্যানুযায়ী সবচেয়ে সুন্দর কাপড় পরিধান করে ঈদগাহ অভিমুখে যাত্রা করবে। তবে কাপড় পরিধান করার সময় সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে, যেন পুরুষের কাপড় টাখনুর নিচে না যায়। কেননা, পুরুষের জন্য টাখনুর নিচে কাপড় পরিধান করা হারাম।

    আর মহিলাকে তার সর্বাঙ্গ আবৃত করতে হবে এবং রূপ-সৌন্দর্য পরপুরুষের সামনে প্রকাশ করার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সাবধানতা অবলম্বন করা আবশ্যক। কেননা মহান আল্লাহ বলেনঃ

    وَلا يُبْدِينَ زِينَتَهُنَّ إِلَّا لِبُعُولَتِهِنَّ أَوْ آبَائِهِنَّ أَوْ آبَاءِ بُعُولَتِهِنَّ الآية

    “আর তারা (মহিলাগণ) তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ করবে না তাদের স্বামী, পিতা,স্বামীর পিতা…..ছাড়া অন্যের নিকট।”

    সূরা নূর: ৩১

    ◉ ৭) ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া

    ঈদুল ফিতরে ঈদের মাঠে যাওয়ার আগে কোন কিছু খাওয়া সুন্নত। আনাস (রা:) বলেন,

    “নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতরের দিন কয়েকটা খেজুর না খেয়ে ঈদের মাঠে যেতেন না। আর তিনি তা বেজোড় সংখ্যায় খেতেন।”

    বুখারী

    পক্ষান্তরে ঈদুল আযহায় তিনি ঈদগাহে যাওয়ার পূর্বে কিছুই খেতেন না। ঈদগাহ থেকে ফিরে এসে নিজের কুরবানির গোস্ত খেতেন।

    ◉ ৮) মহিলাদের ঈদগাহে যাওয়া

    মহিলাদেরকে সাথে নিয়ে ঈদের নামায পড়তে যাওয়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নির্দেশ প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ

    ((لِيَخْرُجْ الْعَوَاتِقُ ذَوَاتُ الْخُدُورِوَالْحُيَّضُ وَيَعْتَزِلُ الْحُيَّضُ الْمُصَلَّى وَلْيَشْهَدْنَ الْخَيْرَ وَدَعْوَةَ الْمُؤْمِنِينَ))

    “কর্তব্য হল, পর্দানশীন কুমারী মেয়েরা; এমন কি ঋতুমতী মহিলারাও ঈদগাহে যাবে। তবে ঋতুমতী মহিলাগণ নামাযের স্থান থেকে দূরে অবস্থান করে কল্যাণময় কাজ এবং মুমিনদের দু’আতে শরীক হবে।”

    বুখারীঃ হাদিস নং ৯২৭

    এ সুন্নত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে এবং বাংলাদেশের কিছু কিছু এলাকায় আজো প্রচলিত আছে। সুতরাং যে সব এলাকায় তা চালু নেই সেসব স্থানের সচেতন আলেম সমাজ এবং নেতৃস্থানীয় মুসলমানদের কর্তব্য হল, আল্লাহর রাসূলের সুন্নতকে পুনর্জীবিত করার লক্ষ্যে মহিলাদেরকেও ঈদের এই আনন্দঘন পরিবেশে অংশ গ্রহণের সুযোগ প্রদানের জন্য এগিয়ে আসা।

    তবে নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা, পর্দা হীনতা, উচ্ছৃঙ্খলতা ইত্যাদি যাতে না ঘটে তার জন্য আগে থেকে সকলকে সচেতন ও সাবধান করা জরুরী। মহিলাগণ যখন বাড়ি থেকে বের হবে সর্বাঙ্গ কাপড় দ্বারা আবৃত করবে এবং সুগন্ধি ব্যবহার থেকে বিরত থাকবে। কেননা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ

    أَيُّمَا امْرَأَةٍ اسْتَعْطَرَتْ فَمَرَّتْ عَلَى قَوْمٍ لِيَجِدُوا مِنْ رِيحِهَا فَهِيَ زَانِيَةٌ

