Tag: রোজা

  • সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?

    সেহরি না খেলে কি রোজা হবে?

    প্রশ্নঃ সেহরি না খেলে কি রোজা হবে? সেহরি কি রোজা রাখার শর্ত?

    উত্তরঃ সেহরি না খেলেও রোযা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে তা পরিত্যাগ করা উচিৎ নয়। কেননা রোজা রাখার জন্য সেহরি খাওয়া সুন্নত (সুন্নতে মুআক্কাদা বা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত)। কেউ ইচ্ছাকৃত ভাবে তা বাদ দিলে সুন্নত পালনের সওয়াব থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আল্লাহর দেওয়া বিশেষ বরকত থেকেও বঞ্চিত হবে।

    তাছাড়া সাধারণত: পেটে অতিরিক্ত ক্ষুধা থাকলে দুনিয়াবি কাজ-কর্ম ও ইবাদত-বন্দেগিতে ক্লান্তি ও দুর্বলতা অনুভূত হয় এবং মনে উদোম ও স্প্রীহা কমে যায়। পক্ষান্তরে সেহরি খেলে শরীরে শক্তি ও উদোম বজায় থাকে এবং ইবাদত-বন্দেগি সহ সব কিছুতে পর্যাপ্ত শক্তি ও আনন্দ পাওয়া যায়।

    তাই তো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেহরি খাওয়ার জন্য তার উম্মতকে উৎসাহিত করেছেন এবং তা বাদ দিতে নিষেধ করেছেন। যেমন:

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً 

    “তোমরা সেহরি খাও, কারণ সেহরিতে বরকত রয়েছে।”

    বুখারি ও মুসলিম

    তিনি আরও বলেন:

    السُّحَوُرُ كُلَّهُ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ, وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُم جَرْعَةً مِنْ مَاءٍ, فَإِنَّ اللَّهَ –عَزَّ وَجَلَّ- وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى المُتَسَحِّرِينَ

    “সেহরি খাওয়ায় বরকত রয়েছে। তাই তা তোমরা ছেড়ে দিয়ো না। এক ঢোক পানি দ্বারা হলেও সেহরি করে নাও। কেননা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ও ফেরেশতাগণ সেহরিতে অংশ গ্রহণকারীদের জন্য দোয়া করে থাকেন।”

    মুসনাদে আহমদ, ইমাম মুনযেরী বলেন: এর সনদ শক্তিশালী-হাসান লি গাইরিহ

    তিনি আরও বলেন:

    ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭْﺍ ﻭُﻟَﻮْ ﺑِﺠُﺮْﻋَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ

    “সেহরি গ্রহণ করো যদিও এক ঢোক পানি দিয়েও হয়।”

    সহিহ ইবনে হিব্বান

    তিনি আরও বলেন,

    ﺇِﻧَّﻬَﺎ ﺑَﺮَﻛَﺔٌ ﺃَﻋْﻄَﺎﻛُﻢُ ﺍﻟﻠﻪُ ﺇِﻳَّﺎﻫَﺎ ﻓَﻼَ ﺗَﺪَﻋُﻮْﻩُ

    “‘নিশ্চয় সেহরি বরকত পূর্ণ যা আল্লাহ তাআলা তোমাদেরকে বিশেষভাবে দান করেছেন। অতএব তোমরা তা পরিত্যাগ করো না।”

    সহিহ নাসাঈ হা/২১৬১

    অন্য হাদিসে এসেছে:

    عَنْ عَمْرِو بْنِ الْعَاصِ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَصْلُ مَا بَيْنَ صِيَامِنَا وَصِيَامِ أَهْلِ الْكِتَابِ أَكْلَةُ السَّحَرِ

    আমর ইবনুল আস রা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমাদের এবং আহলে কিতাব (ইহুদি-খৃষ্টানদের) রোজার মধ্যে পার্থক্য হল, সেহরি খাওয়া।” (অর্থাৎ তারা সেহরি খায় না আর আমরা খাই।)

    এ সব হাদিস থেকে ভোররাতে সেহরি খাওয়ার গুরুত্ব স্পষ্টভাবে প্রতিভাত হয়। তবে কেউ যদি ঘুম থেকে উঠতে না পারার কারণে অথবা অন্য কোন কারণে সেহরি খেতে না পারে তাহলে না খেয়েই রোজা থাকতে হবে। এতে রোজার কোন ক্ষতি হবে না ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ আলাম।
    ————————-

    সম্পূরক প্রশ্নঃ নফল অথবা ফরজ রোজা রাখার উদ্দেশ্যে যদি রাত ১২/১টার দিকে সেহরি খেয়ে শুয়ে পড়ি আর ভোর রাতে খেতে না উঠি তাহলে কি রোজা হবে?

    উত্তরঃ যদি রোজা রাখার নিয়তে রাত ১২টা/১টার দিকে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়েন আর ভোর রাতে কিছু না খান তাহলেও রোজা শুদ্ধ হবে ইনশাআল্লাহ। তবে ইচ্ছাকৃত ভাবে এমনটি না করাই ভালো।

    সবচেয়ে উত্তম হল, ভোর রাতে উঠে এক ঢোক পানি হলেও পান করা। (মূলত: ভোর রাতের খাবারকে সেহরি বা সাহুর বলা হয়। রাতের প্রথমাংশ বা মধ্যরাতের খাবারকে নয়)

    হাদিসে সেহরি খেতে যথেষ্টে উৎসাহিত করা হয়েছে। কারণ তাতে বরকত আছে। যেমন: 

    রাসূল সাল্লাল্লাহ আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

    «السَّحُورُ أَكْلُهُ بَرَكَةٌ فَلَا تَدَعُوهُ وَلَوْ أَنْ يَجْرَعَ أَحَدُكُمْ جُرْعَةً مِنْ مَاءٍ فَإِنَّ اللَّهَ عَزَّ وَجَلَّ وَمَلَائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى الْمُتَسَحِّرِينَ»

    “সেহরি খাওয়া বরকতপূর্ণ। সুতরাং তা পরিত্যাগ করো না যদিও এক ঢোক পানি পান করে হয়। কারণ আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ সাহরি ভক্ষণকারীর ওপর রহমতের দুআ করেন।”

    আহমদ: ৩/১২। সহিহুত তারগিব, হাসান লি গাইরিহ, হা/১০৭০

    তিনি আরও বলেন:

    ﺗَﺴَﺤَّﺮُﻭْﺍ ﻭُﻟَﻮْ ﺑِﺠُﺮْﻋَﺔٍ ﻣِﻦْ ﻣَﺎﺀٍ

    “সেহরি গ্রহণ যদিও এক ঢোক পানি দিয়ে হয়।”

    সহিহ ইবনে হিব্বান

    তিনি আরও বলেন, 

    البَرَكَةُ فِي ثَلَاثَةٍ؛ فِي الجَمَاعَةِ وَالثَّرِيدِ وَالسُّحُورِ

    “তিনটি বস্তুতে বরকত রয়েছে: জামাআতে (সংঘবদ্ধ জীবন) সারীদ (গোস্তের ঝোল বা গোস্তের সাথে রুটির সংমিশ্রণে বিশেষ এক প্রকার আরবিয় খাদ্য) এবং সেহরিতে’।  

    সহীহুল জামে হা/২৮৮২

    অন্য বর্ণনায় এসেছে:

    ﺇِﻥَّ ﺍﻟﻠﻪَ ﺟَﻌَﻞَ ﺍﻟْﺒَﺮَﻛَﺔَ ﻓِﻲ ﺍﻟﺴَّﺤُﻮْﺭِ 

    “‘নিশ্চয় আল্লাহ সেহরিতে রবকত দিয়েছেন।”

    সিলসিলা সহিহাহ হা/১২৯১

    এ বিষয়ে আরও হাদিস রয়েছে।

    তাই সুন্নত পালনার্থে পেটে ক্ষুধা না থাকলেও ভোররাতে সেহরির নিয়তে এক গ্লাস পানি, কয়েকটি খেজুর, ফল, বিস্কুট ইত্যাদি যা কিছু সম্ভব হয় ভক্ষণ করা উচিত।
    আল্লাহ তওফিক দান করুন। আমীন।

    আরও পড়ুনঃ সেহরি খাওয়ার পূর্বে নিয়ত মুখে উচ্চারণ করার বিধান কি?

    আল্লাহু আলাম

    (দয়া করে, কেউ সেহরি আর সাহরি নিয়ে বিতর্ক করতে আসবেন না। বাংলা ভাষা-সাহিত্যে প্রচলিত ও সর্বসাধারণের নিকট সুপরিচিত শব্দ ‘সেহরি’ ব্যবহার করাকেই অধিক সঠিক মনে করি)

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।


  • শাবান মাসে নফল রোযা রাখা (সিয়াম)

    শাবান মাসে নফল রোযা রাখা (সিয়াম)

    শাবান মাসে নফল রোযা রাখা সম্পর্কে অনেক সহিহ হাদিস বর্ণিত হয়েছে। নিন্মে এ সম্পর্কিত ৪টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস তুলে ধরা হলঃ

    ১) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم يصوم حتى نقولَ: لا يُفطر، ويُفطر حتى نقول: لا يَصوم، فما رأيتُ رسول الله صلَّى الله عليه وسلَّم استكملَ صِيامَ شهرٍ إلاَّ رمضان، وما رأيتُه أكثرَ صيامًا منه في شعبان” (متفق عليه)

    রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যখন (নফল) রোযা রাখতে শুরু করতেন তখন আমরা বলতাম যে তিনি রোযা রাখা আর বাদ দিবেন না। আবার যখন রোযা বাদ দিতেন তখন আমরা বলতাম তিনি আর রোযা করবেন না। তবে তাঁকে রমাযান ছাড়া পরিপূর্ণভাবে অন্য কোন মাসে রোযা রাখতে দেখিনি এবং শাবান মাসের চেয়ে অন্য কোন মাসে এত বেশি রোযা রাখতে দেখিনি।”

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।

    ২) আয়েশা (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    « لَمْ يَكُنْ النَّبِيُّ -صلى الله عليه وسلم- يَصُومُ شَهْرًا أَكْثَرَ مِنْ شَعْبَانَ، فَإِنَّهُ كَانَ يَصُومُ شَعْبَانَ كُلَّهُ، وَكَانَ يَقُولُ: خُذُوا مِنْ الْعَمَلِ مَا تُطِيقُونَ فَإِنَّ اللَّهَ لا يَمَلُّ حَتَّى تَمَلُّوا، وَأَحَبُّ الصَّلاةِ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- مَا دُووِمَ عَلَيْهِ وَإِنْ قَلَّتْ، وَكَانَ إِذَا صَلَّى صَلاةً دَاوَمَ عَلَيْهَا»

    নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের চেয়ে অধিক রোযা আর কোন মাসে রাখতেন না। তিনি (প্রায়) পুরো শাবান মাস রোযা রাখতেন। তিনি বলতেন: “তোমরা এমন আমল গ্রহণ কর যা তোমাদের সাধ্যের মধ্যে থাকে। কারণ, আল্লাহ তাআলা বিরক্ত হন না যতক্ষণ না তোমরা বিরক্ত হও। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর নিকট এমন নামাযই পছন্দনীয় যা নিয়মিতভাবে আদায় করা হয় যদিও তা স্বল্প হয়। তাঁর নিয়ম ছিল, যখন তিনি কোন নামায পড়তেন নিয়মিতভাবে তা পড়তেন।

