Tag: ওজু

  • সুতা-কাপড়ের তৈরি মোজার উপর মাসেহ

    সুতা-কাপড়ের তৈরি মোজার উপর মাসেহ

    প্রশ্নঃ সুতা বা কাপড়ের তৈরী মোজার উপরে মাসেহ করা কি বৈধ্য হবে? নাকি শুধু চামড়ার তৈরী মোজার উপরেই মাসেহ করা যাবে? বিস্তারিত জানতে চাই

    উত্তরঃ মোজার উপর মাসেহ করা জায়েয় চাই তা চামড়ার তৈরি হোক বা সুতার তৈরি হোক। সাহাবীগণ অনেকেই কাপড়ের তৈরি মোজা পরিধান করতেন আর তার উপর মাসেহ করতেন।

    উল্লেখ্য যে, আরবিতে চামড়ার তৈরি মোজাকে ‘খুফ’ আর সুতার তৈরি মোজাকে ‘জাওরাব’ বলা হয়। উভয় প্রকার মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ।

    চামড়ার মোজার উপর মাসেহ করা সর্ব সম্মতিক্রমে বৈধ। তবে সুতার তেরি মোজার উপর মাসেহ করা বৈধ কি না- এ বিষয়ে দ্বিমত থাকলেও সঠিক মত হল, জায়েজ।

    মাসেহ করার বিষয়ে বিস্তারিতঃ

    সাধারণভাবে সকল ধরণের জাওরাব (সুতার তৈরি মোজা) এর উপর মাসাহ বৈধ, এমনকি যদি তা খুব পাতলা হয় তবুও: এটাই ইবনে হাযম ও ইবনে তাইমিয়ার স্পষ্ট অভিমত। আর এ মতকেই ইবনে উসাইমীন ও আল্লামা শানক্বীতী পছন্দ করেছেন। এটাই অধিক প্রাধান্য প্রাপ্ত মত।

    [আল-মুহাল্লাহ (২/৮৬), আল-মাসায়িলুল মারদিনিয়্যাহ (৫৮ পৃ.), মাজমূ’ আল-ফাতাওয়া (২১/১৮৪), আল-মুমতি’ (১/১৯০), আযওয়াউল বায়ান (২/১৮, ১৯), এখানে এ বিষয়ে মূল্যবান আলোচনা রয়েছে।]

    এখানে জাওরাবের উপর মাসেহ বৈধ মর্মে বর্ণিত শেষ দু‘টি অভিমতের প্রবক্তাগণ নিম্নোক্ত দলীল গুলোকে দলীল হিসাবে দাঁড় করান। যথা:

    عَنِ الْمُغِيرَةِ بْنِ شُعْبَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ تَوَضَّأَ وَمَسَحَ عَلَى الْجَوْرَبَيْنِ، وَالنَّعْلَيْنِ

    ■ (১) মুগীরা বিন শোবা (রাঃ) বর্ণিত হাদীস: ‘নিশ্চয় রাসূল (ﷺ) একবার ওযূ করলেন এবং জাওরাব ও দু জুতার উপর মাসাহ করলেন।

    এ হাদিসকে আলবানী সহীহ বলেছেন, আবু দাউদ (১৫৯), তিরমিযী (৯৯), আহমদ (৪/২৫২), এ ব্যাপারে বিস্তারিত ‘আল-ইরওয়া (১০১)-দ্রষ্টব্য।

    عَنِ الأزرق بن قيس قال رأيت أنس بن مالك أحدث فغسل وجهه ويديه ومسح برأسه ، ومسح على جوربين من صوف فقلت : أتمسح عليهما ؟ فقال : إنهما خفان ولكنهما من صوف

    ■ (২) আয়রাক্ব ইবনে কায়েস (রাঃ) থেকে বর্ণিত: তিনি বলেন, আমি আনাস ইবনে মালিককে লক্ষ্য করেছি, তিনি বায়ু নিঃসরণ হলে তাঁর চেহারা ও দুহাত ধৌত করতেন এবং পশমের তৈরি জাওরাবের উপর মাসাহ করতেন। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি জাওরাবের উপর মাসাহ করলেন? তিনি বললেন, এ দু’টি মোজা যা পশমের তৈরি।

    এ হাদিসকে আহমদ শাকির সহীহ বলেছেন; আলকূনী (১/১৮১) দাওলাবী প্রণীত।

    এখানে আনাস রা. খুফ বা মোজা চামড়ার তৈরি হওয়ার ব্যাপারে আম (ব্যাপক), সে কথা স্পষ্ট করেছেন। উল্লেখ্য যে, তিনি আরবি ভাষাবিদদের অন্যতম একজন সাহাবী ছিলেন।