    “যে মহিলা সুগন্ধি ব্যবহার করে অন্য মানুষের নিকট দিয়ে গমন করার ফলে তারা তার ঘ্রাণ পেল সে মহিলা ব্যভিচারিণী।”

    নাসাঈঃ হাদিস নং ৫০৩৬

    আরও পড়ুনঃ মহিলাদের ঈদের সালাত-এ অংশগ্রহণ

    ◉ ৯) পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা

    পায়ে হেঁটে ঈদগাহে গমন করা এবং ভিন্ন পথে ঈদগাহ থেকে ফিরে আসা সুন্নত। (বুখারীঃ হাদিস নং ৯৩৩)

    ◉ ১০) ঈদের নামায সংক্রান্ত কতিপয় বিধান

    ক. ঈদের নামাযে আযান ও একামত নেই: জাবের ইবনে সামুরা (রা:) বলেন, “রাসূলুল্লাহ(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে একবার নয় দুই বার নয় একাধিক বার ঈদের নামায পড়েছি তাতে আযান ও একামত ছিল না।” (সহীহ মুসলিম: হাদিস নং ১৪৭০)

    খ. ঈদের নামাযের আগে বা পরে নফল নামায পড়া শরীয়ত সম্মত নয়।

    গ. সর্বপ্রথম ঈদের নামায হবে তারপর খুতবাঃ আবু সাঈদ খুদরী (রা:) বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার দিন নবী করীম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদের মাঠে গিয়ে সর্বপ্রথম নামায আদায় করতেন তারপর জনগণের দিকে মুখ ফিরিয়ে দাঁড়িয়ে ওয়ায করতেন, কোন উপদেশ থাকলে উপদেশ দিতেন বা কোন নির্দেশ থাকলে নির্দেশ দিতেন।

    আর জনগণ নামাযের কাতারে বসে থাকতেন। কোথাও কোন বাহিনী প্রেরণের ইচ্ছা থাকলে তার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করতেন অথবা অন্য কোন নির্দেশ জারী করার ইচ্ছা করলে তা জারী করতেন। (সহীহ বুখারী, হাদিস নং ৯০৩)

    ● ঘ. রাকাত সংখ্যা: ঈদের নামায দু রাকাত। (বুখারী, হাদিস নং ১৩৪১)। আরও পড়ুনঃ ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যাঃ ৬ না কি ১২?

    ● ঙ. তাকবীর সংখ্যা: তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর।

    عن عَائِشَة أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالْأَضْحَى فِي الْأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا…قَالَ سِوَى تَكْبِيرَتَيْ الرُّكُوعِ

    “আয়েশা রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার প্রথম রাকাতে সাত তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে পাঁচ তাকবীর দিতেন।” অন্য সনদে আছে, উল্লেখিত তাকবীরগুলো রুকুর তাকবীর ছাড়া। (আবুদাঊদ হাদিস নং ৩৭০)

    ● চ. ঈদের নামাযে কেরাআতঃ প্রখ্যাত সাহাবী নুমান ইবনে বাশীর রা. হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) দুই ঈদ ও জুমার নামাযে প্রথম রাকআতে ‘সাব্বিহিস্মা রাব্বিকাল আ’লা’ এবং দ্বিতীয় রাকায়াতে ‘হাল আতাকা হাদীসুল গাসিয়াহ্’ পাঠ করতেন। (নাসাঈ, হাদিস নং ১৫৫০ সনদ সহীহ-আলবানী)

    সূরা ক্বাফ এবং সূরা ইক্বতারাবতিস্ সা’আহ্’ পড়ার কথাও হাদিস পাওয়া যায়। (নাসাঈঃ হাদিস নং ১৫৪৯, সনদ সহীহ-আলবানী)

    ● ছ. ঈদের খুতবা শোনা: ঈদের খুতবা প্রসঙ্গে নবী সায়েব ইবনে ইয়াজিদ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ঈদের সালাতে উপস্থিত হলাম। তিনি ঈদের সালাত শেষ করার পর বললেন, আমরা এখন খুতবা দিব। সুতরাং

    فَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَجْلِسَ لِلْخُطْبَةِ فَلْيَجْلِسْ , وَمَنْ أَحَبَّ أَنْ يَرْجِعَ فَلْيَرْجِعْ

    “যে চলে যেতে চায় সে যেতে পারে আর যে (খুতবা শোনার জন্য) বসতে চায় সে বসতে পারে।” (নাসাঈ, অধ্যায়: দু ঈদ, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের খুতবা শুনা ইচ্ছাধীন বিষয়, হা/ ১৫৫৩, মুস্তাদরাক হাকিম, হা/১০৪৩, ইমাম হাকেম বলেন, হাদিসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুযায়ী সহীহ তবে তারা তাদের কিতাবে বর্ণনা করেন নি। ইমাম যাহাবী ইমাম হাকিমের কথায় একমত পোষণ করেছেন।

    অনুরূপভাবে ইমাম আলবানীও হাদিসটিকে সহীহ বলেছেন, সহীহ আবু দাউদ, হা/১০৪৮, ইরওয়াউল গালীল, হা/৬২৯)

    অর্থাৎ জুমার খুতবা শুনার মুস্তাহাব; ওয়াজিব নয়। তাই বলে, এটির প্রতি অবহেলা প্রদর্শন করা উচিৎ নয়। কেননা, খুতবার মধ্যে মুসলিম জাতির কল্যাণের জন্য দুয়া করা হয়, ওয়ায-নসিহত করা হয়, বিভিন্ন বিষয়ে করণীয়-বর্জনীয় বিষয়ে দিক নির্দেশনা পেশ করা হয়।

    ❑ ঈদ ও সামাজিক জীবন

    ঈদের আনন্দ নির্মল, পবিত্র এবং অত্যন্ত মধুময়। ঈদ উপলক্ষে যখন নিজ নিজ গৃহে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধব একে অপরকে দাওয়াত দেয়, পরস্পরে শুভেচ্ছা বিনিময় করে, একে অপরকে উপহার সামগ্রী আদান-প্রদান করে তখন ঈদের আনন্দ আরও মধুময় হয়ে উঠে। সুদৃঢ় হয় সামাজিক বন্ধন।

    মনের মধ্যে জমে থাকা হিংসা-বিদ্বেষ, ক্রোধ ও তিক্ততা দূর হয়ে পারস্পারিক ভালোবাসা, বন্ধুত্ব, সহমর্মিতা ও সম্মানবোধ জাগ্রত হয়। জীবনের প্রতিটি অঙ্গনে বয়ে যায় শান্তির সুবাতাস যা প্রভাতের আলোর মতই স্বচ্ছ, নির্মল ও নিষ্কলুষ।

    ❑ ঈদ ও পাপাচারিতা

    ঈদের পবিত্রতা ম্লান হয়ে যায় যখন দেখা যায় ঈদ উৎসব ও ঈদ মেলার নামে অশ্লীলতা-বেহায়াপনার মেলা বসে। তরুণ-তরুণীরা নানারকম আপত্তিকর পোষাকে চলাফেরা করে। একশ্রেণীর উদ্ভট যুবক বাড়িতে, রাস্তার ধারে ও বিভিন্ন ক্লাবে বড় বড় ডেকসেটে অডিও সিডি চালু করে উচ্চ আওয়াজে গান বাজাতে থাকে।

    সরকারী-বেসরকারি বিভিন্ন টিভি চ্যানেলগুলোতে ঈদ উপলক্ষে বিশেষ বিশেষ অশ্লীল ফিল্ম সম্প্রচার করে। সিনেমা হলগুলোতে নতুন নতুন ছবি জাঁকজমকভাবে প্রদর্শিত হয়। মনে হয় এরা যেন এ ধরণের একটি সময়েরই প্রতীক্ষায় ছিল এত দিন!