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম।

    ৩) উসামা বিন যায়দ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    আমি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রসূল, আপনাকে শাবান মাসে যে পরিমাণ রোযা পালন করতে দেখি অন্য মাসে তা দেখি না। এর কারণ কী? তিনি বললেন:

    ذاكَ شهرٌ يغفلُ الناسُ عنهُ بينَ رجبَ ورمضانَ وهو شهرٌ يُرفعُ فيهِ الأعمالُ إلى ربِّ العالمينَ فأُحِبُّ أن يُرفعَ عملي وأنا صائمٌ

    “রজব এবং রমাযানে মধ্যবর্তী এ মাস (শাবান মাস) সম্পর্কে মানুষ উদাসীন থাকে। অথচ (এটি এত গুরুত্বপূর্ণ মাস যে,) এ মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের দরবারে মানুষের আমল সমূহ উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। আমি চাই, রোযা অবস্থায় আমার আমল উঠানো হোক।”

    মুসনাদ আহমদ ৫ম খণ্ড ২০১ পৃষ্ঠা। সুনান নাসাঈ, কিতাবুস সিয়াম। আলবানী রা. বলেন, এ সনদটি হাসান। দ্র: সিলসিলাতুল আহাদীস আস সাহীহাহ্‌। হাদিস নং ১৮৯৮।

    ৪) কারো যদি রমাযানের রোযা ছুটে যায় তবে সে তা শাবান মাসে কাযা করে নিতে পারে। যেমন: আবু সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,

    আমি আয়েশা (রা.) কে বলতে শুনেছি,

    كَانَ يَكُونُ عَلَيَّ الصَّوْمُ مِنْ رَمَضَانَ ، فَمَا أَسْتَطِيعُ أَنْ أَقْضِيَهُ إِلا فِي شَعْبَانَ

    আমার রমাযানের কিছু রোযা বাকি থাকত। সেগুলো আমি শাবান ছাড়া কাযা করতে পারতাম না।[4] অর্থাৎ আয়েশা (রা:) গত রমাযানের ছুটে যাওয়া ফরজ রোযাগুলো শাবান মাসে কাযা করতেন।

    বুখারি, কিতাবুস্‌ সাওম। মুসলিম, কিতাবুস সিয়াম। ইয়াহয়া বলেন: এর কারণ ছিল তিনি রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেবায় ব্যস্ত থাকতেন।(আল বিদা’ আল হাওলিয়া গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত)

    আরও পড়ুনঃ শবে বারাত এর ইবাদত

    মহান আল্লাহ আমাদেরকে শাবান মাসে অধিক পরিমাণে নফল রোযা রাখার তওফিক দান করুন। আমীন।

    অনুবাদ ও গ্রন্থনায়:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ-রোজা ও ইবাদতের ভিত্তি কতটুকু?

    শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ-রোজা ও ইবাদতের ভিত্তি কতটুকু?

    প্রশ্নঃ ইসলামি শরিয়তে ‘শবে মেরাজ’ উপলক্ষে বিশেষ নামাজ-রোজা ও ইবাদত-বন্দেগির ভিত্তি কতটুকু?

    উত্তরঃ নিম্নে এ বিষয়ে অতিসংক্ষপে আলোকপাত করা হল। তৎসঙ্গে এ সময়ের সাড়া জাগানো কয়েকজন বাংলাভাষী শাইখদের বক্তব্যও উপস্থাপন করা হল।

    শবে মেরাজ উপলক্ষে বিশেষ কোন নামাজ, রোজা, মিলাদ মাহফিল, আলোচনা সভা, লোকজন জমায়েত, ভোজ অনুষ্ঠান, কুরআন তিলাওয়াত, কুরআন খতম, শব বেদারি (নিশী জাগরণ), দুআ মাহফিল, হালকায়ে জিকির, নাতে রাসূল ও ইসলামি গজল সন্ধ্যা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, মসজিদ ইত্যাদি আলোকসজ্জা করা ইত্যাদি কোন কিছুই করা শরিয়ত সম্মত নয়।

    কারণ হাদিসে এ মর্মে কোন কিছুই আসেনি। সাহাবায়ে কেরাম কখনো এ উপলক্ষে কোনও আয়োজন-অনুষ্ঠান, রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগি ইত্যাদি করেছেন বলে হাদিসের কিতাবগুলো প্রমাণ করছে না।

    ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়া রহ. বলেন,

    قال شيخ الإسلام ابن تيمية – رحمه الله -: ولا يعرف عن أحد من المسلمين أن جعل لليلة الإسراء فضيلة على غيرها، لاسيما على ليلة القدر، ولا كان الصحابة والتابعون لهم بإحسان يقصدون تخصيص ليلة الإسراء بأمر من الأمور ولا يذكرونها، ولهذا لا يعرف أي ليلة كانت

    “ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন, পূর্ববর্তী যুগে এমন কোন মুসলিম পাওয়া যাবে না যে, শবে মেরাজকে অন্য কোন রাতের উপর মর্যাদা দিয়েছে। বিশেষ করে শবে কদরের চেয়ে উত্তম মনে করেছে এমন কেউ ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবেঈনগণ এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন কিছু করতেন না এমনকি তা আলাদাভাবে স্মরণও করতেন না। যার কারণে জানাও যায় না যে, সে রাতটি কোনটি।”

    [উৎস: আল বিদা’ আল হাওলিয়া পৃষ্ঠা ২৭৪]

    ইবনুল হাজ্জ বলেন,

    ومن البدع التي أحدثوها فيه أعني في شهر رجب ليلة السابع والعشرين منه التي هي ليلة المعراج

    “রজব মাসে যে সকল বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে সগুলোর মধ্যে সাতাইশ তারিখের লাইলাতুল মেরাজ (শবে মেরাজ) অন্যতম।”

    [আল মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা]

    আরও বিস্তারিত পড়ুনঃ

    শাইখদের আলোচনা শুনুনঃ

    শবে মেরাজ পালন করা কেন বিদআত? শাইখ মতিউর রহমান মাদানি

    শবে মেরাজ উপলক্ষে কি রোজা রাখা যাবে? শায়খ মতিউর রহমান মাদানি

    শবে মেরাজ শবে বরাতের বিশেষ কোন নামাজ আছে কি?‌ শাইখ ড. আবু বকর মোহাম্মাদ জাকারিয়া

    শবে বরাতের নামাজ ও রোজা রাখলে অসুবিধা কি? শাইখ ড. আবু বকর মোহাম্মাদ জাকারিয়া

    শবে মেরাজ সম্পর্কে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো কি? ড. ইমাম হোসেন।

    শবে মিরাজ নিয়ে প্রচলিত কিছু জাল হাদিস: ড. ইমাম হোসেন।

    মোটকথা, আমাদের দেশে কথিত শবে মেরাজ উপলক্ষে ঘটা করে যে সব কার্যক্রম করা হয় তা দীনের মধ্যে নবসৃষ্ট বিদআত। আর বিদআত মানেই ভ্রষ্টতা। ভ্রষ্টতা মানেই জাহান্নামের পথ।

    সুতরাং প্রতিটি মুসলিমের জন্য দীনের মধ্যে নব আবিস্কৃত সকল বিদআতি কার্যক্রম থেকে দূরে থাকা ফরজ।

    আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন। আমিন।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

    রজব মাস সম্পর্কে কতিপয় জাল ও যঈফ হাদিস

    রজব মাস সম্পর্কে আমাদের সমাজে লোকমুখে, ইন্টারনেটে বা বিভিন্ন ইসলামিক বই -পুস্তকে অনেক হাদিস প্রচলিত রয়েছে। সেগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস মুহাদ্দিসদের মানদণ্ডে সহীহ নয় আর কিছু হাদীস রয়েছে সম্পূর্ণ ভিত্তিঋহীন ও বানোয়াট। এধণের কতিপয় হাদিস সম্পর্কে নিম্নে পর্যালোচনা পেশ করা হলোঃ

    🚫 ক. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি দুর্বল হাদীস:

    ● ১) “জান্নাতে একটি নহর আছে যাকে বলা হয় রজব। যার পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়েও মিষ্টি। যে ব্যক্তি রজব মাসে একদিন রোযা রাখবে তাকে সেই নহরের পানি পান করতে দেয়া হবে।”

    ইবনে হাজার রহ. বলেন: হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, আবুল কাসেম আত তাইমী তার আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে, হাফেয আসপাহানী ফাযলুস সিয়াম কিতাবে, বাইহাকী, ফাযায়েলুল আওকাত কিতাবে, ইবনু শাহীন আত তারগীব ওয়াত তারহীব কিতাবে।

    এ হাদীসটি দুর্বল। ইবনুল জাওযী ইলালুল মুতানাহিয়া গ্রন্থে বলেন: এ হাদীসের বর্ণনা সূত্রে একাধিক অজ্ঞাত রাবী রয়েছে। তাই এ হাদীসের সনদ দুর্বল। তবে বানোয়াট বলার মত পরিস্থিতি নেই। এর আরও কয়েকটি সূত্র রয়েছে কিন্তু সেগুলোতেও একাধিক অজ্ঞাত বর্ণনাকারী রয়েছে। [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব (পৃষ্ঠা নং ৯, ১০ ও ১১), আল ইলালুল মুতানাহিয়া, (২য় খণ্ড, ৬৫ পৃষ্ঠা)।]

    ● ২) “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবানা ও বাল্লিগনা রামাযান।”

    “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রামাযান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।” (মুসনাদ আহমাদ ১/২৫৯)

    হাদীসটি দুর্বল।

    এ হাদীসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারী রহ. বলেন: মুনকারুল হাদীস। ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদীস বর্ণনা করার পর বলেন: চিনি না এই ব্যক্তি কে? আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন: মুনকারুল হাদীস। কুনা গ্রন্থে বলেন: “তিনি নির্ভরযোগ্য নন। ইবনে হিব্বান বলেন: তার বর্ণিত কোন হাদীসকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না। দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)

    ● ৩) “রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের পরে রজব ও শাবান ছাড়া অন্য কোন মাসে রোযা রাখেন নি।” (বাইহাকী)

    হাফেয ইবনে হাজার বলেন: উক্ত হাদীসটি মুনকার। কারণে, এর সনদের ইউসুফ বিন আতিয়া নামক একজন রাবী রয়েছে। সে খুব দূর্বল। (তাবয়ীনুল আজাব ১২ পৃষ্ঠা)

    🚫 খ. রজব মাস সম্পর্কে কয়েকটি জাল হাদীস:

    ● ১) রজব আল্লাহর মাস, শাবান আমার মাস এবং রামাযান আমার উম্মতের মাস।”

    এটি জাল হাদীস।

    হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন, উক্ত হাদীসটি বর্ণনাকারীদের মধ্যে আবু বকর আন নাক্কাশ নামে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে। সে কুরআনের মুফাসসির। কিন্তু লোকটি জাল হাদীস রচনাকারী এবং চরম মিথ্যাবাদী দাজ্জাল। ইবনে দেহিয়া বলেন: এই হাদীসটি জাল। (তাবয়ীনুল আজব, ১৩-১৫ পৃষ্ঠা) এছাড়াও উক্ত হাদীসকে জাল বলে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী তার আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৫-২০৬) এবং ইমাম সানয়ানী মাওযূআত কিতাবে (৬১ পৃষ্ঠা) এবং সূয়ূতী তার আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৪)।