    ■ (৩) জাওরাবের উপর মাসাহ করার হাদীস ১১ জন সাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে। যাদের মধ্যে উমর তাঁর ছেলে আবদুল্লাহ বিন উমর, আলী, ইবনে মাসউদ আনাস (রা.) প্রমুখ সাহাবী অন্যতম। তাদের সমসাময়িক কোন সাহাবী তাদের বিরোধিতা করেন নি। বরং সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

    পরবর্তীতে জমহুর উলামা পাতলা জাওরাবের উপর মাসেহ করতে নিষেধ করেছেন। কেননা তা দ্বারা ফরযের স্থান আচ্ছাদিত হয় না। অথচ এটা মাসেহ বৈধ হওয়ার জন্য শর্ত নয় যা ইতিপূর্বে আলোচনা হয়েছে।

    এ বিষয়ে যা মনে রাখা প্রয়োজনঃ

    এখানে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মনে রাখা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তাআলা মোজার উপর মাসেহ করার বিধান দিয়েছেন দ্বীন পালনকে সহজকরণার্থে। যেমন আল্লাহ বলেন:

    مَا يُرِيدُ اللَّـهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـٰكِن يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ وَلِيُتِمَّ نِعْمَتَهُ عَلَيْكُمْ لَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ 

    “আল্লাহ তোমাদেরকে অসুবিধায় ফেলতে চান না; কিন্তু তোমাদেরকে পবিত্র রাখতে চান এবং তোমাদের প্রতি স্বীয় নেয়ামত পূর্ণ করতে চান-যাতে তোমরা কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ কর।”

    সূরা মায়িদাহ: ৬

    আর এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, চামড়ার তৈরি মোজার বার বার খুলে পরিধান করতে যেমন মানুষের সমস্যা হয় তেমনি কাপড়ের তৈরি মোজাও বারবার খুলে পরতে সমস্যা হয়। 

    আরও পড়ুনঃ হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে কি ওজু ভেঙ্গে যায়?

    সুতরাং চামড়ার তৈরি মোজা মাসেহ করার শর্তারোপ করা আল্লাহর বিধানের মূল উদ্দেশ্য পরিপন্থী কাজ করা। এই শর্তারোপ করা ইসলাম প্রদত্ত প্রশস্ত বিধানকে সংকুচিত করে দেয়ার শামিল। (আল্লাহু আলাম)
    (আংশিক সংগৃহীত ও পরিমার্জিত)

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • ওজু ছাড়া আজান দেওয়া ও একটি কুসংস্কার

    ওজু ছাড়া আজান দেওয়া ও একটি কুসংস্কার

    প্রশ্ন: ওজু ছাড়া কি মসজিদে আজান দেওয়া জায়েজ? আর ‘ওজু ছাড়া আজান দিলে সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে’ কথাটা কতটুকু সত্য?

    উত্তরঃ নিম্নে এ দুটি প্রশ্নের উত্তর প্রদান করা হল:

    ওজু ছাড়া আজান দেওয়া

    ইসলামে আজান দেয়ার জন্য পবিত্রতা শর্ত করা হয় নি। সুতরাং ওজু ছাড়া আজান দেওয়ায় কোন আপত্তি নাই। তবে পাক-পবিত্র অবস্থায় আজান দেয়া উত্তম তাতে কোন সন্দেহ নাই।

    এ ব্যাপারে পূর্বসূরি ও আধুনিক যুগের কতিপয় আলেমের বক্তব্য তুলে ধরা হল:

    ইবরাহীম নাখায়ী রহঃ (জন্ম: ৪৭, মৃত্যু: ৯৬ হিজরি) বলেন,

    لاَ بَأْسَ أَنْ يُؤَذِّنَ عَلَى غَيْرِ وُضُوءٍ

    “অজু ছাড়া আজান দেওয়ায় কোন অসুবিধা নেই।”

    (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা/ ২২০২)

    কাতাদা, আব্দুর রহমান বিন আওয়াদ, হাম্মাদ প্রমুখ মনিষীগণ বলেন,

    لَا بَأْس أَن يُؤذن الرجل وَهُوَ على غير وضوء

    “কোন ব্যক্তি যদি অজু ছাড়া আজান দেয় তাহলে তাতে কোন অসুবিধা নাই।”

    (সহিহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ উমদাতুল কারী, অধ্যায়: আজান)

    হানাফি মাজহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহের কিতাব হেদায়ার গ্রন্থকার বলেন,

    وَيَنْبَغِي أَن يُؤذن وَيُقِيم على طهر، لِأَن الْأَذَان وَالْإِقَامَة ذكر شرِيف، فَيُسْتَحَب فِيهِ الطَّهَارَة، فَإِن أذن على غير وضوء جَازَ،