    দীর্ঘ একমাস সিয়াম সাধনা করার পর যে একটা ঈমানী পরিবেশ তৈরি হয়ে ছিল, কুরবানি করার মাধ্যমে যে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের প্রতিযোগিতার লিপ্ত হয়েছিল মুসলিম সমাজ তারা কি এসব ক্রিয়া-কাণ্ডের মাধ্যমে তার চিহ্ন মুছে ফেলতে চায়?

    এসব অপসংস্কৃতিকে পরিত্যাগ করে আমরা যদি ইসলামী সংস্কৃতি ও সভ্যতাকে ধারণ করতে পারি তাহলে আমাদের সার্বিক জীবন সুন্দর ও পবিত্রতার আলোক রশ্মিতে ভাস্বর হয়ে উঠবে।

    পরিশেষে, কামনা করি ঈদ আমাদের জীবনে রংধনুর মত রং ছড়িয়ে বার বার ফিরে আসুক। আর সে রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে উঠুক আমাদের জীবনের প্রতিটি মূহুর্ত। ধুয়ে-মুছে পরিষ্কার হয়ে যাক সকল পাপ ও পঙ্কিলতা। আমীন।

    গ্রন্থনা: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদি আরব।

  • মহিলাদের ঈদের সালাত-এ অংশগ্রহণ

    মহিলাদের ঈদের সালাত-এ অংশগ্রহণ

    মহিলাদের ঈদের সালাত-এ অংশগ্রহণ সম্পর্কে আমাদের সমাজে ব্যাপক ভুল ধারণা আছে। অনেকেই এর বিরোধীতা করেন। কিন্তু এ বিষয়ে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সরাসরি নির্দেশনা আছে। আর সেই বিষয়েই লিখেছেন, চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ। লেখাটি সম্পাদনা করেছেন ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া।

    আল্লাহ তা‘আলা নারী-পুরুষ উভয়কে সৃষ্টি করেছেন। তিনি তাদের দুনিয়া ও আখেরাতের কল্যাণ অর্জনের লক্ষ্যে সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলাম দান করেছেন। তাদেরই মধ্য থেকে নির্বাচন করেছেন মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে, যিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন নারী-পুরুষের নিজস্ব গণ্ডিতে পূর্ণ অধিকার।

    হাতে গোনা কয়েকটি স্বতন্ত্র ইবাদত ব্যতীত সব ইবাদতে পুরুষ ও নারীকে সমান মর্যাদায় রেখেছেন। ইসলাম চায় নারী জাতি যাতে কোনো কল্যাণ থেকে বঞ্চিত না হয়। তাই-তো মুসলিমের উল্লেখযোগ্য ইবাদত আনন্দঘন পরিবেশ ও ইমামের দিক-নির্দেশনামূলক বক্তৃতা থেকে যাতে নারী-পুরুষ সমানভাবে উপকৃত হতে পারে সে মর্মে মানবতার মুক্তিদূত মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মহিলাদেরকেও আদেশ করেছেন ঈদগাহে উপস্থিত হতে।

    মহিলাদের ঈদের সালাত-এর দলিলঃ

    উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা বলেন,

    «أمرنا رسول الله صلى الله عليه وسلم أن نخرجهن في الفطر والأضحى العواتق والحيّض وذوات الخدور . فأما الحيّض فيعتزلن الصلاة. وفي لفظ : المصلى. ويشهدن الخير ودعوة المسلمين. (رواه الجماعة) وفي بعض ألفاظه : فقالت إحداهن : يا رسول الله لا تجد إحدانا جلباباً تخرج فيه، فقال صلى الله عليه وسلم : لتلبسها أختها من جلبابها».