    ● ২) কুরআনের মর্যাদা সকল যিকির-আযকারের উপর যেমন রজব মাসের মর্যাদা অন্যান্য মাসের উপর তেমন।”

    হাদীসটি বানোয়াট।

    ইবনে হাজার আসকালানী উক্ত হাদীসটি বর্ণনা করার পর বলেন, এই হাদীসটি সনদের রাবীগণ সবাই নির্ভরযোগ্য একজন ছাড়া। তার নাম হল, সিকতী। আর এ লোকটিই হল বিপদ। কেননা, সে একজন বিখ্যাত জাল হাদীস রচনাকারী। (তাবয়ীনুল আজাব: ১৭ পৃষ্ঠা)

    ● ৩) রজব মাসে যে ব্যক্তি তিনটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার আমলনামায় একমাস রোযা রাখার সওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন, আর যে ব্যক্তি সাতটি রোযা রাখবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য জাহান্নামের সাতটি দরজা বন্ধ করে দিবেন।”

    হাদীসটি জাল।

    এটিকে জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/২০৬), সূয়ূতী আল লাআলী আল মাসনূআহ কিতাবে (২/১১৫), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (১০০ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২২৮) এবং তাবয়ীনুল আজাব কিতাবে (১৮ পৃষ্ঠা)।

    ● ৪) “যে ব্যক্তি রজবের প্রথম তারিখে মাগরিব নামায আদায় করত: বিশ রাকায়াত নামায পড়বে, প্রতি রাকায়াতে সূরা ফাতিহা এবং সূরা ইখলাস একবার করে পড়বে এবং প্রতি দু রাকায়াত পরপর সালাম ফিরিয়ে মোট দশ সালামে বিশ রাকায়াত পূর্ণ করবে তোমরা কি জানেন তার সওয়াব কি?…তিনি বলেন: আল্লাহ তায়ালা তাকে হেফাজত করবেন এবং তার পরিবার, সম্পত্তি ও সন্তান-সন্ততীকে হেফাজত করবেন, কবরের আযাব থেকে রক্ষা করবেন এবং বিনা হিসেব ও বিনা শাস্তিতে বিদ্যুৎ গতিতে পুলসিরাত পার করাবেন।”

    এটি একটি বানোয়াট হাদীস।

    (দ্রষ্টব্য: ইবনুল জাউযী তার মাওযূয়াত (২/১২৩), তাবয়ীনুল আজাব (২০ পৃষ্ঠা), আল ফাওয়াইদুল মাজমূয়াহ (৪৭পৃষ্ঠা, জাল হাদীস নং ১৪৪)।)

    ● ৫) “যে ব্যক্তি রজব মাসে রোযা রাখবে এবং চার রাকায়াত নামায পড়বে সে জান্নাতে তার নির্ধারিত আসন না দেখে মৃত্যু বরণ করবে না।”

    হাদীসটিকে জাল বলে আখ্যায়িত করেছেন ইবনু জাওযী আল মাওযূয়াত কিতাবে (২/১২৪), শাওকানী আল ফাওয়ায়েদুল মাজমুয়াহ কিতাবে (৪৭ পৃষ্ঠা) এবং তাবয়ীনুল আজাব, (২১ পৃষ্ঠা)।
    ▬▬▬ ◈◉◈▬▬▬
    مأخوذ من كتاب البدع الحولية
    ‘আলবিদা আল হাউলিয়া’ গ্রন্থ থেকে সংকলিত
    অনুবাদক: আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স,মদীনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার,সউদী আরব।

  • রমাযানে হায়েয হলে করণীয় ও বর্জনীয়

    রমাযানে হায়েয হলে করণীয় ও বর্জনীয়

    প্রশ্নঃ রমাযান মাসে যদি হায়েয হয়ে যায়, তাহলে কি কি করণীয়? এছাড়া কি কি থেকে দূরে থাকতে হবে?

    উত্তরঃ হায়েজ অবস্থায় একজন মহিলার জন্য বেশ কিছু কাজ বৈধ্য নয়। আবার বেশ কিছু কাজ বৈধ্য। সেগুলি রমাযান এবং রমাযানের বাহিরে একই।

    হায়েয অবস্থায় বৈধ নয় সেগুলো হলঃ

    🔹 একান্ত প্রয়োজন ছাড়া কুরআত তিলাওয়াত করা বা আবরণ ছাড়া কুরআন স্পর্ষ করা
    🔹 কাবা ঘর তাওয়াফ
    🔹 মসজিদে দীর্ঘ সময় অবস্থান করা
    🔹 স্বামীর সাথে সহবাস করা
    🔹 সালাত ও সিয়াম আদায় না করা
    🔹 পরর্বতীতে সালাত কাজা করার প্রয়োজন নাই তবে সিয়ামগুলো কাজা করা আবশ্যক।

    হায়েজ অবস্থায় বৈধ কাজ গুলিঃ

    এ ছাড়া যত প্রকার ইবাদত আছে সবই করা জায়েয আছে। যেমন: কুরআনের তাফসীর পড়া (তবে কুরআনে মূল টেক্সগুলো পড়া যাবে না), হাদীসের বই পড়া, ইসলামী বই-পুস্তক পড়া, ইসলামী জ্ঞানার্জন করা, কুরআন তিলাওয়াত শুনা, ইসলামী আলোচনা শুনা, দুআ ও যিকির সমূহ পাঠ করা।

    ব্যতিক্রমঃ

    এমন কি দুআ ও যিকির হিসেবে বা রুকিয়া (ঝাড়ফুঁক) এর প্রয়োজনে কুরআনের আয়াত ও সূরা (যেমন সূরা ইখলাস, ফালাক, নাস, আয়াতুল কুরসী ইত্যাদি) পড়াও জায়েয আছে।

    আরও পড়ুনঃ হায়েজ-নেফাস (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও কাজা-কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি

    রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও কাজা-কাফফারা আদায়ের পদ্ধতি

    প্রশ্ন: ইচ্ছাকৃত রোজা ভাঙ্গার শাস্তি ও বিধান কি? কেউ যদি কোন কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করে তাহলে তার করণীয় কি?

    উত্তরঃ নিম্নে রোজা ভাঙ্গার ভয়াবহ শাস্তি এবং এর কাজা ও কাফফারার পদ্ধতি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলোকপাত করা হল:

    ক. শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা না রাখার বা রোজা ভাঙ্গার ভয়াবহ শাস্তি:

    রমাযান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ, মুকিম (আবাসে অবস্থানকারী/সফরকারী নয়) প্রাপ্ত বয়স্ক ও সক্ষম ব্যক্তির উপর ফরজ। এটি ইসলামের ৫টি স্তম্ভের মধ্যে ৪র্থ। শরিয়ত অনুমোদিত ওজর ছাড়া (যেমন: অসুস্থতা, সফর, ক্ষুধা-পিপাসায় প্রাণনাশ বা অঙ্গহানির আশংকা ইত্যাদি) রোজা ভাঙ্গা কবিরা গুনাহ ও কঠিন শাস্তিযোগ্য অপরাধ। হাদিসে বিনা কারণে রোজা ভঙ্গের ভয়ঙ্কর শাস্তির কথা বর্ণিত হয়েছে। (আল্লাহ আমাদেরকে রক্ষা করুন)

    হাদিসে এসেছে:
    আবু উমামা বাহিলি রা. বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে বলতে শুনেছি, ‎

    بينَا أنَا نَائِمٌ إذْ أَتَاني رَجُلانِ فأخَذَا بضَبْعِي -أي: عَضُدِي- فَأَتَيَا بي جَبَلاً وَعْراً فَقَالَا لي: اصْعَدْ، فقلت: إني لا أُطِيقُه، فقَالَ: إنا سَنُسَهِّلُه لك،فَصَعَدتُ حتى إذا كُنتُ في سَواءِ الجَبَل إذا أنا بِأصْواتٍ شدِيدَةٍ،فَقُلْتُ: مَا هَذهِ الأَصْواتُ؟ قَالَوا: هَذا عِوى أَهْلِ النَّارِ، ثمَّ انْطُلِقَ بي فَإِذا أَنا بِقَومٍ مُعَلَّقِين بِعَرَاقِيبهِم، مُشَقَّقَةٍ أَشْدَاقُهُم تَسِيلُ أشْداقُهُم دَماً، قَالَ: قُلتُ: مَن هَؤُلاءِ؟ قَالَ: هؤُلاءِ الَّذين يُفطِرُون قَبلَ تَحِلَّة صَوْمِهِم“আমি ঘুমিয়ে ছিলাম। সহসা দু জন লোক এসে আমার বাহু ধরে আমাকেসহ তারা এক দুর্গম পাহাড়ে গমন করল।
    তারা আমাকে বলল: পাহাড়ে উঠো।
    আমি বললাম: এ পাহাড়ে উঠা আমার দ্বারা সম্ভব নয়।
    তারা ‎বলল: আমরা তোমাকে সাহায্য করব।
    যাহোক আমি ওপরে উঠতে শুরু করলাম। যখন পাহাড়ের চূড়ায় ‎‎পৌঁছলাম তখন বিকট আওয়াজের সম্মুখীন হলাম।
    জিজ্ঞাসা করলাম: এগুলো কিসের আওয়াজ?
    তারা ‎বলল: এগুলো জাহান্নামীদের আর্তনাদ।
    অতঃপর তারা আমাকে নিয়ে রওনা করার পর আমি এমন লোকদের সম্মুখীন হলাম, যাদেরকে হাঁটুতে বেধে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের চোয়াল ‎‎ক্ষতবিক্ষত। সেখান থেকে অনবরত রক্ত ঝরছে।
    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন: আমি জিজ্ঞাসা করলাম: এরা কারা?
    তারা বলল: এরা ‎হল সেসব লোক যারা রোজা পূর্ণ করার আগে ভেঙ্গে ফেলত।”

    [নাসাঈ ফিল কুবরা: ৩২৮৬, তাবরানি ফিল কাবির: ৭৬৬৭-শাইখ আলাবানী হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দ্রষ্টব্য: সিলসিলা সহিহা, হা/৩৯৫১]

    আল্লামা মুহাম্মদ বিন সালেহ আল উসাইমীন উক্ত হাদিস উল্লেখ করার পর বলেন: “এই হল যারা রোজা ভঙ্গ করত তাদের শাস্তি। তাহলে যারা আদতেই রোজা রাখে না তাদের কী পরিণতি হতে পারে?! আল্লাহর নিকট দুনিয়া ও আখিরাতের নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।” (মাজমু ফতোয়া ওয়া রাসায়েল ১৯/৮৯)

    সুতরাং কেউ শরিয়ত সম্মত ওজর ছাড়া শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা ভঙ্গ করে বা আদতেই রোজা না রাখে তাহলে তার জন্য আবশ্যক হল, অনতিবিলম্বে লজ্জিত অন্তরে খাঁটি ভাবে আল্লাহর কাছে তওবা করা এবং ভবিষ্যতে আর কখনো জেনে-বুঝে এমনটি না করার অঙ্গীকার করা। অত:পর নিম্নে বর্ণিত শরিয়তের বিধান অনুযায়ী কাজা বা কাফফারা আদায় করা।

    খ. রোজা ভাঙ্গার কাজা ও কাফফারা আদায়ের পদ্ধতিঃ

    রোজা ভঙ্গের কারণের উপর কাজা বা কাফফারার বিষয়টি নির্ভর করছে। যেমন:

    (১) স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি উক্ত রোজাটি কাজা করাই যথেষ্ট (কাফফারা নেই):

    কেউ যদি স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্য কোন উপায়ে (যেমন: ইচ্ছাকৃত পানাহার, হস্তমৈথুন, ইচ্ছাকৃত বমি ইত্যাদি) রোজা ভঙ্গ করে তাহলে খাঁটি অন্তরে তওবা করার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে সেটা কাজা করাই যথেষ্ট। এভাবে যে কয়টা রোজা ভঙ্গ করবে সে কয়টা কাজা করতে হবে।

    তবে এতে কাফফারা দিতে হবে কি না এ বিষয়ে সম্মানিত ফকিহদের মাঝে দ্বিমত থাকলেও অধিক বিশুদ্ধ মতে এর জন্য কাফফারা নেই। কেননা হাদিসে কেবল স্ত্রী সহবাসের ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য কোন ক্ষেত্রে কাফফারা দেয়ার ব্যাপারে কোন সহিহ হাদিস নেই। যে হাদিস দ্বারা কাফফারার দলিল পেশ করা হয় সেটার কোন ভিত্তি নাই।

    সুতরাং এটিই অধিক বিশুদ্ধ অভিমত যে, এতে অন্তরে খাঁটি ভাবে তওবার পাশাপাশি কাজা করাই যথেষ্ট।

    এ পক্ষে মত ব্যক্ত করেছেন, ইমাম শাফেঈ, ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, সাঈদ বিন জুবাইর, নাখঈ, ইবনে শিরীন রহ. প্রমুখ।
    শাইখ বিন বায এ প্রসঙ্গে বলেন:

    والصواب أن عليه التوبة ولا يلزمه إلا قضاء اليوم الذي أفطره فقط، هذا هو الصواب، وعليه التوبة
    “সঠিক কথা হল, তার জন্য তওবা করা এবং যে দিনের রোজা ভেঙ্গেছে কেবল সে দিন রোজাটা কাজা করা আবশ্যক।”

    শাইখের অফিসিয়াল ওয়েব সাইট

    (২) সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করার পাশাপাশি কাফফারা আদায় করা আবশ্যক:

    স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভঙ্গ করলে তাতে অনুতপ্ত হয়ে খাঁটি অন্তরে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙ্গেছে সেটি কাজা করা তারপর তার কাফফারা দেয়াও আবশ্যক। ।

    হাদিসে একমাত্র এই কারণে রোজা ভঙ্গ করলে কাফফারা দেয়ার কথা এসেছে। অন্য ক্ষেত্রে আসে নি।
    লক্ষণীয় হল, রোজা অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করলে-বীর্যপাত হোক না হোক-তাতে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে।

    কাফফারাঃ

    কাফফারার বিষয়গুলোর ধারাক্রম নিম্নরূপ। (অর্থাৎ একটি আদায় করতে সক্ষম না হলে অপরটি করতে হবে।)
    ● ১. একটি রোজার বিনিময়ে একটি দাস মুক্ত করা। (বর্তমান যুগে যেহেতু দাস-দাসীর প্রথা নেই তা বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়।)

    ● ২. একটানা (বিরতি হীনভাবে) ৬০টি রোজা রাখা।

    ● ৩. তাও সম্ভব না হলে ৬০জন মিসকিন তথা গরিব-অসহায় মানুষকে একবেলা পেট পুরে খাবার খাওয়ানো অথবা প্রতিটি রোজার বিনিময়ে অর্ধ সা তথা সোয়া বা দেড় কিলোগ্রাম চাল দেয়া।
    টাকা দেয়া ঠিক সুন্নাহ পরিপন্থী।

    একজন মিসকিনকে ৬০ বেলা খাবার‌ খাওয়ানো যেমন জায়েজ তেমনি ৬০জন মিসকিনকে এক বেলা খাওয়ানোও জায়েজ।
    [কাফফারা প্রসঙ্গে একটি প্রসিদ্ধ লম্বা হাদিস সহিহ বুখারী ও মুসলিমে বর্ণিত হয়েছে। পোস্টের কলেবর বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় তা উল্লেখ করা হল না]

    আরও পড়ুনঃ ইফতারের পূর্বে দুআ কবুলের সম্ভাবনা বেশি কি?

    সারাংশঃ

    শরিয়ত সম্মত কারণ ছাড়া রোজা ভঙ্গ করা বা রোজা না রাখা কবিরা গুনাহ এবং ভয়ানক শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

    কেউ শয়তানের প্ররোচনা বা কুপ্রবৃত্তির তাড়নায় রোজা নষ্ট করে তাহলে তার জন্য অনুতপ্ত হৃদয়ে তওবা করা আবশ্যক।

    স্ত্রী সহবাস ছাড়া অন্যভাবে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটা ভেঙ্গেছে তা কাজা করাই যথেষ্ট। কিন্তু স্ত্রী সহবাসের মাধ্যমে রোজা ভাঙলে তওবার পাশাপাশি যে রোজাটি ভেঙেছে সেটি কাযা করতে হবে। সেই সাথে কাফফারা দেয়াও ওয়াজিব।
    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযানে কুরআন বিষয়ে যেদিকে গুরুত্ব দিবো

    রমাযানে কুরআন বিষয়ে যেদিকে গুরুত্ব দিবো

    প্রশ্ন: রমজান মাসে কোনটির দিকে বেশী গুরুত্ব দিব? কুরআনের অক্ষরের তিলাওয়াতের দিকে? নাকি অনুবাদসসহ তিলাওয়াতের দিকে?

    উত্তরঃ এক্ষেত্রে আলেমদের মাঝে দ্বিমত পরিলক্ষিত হয়। অনেক আলেম বলেছেন, এ মাসে অধিকমাত্রায় তিলাওয়াত করা উত্তম। আর অনেক আলেম বলেছেন কুরআনে অর্থ, ব্যাখ্যা জেনে কুরআন গবেষণার মনোভাব নিয়ে তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম।

    তবে দলীলের আলোকে ‘কুরআন তিলাওয়াতের পাশাপাশি এর মমার্থ জানার চেষ্টা করা অধিক উত্তম’ এটি অধিক অগ্রগণ্য মত বলে বিবেচিত হয়। কেননা, আল্লাহ তাআলা বলেন:

    كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ إِلَيْكَ مُبَارَكٌ لِّيَدَّبَّرُوا آيَاتِهِ وَلِيَتَذَكَّرَ أُولُو الْأَلْبَابِ

    “এটি একটি বরকতময় কিতাব, যা আমি আপনার প্রতি বরকত হিসেবে অবতীর্ণ করেছি, যাতে মানুষ এর আয়াতসূহ নিয়ে চিন্তা-গবেষণা করে এবং বুদ্ধিমানগণ যেন তা অনুধাবন করে।”

    সূরা স্বদ-২৯

    আল্লাহ আরও বলেন:

    أَفَلَا يَتَدَبَّرُونَ الْقُرْآنَ أَمْ عَلَىٰ قُلُوبٍ أَقْفَالُهَا

    “তারা কি কোরআন সম্পর্কে গভীর চিন্তা করে না? না তাদের অন্তর তালাবদ্ধ?”

    সূরা মুহাম্মদ: ২৪

    আল্লাহ আরও বলেন:

    شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدىً لِلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِنَ الْهُدَى وَالْفُرْقَانِ

    “রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী।”

    সূরা বাকরা: ১৮৫

    কুরআনের মমার্থ জানার চেষ্টা ছাড়া তিলাওয়াত করলে সওয়াব অর্জন হলেও কুরআন থেকে হেদায়াত পেতে হলে এবং হক ও বাতিলের মাধ্যে পার্থক্য খুঁজে পাওয়া কুরআনের ব্যাখ্যা জানা ও কুরআন নিয়ে গবেষণা ছাড়া কী করে সম্ভব?

    সহীহ বুখারী ও মুসলিম বর্ণিত হয়েছে,

    وكان جبريل يأتي النبي صلى الله عليه وسلم كل ليلة في رمضان فيدارسه القرآن . رواه البخاري (5) ومسلم

    “জিবরাঈল আলাইহিস সালাম রমাযানের প্রতিরাতে রাসূল সা. এর নিকট এসে তার সাথে কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা করতেন।”(4268)

    সহীহ বুখারীতে এ ও বর্ণিত হয়েছে যে,

    أن جبريل كان يعْرضُ عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الْقُرْآنَ كُلَّ عَامٍ مَرَّةً ، فَعرضَ عَلَيْهِ مَرَّتَيْنِ فِي الْعَامِ الَّذِي قُبِضَ فِيهِ

    জিবরাঈ আ. প্রতি রামাযানে রাসূল সা. এর নিকট একবার করে পূরো কুরআন পেশ করতেন কিন্তু যে বছর তিনি মৃত্যু বরণ করেন সে বছর দুবার কুরআন পেশ করেছেন।”

    বুখারী, হা/৪৬১৬

    এখান থেকে প্রমাণিত হয় যে, রামযান মাসে অধিক পরিমানে কুরআন পাঠ করা, কুরআন খতম করা এবং কুরআন নিয়ে আলোচনা-পর্যালচনা করা মুস্তাহাব।

    তবে আমরা এভাবেও বলতে পারি যে, যারা কুরআনের ভাষা জানেন এবং কুরআন পড়ে তার মৌলিক মর্মবাণী উপলদ্ধি করতে সক্ষম তাদের জন্য বেশী বেশী তিলাওয়াত করা অধিক উত্তম। যেমন, অনেক সালাফ থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা রামযানে অধিকমাত্রায় কুরআন তিলওয়াতের দিকে ঝুঁকতেন। আর যারা কুরআনের ভাষা বুঝেন না এবং তিলাওয়াত করেই এর মমার্থ বুঝতে পারেন না তাদের জন্য তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা সর্বাধিক উত্তম এতে কোন সন্দেহ নাই।

    সুতরাং আমাদের করণীয় হল, রামাযানে সাধ্যানুযায়ী অধিক পরিমানে কুরআন তিলাওয়াত করা সেই সথে কুরআনের তরজমা ও তাফসীর জানার চেষ্টা করা।

    মোটকথা,রামাযান হল কুরআনের মাস। আমরা যেন বিশেষ করে এ মাসে কুরআন পাঠ, পঠন, শিক্ষাদান, মুখস্থ করণ, কুরআনের শিক্ষা পর্যালোচনার পাশাপাশি বাস্তব জীবন তা বাস্তবায়নের প্রেরণা গ্রহণ করি সে জন্য আামাদের সর্বাত্তক তৎপরতা থাকা কতর্ব্য। আল্লাহ তাওফিক দানকারী।

    আরও পড়ুনঃ কুরআনের তিলাওয়াত শোনার ৮টি অনবদ্য উপকারিতা

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদীস

    রমাযান বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদীস

    রমাযান, মুসলিমের জীবনে প্রতি বছর ফিরে ফিরে আসা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এক মাস। আসুন, আমরা রমাযান বিষয়ক কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ হাদীস জানি।

    কখন সিয়াম (রোজা) শুরু করতে হবে?

    عن ابن عمر رضي الله عنهما عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «لا تصوموا حتى تروا الهلال ولا تفطروا حتى تروه فإن أغمي عليكم فاقدروا له»
    (رواه البخاري ومسلم)

    আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,“তোমরা চাঁদ না দেখে রোযা রাখবে না এবং চাঁদ না দেখে রোযা ভঙ্গ করবে না। তবে যদি (শাবান মাসের ২৯ তারিখে) আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তাহলে (শাবান মাস) ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।”

    বুখারী ও মুসলিম

    রমাযানের এক-দুদিন আগে সিয়াম পালন না করাঃ

    عن أبي هريرة قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم «لا يتقدمن أحدكم رمضان بصوم يوم أو يومين، إلا أن يكون رجل كان يصوم صومه، فليصم ذلك اليوم»
    (رواه البخاري ومسلم)

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: “তোমাদের কেউ যেন এক-দুদিন আগে থেকে রামাযান শুরু না করে। তবে তবে কেউ যদি আগে থেকে নফল রোযা রাখে তাহলে সে রামাযানের এক-দুদিন আগে তার সেই রোযা রাখতে পারে।”

    বুখারী ও মুসলিম

    রমাযান এ সুখবরঃ

    عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: «إذا جاء رمضان فتحت أبواب الجنة وغلقت أبواب النار وصفدت الشياطين»
    (رواه مسلم)

    আবুহুরায়রা রা. হতে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“যখন রামাযান মাস আগমন করে তখন জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয়,জাহান্নামের দরজা সমূহ বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল পরানো হয়।”

    সহীহ মুসলিম

    রমাযান এ শয়তানের অবস্থা ও সুখবর ঘোষণাঃ

    عن أبي هريرة رضي الله عنه قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «إذا كان أول ليلة من شهر رمضان صفدت الشياطين، ومردة الجن، وغلقت أبواب النار، فلم يفتح منها باب، وفتحت أبواب الجنة، فلم يغلق منها باب، وينادي مناد: يا باغي الخير أقبل، ويا باغي الشر أقصر، ولله عتقاء من النار، وذلك كل ليلة»
    (رواه الترمذي وصححه الألباني)

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত,রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,“রমযান মাসের প্রথম রাতের আগমন ঘটলে শয়তান ও অবাধ্য জিনগুলোকে বন্দি করা হয়। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়-এ মাসে আর তা খোলা হয় না। আর জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়,এ মাসে সেগুলো আর বন্ধ করা হয় না।
    আর প্রত্যেক রাতে একজন ঘোষণাকারী এ ঘোষণা দিতে থাকে যে, হে কল্যাণ প্রত্যাশী,তুমি অগ্রসর হও! হে অসৎ অন্যায় প্রত্যাশী তুমি থেমে যাও!
    এ মাসের প্রতি রাতে আল্লাহ তাআলা বহু মানুষকে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়ে থাকেন।”

    তিরমিযী,সহীহ-আলবানী

    এ মাসে উমরা করাঃ

    عَنْ سَهْلٍ عَنْ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم قَالَ إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَقُومُونَ لاَ يَدْخُلُ مِنْهُ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ فَإِذَا دَخَلُوا أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ
    (رواه البخاري ومسلم)

    عن ابن عباس رضي الله عنهما قال: قال رسول الله صلى الله عليه وسلم: «عمرة في رمضان تعدل حجة»
    (رواه البخاري)

    ইবনে আব্বাস রা. হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “রমাযান মাসে একটি উমরা হজ্জের সমপরিমান।”

    সহীহ বুখারী

    সিয়াম পালনকারীর মর্যাদাঃ

    عن أبي هريرة رضي الله عنه أن رسول الله صلى الله عليه وسلم قال: « قال الله عز وجل: كل عمل ابن آدم له إلا الصيام، فإنه لي وأنا أجزي به، والصيام جنة، فإذا كان يوم صوم أحدكم، فلا يرفث يومئذ ولا يصخب، فإن سابه أحد أو قاتله، فليقل: إني امرؤ صائم، والذي نفس محمد بيده، لخلوف فم الصائم أطيب عند الله، يوم القيامة، من ريح المسك»
    (رواه البخاري ومسلم)

    আবু হুরায়রা রা. হতে বর্ণিত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,আল্লাহ তাআলা বলেছেন,“রোযা ছাড়া বনী আদমের প্রতিটি কাজ তার নিজের জন্য। রোযা শুধু আমার জন্য।আমিই তার প্রতিদান দেব।
    রোযা হল ঢাল। সুতরাং তোমাদের মাঝে যে রোযা রাখে সে যেন অশ্লীল আচরণ ও শোরগোল থেকে বিরত থাকে। যদি তার সাথে কেউ ঝগড়া-বিবাদ কিংবা মারামারিতে লিপ্ত হতে চায় তবে তাকে বলে দেবে,আমি রোযাদার।
    ঐ সত্ত্বার শপথ! যার হাতে মুহাম্মাদের প্রাণ। নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে রোযাদারের মুখের দুর্গন্ধ মিশকের চেয়েও অধিক সুগন্ধিময়।”

    বুখারী ও মুসলিম

    আরও পড়ুনঃ রমাযানের গুরুত্ব

    সংকলনেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা


  • রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান ও সিয়াম বিষয়ক ২০টি প্রশ্নোত্তর

    রমাযান মাস সিয়াম সাধনার মাস। হেদায়াতের আলোকবর্তিকা আল-কোরআন নাজিল হয়েছে এ মাসে। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়। শয়তানকে করা হয় শৃঙ্খলে আবদ্ধ। একজন ঘোষণাকারী ভাল কাজের আহ্বান জানাতে থাকে ও খারাপ কাজ থেকে বিরত থাকতে বলে।

    স্বাভাবতই আমাদের মনে রমাযান মাস নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন থেকে থাকে। তেমনই কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার ব্যাখ্যা মূল উত্তর নিচে দেওয়া হলো।

    ১) সিয়াম শব্দের আভিধানিক ও শরঈ অর্থ কি?

    উত্তরঃ সিয়াম শব্দটি বহুবচন। একবচন হল, সওম। [ফারসি ভাষায় রোজা।] সওম শব্দের শাব্দিক অর্থ: বিরত হওয়া বা রাখা। আর শরিয়তের দৃষ্টিতে সওম বলা হয়, বিশেষ ধরণের বিরত থাকাকে।

    অর্থাৎ সওয়াব অর্জনের নিয়তে ফজর উদিত হওয়ার একটু পূর্ব থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাকে সিয়াম বলা হয়। অনেক আলেম বর্জনীয় বিষয় সমূহের মধ্যে অশ্লীল যে কোন কথা ও কাজকেও উল্লেখ করেছেন।

    ২) সিয়াম/রোজা ইসলামের কততম স্তম্ভ?

    উত্তরঃ সিয়াম ইসলামের ৪র্থ স্তম্ভ।

    আব্দুল্লাহ ইবনে উমর রা. হতে বর্ণিত। তিনি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন,

    عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ بُنِيَ الْإِسْلَامُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ وَصَوْمِ رَمَضَانَ وَحَجِّ الْبَيْتِ

    “ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি বিষয়ের উপর। আর তা হলঃ
    (১) “একথার সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য কোনও মাবূদ নেই এবং মুহাম্মদ সা. আল্লাহর রাসূল,
    (২) সালাত প্রতিষ্ঠা করা,
    (৩) যাকাত প্রদান করা,
    (৪) রামজানের সিয়াম (রোজা) পালন করা এবং
    (৫) কাবা ঘরের হজ্জ সম্পাদন করা।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ৩) সিয়াম কখন ফরজ হয়?

    উত্তর: সিয়াম ফরজ হয় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর হিজরতের ২য় বর্ষে, শাবান মাসের ২৮ তারিখে, সোমবার দিন। [ফিকহুস সুন্নাহ ২/৫০১]

    ৪) কুরআনে কোথায় সিয়াম ফরজ বলা হয়েছে?

    উত্তর: সূরা বাকারা, ১৮৩ নং আয়াত দ্বারা মুমিনদের জন্য রোজা রাখা ফরজ করা হয়। আল্লাহ তাআলা বলেন,

    يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا كُتِبَ عَلَيْكُمُ الصِّيَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِينَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

    “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর সিয়াম ফরয করা হয়েছে যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার।”

    (সূরা বাকারা: ১৮৩)

    ৫) কারও উপর সিয়াম ফরজ হওয়ার শর্ত কয় টি?

    উত্তর: রোজা ফরজ হওয়ার শর্ত ৬টি। যথা:

    • (ক) মুসলিম হওয়া। (কাফেরের উপর সিয়াম ফরজ নয়, করলেও তা প্রত্যাখ্যাত হবে।)
    • (খ) বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক (নাবালেগের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (গ) সুস্থ মস্তিষ্ক বা আকল সম্পন্ন ব্যক্তির উপর। (বেহুঁশ বা পাগলের উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (ঘ) মুকিম বা অবস্থান কারী (মুসাফিরের উপর সিয়াম ফরজ নয়। তবে তারা রোজা ভঙ্গ করলে পরবর্তীতে কাযা আদায় করবে)
    • (ঙ) দৈহিক ভাবে সক্ষম (রোজা রাখতে অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তির উপর সিয়াম ফরজ নয়।)
    • (চ) শরিয়তের বাধা মুক্ত হওয়া। যেমন: নারীর ক্ষেত্রে সে যদি হায়েজ বা নেফাস যুক্ত (প্রসূতি হয়) হয় তবে তার উপর রোজা রাখা ফরজ নয়। (তারা পরবর্তীতে ঐ রোজাগুলোর কাযা আদায় করবে)

    ৬) ফরজ রোজা কয় প্রকার?

    উত্তর: ফরজ রোজা ৩ প্রকার। যথা:

    • (ক) রমজানের রোজা
    • (খ) কাফফারার রোজা (কসম ভঙ্গ, মানত ভঙ্গ, রমজানে দিনের বেলায় স্ত্রী সহবাস ইত্যাদি)
    • (গ) মানতের রোজা

    ৭) বছরের কয় দিন রোজা রাখা নিষিদ্ধ?

    উত্তর: ৬ দিন। যথাঃ ঈদুল ফিতর (রমজানের ঈদ), ঈদুল আযহা (কুরবানির ঈদ) এর দিন এবং এর পরের আরও তিন দিন (আইয়ামে তাশরিক) এবং ইয়ামুশ শাক্ক (يوم الشك) বা ‘সন্দেহের দিন’। (শাবান মাসের ৩০তম দিনে যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকার কারণে রমজানের চাঁদ উঠেছে কি না তাতে সন্দেহ সৃষ্টি হয় তাহলে তাকে ইয়ামুশ শাক্ক বা ‘সন্দেহের দিন’ বলা হয়। এ দিন রোজা থাকার ব্যাপারে হাদিসে নিষেধাজ্ঞা এসেছে।)

    ৮) সিয়ামের নিয়ত যদি সওয়াবের সাথে অন্য কিছু হয়, কি হবে?

    রোজা রাখার ক্ষেত্রে সওয়াবের নিয়তের পাশাপাশি স্বাস্থ্য রক্ষার নিয়ত থাকলে কি রোজা বাতিল হয়ে যাবে? না কি এতে সওয়াব কমে যাবে? না কি রোজার কোনও ক্ষতি হবে না?

    উত্তর: রোজা বাতিল হবে না কিন্তু সওয়াব কমে যাবে।

    ৯) রমাযানকে কিভাবে স্বাগত জানাবো বা বরণ করবো?

    উত্তর: নিচে এ বিষয়ে দশটি পয়েন্ট উল্লেখ করা হল:

    • ১) অতীত জীবনের পাপাচার ও অন্যায়-অপকর্মের জন্য খাঁটি অন্তরে আল্লাহর দরবারে তওবা করা।
    • ২) রমাযানে রোযা রাখার ব্যাপারে অন্তরে মজবুত নিয়ত করা এবং এ জন্য মহান রবের নিকট তাওফিক কামনা করে দুআ করা।
    • ৩) রমাযানের আগমনে আনন্দিত হওয়া।
    • ৪) পূর্বের রোযা বাকি থাকলে তা আগামী রমাযান আসার পূর্বে কাযা করে নেয়া।
    • ৫) রোযার বিধিবিধান সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞানার্জন করা।
    • ৬) রমাযান আসার পূর্বে যথাসম্ভব দুনিয়াবি কর্মব্যস্ততা কমিয়ে ফেলা।
    • ৭) শাবান মাসে নফল সিয়াম পালন করা।
    • ৮) শাবান মাস থেকে কুরআন তিলাওয়াত শুরু করা।
    • ৯) রমাযান মাসে রোজাদারদেরকে ইফতার করানো, দাওয়াতি কাজ করা, যাকাত আদায় (যদি তা আদায় করার ইচ্ছা থাকে) সহ বিভিন্ন ধরণের নেকির কাজ করার জন্য অগ্রিম প্রস্তুতি নেয়া।
    • ১০) রমজানে মক্কায় এসে উমরা আদায় করার এবং সেই সাথে মক্কার মসজিদে হারাম অথবা মসজিদে নববী অথবা এলাকার জুমার মসজিদে ইতিকাফের প্রস্তুতি নেয়া।

    ১০) রজব ও শাবান মাসে রমাযানের জন্য করা দোয়া বিষয়ক হাদিস সম্পর্কে…

    “আল্লাহুম্মা বারিক লানা ফি শাহরাই রাজাবা ওয়া শাবানা।” এ হাদিসটির মান কি?

    উত্তর: জঈফ বা দুর্বল।নিচে উক্ত হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসগণের অভিমত উল্লেখ করা হল:

    اللَّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِي رَجَبٍ، وَشَعْبَانَ، وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ

    উচ্চারণ: “আল্লা-হুম্মা বা-রিক লানা ফী রাজাবা ওয়া শাবা-না ও বাল্লিগনা রামাযা-ন।” অর্থ: “হে আল্লাহ তুমি রজব ও শাবানে আমাদেরকে বরকত দাও। আর আমাদেরকে রমজান পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দাও।”

    [মুসনাদে আহমাদ ১/২৫৯, হিলইয়াতুল আওলিয়া, তবাকাতুল আছফিয়া]

    মান: হাদিসটি জঈফ বা দুর্বল। কারণ:- এ হাদিসের সনদে একজন বর্ণনাকারী রয়েছে যার নাম যায়েদাহ বিন আবুর রিকাদ। তার ব্যাপারে ইমাম বুখারি রহ. বলেন: মুনকারুল হাদিস।

    • ইমাম নাসাঈ তার সুনান গ্রন্থে তার নিকট থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করার পর বলেন, “চিনি না এই ব্যক্তি কে?” আর তিনি তার যুয়াফা কিতাবে বলেন, “মুনকারুল হাদিস।” কুনা গ্রন্থে বলেন, “তিনি নির্ভরযোগ্য নন।”
    • ইবনে হিব্বান বলেন, “তার বর্ণিত কোন হাদিসকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করা যাবে না।” [দ্রষ্টব্য: তাবয়ীনুল আজাব বিমা ওয়ারাদা ফী ফযলি রাজাব, ১২ পৃষ্ঠা। আয যুয়াফাউল কাবীর (২/৮১) তাহযীবুত তাহযীব (৩/৩০)-

    ১১) কোন তিন শ্রেণীর মানুষের দুআ প্রত্যাখ্যাত হয় না?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    ثلاث دعوات مستجابة : دعوة الصائم، دعوة المظلوم، دعوة المسافر

    “তিন জন ব্যক্তির দুআ কবুল করা হয়। যথা:১. রোজাদারের দুআ, ২. মজলুম বা নির্যাতিত ব্যক্তির দুআ।৩. এবং মুসাফিরের দুআ।”

    [সহিহুল জামে-আলবানি]

    অন্য বর্ণনায়: রোজাদারের পরিবর্তে সন্তানের জন্য পিতার দুআ উল্লেখিত হয়েছে।

    ১২) রমাযান শুরু হলে সৃষ্টিজগতে আল্লাহ তাআলা যেসব পরিবর্তন ঘটান সেগুলো ৩টি উল্লেখ করুন।

    উত্তর: ১. জান্নাতের দরজা সমূহ খুলে দেয়া হয় (কোনও কোনও বর্ণনায় আসমানের দরজা সমূহ খোলা হয়)

    ২. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়,

    ৩. এবং শয়তানকে শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয়।

    যেমন: হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,إِذَا دَخَلَ رَمَضَانُ فُتِّحَتْ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ وَغُلِّقَتْ أَبْوَابُ جَهَنَّمَ وَسُلْسِلَتِ الشَّيَاطِينُ

    “যখন রমজান মাস শুরু হয় তখন জান্নাতের দরজাগুলো পরিপূর্ণভাবে খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা সমূহ মজবুত ভাবে বন্ধ করা হয় এবং শয়তানদেরকে শিকল দ্বারা বেধে দেয়া হয়।”

    (সহিহ বুখারি)

    ১৩) বছরের শ্রেষ্ঠ দশ দিন এবং শ্রেষ্ঠ দশ রাত কোনগুলো?

    উত্তর: বছরের শ্রেষ্ঠ ১০টি দিন হল, জিলহজ্ব মাসের প্রথম দশ দিন আর শ্রেষ্ঠ রাত হল, রমজান মাসের শেষ দশ রাত।

    ১৪) রমাযান এ কয় ধাপে বান্দার গুনাহ মোচন করা হয়?

    উত্তর: তিন ধাপে। যথাঃ

    ১. সিয়াম পালন।

    ২. কিয়ামুল লায়ল আদায় (রাতের নফল সালাত/তারাবিহ এর সালাত আদায়)

    ৩. লাইলাতুল কদরে (শবে কদরে) রাত জেগে নফল সালাত ও অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগি করা।

    রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    مَنْ قَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় রমজানের রাতে কিয়াম করে (তারাবিহ/তাহাজ্জুদ সালাত আদায় করে) করে তার পূর্বের সকল পাপ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    তিনি আরও বলেছেন,

    مَنْ صَامَ رَمَضَانَ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ وَمَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ

    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছাওয়াবের আশায় রমযানের সিয়াম পালন করে তার পূর্বকৃত সমস্ত গুনাহ মোচন করে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় কদরের রাতে কিয়াম করে তারও পূর্বের সকল গুনাহ মোচন করা হয়।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    ১৫) রোজাদারগণ রাইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন, এই শব্দের অর্থ কি?

    উত্তর: রাইয়ান অর্থ: রাইয়ান শব্দটি আরবি ري থেকে উৎপত্তি। এর অর্থ হল চূড়ান্ত তৃপ্তি সহকারে পান করা, পিপাষা নিবারিত হওয়া, পানি সিঞ্চন করা ইত্যাদি। রোজাদারগণ রইয়ান নামক দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    إِنَّ فِي الْجَنَّةِ بَابًا يُقَالُ لَهُ الرَّيَّانُ يَدْخُلُ مِنْهُ الصَّائِمُونَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَا يَدْخُلُ مَعَهُمْ أَحَدٌ غَيْرُهُمْ يُقَالُ أَيْنَ الصَّائِمُونَ فَيَدْخُلُونَ مِنْهُ فَإِذَا دَخَلَ آخِرُهُمْ أُغْلِقَ فَلَمْ يَدْخُلْ مِنْهُ أَحَدٌ

    “জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যার নাম বলা হয় ‘রইয়ান’, কিয়ামতের দিন ঐ দরজা দিয়ে জান্নাতে প্রবেশ করবে কেবল সিয়াম পালনকারীগণ। সেখান দিয়ে তারা ব্যতীত আর কেউই প্রবেশ করতে পারবে না। বলা হবে, সিয়াম পালনকারীগণ কোথায়? তখন তারা উঠে সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করবে। তারা ছাড়া ঐ দরজা দিয়ে আর কেউ প্রবেশ করতে পারবে না। যখন তারা প্রবেশ করবে তখন সেই দরজা বন্ধ করে দেয়া হবে। ফলে আর কেউ সে দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।

    (বুখারি ও মুসলিম)

    রোজাদারগণ জান্নাতে প্রবেশের পর সুস্বাদু পানীয় পান করবে, যার ফলে কোনোদিন তারা তৃষ্ণার্ত হবে না। ইবনে খুযাইমা উপরোক্ত হাদিসের আরও একটু বর্ধিত বর্ণনা দিয়েছেন। তা হল: مَنْ دَخَلَهُ لَمْ يَظْمَأْ أَبَدًا “যারা প্রবেশ করবে, তারা পান করবে এবং যে পান করবে সে আর কোনোদিন তৃষ্ণার্ত হবে না।” রোজাদারের জন্য জান্নাতের দরজা রাইয়ান নামকরণের তাৎপর্যও তাই।

    ১৬) সিয়াম ও কুরআন কি বান্দার জন্য সুপারিশ করবে?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    الصِّيَامُ وَالْقُرْآنُ يَشْفَعَانِ لِلْعَبْدِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ يَقُولُ الصِّيَامُ أَيْ رَبِّ مَنَعْتُهُ الطَّعَامَ وَالشَّهَوَاتِ بِالنَّهَارِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ وَيَقُولُ الْقُرْآنُ مَنَعْتُهُ النَّوْمَ بِاللَّيْلِ فَشَفِّعْنِي فِيهِ قَالَ فَيُشَفَّعَانِ

    “কিয়ামত দিবসে সিয়াম ও কুরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। সিয়াম বলবে: হে আমার পালনকর্তা! আমি তাকে দিবসে পানাহার ও যৌনকর্ম থেকে বিরত রেখেছিলাম। অতএব তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। কুরআন বলবে, আমি তাকে রাতে নিদ্রা থেকে বিরত রেখেছিলাম। তাই তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল কর। তিনি বলেন, তখন তাদের উভয়ের সুপারিশ কবুল করা হবে।”

    [হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইমাম আহমাদ ও ত্বাবরানী (কাবীর গ্রন্থে), ইবনে আবীদ দুনিয়া [আল জু’ও গ্রন্থে] উত্তম সনদে এবং হাকেম। হাকেম বলেনঃ মুসলিমের শর্তানুযায়ী হাদিসটি সহিহ]

    ১৭) কেউ রোজাদারের সাথে ঝগড়া করতে আসলে উত্তরে কি বলতে হবে?

    উত্তরঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,

    وَإِذَا كَانَ يَوْمُ صَوْمِ أَحَدِكُمْ فَلَا يَرْفُثْ وَلَا يَصْخَبْ فَإِنْ سَابَّهُ أَحَدٌ أَوْ قَاتَلَهُ فَلْيَقُلْ إِنِّي امْرُؤٌ صَائِمٌ

    “যখন তোমাদের কারো রোজার দিন উপস্থিত হয়, তখন সে যেন কোন অশ্লীল কথা ও কাজ না করে এবং অহেতুক উঁচু কণ্ঠে কথা না বলে অর্থাৎ ঝগড়া-বিবাদ না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় বা তার সহিত লড়াই-ঝগড়া করতে আসে তবে সে যেন তাকে বলে দেয়, আমি সিয়াম ব্রতে রত আছি।”

    [বুখারি ও মুসলিম]

    ১৮) যার পেটে কুরআনের কোনও অংশ নেই তার উদাহরণ কিসের মত?

    উত্তরঃ পরিত্যক্ত ঘরের মত। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    إِنَّ الَّذِي لَيْسَ فِي جَوْفِهِ شَيْءٌ مِنْ الْقُرْآنِ كَالْبَيْتِ الْخَرِبِ

    “যার পেটে মোটেও কুরআন নেই সে তো একটা পরিত্যক্ত ঘরের মত।

    তিরমিযী, হাসান-সহীহ

    ১৯) “তারাবিহ এর সালাত ১১ রাকআতের বেশি পড়া বিদআত।” এ কথা কি সঠিক?

    উত্তরঃ না, এ কথা সঠিক নয়। মূলতঃ তারাবীহ কত রাকআত তা নিয়ে উলামাদের মধ্যে বিস্তর ইখতেলাফ (মতবিরোধ) আছে। কিন্তু বিতরসহ ১১ বা ১৩ রাকাত আদায় করাই উত্তম। কেননা আয়েশা রা. বর্ণিত হাদিসে বলা হয়েছে,

    مَا كَانَ يَزِيدُ فِي رَمَضَانَ ، وَلاَ غَيْرِهِ عَلَى إِحْدَى عَشْرَةَ رَكْعَةً

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজান বা অন্য কোন সময়ে ১১ রাকাআতের বেশী পড়তেন না।”

    বুখারি ও মুসলিম

    ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,

    كان صلاةُ النبيِّ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم ثلاثَ عَشرةَ ركعةً. يعني: باللَّيل

    “রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাতের নামায ছিল ১৩ রাকাত।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    কিন্তু যদি এর চেয়ে বেশী ২০ বা ৩০ বা ততোধিক রাকাত আদায় করা হয়, তাতেও কোন অসুবিধা নেই। অন্য একটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,

    أنَّ رجلًا سألَ رسولَ اللهِ صلَّى اللهُ عليه وسلَّم عن صلاةِ اللَّيل، فقال رسولُ الله صلَّى اللهُ عليه وسلَّم: صلاةُ الليلِ مَثْنَى مثنَى، فإذا خشِيَ أحدُكم الصبحَ صلَّى ركعةً واحدةً، تُوتِر له ما قدْ صلَّى

    “জনৈক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সা.কে রাতের নামায সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাতের নামায দু দু রাকাত করে পড়বে। তোমাদের কেউ যদি এভাবে নামাজ পড়তে পড়তে ফজর হয়ে যাওয়ার আশংকা করে তবে সে এক রাকাত পড়বে। তখন এর মাধ্যমে তার নামায বেজোড় বা বিতর হয়ে যাবে”।

    বুখারি ও মুসলিম

    অতএব ১১ রাকাতই পড়তে হবে, এর বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথা যেমন বাড়াবাড়ি। অনুরূপ ২৩ রাকাতই পড়তে হবে, এরচেয়ে কম বা বেশী পড়া যাবে না, এরকম কথাও বাড়াবাড়ি।

    ২০) রমাযান মাসে উমরা করার ফজিলত কী?

    উত্তরঃ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,

    عُمْرَةً فِي رَمَضَانَ تَقْضِي حَجَّةً أَوْ حَجَّةً مَعِي

    “রমাযান এ একটি উমরাতে একটি হজ্জের সওয়াব রয়েছে। অথবা বলেছেন, আমার সাথে একটি হজ্জ পালনের সওয়াব রয়েছে।”

    (বুখারি ও মুসলিম)

    আরও পড়ুনঃ রমাযান এ অধিক নেক আমলের প্রস্তুতি মূলক ১০টি টিপস

    আল্লাহু আলাম।

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়াতে আমাদের সাথে থাকুন


  • রমাদানের শেষ দশক, কদরের রাত ও ইতিকাফ

    রমাদানের শেষ দশক, কদরের রাত ও ইতিকাফ

    আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ।

    সুপ্রিয় ভাই ও বোন,

    দেখতে দেখতে মাহে রামাযান আমাদের মাঝ থেকে বিদায় নেয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছে। আমরা এসে পৌঁছেছি শেষ দশকে। সৌভাগ্যবান লোকেরা এ মাসে আঁচল ভরে পাথেয় সংগ্রহ করছে আর হতভাগারা এখনো অন্ধকারের অলি-গলিতে উদ্ভ্রান্তের মত ঘুরে বেড়াচ্ছে। কিন্তু কল্যাণের বারি বর্ষণ এখনো শেষ হয়ে যায় নি। বন্ধ হয়ে যায় নি তাওবার দরজা বরং আরও বশি সুযোগ নিয়ে মাহে রামাযানের শেষ দশক আমাদের মাঝে সমাগত। আজকের এই পোস্টে দেখব আল্লাহ তায়ালা আমাদের জন্য এতে কী উপহার সাজিয়ে রেখেছেন এবং আমরা কীভাবে তা সংগ্রহ করতে পারব।

    প্রিয় পাঠক, আসুন, আমরা আল্লাহ দেয়া উপহারগুলো দুহাত ভরে কুড়িয়ে রামাযানকে আরও অর্থ বহ করে তুলি। আল্লাহ আমাদের তাওফীক দান করুন। আমীন।

    রমাদানের শেষ দশক

    ১) রামাযানের শেষ দশকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম স্ত্রী-পরিবার সহ সারা রাত জেগে ইবাদত করতেন:

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

    إِذَا دَخَلَ الْعَشْرُ شَدَّ مِئْزَرَهُ ، وَأَحْيَا لَيْلَهُ ، وَأَيْقَظَ أَهْلَهُ

    “রামাযানের শেষ দশক প্রবেশ করলে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোমর বেঁধে নিতেন, নিজে সারা রাত জাগতেন এবং পরিবারকেও জাগাতেন।”
    কোমর বাঁধার অর্থ হল: পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে চেষ্টা-সাধনায় লিপ্ত হওয়া। কোন কোন আলেম এর ব্যাখ্যায় বলেন: স্ত্রী সহবাস থেকে দূরে থাকা।

    সহীহ বুখরী, অধ্যায়: শবে কদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: ইতিকাফ।

    ২) রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানে শেষ দশকে যত বেশি পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না:

    আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন:

    كَانَ رَسُولُ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- يَجْتَهِدُ فِى الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مَا لاَ يَجْتَهِدُ فِى غَيْرِهِ
    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রামাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) যে পরিমাণ পরিশ্রম করতেন অন্য কখনো করতেন না।”

    সহীহ মুসলিম: রামাযানের শেষ দশকে (ইবাদত-বন্দেগীতে) বেশি বেশি পরিশ্রম করা।

    শবে কদর

    ১) শবে কদরে কুরআন অবর্তীণ হয়েছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ
    “আমি একে (কুরআন) অবর্তীণ করেছি শবে কদরে।”

    সূরা কাদর: ১

    ২) শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম: আল্লাহ বলেন:

    لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ
    “শবে কদর এক হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।”

    সূরা কাদর: ৩

    ৩)আল্লাহ তায়ালা শবে কদরকে বরকতময় রাত বলে উল্ল্যেখ করেছেন: আল্লাহ তায়ালা বলেন:

    إِنَّا أَنزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةٍ مُّبَارَكَةٍ
    “নিশ্চয় আমি ইহা (কুরআন)কে অবর্তীণ করেছি একটি বরকতময় রাতে।”

    সূরা দুখান: ৩ | আর এ রাত হল শবে কদর।

    ৪) শবে কদরে রাত জেগে ইবাদত-বন্দেগী করলে পূর্বের সকল ছোটগুনাহ মোচন হয়ে যায়:

    রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

    مَنْ قَامَ لَيْلَةَ الْقَدْرِ إِيمَانًا وَاحْتِسَابًا غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
    “যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় শবে কদরে রাত জাগরণ করে নফল নামায ও ইবাদত বন্দেগী করবে তার পূর্বের সকল (ছোট) গুনাহ মোচন করে দেয়া হবে।”

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: যে ব্যক্তি ঈমানের সাথে ও সোয়াবের আশায় রোযা রাখে।

    শবে কদর কখন হবে?

    শবে কদর হবে রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে:

    ক) আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:

    « تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ »
    “তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অনুচ্ছেদ: রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে শবে কদর অনুসন্ধান করা।

    খ) আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ
    স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্‌র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।” কোন কোন বর্ণনায় রয়েছে, দু ব্যক্তির বিবাদের কারণে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ভুলে গেছেন।

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।

    গ) শবে কদর কি শুধু রামাযানের সাতাইশ রাতের জন্য নির্দিষ্ট?

    আমাদের দেশে সাধারণত: মানুষ শুধু রামাযানের সাতাইশ তারিখে রাত জেগে ইবাদত বন্দেগী করে এবং ধারণা করে এ রাতেই শবে কদর অনুষ্ঠিত হবে। কিন্তু এ ধারণা, সুন্নতের সাথে সঙ্গতীপূর্ণ নয়। কারণ, আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     تَحَرَّوْا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْوِتْرِ مِنَ الْعَشْرِ الأَوَاخِرِ مِنْ رَمَضَانَ
    “তোমরা রামাযানের শেষ দশকের বেজোড় রাত্রিগুলোতে লাইলাতুল ক্বদর অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত। সহীহ মুসলিম, অধ্যায়: রোযা।

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:

     أُرِيتُ لَيْلَةَ الْقَدْرِ ثُمَّ أَيْقَظَنِى بَعْضُ أَهْلِى فَنُسِّيتُهَا فَالْتَمِسُوهَا فِى الْعَشْرِ الْغَوَابِرِ »
    স্বপ্নে আমাকে লাইলাতুল ক্বদ্‌র দেখানো হল। কিন্তু আমার এক স্ত্রী আমাকে ঘুম থেকে জাগিয়ে দেয়ায় আমি তা ভুলে গিয়েছি। অতএব, তোমরা তা রামাযানের শেষ দশকে অনুসন্ধান কর।”

    সহীহ বুখারী, অধ্যায়: লাইলাতুল কাদরের ফযীলত।

    ঘ) তবে শেষ সাত দিনের বেজড় রাতে শবে কদর হওয়ার সম্ভাবনা বেশি:

    যেমন, নিম্নোক্ত হাদীসটি:

    ابْنِ عُمَرَ – رضى الله عنهما – أَنَّ رِجَالاً مِنْ أَصْحَابِ النَّبِىِّ – صلى الله عليه وسلم – أُرُوا لَيْلَةَ الْقَدْرِ فِى الْمَنَامِ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ – صلى الله عليه وسلم – « أَرَى رُؤْيَاكُمْ قَدْ تَوَاطَأَتْ فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ ، فَمَنْ كَانَ مُتَحَرِّيَهَا فَلْيَتَحَرَّهَا فِى السَّبْعِ الأَوَاخِرِ »
    ইবনে উমর (রা:) হতে বর্ণিত যে, কয়েকজন সাহাবী রামা যানের শেষ সাত রাত্রিতে স্বপ্ন মারফত শবে কদর হতে দেখেছেন।  সাহাবীদের এ স্বপ্নের কথা জানতে পেরে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন: “আমি দেখছি তোমাদের স্বপ্নগুলো মিলে যাচ্ছে শেষ সাত রাত্রিতে। অত:এব কেউ চাইলে শেষ সাত রাত্রিতে লাইলাতুল কদর অনুসন্ধান করতে পারে।”

    (সহীহ বুখারী ও মুসলিম) এ মর্মে আরও হাদীস রয়েছে।

    কোন কোন সালাফে-সালেহীন সাতাইশ রাত শবে কদর হওয়ার অধিক সম্ভাবনাময় বলে উল্লেখ করেছেন। সাহাবীগণের মধ্যে ইবনে আব্বাস (রা:), মুআবিয়া, উবাই ইবনে কা’ব (রা:) এর মতামত থেকে এটাই বুঝা যায়।

    কিন্তু নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এভাবে নির্দিষ্টকরে লাইলাতুল কদর হওয়ার কোন হাদীস নাই। তাই উপরোক্ত সাহবীদের কথার উপর ভিত্তি করে বড় জোর সাতাইশে রাতে শবে কদর হওয়াকে অধিক সম্ভাবনাময় বলা যেতে পারে। নিশ্চিতভাবে বলা সম্ভব নয়। সঠিক কথা হল, শবে কদর কখনো ২১, কখনো ২৩, কখনো ২৫, কখনো ২৭ আবার কখনো ২৯ রাতে হতে পারে।

    সুতরাং শুধু সাতাইশ তারিখ নয় বরং কোন ব্যক্তি যদি রামাযানের শেষ দশকের উপরোক্ত পাঁচটি  রাত জাগ্রত হয়ে ইবাদত-বন্দেগী করে তবে নিশ্চিতভাবে শবে কদর পাবে। কিন্তু শুধু সাতাইশ রাত জাগলে শবে কদর পাবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই। বরং অন্যান্য রাত বাদ দিয়ে শুধু সাতাইশ রাত উদযাপন করা বিদআতের অন্তর্ভূক্ত। বিশেষ করে আমাদের দেশে যেভাবে শুধু সাতাইশ তারিখ নির্দিষ্ট করে নেয়া হয়েছে সেটা বিদআত ছাড়া অন্য কিছু নয়। তাই বিদআত বর্জন করে সুন্নতী পন্থায় আমল করা আমাদের জন্য অপরিহার্য।

    ঙ)শবে কদরের বিশেষদুয়া:

    উম্মুল মুমিনীন আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি যদি জানতে পারি যে, কোন রাতটি লাইলাতুল কদর তাহলে তখন কোন দুয়াটি পাঠ করব? তিনি বললেন, তুমি বল:

    اللَّهُمَّ إِنَّكَ عَفُوٌّ كَرِيمٌ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّى
    “হে আল্লাহ, আপনি মহানুভব ক্ষমাশীল। আপনি ক্ষমা করা পছন্দ করেন। অত:এব আপনি আমাকে ক্ষমা করুন।”

    (তিরমিযী, অনুচ্ছেদ, কোন দুয়াটি শ্রেষ্ঠ। তিনি বলেন: হাদীসটি হাসান, সহীহ)।

    ইতিকাফ

    ক) রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত:

    আয়েশা (রা:) হতে বর্ণিত। আল্লাহ তায়ালা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে মৃত্যু দেয়া পর্যন্ত রামাযানের শেষ দশকে ইতিকাফ করতেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীগণ ইতিকাফ করেছেন।”(সহীহ বুখারী)

    আবু হুরায়রা (রা:) হতে বর্ণিত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রামাযানে দশ দিন ইতিকাফ করতেন। এক বছর সফরে যাওয়ায় ইতিকাফ করতে পারেন নি। তাই যে বছর তিনি ইন্তিকাল করেন সে বছর বিশ দিন ইতিকাফ করেন । (মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ, অধ্যায়: রোযা, তিরমিযী, অধ্যায়: রোযা অনুচ্ছেদ। আল্লামা আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন।)

    খ) ইতিকাফ সংক্রান্ত ভুল ধারণা:

    আমাদের দেশে মনে করা হয় যে সমাজের পক্ষ থেকে এক ব্যক্তিকে অবশ্যই ইতিকাফে বসতে হবে তা না হলে সবাই গুনাহগার হবে। কিন্তু এ ধারণা মোটেই ঠিক নয়। কারণ, ইতিকাফ হল একটি সুন্নত ইবদাত। যে কোন মুসলমান তা পালন করতে পারে। যে ব্যক্তি তা পালন করবে সে অগণিত সোওয়াবের অধিকারী হবে। সবার পক্ষ থেকে একজনকে ইতিকাফে বসতেই হবে এমন কোন কথা শরীয়তে নেই।

    আল্লাহ তাআলা সকল ক্ষেত্রে তার নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সুন্নতকে যথাযথভাবে পালন করার তাওফীক দান করুন এবং সকল বিদআত ও সুন্নত বিরোধী কার্যকলাপ থেকে হেফাজত করুন। আমীন।

    অনুবাদ ও গ্রন্থনা:
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলিল
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

  • হায়েজ-নেফাস (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

    হায়েজ-নেফাস (মাসিক) অবস্থায় মহিলাদের নামায-রোজার বিধান কি?

    মহিলাদের মাসিক ঋতুস্রাবের দিনগুলোতে এবং সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়ার সর্বোচ্চ ৪০ দিন পর্যন্ত আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য নামাজকে স্থায়ীভাবে অব্যাহতি দিয়েছেন। কেউ পড়লেও তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং পরবর্তীতেও এই নামাজ গুলো কাজা করার দরকার নেই। আর রোজা রাখা থেকে সাময়িকভাবে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে। কেউ রোজা রাখলেও আল্লাহর কাছে তা গৃহীত হবে না। তবে পরবর্তীতে যখন সে সুস্থ এবং স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে তখন ছুটে যাওয়া রোজাগুলো সুবিধাজনক সময়ে কাজা করে নেবে।

    নিম্নে এ সংক্রান্ত হাদিসগুলো পেশ করা হলঃ

    ◉ হাদিসে এসেছেঃ

    عَنْ أَبِي سَعِيدٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صلى الله عليه وسلم أليس إذا حاضَتْ لم تُصَلِّ ولم تَصُمْ
    আবু সাঈদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন: এ কথা কি ঠিক নয় যে, কোন মহিলার ঋতুস্রাব শুরু হলে সে সালাত আদায় করে না এবং সওমও পালন করে না।?”

    (সহিহ বুখারি, হা/১৯৫১)

    ◉ আরেক হাদিসে এসেছেঃ

    عَنْ عَائِشَةَ، قَالَتْ كُنَّا نَحِيضُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ثُمَّ نَطْهُرُ فَيَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصِّيَامِ وَلاَ يَأْمُرُنَا بِقَضَاءِ الصَّلاَةِ ‏
    আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর যুগে আমরা পবিত্র হলে তিনি আমাদেরকে রোজা কাজা করার নির্দেশ দিতেন কিন্তু নামাজ কাজা করার নির্দেশ দিতেন না।”

    (বুখারি, মুসলিম, জামে আত-তিরমিজি, হা/৭৮৭)

    ◯ ◯ সন্তান প্রসবোত্তর রক্তস্রাব জনিত নাপাকির সর্বোচ্চ মেয়াদ ৪০ দিনঃ

    বাচ্চা প্রসবের সময় ও তার পরবর্তীতে মহিলাদের গর্ভাশয় থেকে যে রক্ত বের হয় তাই নেফাসের রক্ত। সাধারণ প্রক্রিয়ায় সন্তান ভূমিষ্ঠ হলে গর্ভাশয় থেকে বেশ কিছু দিন রক্তস্রাব প্রবাহিত হয়। এটি মহিলাদের শারীরিক অবস্থার উপর নির্ভর করে কম বা বেশি হয়। এর সর্ব নিম্ন মেয়াদ একদিনও হতে পারে। আর সর্বোচ্চ মেয়াদ ৪০ দিন।

    ◉ উম্মে সালামা রা. বর্ণিত হাদিসে এসেছেঃ

    كانتِ النُّفساءُ على عهدِ رسولِ اللَّهِ صلَّى اللَّهُ عليهِ وسلَّمَ تقعدُ بعدَ نفاسِها أربعينَ يومًا أو أربعينَ ليلةً
    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে নিফাস তথা প্রসূতি নারীরা চল্লিশ দিন বিরতি নিত”।

    (সহিহ আবু দাউদ, হা/৩১১-আলবানি)

    ◉ অন্য বর্ণনায় এসেছেঃ

    كانت المرأةُ من نساءِ النبيِّ تَقعُدُ في النِّفاسِ أربعين ليلةً لا يَأمُرُها النبيُّ بقضاءِ صلاةِ النِّفاسِ
    “নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্ত্রীদের কারো নিফাস হলে চল্লিশ দিন বিরতি নিতেন। তিনি তাকে নিফাস অবস্থার সালাত কাজা করার নির্দেশ দিতেন না”।

    (ইরওয়াউল গালিল, হা ২০১-হাসান)

    ➤ ইমাম তিরমিজি বলেনঃ

    قد أجمع أصحاب النبي صلى الله عليه وسلم والتابعون ومَن بعدهم على أن النفساء تدع الصلاة أربعين يومًا إلا أن ترى الطهر قبل ذلك فإنها تغتسل وتصلي، وقد وقع الإجماع أيضًا على أن النفاس كالحيض في جميع ما يحل ويحرم ويكره ويندب، وقد أجمعوا على أن الحائض لا تُصلِّي، فكذلك النفساء.
    সাহাবী, তাবেয়ী এবং তাদের পরবর্তী মনীষীগণ এ ব্যাপারে একমত যে, প্রসূতি নারী ৪০ দিন পর্যন্ত সালাত পরিত্যাগ করবে। তবে যদি এর পূর্বে পবিত্রতা দেখে তাহলে ভিন্ন কথা। তাহলে এ ক্ষেত্রে গোসল করে সালাত শুরু করবে। এ বিষয়েও ঐকমত্য রয়েছে যে, প্রসূতি নারী হালাল, হারাম, মাকরূহ, মুস্তাহাব ইত্যাদি সকল ক্ষেত্রেই ঋতুমতী মহিলার অনুরূপ। আর এই বিষয়ে তারা একমত যে, ঋতুমতী মহিলা সালাত আদায় করবে না একইভাবে প্রসূতি নারীও।”

    ➤ চল্লিশ দিন অতিবাহিত হওয়ার পরও কারো স্রাব বন্ধ না হলে এরপর থেকে তার উপর নামাজ-রোজার হুকুম আরোপিত হবে এবং এ ক্ষেত্রে তা ইস্তেহাযা (অসুস্থতা জনিত স্রাব) হিসেবে গণ্য হবে; নেফাস হিসেবে নয়। এটি স্বীকৃত ও স্বতঃসিদ্ধ বিষয়।
    আল্লাহু আলাম

    উত্তর প্রদানেঃ
    আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আব্দুল জলীল
    (লিসান্স, মদিনা ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, সউদী আরব)
    দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব।

    সোশ্যাল মিডিয়ায় আমরা