    “পবিত্র অবস্থায় আজান ও একামত দেয়া উচিৎ। কেননা আজান-একামত মর্যাদাপূর্ণ জিকির। তাই এ ক্ষেত্রে পবিত্রতা মোস্তাহাব। তবে ওজু ছাড়া আজান দেয়াও জায়েজ।”

    (সহিহ বুখারীর ভাষ্য গ্রন্থ উমদাতুল কারী, অধ্যায়: আজান)

    শাইখ আব্দুল্লাহ বিন বাজ রহঃ বলেন,

    <الأذان ليس من شرطه الوضوء، إذا أذن وهو على غير وضوء أجزأ حتى ولو كان على جنابة ليس قرآن هو، الأذان ليس بقرآن إنما هو ذكر، والنبي عليه السلام كان يذكر الله على كل أحيانه.
    فالمسلم يذكر الله دائمًا حتى ولو كان على جنابة يذكر الله، حتى الحائض تذكر الله، والنفساء تذكر الله. والأذان من ذكر الله، فإذا أذن وهو على جنابة أو أذن وهو على غير وضوء فأذانه صحيح، لكن الأفضل أن يكون على طهارة، هذا هو الأفضل

    “ওজু থাকা আজানের শর্ত নয়। কেউ যদি ওজু ছাড়াও আজান দেয় তাহলেও যথেষ্ট হবে-এমনকি গোসল ফরজ থাকা অবস্থায়ও। আজান কুরআন নয় বরং তা হল, আল্লাহর জিকির। আর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতেন। একজন মুসলিম সর্বাবস্থায় আল্লাহর জিকির করতে পারে যদিও নাপাক অবস্থায় থাকে। এমনকি ঋতুমতী ও প্রসূতি মহিলাও আল্লাহর জিকির করতে পারে। আর আজান আল্লাহর জিকিরের অন্তর্ভুক্ত।


    সুতরাং নাপাক অবস্থায় আজান দিলে অথবা ওজু ছাড়া আজান দিলে আজান সহিহ হবে। কিন্তু উত্তম হল, পবিত্র অবস্থায় আজান দেয়া। এটাই উত্তম।” (শাইখ বিন বাজ রহ. এর অফিসিয়াল ওয়েব সাইট)
    এ ছাড়াও পূর্ববর্তী এবং আধুনিক যুগের বহু আলেম এ ব্যাপারে ফতোয়া প্রদান করেছেন।

    ওজু ছাড়া আজান দিলে সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসে’ এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ এ কথা সঠিক নয়। ওজু ছাড়া আজান দেওয়া হলে যদি সংসারে দুর্ভিক্ষ নেমে আসত তাহলে হাদিসে অবশ্যই তা নিষেধ করা হত অথচ কোন হাদিসে এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আসে নি। সুতরাং এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, এটা সম্পূর্ণ বাতিল ও কুসংস্কার পূর্ণ কথা। আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ একামত এর সময় মুয়াজ্জিনের অবস্থান

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে কি ওজু ভেঙ্গে যায়?

    হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে কি ওজু ভেঙ্গে যায়?

    প্রশ্নঃ আমি ওজু করবার সময় বা অজু করবার পরে কোন ভাবে হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে আমার ওজু কি ভেঙ্গে যাবে?

    উত্তরঃ আমাদের সমাজের লোকদের মাঝে প্রচলিত রয়েছে যে, হাঁটুর উপরে কাপড় উঠলে ওযু ভেঙ্গে যাবে। কিন্তু এ ধারণাটি শরীয়তের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ অমূলক। বরং সঠিক কথা হল, হাঁটুর উপর কাপড় থাকা অবস্থায় অযু করলে তা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ।

    ধারণাটি অমূলক কেন?

    কেননা ওযু শুদ্ধ হওয়ার জন্য সতর ঢাকা শর্ত নয়। আর ওযুর পর হাঁটুর উপর কাপড় উঠে গেলেও অযু নষ্ট হবে না ইনশাআল্লাহ। কেননা, এটি ওযু ভঙ্গের কারণ সমূহের মধ্যে কোন কারণ নয়।

    তবে ওযু করার সময় বা ওযু করার পর বিনা প্রয়োজনে হাঁটুর উপর কাপড় না উঠানোই উত্তম। ইমাম মালেক রহ. এটিকে অপছন্দনীয় মনে করতেন।

    উল্লেখ্য যে, পুরুষের নামায শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত হল, সর্ব নিম্ন দু কাঁধ ঢাকার পাশাপাশি নাভি থেকে হাঁটু পর্যন্ত ঢাকা। সুতরাং হাঁটু ঢাকা নামাযের জন্য শর্ত; ওযুর জন্য নয়।

    আল্লাহু আলাম।

    আরও পড়ুনঃ গোসল সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    দাঈ, জুবাইল, সৌদি আরব

    আমাদের সাথে থাকুনঃ