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহায় ঈদগাহে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বৃদ্ধা, ঋতুবতী ও পর্দানশীল সকলের জন্য আদেশটি বহাল ছিল। তবে ঋতুবতী নারী ঈদের সালাত থেকে বিরত থাকবে এবং কল্যাণ (নসীহত শ্রবণ) ও মুসলিমদের সাথে দো‘আয় শামিল থাকবে। তিনি বললেন: হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মধ্যে কারো বড় চাদর না থাকলে সে কী করবে? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তার কোনো বোন তাকে নিজের চাদর পরিধান করতে দেবে”।

    সহীহ মুসলিম

    অত্র হাদীস থেকে সুস্পষ্টভাবে বুঝা যায়, নারীদেরকেও ঈদের সালাতে শামিল হওয়া প্রয়োজন।

    মহিলাদের ঈদের সালাতে আসার গুরুত্বঃ

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর যুগে মহিলারা পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে জামা‘আতে অংশগ্রহণ করতেন। তবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে সে ব্যাপারে নিরুৎসাহিত করতেন। তিনি বলতেন, তাদের জন্য মসজিদে এসে জামা‘আতে সালাত পড়ার চেয়ে ঘরের কোণে নির্জন স্থানে সালাত আদায় অতি উত্তম। তাই পাঁচ ওয়াক্ত সালাতে তাদের জন্য মসজিদে যাওয়ার প্রয়োজন ছিল না।

    কিন্তু ঈদের সালাতের ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এমনটি বলেন নি; বরং উম্মে আতিয়্যাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহা-এর হাদীসে বুঝা যাচ্ছে আবাল, বৃদ্ধা, বণিতা সকলকেই নির্বিশেষে ঈদগাহে উপস্থিত হওয়ার আদেশ করা হয়েছিল।

    যেখানে ঋতুবতী নারীর ওপর থেকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাতের দায়িত্ব রহিত করা হয়েছে, সেখানে তাকেও ঈদাগাহে উপস্থিত হয়ে মুসলিমদের কাতারে শামিল হওয়ার আদেশ করা হয়েছে।

    তাছাড়া পাঁচ ওয়াক্ত সালাত একাকীও আদায় করা সম্ভব। কিন্তু ঈদের সালাত জামা‘আত ছাড়া আদায় করা সম্ভব নয়। সুতরাং নারীরা এত বড় কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হওয়া কোনো মতেই উচিৎ হবে না।

    বিশেষ সতর্কতাঃ

    তবে শর্তসাপেক্ষ যেমন, পূর্ণ পর্দার সাথে ঘর থেকে বের হতে হবে। ঈদগাহে তাদের জন্য আলাদা নিরাপদ ব্যবস্থা থাকতে হবে। এর জন্য সার্বিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে।

    সৌদি আরবসহ আরব আমিরাতের অনেক মসজিদ ও ঈদগাহে মহিলাদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা রয়েছে। সেখানে অযুখানা, টয়লেট ও সালাতের স্থানসহ সবকিছু, এমনকি প্রবেশ করারও পৃথক পৃথক গেইট রয়েছে।

    কিন্তু আমাদের দেশে সে রকম উল্লেখযোগ্য ব্যবস্থা নেই। আর এ জন্য মহিলারা এসব কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হয়ে থাকে। আমাদের মুসলিম দেশগুলোতে এ বিষয়ে আরো উদারতার পরিচয় দেয়ার জন্য এগিয়ে আসা প্রয়োজন।

    আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তাওফীক দান করুন। আমিন।

    লেখকঃ চৌধুরী আবুল কালাম আজাদ
    সম্পাদনাঃ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া
    তথ্যসূত্রঃ islamhouse.com

  • ঘরে ঈদের সালাত আদায় করার নিয়ম

    ঘরে ঈদের সালাত আদায় করার নিয়ম

    বর্তমান পরিস্থিতিতে অনেক দেশেই ঘরে ঈদের সালাত পড়ার প্রয়োজনিয়তা দেখা দিয়েছে। এবং এটি যে বৈধ্য এ বিষয়েও ফতোয়া আছে। আমরা যেহেতু বছরে মাত্র দু’বার এই সালাত আদায় করি; অনেকেই ঈদের সালাতের নিয়ম মনে রাখতে পারি না। তাই নিচে ঈদের সালাতের নিয়ম বিস্তারিত দেওয়া হলো।

    সতর্কতাঃ ঈদের দিন ঈদের সালাতের আগে অন্য কোন বাড়তি কোন সুন্নত বা নফল সালাত নেই

    ঈদের সালাতের প্রথম রাকাতঃ

    ➜ সাধারণ সালাতের মত ‘আল্লাহু আকবার’ (তাকবীরে তাহরীমা) বলে বুকে হাত বাঁধবেন

    ➜ হাত বেঁধে সানা পড়বেন

    ➜ সানা শেষে অতিরিক্ত ৭টি তাকবীর দিবেন

    ➜ এবং এই সময় প্রতিবারই হাত কাঁধ বা কানের লতি বরাবর উঠাবেন (রাফউল ইয়াদাইন) ও হাত বুকে বাঁধবেন। (অর্থাৎ হাত ছেড়ে রাখবেন না প্রতি তাকবিরের মধ্যে)।

    ➜ এরপর সূরা ফাতিহার সাথে সূরা “আলা” বা সূরা “কাফ” অথবা অন্য যে কোন একটি সূরা বা সূরার অংশবিশেষ পড়বেন

    ➜ স্বাভাবিক রুকু ও সিজদার সাথে প্রথম রাকাত শেষ করবেন।

    ঈদের সালাতের দ্বিতীয় রাকাতঃ

    ➜ প্রথম রাকাতের সিজদা থেকে উঠে দাড়ানোর পর আবারো অতিরিক্ত ৫টি তাকবীর দিবেন

    ➜ এবং এই সময় প্রতিবারই হাত কাঁধ বা কানের লতি বরাবর উঠাবেন (রাফউল ইয়াদাইন) ও হাত বুকে বাঁধবেন। (অর্থাৎ হাত ছেড়ে রাখবেন না প্রতি তাকবিরের মধ্যে)।

    ➜ এরপর সূরা ফাতিহার সাথে সূরা “কামার” বা “গাশিয়া” অথবা অন্য কোন একটি সূরা বা সূরার অংশবিশেষ পড়বেন

    ➜ স্বাভাবিক রুকু সিজদা এবং সবশেষে সালামের মাধ্যমে সালাত শেষ করবেন

    আর কিছু বিষয়ঃ

    ✴ অতিরিক্ত তাকবীর সমূহ বলতে ভুলে গেলে বা গণনায় ভুল হলে তা পুনরায় বলা বা সাহু সিজদার প্রয়োজন নেই

    ✳ পরিবারের সকলে মিলে একসাথে জামাতে ঘরে ঈদের সালাত আদায় করুন ও

    ✳ ঘরে ঈদের সালাত আদায় করলে এতে কোন খুৎবা নেই

    তথ্যসূত্র ইবনে মাজাহ ১২৭৭-১২৮১ এবং HadithBD.com

    আরও পড়ুনঃ ঈদের সালাতে তাকবীর ৬টি না ১২টি?

  • ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যাঃ ৬ না কি ১২?

    ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যাঃ ৬ না কি ১২?

    ঈদের সালাতে তাকবীর সংখ্যা নিয়ে বেশ মতভেদ লক্ষ্য করা যায়। এর বাস্তবতা ও হাদিস ভিত্তিক আলোচনাঃ

    প্রশ্নঃ সহীহ হাদিসের আলোকে কয় তাকবীরে ঈদের সালাত পড়তে হয়? ৬ তাকবীর না কি ১২ তাকবীর? ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ায় এমন ঈমামের পেছনে কি ঈদের সালাত পড়া বৈধ হবে?

    উত্তরঃ ঈদের তাকবীর কতটি এ মর্মে ওলামাদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে সর্বাধিক বিশুদ্ধ অভিমত হল, তাকবীরে তাহরীমা ছাড়া প্রথম রাকাতে অতিরিক্ত সাত তাকবীর (মতান্তরে ৬ তাকবীর) এবং দ্বিতীয় রাকাতে ১ম রাকআত থেকে উঠার তাকবীর ছাড়া পাঁচ তাকবীর দেয়া অধিক হাদিস সম্মত।

    এ ব্যাপারে হাদিসের কিতাবগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণ হাদিস বর্ণিত হয়েছে।

    ✪ তন্মধ্যে একটি হাদিস নিম্নরূপ:
    عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ يُكَبِّرُ فِي الْفِطْرِ وَالأَضْحَى فِي الأُولَى سَبْعَ تَكْبِيرَاتٍ وَفِي الثَّانِيَةِ خَمْسًا ‏.‏

    ‘আয়িশাহ্‌ (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহার সালাতে প্রথম রাকআতে সাতবার এবং দ্বিতীয় রাক‘আতে পাঁচবার তাকবীর বলতেন।”

    সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৪৯, সনদ সহিহ

    ✪ আরেকটি হাদিস:
    عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ، قَالَ قَالَ نَبِيُّ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ التَّكْبِيرُ فِي الْفِطْرِ سَبْعٌ فِي الأُولَى وَخَمْسٌ فِي الآخِرَةِ وَالْقِرَاءَةُ بَعْدَهُمَا كِلْتَيْهِمَا ‏”‏ ‏

    আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: ঈদুল ফিতরের সালাতের তাকবীর হচ্ছে প্রথম রাকআতে সাতটি এবং দ্বিতীয় রাকআতে পাঁচটি এবং উভয় রাকআতেই তাকবীরের পর কিরাত পড়তে হবে।”

    সুনানে আবু দাউদ, অধ্যায়: সালাত, অনুচ্ছেদ: দুই ঈদের তাকবীর, হা/১১৫১, সনদ সহিহ

    এ মর্মে আরও অনেক হাদিস বিদ্যমান।

    ◉ ইরাকী বলেন: এটি অধিকাংশ সাহাবী, তাবেয়ী ও ইমামদের অভিমত।

    ◉ ইবনে আব্দুল বার (রহঃ) বলেন: দুই ঈদের নামাযের ব্যাপারে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে ‘হাসান’ সনদে বহু রেওয়ায়েত রয়েছে যে, তিনি প্রথম রাকাতে ৭ তাকবীর ও দ্বিতীয় রাকাতে ৫ তাকবীর দিয়েছেন। কিন্তু, সাহাবায়ে কেরাম এ নিয়ে তীব্র মতানৈক্য করেছেন। অনুরূপভাবে তাবেয়ীগণ এ নিয়ে মতভেদ করেছেন। [তামহীদ (১৬/৩৭-৩৯) থেকে সমাপ্ত]

    ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়া কি বৈধ?

    প্রথম রাকাতে তাকবীরে তাহরীমার পর কিরাতের আগে ৩ তাকবীর এবং দ্বিতীয় রাকাতে কিরাতের পর ৩ তাকবীর। এটি একদল সাহাবী, ইবনে মাসউদ (রাঃ), আবু মুসা (রাঃ) ও আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে এবং এটি ইমাম সাওরী (রহঃ) ও ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) এর অভিমত…[নাইলুল আওতার (৩/৩৫৫) থেকে সমাপ্ত]

    মোটকথা, ঈদের সালাত ১২ তাকবীরে পড়া হোক অথবা ৬ তাকবীরে উভয়টি সহীহ। তবে ১২ তাকবীরের হাদিস সংখ্যা প্রচুর এবং অধিক শক্তিশালী হওয়া এটি অধিক উত্তম। (যেমনটি শাইখ আলবানী বলেছেন)

    আরেকটি বিষয় হল, এই অতিরিক্ত তাকবীরগুলো সুন্নত; রোকন বা ওয়াজিব নয়। সুতরাং ইমাম ৬ তাকবীরে ঈদের সালাত পড়ুক অথবা ১২ তাকবীরে পড়ুন সকল অবস্থায় তার পেছনে সালাত পড়া জায়েয। কেবল তাকবীরের সংখ্যাকে কেন্দ্র করে ঈদের মাঠে ঝগড়া-মারামারি করা বা ঈদের মাঠ ভাগ করা শরীয়তের দৃষ্টিতে বৈধ নয়।

    আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ চলমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়

    উত্তর প্রদানেঃ আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব

  • চলমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়

    চলমান পরিস্থিতিতে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায়

    বর্তমানে বিশ্বময় করোনা সঙ্কটে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ ফতোয়া। সৌদি আরবের কাউন্সিল অব সিনিয়র স্কলারস (Council of Senior Scholars) এবং ফতোয়া ও গবেষণা বিষয়ক কমিটির প্রেসিডেন্ট শাইখ আব্দুল আযীয বিন আব্দুল্লাহ বিন মোহাম্মদ আলুশ শায়খ বলেন,

    নতুন করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব ঠেকানোর উদ্দেশ্যে কর্তৃপক্ষ যে সতর্কতা মূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে সে প্রেক্ষিতে লোকজন ঈদ এবং তারাবির সালাত বাড়িতেই আদায় করবে।

    বাড়িতে ঈদের সালাতঃ

    বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা কি বৈধ?

    তিনি বলেন, যদি বর্তমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকে এবং ঈদগাহে অথবা সালাতের জন্য নির্ধারিত মসজিদগুলোতে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হয় তাহলে বাড়িতে ঈদের সালাত আদায় করা হবে। তবে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেওয়া হয় সেটা হবে না।

    ইতোপূর্বে সৌদি আরবের স্থায়ী ফতোয় কমিটির যে ফতোয়া প্রকাশিত হয়েছে তা হলঃ

    “কারো যদি ঈদের সালাত ছুটে গিয়ে থাকে এবং সে তা কাযা করতে চায় তাহলে ঈদের সালাতের পরে যে খুতবা দেয়া হয় সেটা ছাড়া ঈদের সালাতের নিয়ম ঠিক রেখে তা কাযা করে নেয়া মুস্তাহাব (উত্তম)।”

    সুতরাং মুসলিম সর্ব সাধারণকে নিয়ে জামাআতে ইমামের সাথে ঈদের সালাত আদায় করা সম্ভব না হওয়ার কারণে যদি তা (একাকী) কাযা করা মুস্তাহাব হয়ে থাকে তাহলে যদি কোথাও ঈদের সালাত আদৌ কায়েম করা না হয় তাহলে আরও যৌক্তিক ভাবে তা (একাকী/আলাদাভাবে) কায়েম করা বৈধ হবে।

    কারণ এতে ‘সাধ্যানুযায়ী’ ইসলামের এই নিদর্শনটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয়। আল্লাহ বলেনঃ

    “তোমরা সাধ্যমতো আল্লাহকে ভয় করো।” আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম বলেছেন, “আমি যখন তোমাদেরকে কোন বিষয়ে আদেশ করি তখন তোমরা সাধ্য অনুযায়ী তা বাস্তবায়ন করবে।”

    সৌদি আরবের ধর্ম মন্ত্রণালয় সবাইকে এই বরকতময় দিনগুলোতে বেশি পরিমাণে দুআ, ইস্তেগফার, মহান আল্লাহর দরবারে আরাধনা করার আহ্বান জানিয়েছেন যেন, মহান আল্লাহ খাদেমুল হারামাইন শরীফাইন (দু হারামের সেবক) ও সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্সকে হেফাজত করেন, তাদেরকে সুস্থতা ও নিরাপত্তা দান করেন এবং তাদেরকে সঠিকভাবে কথা ও কর্ম বাস্তবায়ন করার তৌফিক দান করেন।

    সেই সাথে আল্লাহ যেন তাদেরকে সৌদি আরব, তার সম্মানিত নাগরিকবৃন্দ, এ দেশে অবস্থানকারী প্রতিটি বিদেশি নাগরিক, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিম ও অন্যান্য জনগোষ্ঠীর উদ্দেশ্যে তাদের বিশাল মানবিক ও সেবামূলক কার্যক্রমের জন্য উত্তম বিনিময় দান করেন।

    তিনি যেন তাঁর মুসলিম বান্দাদের প্রতি এবং বিশ্বের জাতি-গোষ্ঠী নির্বিশেষ সকলের উপর দয়া করেন এবং বিশেষ করে আমাদের এই দেশ এবং সমগ্র পৃথিবী থেকে দ্রুত এই মহামারীকে উঠিয়ে নেন।
    Sourse: https://www.spa.gov.sa/2075735

    ▰▰▰▰▰◉◈◉▰▰▰▰▰
    অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব